জানি দেখা হবে পর্ব ২৩+২৪

#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni
#Part_23
..
লোকটার মাথার ভার পুরোটাই তারার পায়ের উপর রাখা৷ লোকটার এই মুহুর্তে কোনো সেন্স নেই৷ তারা একনজরে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। আশা আর সীমা এগিয়ে এলো তারার দিকে৷ তারার কাধে হাত রেখে সীমা বললো…
— তারা?
সীমার ডাকে তারার কোনো হুশ এলো না। সে আগের মতোই বসে আছে। চোখদুটো এখনো সেই লোকটার দিকে। সীমা আবারও তারাকে ডাকলো। কিন্তু কোনো লাভ হলোনা। তাই সীমা তারাকে কিছুটা ধাক্কা দেওয়ার মতো করে বললো..
— তুমি ঠিক আছো তো তারা?
এবার তারার হুশ ফিরলো। সে ওদের দিকে তাকিয়ে আবারও মাটিতে পড়ে থাকা লোকটার দিকে তাকালো। ওর হাবভাব মোটেই স্বাভাবিক লাগছেনা সীমা আর আশার কাছে। এইবার আশা বললো..
— তারাপু, তুমি কি উনাকে চিনো? উনি কি তোমার কোনো রিলেটিভ?
তারা কিছুটা অসহায় মুখ করে আশার দিকে তাকালো। কি বলবে সে ওদের কাছে? বললেই বা কি হবে। বরং আরো কতগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আর সত্যি টা বললে ওরা যদি উনাকে সাহায্য করতে না চায়!!! এতে উনার তো কোনো দোষ নেই। উনি তো মাটির মানুষ । কিন্তু ওদেরকে বোঝাবে কে। তারচেয়ে বরং ওদেরকে না বলাই ভালো।
সীমা বললো.
— কোনো সমস্যা তারা? তুমি এভাবে হ্যাং হয়ে আছো কেন? কিছু তো বলো।
তারা এবার নড়েচড়ে বসলো। বললো….
— না মানে ভাবী, লোকটা হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আশেপাশে উনার পরিচিত কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা। তাই বলছি কি… কতোটুকু বলে তারা নিচের দিকে তাকালো। সীমা সবটা বুঝতে পেরে বললো।
— কিন্তু আমরা কিভাবে উনাকে সাহায্য করবো? উনার এই মুহুর্তে সেন্স ও নেই। যদি উনি সজ্ঞানে থাকতেন তবে আমরা ধরে উনাকে আমাদের সাথে নিতে পারতাম। কিন্তু এই অবস্থায় আমরা গাড়িও আনিনি সাথে।
তারা কিছুটা অসহায়বোধ করতে লাগলো। সীমা যেটা বলছে একদম ঠিক বলছে। কিন্তু উনাকে এই অবস্থায় রেখে তো তারা একদমই যাবেনা। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। কি করা যায় ভাবছে ওরা।

