ঝরা ফুলের বাসর পর্ব ৫+৬

#ঝরা_ফুলের_বাসর
#Season_02
#Part_05&6
#Mst_Liza

ডাক্তারের কথা শুনে ফুল কিছুটা পিছিয়ে যায়।ফুলের ভেতরটা ভেঙে নিঃশূণ্য হয়ে যায়।ফুলের পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে।ফুল মানতেই পারছে না তার হৃদ তাকে ভুলে গেছে। হৃদের বাবা-মাও খুব ভেঙে পরে।যখন হৃদের জ্ঞান ফিরে আসে হৃদ সত্যিই কাউকে চিনতে পারে না।ফুল চেস্টা করে তার হৃদের মনে নতুন করে ভালোবাসা তৈরি করতে।কিন্তু পারে না।কারণ তার আগেই হৃদের জীবনে নূর চলে আসে।হৃদের জন্য ফুল সব করতো।হৃদ বাড়িতে যতটুকু সময় থাকতো ফুল হৃদের আসেপাশে থাকতো।হৃদের প্রয়োজন, অপ্রয়োজন সব কিছুর খেয়াল রাখত।হৃদ অফিসে গেলে রাত জেগে হৃদের জন্য বসে থাকা। হৃদকে খাইয়ে তারপর ঘুমোতে যাওয়া। এমনকি সকালে ঘুম থেকেও হৃদকে জাগিয়ে তোলা।যা একজন স্ত্রী তার স্বামীর জন্য করে।

ফুল জানতো হৃদের ঘুম খুব কড়া। তাই মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ করলে সুযোগ বুঝে ঘুমন্ত হৃদের বুকে এসে শুয়ে থাকতো।হৃদের বুকে মাথা রাখলে ফুল নিজের সব কস্ট ভুলে যেতো।হঠাৎ একদিন হৃদ এসে ফুলকে নূরের কথা বলল।বলল বাবা-মাকে বলতে পারছে না নিজের বিয়ের কথা। হৃদের খুশির কথা ভেবে ফুল হৃদের সেই ইচ্ছাটাও পূরণ করে দেয়।তাছাড়া ফুলের কাছে যে আর কোনো উপায় ছিলো না।কারণ পাঁচ বছর ধরেও হৃদের মনে একটু জায়গা করতে পারে নি ফুল।আর হয়তো পারবেও না।তাদের বিয়ের কথা কাউকে বললে হয়তো বিশ্বাসই করবে না।আর হৃদের যেই বন্ধুরা তাদের বিয়ের সাক্ষী ছিলো তাদের কারও ঠিকানা ফুলের যানা নেই।হৃদেরও তো কিচ্ছু মনে নেই।ওর স্মৃতি জুড়ে এখন শুধুই নূর।

হ্যাঁ, তাই ফুল হৃদের সুখের জন্য এতটুকু সেক্রিফাইস করেছে।নূরের করে দিয়েছে হৃদকে।ফুল বোঝে হৃদের কখনো আর তার সাথে কাটানো সুখের দিনগুলো, মুহূর্তগুলো মনে পরবে না।ফুল তবুও মনে প্রাণে চাই হৃদের সবকিছু মনে পড়ুক।হৃদ আবার আগের মতোন তাকে ভালোবাসুক। হৃদের সেই শেষ স্পর্শ। শেষ আদর এখনো ফুলকে কাঁদায় যখন হৃদ নূরের খুব কাছে থাকে।রাত হলেই ফুল খুব ভয়ে থাকে তার হৃদ নূরের না হয়ে যায়।তাই মাঝরাতে পাগলের মতোন কাঁদতে থাকে ফুল।ফুলের সব কস্ট, সব দুঃখ উজাড় করে স্রষ্ঠার দরবারে রাখে।স্রষ্ঠাকে বলে এই জন্মে না হোক পরের জন্মে যেন হৃদ তার জান্নাতে হয়।ফুলের মনে আছে, তার মা বলতো স্বামী বেঁচে থাকতে স্ত্রী মারা গেলে নাকি সেই স্ত্রীর জান্নাত স্বামীর সাথেই হয়।তাই ফুল স্রষ্ঠার কাছে চাই তার মৃত্যু খুব তারাতারি হয়ে যাক।যেন হৃদের জন্য সে কবরে গিয়ে শান্তিতে অপেক্ষা করতে পারে।এই জীবনে হোক না হৃদ নূরের।কিন্তু ফুল হৃদকে অনন্তকালের সঙ্গী হিসেবে পাবে।

