ঝরা ফুলের বাসর পর্ব ৭+৮

#ঝরা_ফুলের_বাসর
#Season_02
#Part_07&8
#Mst_Liza

ফুলের সামনে দু’টো পরিচিত মুখ এসে দাড়ালো।তাদের দেখেই ফুল সকড।

কি গো ভাবি কথা বলবেন না? প্রশ্নটা শুনে ফুল নিজের মাথা উপর নিচে ঝাকিয়ে হ্যাঁ অর্থ বোঝালো।তারা আরও কিছু বলবে এর আগেই ফুল বলে উঠলো তিয়াস ভাইয়া, মৌরি ভাবি আপনারা? এতোদিন কোথায় ছিলেন?

নেও ঠেলা সামলাও! নিজেদের কোনো খোঁজ খবর নেই আর বলে কিনা আমরা কোথায় ছিলাম?

ফুল বলল, আসলে ভাবি…

আসলে ভাবি কি? সেই দিনটার কথা মনে আছে? যেদিন হৃদ তোমাকে কাজি অফিসে নিয়ে এসেছিলো বিয়ে করার জন্য। তুমি কিছুতেই রাজি ছিলে না।বলেছিলে যে বিয়ের আগে একটা কিস করতে পারে না।তার মতোন আনরোমান্টিক ছেলেকে বিয়ে করে সারাটা জীবন কাটানো যায় না।তারপর আমরাই তো বুঝিয়ে শুনিয়ে তোমাদের বিয়ে দিলাম।সেই যে বিয়ে করলে আর কি কোনো খোঁজ খবর নিয়েছো?

আরে থামো না।কিসব বলছো।ভাবিকে পেয়েছি এখন হৃদকেও পাবো।তো ভাবি হৃদকে ফোন করে এক্ষুনি এখানে আসতে বলুন তো।

ফুল কি বলবে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না।তিয়াস নিজের ফোনটা এগিয়ে ফুলের সামনে ধরে বলে, নিন ভাবি আমার ফোন থেকেই ফোন করুন। ফুল কি করবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ধুকরে কেঁদে ওঠে।

ফুলের কান্না দেখে তিয়াস আর মৌরি একে অপরের দিকে তাকায়।

দু’জনে অবাক হয়ে ফুলের কাছে জানতে চাই কি হয়েছে?

ফুল কান্না থামিয়ে তাদেরকে সব খুলে বলে।সব শুনে তারা রেগে যায় হৃদের উপরে।তারা বলে হৃদ কিভাবে আবার বিয়ে করতে পারলো? বারো বছরের ভালোবাসা কি এতো সহজে ভালো যায়? তার স্মৃতি হারিয়েছে বলে সে যা খুশি তাই করবে এটা কেমন কথা?

ডাক্তার বলেছে হৃদকে পুরোনো কথা মনে করাতে চাইলে ওর বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আর তাছাড়া তখন কি আমার কথা কেউ বিশ্বাস করতো? কথাটা ফুল কাঁদতে কাঁদতে বলে।

মৌরি ফুলকে কাঁদতে দেখে জড়িয়ে ধরে, কেঁদো না বোন।সব ঠিক হয়ে যাবে। উপরের ওই আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।

ফুলকে মৌরি আর তিয়াস তাদের গাড়িতে করে ভার্সিটি ছেড়ে দেয়। সাথে নিজেদের ফোন নাম্বার আর ঠিকানাও দিয়ে যায়।

ওদিকে,,,
গাড়িতে উঠে নূরের বাড়িতে রওনা দিয়েছে নূর আর হৃদ।
নাহিদের গার্লফ্রেন্ডের ফোন আশায় সে কাজ আছে বলে বাহানা বানিয়ে চলে যায় অন্য রাস্তায়।আর হৃদ খুব তীব্র গতিতে গাড়ি চালাতে শুরু করে।নূরের মনেও হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।হঠাৎ নূর খেয়াল করে গাড়ির গতি বেড়েছে।হৃদের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ভাবলেশহীন ভাবে কিছু একটা ভেবে চলছে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে।গাড়িতে ঝাঁকুনি শুরু হয়েছে।নূর হৃদের একটা হাত ধরে বসে।তারপর ঝাকুনি খেয়ে হৃদকে থামাতে দুলতে দুলতে চিৎকার দিয়ে বলে, কি করছো কি হৃদ? এইভাবে গাড়ি কেন চালাচ্ছো? এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে তো।হৃদ দদ..হৃদদ..হৃদ।হৃদকে ডাকতে থাকে নূর।

