ঝরা ফুলের বাসর পর্ব ৪

#ঝরা_ফুলের_বাসর_০৩
#পার্ট_০৪
#Mst_Liza

মাঝ রাতে ঘুম ভাঙতেই চমকে উঠলাম আমি।দেখতে পেলাম হৃদ আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আর আমি হতভাগ হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।আমাকে নরে উঠতে দেখে মাথা উঁচিয়ে তাকালো আমার মুখপানে।আমি কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে কিছু বলতে যাবো এমন সময় হৃদ আমার ঠোঁটের মাঝে আঙুল ঠেকিয়ে থামিয়ে দিলো।আমাকে টেনে ঘুরিয়ে আবদ্ধ করে নিলো নিজের বাহু ডোরে।এক হাতে আমার পিট থেকে চুল সরিয়ে অন্য হাতটা দিয়ে আমার জামার চেইনটা খুলতে লাগলো।আমার ধ্যান ফিরতে হৃদকে ঠেলে উঠে বসলাম।আর হৃদ হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরতে লাগলো।আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না এই মুহূর্তে ওর হাসির কারণটা কি? কিছু বলতে যাবো আমি তার আগেই এক ধাক্কায় নিচে ফেললো আমায়। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফেলাফেলিয়ে আবারও হাসতে লাগলো।

আমি রাগি দৃস্টিতে উঠে দাড়িয়ে হৃদের মুখের সামনে হাতের আঙুল তুলে বললাম,

-এটা কেমন ধরণের অসভ্যতামি? তখন না বললেন আপনি আমায় ভালোবাসেন? তাহলে এখন ধাক্কা কেন দিলেন আমায়?

হৃদ আমার আঙুলটা ধরে মুচড়ে ধরলো।আমি ব্যাথা পাচ্ছি দেখতে পেয়ে হাত ছেড়ে চুলের ভাজে হাত ডুবালো। আর বলল,

-তোকে ভালোবাসবো আমি?

আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে দাড়ালো।তারপর বলতে লাগলো,

-আজ রাতের পার্টিতে যেই চকোলেট গুলো খেয়েছিলি তুই।তাতে নেশার ওষুধ মেশানো ছিলো।তোর মতো সস্তার একটা রাস্তার মেয়েকে নিয়ে মজাই করা যায় ভালোবাসা যায় না।

ঘুরে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলল,

-তোর মতোন একটা রাস্তার মেয়ের জন্য আমি আমার পরিবার থেকে এতোগুলো বছর দূরে থেকেছি।কি না করেছিলোম তোকে তাড়ানোর জন্য কিন্তু না।কাকিমা তোকে দত্তক দিয়ে নিলো।

আমাকে টেনে বসিয়ে দিয়ে বললো,

-তোর থেকে যা মজা নেওয়ার তা আমার নেওয়া হয়ে গেছে। তুই এটারই যোগ্য।বিয়ে তো আমি নূরকে করবো।আর তুই! নিজেকে কি মনে করিস বলতো? আসলে তুই সত্যিই একটা নিলজ্জ।কম তো অপমান করলাম না তোকে। তবুও লজ্জা নেই পরে আছিস এবাড়িতে।তোর মতো নিলজ্জ, বেহায়া আর আজকে যেই দাগটা লাগলো নস্টা মেয়ে।বিশ্বাস কর আমি জীবনেও দেখি নি।

আমার থুতনিটা উঁচু করে মুখটা তুলে বললো,

-এখনো লজ্জা নেই তোর? আমার রুমেই দাড়িয়ে আছিস?

আমার হাত ধরে টেনে রুমের বাইরে এনে মুখের সামনে দরজাটা বন্ধ করে দিলো হৃদ।আর আমি এক দৃস্টিতে দরজাটার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার শরীরটা যেন চলছে না।বিশ্বাস হচ্ছে না হৃদের বলা কথাগুলো।মনে মনে ভাবছি একটা মানুষ এতোটা খারাপও হতে পারে? তখন আমার মাথাটা চক্কর দিলো তারপর তো কিছুই মনে নেই।তাহলে সত্যিই কি ওই চকোলেটগুলোতে নেশার ওষুধ মেশানো ছিলো? ছিঃ এতোটা নিচ হৃদ? এতোগুলো বছর ধরেও আমার প্রতি রাগ পুষে রেখেছে। আর আমি বোকার মতোন ভেবেছি নিজের ভুল বুঝতে পেরে অপরাধ বোধ ভালোবাসাতে পরিণত হয়েছে।

আজ থেকে বারো বছর আগের কথাগুলো ভাবছি আমি।

-খুব হাসিখুশিতে ভরপুর একটা পরিবার ছিলো আমার।বাবা, মা আমাকে অনেক ভালোবাসতো।সেদিন আমার বাইনা রাখতে বাবা, মা নানু বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো আমাকে।কিন্তু বাবা, মায়ের ভালোবাসার বিয়েতে তাদের রাগের রেশ তখনও কাটে নি।আমাদের অনেক অপমান করে তারিয়ে দিয়েছিলো তারা।ফিরে আসার সময় আমাদের রিক্সাটা একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খাই। সেই গাড়িটা ছিলো হৃদের বাবার।সেদিন হসপিটালে যখন আমার জ্ঞান ফেরে জানতে পারি এক্সিডেন্টে বাবা, মা মারা গেছে।আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিলো না তখন।হৃদের বাবা আর কোনো রাস্তা না পেয়ে এবাড়িতে নিয়ে এসেছিলো আমাকে।এবাড়ির সকলে আমাকে অনেক ভালোবাসতো।যেটার কারণে হয়তো হৃদের আদরটা কমে যেতো।ও অনেক চেস্টা করেছে এবাড়ি থেকে আমাকে বের করতে।সকলের সামনে আমাকে নিচু প্রমাণ করতে।কিন্তু আমার ব্যবহার আর হাসিখুশি মাখা মুখটা দেখে সকলের মায়া হতো।আর তাই আমাকে বার বার ক্ষমা করে দিতো।হৃদ নিজে অপরাধ করতো আর আমার উপর সব দোষ দিতো।একবার তো আমাকে অনাথ আশ্রমে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো সবাই।এমনকি অনাথ আশ্রমে রেখেও এসেছিলো।কিন্তু আমার বর্তমান বাবা, মা আমাকে দত্তক নিয়ে আবার এবাড়িতে ফিরিয়ে এনেছে।হৃদ আরও রেগে গিয়েছিলো তারজন্য।ও মেনে নিতে পারে নি একটা রাস্তার মেয়ে এবাড়িতে থাকবে তাদের সাথে।হৃদের বাবা, মা যখন জানতে পারে হৃদের আমার প্রতি রাগটা।তখন তারা হৃদকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয় লেখাপড়া করার জন্য।বারো বছর পর আজ হৃদ ডাক্তার হয়ে দেশে ফিরলো।কিন্তু ওর ভেতরটা যে আজও আগের মতোই থাকবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি।এতোটা জঘন্য একটা কাজ করলো হৃদ?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here