ঝরাপাতার দিনগুলি পর্ব ৯

#ঝরা পাতার দিনগুলো
#পান্না হাবিব

পর্ব- ৯

“কিরে মেহের তুই তো সেই ভি আইপি হয়ে গিয়েছিস”
তাকিয়ে দেখি জেনি ঢুকেছে কেবিনে।
-কেন কি হয়েছে?
-ভাইয়া তোকে কিছু বলে নি?
চুপচাপ থাকতে দেখে নিজেই বলতে শুরু করলো, না মানে তুই চিটাগং মেডিকেলের কেবিনে শুয়ে আছিস তাই বলছি আর কি। কেবিন পাওয়া তো অনেক ঝামেলার ব্যাপার তাই বলছিলাম আর কি।
-কি হয়েছিল আমার?
-টানা দুদিন ধরে জ্বর সাথে খিচুনি। আমি তো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-কিহ, ২ দিন!!!
-জি আপা। ২ দিন। ভাইয়া না থাকলে যে কি করতাম আমি। সেদিন বিকেলে ফোন রাখার একটু পরেই আমাদের ভার্সিটির এম্বুলেন্স এসে হাজির। তোকে হাস্পাতালে আনতে আনতে ভাইয়া সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।
– ও।
– খালি ও!! ভাইয়ার সাথে তোর ঝামেলাটা কি রে?
-জানি না আমি। ভালো লাগছে না। হলে যাবো।
-জানিস এইখান কার বড় বড় সব ডক্টর, প্রিন্সিপাল সবাই এসেছিলেন তোকে দেখতে।
-তুই আমাকে এসব কেন বলছিস? আমি জানতে চেয়েছি কিছু? রিলিজ দিবে কখন আমাকে? হলে যাবো আমি।
ঢং দেখাইতে আসছে এইখানে। বিলাই সাজে সবার সামনে। আর আমার সামনে আজরাইল।

“এইখানে থাকতে কেনো মন চাইবে। নাগর তো ভার্সিটিতে। শুধু শুধু আমার যাওয়াটা নষ্ট করলো।”
সাব্বিরের কথা শুনে জেনি হতভম্ব হয়ে একবার আমার দিকে তাকায় আবার সাব্বিরের দিকে।

বিকেলের দিকে হলে চলে আসি। পরের দিন সকালেই সাব্বির ঢাকায় চলে গেলো। কেন জানি সাব্বির কে খুব মিস করছি।
শশুর শাশুড়ী প্রতি বেলায় ফোন করে খোজ খবর নেয়। কি হবে আমার জীবনে?? সাব্বির যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয় কোথায় যাবো আমি? মানুষের কথা শুনতে শুনতে তো মরেই যাবো। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম, আমার ভাইবোন গুলোকে তো সারাজীবন কথা শুনতে হবে। মানুষ এইরকম কেন?

অনেক দিন পর প্রিমাকে ফোন দিলাম।
-কি বান্ধবি সাব্বির কে পেয়ে তো আমার কথা ভুলেই গিয়েছিস?
-উল্টো ফুলটো কথা বলিস না তো প্রিমা।
-কেন এখনো মান অভিমান ভাংগে নাই?
-সে কি আমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো নাকি যে মান অভিমান থাকবে। আছে তো জেদ শুধু । পেটটা ভরা জেদ নিয়ে ঘুরে বেরায়।
-কি বলিস!!
-বাদ দে, তোর কি খবর বল।
-ফয়সাল ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে?
-হুম।
-কিছু বলে নাই?
-বলছে।
-কি?
-বলছে যে আমি আমার পছন্দের মানুষের সাথেই নাকি বিয়ে করেছি।
-ঠিকই তো বলছে।
-প্রিমা মেজাজটা খারাপ করিস না। দুষ্টামি করার মুডে নাই আমি। ফোন রাখ। বাই।

প্রিমা এই কথা বললো কেন? কিছু তো একটা ঝামেলা আছেই। না হলে হঠাৎ করে সাব্বিরই বা বিয়ে করার জন্য এইরকম মরিয়া হয়ে যাবে কেন। আর ঠিক যে টাইমটায় ফয়সালের সাথে ব্রেকাপ তখনই বিয়েটা হলো। কিছু তো ঝামেলা আছে।

