ডেভিল লাভার পর্ব ২

#ডেবিল_লাভার (পর্ব ০২)
#Labiba_Islam_Roja
·
·
·
সকালে তিতলি আপু চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো আমার।কাঁদতে কাঁদতে শেষ রাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি নিজেই জানিনা।তাই আজকে উঠতে এত বেলা হয়ে গেছে আমার।তাড়াহুড়া করে ফ্রেশ হয়ে দৌড়ে নিচে নামলাম আমি।নিচে নামতেই তিতলি আপু কতগুলো কড়া কথা শুনিয়ে দিলো আমায়।তিতলি আপুর মুখ ঝাম্টা শোনা আমার প্রত্যেক দিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।যতই ভোরে উঠি না কেন উনার মুখ ঝাপ্টা খেতেই হয় আমায়।প্রথম প্রথম ওদের ব্যবহারে খারাপ লাগলেও এখন আর তেমন খারাপ লাগে না।ভালো লাগা খারাপ লাগার অনুভূতিগুলো দিন দিন লোপ পাচ্ছে আমার।
.
ড্রয়িংরুমের সোফায় পেপারে মুখ গুজে বসে আছে মামু।মামু সবসময় আমাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু সকল সময় পেরে উঠেন না।আমিও বাসার কোনো ব্যাপারে মামুকে বলি না।কাজ করতে ইচ্ছে করে তাই করি বলে বুঝিয়ে দেই উনাকে।তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে গিয়ে সকলের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম আমি।মামু মামি আর তিতলি আপুকে দিয়ে তিয়া বড় আপুর রুমে গেলাম।উনাকে কফি দিয়ে নিচে নামতেই কড়া সুরে বলে উঠলেন মামি…..
.
এই নবাব নন্দিনী আমার ছোট ছেলেকে কফি দেওয়া হয়েছে…?
.
আমতা আমতা করে বলে উঠলাম আমি না মামি আসলে….
.
কিহহ!!তুমি জানো না আমার নাদিম নয়টার মধ্যে কফি খায়।আর এখন বাজে নয়টা পনেরো এখনও ওর ঘরে কফি পৌছায়নি।তাড়াতাড়ি ওর কফিটা নিয়ে যাও।
.
মামুঃরাহেলা ও কোনো কাজের মেয়ে নয় যে তোমার হুকুম পালন করবে।তোমার ছেলের কফি তুমি বানিয়ে দিতে পারো না।এমনিতেই সকালে উঠে সকলকে কফি দিয়েছে এখন তুমি নাদিমকেও দিতে বলছো…!!
.
আমি কখন বললাম ও কাজের মেয়ে।নাকি আমি বলেছি আমাদের বাসার কাজ করতে ।নিজেই তো বললো বাসার সমস্ত কাজ ও করবে তবুও তো আমি সবকিছু করতে দেই না।এই সকালের কফিটাই করে আর কিছু না।
.
থাক না মামু!!মামি তো ঠিক কথাই বলছে এখানে উনার দোষ কোথায় বলো।সারাদিন শুয়ে বসে কাটাই তাই একটু করি যাতে সময়টা তাড়াতাড়ি যায়।আচ্ছা মামি আমি এক্ষুণি ভাইয়ার কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
তোমার যা ইচ্ছে হয় করো বলে আমার উপর রাগ করে উপরে চলে গেলেন মামু।রাগ করো না মামু আমার যে তুমি ছাড়া আর আপন কেউ নেই।এখন যদি মামির বিপক্ষে তোমায় কিছু বলি তাহলে বাসায় অশান্তি হবে আমাকেও চলে যেতে হতে পারে এই বাসা থেকে।তোমরা আমায় তাড়িয়ে দিলে কোথায় যাবো আমি।তাই যতই কষ্ট হোক এই বাসাতেই থাকতে হবে আমায়।
.
রান্নাঘরে গিয়ে ভাইয়ার জন্য এককাপ কফি বানিয়ে বিজলীর হাতে ধরিয়ে দিলাম আমি।কিন্তু সে কিছুতেই ওই রাক্ষসের রুমে যাবে না।রাগ উঠলে কখন তাকে আস্ত চিবিয়ে খাবে তার কোনো ধারণা নেই।ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে মরছি আমি।হাসি থামিয়ে কফি হাতে বাধ্য হয়েই উপরে উঠতে হলো আমায়।দরজার পাশে আসতেই ভয়ে বুক ধরপর করতে লাগলো।এত লেট করে কফি দিচ্ছি এটা মোটেও মানবে না ভাইয়া।আল্লাহই জানে কি আছে আজ আমার কপালে।দোয়া দুরূদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে রুমে প্রবেশ করলাম আমি।রুমে কেউ নেই দেখে পাগলু ড্যান্স দিতে ইচ্ছা করছে আমার।ওয়াশরুমে পানির আওয়াজ পেয়ে বুঝতে বাকী নেই উনি শাওয়ার নিচ্ছেন।তাড়াতাড়ি করে কফিটা টি টেবিলে রেখে দৌড়ে পালানোর ধান্দায় আছি আমি।দু’পা এগুতেই ভাইয়ার গলা পেয়ে থমকে দাঁড়ালাম আমি….
