তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব -৩৩+৩৪+৩৫+৩৬

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ৩৩

ইয়াদ ইশানের দিকে না তাকিয়ে উত্তরে বললো, একটু অপেক্ষা কর, একে একে সব প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যাবি। তাহলে শুরুটা নাহয় আপনি করুন আতিক আঙ্কেল।

আতিক ইয়াদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে যতটা ইয়াদকে বলেছিলো ততটা বলে একটু দম নিলো। তারপর আবার বললো, সবসময় পাঞ্জাবি পাজামা পরে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়ে, কবি কবি ভাব নিয়ে থাকা মানুষটাকে ফর্মাল পোষাকে দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরক্ষণে ভেবে নিলাম পরিস্থিতির চাপে মানুষ নিজেকে বদলে নেয়। কিন্তু সে যখন আমাকে চিনতে অস্বীকার করলো তখন অবাক না হয়ে মনে সন্দেহ জাগলো। কিছু না বলে বের হয়ে আসলাম। তারপর দুদিন অস্থিরতা নিয়ে সত্যিটা জানার চেষ্টা করতে থাকি কিন্তু ফলাফল শূন্য। বিষন্নতা নিয়ে হসপিটালে জয়েন করি কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারি আরেক নির্মম সত্য। ইয়াসির আমাকে পুরো পরিবারের ছবি পাঠাতো তাই ছোট্ট ইয়াদ আর রুবিনাকেও আমি চিনতাম কিন্তু রুবিনা আমার সম্পর্কে জানতো না। হসপিটালের করিডোরে লেডি ডক্টরের হাত আঁকড়ে ধরে কিছু বলছে রুবিনা। একটু দূরে হওয়ায় তাদের কথা আমি শুনতে পারি না। লেডি ডক্টর রুবিনাকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে আসে আর রুবিনা পাশের সীটে বসে পড়ে চিন্তিত মুখ নিয়ে। লেডি ডক্টরের থেকে জানতে পারি রুবিনা চার মাসের প্রেগনেন্ট আর সে বাচ্চাটা রাখতে চাইছে না। কিন্তু চার মাসে এসে অ্যাবরশন করলে তার নিজের জীবনের ঝুঁকি আছে, তাই ডক্টর না করে দিয়েছে।

এতটুকু বলে দম নিলো আতিক। ইয়ানার চোখের পানি বাঁধ মানছে না। সেই সন্তান যে ইয়ানা সেটা বুঝতে আর বাকি নেই কারো। ইয়ানা ভাবতে পারছে না, তার মা তাকে এই পৃথিবীতে আসার আগেই খুন করতে চেয়েছিলো। তার মা চায়নি সে এই পৃথিবীর বাতাসে নিশ্বাস নেয়। ইয়ানা পাথরের মূর্তির মতো নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। আজকের এই কষ্টের কাছে গতকাল আরমানের দেওয়া কষ্টটা খুব বেশি ফিঁকে মনে হচ্ছে ইয়ানার কাছে। এদিকে ইশান ভাবছে ইয়াসির হামিদের মৃত্যু যদি ইয়ানার জন্মের আগে হয়ে থাকে তাহলে সে কার সন্তান। এই দিসার নামক জঘন্য খুনির ? ইশান ভাবতে পারছে না কিছু।

আবার আতিকের গলা কানে আসতেই সবাই নিজেদের ভাবনা বাদ দিয়ে তার কথায় মনোযোগ দিলো, সেই ডক্টরের থেকে আরও জানতে পারি রুবিনার ছেলে কোমায় আছে প্রায় তিন মাস হতে চললো। এ কথা শুনে আমি থমকে যাই কয়েক মুহূর্তের জন্য। সেই ডক্টরের থেকে ইয়াদ কোথায় আছে জেনে এক পা এক পা এগিয়ে যেতে থাকি সেদিকে। আইসিইউর সাদা বেডটায় শুয়ে আছে ছোট্ট একটা শরীর। দেখে মনে হচ্ছে শরীরটাতে এক বিন্দু রক্তের অস্তিত্ব নেই এমন ফ্যাকাসে সাদা হয়ে গেছে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ইয়াসিরের পাঠানো ইয়াদের হাসিখুশি মুখের সেই ছবি। চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো আমার। ছোট ইয়াদের কপালে চুমু খেয়ে বের হয়ে আসি আইসিইউ থেকে। হিসাব মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পরি। আঙ্কেল আন্টি আর কলি মারা গিয়েছে প্রায় তিন মাস আর ইয়াদও কোমায় আছে তিন মাস। তবে কী ইয়াদও সেই গাড়িতে ছিলো নাকি অন্য কোনো কারণ আছে ? এদিকে ইয়াসিরের আচরণ আমার মনে গভীর সন্দেহ বুনে দিয়েছিলো। উপায় না পেয়ে ফলো করতে শুরু করি ইয়াসির নামক দিসারকে। বেশ কিছু দিন ফলো করার পর এক বিকেলে তার সাথে দেখতে পাই এডভোকেট কামরুল ইসলামকে। সে ছিলো তাফসির হামিদের এডভোকেট, তাফসির হামিদের সকল আইনি কার্যক্রম কামরুল দেখে। কামরুলের আগে তার বাবা ছিলো তাফসির হামিদের এডভোকেট সেই সুবাদে কামরুলকে অনেক আগে থেকেই চিনি আমি। আর তাদের কথোপকথনের এক পর্যায়ে জানতে পারি ইয়াসির সেজে থাকা মানুষটা ইয়াসির নয় দিসার নামক কেউ। আর ইয়াসিরকে তারা খুন করেছে। রাগে দুঃখে ইচ্ছে করছিলো শেষ করে দেই ওদের কিন্তু নিজেকে আঁটকে রাখি কারণ ওদের সাথে আমি পেরে উঠতাম না। বুদ্ধি করে সব ভিডিও রেকর্ড করে রাখি নিজের ফোনে। চলে আসি সেখান থেকে আর সময় বুঝে কামরুলকে আঁটকে ভিডিও দেখিয়ে ভয় দেখাই। আর কাজও হয়ে যায় ভয়ে সব বলে দেয় কামরুল। কিন্তু আমি কী করবো বুঝতে পারি না কারণ ওদের সামনে আমার কোনো ক্ষমতায় ছিলো না। তাই সময়ের অপেক্ষা করতে থাকি আর ইয়াদের চিকিৎসা আমি করতে শুরু করি। তখন একমাত্র ভরসা ছিলো ইয়াদ। সময় যেতে থাকে কিন্তু ইয়াদের কোনো উন্নতি হয় না। এদিকে রুবিনার কোলে আবার জন্ম হয় ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের। যাকে প্রথম কোলে নিয়েছিলাম আমি নিজে।

শেষের কথাটা বলে আতিক ইয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসলো আর ইয়ানা অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আতিকের দিকে। আজ বুঝতে পারছে কেনো তার কোনো গুরুত্ব ছিলো না তার বাবা মায়ের কাছে।

আতিক আবার বললো, ফুটফুটে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিয়েছিলাম। ইয়াদের জন্মের পর ইয়াসির ফোনো আমাকে প্রায় বলতো এখন আমার একটা রাজকন্যা হলে আমার রাজ্যটা সম্পন্ন হবে রে আতিক। ইয়াসির তখন বুঝতে পারেনি সে চোরাবালির উপর নিজের ভালোবাসার রাজ্য তৈরি করেছে আর একসময় তা তলিয়ে যাবে সেই বালির নিচে। ইয়ানাকে কোলে নিয়ে ইয়াদের কাছে গিয়েছিলাম। ইয়াদ সুস্থ থাকলে হয়তো একটা পুতুলের মতো বোন পেয়ে খুশিতে লাফাতো। ইয়ানার ছোট ছোট আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ইয়াদের কপালে স্পর্শ করাই। অদ্ভুত ভাবে তখন ইয়াদের একটু ইমপ্রুভ লক্ষ্য করি। নার্স ইয়ানাকে যখন রুবিনার কোলে দেয় সে চরম বিরক্তি নিয়ে তাকায় ছোট পুতুলটার দিকে আর দরজার বাইরে ছলছল চোখ দেখতে থাকি সেই দৃশ্য।