হৃদের ধ্যান ফিরলে নূরের দিকে তাকায়।আর তখন সামনে থেকে একটা ট্রাক আসতে থাকে।নূর সেটা দেখে হৃদকে বলে গাড়ির ব্রেক কষতে।হৃদ সামনে তাকালে ট্রাকটাকে দেখে আর কিছু করতে পারে না।হৃদের যেন চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা লাগে।ঠিক কিছু একটা ঝাপসা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।হৃদ দেখে একটা মেয়ে ট্রাকের সামনে দাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে হাসছে আর হৃদ তার কাছে ছুটে চলেছে।সরে যেতে বলছে তাকে রাস্তা থেকে।কিন্তু কে সেই মেয়েটা? মুখটা স্পষ্ট না।হৃদের মনে করতে গিয়ে মাথাটা ব্যাথায় চিরে নিয়ে যাচ্ছে।হৃদ নিজের হাতদুটো দিয়ে মাথা চেপে ধরে জোড় খাটিয়ে কিছু মনে করতে যায়। এমন সময় ট্রাকটা কাছে এসেই হৃদের গাড়িটার সাথে ধাক্কা দিয়ে ঝাজড়া করে দেয়।আর সঙ্গে সঙ্গে নূর চিৎকার দিয়ে ওঠে হৃদদদদদদদ….
,
,
,
,
হসপিটালে,
হৃদের টিটমেন্ট চলছে।হৃদের বাবা-মা এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে ছুটে আসে।ফুলও ভার্সিটি থেকে খবর পাওয়া মাত্র ছুটে আসে।ও.টির সামনে সবাই অপেক্ষা করছে।আর কাঁদছে।এমন সময় অপর সাইট থেকে খাটলিতে করে একজন ডাক্তার আর নার্স কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা কাউকে নিয়ে এসে ফুলদের সামনে রাখে।হৃদের বাবা-মা চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠে।ফুল জমে স্তব্ধ হয়ে যায়। একদম নিথর হয়ে নিচে বসে পরে।আর নূরের বাড়ির লোক হসপিটালে ঢোকে।লাশটার মুখ থেকে কাপড় সরাতেই নূরের মা এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নূরের বাবার নূরের মাকে ধরার মতোন পরিস্থিতি নেয়। সে যেন তার কলিজার টুকরো রাজকন্যাকে হারিয়ে ফেলেছে।সে ছুটে লাশটার কাছে আসে।আর লাশটার মুখ ধরে বলে, নূর মা। আমার কলিজার টুকরা হিরা মানিক।তুই এভাবে চলে যাবি? এই বুড়ো বাপকে রেখে তুই চলে যাবি? ওঠ মা। বাবা ডাকছে না ওঠ।

নূরের বাবার কথা শুনে ফুল নড়ে ওঠে।উঠে দাড়িয়ে দেখে।ওটা হৃদের না নূরের লাশ।ফুল এইবার চিৎকার দিয়ে ওঠে। ফুলের মধ্যে কি হচ্ছে ফুল জানে না।তবুও এই দুইদিনে নূরের প্রতি যে ভালোবাসাটা, মায়াটা সৃস্টি হয়েছে তার জন্য ফুলের কস্ট হচ্ছে।ফুল কাঁদছে আর চিৎকার দিয়ে নূরকে ডাকছে।ওঠো নূর! ওঠো! তোমার হৃদের জন্য তোমাকে বাঁচতে হবে।হৃদ তোমার।ও তোমাকে ভালোবাসে।নূর আমার কথা কি তুমি শুনতে পারছো? ফুল চিৎকার করে নূরকে ডাকতে ডাকতে খুব ক্লান্ত হয়ে যায়। ওপাশ থেকে ও.টি থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে এসে বলে, হৃদ চৌধুরীর বাড়ির লোক কে আছেন?

ডাক্তারের কথা শুনে হৃদের বাবা-মা এগিয়ে যায়। ফুলও উঠে দাড়ায়।

ডাক্তার বলে, হৃদ চৌধুরি বেঁচে গেছেন ঠিকই।কিন্তু এই এক্সিডেন্টে সে তার বাবা হবার ক্ষমতা চিরকালের জন্য হারিয়েছে। আর..

