ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব -০৫

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#৫ম_পর্ব
#লেখনিতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

শ্রাবন্তীর দিকে গু*ন্ডারা এগিয়ে আসছিল। শ্রাবন্তী ভাবছিল আজ তার অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে। সেই ভয়েই ছিল শ্রাবন্তী। ভয় পেলেই শ্রাবন্তীর প্যানিক এট্যাক হয়। এবারও তাই হলো, শ্রাবন্তী প্যানিক এট্যাক করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। গু*ন্ডা*রা সবাই ভয়ে পালিয়ে গেল। গৌরব এসে শ্রাবন্তীকে কোলে তুলে নিল। তাকে নিয়ে ছু*টতে থাকে। পাশেই একটি ব্রেঞ্চে গিয়ে শ্রাবন্তীকে নামিয়ে দেয়। গৌরব নিজের এক বন্ধুকে ফোন করে ডাকে। যে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। গৌরবের ডাকে তার বন্ধু সঞ্জয় চলে আসে।
গৌরব সঞ্জয়কে বলে, এই মেয়েটাকে কিছু ছেলে এ*ট্যাক করছিল, মনে হয় ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।

সঞ্জয় শ্রাবন্তীর চেকআপ করে বলে, এই মেয়েটা ঠিকই আছে। চিন্তার কিছু নেই। হয়তোবা প্যানিক এট্যাক করেছিল। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

গৌরব দুশ্চিন্তামুক্ত হয়। সঞ্জয়ের দিকে তাকাতেই কিছু কথা মনে পড়ে যায়। গৌরব সঞ্জয়কে বলে, সামনে নাকি তোর বিয়ে? আমাকে নিমন্ত্রণ দিলি না।

দেবো তো। তুই সহ আমার সব বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করব।

বিয়ে কি মীনাক্ষীকেই করবি?

হ্যাঁ, ওকে ছাড়া আর কাকে করব। কত বছরের রিলেশন আমাদের। যাইহোক আমি এখন আসি। তোর জন্য আমাকে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ফেলে এখানে আসতে হয়েছিল। এমনভাবে ডাকলি যে ভয় পেয়ে গেলাম।

ধন্যবাদ সঞ্জয় এত কষ্ট করে আসার জন্য। তুই না আসলে কি যে হতো।
সঞ্জয় চলে যায়৷ তার চলে যাওয়ার পরই শ্রাবন্তীর জ্ঞান ফিরে আসে।

শ্রাবন্তী চোখ খুলেই গৌরবকে নিজের সামনে দেখতে পায়। যার কারণে সে গৌরবকে ভুল বোঝে। শ্রাবন্তী গৌরবের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, আপনি ঐ গু*ন্ডাগুলোকে আমার পেছনে পাঠিয়েছিলেন তাই না?

গৌরব হতবাক হয়ে যায়। শুরু থেকে এই মেয়ের জন্য কতকিছু করল। আর এই মেয়েই তাকে ভুল বুঝল।

গৌরব বলে, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ শ্রাবন্তী। আমি তোমাকে বাঁচিয়েছি ওদের হাত থেকে।

থাক আপনাকে আর নাটক করতে হবে না। আপনাদের মতো ছেলেদের আমার ভালো করেই চেনা আসে। আপনি এসব করে আমাকে ইমপ্রেস করতে চাইছেন তাই তো? তাহলে শুনুন এসব ট্রিক আমার উপর কাজ করবে না। আমি এতো বোকা নই, যে আপনার কথা বিশ্বাস করব।

গৌরব আর বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না। শ্রাবন্তী তাকে এতোটা অবিশ্বাস করবে সেটা ভাবতেও পারেনি গৌরব। বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে সে। কোন কথা না বলে অনেক কষ্টে একটা ক্যাব বুক করে। হরতাল থেমে গেছে তাই এখন আর অসুবিধা হওয়ার কথা না।

ক্যাব চলে আসা অব্দি শ্রাবন্তীকে অপেক্ষা করতে বলে। শ্রাবন্তী না চাইতেও অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণ পর ক্যাব চলে আসে। শ্রাবন্তী ক্যাবে উঠে গৌরবকে বলে, আপনার এসব নাটক আমাকে গলাতে পারবে না মিস্টার গৌরব। ফারদার আর আপনাকে যেন আমার পাশে না দেখি। দেখলে তার ফল ভালো হবে না।

গৌরবের সহ্যের সীমা পেরিয়ে যায়৷ সে শ্রাবন্তীকে ক্যাব থেকে নামিয়ে বলে, ইনাফ ইজ ইনাফ। অনেক সহ্য করেছি তোমার এসব ফালতু কথা। এখন আমার কথা মন দিয়ে শোনো, আমার এত বাজে সময় নেই যে তোমাকে ইমপ্রেস করার জন্য নষ্ট করব। একজন দায়িত্ব বান মানুষ হিসেবে তোমাকে সাহায্য করেছি। আর তুমি আমার সাথে যে ব্যবহার করেছ সেটা, থাক আর কিছু বলছি না। তুমি নিজের মতো থাকো। আর কখনো তোমাকে কোন সাহায্য করব না। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।

গৌরবের চোখে জল এসে গিয়েছিল কথাগুলো বলার সময়। জীবনে এত অপমানিত সে আগে কখনো হয়নি।

পরের দিন শ্রাবন্তী ভার্সিটিতে আসে। আদিল আজো তার জন্য অপেক্ষা করছিল। আদিল শ্রাবন্তীকে কফির প্রস্তাব দেয়। শ্রাবন্তী না করতে পারে না। আদিলের সাথে কফি খেতে যায়। কফি খাওয়ার একপর্যায়ে আদিল শ্রাবন্তীকে বলে, তুমি কিছু ভেবে দেখলে?