বর্তমান,,,,

অনুষ্ঠান শেষে সবাই বাড়ির ভেতরে আসে।অনেক রাত হয়ে যায় যে যার রুমে।নূর হৃদের রুমে না গিয়ে ফুলের রুমে যায় ঘুমোতে।মাঝ রাতে হৃদের ঘুম ভাঙলে আর ঘুম আসে না।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত ২টা।হৃদ রুমে অনেক্ষণ বসে থেকে ভাবে নূর কোথায়? নাহ এভাবে বসে থাকা যাবে না।হৃদ উঠে নূরকে খুঁজতে থাকে।সারা বাড়িতে সবাই ঘুম।হঠাৎ হৃদের কানে ফুলের রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ ভেসে আসে।হৃদ এগিয়ে গিয়ে দেখে ফুল আর নূর হাসছে কিছু একটা বিষয় নিয়ে।

আহ হাসলে তোমাকে কতো সুন্দর লাগে জানেমন।হৃদের কথায় ফুল আর নূর চেয়ে দেখে নূরের মুখটার দিকে দরজার সাথে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে হৃদ।

নূর আমতা আমতা করে বলে, হৃদদ তুত…ত…তুমি?

হৃদ এগিয়ে এসে নূরের সামনে দাড়ালে নূর বিছানা থেকে নেমে যায় আর হৃদের থেকে পালানো চেস্টা করে।হৃদ নূরের হাতটা ধরে বসে নূরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় তারপর নূরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে, কোথায় পালাবা জানেমন?

নূর কোনো রকমে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে ছুটতে থাকে। হৃদও নূরের পিছনে ছোটে।ফুলের চারপাশ দিয়ে হৃদ আর নূর গোলগোল করে ঘোরে।অবশেষে হৃদ নূরকে ধরতে গিয়ে ফুলকে জোড়িয়ে ধরে।আর ফুলের পেছনের থেকে এক হাতে ফুলকে ঝাপটে ধরে অন্য হাতে নূরের হাতটা টেনে ধরে।

হৃদ ফুলকে জোড়িয়ে ধরায় ফুলের দুচোখে পানি চলে আসে।ফুল কেঁদে উঠে হৃদকে আপন মনে জড়িয়ে ধরতে চায় এমন সময় হৃদ ফুলকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে নূরকে নিজের কাছে টেনে নেয়। ফুল তাকিয়ে হৃদকে আর নূরকে এতো কাছাকাছি দেখে অঝোরে কেঁদে চলেছে।কিন্তু সেদিকে ওদের খেয়াল নেই।হৃদ নূরকে বলছে, রাত দুইটা বাজে এখনও তুমি ফুলের রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছো? সো ব্যাড জানেমন! বসে আছে না তোমার স্বামীটা?

তো কি করবো? তোমারতো নেশা ধরেছে! কি করছিলে দুপুরে ওটা? বলেছিলাম তো তিনদিন পর তারপরও শুনলে না। অমন কেন করবা? কথাটা আহ্লাদী স্বরে বলে নূর।

আচ্ছা সত্যি কি কিছু করেছিলাম? কই মনে পরছে নাতো।

হৃদের কথা শুনে নূর হা হয়ে তাকিয়ে থাকে হৃদের দিকে।আর হৃদ বলে, চলো না আমার রুমে একা একা ভালো লাগছে না।

না যাবো না।গেলে তুমি আবার ওসব করবা।

কিচ্ছু করবো না এই প্রমিস।

নূর ঠোঁট বাকিয়ে ভ্রু কুচকে হৃদের দিকে তাকায়। এমন সময়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়।অন্ধকারে নূর হৃদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, আমাকে খোঁজো! যদি পাও তাহলে যাবো।

হৃদ অন্ধকারে কিছু দেখে না।হাঁটতে গেলেই হোটচ খেতে থাকে।নূরের তো সেই মজা লাগছে হৃদ ওকে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না।নূর ফুলের পিছনে গিয়ে ফুলকে পিছনের থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে বলে, বলো না কিন্তু আমি এখানে আছি।

