জেদ পর্ব -০৮

#জেদ(An Conditional Love)
#পার্ট০৮
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
যদি কখনো আমার প্রিয় কাজগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় আমি হাসিমুখে বলব “অপলক দৃষ্টিতে আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকা। ”
এই কাজটি করতে আজ পর্যন্ত আমার বিন্দুমাত্র বিরক্ত লাগে নি।বরং আমি বারং বার চেয়েছি এই কাজটি কর‍তে। শুধু তার হাসিমাখা মুখটি দেখতে।
-ইনা নিচে আসতে পারবে এখন?
আরদ্ধের কথায় আমার কল্পনার জগতে ছেদ পরল।আমি ঘোরমাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম
-কেন?
-পারবে কিনা?
-পারব বাট এখন অনেক রাত। কেউ যদি দেখে…..
-I don’t wanna hear anything.তুমি এখনি তোমার বাসার নিচে আসবে। I wanna kiss you now and am dying for it.
শুধু এতটুকু বলেই আরদ্ধ ফোনটা কেটে দিল।
আমি জানি আরদ্ধ এখন বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে।আমি যতক্ষন পর্যন্ত যাব না ছেলেটা ততক্ষন পর্যন্ত নিচে দাঁড়িয়ে থাকবে।
পা টিপে টিপে ঘর থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসলাম।এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম ডান পাশের কোনায় আরদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে।ওদিকের জায়গাটা বেশ অন্ধকার। আমি আরদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতেই আরদ্ধ হাতের ইশারায় আমাকে থামাল।
-১০,৯,৮,৭,৬,৫,৪,৩,২,১……
আরদ্ধ ডান হাতের আংগুল উচিয়ে উপরে কিছু ইশারা করল।আমি তাকাতেই দেখি একটা আতশবাজী ফুটে উঠল।তাতে লিখা
-Happy BirthDay My Love.
আমি আরদ্ধের দিকে তাকাতেই ও হেসে বলল
-Many Many happy reruns of the day my love.
আরদ্ধ এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা ফুলের তোড়া ধরিয়ে দিল।লাইট পিংক রোজ বুকে।ফুলগুলো থেকে চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখি আরদ্ধ কেক হাতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আরদ্ধ কেকটা আমার দিকে এগিয়ে দিল।আমি কেক কেটে এক টুকরো ওর মুখের সামনে ধরতেই আরদ্ধ হাত ঘুরিয়ে আমাকে কেকটা খাইয়ে দিল।
আমি এখনো অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।আমাকে অবাক হতে দেখে আরদ্ধ হেসে বলল
-কি ভেনেছিলে?কিস করার মতো লেইম এক্সকিউজের জন্যে আমি তোমাকে এত রাতে ঘর থেকে নিচে নামতে বলব?No my lady.তুমি আজকের দিনটা ভুলতে পারো।কিন্তু আমি পারি না।আজকের দিনটা আমার লাইফের সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট দিন।কারন আজকের দিনটা না হলে আমি হয়তো তোমাকে পেতাম না।
কথাটা বলেই আরদ্ধ আমার আংগুলে লেগে থাকা কেক টুকু আংগুলসহ মুখে পুরে নিল।
-Ummmm.Now It’s sweet.
আমি দুহাতে শক্ত করে আরদ্ধকে জড়িয়ে ধরলাম।আরদ্ধ আমার কোমড় জড়িয়ে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আরদ্ধের গলার ঠোট ডুবালাম।আরদ্ধ আরেকটু শক্ত করে আকড়ে নিল আমাকে।
.
.
অদ্ভুত হলেও ব্যাপারটা সত্যি আমার জন্মদিনের কথা বাসায় কারও মনে নেই।সবাই অন্য সাধারন দিনের মতই স্বাভাবিক। আমারও ইচ্ছে করছে না ব্যাপারটা ঘাটাতে।তাই সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে বের হয়ে এলাম অফিসের উদ্দেশ্যে।
আজ আরদ্ধ আসে নি।গলির মুখে ওর গাড়িও নেই।আমি এদিক ওদিক খুজছি তখনি টুং করে ফোনে একটা ম্যাসেজ এল।
-Sorry Babe।আজকে আসতে পারব না। ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে।তুমি নিজ দায়িত্বে সাবধানে অফিস চলে যাবে।
আমি ফোন ব্যাগ পকেটে রেখে সামনে এগোতে যাব তখনি একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাড়াল।আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাব তখনি গ্লাস নামিয়ে আরাজ মাথা বের করে বলল
– Hey Ina.অফিসে যাচ্ছ?Come I’ll drop you.
– No thanks. I’ll manage.
– আরে Man Come on.অফিসেই তো যাচ্ছি ডেটে তো আর যাচ্ছি না।চলে আসো।
কথাটা বলেই আরাজ গাড়ির দরজাটা খুলে দিল।আমি দাঁড়িয়ে চিন্তা করছি এমন সময় আশেপাশে হর্নের আওয়াজ শুনতে পেলাম।এই রাস্তাটা খুব বেশি একটা প্রস্তত না যার কারনে আরাজের গাড়িটা পুরো রাস্তায় জ্যাম বাধিয়ে ফেলেছে।রাস্তার লোকজন হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে।আরাজের দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুখে হাসি নিয়ে আয়েশ করে বসে আছে।সাত পাচ না ভেবে আমি গাড়িতে উঠে পড়লাম।
-আমাকে ইনায়াত বলে ডাকলে খুশি হব।হুট হাট করে কেউ ইনা ডাকলে অড লাগে।I hope you’ll understand.By the way তুমি হঠাত এদিকে?

-শপিং এ যাচ্ছিলাম ।দেখলাম তুমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছ।মেবি রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছিলে।তাই ভাবলাম একই দিকে যাচ্ছি তো একসাথে যাওয়া যাক!