কথাটা শুনেই যেন হৃদের বাবা-মা অনেক বড় একটা ধাক্কা খাই। হৃদের বাবা নিজেকে শক্ত করার চেস্টা করে নরম গলায় ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে আর কি ডাক্তার?

মাথায়ও অনেক বড় আঘাত লেগেছে।ওনাকে বাঁচানো গেছে এটাই বেশি। বাকিটা জ্ঞান না ফিরলে বলা যাচ্ছে না।কথাটা বলে ডাক্তার চলে যায়।

চলবে,,,,

(নূরের মৃত্যুর জন্য কেউ আমাকে গালি দিবেন না।আগের সিজনে ফুলকে মেরেছিলাম।নূরের সাথে হৃদের মিল দিয়েছিলাম।নূরের মৃত্যুতে যাদের কস্ট হচ্ছে তারা সিজন ১ পরে নিবেন। আর অনেকেই বলেছিলেন নতুন নায়ক আনতে।কিন্তু গল্পের চরিত্র গুলো আর ভালোবাসাটা আগের সিজনের মতোই থাকবে। তাই কারও জীবনে কাউকে আনি নি।ফুল, হৃদ, নূর এই তিনজনই নায়ক নায়িকা এনাফ।এই গল্পটা এদের নিয়েই।সিজন ১ এ ফুল মারা যাবার পরও নূরকে বিয়ে করে হৃদ স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছে পাঁচ বছর পর।এই পাঁচ বছরে নূর অনেক অপেক্ষা করেছে।আর ফুলবেচারি হৃদের ভালোবাসা পাওয়া স্বত্ত্বেও কস্ট পেয়ে পেয়ে সুখের আলো জ্বলতেই মারা গেছে।এটাই গল্প।এই পার্টটা পড়ুন।আপনাদের ভালো লাগলে জানাবেন।তাহলে ফুল আর হৃদের খুনশুটি আর রোমান্স দিয়ে গল্পটা কন্টিনিউ করবো।আর যদি খারাপ কমেন্ট পাই তবে গল্পটা আর এক পর্বে সমাপ্তি টানবো।ধন্যবাদ।)
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#Season_02
#Part_08
#Mst_Liza

একদিন পর হৃদের জ্ঞান ফেরে।আর জ্ঞান ফিরতেই হৃদ মাথাটা চেপে ধরে ফুলের নাম ধরে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।ফুল হৃদের মুখে নিজের নাম শুনে ছুটে চলে আসে।হৃদের বাবা-মাও ছুটে আসে।দরজার কাছে এসে ফুল দাড়িয়ে যায়। হৃদের বাবা-মা এগিয়ে এসে হৃদের কাছে বসে।হৃদকে বলে তুই ঠিক আছিস তো বাবা? এখন কেমন লাগছে তোর?

হৃদ কিছু বলে না।হৃদের চোখ শুধু দূর থেকে ফুলকে দেখে যায়।এক অপলক দৃষ্টিতে হৃদ ফুলের দিকে চেয়ে থাকে মায়ার চোখে।মায়া ভরা কন্ঠে ফুলকে কাছে ডাকে হৃদ।এই ফুল! ওখানে দাড়িয়ে কেন আছিস? কাছে আয়!

ফুল ধীর গতিতে এগিয়ে আসে হৃদের দিকে। হৃদের কাছে এসে দাঁড়াতেই হৃদ এক ঝাটকায় ফুলকে টেনে বসিয়ে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে হৃদ বলে আমি খুব অন্যায় করেছি তোর সাথে।খুব খারাপ আমি।প্লিজ আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।

হৃদের এমন কান্ড দেখে হৃদের বাবা-মা কিছু বুঝতে পারছে না।তারা ভাবছিলো হৃদকে নূরের মৃত্যুর কথা কিভাবে শুনাবে।আর এখন হৃদের এমন কান্ডে দেখে তারা অবাক।

হৃদ ফুলের গালটা আকড়ে ধরে বলে, অনেক কস্ট দিয়েছি না তোকে? ফুলের কপালে হৃদ একটা চুমু এঁকে দেয়। তারপর হৃদের চোখ দুটি অন্য কাউকে খোঁজে। হৃদ তার বাবা-মাকে বলে, আচ্ছা নূর কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখছি না!

