ডায়েরি পর্ব ১০

#ডায়েরি_পর্ব_১০

জান্নাতুল জান্নাত

২৩শে সেপ্টেম্বর রাত ১১:৩৫

তনিমাকে ডেকে কথা বললাম৷ একদম রাজি হচ্ছিলো না মেয়েটা৷ বললো ওর বাবা আর আমাকে ছেড়ে থাকতে নাকি খুব কষ্ট হবে৷ বললাম
-আমি তো তোর নিজের মা নই৷ তবে আমাকে ছেড়ে থাকতে কেন কষ্ট হবে?
-শুধু কি নিজের মা হলেই হয়? সব সম্পর্ক কি রক্তের হয়? কিছু সম্পর্ক তো আত্মারও হয়৷ মামনি তুমি হয়তো জানোনা আমি ঠিক কতোটা তোমাকে ভালোবাসি৷ মা চলে গেলেন তার বছর দু’য়েক পরই তো তোমাকে পেলাম৷ অনিতা আর অর্ণবের থেকে আমি যে আলাদা কোনদিন সেটা বুঝতে দাওনি৷ মায়ের সাথে সাথে পেয়েছি দুই ভাই বোনকে৷ তবে কেন আজ আমায় দূরে সরাতে চাইছো?
-মা রে তুই আমায় ভুল বুঝছিস৷ আমি তোকে দূরে সরাতে চাইছি না৷ তোকে একটা সুন্দর ভবিষ্যত দিতে চাইছি আর তোকে তো একা পাঠাচ্ছি না অনিতা অর্ণবও যাবে তোর সাথে৷ তিন ভাইবোন একসাথে থাকবি৷
-ওরাও যাবে?
-হ্যাঁ৷
-ওরা তো কিছু বললো না আমাকে?
-ওরা তো জানেনা এখনও আর ওদের কি সিদ্ধান্ত নেয়ার বয়স হয়েছে? তোকে জিজ্ঞেস করেছি বলে কি ওদেরও জিজ্ঞেস করবো? তুই তো বড় হয়েছিস তাই তোকে বললাম৷ ওদের বিষয়টা আমি বুঝে নিবো
-ও৷
-পারবি না ভাই বোন দু’টিকে মানুষ করতে? তোর হাতে ওদের দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হতে চাই৷
-এখানে সমস্যা কি? এখানেও তো আমি আছি৷
-আছিস কিন্তু এখানে সুব্রতও আছে, আছে তোদের ঠাম্মি৷ এরা থাকতে আমার কোন ভরসা নেই৷ এ বাসায় বাতাসেও বিষ আছে রে৷ এই বিষাক্ত বাসায় আমি তোদের রাখতে চাই না৷ তোকে তো সুব্রতর কথা আগেই বলেছি৷ দুই দুইটা মেয়ে তোরা থাকিস কখন কি হয়ে যায় বলতে পারি না৷ তাইতো দূরে পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে চাই৷

মন খারাপ করে আমার পায়ে শুয়ে রইলো তনিমা৷
-কিরে কিছু বলবি না?
-বাবার যে আমার জন্য খুব মন কেমন করবে!!
-তোর বাবার সাথে আমি কথা বলেছি৷ ও অনুমতি দিয়েছে৷ মনের দিকে তাকালে তো আর ভবিষ্যত উজ্জল হবে না৷ তুই যদি দেশে বিদেশে নাম করিস সবচেয়ে বেশি খুশি তপুই হবে৷ বাবার জন্য এটুকু কষ্ট করতে পারবি না?
-হ্যাঁ, পারবো৷
-এখন তুই চাইলেই আমি ব্যবস্থা করতে পারি৷ এসব করতেও মাস ছ’য়েক লেগে যাবে৷ পাসপোর্ট, ভিসা, ওদিকের সব ব্যবস্থা সব তো আমাকেই করতে হবে৷
-হুম৷
-হুম কি? করবো? দেখ তিনজনের বিষয় অনেক ঝামেলা আছে৷ আর তুই ভালো করেই জানিস আমি খুব ব্যস্ত থাকি এর মধ্যেই সময় বের করে করতে হবে৷ আর না করে কাজগুলোকে পিছিয়ে দিস না৷ বল ব্যবস্থা করবো?
-তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো৷
-এই তো লক্ষ্মী মা আমার৷ আমি তোর মামনি না? মামনি কখনো মেয়ের খারাপ চাইতে পারে?
-জানি৷ তাই তো বললাম তোমার যা ইচ্ছে৷
-মন খারাপ করে থাকিস না মা৷ দেখবি ওখানে গেলে মন খারাপের সময়ই পাবি না৷ নতুন দেশ নতুন অনুভূতি৷ আবার একা থাকলেও মন খারাপের একটা বিষয় ছিলো৷ তিন ভাইবোন একসাথে থাকলে কি আর মন খারাপ হয় কারো? এখন যা পড়তে বস তো আমার কাজ আছে৷