ফুলের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। ফুল অঝোরে কেঁদে চলেছে।হৃদ নূরকে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছে বলে নূর ফেলাফেলিয়ে হেসে ওঠে আর হৃদ হাসির শব্দ পেয়ে এগিয়ে এসে বিছানার উপর থেকে ফুলকে এক ঝাটকায় টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। আর বলে, এইতো পেয়েছি।এবার যাবে কোথায়, হ্যাঁ? আমার সাথে লুকোচুরি? দাড়াও এর মজা তোমাকে বোঝাচ্ছি কথাটা বলেই হৃদ ফুলের মাথাটা শক্ত করে ধরে ফুলের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেয়। আচমকা এমন হওয়ার ফুলের এবার হুঁশ আসে।ফুল ভাবে কি করছে এটা হৃদ? ফুল কিছু না ভেবেই নিজের চোখদুটো বন্ধ করে রাখে।ফুলের বন্ধ দুচোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রুও গড়িয়ে পরে।ফুল নিজেকে এবার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।হৃদের মাথাটা আকড়ে ধরে ফুলও নিজের ঠোঁটের আলতো পরসের মাঝে হৃদকে ডুবিয়ে দেয়।

হঠাৎ নূর এসে হাসতে হাসতে হৃদকে পিছনের থেকে জড়িয়ে ধরে বলে।আমাকে নয় ফুলকে ধরেছো তুমি।নূরের কন্ঠে কথাটা শোনা মাত্র হৃদ ফুলের ঠোঁট ছেড়ে দেয়। তারপর ফুলের মাথাটা থেকে নিজের হাত নামিয়ে ফুলের ঘাড় ধরে এক ঝাটকায় ধাক্কা দিয়ে ফুলকে নিচে ফেলে দেয়।

ফুল মেঝেতে পরে যায় আর বিদ্যুৎ চলে আসে।হৃদের এমন আচারণ ফুল মেনে নিতে পারে না।ফুল কিছু বুঝে উঠতে পারে না কেন হৃদ এমন করলো।ফুল কান্নার স্বরে হৃদের দিকে তাকিয়ে শুধু জানতে চায়, আমাকে ফেলে দিলে কেন? ফুলের কথা শুনে নূর পিছনের থেকে হৃদকে ছেড়ে দিয়ে ঘুরে সামনে গিয়ে দাড়িয়ে দেখে ফুল নিচে পরে কাঁদছে।নূর গিয়ে ফুলকে টেনে তোলে।আর হৃদের দিকে তাকিয়ে বলে, কি হয়েছে হৃদ? ফুলকে এভাবে তুমি ফেলে দিয়েছো কেন?

হৃদ কিছুই বলে না নূরকে দেখে শুধুই চুপ করে থাকে।আর রাগি দৃস্টিতে ফুলের দিকে তাকায়।এতোটা রাগ এর আগে কখনো করেনি হৃদ ফুলের উপরে।কিন্তু আজ হৃদ পারছে না ফুলকে সহ্য করতে।আর কিছু বলতেও পারছে না নূরের সামনে।নূর আরও কিছু হৃদকে বলতে যাবে তার আগেই নূরকে টেনে ফুলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে এনে ফুলের দুই গাল ঠাসসসস! ঠাসসসস! করে কয়েকটা কষিয়ে চর বসিয়ে দেয় হৃদ।

নূর গিয়ে টেনে হৃদের সামনে থেকে ফুলকে সরিয়ে নেয়। তারপর ফুলকে কাঁদতে দেখে নূর নিজের বুকে ফুলের মাথাটা চেপে ধরে হৃদের দিকে ঘুরে তাকায় আর বলে, এভাবে মারছো কেন একে? আমিই তো এর পিছনে লুকিয়ে ছিলাম।এইটুকু সামান্য ব্যাপার নিয়ে তুমি ফুলকে এভাবে মারবে? আমি ভুল করছি আর কখনো খেলবো না তোমার সাথে।

হৃদ ফুলকে ঠেলে নূরের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নূরের হাতটা ধরে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে যায়। তারপর ভেতর থেকে রুমের দরজাটা বন্ধ করে নূরকে বলে, বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরতে।নূর কিছু বলতে চাইলেই ও হৃদ এই মুহূর্তে কিছু শুনতে চায় না।নূরকে ঝাড়ি দেয় আর নূর হৃদের মেজাজ এখন খিটখিটে থাকায় কথা না বারিয়ে গিয়ে শুয়ে পরে।

হৃদ ওয়াশরুমে গিয়ে নিজের ঠোঁটে বারবার সাবান দিয়ে ঘষতে থাকে।হৃদ মনে মনে ভাবে, আমি না হয় ভুল করে ফেলেছি ফুলকে নূর ভেবেছি কিন্তু ফুল ও কেন এমনটা করলো? ফুল তুই এতোটা খারাপ হয়ে গেছিস? ছিঃ ফুল ছিঃ।এই জীবনে আর কখনো তোর মতোন মেয়ের মুখ আমি দেখতে চাই না।