হৃদের কথা শুনে এবার হৃদের বাবা-মা আবার কেঁদে ওঠে। তারা কিছু না বললে হৃদ ফুলকে ঝাকিয়ে বলে, নূর কোথায় ফুল? ফুলও কিছু বলে না শুধু কাঁদতে থাকে। হৃদ এবার ভয় পেয়ে যায়। হৃদ চিৎকার দিয়ে বলে, কেউ বলছো না কেন নূর কোথায়?

হৃদ কারও থেকে কোন জবাব পাই না।হৃদের মনে পরে যায় এক্সিডেন্টে গাড়িতে তার সাথে নূরও ছিলো।কেউ কোনো উত্তর না দিলে হৃদ পাগলের মতোন আচারণ করে।কেবিনের মধ্যের সব কিছু ভাংচুর করতে থাকে।হৃদকে শান্ত করতে হৃদের মা বলে দেয়, নূর আর নেই হৃদ।

নূর আর নেই কথাটা শুনেই হৃদ বসে পরে।হৃদ নূরের কথা ভাবে।এই পাঁচ বছরে নূরের সাথে কাটানো এক একটা মুহূর্ত, এক একটা স্মৃতি হৃদের বুকে নাড়া দিয়ে ওঠে।নূরের কথা বলা, হাসি সবকিছুই হৃদকে আজ কাঁদাচ্ছে।হৃদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে নূরের নিরীহ আর মায়াবি মুখটা।হৃদ নিঃশব্দে কাঁদছে।হৃদের দু’চোখ গড়িয়ে পানি নিচে পরছে। ফুল এসে হৃদের সামনে বসে হৃদের মুখটা ধরে উঁচু করে।হৃদকে বলে, হৃদ তুমি এভাবে ভেঙে পরো না।আমি জানি তুমি নূরকে কতোটা ভালোবাসো।নূরও তো তোমাকে খুব ভালোবাসে।তুমি এভাবে কস্ট পেলে নূরের আত্না শান্তি পাবে না।আমার কথা শোনো।এভাবে কেঁদে না।তোমার চোখেরজল আমি সহ্য করতে পারছি না।আমারও যে কস্ট হচ্ছে।প্লিজ আমার জন্য তুমি নিজেকে শক্ত করো।

আমার জন্য আজ নূর চলে গেলো তাই না ফুল? এমনটা আমার সাথেই কেন হলো? যখন তোকে মনে পরছিলো না তখন নূর আমার জীবনে আসলো।আর আজ যখন তোকে মনে পরেছে তখন নূর আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে।আমিতো তোদের দুজনকেই ভালোবাসি।তুই আমার প্রথম ভালোবাসা।আর নূর! প্রকৃতি ওকে আমার কাছে টেনে এনেছে।আমি চাইনি তোদের কাউকে কস্ট দিতে।তাহলে কেন আমি তোদের এভাবে কস্ট দিলাম? আজ আমার জন্য এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই না? আমি যদি সাবধানে গাড়ি চালাতাম তাহলে এমনটা হতো না।হৃদ নিজের হাতটা জোড়ে জোড়ে দেয়ালের সাথে আঘাত করতে থাকে। ফুল হৃদকে থামায়। হৃদের হাতটা ধরে দেখে ক্ষত হয়ে গেছে।ফুল হৃদের হাতে চুমু দিয়ে হৃদকে নিজের সাথে ঝাপটে ধরে। তারপর হৃদকে বোঝায়, তোমার কোনো দোষ নেয়। সব দোষ আমার।পাঁচ বছর আগে আমার জন্য তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।তারপর যা হয়েছে সবকিছু তোমার অজান্তে।কিছুই যানতে না তুমি।তাই কোনো ভুল করো নি।

নাহিদ এসে ফুলকে হৃদের কাছ থেকে টেনে সরিয়ে নেয়। তারপর হৃদকে মারতে থাকে। মারতে মারতে বলে, তোর জন্য আমি আমার বোনকে হারিয়েছি আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো।নাহিদ হৃদকে অনেক মারে। হৃদের বাবা-মা আর ফুল নাহিদকে বাঁধা দেবার চেস্টা করে।ফুল নাহিদের পা জড়িয়ে ধরে বলে, নাহিদ ভাইয়া হৃদকে আর মারবেন না।ওর খুব কস্ট হচ্ছে।

নাহিদ এবার হৃদকে ছেড়ে দিয়ে ফুলের চুলের মুঠি টেনে ধরে।ফুলকে উঠিয়ে দাড় করিয়ে বলে, সব দোষ তোর।একটা নস্টা, অলুক্ষুনে মেয়ে কোথাকার।তোদের অবৈধ সম্পর্কের কারণেই আমার বোনটাকে প্লান করে মেরে ফেলেছিস তোরা তাই না?

