ঝরা ফুলের বাসর পর্ব ১৩+১৪

#ঝরা_ফুলের_বাসর
#Season_02
#Part_13&14
#Mst_Liza

ফুলের সমস্ত শরীরে ব্যাথা ভর করেছে।পা দুটো আর চলছে না।মাথাটা ঘুরছে।কপাল থেকে রক্ত ঝরছে।চোখের সামনে যা দেখছে সবকিছুই ঝাপসা। ফুল তবুও সামনের দিকে আগাচ্ছে।গাড়িঘোড়ার হর্ণের শব্দ কানে ভেসে আসছে।ট্রাফিক পুলিশ বাসি বাজিয়ে বলছে ফুলকে রাস্তার সাইড হয়ে যেতে।ফুলের চোখের সামনে একটা গাড়ির আলো এসে পরতেই কেউ ফুলের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে ফুলকে রাস্তার সাইডে নিয়ে আসে।ফুল চোখ মেলে ঝাপসা চোখে মুখটা দেখে বলে, তিয়াস ভাইয়া।
তিয়াস ফুলের দুই কাঁধে হাত রেখে বলে, কি হয়েছে ভাবি? আপনার এই অবস্থা কেন?
ফুল কিছু বলতে পারে না।ফুলের চোখদুটো নিমিষেই বন্ধ হয়ে যায়। কাত হয়ে ফুল পরে যেতে লাগলে তিয়াস ধরে বসে। ফুলকে নিজের বাড়িতে যায়। ফুলের জ্ঞান ফিরলে দেখে কপালে ব্যান্ডেজ করা।বিছানার একপাশে তিয়াস।আর অন্য পাশে মৌরি বসে আছে।ফুল আস্তে করে উঠে বসে।মৌরি ফুলের কাছে এগিয়ে আসলে ফুল মৌরির হাতটা শক্ত করে ধরে কেঁদে উঠে বলে, বিশ্বাস করুন ভাবি আমি দুশ্চরিত্রা নয়।আমার গর্ভের সন্তান হৃদের।কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই..ফুল উত্তেজিত হয়ে যায়। জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নেয়। ফুলকে শান্ত করতে মৌরি ফুলকে বুকে টেনে নেয়। ফুলের পিঠে হাত বুলিয়ে বোনের মতোন ঠান্ডা মাথায় ফুলের কাছে সবকিছু জিজ্ঞেসা করে আর ফুল সব কিছু খুলে বলে।
ফুলের মুখে সবকিছু শুনে তিয়াস আর মৌরির চোখেও পানি চলে আসে।
তিয়াস বলে, হৃদ এতোটা নিচে নেমে গেছে? ওর ভালোবাসার উপর কি এতোটাও বিশ্বাস নেয়? যে মেয়ে পাঁচ বছর ধরে এতোটা কস্ট পেয়েছে ওর জন্য।
নিজের স্বামীর সুখের জন্য তার পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে সেই মেয়েকে বিশ্বাস কেন করলো না হৃদ?
ভাবি আমার সাথে চলুন আমি হৃদকে বোঝাবো।তিয়াস ফুলের হাত ধরে টানলে।ফুল হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
ফুল বলে, আমি যাবো না ভাইয়া।আমি পারবো না আমার হৃদের চোখে ঘৃণা দেখতে।ওর কাছ থেকে যতোটা ভালোবাসা আমি পেয়েছি বাকিটা জীবন সেটা ভেবে কাটিয়ে দিবো।কিন্তু ওর রাগ, ঘৃণা পারবো না এগুলো আমি সহ্য করতে।
ফুলের কথা শুনে মৌরি বলে, এতো ভালোবাসো হৃদকে তুমি? কিন্তু ফুল হৃদের কাছে নিজেকে প্রমাণ তো করতে হবে।
আমি পারবো না ভাবি কোনো দিনও প্রমাণ করতে।আমি আমার হৃদকে চিনি।ও যখন ভালোবাসে সবটুকু উজার করে দিয়ে ভালোবাসে। আর যখন ঘৃণা করে কারও পরোয়া করে না।শুধুই ঘৃণা করে।আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেয়। শুধু মুখের কথা কখনোই বিশ্বাস করাতে পারবো না।আমার খালাম্মা যে আমার নিজের মায়ের মতোন।আমাকে খালাম্মা হৃদের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছে সবসময়। সেই আমাকে বিশ্বাস করে নি।হৃদ কিভাবে করবে ভাবি?