চলবে,,,,,

আলসেমির কারণে লেখা এডিট করি নি।লেখার ভেতরে বানানের ভুল থাকতেই পারে।ওটা ধরার দরকার নেই।ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন🙂 খুশি হবো।😊
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#Season_02
#Part_06
#Mst_Liza

সকালে নূর ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় সাওয়ার নিতে।হৃদ এখন বিছানায় খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ফুল এসে দরজার কাছে দাড়িয়ে উঁকি ঝুকি দিয়ে নূরকে রুমের কোথাও দেখতে পাই না।ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ পেয়ে ফুল বুঝতে পারে নূর এখন ওয়াশরুমে আছে।তাই ফুল চুপিচুপি ধীর গতিতে পা ফেলিয়ে হৃদের কাছে এগিয়ে আসে।বিছানার উপরে এসে হৃদের পাশে বসে হৃদের দু’গালে দু’হাত রাখে ফুল।

কাল রাতে ফুলের গালে চর মারাই ফুলের গাল ফুলে লাল হয়ে আছে।হৃদের হাতের চারটা আঙুলের ছাপই বসে আছে ফুলের দু’গালে।ফুল নিচু হয়ে হৃদের ঠোঁটে নিজের গালটা অনেকক্ষণ ধরে আলতো ভাবে ঘঁষতে থাকে।তারপর হৃদের মুখের সামনে নিজের মুখটা রেখে হৃদের গায়ে জড়ানো কম্বলটা বুকের সাথে খামচে ধরে ঝাকিয়ে বলে, এই হৃদ তুমি তো এর আগে কক্ষনো আমার গায়ে হাত তোলো নি।তাহলে কাল এমনটা কেন করলে? কি করেছি আমি উত্তর দাও? কথাটা বলতে গিয়ে ফুলের চোখে পানি চলে আসে।যা গড়িয়ে হৃদের মুখে এসে পরে।আর হৃদ মুখে পানির ছিটা অনুভব করায় ঘুমের ঘোরে ফুলকে নূর ভেবে ঘুরিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে ফুলের শরীরের উপর নিজের সমস্ত ভারটুকু ছেড়ে দেয়।তারপর ফুলকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুলের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রেখে হালকা চোখ মেলে দেখে ওটা নূর নয় ফুল।

হৃদের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। ফুলের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে একটু উঁচু হয়ে মুখের দিকে তাকায়।দেখে ফুলের দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।ফুল এভাবে কাঁদছে দেখে হৃদের ভেতরটা যেন চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে।হৃদ আনমনা হয়ে ওইভাবেই ফুলের শরীরের উপরে শুয়ে থেকে ফুলের মুখের দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ।ভেতর থেকে যেন হৃদকে টানছে ফুলের দিকে।

হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ শুনে হৃদের ধ্যান ফেরে।হৃদ সঙ্গে সঙ্গে ফুলের উপর থেকে উঠে ফুলের হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে দাড় করায়।

নূর ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে সামনে তাকিয়ে হৃদকে ফুলের হাত এতো জোড়ে ধরে রাখতে দেখে রেগে যায়।তাই নূর এগিয়ে এসে হৃদের হাতের থেকে ফুলের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ফুলকে পিছনে রেখে নিজে হৃদের সামনে দাড়িয়ে বলে, তুমি আবার ফুলের সাথে দুঃব্যাবহার করছো হৃদ? ফুলকে টেনে সামনে এনে ফুলের থুথনিটা ধরে হৃদকে দেখিয়ে বলে, দেখোতো কাল রাতে কিভাবে মেরেছো ফুলকে।তোমার সব কয়টা আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিয়েছো।

নূরের কথায় হৃদ ফুলের মুখের দিকে তাকায় আর ওই ছাপগুলো দেখে হৃদের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠে।হৃদ নিজের মনকে প্রশ্ন করে, ফুলের জন্য আমার এমন লাগছে কেন?