আরাজের কথার জবাবে আমি হালকা হাসলাম।

বাকিটা রাস্তা দুজনে চুপচাপ কাটিয়ে দিলাম।আরাজ কিছু বলার জন্যে বেশ উষখুশ করছিল।কিন্তু কিভাবে শুরু করবে ভেবে পাচ্ছিল না।আমিও আর ওকে ঘাটালাম না।আজ হঠাত করে কেন জানি আরদ্ধকে বেশ মিস করছি।খুব করে তার শূন্যতা অনুভব করছি।

গাড়ি অফিসের সামনে এসে থামল।আমি আরাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেমে পড়লাম।সামনের দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে তার ডাক শুনতে পেলাম।

-ইনা…।

আমি ফিরে তাকাতেই আরাজ লজ্জাসূচক হাসি দিয়ে বলল

-সরি ইনায়াত।হ্যাপি বার্থডে।

-তুমি কিভাবে জানলে?

-তোমার ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া ছিল।এনিওয়েজ এটা তোমার জন্যে বার্থডে গিফট ।Have a nice day.

আমাকে গিফটের বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে আরাজ আর অপেক্ষা করল না।গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল।

আরাজ আমার বার্থডে জানে ব্যাপারটা আমাকে খুব একটা ভাবাচ্ছেনা ।সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এসব তথ্য জানা বা হাতের খেলা।আমি কেবিনে গিয়ে টেবিলের এক কোনায় গিফট বক্সটা ফেলে রাখলাম।ফোনটা বের করে আরদ্ধকে টেক্সট করলাম

-পৌছে গিয়েছি আমি।

বেশ খানিকক্ষন অপেক্ষা করলাম।কিন্তু ওপাশ থেকে কোন রিপ্লাই এল না।আমি ফোন ছেড়ে কাজে মন দিলাম।কলিগরা অনেকেই এসে এসে আমাকে বার্থডে উইশ করে যাচ্ছেন।লাঞ্চ আওয়ারে পিওন এসে আমাকে মিটীং যেতে বলল।গিয়ে দেখি তারা ছোট খাটো একটা সারপ্রাইজ পার্টির ব্যবস্থা করেছে আমার জন্যে।রুমটা সুন্দর করে সাজানো।অফিসের সবাই এখানে জমা হয়েছে আমাকে শুভ কামনা জানাতে।

কেক কাটা শেষ করে সবাই যার যার ডেস্কে ফিরে এলাম।বিকেল হয়ে এসেছে প্রায়।ফোনটা হাতে নিলাম।আরদ্ধের কোন খোজ নেই।না কোন কল না কোন ম্যাসেজ।আমি কল দিতেই ওপাশ থেকে যন্ত্রমানবী বলে উঠল-“আপনার ডায়াল কৃত নাম্বারটি এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে।“

ধ্যাত পুরো দিনটাই মাটি হয়ে গেল।আল্লাহ জানে কি এমন কাজে ব্যস্ত আছে সে!

.

.

কোন কাজেই মন বসছে না আজ।অফিসের কাজগুলো গুটিয়ে রেখে রওয়ানা হলাম বাসার উদ্দেশ্যে।মেইন গেটে দাড়াতেই আরদ্ধর গাড়ী দেখতে পেলাম।আমাকে দেখে ড্রাইভার এগিয়ে এসে বললেন

-ম্যাডাম স্যার আপনাকে বাসায় পৌছে দিতে বলেছেন।

-আরদ্ধ কোথায়?

-স্যার তো অফিসের কাজে বাইরে গেছেন।আপনি আসুন ।

বাইরে গেছে!তাও আমার আমাকে না বলে!কি এমন ইমার্জেন্সি হল যে আরদ্ধ আমাকে না জানিয়েই চলে গেল?আমি আরদ্ধকে কল দিলাম।আবারও সেই যন্ত্রমানবী একই কথা বলে কল কেটে দিল।

গাড়িতে উঠে কানে হেডফোন গুজে চোখ বুঝালাম আমি।কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে আমার।একটূ কাদতে পারলে হয়তো শান্তি হত।

বেশ খানিকক্ষন সময় পার হয়ে গেছে।এখনো গাড়ি থামেনি।চোখ খুলতেই ঘাবড়ে গেলাম আমি।সম্পুর্ন অজানা একটা জায়গায় এসে পরেছি আমি।ডড়াইভারকে জিজ্ঞেস করলাম

-আপনি কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে?

-ম্যাম স্যার আমাকে এই ঠিকানাই দিয়েছেন।

আরও বেশ কিছুক্ষন চলার পর গাড়ি থামলো একটা বাংলো বাড়ির সামনে।আমাকে নামিয়ে দিয়েই ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে চলে চেল।এই জনমানব শূন্য জায়গায় আমি পুরাই একা।

আমি সামনের দিকে পা বাড়ালাম। বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো।দু ধারে সারি সারি বাগান বিলাশ আর গোলাপ গাছ লাগানো।চারদিকে ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে গেছে।বাড়ির ভেতরটা বাইরের চেয়েও মোহনীয়।পুরাতন আর বিলাসবহুল জিনিসদিয়ে সবকিছু সজানো।আমি সামনের দিকে পা বাড়াতেই আমার মাথায় ফুলের বৃষ্টি হতে লাগল। অসংখ্য লাল গোলাপ এর পাপড়ি ছড়িয়ে পরছে আমার মাথার উপর।চোখ তুলে দেখি আরদ্ধ দুহাত পকেটে গুজে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ঠোটে শোভা পাচ্ছে এক অপূর্ব সুন্দর হাসি।….
চলবে
{নেক্স্ট পার্ট ইন শা আল্লাহ কালকে দিব}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here