ফুল উঠে বিছানা থেকে নামতে গেলে, মৌরি ফুলকে টেনে ধরে বসে।কোথায় যাচ্ছো ফুল?
জানি না।আমার যে দুনিয়ায় আর কেউ নেই।যাওয়ার মতো জায়গাও তেমন নেই।হৃদের বাড়ি ছাড়া একমাত্র রাস্তায় আছে আমার জন্য।তবে আমি পারবো রাস্তায় থাকতে।আপনারা ভালো থাকবেন।
মৌরি ফুলকে দেয় এক ধমক।
কি বললে তুমি? আমার বাড়ি থাকতে আমার বোন রাস্তায় থাকবে? তিয়াস তুমি চুপ করে আছো কেন,, বলো তোমার বন্ধুর বউকে কিছু।
তিয়াস বলে, মৌরি ঠিক বলছে ভাবি।এই শরীরে আপনার রাস্তায় থাকা আর হচ্ছে না।আমরা যখন আছি কখনোই সেটা হতে দেবো না।
কিন্তু তিয়াস ভাইয়া,,,
কোনো কিন্তু না।আপনি এখন একা নন।আপনার মধ্যে আমার ভাইপো/ভাতিজা বেরে উঠছে।আমি কোনো মতেই ওদের অযত্ন হতে দেবো না।



ওদিকে হৃদ সারা শপিং মল ঘুরে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের জামা-কাপড়, খেলনা পুরো তিন ঘন্টা ধরে ঘুরে ঘুরে কিনেছে।উদ্দেশ্য একটাই ফুলের মুখে হাসি ফুটানো।বাড়ি পৌঁছে হৃদ ফুলকে জড়িয়ে ধরে বলবে আমাদের ঘরে খুব শীঘ্রই গোলুমলু, নাদুসনুদুস, কিউটের ডিব্বা একটা পুচকো আসতে চলেছে।নাহ হৃদের যে আর তরই সইছে না।হৃদ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে কখন বাড়ি পৌঁছাবে।আবার ডাক্তারের কথা মনে আসতেই একরাস রাগ জমা হচ্ছে ডাক্তারের উপর।ইচ্ছা করছে ডাক্তারের টাক ফাটাতে।ব্যাটা ডাক্তার বলে কিনা আমি বাবা হতে পারবো না? ভুয়া সব মেসিন পত্র ওর হসপিটালে।আমার ফুলের গর্ভে আমারই সন্তান।আমি জানি তো।আমার ফুল কতো পবিত্র।


হৃদ বাড়িতে পৌঁছায় আর গাড়ি থেকে বাচ্চার জামা-কাপড়, খেলনা সব দু’হাতে মুরে নেই। এতো শপিং করেছে যে নিতেই পারছে না।কিছু ব্যাগ তো মুখ দিয়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যায়।রুমে এসে হৃদ সব কিছু বিছানার উপরে রাখে।দেখে ফুল রুমে কোথাও নেই।
এতো করে বললাম এই শরীরে বিছানা থেকে না উঠতে তারপরেও কোথায় গেল? ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখে দরজাটা খোলা।হৃদ এগিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বলে, আমার ময়নাটা কি ভেতরে আছে? কথা বলছে না।আচ্ছা আমি চলে আসলাম।বলেই হৃদ ভেতরে গিয়ে দেখে ওয়াশরুমেও ফুল নেই। হৃদ এবার ভিষণ আকারে রেগে যায়।
সেই বাইরেই গিয়েছে? ড্যাংড্যাং করে সারাদিন ঘুরে বেরানোর অভ্যাসটা আর যাবে না।নিজের মধ্যে যে আরেক প্রাণ রয়েছে।সেটাও জানে না।হাইরে কোথায় ভাবলাম দুজনের সাথে একটু সময় কাটাবো।প্লানিং করবো তা’না।আবারও অপেক্ষা।
কথাটা বলে হৃদ বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে।আর পাশ ফিরে মুখ ঘুরাতেই চিঠিটা দেখতে পাই।
হৃদ উঠে বসে চিঠিটা হাতে নেয়, আর খুলে পরতে শুরু করে,
আমি তোমাকে ভালোবাসি হৃদ।খুব ভালোবাসি।যখন জানলাম তুমি নূরকে ভালোবাসো তোমার সুখের জন্য সব কস্ট নিজের মধ্যে দমিয়ে রেখে খালু খালাম্মকে নূরের সাথে তোমার বিয়ের ব্যাপারটা বলি।তোমাদের বিয়েও হয়। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারি না।নানান ভাবে কি’করে তোমার কাছে চলে আসতাম নিজেও জানি না।তোমার আর নূরের বউভাতের অনুষ্টানের দিন আচমকা আমি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তোমার বুকে আবিষ্কার করি।