তমসার জল পর্ব -০৬

#তমসার_জল
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
।।পর্ব৬।।
(কার্টেসী ব্যতীত কপি নিষেধ)

ব্রেকিং নিউজ!!
টিএসসিতে এক নারীকে বেপরোয়া একটি প্রাইভেটকার ধাক্কা দেয়, দেয়ার পর সেই নারী গাড়ির নিচে পরে যায়, আটকে থাকে গাড়ির সাথে। গাড়ির চালক তাকে পিষতে পিষতে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এই পুরো সময়টুকু তাকে ধাওয়া করেও থামানো যায় নি। পুরো রাস্তা সেই নারীর শরীরের অংশ – রক্তে ছেয়ে আছে।

খুনী গাড়ির চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক আজহার জাফর শাহ।(২রা ডিসেম্বর ২০২২)

ফেসবুকে ঘটনাটার ভিডিও দেখেছিলো জল।কি ভয়ংকর সেই দৃশ্য।দেশটা অমানুষে ভরে গেছে।দেশের আনাচে কানাচে বর্ষণের মতো মানুষ রূপী কত যে অমানুষ লুকিয়ে আছে তা ওপরওয়ালাই জানেন।

প্রতক্ষ্যদর্শীদের থেকে জানা গেছে গাড়িটি প্রথমে একটি মোটরসাইকেলের পিছনে ধাক্কা দিয়েছিলো পরে মোটরসাইকেল থেকে মহিলাটি যখন পড়ে গিয়েছিলো তখন পাবলিকে হাত থেকে বাঁচতে ঘাতক গাড়ির চালক জোরে গাড়ি চালিয়েছিলো। সে জানতো না মহিলা টি উনার গাড়ির নি-চেই প-ড়ে আছে।

সংবাদ পাঠিকার থেকে শোনা তথ্যে জলের মন চাচ্ছে গালি চালককে ঠিক ওভাবে টেনে হিঁচড়ে মারতে একটা গাড়ির নিচে একটা ইট পড়লেও গাড়ি যে চালায় তার জানার কথা। কিন্তু একটা জল-জ্যা-ন্ত মানুষ গাড়ির নি-চে অথচ উনি জানলো না এটা আসলে মানা যায় না।ডাহা মিথ্যে এক কথায়।
ইচ্ছাকৃতভাবে বাসার দেয়ালে হাত টা উল্টো করে রেখে জোরে দুইটা ঘষা দিলেই সাথে সাথে চামড়া ছিলে ফোঁটা ফোঁটা রক্তবিন্দু জমে যায়। জ্বী মাত্র মাত্র দুই টানে!
কোথায় সেন্ট্রাল মসজিদ কোথায় নীলক্ষেত, একটা জলজ্যান্ত মানুষকে টেনেহিঁচড়ে এতটা পথ নিয়ে যেতে যেতে মহিলাটা কত কষ্ট পেয়ে মা/রা গেসে রে ভাই, কত কষ্ট পেয়ে মা/রা গেছে ভাবা যায়? দেশটা আসলেই জানোয়ারে ভরে গেছে।হায়রে সোনার বাংলা!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে জল।একটা ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটা ঘটনা। এইতো কয়েকদিন আগেই ভাড়াটিয়ার হাতে খুন ছোট আয়াত।কতই না মায়াভরা মুখ তার!খুনীর কি একটুও হাত কাঁপেনি এই ছোট্ট প্রাণটাকে মারতে!
অপহরণকারী এক তরুণ যার নাম আবির তাকে হত্যার পর লাশ কেটে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন।কি সাংঘাতিক!
অথচ আবিরের পরিবার শিশু আয়াতের বাসায় ভাড়া থাকে।সোশ্যাল মিডিয়া খবরের কাগজ সব খানে আয়াতের নিখোঁজের সংবাদ প্রচারিত হয়।

পিবিআইয়ের থেকে জানা যায়, খুনী আবির আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ছয়–সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিশু আয়াতকে অপহরণ করেছিলেন। কিন্তু তার মুঠোফোনের সিম কাজ না করায় মুক্তিপণের জন্য শিশুটির পরিবারকে কল দিতে পারেননি। নিজে ধরা পড়ে যাবেন, এই ভয়ে শিশুটিকে কেটে ছয় টুকরা করেন। পরে তা সাগরে ভাসিয়ে দেন।

খুনী আবির আরও বলে, সত্যিকারের অপরাধের ঘটনা নিয়ে তৈরি টিভি ধারাবাহিক ক্রাইম পেট্রোল দেখে তিনি এমন পরিকল্পনা করেছিলেন।

পিবিআই আরও বলেন, আবির যে দোকান থেকে দা–ছুরি কিনেছিলেন, সেই দোকানদার তাঁকে শনাক্ত করেন। এ ছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। মো. হাসিব নামের আবিরকে সহায়তাকারী এক দোকানদারকে আটক করা হয়েছে।আবিরের বাবা ভ্যানচালক এবং তাঁর মা পোশাক কারখানার শ্রমিক। আবির বেকার। শিশু আয়াতকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। আয়াতের খন্ডিত মাথা পিবিআই উদ্ধার করেছে।শিশুটির চুলে নাকি তখনো ওই ক্লিপটা অক্ষত ছিলো যেটা তার বাবা তাকে পরিয়ে দিয়েছিলো।

জলেরও ভয় করে কবে জলও খু*ন হয়ে যায় আদিবার মতো।বর্ষার মুখে বর্ষণ ও তার মায়ের কীর্তিকলাপ শুনে বর্ষণের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ আরও গভীর হয়েছে।তাও একবার শেষ চেষ্টা করে দেখবে জল।মানিয়ে নেওয়া মেনে নেওয়ার।মা বলেছে মেনে নিতে মানিয়ে নিতে না হলে সমাজে মুখ দেখাবে কি করে?সেদিনের পর জলও আর বাপের বাড়ি যায় নি মাকেও ফোন দেয় নি।বাবা ফোন দিয়েছিলো মায়ের কথা মতো স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে জল।হাজার হলেও মায়ের আদেশ বলে কথা!