এসব শুনে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে ইয়ানার। কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আসছে। তীব্র ঘৃণা নিয়ে তাকালো রুবিনার দিকে। সে এখনো আগের মতো মাথা নিচু করে কুমিরের কান্না কাঁদছে। তাতে ইয়ানার মন গললো না বরং ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নিলো। ইশান, ইয়ানা আর ইমা মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে এসব শুনে।

আতিক চোখের পানি মুছে মুচকি হেঁসে বললো, ইয়ানার জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে ইয়াদের জ্ঞান ফিরে আসে। তখন রুবিনা ইয়াদের পাশে বসে ছিলো ইয়াদকে সুস্থ হতে দেখে খুশিতে চকচক করে উঠে তার চোখ। আমিও পাশে দাঁড়িয়ে ইয়াদের মেডিক্যাল ফাইল চেক করছিলাম। ইয়াদ জ্ঞান ফেরার পর তার সামনে খুন হওয়ার সেই দৃশ্য মনে পরে যায় আর তা নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। জ্ঞান হারানোর আগে লাস্ট সেটাই দেখেছিলো সে। কিন্তু রুবিনা বাজে স্বপ্ন বলে কাটিয়ে নেয়, পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য আরো কয়েকটা দিন ইয়াদ হসপিটালে ছিলো। কিন্তু আমি তাকে কিছুই বলতে পারিনি কারণ ইয়াদ তখন অনেক ছোট তাই কিছুই করতে পারতো না। তাই আমি ঠিক করি সঠিক সময়েই ইয়াদকে সব জানাবো। ইয়াদ বড় হতে থাকে আর আমিও খোঁজ নিতে থাকি ওর কিন্তু হঠাৎ করেই ইয়াদ উধাও হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ইয়াদকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো বছর পর ইয়াদকে দেখতে পাই আবার সেই হসপিটালে। সে তখন আর ছোট নেই আঠারো বছর হয়ে গেছে তার। প্রথমে তাকে দেখে চেনা চেনা লাগছিলো কিন্তু চিনতে পারিনি। ইয়াদের বন্ধুরা যখন তাকে ইয়াদ বলে ডাকে তখনই চমকে উঠে ভালো করে তাকাই তার দিকে। রুবিনার সাথে অনেকটাই মিল আছে ইয়াদের চেহারায় তাই চিনতে পারি ইয়াদকে। সন্দেহ দূর করার জন্য পুরো না জেনে নিলে আর কোনো সন্দেহ থাকে না। ইয়াদের সাথে কথা আছে বলে আমার কেবিনে নিয়ে যাই তাকে। আমার আর ইয়াসিরের কাঁধে হাত ধরে তোলা একটা ছবি তাকে দেখাই আর নিজের পরিচয় দেই। একটু বিশ্বাস অর্জন করে ইয়াদকে জানাই ইয়াসির সেজে থাকা মানুষটা তার বা ইয়ানার বাবা ইয়াসির নয়। ইয়াদ আমার কথা বিশ্বাস করে না তাই সেদিনের দিসার আর কামরুলের কথোপকথনের ভিডিও দেখাই। অনেক বুঝানোর পর ইয়াদ বিশ্বাস করে আমাকে আর প্রচন্ড রেগে বের হয়ে আসতে নিলে আমি পেছন থেকে বলি তাড়াহুড়ো করে কিছু না করতে তাহলে সে নিজের বাবার মৃত্যুর বদলা নিতে পারবে না। সেদিন চাইলে সবটা বলতে পারতাম ইয়াদকে কিন্তু ইয়াদ সামলে উঠতে পারতো না।

ইয়াদের আঠারো তম জন্মদিনে ইয়াদ কেনো এতো রেগে বাড়ি ফিরেছিলো সেটা আজ বুঝতে পারলো সবাই। ইয়ানা নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিলো। এতগুলো বছর ধরে এই কষ্টগুলো একা নিজের মধ্যে পুষে রেখেছিলো। আজ বুঝতে পারছে ইয়াদের হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণ। একা একা কতটা কষ্ট আর যন্ত্রণা সহ্য করেও তাকে আগলে রেখেছে ভেবে হুহু করে কেঁদে উঠলো ইয়ানা।

আতিক খানিকটা বিরতি নিয়ে আবার বললো, তার দুদিন পরই ইয়াদ আমাকে কিছু না জানিয়েই ইয়ানাকে নিয়ে ফিরে যায় ইউকে আর আমি ইয়াদকে খুঁজতে থাকি। সেটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ায়। ইয়াদকে খোঁজে না পেলেও দিসারের লোকের নজরে এসে যাই আমি। অতীতের কিছু যদি ইয়াদকে জানাই সেই ভয়ে ইয়াসির আমাকে খুন করার আদেশ দেয়। নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে চলে যাই আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে কারণ ইয়াদকে আরো অনেক কিছু জানানো বাকি ছিলো আমার। সেগুলো জানানোর জন্য হলেও আমাকে বেঁচে থাকতে হতো। কয়মাস আগেই ইয়াদ আমাকে আবার খোঁজে বের করে আমার গ্রাম থেকে।

আতিকের কথা শেষ হতেই পুরো রুমে নিস্তব্ধতা বিরাজ করতে লাগলো। সবার চোখে পানি একমাত্র দিসার ছাড়া। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে দিসারের সে বুঝতে পারছে না তার লোকজন কোথায়, এখনো আসছে না কেনো ?

ইয়াদ নিজেকে একটু সামলে কঠিন গলায় বললো, তো এডভোকেট কামরুল ইসলাম আপনি কেনো ধোঁকা দিলেন আমার দাদাকে, সে তো আপনাকে অনেক ভরসা করতো যতটা জেনেছি।

কামরুল অনুতপ্ত গলায় বললো, লোভ জিনিসটা খুব জঘন্য একবার কারো মনে বাসা বাঁধলে, তার ভালো খারাপের জ্ঞান থাকে না। রুবিনা আর দিসার প্রতারণার দায়ে একবার জেলে গিয়েছিলো তাদের কেস আমি লড়ি। দিসার আর রুবিনা সম্পর্কে চাচাতো ভাই বোন। তাদের এমন চরিত্রের কথা জানতে পেরে পরিবার থেকে তাদের বের করে দেয়। কেস লড়ার জন্য ওদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারি আমি। সেই কেসের জন্যই আমি রুবিনা আর দিসারকে চিনি। জামিন করানোর কয়েক মাস পর দিসার আবার জেলে যায় কিন্তু এবার আর তাকে বাঁচাতে পারি না আমি, তার পাঁচ বছরের জেল হয়। দিসারের সাথে রুবিনাকে না দেখে ভেবেছিলাম হয়তো ভালো হয়ে গেছে। তাফসির স্যার একদিন আমাকে তার বাসায় ডাকে কিন্তু সেখানে গিয়ে রুবিনাকে দেখে চমকে যাই। রুবিনা আমাকে দেখে ভয়ে কেঁপে উঠে আর ইশারায় হাত জোর করে বলে কাউকে কিছু না জানাতে। রুবিনাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে প্রেগনেন্ট, তাই তাকে একটা সুযোগ দিলাম। রুবিনা আমাকে জানায় সে ভালো হয়ে গেছে আমি যেনো তার সংসার নষ্ট না করি, আমিও বিশ্বাস করে নেই। তবে একদিন রুবিনা দিসারের সাথে জেলে দেখা করতে গেলে আমি দেখে ফেলি। তখন ইয়াদের বয়স কয়েক মাস হবে। আমি তাফসির স্যারকে সব জানাই কিন্তু সে বিশ্বাস করতে চায় না। ওদের কেস লড়ার জন্য ওদের অনেক তথ্য আমার কাছে ছিলো তাই সেগুলো দেখে আর অবিশ্বাস করতে পারে না। তাফসির স্যার প্রচন্ড তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার মানুষ ছিলেন আর দূরদর্শী। আমাকে বলেন উইল রেডি করতে আর তার কথা মতো করেও ফেলি আমি। তবে এতসবের কিছু জানতো না ইয়াসির, সে ছিলো তার নিজের জগৎ নিয়ে। দেখতে দেখতে কেটে যায় পাঁচ বছর আর দিসারের ছাড়া পাওয়ার দিন এসে যায়। উইল করলেও সেটা কাউকে জানতে দেয়নি স্যার। যেদিন দিসার ছাড়া পায় সেদিন রাতে আমি হামিদ মঞ্জিলে যাই স্যারকে জানাতে। কিন্তু গেইট থেকে গার্ড জানায় তাফসির স্যার বাইরে গেছেন মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে। অজানা কারণে মনে হলো এসেই যখন পড়েছি তাহলে ইয়াসিরের সাথে একবার দেখা করে যায়। ইয়াসির কখন কোথায় যায় সেটা কেউ জানে না, তাই গার্ড বলতে পারলো না ইয়াসির বাসায় আছে কি না। বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে স্যারের পি.এ ইমরুল আবিয়াত।