.
কি নবাবজাদী এতক্ষণে আমায় কফি পাঠানোর কথা মনে পড়লো আপনার।টাওয়াল দিয়ে শরীর মুচতে মুচতে একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো না আরেকটু পরে দিলেও পারতেন।
.
ভাইয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে চোখ চলে গেলো উনার উপরে আমার।উন্মুক্ত শরীরে ভিজে চিপচিপে হয়ে আছেন উনি।ফর্সা শরীরে লোমের ফাঁকে ফাঁকে ফোঁটা ফোঁটা পানি আটকে আছে এখনও।এই অবস্থায় খুব ভালো লাগছে উনাকে।কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি। আসলে ভাইয়া আজকে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গিয়েছিলো তাই…..
.
সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়েছে মানে…তাহলে সন্ধ্যা থেকে দরজা লক করে সারারাত কি করেছিলিস ঘুমাসনি….?
.
হ্যাঁ না মানে…. ঘুম আআসছিলো না।
.
শরীর মুছে টাওয়ালটাকে বিছানায় ছুড়ে মারলেন উনি।বিছানায় বসে কফির কাপে আস্তে করে চুমুক দিলেন।উনাকে বসতে দেখে নিচে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালাম আমি।
.
তোকে যেতে বলেছি আমি…?
.
না!! মানে আমার তো এখানে আর কোনো কাজ নেই তাই ভাবলাম….
.
মূহুর্তের সর্ব রাজ্যের রাগ জমলো উনার চোখে।কি এমন বললাম আমি যার জন্য এতটা রেগে গেলেন উনি।আমার ভাবনার মধ্যেই কাপে থাকা সব কফি আমার গায়ে ছুড়ে মারলেন উনি। কফি গায়ে পরায় আহ্ করে উঠলাম আমি।সত্যি কফিটা তেমন গরম নেই তাই তেমন লাগেনি আমার।এটা কফি!!(দাঁতে দাঁত চেপে)এত ঠান্ডা তোকে না বলেছি আমার কফি সবসময় টাকটা গরম চাই।তাও এই ঠান্ডা কফি আমায় দেওয়ার সাহস হয় কি করে তোর।ধমকের সুরে একে তো দেরি করে দিয়েছিস তার উপর ঠান্ডা….
.
চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো আমার।সরি ভাইয়া!!আআমি আসলে….
.
এই আসলে নকলে বলে কিছু বুঝাবি না আমায়।এরপর থেকে আমার কাজগুলো পার্ফেক্টলি যদি করতে না পারিস তাহলে তোর কপালে অসীম দুঃখ আছে বলে দিলাম।
.
ভাইয়ার কথায় মুচকি হাসলাম আমি।
.
কি হলো হাসছিস কেন…?আমি হাসার মতো কি কিছু বলেছি।
.
দুঃখ যার নিত্যদিনের সাথী।তাকে আপনি দুঃখের ভয় দেখাচ্ছেন ব্যাপারটা হাস্যকর নয় কি।আমি তো এই তিনমাসে বাস্তবতা বুঝে গেছি।আশে পাশের মানুষ সম্পর্কেও ধারণা জন্মেছে আমার।আত্মীয় স্বজন কেমন হয় তাও বুঝা হয়ে গেছে।সুখের দিনে অনেকেই পাশে ছিলো কিন্তু দুঃখের দিনে অবহেলা অবজ্ঞা ছাড়া কেউ নেই আমার।এখন দুঃখকে ভয় পাই না।মেনে নিতে শিখে গেছি…!!
.