ডায়েরীটা অনাদরে ওয়ারড্রবে কাপড়ের ভাঁজের মাঝে পরে আছে।কখনো পড়া হয়নি জলের।রাতে বর্ষণের যৌ*ন দাসী হয়ে দিনে আর কিছু করার এনার্জি থাকে না জলের।সকালে বর্ষণ নাস্তা করে অফিসে গেলে নতুন করে ধরে প্রাণ ফিরে পায় জল।
জল যে চে কখনো দরকার ছাড়া বর্ষণের সাথে কথা বলতে যায় নি।যেহেতু মানিয়ে নিতে হবে মেনে নিতে হবে তাই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও বর্ষণের সাথে কথা বলতে হবে জলের। দুপুর দুটোর মতো বাজে এখন।লাঞ্চের ব্রেক চলছে। বর্ষণকে এখন ফোন দিলে মন্দ হবে নাহ!যেই ভাবনা সেই কাজ! জল বর্ষণকে ফোন দেয়।

” হঠাৎ ফোন দিলে যে!”

” এমনি।”

” আচ্ছা তাহলে রাখছি।”

” শুনো না!”

” হু বলো।”

” আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসবে?”

জলের কথার জবাবে বর্ষণ কিছু বলে না।বেশ কিছুক্ষণ পরে জলকে বলে,,,

” আমি পরে ফোন দিচ্ছি।”

জলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বর্ষণ ফোন কেটে দেয়।জলের ভয় বাড়তে থাকে।আজ রাতে না জানি জলের কপালে কি আছে।কিছুক্ষণ পরেই বর্ষণ কল ব্যাক করে।সাথে সাথে জল কল রিসিভ করে,,,

” তাড়াতাড়ি আসতে বললে কেন?তোমার আচার-আচরণে তো বুঝা যায় আমি দূরে থাকলেই তুমি বাঁচো!”

” সারাজীবন তো থাকতে হবে তোমার সাথে। মেনে নিতে হবে তোমায় আমার।”

” যাক সুমতি এসেছে তোমার।কেন তাড়াতাড়ি আসতে হবে বললে না তো!”

” ঘুরতে যেতাম।বিয়ের এতদিন হয়ে গেলো কখনো তো ঘুরা হয়নি তোমার সাথে।কাছেই তো ধানমন্ডি লেক।রাত্রি বেলা তোমার সাথে হাঁটতাম লেকের ধার দিয়ে!”

ঘুরতে যাওয়ার কথা বলতেই বর্ষণ কেমন চেতে যায়।হুংকার দিয়ে ফোন কেটে দেয়।ফোনের বিপরীত পাশ থেকে হাত কেঁপে ওঠে।মেঝেতে পরে যায় ফোনটি।ভাঙা ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠে জলের পুরোনো হাসি মাখা ছবিটি।

________*_*

২৮শে এপ্রিল ২০১৭

বর্ষণের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় বৃষ্টিভেজা দিনে বাসস্টপে।কাক ভেজা হয়ে ভার্সিটির বাসের জন্য বাসস্টপে অপেক্ষা করছিলাম।ঠিক তখনই আমার পাশে নীল শার্ট পরিহিত একটি তরুন আসে।পাঁচ ফিট নয় কিংবা দশের মতো হবে তরুণটির উচ্চতা।চুল থেকে টপ টপ করে পানি ঝড়ছিলো।জ্বী সেই তরুণটিই বর্ষণ। আমি বরাবরই ঘরকুনো মেয়ে।সমাজের কথায় যাকে বলে অসামাজিক।তাই হয়তো একই ক্যাম্পাসে থাকা সত্ত্বেও বর্ষণের দেখা পাই নি। সেদিন বাসে টুকটাক কথা হয়েছিলো বর্ষণের সাথে।তারপর থেকেই আকষ্মিকভাবে ওর সাথে দেখা হতো।হয়তো ওপর ওয়ালা চেয়েছেন তাই!!

আদিবার লেখাটা পড়ার পর জলের মনে বর্ষণকে নিয়ে নানা প্রশ্ন জাগে।সে কি আগে থেকেই এমন নাকি রিসেন্টলি এই মানসিক রোগটা ধরা পরেছে এমন হাজারো প্রশ্ন কুন্ডলী পাকাতে থাকে জলের মনে।জল পাতা উল্টোয়।

১৩ই আগস্ট ২০১৭

সপ্তাহ দুয়েক আগে বর্ষণ আমায় প্রেমের প্রস্তাব দেয়।কয়দিন ভেবে আমি ওর প্রস্তাবে সায় দিই।আজ তিন দিন হবে হয়তো আমরা সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি করেছি।

১0ই সেপ্টেম্বর ২০১৭

বর্ষণ ছিলো একাউন্টিক ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট হয়েও খুব ভালো কবিতা লিখতে পারতো।এদিকে বাংলা ডিপার্টমেন্টে স্টুডেন্ট হয়েও আমি কবিতার ‘ক’ ও পারি না।যাইহোক আমাকে লেখা নিয়ে বর্ষণের কবিতা গুলোও খারাপ না। তারমধ্যে একটা কবিতা ছিলো,,,
❝একটা গোলাপ তোমার নামে,
পাঠিয়ে দিলাম মনের খামে।❞

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here