ইমা চমকে উঠে নিজের বাবার নাম শুনে আর বিস্ফোরিত গলায় বলে, আমার বাবা ?

কামরুল ইমার দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ তোমার বাবা ইমরুল আবিয়াত।

ইমা চমকে বললো, এসবে আমার বাবা কোথা থেকে এলো ?

কামরুল মুচকি হেঁসে বললো, তোমার বাবার ভাগ্য তাকে সেখানে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো। ইমরুলের সাথে আমার নামের মিল থাকার জন্য তাকে আমি ছোট ভাই ডাকতাম। সবসময় স্যারের সাথে থাকতো বলে আমার সাথেও ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। দেখলেই বড় ভাই বড় ভাই বলে অস্থির হয়ে যেতো। কিন্তু সেদিন হন্তদন্ত হয়ে বের হওয়ার সময় আমার সাথে ধাক্কা লাগলে প্রচন্ড ভয় পেয়ে তাকায় আমার দিকে। সরি বলে চলে যেতে চাইলে আমি তাকে আটকে জানতে চাই কী হয়েছে ? কিন্তু ও ভয়ে কথা বলতে পারছিলো না রীতি মতো কাপছিলো ভয়ে। ইমরুল খুব সহজ সরল মনের মানুষ ছিলো, ভয়ে কপালে ঘাম চিকচিক করছিলো তার। আমাকে কোনোমতে কিছু হয়নি বলে দ্রুত বের হয়ে যায়। অপরাধী অপরাধ করার সময় কিছু না কিছু ভুল করেই। দিসার আর রুবিনার ভুল ছিলো তারা বাসার মেইন ডোর লক করতে ভুলে গিয়েছিলো। বাসার সব সার্ভেন্টদের অজ্ঞান করলেও গার্ডদের অজ্ঞান করতে ভুলে গিয়েছিলো। আমি ভেতরে গিয়ে বুঝতে পারি ইমরুলের ভয়ে কারণ। নিজের পেশার জন্য খুন খারাপি নিয়ে নাড়াচাড়া করার অভ্যাস আছে তাই আমি ইমরুলের মতো ভয়ে পেলাম না। এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বললাম কী করেছিস তোরা ? ইয়াসিরের লাশ সোফায় পরে ছিলো আর রক্ত মাখা ইয়াদের শরীর ফ্লোরে। আমার গলায় দুজনেই ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকায়। দিসার দ্রুত আমার মুখ চেপে ধরে বলে চিৎকার না করতে আর আমাকে তাদের পার্টনার হতে বলে। আমি দিসারের হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে বলি তোদের কী মনে হয় তাফসির হামিদের ছেলেকে মেরে তোরা সব পেয়ে যাবি সেটা তাফসির হামিদ বেঁচে থাকতে কোনোদিন হবে না। উত্তরে দিসার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে জানায় আগে তাফসির হামিদ, তার মেয়ে আর স্ত্রীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে তবেই ইয়াসিরকে সরাতে এসেছে। আমি ধপ করে সোফায় বসে পরি আর তারপর বলি এতোকিছু করেও তোরা কিছুই পাবি না। যে বাচ্চা ছেলেটা রক্তাক্ত হয়ে পরে আছে ফ্লোরে তার কিছু হলে সব সরকারের হাতে চলে যাবে। আমার কথায় ওদের মুখ রক্তশূণ্য হয়ে যায়। আমার পা ধরে বলে এখন কী করবে ? আমাকে বলে ওদের সাথে থাকলে আমাকে ভাগ দেবে আর না থাকলে আমাকেও খুন করে দিবে। এক প্রকার বাধ্য হয়ে ওদের সাথে সামিল হই আর ইয়াদকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যেতে বলি। পরে আমাকে ওদের সব প্ল্যান জানায়। তাফসির হামিদের গাড়ির ব্রেক কেটে দিয়েছিলো দিসার, ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে স্পর্ট ডেড হয় স্যার আর মাডামের কিন্তু কলি পেছনের সীটে ছিলো বলে মারা যায়নি তবে আঘাত পেয়েছিলো। দিসার সবার শ্বাস চেক করে বুঝতে পারে কলি মরেনি তাই একটা লোহার রড নিয়ে একের পর এক আঘাত করে কলির মাথায় আর সেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছিলো। সব বলার পর আমার কথায় বাড়ির গার্ডদের অজ্ঞান করার ব্যবস্থা করে রুবিনা। সবাই অজ্ঞান হয়ে গেলে বাড়ির পেছন দিকে ইয়াসিরের লাশ দাফন করি আমি আর দিসার। রাতেই দিসার চলে যায় প্লাস্টিক সার্জারির জন্য দেশের বাইরে। সকালে হামিদ মঞ্জিলে তিনটা লাশ নিয়ে এম্বুলেন্স ঢুকে। প্রশ্ন উঠেছিলো ইয়াসির কোথায় সেটাও আমি কাটিয়ে দেয় দেশের বাইরে গেছে বলে আর তার সাথে এখন যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। সব মিটে গেলে রিলাক্স হওয়ার পর আমার ইমরুলের কথা মাথায় আসে। ইমরুল একমাত্র সাক্ষী ছিলো ইয়াসিরের মৃত্যু সেটা আমাদের জন্য ভবিষ্যতে খারাপ কিছু বয়ে আনতে পারে। তাই দিসারকে জানায় ইমরুলের কথা কিন্তু সারা শহর তন্নতন্ন করে খোঁজেও ইমরুলের দেখা মিলে না তবে ইমরুলের খোঁজ চলতে থাকে। কিন্তু তার মধ্যেই আমি ধরা পরে যাই আতিকের কাছে আর তাই ভয়ে দিসারের দেওয়া টাকা নিয়ে চলে যাই অনেক দূরে, ভিডিওর ভয়ে দিসারকে জানায় না আতিকের কথা। দূরে গেলেও দিসারের সাথে যোগাযোগ রাখি টাকার জন্য। সব ঠিকঠাক চলতে শুরু করে, দিসার আর রুবিনা গোপনে বিয়ে করে নেয় আর তাদের ঘরে জন্ম নেয় ইশান। আতিক কিছু করেনি দেখে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। তখন বুঝতে পারিনি আতিক এত বড় প্ল্যান করেছে। তার প্রায় তিন বছর পর ঢাকা শহরে আবার দেখা যায় ইমরুলকে। একমাত্র সাক্ষী শেষ করার জন্য ট্রাক চাপা দিয়ে মারা হয় ইমরুলকে।