মুখে খুব বড় বড় বুলি ফুটেছে দেখছি।দুঃখ তোর নিত্যদিনের সাথী তাই দুঃখকে ভয় পাস না।তাহলে দেখি কতটা কষ্ট সহ্য করতে পারিস তুই বলেই দু হাতে আমার গাল চেপে ধরলেন উনি।এমনভাবে ধরেছেন যেন মনে হচ্ছে গাল ভেঙ্গে যাচ্ছে আমার।আমি ব্যাথায় কাতরাচ্ছি আর পৈশাচিক হাসি হাসছেন উনি।নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর জন্য আশপাশ করছি কিন্তু উনার সাথে পেরে উঠছি না আমি।এক সময় চোখ থেকে অঝর ধারায় পানি পড়তে লাগলো আমার।আর সেই পানিগুলো দেখে তৃপ্তির হাসি হাসতে লাগলেন উনি।কি হলো নাদু কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা ফুরিয়ে গেলো বুঝি।চোখ থেকে পানি পরছে যে।দুঃখ হচ্ছে আহা আমারও হচ্ছে তবে তোর চোখের সস্তা পানি দেখে নয় তোর বারবার হেরে যাওয়া দেখে।
.
মুখ দিয়ে কোনোকথা বের করতে পারছিনা আমি।শুধু শুনেই যাচ্ছি।গালদুটো ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে আমার।এই মুহূর্তের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় বলে মনে হচ্ছে আমার।মানুষ এতটা হার্টলেস কি করে হয়।বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।পুরো মুখ ব্যাথায় ভরে গেছে।হাত পা কেমন অবশ হয়ে গেছে আমার।হাঁটার জন্য বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই আমার শরীরে।সামনে এগুতে চাইছি কিন্তু পারছি না।
.
কি হলো এখন কেঁদে চোখের জলে আর নাকের জলে এক করছিস কেন…?তুই কষ্ট সহ্য করতে শিখে গেছিস এই তার নমুনা।এখন কিছু বল কেমন লাগছে আমার দেওয়া এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে জানি হচ্ছে না।তুই না শুধু বড় বড় কথা বলতেই শিখেছিস কিন্তু কখনও কথানুযায়ী কাজ করতে শিখিস নি।
.
আপনার বোধ বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছে নাদিম চৌধুরী।আপনি মানুষ নন পশু হয়ে গেছেন।কষ্ট সহ্য করতে পারি তাই বলে কেউ এভাবে ফিজিক্যালি টর্চার করলে চোখ থেকে পানি পরবে না এটা বলি নি।এভাবে টর্চার করলে যে কেউ কাঁদতে বাধ্য।কষ্ট সহ্য যদি নাই করতে পারতাম তাহলে এখানে এভাবে পড়ে থাকতাম না।কবেই চলে যেতাম।অবশ্য কাকেই বা কি বলছি আমি।আপনি তো আগের সেই নাদিম ভাইয়া নন একটা পশু।আপনাকে যাই বলিনা কেন সেটা কানে যাবে না।গায়েও লাগবে না কারণ ওটা মানুষের চামড়া নয় গন্ডারের চামড়া।অনুভূতি শূন্য পাষান যার মনে দয়া মায়া বলে জিনিসটাই নেই এখন।
.
এই চুপপ!!একদম লেকচার দিবি না।আমি পশু!!কোনদিক দিয়ে তোর আমাকে পশু মনে হলো বল।পশুরা কি করে জানিস।জানিস না!!পশুরা তোর মতো সুন্দরী মেয়েদের ছিড়ে ছিড়ে খায় কিন্তু আমি আমি তো তোকে এখনও টাচও করিনি।এই যে এই ফাঁকা রুমে অরনা থাকা স্বত্বেও আমার সামনে বেহায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছিস আমি তোর দিকে ফিরে তাকিয়েছি!!না তাকাই নি।যদি আমি সেইসব ছেলে হতাম তাহলে কবেই তোকে…..
.
উনার কথায় নিজের দিকে লক্ষ্য করলাম আমি।সত্যি অরনা সরে পুরোটা হাতে চলে এসেছে কিন্তু সেখানে খেয়ালই নেই আমার।তাড়াতাড়ি অরনা ঠিক করে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম আমি।জানি এখানে থেকে উনাকে কিছু বলে লাভ নেই।তর্কও করতে চাইছি না কারণ উনার সাথে পারা আমার পক্ষে ইম্পসিবল।পিছন ফিরতেই আবারও সেই বিরক্তিকর কণ্ঠ ভেসে আসলো আমার কানে…
.
তোকে এখনও যেতে বলিনি আমি।তাহলে কার কথায় যাচ্ছিস।
.
পেছন ফিরে তাকিয়ে উনার গোষ্ঠী উদ্ধার করতে ব্যস্ত আমি।শয়তান বিলেতি কুত্তা, ইঁদুর, টিকটিকি, খচ্চর,ইত্যাদি ইত্যাদি!!আর উপযুক্ত সময়ে গালিও মনে করতে পারিনা আমি।সে যাইহোক তোর কথায় কথায় কেন আমি চলবো…চলবো না।দেখি কি করতে পারিস…!!
·
·
·
চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here