এরই মধ্যে আশা আকাশ কে ফোন দিয়ে সবটা জানালো। আকাশ অফিসেই ছিলো। আশার মুখে সবটা শুনে জায়গার লোকেশন জেনে নিয়ে সেখানকার উদ্দেশ্যে রওনা করলো দ্রুত। প্রায় বিশ মিনিট পর আকাশ এসে পৌছুলো ওদের কাছে। তারা আকাশের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। আকাশ তারার দিকে এগুতে এগুতে সীমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
— উনি কে ভাবী? কি হয়েছে উনার?
— জানিনা উনি কে। আমরা তো উনাকে চিনিনা। বাসায় ফেরার পথে দেখলাম উনি এখানে সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে৷ একটা বয়স্ক মানুষকে এভাবে ফেলে যাই কি করে বলো।
আকাশ ধ্রুত লোকটির কাছে গিয়ে বসে উনার পার্লস চেক করলো। তারপর কপালে হাত দিয়ে দেখলো গা টা ভীষণ ঠান্ডা। সীমার দিকে তাকিয়ে আকাশ বললো…
— ভাবী আমাকে সাহায্য করো তো।
সীমা এগিয়ে এসে লোকটার একপাশে ধরলো। আকাশ আরেকপাশ থেকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে লোকটিকে দুহাটে জাপটে ধরে গাড়ির দিকে এগুতে লাগলো। তারা আর আশা পিছনে পিছনে এগুচ্ছে।
..
গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে।
পিছনের সিটে লোকটিকে আধশোয়া করে বসানো হয়েছে। সেন্স এখনো ফিরেনি উনার। পাশেই তারা আর সীমা বসে আছে। আশা সামনে আকাশের পাশের সিটে বসা। যদিও আকাশ তারাকে বলেছিলো সামনে বসতে৷ কিন্তু নিজের শশুরকে এই অবস্থায় পিছনে রেখে সামনের সিটে আরাম করে সে যেতে পারবেনা। যদিও এখন পর্যন্ত কাউকে বলেনি উনিই তারার শশুর।
কিছুক্ষন পর বাসার সামনে এসে গাড়ি দাড়ায়৷ আকাশ দারোয়ানের সাহায্য নিয়ে লোকটাকে নিজের বেডরুমে নিয়ে শোয়ায়। আকাশের মা তারার গা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে৷ তিনি এখনো কিছুই জানেন না। তবে বুঝতে পারছেন অবস্থা খুব জটিল। আকাশ লোকটার মুখে কিছুটা পানি ছিটা দিলো। কিন্তু লোকটির হুশ এলো না। আর কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পরেও যখন কোনো লাভ হলোনা তখন তারা আকাশকে বললো..
— যদি কোনো ডক্টরকে জানাতেন,,,
— হ্যাঁ ঠিকই বলছো তুমি। এখন দেখছি তাই করতে হবে।
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এলে তিনি খুব ভালোভাবেই উনাকে পর্যবেক্ষণ করেন৷ কিছু নরমাল টেস্ট করে তারপর দুটো ইনজেকশন পুষ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন…
— চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রেশার একদমই কমে গেছিলো উনার। আর উনি হয়তো শারীরিক ভাবেও অসুস্থ। তাই হটাৎ করে এ্যাটাক হয়েছে। কিছুক্ষণ পরই উনার জ্ঞান ফিরবে। আর হ্যাঁ, এই ওষুধগুলো উনাকে ঠিকমতো খেতে বলবেন। বলে আকাশের হাতে একটা প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে চলে গেলেন ডক্টর। আকাশ প্রেস্ক্রিপশন টা পাশে টেবিলে রেখে তারাকে বললো…
— তুমি কি উনাকে আগে থেকে চিনতে তারা?
— আমি উনাকে চিনিনা। কোনো ভনিতা না করেই সরাসরি বললো তারা। আকাশ আর কথা বাড়ালো না। এরই মধ্যে ধ্রুবর বাবা বিছানায় শোয়া অবস্থায় একটু নড়েচড়ে উঠলো। আকাশ মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো…
— দেখো তারা, তোমার রোগী রেসপন্স করছে।
তারা একনজর ধ্রুবর বাবার দিকে তাকিয়ে ধ্রুত গতিতে নিজের রুমে চলে গেলো। যেনো ও কোনো আসামি, আর সামনে থাকা ব্যাক্তিটি বিচারক। তারার এমনভাবে চলে যাওয়ায় সবাই কিছুটা অবাকই হলো বৈ কি। কিন্তু মুখে কেউ কিছু বললো না।

জ্ঞান ফিরার পর আশেপাশের অপরিচিত পরিবেশ ও মানুষ জনকে দেখে কিছুটা অবাকই হলেন ধ্রুবর বাবা। এ কোথায় এলেন তিনি? আর কিভাবেই বা এলেন? উনার যতোটুকু মনে আছে উনি বিকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরই মাথা ঘুরতে শুরু করেছিলো উনার। এর পর আর কিছুই মনে আসছে না।
আকাশ লোকটার দিকে তাকিয়ে উনার মনের অবস্থা বেশ বুঝতে পেরে উনার পাশে গিয়ে বসলেন৷ লোকটা বিস্মিত নয়নে আকাশকে দেখছে। কিছু হয়তো বলতে চাইছে, কিন্তু গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। আকাশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে বললেন…
— চিন্তার কিছু নেই আংকেল। আপনি আমাদের বাসায় আছেন।
— তুমি কে বাবা? আর আমি এখানে কি করে এলাম? নরম স্বরে বললেন ধ্রুবর বাবা।
— আসলে আপনাকে অচেতন অবস্থায় পাহাড়ের পাশে পড়ে থাকতে দেখে আমরা আপনাকে আমাদের বাসায় এনেছি। আপনি এখন সুস্থ আছেন৷ তবে আপনার শরীর হয়তো দুর্বল। এই বয়সে একা বের হওয়াটা রিস্ক আপনার জন্য।