ইমা ধপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে আর তার পাশেই ইয়ানাও বসে পড়লো। তাদের জন্য ইমা আর তার মায়ের জীবনটা তিক্ততায় ভড়ে গিয়েছিলো। নষ্ট হয়ে গেছে তার আর তার মায়ের জীবনটা। ইমা ভাবতে পারছে না তার বাবাও খুন হয়েছে এই খুনি গুলো হাতে। ইয়াদের অনুভূতি এখন আর বুঝা যাচ্ছে না, থম মেরে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়ের আগে আকাশ নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে। ইশান রোবটের মতো বসে আছে, সে ভাবতে পারছে না তার শরীরের প্রতিটা কণায় দুজন জঘন্য খুনির রক্ত বয়ে চলেছে। ইশানের ইচ্ছে করছে শরীরটা ক্ষত বিক্ষত করে এই খুনিদের রক্ত বের করে নর্দমায় ফেলে দিতে। ইশানের নিজেকে ঘেন্না লাগছে এখন। আজ বুঝতে পারছে ইয়াদ কেনো তাকে সহ্য করতে পারতো না। কে পারবে তার পরিবারের খুনিদের সন্তানকে সহ্য করতে ? ইশানের তো এখন নিজেকে নিজের কাছেই অসহ্য লাগছে।

ইয়াদ ধীর পায়ে রুবিনার সামনে গিয়ে বললো, কিছু বলার আছে মিসেস রুবিনা কবির ?
#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ৩৪

ইয়াদ ধীর পায়ে রুবিনার সামনে গিয়ে বললো, কিছু বলার আছে মিসেস রুবিনা কবির ?

রুবিনা অসহায় চোখে তাকালো ইয়াদের দিকে আর তা দেখে ইয়াদ অট্টহাসিতে মেতে উঠলো, অবাক হয়ে সবাই তাকিয়ে আছে ইয়াদের দিকে। এমন করে হাসতে কেউ কখনো দেখেনি ইয়াদকে তাই একটু বেশি অবাক হলো সবাই।

ইয়াদ নিজের হাতের পাঁচ আঙুল দেখিয়ে বললো, পাঁচ জন মানুষকে নির্মম ভাবে খুন করেছেন। কেনো বলুন তো, প্রোপার্টির জন্য ? কিন্তু সেটা তো আপনি এমনই পেয়ে গিয়েছিলেন ইয়াসির হামিদের স্ত্রী হয়ে। তাহলে খুনগুলো করার কী প্রয়োজন ছিলো ? উত্তরটা আপনি দেবেন নাকি আমি দিয়ে দেবো ?

রুবিনা মাথা নিচু করে ফেললো ইয়াদের কথা শুনে আর ইয়াদ তা দেখে বললো, ঠিক আছে আমিই বলছি। ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আপনি। যার জন্য নিজের স্বামী কিংবা সন্তান আপনার মনে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। আপনি এতোটাই অন্ধ ছিলেন দিসার কবিরের ভালোবাসায়। তাই তার অপরাধে তাকে সাহায্য করতেও একবার ভাবেননি। হায় রে ভালোবাসা, সত্যি কী একে ভালোবাসা বলে ? আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে মিসেস রুবিনা কবির। যে ভালোবাসার জন্য এতো নিচে নামতে একবার ভাবেননি তার বিনিময়ে কী পেলেন দেখবেন না ?

ইয়াদের কথা শুনে সবাই ইয়াদের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো। ইয়াদ গার্ডদের বললো, ভেতরে নিয়ে আসো আমাদের স্পেশাল মেহমানদের।

ইয়াদের কথায় একটা মহিলা আর কথার বয়সী একটা মেয়েকে নিয়ে গার্ডরা রুমে আসলো। তাদের দেখে দিসারের চেহারার রঙ উড়ে গেলো। আর বাকি সবাই প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে তাদের পরখ করে যাচ্ছে। ওয়েস্টার্ন ড্রেসআপে আছে দু’জনেই।

মহিলাটি খানিকটা রাগী গলায় বললো, হোয়াট ইজ দিস দিসার ? এভাবে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে কেনো ? তোমার এই অবস্থা কেনো আর এরা সবাই কারা ?

পাশের মেয়েটা বলে উঠলো, পাপা এসব কী হচ্ছে বলবে একটু ?

মেয়েটার পাপা ডাক সবার কানে যেনো বারবার আঘাত করতে লাগলো। রুবিনা বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে দিসারের দিকে। এদিকে দিসার কী করবে বুঝতে পারছে না। ইয়াদ এদের পর্যন্ত পৌঁছে যাবে সেটা কখনো ভাবতে পারেনি।

রুবিনা ধরা গলায় বললো, দিসার আর কতো চুপ করে থাকবে ? কী হচ্ছে এসব আমাদেরও বলো। এই মেয়ে তোমাকে পাপা কেনো ডাকছে, কারা এরা ?

দিসার নির্বিকার হয়ে উত্তর দিলো, আমার স্ত্রী আর মেয়ে।

দিসারের কথা শেষ হতেই রুবিনার চোখ বেয়ে পানির কণা গাড়িয়ে গেলো আর ভাঙা গলায় বললো, তাহলে আমি কে আর ইশান কে ?

দিসার এবার চুপ করে গেলো আর তা দেখে রুবিনা চিৎকার করে বললো, কথা বলছো না কেনো, বলো আমি কে ?

দিসার এবারও চুপ তবে সেই মহিলা কড়া গলায় বললো, দিসার কে এই মহিলা এভাবে অভদ্রের মতো চেঁচামেচি করছে কেনো ?

মেয়েটি বলে উঠলো, পাপা আমাকে যেতে দিতে বলো। এখানে বিরক্ত লাগছে আমার।

রুবিনা আবার জিজ্ঞেস করলো, দিসার কথা বলছো না কেনো ?

ইয়াদ আবার হাসতে লাগলো। যে হাসিতে মিশে আছে কষ্ট, তিক্ততা, ধিক্কার। হাসতে হাসতে বলে উঠলো, কেমন লাগলো মিসেস রুবিনা কবির, অন্ধ ভালোবাসার প্রতিদান ? দিসার কবির আপনাকে ভালোবাসেনি সারাজীবন ব্যবহার করে গেছে শুধু। প্রোপার্টি পেয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দিতো আপনাকে, শুধু সময়ের অপেক্ষা করছিলো। যাকে ভালোবেসে একটা পরিবার ধ্বংস করে দিতে একটু হাত কাঁপেনি সেই ভালোবাসার এমন প্রতিদান সত্যি অভাবনীয়। যে ভালোবাসা মানুষকে খুন করতে শেখায় সেটা ভালোবাসা হতে পারে না আর যে ভালোবাসা খুন করতে শেখায় তার প্রতিদান এর থেকে বেটার কিছু আশা করা বোকামি ছাড়া কিছু নয় মিসেস রুবিনা কবির।