এমন পরিস্থিতিতে ছিলাম কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না।আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিলো কিনা। কিছু মনেও পরছিলো না।আজ আমার প্রেগনেন্ট হওয়াটা হয়তো তুমি মেনে নিবে না।খালাম্মার মতোন আমাকে দুশ্চরিত্রা বলবা।বিশ্বাস করো হৃদ আমি দুশ্চরিত্রা নই।তুমি ছাড়া আমি আজ পর্যন্ত আমার শরীর মন কাউকে দিই নি।তোমাকে খুব ভালোবাসি তাই তোমার ঘৃণা নিতে পারবো না।খুব কস্ট হবে আমার তোমার চোখে নিজের প্রতি ঘৃণা দেখতে। তার চেয়ে আমার মৃত্যুও ভালো।তুমি ভালো থাকো হৃদ। নিজের যত্ন নিও।আর আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই, আমার গর্ভের সন্তান তোমার বলে দাবি করার।তাই চলে যাচ্ছি।
~~তোমার ফুল।





চলবে,,,,
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#Season_02
#Part_14
#Mst_Liza

চিঠিটা ভাজ করে হৃদ একটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে।হৃদের ভেতরটা যন্ত্রণায় চিরে ফেলতে মনে চাইছে।বিছানা ঘেঁষে মেঝেতে নেমে বসে পরে হৃদ।ফুলের জন্য ছটফট করে কাঁদে। আর কাঁদতে কাঁদতে পাগলের মতোন অবস্থা হয়ে যায় হৃদের।
হৃদ কাঁদতে কাঁদতে বলে, এখন কোথায় খুঁজবো আমি আমার ফুলকে?
হৃদ ভেবেছিলো তার ফুলকে সারপ্রাইজ দেবে।বলবে ফুল আমরাও বাবা-মা হবো।আমাদেরও সন্তান হবে।কিন্তু না,,,
এতো অবিশ্বাস কেন করলি ফুল তুই আমায়? একটা সুযোগ তো দিতে পারতি? তুই নিজে বললেও আমি কোনোদিন বিশ্বাস করতাম না যে তোর গর্ভে আমার সন্তান না।
হৃদ কাঁদতে কাঁদতে বিছানার চাদরটা জোড়ে টান দিতেই উপর থেকে খেলনা আর বাচ্চার কাপড়গুলো হৃদের সামনে এসে পরে।খেলনা পরার আওয়াজে ফ্লোরে ঝুনঝুন শব্দ হতে থাকে।শব্দ থামাতে হৃদ খেলনা উঠিয়ে দরজার কাছে ছুঁড়ে মারে। হৃদের মা হৃদের রুমে ছুটে আসে।এসে বলে, কিছু কি পরলো হৃদ? কথাটা বলে হৃদের দিকে তাকাতেই হৃদের এমন অবস্থা দেখে তার চোখে পানি চলে আসে।সে কাছে এসে হৃদকে ধরতে যাবে হৃদ ধাক্কা দিয়ে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর বলে,
আমার ফুলকে তুমি কি বলেছো মা? ও দুশ্চরিত্রা না।ওর গর্ভে আমার সন্তান।ওনা তোমার মেয়ে মা? তাহলে ওকে তুমি এমন অপবাদ কেন দিলে?
হৃদ বাবা কি হয়েছে? এমন কেন করছিস তুই?
হৃদকে আবার ধরতে গেলে হৃদ উঠে দূরে সরে যায়। দেয়ালের কাছে এসে রক্ত দেখতে পেয়ে বোঝে ওটা নিশ্চয় ফুলের রক্ত।হৃদ সজোড়ে আঘাত করতে থাকে নিজের কপালে।হৃদের মা এসে হৃদকে থামানোর চেস্টা করে কিন্তু হৃদ থামে না।এক প্রকার আঘাতে আঘাতে নিজের কপালটা হৃদ রক্তাক্ত করে ফেলে।তারপর ক্লান্ত হয়ে নিচে বসে পরে।
হৃদের চোখ থেকে এখনো পানি পরছে।শব্দ করে কান্নার শক্তিটুকুও নেই।হৃদের মা নিচে পরে থাকা চিঠিটা এবার দেখতে পাই।চিঠিটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে পড়তে থাকে আর দুচোখের কোণে পানি জমা হয়।

ওদিকে ফুলের সামনে নানান পদের ফল কেটে প্লেটে করে বিছানার উপরে সাজিয়ে রেখেছে মৌরি।
এই সব এখন খেতে হবে তোমার।
না ভাবি মুখে রুচি নেই।এর এক চিকটিও আমি খাবো না।
কি বললে তুমি? কোমড়ে হাত গুঁজে চোখ পাকিয়ে তাকায় ফুলের দিকে মৌরি।
ফুল ভয় পেয়ে একটা আঙ্গুর উঠিয়ে মুখের কাছে ধরে আবার রেখে দেয়।
আবার কি হলো? খাচ্ছো না যে?
