ঝিলের ওপারে পদ্মফুল পর্ব -১১

#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল
তন্বী ইসলাম -১১

আলেয়া পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে আবারও চাপাস্বরে বললো
“তারাতাড়ি ঘরে আয় পদ্ম। রাইত বিরাইতে এদিকে ওইদিকে যেনো আর না দেখি তোরে..।
কথাটা বলে আলেয়া আর দাঁড়ালো না। শাপলা কে ঘরে ঢুকার ইশারা করে নিজেও ঘরে চলে গেলো। পদ্ম মুচকি হেসে তাকালো শাপলার দিকে। ইশারায় বোনকে ধন্যবাদ জানিয়ে দু’বোন মিলে ঢুকে গেলো ঘরের ভেতর।
ঘরে গিয়ে সর্বপ্রথম আলেয়া শাপলাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
“কই রে শাপলা, তোর মোবাইলের লাইটটা জ্বালা দেখি খাটের নিচে কি আছে।
শাপলা পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে আবারও হাসলো। এরপর দৃষ্টি মায়ের দিকে রেখে বললো
“এখন মনে হয় চইলা গেছে আম্মা। শব্দ তো আর পাই না।
আলেয়া কিঞ্চিৎ রাগী চোখে তাকালেন মেয়ের দিকে। এরপর তিনি আর কিছু না বলে নিজের বিছানায় শুতে চলে গেলো। মা চলে যাবার পরপরই শাপলা পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো, পদ্মও হাসলো, তবে কোনো রুপ শব্দ ছাড়াই।

খানিক বাদে দু’বোন আবারও গিয়ে পড়তে বসলো। কিছুদূর পড়ার ফাঁকে শাপলার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। যদিও শব্দ হলো না, ফোন ভাইব্রেশনে ছিলো তাই। শাপলা কিছু সেকেন্ড ফোনের নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে রইলো, ঠোঁটের কোনে তার মৃদু হাসি। পদ্ম খেয়াল করলো সবটা। খানিক দুষ্টুমির ছলে শাপলা ধাক্কা দিয়ে বললো
“কি ব্যাপার আপা? হাসিস কেন?
শাপলা পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললো
“তো কি হাসবো না?
“হাসবি না কেন! আমি কি না করছি নাকি হাসার জন্য? কিন্তু কার নাম্বার দেইখা হাসোস তুই?
বোনের কথায় খানিক বিব্রতবোধ করলো শাপলা। ফোনটা বালিশের নিচে গুজে চোখ পাকিয়ে বললো
“বড্ড দুষ্টু হইছিস তুই। আম্মার কাছে বলা লাগবে।
পদ্ম হাসলো। দু’বোন আবারও বইয়ে মুখ গুজলো।
সকালের খাওয়া দাওয়া সেড়ে পদ্ম আর শাপলা যে যার মতো স্কুল কলেজের পথে রওনা হলো। পদ্ম’র স্কুল পেরিয়ে তবেই শাপলাকে কলেজে যেতে হবে। দুবোন একই সাথে বেরিয়েছে তাই। আজ হেঁটে যাবে না সে, আগের দিন যা হয়েছিলো তা ভাবলেই ভয় লাগে। হেঁটে গেলে আরো আগে বেরোতে হত৷ পদ্ম তার স্কুলের সামনে আসামাত্রই বোনের দিকে তাকালো। উচ্ছ্বসিত গলায় বললো
“আমি স্কুলে ঢুকলাম আপা। তুই সাবধানে যাইস।
শাপলা মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো। এরপর চলে গেলো নিজের পথে। কয়েক পা এগিয়েই অটো স্টেশন। সেখান থেকেই একটা অটোতে করে চলে যাবে সে।

