#ডায়েরি_পর্ব_৯
জান্নাতুল জান্নাত
২৩শে সেপ্টেম্বর রাত ৮:৫০ মিনিট
এতোদিন পর আজ আবার প্রথম দিনের মতো তপুর প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছিলো৷ আচ্ছা তপুর প্রেমে আমাকে কেন পড়তে হবে? আমি তো তপুকেই ভালোবাসি কিন্তু মাঝখানে কেউ এসে আমাদের মধ্যে দেয়াল তুলে দিয়েছে৷ আসলে আমি এই দেয়ালটাকে এখন আর সহ্য করতে পারছি না৷ এ দেয়ালটা আমার ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে৷ বড্ড বেশি ইচ্ছে করছে দেয়ালের ওপারের মানুষটার কাছে যেতে৷ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম রেষ্টুরেন্টের বাইরে৷
তপুই প্রথম বললো
-অঞ্জু ভিতরে চলো৷ সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে৷ তাছাড়া তুমি সেলিব্রেটি৷ এরকম বাইরে থাকা তোমার জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে৷
-হ্যাঁ, অস্বস্তিকর পরিবেশই বটে৷ অঞ্জনা যেখানে যায় সেখানেই অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়৷
বলে রেষ্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করলাম৷
কর্ণারের একটা টেবিল বুক করা ছিলো যাতে লোকজনের চোখ খুব সহজে সেদিকে না পৌঁছায়৷ হতে পারে কেউ দেখে ফেললে এটা নিয়ে আবার নিউজ করে বসবে৷ মানুষের তো সেলিব্রেটিদের নিয়ে কৌতুহলের অন্ত নেই৷ তিলকে খুব সহজে তারা তাল বানিয়ে ফেলে৷ অবশ্য আমার আর তপুর সম্পর্কটা অবশ্যই নিউজ হওয়ার দাবি রাখে৷ জনতার কাছে খুব মুখরোচক খবর হবে এটা৷ এসব যখন ভাবছিলাম তখন তপু আসলো৷ চেয়ার টেনে আমার উল্টোপাশে বসলো৷
-কেমন আছো অঞ্জু?
-ভালো৷ তুমি?
-হ্যাঁ ভালো৷ তুমি যেনো তনিমার বিষয়ে কি বলতে চেয়েছিলে?
-হ্যাঁ৷ কিন্তু তোমার এতো তাড়া কেন? একটা দিন পিছুটান ভুলতে পারো না?
তপু কিছু না বলে হাসলো৷
-তুমি যেমন বলেছিলে তেমন করেই তো আমি সেজে আসলাম৷ কিছু তো বললে না৷ সাজটা তোমার পছন্দ হয়নি?
-হয়েছে৷ কিন্তু অন্যের স্ত্রীকে সুন্দর লাগছে বলাটা কি আমার শোভা পায়?
-অন্যের স্বামীর জন্য সেজে আসাটা কি আমার শোভা পায় তপু?
উত্তর না দিয়ে আমার চোখে চোখ রাখলো তপু৷ আমার চোখে তখন সমুদ্রের ঢেউ আর তপুর চোখে তীব্র অপমানের লজ্জা৷
-অপমান করছো?
-না৷ তোমাকে অপমানের সাধ্য আমার কোনদিনই ছিলো না আর আজও নেই৷ শুধু তোমার কথাটা তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম৷
-অঞ্জু আমি তোমাকে সত্যিই…..
-কোল্ড কফি খাবে? খেতে খেতে গল্প করা যাবে৷
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে তপু বললো
-তোমার যা ইচ্ছে অর্ডার দিতে পারো৷ আমার সমস্যা নেই৷
দু’টো কফি অর্ডার দিয়ে বললাম
-এই সাড়ে তিনবছরে কখনো কি তোমার মনে হয়েছে আমি তনিমার ভালো চাইছি না?
-হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি৷ তবে কি তনিমা কিছু বলেছে?
