ঝরাপাতার দিনগুলি পর্ব ১

#ঝরা পাতার দিনগুলি
#পান্না হাবিব
পর্ব -১

বাসর ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যেমনটা একটা মেয়ের সপ্ন থাকে। আমার সপ্নটা আবার একটু আলাদা ছিল। আমি সবসময় চাইতাম আমার বাসরঘরটা যেনো বেলি ফুল দিয়ে সাজানো হয় । ঠিক তেমনিই সাজানো হয়েছে।
-কিরে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
-না ফুপি কিছু না।
-আবার ফুপি ডাকিস? কতবার বলবো এখন থেকে আম্মু ডাকবি।
-মুচকি হেসে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
-তুই হাসতেছিস কেন! তুই তো লজ্জা পেয়ে বলবি।গাধি একটা।
– কি করবো বলো আমার লজ্জা শরম তো একটু কম
– বেহায়া মেয়ে একটা
বউ শাশুড়ী মিলে তো খুব গল্প হচ্ছে। তাকিয়ে দেখি রিতু আপু।
কি যে বলনা আপু।দেখোনা আপু ফুপি আসছে আমাকে আম্মু ডাক শিখাইতে। এতো দিনের অভ্যাস কি একদিনে যাবে বলো তুমি। আমি কি বলছিলাম যে সাব্বির ভাইয়ার সাথে আমাকে বিয়ে দাও?
এখন খামাখা সবাইকে অন্য কিছু ডাকতে হবে। গাল ফুলিয়ে বললাম আমি।
ফুপি আর রিতু আপু জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো।
-এই যাওতো তোমরা। সাব্বির ভাই থুক্কু আমার জামাইকে পাঠাও আর ভাল্লাগতেছে না।
– এই তোর তো লজ্জা শরম আসোলেই অনেক কম! ফুপি হা হয়ে আমাকে বলল আমাকে। আর রিতু আপু হাসির জন্যে কথাই বলতে পারছে না।
এর মধ্যেই জারা এসে বলল মাম্মাম, নানুভাই তোমরা হাসছো কেন?
-দেখো না মামনি আমার শাশুড়ী আর ননাস আমার জামাইকে দিচ্ছে না।তুমি একটু আমার জামাইকে নিয়ে আসবে প্লিজ! আমি জারার গাল ধরে বললাম।
এই নানুভাই, রিতু চলতো যাই আমরা। এই মেয়ের মাথা আবার গেছে।

আমি তাদের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। আচ্ছা ফয়সাল এখন কি করছে। ও কি আমার কথা ভাবছে এখন। আচ্ছা এখন আমার কি নিয়ে চিন্তা করা উচিত। ৫ বছরের সম্পর্ক টা কেনো ভেঙে গেলো সেটা নাকি এর ৩ দিনের মাথায় নিজের আপন ফুফাতো ভায়ের সাথে বিয়ে, নাকি ১ সপ্তাহ আগে বাবা মারা গিয়েছে সেটার শোক পালন করবো। কিছুই বুঝতে পারছি না।
উফফ!! অসহ্য মাথা ব্যাথা আবার শুরু হয়েছে। বাথরুমে ঢুকে শাড়ি চেঞ্জ করে মাথায় পানি দিলাম কিছুক্ষন। ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল পরে বাইরে বের হলাম। কি পরবো কিছুই খুজে পাচ্ছি না। দরজা চাপিয়ে চুপচাপ খাটে পা দুলিয়ে বসে আছি।

দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। সাব্বির ভাই থুক্কু আমার হাসবেন্ড আসছে।

দরজা খোলার শব্দে উপরের দিকে তাকালাম। মেরুন কালারের শেরয়ানি তে সেই লাগছে দেখতে !! কিছু সময়ের জন্য আশেপাশের সব ভুলে গেলাম। সেই ১২ বছর আগের অনুভূতি গুলো বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিনিয়ে উঠলো।

ইশ্ কি হত যদি ঐ ঝামেলাটা না হতো। দুচোখ আবার পানিতে ভরে গেল। কিন্তু পানি আর গরিয়ে পরে না কেন জানি। চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে যায়।

-আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, এই শরীর আর কয়জনকে দেখিয়েছিস? এইভাবে শরীর দেখিয়েই বুঝি বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতি? কি ভাবছিস আমিও তোর ঐসব বয়ফ্রেন্ডদের মতো তোর কাছে আসবো লুতুপুতু প্রেম করতে? কুত্তার বাচ্চা!!

নিজের কান আর চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সাব্বির এর মুখ থেকে এই ধরনের কথা বের হতে পারে! এই সাব্বিরকে তো কেউ কোনদিন দেখেছে বলে মনে হয় না!

আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম!! আমার এখন কি করা উচিত। কিছু না বলে চুপচাপ খাটের এক কোনায় গিয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। একটু পর মাথা বের করে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া একটা সিগারেট হবে?

উত্তরে রক্ত লাল চোখ দেখে আচ্ছা লাগবে না বলেই কাথা মুড়িয়ে আবার শুয়ে পরলাম।

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ তীব্র ধোয়ার গন্ধে। কাথা সরিয়ে দেখি সাব্বির সোফায় বসে সিগারেট খাচ্ছে!
হচ্ছেটা কি আজকে! যে ছেলে জীবনে কোনদিন সিগারেট খাইনি সেই ছেলে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে।
শোয়া থেকে উঠে দেখি খাটের উপর একসেট সালয়ার কামিজ রাখা। উঠে বাথরুম থেকে ড্রেস পরে বের হলাম। রুমে সিগারেটের ধোয়ায় থাকা যাচ্ছে না। বেলকনির দিকের দরজা আর রুমের জানালা খুলে দিয়ে আবার শুয়ে পরলাম।

কিছুক্ষন পর হেচকা টান দিয়ে কেউ আমাকে বিছানা থেকে ফেলে দিল। পরমুহূর্তেই গালের উপর ঠাস্ করে কারো পাঁচ আঙুল পরল!

পিটপিট করে গালে হাত দিয়ে চোখ খুললাম।

-তোর মতো মেয়েদের জায়গা এইটা না। ভুল করেও যেন বিছানায় না দেখি তোকে।

কিছু না বলে কাথা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পরলাম। আচ্ছা কারো বাসর রাত কি এমন হয় কখনো? ফয়সালের কথা মনে পরছে ভীষণ। ও সবসময় বলতো, মেহের দেখবে, আমার আর তোমার বাসর রাতে সারা রাত ঝগড়া করতে করতেই পার হয়ে যাবে। আমি সেইটা নিয়েই ঝগড়া শুরু করে দিতাম। আর আজ!!!

চিন্তা করার বোধশক্তি মনে হয় আমার শেষ হয়ে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here