ধ্রুবর বাবা কিছুক্ষন নিরব থেকে তারপর বললো৷
— তোমাদেরকে কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো সেই ভাষা আমার নেই বাবা। তোমাদের মতো মানুষের বড্ড অভাব এই পৃথিবীতে।
— কি যে বলেন না আংকেল। তবে এখানে আমার কোনো ক্রেডিট নেই। আমিতো জাস্ট আপনাকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। আমার বোন, ভাবী আর আমার একজন স্পেশাল মানুষ আপনাকে ওই অবস্থায় পেয়েছিলো।
— তাই? কোথায় ওরা? ডাকো ওদেরকে কথা বলি।

সীমা তারার রুমে গিয়ে দেখলো খাটের এক মাথায় তারা গুটিশুটি মেরে বসে আছে। সীমা হাসিমুখে তারাকে ডাকলো।
— তারা..
সীমার ডাকে তারা মুখ তুলে তাকালো। সীমা খেয়াল করলো তারার মুখটা মলিন দেখাচ্ছে। তবুও সে ব্যাপারে কিছু না বলে বললো….
— ওই ভদ্রলোক আমাদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। আমি আর আশা কথা বলেছি। লোকটা অনেক ভালো৷ অমায়িকও বটে। তোমার সাথেও কথা বলতে চায় উনি।

তারা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো দ্রুত। বললো..
— প্লিজ ভাবি, আমি উনার সামনে যেতে পারবোনা। উনাকে বুঝিয়ে বলো।
— কোনো সমস্যা তারা? আমি সেই কখন থেকে খেয়াল করছি তুমি মনমরা হয়ে আছো।
— তেমন কিছুনা ভাবী। আমার শরীর টা ভালো লাগছেনা। উনার সামনে এখন আমি কিছুতেই যেতে পারবোনা। একটু বুঝার চেষ্টা করো ভাবী। প্লিজ..
সীমা কি বুঝলো কে জানে,, তারাকে আর কিছু না বলে চলে গেলো সে।
====

পরেরদিন খুব ভোরেই সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা করলো ধ্রুব। যদিও আরো একদিন পর যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু গতকাল বাবার হটাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া কথাটা শুনেই ঘাবড়ে গিয়েছিলো ধ্রুবর মা। ভাগ্যিস, কিছু ভালো মানুষের চোখে পড়েছিলো। নয়তো কি যে হতো!! ভাবতেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে উনার। ধ্রুবও যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে আছে বাবাকে নিয়ে। আজ তাই সকাল সকাল রওনা করেছে সে।

সিলেট গিয়ে যখন পৌছুলো তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকার কারণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে তার। বাস থেকে নেমেই বাবার সাথে ফোনে কন্টাক্ট করে নিলো ধ্রুব। এর পর একটা চায়ের দোকানে গিয়ে এক কাপ চায়ের অর্ডার করে পাশে থাকা কাঠের বেঞ্চিতে গিয়ে বসল ধ্রুব। হালকা শীত লাগছে এই মুহুর্তে। কয়েক মিনিট পর একটা ছেলে বয়স বড়জোর ৯/১০ হবে, একটা মাটির পেয়ালায় করে চা নিয়ে এলো। মাটির পেয়ালায় সে আগে কখনো চা খায়নি। এর কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। তাই কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে মাটির কাপটা হাতে নিলো ধ্রুব। কয়েক সেকেন্ড সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে মুখের কাছে নিয়ে সেটাতে হালকা চুমুক দিলো ধ্রুব।
আহহ,, কলিজাটা যেনো ঠান্ডা হয়ে গেলো হটাৎ করেই। মাটির পাত্রে চা খাওয়ার স্বাধ যে এতোটা গভীর জানা ছিলোনা ওর। পরম আনন্দে পুরোটা চা পান করে বিল টা দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ও।