এসব বলে পাঠিয়ে দিলাম তনিমাকে৷ এই স্ট্যাডি রুমটাই আমার নিজের জগৎ৷ আগে একবার লিখেছিলাম আমি প্রচুর বই পড়তাম কিন্তু বাবা কিনে দিতেন না৷ একাডেমিক বই ছাড়া কোন বই কেনাকে তিনি বাহুল্য মনে করতেন৷ আমার ঈষৎ সন্দেহ হয় এটা কি শুধুই বাহুল্যতা মনে করতেন বলেই কিনতেন না নাকি অন্যকিছু? আমার ব্যক্তিগত মতামত মানুষের অনেক সাধ জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায় সাধ্য না থাকার অনলে৷ হয়তো বাবার সাধ্য ছিলো না বলেই ঐ কথাগুলো বলে আমাকে মানাতেন৷ আজ আমার সাধ্য আছে আমার প্রাচুর্য আছে তাই আমার বই কেনাতে কোনো কার্পণ্য নেই৷ আমি প্রচুর বই কিনি৷ তবে অদ্ভুত বিষয় আমার ছেলে মেয়ে একটাও আমার মতো হয়নি৷ কাউকেই কখনো আমার এ রুমে উকি মারতেও দেখি না৷ এটা যদি হতো আমার ছেলেবেলা, আমি সব বইগুলো পড়তাম৷ কার বই আমি রাখিনি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জসীমউদ্দিন থেকে একালের লেখকদেরও বই আছে৷ আমার প্রতি তো নিদ্রাদেবীর কৃপা খুব একটা হয় না তাই রাত জেগে জেগে এগুলো পড়ি৷ তনিমা আসার পর থেকে মাঝে মাঝে বইগুলো স্থানচ্যূত হতে দেখেছি৷ আবার সাজিয়ে রাখতেও দেখেছি৷ হয়তো এ মেয়েটা বই পড়ে৷ যাক আমার কেনা বইয়ে কারো হাতের ছোঁয়া লেগেছে তবে৷ ওকে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে কি ধরণের বই ওর ভালো লাগে৷ ওর জন্য না হয় আলাদা কিছু বই কিনবো৷

আমি তো বই এনে কোনরকমে সেলফে রাখতে পারলেই হলো৷ সাজানোর সময় কই আমার? তনিমা আসার আগে কেউ এদিকে কখনো তাকায়ও নি৷ তনিমাই এ ঘরটা সাজিয়ে রাখে৷ আমার ড্রেসিং টেবিলের সামনে সিঁদুর কৌটোটা ও ইচ্ছে করেই রাখে আমি জানি কিন্তু পড়ি না৷ কার জন্য পড়বো? কার মঙ্গল কামনা করবো? আমি তো তার মৃত্যুই চাই৷ ওয়ায়ড্রোবে বেশ কতগুলো লালপেড়ে সাদা শাড়ি তুলে রেখেছে মেয়েটা৷ জানি এগুলো ও রাখে আমার পূজোর জন্য কিন্তু আমি তো ঠাকুর ঘরেই যাই না৷ মেয়েটা আমাকে অনেককিছুই ইঙ্গিতে বোঝাতে চায় আর আমি সেগুলো বুঝেও বুঝিনা৷