শাপলা যে অটোটাতে গয়ে উঠলো সে অটোতেই তার ঠিক পাশের সিটেই উঠে বসলো একটা সুদর্শন ছেলে। ছেলেটা বসতেই শাপলা কিছুটা চেপে অন্যপাশে গেলো, শাপলাকে সরতে দেখে ঠোঁট চেপে হাসলো ছেলেটি। সেটাও খেয়াল করলো শাপলা। ছেলেটি সত্যিই অনেক সুন্দর, বডি স্ট্রাকচার দেখে বুঝা গেলো যথেষ্ট লম্বাও সে। হাসার সময় ঠোঁট দুটোতে একটা গোলাপি আভা দেখা গেলো যা সত্যিই দেখার মতো। তবে শাপলা সরে যাওয়ার কারণে ছেলেটির মুখে হাসি কেন ফুটলো সেটাই বুঝে এলো না। পুরো রাস্তা ছেলেটি শাপলাকে একভাবে দেখেই গেছে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছে শাপলা। তবে শাপলার কেন যেনো মনে হলো এ ছেলেটিকে সে আগেও দেখেছে। বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে, তবে ঠিক কোথায় দেখেছে, কিংবা কেন পরিচিত লাগছে সেটাই তার মাথায় আসছে না।

কলেজের সামনে আসামাত্রই জলদি করে নেমে পরলো শাপলা। ভাড়াটা মিটিয়ে মাথা নিচের দিকে রেখে একরকম দৌঁড়ানোর মত করে ছুটলো কলেজের ভেতর। কিছুটা সময় পর শাপলা ফিরে তাকালো পেছনে, ছেলেটি নেই সেখানে। হয়তো অটোতে করে আরো দূরে কোথাও চলে গেছে। শাপলা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো এটা ভেবে যে অন্তত এ ছেলেটি তাকে ফলো করছে না, ফলো করতে সে এখানেই আশেপাশে কোথাও থাকতো।
স্কুলে কাটানো সমস্তটা দিন হৈ-হুল্লোড় করে কাটালো পদ্ম। যতক্ষণ ক্লাসে স্যার থাকে ততক্ষণ সে নিষ্পাপ বাচ্চা, স্যার চলে যাবার পরই শুধু হয়ে যায় দৌড়াদৌড়ি, হট্রগোল, দুষ্টুমি। যদিও পদ্ম একা নয়, ওর আরো কিছু বান্ধবী আছে ক্লাসে তারাও তার সাথে দুষ্টুমিতে যোগ দেয়। চারটের দিকে ছুটি হয় স্কুল। উচ্ছ্বসিত পদ্ম সকলের সাথে বেশ মজা করে বাড়ি ফিরে।

বাড়ি এসে সে অবাক হয়ে যায়। সেলিম ভাই আসমা ভাবিকে নিয়ে ফিরে এসেছে। পদ্ম’র মুখে হাসির ঝিলিক। সে বইয়ের ব্যাগটা কোনোমতে ঘরে রেখে দৌড়ে চলে যায় চাচীদের ঘরে। চাচী সেলিমের সাথে বসে কথা বলছে। পাশেই বসে আছে আসমা। পদ্ম’কে দেখে হাসলো আসমা। সেলিম বললো
“কি রে পদ্ম, স্কুল ছুটি হইলো?
পদ্ম হেসে বললো
“হইলো তো। না হইলে ফিরে আইলাম কেমনে।
“ওহ তাও তো ঠিক। বোকা হাসলো সেলিম। আসমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে পদ্ম বললো
“তোমারে অনেক মনে পরতেছিলো ভাবী। শেষমেশ তুমি তাইলে ফিরে আইলা।
আসমা হেসে বললো
“আমার ননদী আমারে মিস করছিলো ভাবতেই খুশি লাগতেছে পদ্ম। ওহ আচ্ছা, সেইদিন পরে স্কুলের কাজ সাড়তে পারছিলা পদ্ম?
“কোনদিন? আর কোন কাজের কথা কও আসমা?