====

বাবার মুখে পুরো ঘটনাটা আবারও শুনলো ধ্রুব। কাল কি হয়েছিলো, কিভাবে হয়েছিলো। যদিও ফোনে আগেই শুনেছে সবটা, তবুও আবারও শুনে নিলো। এবার একটু নড়েচড়ে বসলো ধ্রুব। বাবাকে বললো…
— একটু সাবধানে তো থাকতে পারতে বাবা। যদি কিছু হয়ে যেত তোমার, তাহলে কি হতো একটু ভেবেছো?
— সব দোষ তোর। তুই ই তো আমাকে ঘুরাফেরা করার পরামর্শটা দিয়েছিলি। তা না হলে কি আমি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘুরতে বেরোতাম। যথেষ্ট অভামানী স্বরে বললো বাবা। পরিক্ষণেই আবার মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন৷
— এক দিক দিয়ে ভালোই হলো। জানিস, ওরা অনেক ভালো৷ কত যত্ন করলো আমার, ডক্টর আনিয়ে চেকআপ পর্যন্ত করিয়েছে আমার। ভেবেছিস কতোটা অমায়িক ওরা!!
ধ্রুব মুখে কিছুটা গাম্ভীর্য এনে বললো….
— সত্যিই ওরা খুব ভালো। ভাবছি, কাল একবার দেখা করে আসি। আমার বাবার এতো যত্ন করেছে, সেই ভালো মানুষগুলোকে না দেখা যে পাপ হবে। কি বলো বাবা?
ছেলের কথায় বাবা হাসলো।
..
রাতের খাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে গেলো সবাই৷ তারা ডাইনিং টা ক্লিন করছিলো। আকাশের মা পাশ থেকে বললো….
— তোকে কতোদিন না করেছি তারা এইসব করতে? এইসব করার জন্য কাজের লোক আছে বাসায়।
— বসেই তো থাকি সারাদিন। এভাবে শুয়ে-বসে থাকতে থাকতে তো মুটি হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। কথাটা বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো তারা। তারার খিলখিল করা হাসিটা যেনো আকাশের বুকে গিয়ে বিধলো। সে সবেমাত্র নিজের রুমে পা দিচ্ছিলো। তারার এমন হাসিতে সেখানেই সে দাড়িয়ে গেলো। পিছনে ঘুরে দেখলো হাসিটা তারার মুখে এখানো লেগে আছে৷ শুধু শব্দটা নেই। এইভাবে তারাকে হাসতে আগে কখনো দেখেনি আকাশ। তারা আকাশের মায়ের সাথে কথা বলার এক ফাকেই আকাশের দিকে নজর গেলো ওর। মুহুর্তেই হাসিটা উধাও হয়ে গেলো ওর। দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো তারা৷ আকাশ এখনো নিজের জায়গায় দাড়িয়ে আছে। নজর এখনো তারার দিকে।