মা আজ তো তপু আমাকে সিঁদুর দিয়েছে৷ আমি যদি ওর নামে সিঁদুর পড়ি তবে খুব কি পাপ হবে? ওর সাথে আমার বিয়েটা তো ভেঙে যায়নি৷ সে হিসেবে আমি এখনও ওর স্ত্রী তাহলে আমি কি ওর নামে সিঁদুর পড়তে পারি না? আরে ধ্যুৎ কিসের পাপ পূণ্য নিয়ে ভাবছি আমি? আমার পাপের ঘড়া তো পূর্ণ হয়েছে সেই কবেই৷ আমার ঠাই যে নরকে সে আমি আগেই বুঝেছি৷ আমার আর কোন পাপ পূণ্য নেই৷ আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তপুর নামেই সিঁদুর পড়বো৷ যা হয় হোক৷ আমার কোন ভয় নেই৷ আমার স্বামী তপুই৷ কালী মায়ের সামনে ওর হাতে সিঁদুর পড়েছিলাম কিছুতেই তা মিথ্যে হতে পারে না৷ আমার সিঁথিতে শুধু তপুর নামেই সিঁদুর উঠবে৷

তপুর চোখেও আজ আমি স্পষ্ট আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি৷ তাহলে কেন করেছিলো এই মিথ্যে অভিনয়? যদি আমাকে ভালোবেসেই থাকে তাহলে আমার আগে অন্যকে কি করে বিয়ে করলো আবার সেখানে সন্তানও আছে৷ আবার বলছে আমাকে ভালোবাসা, বিয়ে কোনোটাই মিথ্যে নয়৷ তবে আমি কোনটাকে বিশ্বাস করবো? এই তপুকে নাকি সেদিন পিঠ বাঁচিয়ে পালিয়ে যাওয়া তপুকে? আবার তনিমার অস্তিত্বও তো মিথ্যে নয়৷ হিসেব কিছুতেই মিলছে না৷ যা হয়েছে সে হিসেব মিলিয়ে কি লাভ? আজ পর্যন্ত কেউ কি অঙ্ক কষে জীবনের হিসেব মিলাতে পেরেছে৷ আচ্ছা জীবনের উদ্ধর্ত পত্রে কি সম্পদ-সম্পত্তি আর দায়দেনা ও মালিকানা স্বত্বের দু’পক্ষ মিলে? কখনো মিলেছে? আমার জীবনের তো সবই শেষ! ডাহা ক্ষতি হলো জীবন নামের ব্যবসায়৷ কোনকিছুরই বীমা করা ছিলো না তাই কোন ক্ষতিপূরণও নেই৷

আচ্ছা ওরা চলে গেলে আমার ঘরটা ফাঁকা হয়ে যাবে তো৷ আমি কি করে তখন থাকবো? বাসায় ফিরে এ তিনটি মুখ আর আমি দেখতে পাবো না৷ আমার সারাদিনের ক্লান্তিগুলো কি করে মুছবো? আমার এতো যন্ত্রণার মধ্যে এদের মুখ দেখেই তো আমি স্বস্তি পেতাম৷ ওরা চলে গেলে এই বিষাক্ত সাপের গুহায় শুধু আমি থাকবো৷ যত বিষ সব আমি গলধঃকরণ করবো৷ আর কতো বিষ দিবে আমায়? আর মাত্র দেড় বছর তারপর যে আমার মুক্তি৷ ততদিনে নিশ্চয়ই ওদের হাসিমুখ আমি দেখতে পাবো৷