আলেয়ায় কথায় পদ্ম আর আসমা দুজনেই একসাথে ঘরের দরজার দিকে তাকালো। আলেয়া বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আসমার দিকে। পদ্ম এবার ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো, এবার বুঝি একটা কেলেঙ্কারি হয়। মনে মনে আসমার উপর বেশ রাগও হলো তার। এই কথাটা কি এক্ষুনি বলতে হলো? আর বলাই লাগে কেন? পদ্ম চোখে মুখে আসমার প্রতি যেমন অভিমান, তেমনি মায়ের কথা মনে করে ভয়… দুটোই একসাথে কাজ করছে।
আসমাকে চুপ থাকতে দেখে আলেয়া আবারও বললো
“কি’গো বউ, কইলা না তো কোন কাজের কথা কইলা পদ্ম’রে!
আসমা হেসে বললো
“চাচী ঘরে আইসা বসেন। ওইখানে দাড়াইয়া আছেন যে।
আলেয়া ঘরে ঢুকতেই জুবেদা আলেয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো
“এখানে বো শাপলার মা।
শাশুড়ির কথার পেছনে আসমাও বললো
“চাচী বসেন।।
জুবেদা উঠে গেলো অন্যদিকে। ততক্ষণে সেলিমও বাইরে বেরিয়েছে। আলেয়া আবারও আসমার দিকে তাকালো। বললো
“কইলনা তো বউ।
আসমা ক্ষীণ হেসে বললো
“পদ্ম’র তো সেদিন স্কুলে নাকি কি দরকার ছিলো, সে কাজের কথাই জিজ্ঞাসা করছিলাম চাচী। স্কুলের দরকারেই তো সে চইলা আসছিলো আমাদের বাড়ি থেকে।
আলেয়া কিঞ্চিৎ ভ্রু বাকিয়ে পদ্ম’র দিকে তাকালো। শান্তস্বরে বললে
“ওহ আইচ্ছা।

পরক্ষণেই বসা থেকে উঠে পরলো আলেয়া। পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষীন গলায় বললো
“ঘরে আয় পদ্ম। স্কুল থেইকা ফিরলি মাত্র, খাইবি।
আলেয়া আর কোনো কথা না বলেই বেরিয়ে পরলো ঘর থেকে৷ পদ্ম’র এবার কান্না পাচ্ছে খুব। মায়ের মুখ দেখের বুঝা যাচ্ছে পদ্ম’র সাথে আজ কি হতে পারে। পদ্ম রাগী চোখে একবার আসমার দিকে তাকালো। এরপর কাঁদো কাঁদো মুখ করে ঘর থেকে বেরোতে যাবে তখনই কোথা থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো আশিক। হঠাৎ আশিককে দেখে চমকে উঠলো পদ্ম। আশিক তার সমস্ত দাঁত কপাটি বের করে পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে হাসছে৷ পদ্ম’র এবার আরো বেশি কান্না পাচ্ছে৷ এ যে মরার উপর খারার ঘাঁ। আশিক পদ্ম’কে ঘর থেকে বেরোনোর পথ আটকে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সময় পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে সেই হ্যাবলা হ্যাবলা হাসিমুখটা দিয়েই বললো
“ভালো আছো পদ্ম?
পদ্ম কাঁদোকাঁদো মুখ করে মাথা নাড়ালো। ছোট করে বললো
“হু ভালো, অন্নেক ভালো।
আশিক পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে ভ্যাবলাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। পদ্ম বেরোতেও পারছে না। এবার মুখ ফুটে সে বলেই ফেললো
“আশিক, তুমি একটু সরে দাঁড়াও না ভাই, আমারে আম্মা ডাকতাছে তো।
আশিক যেনো তখন অন্য দুনিয়ায় বিচরণ করছিলো। আনমনেই সে পদ্ম’র কথার বিপরীতে বললো
“যাইবা তো, একটু দাঁড়ান না, ভালো করে দেখতে দাও।