আকাশের মা এতোক্ষণ সবটাই পরখ করেছে। তার বুঝতে আর বাকি নেই আকাশের মনে কি চলছে। ছেলের মনের কথা বুঝতে পেরে মা ও কিছুটা হেসে ফেললো। এরপর চলে গেলো নিজের রুমে।
সারারাত নির্ঘুম রাত কাটালো আকাশ। তারার খিলখিল করা হাসিটা এখনো ওর কানে বাজছে। হাসিমাখা মুখটা যেনো ওর চোখ থেকে সরছেইনা। আপনমনে হাসছে আকাশ৷ নাহ, এই মেয়ে নির্ঘাত ওকে জাদু করেছে। নাহলে এমন কেন অনুভূতি হবে ওর?
..
পরেরদিন সকালে…
আহাদ আর আকাশ রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য। আশা নিজের রুমে বসে ফোনে কথা বলছে৷ সীমা এটা ওটা আহাদকে এগিয়ে দিচ্ছে। আকাশের মা কিচেনে রান্না করছে আর তারা উনাকে সাহায্য করছে। কাজের মেয়েটা বাসায় নেই। দোকানে পাঠিয়েছে একটু আগে।
তারা ব্রেকফাস্ট এর খাবার গুলো কিচেন থেকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে রাখছে,, এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরো কয়েকবার বেল টা বাজতে লাগলো। কিচেন থেকে আকাশের মা জোরে জোরে বলতে লাগলো….
— তারা, দরজাটা খোলে একটু দেখতো মা কে এসেছে।
— জ্বি আন্টি, আমি দেখছি।
তারা ডাইনিং টেবিলের সামনে ছিলো। বেলটা এখনো সমানতালে বাজছে। তারা তারহুড়ো করে প্রায় দৌড়ানোর মতো করে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো। আই ভিউ তে দেখে নিবে কিনা কে এসেছে ভেবেও আর দেখা হলো। বারবার কলিংবেল বাজার শব্দে আই ভিউ তে দেখার কথা যেনো ভুলেই গেলো।
কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে থেকে হুট করে দরজাটা খুলে দিলো তারা।
.#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni
#Part_24
..
কোনো এক সময় নদীর পানি খুবই শান্ত থাকে। যখন নদীতে ঝড় উঠে, প্রবল পরিমানে বাতাস বয়, তখন নদীর পানি শত চেষ্টা করেও স্থির থাকতে পারেনা, পারেনা নিজেকে সামলাতে। বাতাসের বেগে নদীতে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়, এক সময় সেটা উত্তাল ঢেউয়ে পরিণত হয়। ঢেউয়ে ঢেউয়ে তোলপাড় হতে থাকে সবকিছু।
ধ্রুবর বুকেও এই মুহুর্তে সেই ঢেউ বহমান। যেকোনো সময় সেটা তান্ডবে পরিণত হতে পারে। ঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই। মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে তার।
একটা সময় কেউ একজন ওর জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এসেছিলো, বদলাতে চাইছিলো তাকে। কিন্তু বদলেনি ধ্রুব। সে মানুষটাকে প্রচুর পরিমানে অপমান করেছিলো সে। নানান ধরনের অপমান অপদস্ত করেও ক্ষান্ত হয়নি সে, মেয়েটাকে নিজের বাড়ি থেকে বের করেই ছেড়েছিল তখন।
অতঃপর বুঝেছিল মেয়েটি কি ছিলো তার জীবনে। ওকে হারিয়ে ধ্রুব তিলে তিলে বুঝেছিলো, কি হারিয়েছে সে জীবনে। প্রতি মুহূর্তে মনের মধ্যে এসে উঁকি দিত সেই মেয়েটি, কিন্তু আফসোস, সময় তখন ওর সহায় ছিলনা৷ কতই না খোজেছে তাকে এই অশান্ত, অবাধ্য, বেহায়া মন, কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছিলো সেদিন।

এতটা দিন পর সেই চেনা মুখ, সেই পরিচিত অবয়ব, সেটা এতোদিনে ধ্রুবর মনে গেথে গেছে, সেই চিরচেনা মানুষটাকে চোখের সামনে দেখেও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
এটা কি ভ্রম? নাকি বাস্তব? দুটানায় পরে গেছে ধ্রুব।
তারা এখনো ঠায় দাড়িয়ে আছে নিজের জায়গায়। নড়বার শক্তিটুকু যেনো ক্ষয় হয়ে গেছে তার। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে।
ধ্রুব একভাবে তাকিয়ে আছে ওর প্রেয়সীর মুখপানে। আহ, এতোটা শান্তি লাগছে বুকে, যেটা আগে কখনো অনুভব করেনি সে। এই প্রথম এইরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। যেটা কখনো তুরিনের জন্য হয়নি।
ধ্রুব এক পা সামনে এগুলো, তারা আগের জায়গাতেই দাড়ানো, তারাকে নড়তে না দেখে ধ্রুব অস্ফুটে বললো
-তারা..
তারা নড়লো না, সে হুসে নেই।
ধ্রুব দুহাতে আঁকড়ে ধরলো তারাকে। সামান্য ঝাকি
দিয়ে বলল
-তারা, কথা বলো। আ আমি, আমি তোমার স্বামী, কি হল? কথা বলবেনা? আবারো ঝাকি দিল সে তারাকে।
তারার সম্ভিত জ্ঞান ফিরলো। হুশে ফিরে এলো সে। বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে আছে সে ধ্রুবর দিকে। আচমকা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো তারা। ঝড়ের বেগে ধ্রুবর কাছ থেকে দুরে সরে দাড়ালো।
ধ্রুব আবারো এক পা এক পা করে সামনে এগুচ্ছে। দৃষ্টি তারাতেই সীমাবদ্ধ। ধ্রুবর এগুনো দেখে তারা পিছাতে লাগলো।
তারাকে এভাবে পিছিয়ে যেতে দেখে ধ্রুব থেমে গেলো হটাৎ ।
তারার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা এই মুহুর্তে। তবুও অতি কষ্টে কাপা কাপা গলায় বললো
-আ–আ—আপনি? আ– আপনি এ–এখানে কেন এসেছেন?
-তারা, আমাকে দেখে খুশি হওনি তুমি? তুমি এখানে কি করে? কত খোজেছি তোমায় আমি।
শান্ত গলায় বললো ধ্রুব।
তারা কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বোধহয়। আর কিছুই বলতে পারছেনা। হয়তো সবটা স্বপ্ন, ঘুম ভেংগে গেলেই সব শেষ হয়ে যাবে মুহুর্তেই।
মাথাটা প্রচন্ড ঘুরছে তারার। ধ্রুব এগিয়ে এসে তারার মুখটা দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো। তারা কিছু বলতে পারছেনা। কেবলই মনে হচ্ছে ও এখন সেন্সে নেই।