কি ব্যাপারে?

তোমাকে যে প্রপোজ করেছিলাম সেই ব্যাপারে। আমি তোমাকে জোর করবো না। আরেকবার ভেবে দেখ শুধু।

শ্রাবন্তী কিছুই বলে না। আদিলকে যদিও তার ভালো লেগে গেছে তবুও সে চায় না আদিল তার এই কৃত্রিম রূপের জন্য তাকে ভালোবাসুক। শ্রাবন্তী চায় আদিল তাকে তার আসল রূপে দেখুক। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেক।

এরমধ্যে সুইটি কফিশপে চলে আসে তাদের পাশে বসে পড়ে। সুইটিকে দেখে আদিল বিরক্তির সাথে তাকায়। সুইটি বুঝতে পারে আদিল ও শ্রাবন্তী জরুরি কথা বলছিল৷ সুইটি হাসিমুখে বলে, তোমাদের ডিস্টার্ব করে থাকলে সরি৷ আমি আসলে তোমাদের আমার বিয়ের জন্য দাওয়াত দিতে এসেছিলাম। আগামীকাল আমার বিয়ে। আপাতত কাবিন করানো হবে। তাই বেশি কাউকে বলবো না। তোমাদের তো একটু হলেও চিনি, তাই তোমাদেরই বলছি।

শ্রাবন্তী সুইটির দিকে ভালো করে দেখে। তার চোখ জলে টলমল করছিল।

আমি আসি তাহলে। বলেই সুইটি চলে যায়।
সুইটি যাওয়ার পর আদিল শ্রাবন্তীর কাছে জানতে চায়, বলো কি সিদ্ধান্ত নিলে।

আমি এখন কিছু বলতে পারছি না কিছু সময় চাই আমার। বলেই শ্রাবন্তী উঠে যায়।

❤️
আজ সুইটির বিয়ে। খুশির দিন হলেও সুইটি আজ খুশি নয়। একজনকে মনে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করা যে কতটা কষ্টকর সেই অনুভূতি ব্যক্ত করা যায় না। শ্রাবন্তী সকাল সকাল সুইটির বাড়িতে আসল।

শ্রাবন্তীকে দেখে সুইটি তাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারে না। হু হু করে কাঁদতে থাকে। সুইটি আজ তার এতদিনের জমানো সব কথা শ্রাবন্তীকে বলতে থাকে।

নিজের ডায়েরি বের করে শ্রাবন্তীকে দেয়৷ বলে, এই ডায়েরিতে আমার সব অনুভূতি লিখে রেখেছি। জানো আমি যখন প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুলে ভর্তি হই তখন প্রথমবার আদিল ভাইকে দেখি। প্রথম দেখার পর থেকে তাকে ভালোবেসে ফেলি। ওনাকে নিজের চোখের সামনে দেখলেই মন ভালো হয়ে যেত, হার্টবিট বেড়ে যেতো। তবুও কখনো সাহস করে নিজের মনের কথা বলতে পারিনি।

এরপর ডায়েরি থেকে একটি গোলাপ ফুল বের করে বলে, এই গোলাপ ফুল আমি কিনেছিলাম আদিল ভাইকে প্রপোজ করার জন্য কিন্তু সাহস পাইনি। সবার কাছে শুনেছি ভালোবাসা হলো ফুলের মতো। আমি সেই ফুলের কাঁ*টার আঘাতই সহ্য করলাম এতগুলো বছর। মানুষটাকে এত কাছ থেকে দেখেছি কিন্তু কখনো বলতে পারিনি যে তাকে ভালোবাসি।

তুমিও ওনাকে বলো না কেমন। আমার মতো একটা মেয়ে আদিল ভাইয়ের যোগ্য না। তোমাকে ওনার পাশে মানাবে। তুমি ওনাকে ভালো রেখ। আর এই ডায়েরিটা পু*ড়িয়ে দিও। যাতে উনি আমার অনুভূতিগুলো কোনদিন জানতে না পারে। আমি অনেক চেষ্টা করেও ডায়েরিটা পু*ড়িয়ে দিতে পারিনি।

শ্রাবন্তীর নিজের চোখেও জল চলে আসে। কেউ যে কাউকে এভাবে ভালোবাসতে পারে শ্রাবন্তী ভাবতেও পারছে না। শ্রাবন্তী বাইরে এসে ডায়েরিটাতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

অন্যদিকে সুইটি একজনকে ভালোবেসে আরেকজনের নামে কবুল বলে দিল। আদিলকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলল। আদিলের প্রতি সুইটির অনুভূতিগুলো সত্য ছিল, সে সত্যি আদিলকে ভালোবাসত। কিন্তু কখনো বলতে পারে নি।

দূরে রেডিও থেকে গান বাজছে,
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো
♪ডুবে ডুবে ভালোবাসি♪
তুমি না বাসলেও আমি বাসি….

চলবে…

(সুইটির জন্য আপনাদের কেমন লাগছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here