-আরে না৷ আমি জানতে চাইছি তনিমার কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আমি রাখি কিনা আর সেটাকে তুমি সমর্থন করো কিনা৷
-অবশ্যই তুমি অধিকার রাখো৷ তাছাড়া তনিমা তোমাকে মামনি বলে ডাকে৷ আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় তনিমা আমার চেয়ে তোমাকেই বেশি ভালোবাসে৷
-কি যে বলো তুমি! তুমি ওর বায়োলজিক্যাল বাবা৷ তোমার চেয়ে বেশি কাউকে কি করে ও ভালোবাসতে পারে৷ তাছাড়া মেয়েরা বাবাকে একটু বেশিই ভালোবাসে৷ আর তোমার বিষয়টাও আমি জানি৷ তুমি খুব তীব্রভাবে ভালোবাসো তনিমাকে৷ মেয়ের প্রতি তোমার চিরকালের আগ্রহ৷ সেখানে আমি তৃতীয় ব্যক্তি কিচ্ছু নই৷
তপু আবারো আমার চোখে চোখ রাখলো কিন্তু এবারের দৃষ্টিটা অন্যরকম৷ কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না৷ বুঝলাম কথাটা বলে ওকে বিব্রত করেছি৷ থাক হোক না বিব্রত৷ তাতে আমার কি? ও কে আমার? কেউ নয়৷ এর মধ্যে কফি আসলো৷
-চুপ করে আছো কেন?
-যাই বলো না কেন তনিমা তোমাকেই বেশি ভালোবাসে৷ তা কি এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এভাবে বলছো?
-আমি তনিমাকে বিদেশ পাঠাতে চাই আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি৷ তাই তোমার আর তনিমার সম্মতির প্রয়োজন৷
-বিদেশ? বিদেশে পড়াতে অনেক টাকার প্রয়োজন৷ অঞ্জু এটা আমার ক্ষমতার বাইরে৷
-আরে তোমাকে আমি টাকা দিতে বলেছি? আমি তো বললাম আমি পাঠাতে চাই৷ তোমার কাছে শুধু অনুমতি চাইছি৷ প্লিজ তপু না করো না৷ আমি তো ওর মামনি৷ প্লিজ অনুমতি দাও৷ আজ যদি আমি ওর মা হতাম?
-এই যদি শব্দটাই অনেককিছু৷ যদি হতে, হওনি তো? তাহলে? তোমার এ টাকার ঋণ আমার শোধ করা সম্ভব নয়৷ এ অনুমতি আমার কাছে চেয়ো না৷
-যদি বলি সে ঋণ তনিমাই শোধ করে দিচ্ছে?
-কিভাবে?
-আমার দু’টি সন্তানের দেখাশোনা তো তনিমাই করে৷ আমি যদি একজন গভারনেস রাখতাম তাকে পে করতে হতো না?
-তুমি তাহলে তনিমাকে তোমার সন্তানদের গভারনেস ভাবছো?
-একদম না৷ এটা তোমার কথার প্রেক্ষিতে বললাম৷ তুমি যদি ভাবতে আমি সত্যিই তনিমাকে আমার মেয়ে ভাবি তাহলে তুমি টাকার প্রসঙ্গ তুলতেই না৷ তুমি নিজেই তো ভাবতে পারছো না৷
-কথার প্যাচে ফেলছো?
-একদম না৷ বরং তুমি আমায় ফেলছো৷ দেখো আমি কিন্তু শুধু তনিমাকে বিদেশে পাঠাতে চাইছি তা কিন্তু নয়, অনিতা অর্ণবকেও পাঠাবো৷
-কিন্তু কেন? দেশে কি সমস্যা৷
-অনেক সমস্যা তুমি বুঝবে না৷
-আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হয়? বুঝিয়ে বললেই বুঝবো৷
-বুঝিয়ে বলারই তো সময় হয়নি৷
-ওহ্ আচ্ছা৷ কিছু লুকোতে চাইছো আমার থেকে?