আকাশের মা সেই কখন তারাকে দরজা খোলার জন্য পাঠিয়েছে। অথচ কারো কোনো খবর নেই। না তারার, আর না কলিংবেলের ওপাশের লোকটার। কেইবা এসেছে?
এইসব ভাবতে ভাবতেই কিচেন থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। দরজার দিকে তাকাতেই একটা বড়সড় ধাক্কা খেলেন উনি। অপরিচিত একটা ছেলে তারাকে ধরে দাড়িয়ে আছে। মাথাটা বিগড়ে গেলো উনার।
সেখানে দাড়িয়ে থেকেই জোরে জোরে বলতে লাগলেন
-এক ছেলে, কে তুমি? এভাবে একটা অপরিচিত মেয়েকে ধরে রেখেছো কেন? ছাড়ো বলছি ওকে।
আকাশের মা কথাগুলো বলতে বলতে এগুতে লাগলো ওদের দিকে।
ধ্রুব একনজর উনার দিকে তাকালো। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে দৃষ্টি তারার দিকে নিক্ষেপ করে শান্ত ভাবে বললো
-আমি কোনো অপরিচিত মেয়েকে ধরিনি। নিজের বউকেই ধরেছি।
আকাশের মা অবাক হয়ে গেলো ধ্রুবর কথা শুনে। শুনতে ভুল হয়েছে ভেবে আবার জিজ্ঞেস করলেন
-কি বললে তুমি? আবার বলো।
-আমি ওর হাজবেন্ড।
হাজবেন্ড কথাটা শুনার সাথে সাথে তারার হুশ ফিরে এলো। এই সেই হাজবেন্ড, যে ওকে সবার আড়ালে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলো এক সময়।
আর এক মুহূর্ত দেরি করলোনা তারা। এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো ধ্রুবর কাছ থেকে। চোখদুটো ছলছল করছে ওর।
উল্টোদিক ফিরে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো তারা।
আকাশ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নামছে অফিসে যাওয়ার জন্য। তারার সেদিকে হুশ নেই। দৌড়াতে দৌড়াতে এসে অকস্মাৎ আকাশের সাথে ধাক্কা খেলো তারা। আকাশ তারাকে ধরে বললো
-আর ইউ ওকে তারা? এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?
তারা কিছু বলতে পারলোনা, আকাশের বুকে ঢলে পরলো কিছু বলার আগেই। হটাৎ তারাকে এভাবে সেন্সলেস হতে দেখে অবাক হয়ে গেলো আকাশ।
আকাশের মা কিছু বলতে বা করতে পারছেনা। কিছুক্ষন আগে যেটা শুনেছে সেটা এখনো উনার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ধ্রুবর চোখদুটো লাল হয়ে গেছে একমুহূর্তে। অন্য একটা ছেলের বুকে তারা পরে আছে, সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা ও।
আকাশ তারাকে পাজাকোল করে নিবে রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়ানোর জন্য, ঠিক সেই মুহূর্তে ঝড়ের গতিতে ধ্রুব সেখানে গিয়ে তারাকে হ্যাচকা টানে নিজের বুকে নিয়ে নিলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলো
-তারা, কি হয়েছে তোমার? কথা বলো তারা। কথা বলো প্লিজ।
আকাশ বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। আচমকা এমন কিছু হবে ভাবতে পারেনি সে।
ধ্রুবকে উদ্দেশ্য করে বললো
-কে আপনি? এখানে কি চাই আপনার? আর ওকেই বা চিনেন কিভাবে?
-নিজের বউকে কেউ তো না চিনার কথানা। তারার দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো ধ্রুব।
ধ্রুবর এমন কথায় আকাশ অবাক হলোনা বেশি, বরং রেগে গেলো ব্যাপকভাবে। রাগীস্বরেই সে বলে উঠলো
-হোয়াট ডু ইউ মীন? আর ইউ ম্যাড? কি উল্টাপাল্টা বলছেন আপনি?
-আমি মোটেও উল্টাপাল্টা বলছিনা মি.। আমি তারার হাজবেন্ড।
আকাশ এবার আরো রেগে গেলো। প্রচন্ড আক্রোশে বললো
–ওহ, আপনিই তাহলে সেই ব্যক্তি, যে কিনা তারার মতো নিরীহ একটা মেয়ের সাথে এতোটা জঘন্য কাজ করেছেন?
ধ্রুব কিছু বললোনা। সে সেন্সলেস তারাকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে আছে। একটু ছাড়লেই হয়তো পরে যাবে।
আকাশ চাপা আক্রোশে আবারও বললো
-তারাকে স্পর্শ করার কোনো অধিকার আপনার নেই। ছেড়ে দিন ওকে। ওকে আমার কাছে দিন। আর আপনি চলে যান এখান থেকে। আর কখনো এমুখো হবেন না।
-নিজের বউকে এইরকম একটা বিপদে রেখে যাই কি করে আমি? আর যখন যাবো তারাকে নিয়েই যাবো,
আকাশ আচমকায় ধ্রুবর কলার ধরে ফেললো, প্রচন্ড রেগে গেছে সে। রাগে ফুপাতে ফুপাতে বললো
-ভালোই ভালোই ওকে ছেড়ে চলে যান বলছি। নইলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।