কথাগুলো বলে রুবিনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো ইয়াদ আর সেই মহিলা আর মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দিসারের সব কার্যকলাপ তাদেরও জানালো। মহিলার নাম মনিকা আর মেয়েটার নাম দিয়া। মনিকার ভাই মাফিয়া আর মনিকাকে বিয়ে করে দিসার সেই মাফিয়া দলের সদস্য হতে পেরেছে। মনিকার ভাই যদি জানতে পারে দিসার মনিকাকে ধোঁকা দিয়েছে তাহলে কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে খাওয়াবে। মনিকা রেগে দিসারকে হুমকি দিয়ে বের হয়ে গেলো মেয়েকে নিয়ে। মনিকা নিজেও খুব ডেঞ্জারাস মহিলা তবে সে মিথ্যা বলা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে। দিসার তাকে বলেছিলো দিসারের জীবনে সেই একমাত্র নারী। মনিকা দিসারকে এর কী শাস্তি দিতে পারে সেটা দিসার কল্পনাও করতে পারছে না। এতোক্ষণ ইয়াদের সব জেনে যাওয়াতে দিসারের কোনো হেলদোল ছিলো না কিন্তু মনিকার হুমকিতে ভয়ে রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিয়েছে। মনিকার ভাই খুবই ভয়ংকর মাফিয়া। রুবিনা পাথরের মতো বসে আছে কোনো হেলদোল নেই তার। ছোটবেলা থেকে দিসারকে ভালোবাসে রুবিনা আর তার জন্য পরিবার ছাড়তেও একবার ভাবেনি। শত শত অন্যায় করে জেলে যাওয়ার আগেও একবার ভাবেনি। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার আগে রুবিনাকে তার বাবা একটা সুযোগ দিয়েছিলো। বলেছিলো সে দিসারের সাথে সব সম্পর্ক ভেঙে দিলে তাকে মাফ করে দিবে কিন্তু রুবিনা বাবার কথায় পাত্তা না দিয়ে দিসারের হাত ধরে একটা অনিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়িয়েছিলো। একের পর এক প্রতারণা করেছে মানুষের সাথে। আর তাদের শেষ শিকার হয় ইয়াসির নামের সহজ সরল মানুষ। প্ল্যান ছিলো বিয়ে করবে আর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ডিভোর্সের সময় মোটা অংকের টাকা দাবী করবে কিন্তু সব গন্ডগোল হয়ে যায় দিসার আবার জেলে যাওয়ার কারণে। রুবিনা উপায় না পেয়ে ইয়াসিরের সাথে সুখের সংসার করার নাটক করতে থাকে। সময়ের সাথে তাদের প্ল্যান চেঞ্জ করে টাকার বদলে পুরো প্রোপার্টি আত্মসাৎ করার প্ল্যান করে। রুবিনা সবার অগোচরে প্রায় জেলে দেখা করতো দিসারের সাথে। অতীত ভেবে রুবিনার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আজ খুব মনে পরছে ইয়াসিরের কথা, মানুষটা কত ভালোবাসতো তাকে আর সে কী না মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে নিজের হাতে খুন করলো সেই মানুষটাকে। অতিরিক্ত মানসিক আঘাত পাওয়ায় রুবিনা জ্ঞান হারিয়ে নেতিয়ে পরলো চেয়ারটাতে। ইয়ানা আর ইশান এগিয়ে যেতে গিয়েও থেমে গেলো আর ইয়াদ একবার টলমল চোখে সেদিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। দিসারের দিকে তাকিয়ে ইয়াদের চোখ লাল হয়ে গেলো রাগে। এগিয়ে গিয়ে সজোরে পাঞ্চ করলো নাক মুখ বরাবর। ইয়াদের ইচ্ছে করছে দিসারের বডিটা হাজার টুকরো করে রাস্তার কুকুরকে খাওয়াতে কিন্তু ইয়ানা আর ইমার সামনে কিছু করতে পারছে না। নিজের রাগ কমানোর জন্য একের পর এক কয়েকটা পাঞ্চ করলো।

রেগে চিৎকার করে দিসার শার্টের কপাল ধরে বললো, কুত্তার বাচ্চা সব হয়েছে তোর জন্য। তোর লোভের জন্য কতগুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে ভয়ংকর ভাবে। তোকে একেবারে মেরে ফেললেও শাস্তি কম হবে তোর। না তোকে এতো সহজে মারবো না আমি, একটু একটু করে মারবো তোকে। প্রতিটা মুহূর্তে মৃত্যুর ভয়ে কুঁকড়ে উঠবি তুই। যতগুলো তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি করেছিস তার সব শাস্তি তুই পাবি। মৃত্যুর যন্ত্রণা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করবি কিন্তু মৃত্যু তোর কাছে ধরা দেবে না। জাম্বী আজ দেখবো তুমি কতটা হিংস্র হতে পারো। আজ তোমার পরিক্ষা তাই নিজেকে প্রমাণ করো।

ইয়াদ সবাইকে নিয়ে বের হয়ে আসতে পা বাড়ালে দিসার পেছন থেকে ভীত গলায় বলে, ইশান আমাকে একা রেখে যাস না আমি তো তোর বাবা। আমাকে মেরে ফেলবে এরা।

ইশান রেগে চিৎকার করে বললো, জাস্ট শাট আপ দিসার কবির, কে তোর ছেলে ? আমি তোর মতো জানোয়ারকে নিজের বাবা মানতে পারবো না৷ পারলে এই শরীরের প্রত্যেকটা ঘৃণিত রক্ত কণা বের করে দিতাম শরীর থেকে। নিজের শরীরটা ঘেন্না লাগছে আমার।

কথাগুলো বলতে বলতে ইশানের গলা ধরে এলো ইয়ানা আলতো করে ইশানের পিঠে হাত রাখলে ইশান ছিটকে দূরে সরে গেলো আর ভাঙা গলায় বললো, আমাকে তুই স্পর্শ করিস না আপু। আমার শরীরটাতে নর্দমার কীটের রক্ত বয়ে চলেছে তুই আমাকে স্পর্শ করলে তোর হাত নোংরা হয়ে যাবে।

ইয়ানা ভাঙা গলায় বললো, আমাদের শরীরেও তো একটা জঘন্য মানুষের রক্ত বইছে রে ইশান।

ইশান মুচকি হেঁসে বললো, আপু তোদের শরীরে একটা জঘন্য মানুষের রক্ত থাকলেও একটা পবিত্র মনের মানুষের রক্তও বইছে। তার পবিত্রতায় অপবিত্র রক্ত টুকু পবিত্র হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমার শরীরে এক বিন্দু পবিত্র রক্ত নেই রে আপু।

ইশান চোখ ভরা ঘৃণা নিয়ে একবার পেছন ঘুরে তাকালো নিজের মানুষ রুপি নরপিশাচ বাবা মায়ের দিকে। আজ তাদের জন্য এক বিন্দু মায়া বা ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই ইশানের মনে। ইশান এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বড় বড় কদম ফেলে বাইরে বের হয়ে গেলো। ইয়াদ আর ইয়ানা একবার ঘুরে তাকালো তাদের মা নামক মানুষটার দিকে। যাকে মা ডাকলে মা জাতির অপমান করা হবে। মা শব্দ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর আর শান্তির শব্দ কিন্তু এই একজন মানুষ সেটাকে নোংরা করে ফেলেছে৷ ইয়াদ আর ইয়ানাও ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিলো।

ইয়াদ সামনের দিকে তাকিয়ে বললো, জাম্বী যা কারার করো তবে প্রাণটা যেনো থাকে। এতো সহজ মৃত্যু এদের প্রাপ্য নয় আর নিজের হাতে শাস্তি দেওয়ার জন্য হলেও এদের সামনে আমাকে থাকতে হবে আর সেটা আমি সহ্য করতে পারছি না। এদের মুখ দেখলে ঘৃণায় বমি চলে আসছে আমার।