-হয়তো৷
-আমি তোমার এতোটাই পর হয়ে গেছি যে আজকাল কথা লুকিয়ে রাখতে হয়?
-আপন আর করতে পারলাম কই যে পর করবো?
একটা দীর্ঘনীশ্বাস ফেললো তপু
-অনুমতি দিচ্ছো? তাহলে আমি তিনজনেরই বাইরে যাবার ব্যবস্থা করি৷ তুমি অনুমতি না দিলে কিন্তু আমার ছেলেমেয়ে দু’টোকেও আর পাঠানো হবে না৷
-তনিমার সাথে ওদের কি সম্পর্ক?
-কারণ তিন ভাইবোন আলাদা জায়গায় পড়ালেখা করবে তা আমি চাই না৷ আর তনিমা ওদের খুব ভালোভাবে বড় করতে পারবে৷ বড় দিদি ও৷
-তনুই তো ছোট৷
-তনু? কে তনু?
-তনিমাকেই আমি তনু ডাকি৷
-ওহ্ আচ্ছা৷ তনিমা অনেক বড় হয়েছে৷ তুমি বোঝনি৷ একদিকে তুমি ওর বাবা আর অন্যদিকে তুমি ওর কাছে থাকো না তাই ওর বড় হওয়াটা তোমার চোখে পড়েনি৷
-তনু কি রাজি হবে?
-সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও৷ আমার শুধু তোমার অনুমতির প্রয়োজন ছিলো৷
-বিদেশে গেলে তো ও তোমাকে পাবে না৷
-হ্যাঁ তবে সুন্দর একটা ভবিষ্যত পাবে৷ সাথে আমার ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যতও সুন্দর হবে৷
-যা ভালো বোঝো করো৷ এটা বলতেই ডেকেছিলে?
-হ্যাঁ৷ আরেকবার কফির অর্ডার দেই?
-আরো কি কথা আছে?
-কবিতাটা শুনাবে না?
-হ্যাঁ৷ মেহেদি পাতা কবিতাটা তাই না?
-আচ্ছা৷ কফি অর্ডার দাও শুনাচ্ছি৷
কফি অর্ডার দেয়ার পরে তপু কবিতাটা শুনালো৷ আমার কানে শুধু দু’লাইনই গেলো আর কিছু শুনতেই পেলাম না৷
“অনন্ত, মেহেদি পাতা দেখেছো নিশ্চয়ই
উপরে সবুজ ভিতরে…..”
কবিতাটার প্রতিটি শব্দ অামার হৃদয়ে মনে হয় ছোরা মারে৷ কলিজাটাকে একটু একটু করে ফালা ফালা করে কাটে৷ কিছুক্ষণ পর আমার চোখে বর্ষা নামলো৷ কোথায় থেমে গেলো তপু বুঝতে পারিনি৷ আমার কানে তো কোন শব্দই যায়নি৷
-কি হলো কাঁদছো কেন?
-এমনি৷ সব প্রশ্নের উত্তর হয় না তপু৷ তোমার স্ত্রী কিভাবে মারা গেলো? আর কত বছর হলো?
-হঠাৎই মারা গেছে৷ বছর পাঁচেক হলো৷
-কি নাম ছিলো ওর?
-কার? তনিমার মায়ের?
আবার আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো৷ তনিমার বায়োলজিক্যাল মা হওয়ার লোভটা আমার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে প্রতি মূহুর্তে৷ তনিমাকে কাছে পাওয়ার পর থেকে আরো বেশি করে হচ্ছে৷
-হ্যাঁ, তোমার স্ত্রীর নামটা জানতে চেয়েছি৷
-তনুর মায়ের নাম ছিলো তৃপ্তি৷ অঞ্জু তোমার চোখে জল মানায় না৷
-অনেককিছুই অনেকের সাথে যায় না তারপরও কি সেগুলো আমরা চাইলেই বদলাতে পারি?