আকাশের মা এতোক্ষণ বোকার মত দাড়িয়ে থাকলেও এইবার আর চুপ থাকলো না। তারাতাড়ি গিয়ে আকাশকে ছাড়িয়ে নিলে তিনি। ধমকে বলে উঠলেন
-কি হচ্ছেটা কি আকাশ? এইটা কিরকম ব্যাবহার? এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোকে?
-মা, তুমি কি শুনছোনা কি বলছে ওই ছেলেটা? শুনতে পেয়েছো তুমি?
-আমি সব শুনেছি আকাশ।
সবকিছু নিয়ে পরে কথা হবে। আগে তারাকে এখান থেকে নেয়া দরকার। বেডে নিতে হবে ওকে।
এতোক্ষণে সীমা আর আহাদ ও চলে এলো নিচে। ওরাও নিরব দর্শক হয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রথম থেকে না থাকায় কিছুই বুঝতে পারছেনা ওরা।
আকাশ তারাকে ধ্রুবর কাছ থেকে নিতে নিলে ধ্রুব সাথে সাথেই তারাকে পাজাকোল করে নিয়ে নেয়। আকাশকে উদ্দেশ্য করে ধ্রুব বললো
-আমার বউকে আমার সামনে অন্যকেউ ধরবে, এটা কখনো সম্ভব নয়।
আকাশ রাগে ফেটে যাচ্ছে। তারা অসুস্থ থাকায় নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করলো অনেক কষ্টে।