ফুল ধুকরে কেঁদে ওঠে।আমি খেতে পারবো না ভাবি।আমার হৃদ খেয়েছে কিনা জানি না।এখানে আমি কিভাবে খাবো?
ফুল তুমি সেই হৃদের কথায় ভাবছো? ওঠিক খেয়ে নেবে তুমিও খাও।
খাবে না ও।আমি জানি খাবে না।আমার উপর রাগ করুন।ঘৃণা করুক যতো যাই করুক।জানো ভাবি, রাতে ও আমার হাতেই খেতো।মাঝে মাঝে ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে খাবার টেবিলে ঘুমিয়ে পরতাম আমি।ও অফিস থেকে এসে আমাকে ঘুম দেখে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিতো আর নিজেও না খেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোত।
এতো ভালোবাসা তোমাদের মধ্যে তাহলে একটা বার কি হৃদের মুখোমুখি হওয়া যায় না ফুল? হতে পারে হৃদ তোমায় বুঝবে।বিশ্বাস করবে।
আর যদি না করে? ওর সামনে আমি চোখ তুলে তাকাতে পারবো না।আমি পারবো না ভাবি ওর চোখে আমার প্রতি ঘৃণা দেখতে।
ফুল আর কিছু না বলে পেটে হাত রেখে কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাটার কথা ভেবে খেয়ে নেয়।

ঘুমের মধ্যে হৃদ শীতল হাতের পরস অনুভব করে।হৃদের কানের কাছে এসে কেউ ডাকছে, হৃদ? এই হৃদ? এতো ঘুমোই কেন আমার স্বামীটা। আমি ডাকছি তা’কি শুনতে পাচ্ছো?
হৃদ থরবর করে উঠে বসে।ক..কক..কে? ফুহল?
না হৃদ আমি নূর।তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসা না? আমার খুব কস্ট হয় হৃদ।খুব কস্ট হয়।বেঁচে থাকলে হয়তো মরেই যেতাম। আর মরে গিয়েও কবরে শান্তি নেয়। আমার আত্মা বারবার চাই একবার আমার এই স্বামীটা আমাকে দেখতে আসুক।তুমি না আমায় ভালোবাসো? এতো সহজে ভুলে গেলে? একবারও আমার কবরের কাছে আসলে না।হৃদ কিছু চাই না আমি।তুমি আমায় একটু সময় দাও।তোমার সারাটাদিন ফুলকে দাও কিন্তু মাঝে মাঝে অন্ততঃ আমার কবরটার কাছে একটু এসো।আমি তোমায় দেখবো হৃদ।তোমায় দেখবো।তোমাকে তো এজীবনে পাওয়া হলো না।জান্নাতে যেন তোমার ভাগ পাই।আমাকে ভুলে যেও না হৃদ।আমাকে মনে রেখও।ফুলের মতোন না হোক।আমাকে একটু ভালোবেসো।যতটুকু ভালোবাসলে আমি শান্তিতে তোমার জন্য কবরে অপেক্ষা করতে পারবো।আমি চলে যাচ্ছি হৃদ..আমি চলে যাচ্ছি.. নূর পিছনে যেতে লাগে আর হৃদ হাত বাড়িয়ে উঠে নূরকে ধরতে যায়। এক দমকা ধোঁয়া এসে নূরকে মিলিয়ে নিয়ে যায়। অদৃশ্য হয়ে যায় নূর।হৃদ চিৎকার করতে থাকে।যেও না নূর আমি তোমাকেও ভালোবাসো। নূর ফিরে আসো তুমি।বলতে বলতে হৃদ উঠে বসে। থমথম করে কাঁপছে হৃদ।হৃদের মুখ থেকে ঘাম ছুটছে।কান্না পাচ্ছে হৃদের আরও বেশি।হৃদ বুঝতে পারে এটা স্বপ্ন ছিলো।ফজরের আজান কানে ভেসে আসছে।হৃদ জানে ফজরের সময়ের স্বপ্ন সত্যি হয়।তাহলে নূর কি সত্যিই আমাকে ডাকছে? আমি পাপি।আমি ভুল করেছি নূর।ফুলের মতো তোমাকেও আমি ভালোবাসি।ভুলে গিয়েছিলাম আমি তোমায়।আমার ভুলের মাষুল আমি পাচ্ছি।আমি তোমার প্রতি যে অবহেলা করেছি তার কারণে আজ শাস্তি দিচ্ছে বিধাতা।আমি আসবো নূর। তোমার কাছে আসবো।