“মনে হয় সাব্বির ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।” জেনির কথাটা খেয়াল করিনি।
-কি বললি? খেয়াল করি নাই রে
-নাহ কিছু না
-আরে বলনা। অন্যমনস্ক ছিলাম শুনতে পাইনি।
-আমার কেনো জানি মনে হয় সাব্বির ভাইয়া তোকে অনেক ভালো বাসে।
ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বললো
-না মানে তুই তো ২দিন যাবত বেহুশ ছিলি। এই টাইমটায় হসপিটালে আমি কিন্তু ছিলাম না। সাব্বির ভাইয়া ছিলো। ২৪ ঘন্টা তোর পাশে বসে ছিলো। কিন্তু দুপুরের কথার সাথে উনার কাজের কোনো মিল পাচ্ছি না। এই কথা কেনো বললো তখন। তোর উপর কি কোনো কারণে বিরক্ত?
– কি জানি।
চুপচাপ থাকতে দেখে আর কিছু বললো না জেনি।

আমি জানি আমার প্রতি সাব্বিরের ফিলিংস আছে।
কিন্তু সেই জিনিসটাই তো আমি সবথেকে বেশি ভয় পেতাম। যেটা কখনোই চাইনি সেটাই হচ্ছে এখন। সাব্বিরের প্র‍তি তো আমারও ফিলিংস ছিলো। যার জন্যে,…… মনে পরতেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।

পরেরদিন ল্যাবে গেলাম। গিয়ে দেখি ফয়সাল কাজ করছে। ঠিক করলাম যত কিছুই হোক আর বেহুশ হওয়া চলবে না। বি ব্রেভ মেহের বি ব্রেভ। লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করলাম।

“তো মেহের হাসবেন্ড এর সাথে তো মনে হয় ভালোই আছো?”
মানুষকে সবার সামনে অপমান করার বদঅভ্যাসটা ফয়সালের এখনো গেলো না।
-না স্যার ভালো নেই, কারণ হাসবেন্ড এর চেয়ে বয়ফ্রেন্ড কে বেশি ভালোবাসতাম তো তাই। আর সেই বয়ফ্রেন্ডই স্যার যখন আমার বিয়ে ঠিক হইছে তখন ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই একটুও ভালো নেই স্যার।
ফয়সাল থতমত খেয়ে গেলো আমার উত্তর শুনে।
আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। মনেহয় এর পরের উত্তর গুলো আরও ভয়াবহ হবে এই ভেবে বোধহয়।

মনের ভিতর খুবই শান্তি লাগতেছে কথা গুলো বলতে পেরে। ফুরফুরে মেজাজে ঐদিনকার মতো কাজ শেষ করে রুমে আসলাম। অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। কিন্তু কি থেকে কি শুরু করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

প্রিমাকে ফোন দিলাম।
-কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিবি। কোনো ধানাই পানাই করবি না।
প্রিমা যে ভয় পেয়ে গেছে সেটা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি
-আচ্ছা বল কি জানতে চাস।
-তোর সাথে সাব্বিরের লাস্ট কবে কথা হইছে?
-অনেক দিন আগেইতো মনে হয়। না মানে কথা হয় নি তো কোনো।
প্রিমার যে কথা হইছে সাব্বিরের সাথে সেটা আমি আমি জানতাম না। বান্ধবিটা আমার অনেক সহজ সরল। আমার ট্রিকি কোয়েশ্চেনটা ধরতে পারেনি।
-কি কথা হয়ছে বল আমাকে প্রিমা?
-আচ্ছা তুই ভাইয়াকে দেখতে পারিস না কেন? তোদের সবই তো ঠিক ছিলো। ভাইয়া তোকে অনেক পছন্দ করে।
– আমাদের ২ ফ্যামিলির মাঝে অনেক ঝামেলা আছে রে। অনেক কথা। এসে বলবো। আগে তুই বল, কি নিয়ে কথা বলছিস তুই সাব্বিরের সাথে?
-ঐ রকমকিছুই না। জিজ্ঞেস করছিলো যে তোর আর ফয়সাল ভাইয়ার রিলেশন কেমন। তোরা সিরিয়াস কি না রিলেশন নিয়ে, এই গুলোয়।
-আর কিছু জিজ্ঞেস করে নি?
-না। আর লাস্ট একটা কথা বলছে শুধু।
-কি। মেহনাজ আপুর জন্যে নাকি উনার ভাইয়ার লাইফটা শেষ হয়ে গিয়েছে।

চমকে উঠে ফোনটা হাত থেকে পরে গেলো আমার। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে অনেক। তাহলে এটা রিভেঞ্জ ছিলো!!!!!
আমার এতো কস্ট কেনো হচ্ছে। কান্না আসতেসে কেন। আমার তো রাগ হওয়ার কথা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here