৩৩.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুটো দিন। হামিদ মঞ্জিলে মানুষ আছে কিনা বুঝা দায় হয়ে গেছে। কোনো মানুষের সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারছে না কেউ। সবচেয়ে বেশি বিধস্ত হয়ে গিয়েছে ইশান। ছেলেটা কিছুতেই মানতে পারছে না সে দুজন খুনীর সন্তান, তার শরীরে শুধু খুনীর রক্ত। এতো হাসিখুশি ছেলেটা একদম চুপ হয়ে গেছে, দেখে মনে হয় হাসি কী জিনিস সে জানেই না। সেদিন ফিরে এসে যে রুমে ঢুকেছে আর বের হয়নি, কারো মনের অবস্থায় ভালো নয়, যে ইশানের দিকে নজর দিবে। সবাই যার যার আঘাত সামলে উঠতে ব্যস্ত। ইমা বাবা-মায়ের ছবি বুকে নিয়ে প্রতিনিয়ত চোখের পানি ফেলে যায়। তার বাবার তো কোনো অন্যায় ছিলো না তাহলে কেনো এভাবে তাদের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো। ইয়ানাও নিজের রুমেই কাটায় সারাদিন আর মন চাইলে ছাঁদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি বিসর্জন দেয়। ইয়াদ ঠিকমতো অফিস যায় তবে কাজে কতটা মনোযোগ দিতে পারে সেটা সে নিজেও বুঝতে পারে না। অফিসের লান্স টাইমে বের হয়ে সেই গোডাউনের উদ্দেশ্যে রওনা হলো ইয়াদ। দুদিনে আর কোনো খোঁজ নেয়নি ওদিকটার। রুবিনা যেমনই হোক ইয়াদের মা, ইয়াদের পক্ষে সম্ভব নয় তাকে নিজের হাত শাস্তি দেওয়া। তবে রুবিনার সবচেয়ে বড় শাস্তি ছিলো দিসারের ধোঁকা আর সেই শাস্তি ইয়াদ নিজের হাতেই দিয়েছে। ইয়াদ নিজের সাথে যুদ্ধ করে পেরে উঠছে না। পারছে না গার্ডদের বলতে যেনো তার মাকে মেরে ফেলে। গোডাউনে এসে ভেতরে ঢুকে দিসারকে হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেলেও রুবিনার চেয়ার ফাঁকা দেখতে পেলো। ইয়াদ রেগে সবাইকে ডাকতে লাগলো আর সাথে সাথে সবাই উপস্থিত হয়ে গেলো।

ইয়াদ রেগে বললো, মিসেস রুবিনা কোথায় ?

জাম্বী গোডাউনের এক কোণে ইশারা করে দেখালো আর ইয়াদ সেদিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। এলোমেলো হয়ে বসে আছে রুবিনা আর কিছু বিড়বিড় করছে। ইয়াদ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো জাম্বীর দিকে।

জাম্বী গম্ভীর গলায় বললাম, অতিরিক্ত মানসিক আঘাত পাওয়ায় উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে তাই বাঁধন খুলে দিয়েছি।

ইয়াদ অদ্ভুতভাবে হেঁসে বললো, পাপ বাপ কেও ছাড়ে না মিসেস রুবিনা কবির।

ইয়াদ ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে এক হাঁটু গেড়ে বসলো রুবিনার সামনে।

রুবিনা বিড়বিড় করে বলছে, দিসার আমি যেমন সবসময় তোমাকে চেয়ে গেছি তুমি সবসময় চেয়ে গেছো শুধু টাকা। তুমি সত্যি কখনোই একটু ভালোবাসোনি আমাকে।

ইয়াদ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠে আসলো রুবিনার সামনে থেকে আর দিসারের সামনে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলো।

দিসার বিড়বিড় করে পানি চাইছে তা দেখে ইয়াদ জাম্বীকে বললো, টাকা নিয়ে এসো তো জাম্বী।

জাম্বী একা ট্রে ভর্তি করে টাকা নিয়ে আসলে ইয়াদে সেটা দিসারে সামনে ধরে বললো, পানি কেনো খাবি তুই শুধু টাকা খাবি। যে টাকা আর প্রোপার্টির জন্য এতোকিছু করলি সেগুলো ছাড়া আর কিছুই পাবি না তুই, নে খা টাকা।

দিসার অসহায় গলায় বললো, একটু পানি,,,

ইয়াদে রেগে দিসারের মুখ টাকার মধ্যে চেপে ধরে চিৎকার করে বললো, পানি খাবি কেনো তুই শুধু টাকা খাবি, গাড়ি-বাড়ি সব খেতে পাবি কিন্তু খাবার পাবি না তুই।

ইয়াদ উঠে চেয়ার লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো, এক ফোঁটা পানি যেনো পর গলা দিয়ে না নামে। খাবার বা পানি কিছু চাইলে টাকা, গোল্ড, ডায়মন্ড খেতে দিবে ওকে। বাঁচিয়ে রাখার জন্য যা করতে হয়ে করো তবে জীবনটা যেনো মৃত্যুর থেকেও ভয়ংকর হয়।

ইয়াদ বের হয়ে গেলো গোডাউন থেকে, কষ্টগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠে এদের দেখলে। অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না তাই বাসায় চলে গেলো। ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই দেখতে পেলো ইশান ড্রয়িংরুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো, এভাবে কী দেখছিস ?

ইশান আনমনে বললো, যাওয়ার আগে একবার ভালো করে দেখে নিচ্ছি।

ইয়াদ অবাক হয়ে একটু উঁচু স্বরে বললো, মানে ?

ইশানের হুঁশ ফিরে ইয়াদের উচু গলায় আর ঘুরে তাকায় ইয়াদের দিকে তারপর মুচকি হেঁসে বলে, এই বাড়ি বা তোমাদের উপর আমার কোনো অধিকার নেই ভাইয়া। এতবছর তোমার বাবার খুনির ছেলে হয়ে তোমার বাড়িতে থেকে খেয়ে বড় হয়েছি। তবে সব জানার পর আর এখানে থাকার মতো বেহায়া হতে পারলাম না। ভাইয়া আমি চলে যাচ্ছি আমার অভিশপ্ত জীবন নিয়ে তোমাদের থেকে অনেক অনেক দূরে। যাতে আমার মতো খুনির ছেলের ছায়া তোমাদের সুন্দর জীবনে না পরে। পারলে মাফ করে দিও আমার সব ভুল।

কথাগুলো বলতে গলা কাঁপছিলো ইশানের, কষ্টে খুব ফেটে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো কেউ তার বুকের উপর হাজার টন ওজন চাপা দিয়ে রেখেছে।
#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ৩৫

ইশান ইয়াদের থেকে চোখ সরিয়ে আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলো। ইয়াদ চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে, এর মধ্যে ইয়ানা আর ইমাও নিচের নেমে এলো। ড্রয়িংরুমে ইশান আর ইয়াদকে দেখে একে অপরের দিকে তাকালো ইয়ানা আর ইমা।

ইয়ানা ইশানের দিকে একবার তাকিয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো, কী হয়েছে ভাইয়া ?

ইয়াদ থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে, একটা টু শব্দও করছে না। এতে ইশানের মনে হলো ইয়াদও চাইছে সে চলে যাক। ইশান চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছে কিন্তু ইয়াদের নিরবতা ইশানকে কষ্ট দিচ্ছে। পরক্ষণে নিজের মনের কথা চিন্তা করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো ইশান। ইয়াদের তো এটাই চাওয়া স্বাভাবিক। ইশান আবার চোখের পানি মুছে নিলো আর ইয়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

ভালো থাকিস আপু আর হ্যাঁ তোদের খুব ভালোবাসি আমি, খুব। পারলে মাফ করে দিস আমাকে।

ইয়ানা অবাক হয়ে বললো, কী করেছিস তুই, যে তোকে মাফ করবো ?

ইয়ানার প্রশ্নের উত্তরে ইশান শুধু অসহায় মুখে হাঁসলো, যার মানে ইয়ানা বুঝতে পারলো না। সে চোখ ভরা প্রশ্ন নিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে, ইশান ধীর পায়ে ইমার সামনে দাড়ালো।

ভালো থেকো ভাবি আর আমার ভাইয়া আর আপুকেও ভালো রেখো। তোমাদের অনেক জ্বালিয়েছি তার জন্য মাফ চেয়ে নিচ্ছি।

ইশান এতটুকু কথা শেষ করে ইয়াদের দিকে তাকালো, ইয়াদ তখনো গম্ভীর ভাবে সামনে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

ইশান আবার ইমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমার ভাইয়ার বাহিরটা যেমন শক্ত, ভেতরটা তার থেকে কয়েকগুণ বেশি নরম। সারাজীবন শুধু কষ্ট পেয়ে গেছে, পারলে এখন একটু সুখ তার হাতের মুঠোয় এনে দিও।

ইয়ানা আর ইমা কিছুই বুঝতে পারছে না ইশান এসব কেনো বলছে। তাই হা করে তাকিয়ে আছে শুধু। ইশান ইমার সামনে থেকে এসে সোফার কাছে রাখা নিজের লাগেজটা হাতে নিতেই ইয়ানা আর ইমা আরো অবাক হয়ে গেলো।

ইয়ানা ব্যস্ত গলায় বললো, তুই এতবড় লাগেজ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস এই অবেলায় ?