হৃদ উঠে অজু করে নামাজে দাড়িয়ে যায়। ফজরের নামাজ পড়ে।নূরের জন্য নফল নামাজ পরে হৃদ।তারপর মোনাজাতে দু’হাত তুলে হৃদ কাঁদে আর বলে, হে আল্লাহ আমার নূরকে তুমি জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে নসিব করো।ওর ইচ্ছা তুমি পূরণ করো।আর ওকে কবরেও ভালো রেখো।এ জীবনে তো পারলাম না।তবে আমি আমার জান্নাতে নূর, ফুল দুজনকেই পেতে চায়। ফুল কোথায় আছে আমি জানি না।তুমি আমার ফুলকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।ওর এই অবস্থায় আমি ওর পাশে থাকতে চাই। আমাদের সন্তানেরও যত্ন নিতে চায়।
মোনাজাত শেষে হৃদ নূরের কবর যিয়ারত করতে যায়।নূরের কবরের সামনে বসে হৃদ কাঁদে। আর নূরকে কথা দেয়, আর তোমাকে কস্ট পেতে হবে না নূর।আমি রোজ একবার তোমার কবরের কাছে এসে বসে থাকবো কিছুক্ষণ। তোমার সাথে কথা বলবো।আমার সারাদিনের সবকথা তোমার কাছে শেয়ার করবো।
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#Season_02
#Part_Extra
#Mst_Liza

শরীরের ভারে চলতে পারছে না ফুল।পেটটাও অনেকটা উঁচু হয়ে গেছে।কোমড় ধরে হাঁটতে হয়।তিয়াস আর মৌরির যত্নের কোনো ত্রুটি নেই।আজ আট মাস হৃদ আর ফুল আলাদা আছে।প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মুহূর্ত যেন নিঃশ্বাস নিতে কস্ট হয় দুজনেরই।ফুল যেমন হৃদকে ভেবে কাঁদে, হৃদও তেমন ফুলকে ভেবে কাঁদে। দুজনের প্রতিটা রাত যায় নির্ঘুম।
হৃদের মা অনেক চেস্টা করেও হৃদের সাথে কথা বলতে পারে না।এই আট মাস হৃদ সকালে অফিসে যায় আর রাতে নূরের কবরের কাছে এসে বসে থাকে। নূরের সাথে কথা বলে।তারপর গভীর রাতে বাড়িতে গিয়ে মদ খেয়ে ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে পরে।নেশাগ্রস্থ অবস্থায় হৃদ ফুলের কথা ভাবে।তাদের সন্তানের কথা ভাবে।খাওয়া-দাওয়ার কোনো যত্নও নেয় না।দুপুরে অফিসে একবেলা খেয়ে নেই।আর সারাদিন নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রাখে।ফজরে নামাজ পরে আল্লাহর দরবারে কাঁদে।দু’হাত তুলো বলে, হে আল্লাহ! আমার ফুলকে, আমার সন্তানকে তুমি যেখানেই রাখও! তোমার হেফাজতে রেখও! ওরা যেন ভালো থাকে।
আজ অফিসের একজন ক্লাইটের সাথে মিটিং এ যাওয়ার কথা।বসের কথা অনুযায়ী রেস্টুরেন্টে বসে ক্লাইন্টের জন্য অপেক্ষা করছে হৃদ।পিঁছনের থেকে ডাক পরতেই ঘুরো দেখলো খুবই পরিচিত একটা মুখ।
একি তিয়াস তুই?
তিয়াসও হৃদকে দেখে অবাক।হৃদের চেহারায় ফুটে উঠেছে কতো অযত্ন।
একি হৃদ তোর চোখ মুখের এমন অবস্থা হলো কিভাবে? নিজের যত্ন নিস না ঠিক মতোন?