নূর ফুলের হাত দুটো ধরে বলে, হৃদের হয়ে আমি ছরি বলে দিচ্ছি ফুল।হৃদ বোঝে কম। সামান্য একটা খেলা নিয়ে তোমাকে এভাবে মারবে আমি বুঝতে পারি নি।প্লিজ ওর জন্য আমার উপর রাগ করে থেকো না।ক্ষমা করে দাও আমাকে।

ফুল নূরের হাত নামিয়ে ইশারায় নূরকে ক্ষমা চাইতে নিষেধ করে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

ফুল চলে গেলে নূর হৃদের দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলে, কাঁদিয়ে দিলে তো ফুলকে? যতোক্ষণ না ফুলকে গিয়ে ছরি বলছো আর ফুলের মুখে হাসি ফুটছে ততোক্ষণ আমি তোমার সাথে একটা কথাও বলবো না।কথাটা বলে ভেজা চুলের থেকে তোয়ালে ছাড়িয়ে হৃদের বুকে ছুরে মারে তোয়ালেটা। তারপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে চিরুনি হাতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়নার ভেতর থেকে হৃদকে দেখে চুল আঁচড়ে যায় নূর।

ওদিকে ফুল নিজের রুমে গিয়ে কেঁদে চলেছে।হৃদের ছবিটা সামনে নিয়ে হৃদকে শুধুই গালি দিচ্ছে।তুমি পাষাণ, তুমি নির্দয়, তুমি স্বার্থপর হৃদ।শুধু নিজেরটাই ভাবো।এতটুকুও বোঝো না আমাকে।তবুও আমি যে তোমাকেই ভালোবাসি।আমার মন বারবার শুধু তোমার কাছে ছুটে যায়।তোমার সুখের জন্য আমি তোমার থেকেই দূরে থাকি।এরপরও তুমি আমাকে এতোটা কস্ট দাও। কেন হৃদ? কেন এতোটা নিষ্ঠুর হলে তুমি? আমাকে ভালোবাসো সেটা না হয় ভুলে গেছো কিন্তু এমনটা তো করো না যেটা করলে আমার খুব কস্ট হয়।












একটু বেলা হলে,,
নাহিদ এসেছে নূরদের নিতে।আজ নূর আর হৃদের ওবাড়িতে যাওয়া কথা।ফুল ভার্সিটি’তে যাবে বলে রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথায় হিজাব বাঁধছে। এমন সময়ে নাহিদ এসে ফুলকে পিছনের থেকে জড়িয়ে ধরে।ফুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফুলের হাত দুটো সামনে থেকে এমন ভাবে শক্ত করে ধরে রাখে যে ফুল নরতেও পারে না।আয়নার ভেতর থেকে নাহিদ ফুলকে দেখে একটা সয়তানি হাসি দেয়।তারপর এক টানে ফুলের হিজাবটা খুলে ফেলে।ফুল খুব খুব ভয়ে ভয়ে আছে।ফুল চিৎকার দিতে যায় নাহিদ সঙ্গে সঙ্গে ফুলকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ফুলের মুখটা শক্ত করে চেপে ধরে। আর দাঁত কেলিয়ে বলে, আজ তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না সুন্দরি!

ফুল কোনো উপায় না পেয়ে হাতের ব্রুচটা নাহিদের পেটে ঢুকিয়ে দেয় আর নাহিদ আহ্ করে উঠে ফুলকে ছেড়ে দেয়। সেই সুযোগে ফুল রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। নাহিদ রেগে ফুলের পেছনে আসে।রুমের বাইরে আসতেই ফুল নূরকে সামনে দেখতে পেয়ে থেমে যায়। আর নাহিদ বাইরে এসেই ফুলের সাথে ঘা খেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে নূর দাড়ানো।নূরের ভয়ে নাহিদ ফুলের থেকে অনেকটা দূরে সরে দাড়িয়ে ভাবে ভেতরে কি হচ্ছিলো নূর কি দেখে ফেললো?

নূর কোনো কথা না বলেই সেখান থেকে চলে আসে।তখন ফুলের পিছনে নাহিদকে ছুটতে দেখে নূরের মনে সন্দেহ জাগে।ভাবে দুজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে।

নূর রুমে গিয়ে দেখে হৃদ কাপড় গোছ করছে।হৃদের উপর রাগ থাকা স্বর্তেও নূর হৃদের কাছে গিয়ে হৃদকে পেছনের থেকে জড়িয়ে ধরে।আর বলে, আচ্ছা হৃদ ফুলকে যদি আমার নাহিদ ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিই তাহলে কেমন হয়?