-বাদ দাও৷ ওদের বিদেশে পাঠানোটা কি খুব জরুরী?
-হ্যাঁ৷
-কেন?
-জানবে তুমি সব জানবে৷ বছর দেড়েক পরে৷
-বছর দেড়েক পরে যেটা জানতে পারবো সেটা বছর দেড়েক আগে জানলে সমস্যা কি?
-সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে৷ সে সময়ের অপেক্ষা করতে হয়৷ তোমার বিয়েটা কবে হয়েছিলো? বিয়ের পরও কেন আমার সাথে নাটক করেছিলে?
-আমি তোমার সাথে কোন নাটক করিনি৷ আমার বিয়ে, তৃপ্তি ওদের সম্পর্কে জানার সময় এখনও আসেনি৷ সময় হোক তুমিও সব জানতে পারবে৷ তোমার প্রতি আমার ছিলো নিরেট ভালোবাসা৷
বিদ্রুপের হাসি হেসে বললাম
-অভিনয়টা তো আমি করি জানতাম তুমিও যে এতো ভালো অভিনয় পারো জানলে আমার কো-আর্টিষ্ট বানাতাম৷ ইচ্ছে আছে অভিনয় করার? থাকলে বলো আমি অঞ্জনদার সাথে কথা বলে দেখবো৷
-না গো প্রিয়ে৷ তবে তুমি অভিনয় জগতে গেলে কি মনে করে? যতটুকু আমি জানি এসব তোমার কখনোই পছন্দের ছিলো না৷
-রিসিপশনে আমাকে দেখে অঞ্জনদার পছন্দ হয়েছিলো আর আমার শ্বাশুড়ি স্বামী কারোরই আপত্তি ছিলো না৷ চলে এলাম৷ তুমি যেমন হুট করেই চলে গেলে তেমনি হুট করেই আমি অভিনয় জগতে প্রবেশ করলাম৷
-বাহ্ তোমার শ্বাশুড়ি স্বামী তারা তো বেশ ফ্রেন্ডলি আর ওপেন মাইন্ডেড মনে হচ্ছে৷ তা না হলে বিয়ের পর অভিনয়ে অন্তত স্বামীরা সম্মতি দেয় না৷ আমার সাথে বিয়ে হলে তুমি কখনোই এ সুযোগ পেতে না৷
-তাইতো বোধ হয় ভাগ্যদেবতা আমাদের মিলন লিখেনি৷
-অনেক কথা হলো এখন তবে আসি অঞ্জু?
-চলে যাবে? বলে যাও আমি কি করে থাকবো?
-তুমি তো আছো৷ বেশ ভালোই আছো৷ অট্টালিকায় তোমার বসবাস, ঠান্ডা বাতাসে তোমার শরীর শীতল হয়৷ চারিদিকে তোমার প্রাচুর্য ঘিরে আছে৷ স্বামী, সন্তান, পপুলারিটি, তোমার কিসের অভাব? অভাব তো আমার ছোট্ট কুড়েঘরে স্ত্রী সন্তানহীন জীবন আমার৷
-সব তো ছিলো তোমার৷ সন্তান তো তোমারই আছে৷ আমি তো কেড়ে নেইনি৷
এবার আর তপু তাকালো না৷ কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝেছি ওর চোখে জল৷ কিন্তু কেন এ জল? স্ত্রী সন্তান সব তো ছিলো৷ পুরুষেরা তো কাঁদে না তবে ও কেন কাঁদছে আজ? কিসের অপূর্ণতা?
-তপু????
উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তপু৷ পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে টেবিলের উপর রাখলো৷
-এটা তোমার জন্য৷ অঞ্জু আমি তোমাকে আজও ভালোবাসি৷ খুব বেশি ভালোবাসি৷
বলেই হনহন করে চলে গেলো৷ আমি ডাকার চেষ্টা করেও পাইনি৷ ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলো৷ রেষ্টুরেন্টে ফিরে এসে দেখছি বয় প্যাকেটটা নিয়ে যাচ্ছে৷
-এই প্যাকেটটা নিও না৷
বলেই ওর হাত থেকে প্যাকেটটা নিলাম৷ বিল পে করে প্যাকেটটা নিয়ে গাড়িতে উঠলাম৷ গাড়িতে বসেই খুললাম৷ সেই আগের মতো মায়ের ফুল প্রসাদ আর সাথে একটা সিঁদুর কৌটো৷ ছোট্ট একটা চিঠিও আছে সাথে৷
প্রিয় অঞ্জু,
জানি আমার উপর তোমার খুব রাগ অভিমান৷ হওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু সময় যে বড্ড বেরহম৷ ভাগ্যদেবতা যা কপালে লিখে রাখেন তা বদলানোর সাধ্য কার আছে? আজ থেকে এগারো বছর আগে আমরা কি ভেবেছিলাম আমাদের অবস্থান এমন হবে? তুমি অভিনেত্রী হবে কোনদিন ভেবেছিলে? আমি আমার ছোট্ট ঘরে কুকড়ে মরবো কোনদিন ভেবেছিলাম? কিন্তু ভাগ্য আমাদের এখানে নিয়ে আসলো? আমি কাউকে দোষ দেই না৷ এটাই ছিলো আমার ভবিতব্য৷ তুমি বিশ্বাস করো আর নাই করো আমি তোমাকেই ভালোবাসতাম আর ভালোবাসি৷ সেদিন যেমন তোমাকে বলা কোন কথা আমার মিথ্যে ছিলো না৷ তেমনি আজও মিথ্যে নয়৷ আমি মিথ্যে বলতে পারি না৷ তোমার সিঁথিতে আমি সিঁদুর পড়িয়েছি তাতেও কোন মিথ্যে নেই আমাদের বিয়েটা কিন্তু আজও মিথ্যে নয়৷ এতোদিন তোমাকে আমি সিঁদুর ছাড়া দেখেছি৷ এটা আমার সহ্য হয়নি৷ বিবাহিত মেয়ে সিঁদুর পড়বেনা তা কি করে হয়৷ আমার মঙ্গল কামনায় না হয় নাইবা পড়লে তোমার বর্তমান স্বামীর মঙ্গল কামনায় তো পড়বে? এক কৌটো সিঁদুর দিলাম৷ মোটা করে সিঁথি রাঙাবে৷ খুব সুন্দর লাগবে দেখতে৷ ভালো থেকো ভালোবাসা৷
ইতি
তোমারই তপু
চিঠিটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম৷ তপুর স্পর্শ অনুভব করছি এমন সময় ফোন বেজে উঠলো৷ ধরতে ইচ্ছে করছিলো না তাই ধরলাম না৷ আবার বাজতে লাগলো৷ হাতে নিয়ে দেখলাম অঞ্জনদার ফোন৷ ফোন ধরতেই হোটেলের ঠিকানা বলে সেখানে যেতে বললেন৷ বুঝলাম আজ আবার তিক্ত অভিজ্ঞতার সময় এসেছে৷ ড্রাইভারকে বলে সে ঠিকানায় গাড়ি ঘোরালাম৷ বাসায় ফিরলাম সন্ধ্যেতে আবার অশুচি হয়ে কিন্তু আজ এ বিষয়গুলো তেমন একটা গায়ে লাগছে না৷ আজ তপুর সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো আমার কাছে বেশি দামী৷ তারচেয়েও বেশি দামী ওর দেয়া চিঠি আর সিঁদুর কৌটো৷
এ পর্যন্ত লিখে থামলাম৷ তনিমাকে ডেকে ওর সাথে কথা বলবো৷ ওর সাথে বিদেশে পড়ালেখার বিষয়ে কথা বলতে হবে৷ ওকে না জানিয়ে তো আর এসব করতে পারবো না৷
চলবে…..