এরমধ্যে আমার দরজায় করাঘাতের শব্দ পেলাম সাথে তনিমার গলা
-মামনি দরজাটা একটু খুলবে? তোমার সাথে আমার কথা ছিলো৷
শব্দ পেয়ে ডায়েরি লুকিয়ে রেখে তাক থেকে একটা বই বের করে টেবিলে মেলে রাখলাম৷ তারপর দরজা খুললাম
-এখনো ঘুমাও নি? কি করছিলে এতো রাত অব্ধি?
-এই তো বই পড়ছিলাম৷
-ও৷ আচ্ছা৷ তুমি আমাকে কাল সুন্দর একটা ডায়েরি এনে দিবে?
-কেন?
-আরে আমার লাগবে৷ বিদেশ যাওয়ার আগে আমি অনেক কিছু লিখবো তাই৷ প্লিজ মামনি?
-আচ্ছা দিবো৷
-লাভ ইউ মামনি৷ আচ্ছা আমি শেক্সপিয়রের বইটা নিয়ে যাই? নাকি তুমি পড়বে?
-না তুই নিয়ে যা আমি তো নজরুল পড়ছিলাম৷
-ও আচ্ছা৷
বলে তনিমা বই খুঁজতে লাগলো৷ অনেকক্ষণ খুঁজে বলছে
-এখানেই দুপুরে বইটা রেখেছিলাম৷ কোথায় উধাও হয়ে গেলো৷

ঠিক তখনই আমার মনে পড়লো
“আরে আমি তো ওখান থেকেই বই নিয়েছি যেখানে তনিমা খুঁজছে৷ ও তো সব লেখকদের বই আলাদা আলাদা রেখেছিলো৷ এটাই হয়তো শেক্সপিয়রের সেই বই তনিমা যেটা খুঁজছে৷”

হঠাৎ কি মনে করে যেনো তনিমা টেবিলের উপর খোলা বইটা উল্টে দেখলো৷
-এই তো বইটা৷ মামনি তুমি যে বললে নজরুল পড়ছিলে এটা তো শেক্সপিয়র?
-না মানে ভুলে বলেছিলাম৷
-মামনি নজরুল আর শেক্সপিয়র আকাশ পাতাল পার্থক্য৷ এদের মধ্যে কেউ গুলিয়ে ফেলে?
-না মানে…
-আসলে হয়েছে কি মামনি তুমি আসলে বই পড়ছিলে না৷ অন্য কিছু করছিলে৷ আমাকে বলতে চাও না তাই মিথ্যে বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছো৷ কি দরকার আমাকে মিথ্যে বলার? আমি কে?
-এতো কথা কেন বলছিস? তুই যেটা খুঁজেছিলি সেটা তো পেয়েছিস৷ তাহলে এখন যা৷ কাল তোর ডায়েরি পেয়ে যাবি৷
-তা তো যাবোই৷ মামনি আমি নাকি তোমার মেয়ে? তাহলে আমার সাথে মন খুলে কেন কথা বলতে পারো না? বলো মামনি তোমার কোথায় কষ্ট? শেয়ার করলে কষ্ট কমবে৷
-আরে ধ্যুৎ কি সব বলছিস? আমার আবার কিসের কষ্ট? এতো প্রাচুর্যের মধ্যে কেউ খারাপ থাকতে পারে?