আশিকের কথায় যেনো পদ্ম’ চোখ কপালে উঠার অবস্থা। সে আবারও আশিককে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আলেয়ার কন্ঠস্বর তার কানে এলো।
“তোরে কখন ডাকছি পদ্ম?
পদ্ম দেখলো মা প্রচন্ডরকম রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পদ্ম ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো। আশিককে একমতন হাত দিয়ে ঠেলে বেরয়ে এলো ঘর থেকে। এরপর মায়ের আগেই দৌড়ে চলে এলো ঘরে।
ঘরে ঢুকতেই মায়ের অগ্নিমূর্তির রুপ চোখে ধরা দিলো পদ্ম’র কাছে। মা বেশ কড়া চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পদ্ম ঢোক গিলে বললো
“কি হইছে আম্মা? এমনে তাকাইয়া আছো কেন আমার দিকে?
আলেয়া মেয়ের কথার কোনো জবাব না দিয়ে বিছানার মাথায় গিয়ে বসলেন। চোখেমুখে তার রাগ বুঝা গেলেও কন্ঠে সেটা প্রকাশ না করে অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বললেন
“সেদিন তুই বাড়ি ফিরলি সন্ধ্যায়। কইলি আমাগোরে ছাইড়া ভালো লাগতাছে না তাই চইলা আইলি। আইজ আসমা অন্য কথা কয় কেন?
মায়ের কথায় কি জবাব দেবে পদ্ম? আজ আপাও এখনো কলেজ থেকে ফিরে নি যে তাকে মায়ের হাত থেকে বাচিয়ে নেবে।

পদ্ম ঢোক গিলে বললো
“কোন কথা আম্মা?
আলেয়া চাপা স্বরে বললো
“তোর কি সত্যিই স্কুলে কোনো দরকার আছিলো? নাকি অন্য কোনো কারণে ফিইরা আইছিলি?
পদ্ম’র কান্না পাচ্ছে এবার। মায়ের মুখে মুখে জবাব দিয়ে কথা ঘুরানোর মত সাহস আর বুদ্ধি তার নেই। আলেয়া এবার কিছুটা চিল্লানোর মতো করে বললেন
“কথা কস না কেন? কি জিগাইতেছি আমি তোরে? তোর যদি ঐদিন স্কুলে দরকারই হইয়া থাকে তয় আমারে কস নাই কেন? আর স্কুলে দরকার না থাকলে ওগো কাছে মিছা কথা কইয়া বাড়ি ফিরলি কেন?
“ও মিথ্যা কথা কয় নাই আম্মা, ওর সত্যিই স্কুলে দরকার ছিলো।
শাপলার কন্ঠস্বর পেয়ে অদ্ভুত ভাবে শাপলার দিকে তাকালো পদ্ম। আলেয়া খানিক বিস্ময়ে বললেন
“ওহ ওর দরকার আছিলো? তা ওই বাড়িতে গিয়া স্কুলের দরকারের খবরটা ও পাইলো কইত্তে?
পদ্ম এক দুই না ভেবে বললো
“শ্রাবণ ভাইয়ের কাছ থেইকা পাইছি আম্মা।
“শ্রাবণের কাছ থেইকা? ভ্রু বাকিয়ে বললেন আলেয়া।
পদ্ম ভয়ে ভয়ে বললো
“হু!
“তা শ্রাবণ জানলো কেমনে তোর স্কুলে দরকার আছিলো?
“আমার বান্ধবী ফোন কইরা জানাইছে। আবারও ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো পদ্ম।

আলেয়া এবার মেয়ের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করলেন। তিনি সর্বোচ্চ ধারণা করছেন মেয়ে তার মিথ্যা কথা বলছে। কপালে ভাজ টেনে তিনি বললেন
“তা তোর শ্রাবণ ভাইয়ের নাম্বার তোর বান্ধবী পাইলো কই?
এবার বিপাকে পরলো পদ্ম? কি উত্তর দিবে সে? এবার তো আর কোনো উপায় নেই। অসহায় মুখ করে শাপলার দিকে তাকালো সে। শাপলা এক দুই না ভেবে হঠাৎ বলে উঠলো
“শ্রাবণ ভাইয়ের কাছে আমি ফোন দিছি আম্মা। ওর বান্ধবী আমার মোবাইলে কল করছিলো, পরে আমিই শ্রাবণ ভাইরে ফোন দিয়া সবটা জানাইছি।।
আলেয়া এবার ভ্রু বাকিয়ে শাপলাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“ওর স্কুলে দরকার সেইটা আমারে কস নাই কেন? আর বাড়িতে ফিইরা মিছা কইলো কেন তোর বোইন যে আমাগোর লাইগা ফিইরা আইছে।