ইশান নিজের প্রতি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ফুটপাত, যেটা আমার আসল ঠিকানা, আসছি।

ইশান মেইন ডোরের কাছে যেতেই ইয়াদ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, দাঁড়া।

ইশানের পা থেমে গেলো তবে পেছনে ঘুরে তাকালো না কারণ তার চোখের পানি সে কাউকে দেখাতে চাইছে না।

ইয়াদ নিজের জায়গায় স্থির থেকে বললো, কার অনুমতিতে বাড়ির বাইরে পা রাখার সাহস দেখাচ্ছিস তুই ?

ইশান নিজের চোখ মুছে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, মানে ?

ইয়াদ কড়া গলায় বললো, ভাইয়াও বলছিস আবার আমাদের উপর কোনো অধিকারও নেই বলছিস ?

ইশান কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতে ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইয়াদ ইশানের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো, আমার অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখার কথা চিন্তা করেছিস কোন সাহসে ? জীবনের ২২ বছর নকল ইয়াসির হামিদের ছেলে হয়ে থাকলেও সত্যিকার ভাই ছিলি আবরার হামিদ ইয়াদের। তাই বাবা কে ছিলো ভুলে যা, বাকি জীবন আসল ইয়াসির হামিদের ছেলে আর আবরার হামিদ ইয়াদের ভাই হিসাবে এই বাড়িতেই কাটাবি তুই।

ইশান অসহায় গলায় বললো, কিন্তু ভাইয়া ?

ইয়াদ নিজের রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বললো, এক কথা বারবার বলা আর আমার কথার উপর অন্যকারো কথা বলা একদমই পছন্দ করি না আমি। চুপচাপ নিজের রুমে যা এখানে আর কোনো আলোচনা চাই না আমি।

ইমা ইশানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে রুমে যাওয়ার ইশারা করে ইয়াদের পিছু পিছু নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলো।

ইয়ানা ইশানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঠাস করে মাথার পিছনে একটা থাপ্পড় মারলো। ইশান মৃদু চিৎকার করে মাথার পিছনে হাত বুলাতে লাগলো।

এটা কী করলি আপু ?

ইয়ানা ইশানের কান টেনে ধরে বললো, কেনো কী করেছি দেখতে পাসনি ? আর একবার দিয়ে দেখাবো নাকি ?

ইশান অসহায় গলায় বললো, তুই মাথায় থাপ্পড় মেরে মেরে আমার ব্রেনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস।

ইয়ানা ইশানের কান ছেড়ে বললো, ঠিক বলেছিস আমার থাপ্পড় খেয়ে তোর মাথার মগজগুলো জৈব সারে পরিণত হয়েছে, তাই এমন ফালতু একটা কাজ করতে যাচ্ছিলি। যা চুপচাপ রুমে গিয়ে ঘুমা এতে যদি জৈব সার থেকে একটু মগজ তৈরি হয়।

ইয়ানা ইশানের দিকে শাসানো ভঙ্গিতে তাকিয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো। বিকেল হয়ে গেছে এই সময়টা ছাঁদে কাটাতে ভালো লাগে ইয়ানার। ইশান ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। এতো ভালো মানুষগুলোর সাথে এতটা খারাপ কী করে হতে পারে ভেবে পায় না ইশান। চোখ মুছে লাগেজ নিয়ে রুমে ফিরে গেলো। ইয়াদের আদেশ উপেক্ষা করার সাধ্য ইশানের নেই।

ইমা রুমে এসে দেখে ইয়াদ সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

ইমা ধীর গলায় বললো, আপনার কী খারাপ লাগছে, এতো তাড়াতাড়ি চলে এলেন যে আজ ?

ইয়াদ চোখ খুলে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইমার দিকে আর বললো, কেনো তোমার অসুবিধা হচ্ছে আমি তাড়াতাড়ি চলে আসাতে ?

ইমা ব্যস্ত গলায় বললো, এমা তা কেনো হবে ? আসলে কখনো আসেন না তো, তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আর কী।

ইয়াদ আবার চোখ বন্ধ করে বললো, মাথাটা ধরেছে কড়া এক কাপ কফি নিয়ে এসো।

ঠিক আছে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি এখনই কফি এনে দিচ্ছি।

ইমা রুম থেকে বের হয়ে গেলে ইয়াদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুম চলে গেলো।

ইমা রুম থেকে বের হয়ে বিড়বিড় করে বললো, এই লোক জীবনে ভালো করে কথা বলতে শিখবে না। এর মুখে ভালো কথাও নিম পাতার জুস মনে হয়।

ইয়াদ ফ্রেশ হয়ে একটা ধূসর রঙের টিশার্ট, কালো টাউজার আর পায়ে কালো স্লিপার পরে মিনি ছাঁদে গিয়ে চেয়ারটাতে বসলো। পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম আলো চারপাশটা সুন্দর করে তুলেছে। পরিবেশটা যে কারো মন ভালো করতে সক্ষম। তবে ইয়াদের মন কতটা ভালো করতে পারলো সেটা বুঝা গেলো না। সে চুপচাপ বসে রইলো বাড়ির পিছনের বাগানের দিকে তাকিয়ে। নিজের জীবনটার প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছে ইয়াদের। জীবনের দিকে তাকালে মনে হয়ে কিছু ছাই পরে আছে সব দাউদাউ করে পুড়ে যাওয়ার পর। না কোনো রং আছে আর না আছে এক চিলতে হাসি।

আপনার কফি।

ইমার কথায় ইয়াদের বাস্তবে পদার্পণ হলো চিন্তার জগৎ থেকে।

ইমার হাতে এক কাপ কফি দেখে বললো, এক কাপ কেনো, তুমি খাবে না ?

ইমা ফট করে বলে ফেললো, আপনি শেয়ার করলে অবশ্যই খাবো ?

কথাটা শুনে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো আর ইমা দাতে জিহ্বা কাটলো আর আমতা আমতা করে বললো, আমি আপনার মতো তেতো কফি খেতে পারি না।

ইয়াদ ইমার হাত থেকে কফিটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বললো, তোমারটা আলাদা করে বানাতে।

ইচ্ছে করছিলো না তাই আর বানাইনি।

ইয়াদ আর কিছু বললো না চুপচাপ কফি খেতে লাগলো সামনের দিকে তাকিয়ে। ইমা তাকিয়ে আছে ইয়াদের দিকে। এই কয়েকদিনে ইয়াদের চেহারায় অনেকটা বিষন্নতা ফুটে উঠেছে আর আজ তা আরো বেশী তীব্র মনে হচ্ছে ইমার কাছে।

মলিন গলায় ইমা বললো, কী হয়েছে আপনার ?

ইয়াদ কফির কাপে চুমুক দিতে গেলে ইমার কথায় থেমে গেলো, কিছু একটা ভেবে পরক্ষণে আবার চুমুক দিয়ে শান্ত গলায় বললো, কী হবে, কিছু হয়নি ?

ইমা অসহায় গলায় বললো, আচ্ছা এখনো কী আপনি আমাকে একটুও বিশ্বাস করতে পারেননি ? একটু বিশ্বাসও অর্জন করতে পারিনি আমি ?