হৃদ তিয়াসকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর কাঁদতে কাঁদতে তিয়াসকে এই পাঁচ বছরে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বলে।যদিও সব তিয়াস আগের থেকেই জানতো।তবুও হৃদের মুখে শুনতে চাচ্ছিলো।তিয়াস এটাও জানতে পেল ফুলের মতোন হৃদও কস্ট পাচ্ছে খুব।
তিয়াস হৃদের হাতটা চেপে ধরে বলল,
তুই শান্ত হ হৃদ আমি যানি ফুল কোথায়!
তিয়াসের কথায় হৃদ চমকে উঠলো।তিয়াসকে ঝাকিয়ে জানতে চাইলো,
কোথায়? কোথায় আমার ফুল?
আমার বাড়িতে।
তোর বাড়িতে?
হ্যাঁ আমার বাড়িতে।ফুল ভাবিও খুব কস্টে আছে হৃদ।তোকে বড্ড ভালোবাসে।আর সারাক্ষণ বলে তুই তাকে ঘৃণা করিস।
নাহ! আমি ফুলকে ঘৃণা করি না।ভালোবাসি ওকে আমি।আমাকে আমার ফুলের কাছে নিয়ে চল প্লিজ! দোস্ত।
হ্যাঁ চল।
তারপর তিয়াস হৃদকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।
ফুল রুমে ঘুমাচ্ছিলো।হঠাৎ হৃদ এসে চিৎকার করে ফুলের নাম ধরে ডাকতে থাকে। হৃদের চিৎকার শুনে ফুলের ঘুম ভেঙে যায়। ফুল উঠে বসে।স্পষ্ট শুনতে পাই হ্যাঁ হৃদ তাকে সত্যিই ডাকছে।ফুলের মন চাইছে ছুটে হৃদের কাছে যায় কিন্তু আবার মনে স্বংসয় হৃদ যদি এই সন্তানকে অস্বীকার করে?তাকে অপমান করে?
ফুল পারবে না হৃদের চোখে নিজের প্রতি ঘৃণা দেখতে।তাই ফুল যায় না।বসে বসে কাঁদতে থাকে।
হৃদ বলে ওঠে, আমাকে আর কস্ট দিস না ফুল।একটাবার আমাকে সুযোগ দে।আমার সন্তানকে আমার থেকে আর দূরে রাখিস না।
কথাটা শুনে ফুল চমকে ওঠে।ফুলের মনে এক আশার কিরণ জাগে।ফুল চোখ মুখ মুছে বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়। দরজা খুলে ছুটতে থাকে হৃদের দিকে।ফুল হৃদের নাম ধরে চিৎকার করে ডেকে ছুটতে ছুটতে সিঁড়ি পর্যন্ত আসে।ফুল অনেক ক্লান্ত হয়ে যায়। এই শরীরে আর পারে না ছুটতে।উপরে দাড়িয়ে দূর থেকে শুধু হৃদকে এক অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখে। হৃদ ধীর গতিতে ফুলের দিকে আগাতে থাকে। ফুলও সেই সাথে আবার ছুটতে থাকে। ছুটতে ছুটতে হৃদের খুব কাছে এসেই হৃদকে ধরতে যাবে এমন সময় হোচট খেয়ে ফুল সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পরে যায়।
সবকিছু এতো দ্রুত হয় যে হৃদ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।হৃদের পাশ থেকে ফুল এভাবে পরে যায় যে হৃদ ধরতে গিয়েও ধরতে পারে না।
ফুল নিচে পরে কাতরাচ্ছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে।ফুলের কপালটাও অনেকটা কেটে গেছে।প্রচুর ব্ল্যাডিং হচ্ছে।কথা বলতেও পারছে না ফুল।রক্তাক্ত হাতটা সামান্য উঁচু করে হৃদের দিকে ইশারা করে বলে, হৃদ!
ফুলকে দেখে হৃদ পুরাই থম হয়ে আছে।হৃদের হাত, পা আর চলছে না।ফুলের কাছে আগানোর বলটাও হৃদের মধ্যে হয়ে উঠছে না।তিয়াস ছুটে এসে ফুলের পাশে বসে।মৌরির হাতের চায়ের ট্রেটা ফুলকে দেখা মাত্র হাত থেকে নিচে পরে যায়। মৌরি ছুটে এসে ফুলকে নিজের কোলের উপরে বসায়।তিয়াসকে বলে এ্যাম্বুলেন্সে কল দিতে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here