ফুলকে ওভাবে ধরাই হৃদের চোখদুটো রাগে গজগজ করে। হৃদ বুঝতে পারে নাহিদ বোন হারানোর কস্টে এখানে আসে নি।নাহিদ এসেছে নিজের রাগ মেটাতে।সেদিনের অপমানের বদলা নিতে।হৃদে উঠে দাড়িয়ে নাহিদকে দেয়ালের সাথে গলা চেপে ধরে।আর বলে, তোর সাহস কিভাবে হলো আমার ফুলকে টাচ করার? নাহিদ কিছু বলার আগেই হৃদ নাহিদের নাকে একটা ঘুষি মেরে বসে।নাহিদের নাক কেটে রক্ত পরছে। এমন সময় নাহিদের বাবা-মা কেবিনে ঢুকে হৃদের কাছ থেকে নাহিদকে ছাড়িয়ে নেয়।

নাহিদের মা বলে, তোমার ফুল? তাহলে কি নাহিদ আমাদের ঠিকই বলেছে? ছিঃ হৃদ ছিঃ তোমাদের অবৈধ সম্পর্কের কারণে আজ আমার মেয়েটাকে বলি দিতে হলো।

ফুল এগিয়ে এসে বলে, না আন্টি আপনি যা ভাবছেন তা নয়।সঙ্গে সঙ্গে ফুলের গালে চর মেরে দেয় নাহিদের মা।ফুল গালে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকলে হৃদ এসে ফুলকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে তার শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, ফুলকে কেন মারলেন মা? মারতে হয় আমাকে মারুন।আজ আমার ভুলে সবকিছু হয়েছে।ফুল আমার প্রথম ভালোবাসা।ওকে আমি পাঁচ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।বিয়ের দিন আমার এক্সিডেন্ট হয়।আর সেই এক্সিডেন্টে আমার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলি।ভুলে যায় আমার অতীত।আমার ভালোবাসা ফুলকে।তখন নূর আমার জীবনে আসে।নতুন করে ও আমার স্মৃতিতে নিজের জায়গা তৈরি করে নেয়।আমাদের বিয়ে হয় ভালোবাসার বিয়ে। কিন্তু ফুল? ওতো কখনোই নিজের অধিকার নিয়ে আমার কাছে আসে নি।নিজে কস্ট পেয়েছে।নিজের স্বামীকে অন্যের সাথে বিয়ে দিয়েছে নিঃশ্বার্থ ভাবে।তাহলে ওর দোষটা কোথায়? যা ঘটেছে সবই তো আমার কারণে।

হৃদের কথা শুনে হৃদের বাবা-মা সকড।হৃদকে তার বাবা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, এসব কি বলছিস তুই হৃদ? ফুলকে তুই ভালোবাসতি? বিয়ে করেছিলি ওকে তুই?

হ্যাঁ বাবা।ফুলকে আমি বিয়ে করেছিলাম।ওর একটা আবদার পূরণ করতে তখন বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় আমার কাছে ছিলো না।ও খুব রেগে ছিলো আমার উপর।আমার সাথে কথাও বলছিলো না।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।ওর সাথে কথা না বলে আমার রাতে ঘুম হতো না।তাই সেদিন ওর স্কুল শেষে বের হলে ওকে জোড় করে নিয়ে যায় কাজি অফিস।আর বন্ধুদের দিয়ে বুঝিয়ে ফুলকে বিয়েতে রাজি করায়।আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের শেষে ওকে নিয়ে আমি একটা সুন্দর জায়গায় যায় আর ওখানেই এক্সিডেন্টটা হয়।