যখন তারার সেন্স ফিরলো তখন সে বিছানায় শুয়া। আস্তে আস্তে উঠতে চাইলো সে। আকাশসহ বাকি সবাই একপাশে দাড়ানো। ধ্রুব তারার মাথার পাশেই একটা চেয়ারে বসা।
তারাকে উঠতে দেখে আকাশ বসতে সাহায্য করার জন্য ওর কাছে যেতেই ধ্রুব গিয়ে বসে পরলো তারার পাশে। তারাকে আস্তে করে ধরে বসতে সাহায্য করলো সে। আকাশের রাগটা এতোক্ষণে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করছে। সীমার ধৈর্যের বাধ ভেংগে যাচ্ছে । এতোক্ষন চুপ থাকলেও এইবার মুখ খোললো সে।
-আপনার এইখানে আসার উদ্দেশ্য কি? কেন এসেছেন এখানে?
ধ্রুব সীমার দিকে তাকালো। বললো..
-যারা আমার বাবাকে এতোটা সাহায্য করলো, সেবা করলো, তাদের একটা ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই এসেছিলাম আমি।
-আপনার বাবা? ভ্রু কুচকে বললো সীমা।
-দুদিন আগে আপনারা যে লোকটাকে বাচিয়েছেন, সাহায্য করেছেন, সেই আমার বাবা।
সীমা ভ্রু বাকা করে তাকালো তারার দিকে। তারা তো কিছু বলেনি এই ব্যাপারে। আপাতত এটা স্কিপ করলো সীমা। সে আবারও ধ্রুবকে বললো
-আপনার বাবা এখন কেমন আছে।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।
-আমাদের খবর নেওয়া হয়ে গেছে? আমাদের সাথে দেখাও হয়েছে? তাহলে বসে আছেন কেন? এখন চলে যান।
ধ্রুব বিস্ফোরিত চোখে তাকালো সীমার দিকে। বললো
–অবশ্যই যাবো, তবে যাওয়ার সময় আমার বউকে সাথে নিয়ে যাবো আমি।
আকাশ রেগে গিয়ে সীমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-ভাবী, ওকে বলে দাও, আমার ধৈর্যের বাধ ভেংগে যাচ্ছে। আমি কিন্তু এখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা।
ধ্রুব তারার দিকে তাকালো। তারা গুটিশুটি মেরে বসে আছে একপাশে। তারাকে বললো
-তুমি কিছু বলছোনা কেন তারা? আমি জানি আমি যা করেছি সেটা অনেক বড় অন্যায়। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি অনেক খোজেছি তোমায় বিশ্বাস করো।
-কেন খোজেছেন আমাকে? চলে যান এখান থেকে।
ধ্রুব আকাশের মায়ের দিকে তাকালো। স্পষ্ট ভাষায় বললো
–আন্টি, আমি তারার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই। প্লিজ..
-একা কেন কথা বলবেন? যা বলার সবার সামনে বলুন। নয়তো চলে যান এখান থেকে। পাশ থেকে আকাশ বলে উঠলো।
আকাশের মা আকাশকে একটা ধমক দিলো। তারপর উনি সবাইকে রুম থেকে বেরোতে বলে নিজেও বেরিয়ে গেলো।।আকাশ যেতে চাইছিলোনা। কিন্তু সীমার কথায় বের হতে হলো তাকে।

আকাশ রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই তারা মুখ খোললো। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো
-কেউ যাবেন না আপনারা। আমি কারো সাথে একা কথা বলতে চাই না।
তারার কথা শুনে আকাশ যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পেলো। এই একটা কথার আশাতেই বোধহয় ছিলো সে এতোক্ষণ।
সে ঝড়ের গতিতে রুমের দিকে ফিরে এলো। ধ্রুবর কাছে এসে ওর কলার ধরে টেনে তুললো আকাশ। ধ্রুব নিজেকে শান্ত রেখে বললো
–কলারটা ছাড়ুন।
-যদি না ছাড়ি।
-যারা আমার বউকে এতোদিন আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, ওর দুঃসময়ে পাশে থেকেছে, আমি তাদের সাথে কোনো ঝামেলায় যেতে চাচ্ছিনা।
-কে আপনার বউ? তারা? আপনি ওর হাজবেন্ড? কোথায় ছিলো আপনার স্বামীগিরী? যেদিন ওকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন? কোথায় ছিলো আপনার নীতি? যেদিন তারার মতো একটা বউ ঘরে থাকতেও আরেকটা বউ ঘরে তুলেছিলেন? কোথায় ছিলো আপনার এতো ভালোবাসা? যেদিন একটা প্রেগন্যান্ট মেয়েকে বাসা থেকে বের হতে হয়েছিলো? প্রচন্ড রাগে বললো আকাশ।
-আমি ভুল করেছিলাম সেদিন, সেটাই শুধরাতে চাই এখন।
-প্লিজ চলে যান এই মুহুর্তে। নইলে আপনার উপর হাত তুলতেও আমি দ্বিধা করবোনা। পরিস্থিতি খারাপ দেখে সীমা আর মা এসে আকাশকে টেনে সরালো ধ্রুবর কাছ থেকে। আকাশ অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে এখনো।
ধ্রুব নিজেকে ঠিক করতে করতে তারার দিকে তাকিয়ে বললো
–আমি চলে যাচ্ছি তারা। তবে আমি আবার আসবো, আমার বউকে নিতে আসবো।
তারার অবাক ভাবে তাকালো ধ্রুবর দিকে। এই প্রথম ধ্রুব ওকে বউ বলে ডেকেছে।
তারার তাকানো দেখে ধ্রুব প্রশান্তির হাসি হাসলো। দরজার কাছে দিয়ে তারার দিকে তাকিয়ে আবারও বললো
— আসি বউ।

To be Continue……
To be Continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here