তনিমা হেসে উঠলো৷ ওর হাসি যেনো আর থামতেই চায় না৷
-কিরে কি হলো? এভাবে হাসছিস কেন?
-প্রাচুর্যে কে কবে সুখী হয়েছে মামনি? আমায় তুমি শুধু একটা উদাহরণ দাও৷ তুমি নিজে কতটুকু সুখী?
-আমি তো সুখী৷ সত্যিই সুখী৷
-তুমি সুখী? অনিতার বাবার সাথে তোমার ঠিক কতদিন পর দেখা হয় মামনি? তোমাদের দেখলে তো আমার মনে হয় তোমরা একে অপরের অপরিচিত৷ শেষ কবে তোমরা একসাথে খেয়েছো? একসাথে কবে তোমরা ঘুমিয়েছো তোমার মনে পড়ে মামনি?
-তনু?
-আমার এ নামটা বাবা তোমাকে বলেছে তাই না?
-হ্যাঁ৷ কিন্তু তুই এসব কি বলছিস?
-মামনি সাড়ে তিন বছর আমি এ বাসায় আছি কিন্তু তোমাদের দু’টি মানুষকে কখনো একসাথে দেখিনি৷ প্রতিদিন ঐ মানুষটা ড্রিংকস করে মাতাল হয়ে বাসায় ফেরে৷ একা একা ঘরে ভাংচুর করে৷ আজেবাজে মেয়েদের নিয়ে বাসায় আসে৷ আমি এখন বড় হয়েছি৷ আমি বুঝি সে কি করে আর কেন তাদের নিয়ে আসে৷ আমি জানি কেন তুমি আমাকে আর অনিতাকে সাবধানে থাকতে বলো৷ আমি জানি কেন তুমি ওদের ঐ ঘরে যাওয়া থেকে আটকাতে বলো৷ কেন তুমি আমাদের বিদেশ পাঠাচ্ছো৷ সব জানি মামনি সব৷ নোংরা সব ছবিতে ভরপুর ঐ লোকটার রুম৷ লোকটা ওদের বাবা হয়েও, বাবা নন৷ ওদের মা বাবা দু’জনেই আছে তবুও ওরা না পেয়েছে মায়ের ভালোবাসা, না পাচ্ছে বাবার ভালোবাসা৷ যেখানে বাবা মা সন্তানদের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থান আর সেখানে তোমরা এতোই দূর্ভাগা মা বাবা যে সন্তানদের ভালো রাখার জন্য তোমাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠাতে হচ্ছে৷ যেনো ওদের পাপী বাবা মায়ের ছায়াও ওদের উপর না পড়ে৷ এক বাসার মধ্যে থেকেও তোমাদের মধ্যে হাজার ক্রোশ দূরত্ব৷ আচ্ছা ওদের বাবার কথা বাদ দিলাম৷ মামনি তুমি তো ওদের মা বলতে পারো কেন নিঃসংকোচে তোমার ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে ধরতে পারো না? কেন প্রতি রাতে ওদের বিছানার পাশে গিয়ে হাত বাড়িয়েও ফিরে আসো? তোমার সন্তানদের ছুঁতে কিসের এতো ভয় তোমার? তোমার কিসের পাপ? কেন তোমার কাজের সিডিউলে কোন ছুটি নেই? কি এতো তোমার কাজ? কেন ছেড়ে দিচ্ছো না এই অভিশপ্ত জীবন? আজ তো তোমার শ্যুটিং ছিলো না তাহলে কোথায় গিয়েছিলে? সন্ধ্যে পর্যন্ত কোথায় ছিলে? কেন বাসায় ফেরার পর থেকে তোমার চোখে মুখে অপরাধীর ছাপ? কেন চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছো না? কেন? উত্তর দাও?
-থাম বলছি৷
-কেন থামবো বলো? তুমি হোটেলে অভিনয় করতে গিয়েছিলে? আমি তো জানি ঐ হোটেলে….
-চুপ কর বলছি৷ দোহাই লাগে চুপ কর৷ অনেককিছু বলে ফেলেছিস৷ আমি আর শুনতে পারছি না৷
-কেন থামবো? ঠাকুর তো তোমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন৷ তারপরও কেন এতো টাকার দরকার তোমার? কেনো পড়ে আছো ঐ নষ্ট জগতে?
-তনু তুই এখন তোর রুমে যা৷ তুই অনেক ছোট৷ এগুলো বোঝার বয়স তোর হয়নি৷ সময় হোক সব জানতে পারবি৷ এখন বই নিয়ে যা৷ তোকে আশ্বস্ত করছি সব জানবি৷ কিন্তু তোদের প্রতি ভালোবাসাতে আমার কোন ক্ষামতি বা অভিনয় কোনটাই নেই৷ প্লিজ যা৷
তনিমা চলে গেলো৷

আমি দরজা আটকে দাঁড়ানো থেকে বসে গেলাম৷
” এসব কি বলে গেলো মেয়েটা? এতোকিছু মেয়েটা জানে? তারমানে আমার নোংরা পরিচয়টাও ও জানে? হায় ঈশ্বর এবার আমি কোথায় মুখ লুকাবো? সন্তানদের সামনে মায়ের এ রুপ যদি প্রকাশ হয় ওদের তো গ্লানির শেষ থাকবে না৷ ঈশ্বর আমায় পথ দেখাও?”
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here