তাহলে ফুল আমাদেরকে কিছু বলে নি কেন? কথাটা হৃদের মা জানতে চায় হৃদের কাছে।

ফুল তার খালাম্মাকে বলে, তোমাদের মনে আছে খালাম্মা হৃদের এক্সিডেন্টের পর ডাক্তার কি বলেছিলো? বলেছিলো যদি ওকে কিছু মনে করানোর চেস্টা করা হয় তাহলে ওর বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।আর যদিও তোমাদের আমি বলতাম, তোমরা কি কেউ বিশ্বাস করতে আমার কথা? হৃদতো তখন শুধু নূরকে ভালোবাসতো।তাই ওর সুখের কথা ভেবে বলি নি কাউকে কিছু।কিন্তু আমার মন চাইতো হৃদের একবার সবকিছু মনে পরে যাক।

হৃদের মা ফুলের মাথায় হাত রাখে।আর বলে, কিন্তু ফুল এখন নূর নেয়। তুই চাইলেই হৃদকে পেতে পারিস কিন্তু আমি কখনোই তোর সাথে এই অন্যায় হতে দিতে পারবো না মা।হৃদের মতো আমি তোকেও যে ছোটবেলা থেকে নিজের সন্তানের মতোন দেখেছি।আজ হৃদের জীবনে নূর নেয়, হৃদ নূরের সাথে নিজের বাবা হবার ক্ষমতাও হারিয়েছে।এতো বড় সত্যিটা জানার পরও কি তুই হৃদকে ভালোবাসবি? সংসার করবি ওর সাথে?

হৃদ তার মায়ের কথা শুনে বড় বড় চোখ করে মায়ের দিকে তাকায়। হৃদ তার মায়ের কাছে জানতে চায়, এটা তুমি কি বললে মা?

হৃদের মা কান্না থামিয়ে বলে, সত্যি বলছি হৃদ।ডাক্তার বলেছে তুই আর কোনো দিনও বাবা হতে পারবি না।আর তোর সাথে থাকলে ফুলও কখনো মা ডাক শুনতে পারবে না।আমি আমার এক সন্তানের ভালোর জন্য অন্য সন্তানের ক্ষতি কিভাবে হতে দিই বলতো? ফুলের মা আমার ছোট বোন।আমার অনেক আদরের বোন।ছোটবেলা থেকে অনেক আদর পেয়েছিলো কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর অত্যাচারে আমার কাছে এসেছিলো আশ্রয়ের জন্য। ওকে আমি আমার কাছে রাখি। ও অনেক কস্ট করেছে জীবনে।অনেক কস্ট করে ফুলকে এতো বড় করে তুলেছে।ওর মৃত্যুর আগে আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালো রাখবো ফুলকে।আজ আমি এতোটাও স্বার্থপর হয়নি যে নিজের সন্তানের জন্য আমার বোনের মেয়েটাকে সারা জীবনের জন্য মা ডাক শোনার থেকে বঞ্চিত করবো।তোর জন্য আমার কস্ট হচ্ছে হৃদ কিন্তু ফুল? ওকে তুই তোর এই কস্টের জীবনে টেনে নিস না বাবা।

মায়ের কথা শুনে হৃদ স্তব্ধ হয়ে যায়। ফুল হৃদকে ধরতে যায় হৃদ হাত উঁচু করে ফুলকে বাঁধা দেয়। ফুল তার খালাম্মার সামনে গিয়ে হাত জোড় করে বলে, প্লিজ খালাম্মা তুমি হৃদের সামনে এসব বলো না।ও তাহলে আর আমাকে মেনে নিবে না।আমি পারবো ওকে ছাড়া আর থাকতে।

ফুল বাড়িতে যা।হসপিটালে হৃদের সাথে আমি আছি, তোর খালু আছে।তোকে এখানে প্রয়োজন নেই।

ফুল তার খালাম্মার পায়ে লুটিয়ে পরে।ফুল কাঁদে আর বলে, আমার কিচ্ছু চায় না।মা হতেও চায় না কখনো।আমাকে হৃদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে না প্লিজ।

ফুলের কোনো কথায় হৃদের মা শোনে না।ফুলকে ধরে উঠিয়ে দাড় করায় তারপর হৃদের বাবাকে বলে, তুমি হৃদকে দেখও আমি ফুলকে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। কথাটা বলে ফুলের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়।

হৃদ তাকিয়ে থাকে ফুলের যাওয়ার পানে।ফুলকে পারে না আটকাতে।ফুলের ভালোর জন্যই হৃদ ফুলকে যেতে দেয়।ফুল যেতে চায় না।অনেকবার খালাম্মাকে বলে হৃদের কাছে থাকবে কিন্তু তার খালাম্মা কোনো কথায় শোনে না।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here