নূরের কথা শুনে হৃদ চরম আকারে রেগে যায়। নূরের দিকে ঘুরে তাকিয়ে নূরের গালটা শক্ত করে চেপে ধরে।আর বলে, তোমার সাহশ হয় কিভাবে তোমার ভাইয়ের সাথে ফুলকে বিয়ে দিতে চাও?

হৃদের এমন আচারণে নূর কেঁদে দেয়। নূরের চোখে পানি চলে আসে যা দেখে হৃদ বুঝতে পারে এভাবে গাল ধরায় নূর কস্ট পাচ্ছে। তাই হৃদ নূরের গালটা ছেড়ে দেয়। আর নূরকে জড়িয়ে ধরে।হৃদের চোখেও পানি।হৃদ কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার কি হয়েছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না নূর।কেন এমন লাগছে আমার? তুমি আমার এতো কাছে তবুও মনে হচ্ছে আমার ভেতরে কিছু একটা নেই।কেন নূর কেন?

হৃদের এমন কান্নার কারণ নূর বুঝে উঠতে পারে না।নূর নিজের চোখের পানি মুছে হৃদকে ধরে বিছানার উপরে বসায়।তারপর হাটু গেড়ে হৃদের সামনে বসে বলে, কি হয়েছে তোমার হৃদ? এমন পাগলামি কেন করছো? কাল ওভাবে ফুলকে মারলে আর আজ আমার সাথে এমন করলে।আমি কি কিছু ভুল বলেছি? আমার ভাইয়ের জন্য বাবা-মা মেয়ে খুঁজছে বিয়ে দিবে বলে।ফুলেরও তো বিয়ের বয়স হয়েছে।আমার মনে হলো ওদের বিয়ে দিলে ভালো হবে।তাই তোমাকে এসে বললাম।যদিও তোমার এই প্রস্তাব পছন্দ না তুমি স্বাভাবিক ভাবে বলে দাও।কিন্তু এমন বিহেভ কেন করছো?

হৃদ কিছু বলে না।চুপ করে থাকে।নূর হৃদের কোলে মাথা রেখে বলে, তোমাকে এভাবে আমি আর দেখতে পারছি না হৃদ।প্লিজ হৃদ তুমি আগের মতোন হয়ে যাও।

এমন সময় ফুল এসে হৃদের কোলে নূরের মাথা দেখে দরজার সামনে দাড়িয়ে পরে।কিচ্ছু বলে না।হৃদ ফুলকে দেখে নূরকে কোলের উপর থেকে সরিয়ে দেয়।আর নূর ঘুরে ফুলকে দেখতে পাই।

নূর হাসি মুখে ফুলকে জিজ্ঞাসা করে কিছু বলবা ফুল?

ফুল মাথা ঝাকিয়ে বলে, আজ আমার ফাস্ট ইয়ারের ফরম ফ্লাপের লাস্ট ডেট তাই..

ফুলকে আর কিছু বলতে না দিয়েই হৃদ উঠে এসে ফুলের হাতে নিজের মানিব্যাগটা ধরিয়ে দেয়। তারপর ফুলকে উল্টো ঘুরিয়ে ধাক্কা দিয়ে এবার যা এখান থেকে বলে রুম থেকে বের করে দেয়।

ফুল কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। তারপর রিক্সার জন্য চৌ রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাড়ায়।ফুলের চোখের পানির এখনো বাঁধ মানছে না।এমন সময় একটা গাড়ি এসে ফুলের সামনে দাড়ার।আর গাড়ির গ্লাসটা নামিয়ে ডেকে ওঠে ফুল ভাবি।হ্যালো। কি হলো বলো তো শুনতে পাচ্ছে না নাকি?

আমি কিভাবে বুঝবো তুমি গিয়ে দেখও না।

তোমার পরিচিত তুমি যাও।

কিভাবে পরিচিত হলো পাঁচ বছর ধরে কোনো খোঁজ খবরই রাখলো না।বিয়ের আগে যতো নেক্যামি।একবার বিয়েটা হতেই ফুরুত করে বন্ধু বান্ধবকে ভুলে গেছে।সালা।আজ তোর বউকে পেয়েছি।কিভাবে আমাদের ভুলে থাকিস সেটা দেখে ছাড়বো।

যেমন তুমি তেমন তোমার বন্ধু নাও এবার চলো তো গাড়ি থেকে নামো।

হ্যাঁ, চলো।

চলবে,,,,

ব্যস্ততার মধ্যে গল্প এডিট করা হলো না।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।খুশি হবো।😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here