শাপলা এবার এগিয়ে এসে মাকে জরিয়ে ধরে বললো
“ও আম্মা, এতো জেরা কেন করতাছো কও তো। পদ্ম ডরাইতাছে তো। স্কুলের দরকারের কথাটা কইতে ভুইলা গেছিলাম। আর পদ্ম’র তো সত্যিই আমাগো ছাড়া খারাপ লাগতাছিলো, আমারে কইছে তো। সেদিন স্কুলে দরকার না থাকলেও ও আইয়া পরতো।
“স্কুলে দরকার আছিলো, তা স্কুলে গেলো কখন? ও তো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছে।
“স্কুলের কাজ সাইড়া একবারে বাড়িতে ফিরছে আম্মা।
আলেয়া আরেকবার পদ্ম’র দিকে তাকালো। পদ্ম এক কোনায় গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি সেখান থেকে উঠে গেলেন। যেতে যেতে বললেন
“আমি বুঝিনা রে, পদ্ম’রে শাসন করার সময় তুই যে কেমনে সামনে আসোস, আর কেমনে সব কথার উত্তর দেস আমি কিচ্ছু বুঝিনা।

মা চলে যেতেই বোনের দিকে তাকিয়ে হাসলো শাপলা৷ পদ্ম গিয়ে ফট করে জড়িয়ে ধরলো বোনকে। বেজায় উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো
“তোরে কেমনে ধন্যবাদ জানামু রে আপা, আইজ তুই ঠিক টাইমে না আইলে আম্মার হাতে আমি বোধহয় খুনই হইতাম।
“তোরে খুন হওয়ার হাত থেইকা বাচানোর জন্যই বোধহয় আল্লাহ আমারে এই টাইমে ঘরে পাঠাইছে৷। পদ্ম হাসলো। পরক্ষনে কিঞ্চিৎ চিন্তিত হলো সে, বোনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাকিয়ে বললো
“তা তুই এইসব কইলি কেমনে আপা? আমি তো আগে তোরে এই ব্যাপারে কিছু কই নাই!
শাপলা হেসে বললো
“উপস্থিত বুদ্ধি। আম্মার সব কথায় আমি ঘরের সামনে দাঁড়াইয়া শুনছি। বুইঝা নিছি কি কি হইছে সেদিন।
পদ্ম বিস্ময়ে বললো
“সেদিন কি কি হইছে সব বুঝছোস?
শাপলা মাথা নাড়িয়ে বললো
“হুম
“শ্রাবণ ভাই আমারে নিয়া নদীর ধারে হাঁটতে গেছিলো সেটাও বুঝছোস?
শাপলার হাসি পেলো এবার। বোনটা তার কি বোকা। পদ্ম’র কথার বিপরীতে সে চাপা হাসি হেসে বললো
“হু।
পদ্ম আবারও চমকালো। উত্তেজিত গলায় বললো
“শ্রাবণ ভাই আমারে এক হাতে জড়াইয়া ধরছিলো সেইটাও বুঝছোস?

শাপলা এবার বিষম খেলো। চোখ বড় বড় করে বোনের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের সাথে বললো
“শ্রাবণ ভাই তোরে জরাইয়াও ধরছে?
পদ্ম’র এবার মাথায় আসলো আপার এইসব জানার কথা না। সে জিহবায় কামড় বসিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো
“না না না। মোটেও না। আমি তো তোরে জিগাইতেছি তুই এইসব উল্টাপাল্টা ভাবছোস কিনা আমাগোরে নিয়া।
শাপলা হাসলো এবার বোনের কথায়। পদ্ম লজ্জা পেলো খুব, এক দৌঁড়ে বোনের সামনে থেকে বেরিয়ে সোজা ঝিলের পাড়ে চলে গেলো সে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে, বুক ধরফর করছে। সেদিনকার শ্রাবণ ভাইয়ের জড়িয়ে ধরার কথাটা মনে পরতেই বেশ লজ্জা অনুভব করছে সে, ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে পরুক।

চলবে…….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here