ইয়াদ কফির দিকে তাকিয়ে পুরোটা শেষ না করেই সামনে টেবিলটাতে রেখে দিলো। কী উত্তর দেবে ইমার প্রশ্নের ? কিছু না বলে চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো ইয়াদ।

ইমা ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকে বললো, জানেন তো ? ভালোবাসা জিনিসটা কারো কাছে পরশপাথরের থেকেও মূল্যবান, একবার পেয়ে গেলে অতি যত্নে লুকিয়ে রাখে মনের গহীনে যাতে হারিয়ে না যায়। আবার সেই ভালোবাসাই কারো কাছে পথের ধূলোর থেকেও মূল্যহীন, অবহেলা করে পায়ে মাড়িয়ে চলে যায়। তবে সময়ের ব্যবধানে পথের ধূলো ভেবে অবহেলা করা ভালোবাসাটাই পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে মানুষ। কিন্তু যা একবার হারিয়ে গেলে সেটা কী আর এতো সহজে মেলে ?

কথাটুকু বলে ইমার আঁটকে রাখা চোখের পানিটা লাগামহীন ভাবে গড়িয়ে গেলো। ইমা চোখের পানি আড়াল করার জন্য ইয়াদের সামনে থেকে চলে আসতে গেলে ডান হাতে টান পরলে দাঁড়িয়ে পরে। না দেখেই বলতে পারে ইয়াদ তার হাত ধরে রেখেছে শক্ত করে। ইমা ঘুরে তাকালো না সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। ইয়াদও ইমার হাত না ছেড়ে সেভাবেই ধরে রইলো।

ইমা, পরশপাথরের থেকেও মূল্যবান জিনিসটা কখনো আমার ভাগ্যে মিলেনি। তাই লুকিয়ে রাখার প্রশ্নও আসে না। আর যেটা কখনো পাইনি সেটা অবহেলা করে পথের ধুলো ভেবে পায়ে মাড়িয়ে যাবো কীভাবে, সেটাও একটু বলে যাও।

কথাটা বলার সময় ইয়াদের কণ্ঠে লুকিয়ে ছিলো হাজারটা যন্ত্রণা আর হাহাকার। হয়তো ইমা বুঝতে পারলো ইয়াদের মনের হাহাকার। টলমলে চোখে ঘুরে তাকালো ইয়াদের দিকে আর ইয়াদও তাকালো ইমার দিকে। ইয়াদের চোখ দুটো অলরেডি লাল টকটকে হয়ে গেছে তবে আজ সেটা রাগের জন্য নয় বরং চাপা কষ্টগুলো চোখে ফোটে উঠেছে।

ইমা ইয়াদের ধরা হাতের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললো, সত্যি কী পাননি, নাকি পেয়েছেন কিনা তার খোঁজই রাখেননি কখনো ?

ইয়াদের কী হলো সে নিজেও বুঝতে পারলো না। তবে ইমার কথাতে কিছু তো ছিলো যা ইয়াদকে বাঁধ্য করলো নিজের খোলস থেকে বের হয়ে আসতে। ইয়াদ একটানে ইমাকে কাছে টেনে নিলো, ইমা একদম ইয়াদের সামনে গিয়ে দাড়ালো ইয়াদের টান সামলাতে না পেরে। ইয়াদ ইমার চোখে চোখ রাখলো। ইমা দাঁড়িয়ে আছে আর ইয়াদ চেয়ারে বসে আছে, চেয়ারটা নিচু হওয়ায় ইয়াদের মাথাটা ইমার পেট বরাবর। ইয়াদ আচমকা ইমাকে জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে দিলো। ইমার সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো ইয়াদের স্পর্শে। কথা বলা আর নড়াচড়া দুটোই বন্ধ হয়ে গেছে ইমার। কিছুটা সময় ওভারে পার করার পর ইমার মনে হলো তার পেটের দিকটার শাড়ী ভিজে উঠছে গরম তরলে, তবে কী ইয়াদ কাঁদছে ? ইমা নিজের কাঁপা হাতটা ইয়াদের মাথায় রাখতেই ইয়াদ আরো কষ্ট করে আঁকড়ে ধরলো ইমাকে।

ইমা কাঁপা গলায় বললো, আপনি কাঁদছেন ?

ইয়াদ কান্না ভেজা গলায় উত্তর দিলো, বারো বছর ধরে নিজের অনুভূতিগুলো লোহার খাঁচায় বন্দী রাখতে রাখতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি ইমা। জীবনের উপর এখন বিতৃষ্ণা এসে গেছে আমার আর পারছি না আমি।

সেদিন ইয়াদ নেশার ঘোরে কান্না করেছিলো আর আজ সজ্ঞানে। ইমার মনে হচ্ছে ইয়াদের সেদিনের কান্নার থেকেও আজকের নিঃশব্দের কান্না আরো বেশী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে ইমার ভেতরটাকে। সহ্য হচ্ছে না ইয়াদের চোখের জল। ইয়াদ হঠাৎ ইমাকে ছেড়ে এক টানে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে দিলো। ইয়াদের প্রত্যেকটা কাজে ইমা একের পর এক অবাক হচ্ছে আজ।

ইয়াদ ইমার দুগালে হাত রেখে বললো, ভালোবাসো এই অনুভূতিহীন মানুষটাকে ?

ইমা ইয়াদের চোখে চোখ রেখে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। চোখ থেকে টপটপ পানি পরছে ইমার সাথে ইয়াদের চোখও ভেজা।

কখনো ধোঁকা দিবে না তো ?

যতদিন এই দেহে নিশ্বাস চলবে ততদিন শুধু ভালোবাসাই দেবো, অন্যকিছু কল্পনাতেও নেই।

ভালোবাসতে পারি না আমি, তাই সেটার শিক্ষক তোমাকেই হতে হবে। তবে একবার শিখিয়ে দিলে তোমার থেকেও বেশি ভালোবেসে দেখাবো। তবে যদি কোনোদিন ধোঁকা পাই, নিশ্বাসের মায়া ত্যাগ করবো, তবে তোমাকে কিছু বলবো না।

ইমা কিছু না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইয়াদকে আর ইয়াদও জড়িয়ে নিলো নিজের জীবনের নতুন অধ্যায়কে।

৩৪.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো তিনটা মাস। দিসার, রুবিনা আর কামরুলকে পুলিশের হাতে তোলে দিয়েছে ইয়াদ। খুনীর রক্তে হাত রাঙিয়ে নিজেও খুনী হতে চায় না ইয়াদ। পুলিশে দেওয়ার আগে পুরো এক মাস হসপিটালে ভর্তি ছিলো দিসার। দুই মাস বন্দী ছিলো ইয়াদের হাতে যার প্রত্যেকটা দিন নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছে দিসার। প্রতিটা মুহূর্তে নিজের মৃত্যু প্রার্থনা করেও মৃত্যুর দেখা মেলেনি তার। জীবনটা হয়ে উঠেছিলো মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। পেটের ক্ষুধায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে টাকাও চিবিয়েছে আর তা দেখে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে ইয়াদ। বাঁচিয়ে রেখেছে ঠিকই মৃত্যু থেকেও ভয়ংকর জীবন দিয়ে। একমাস হসপিটালে ভর্তি থাকার পর যখন মোটামুটি সুস্থ হয় আর তখনই সাথে সাথে পুলিশ গ্রেফতার করে দিসারকে। কামরুলকে আগেই পুলিশের হাতে দিয়ে দিয়েছিলো ইয়াদ। তবে রুবিনার মানসিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। সারাদেশের মানুষ জেনে গেছে রুবিনা আর দিসারের মুখোশের আড়ালের চেহারাটা। দুজনেরই ফাঁসির আদেশ হয়েছে আর কামরুলের বারো বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। দিসারের ফাসির আদেশ খুব তাড়াতাড়ি কার্যকর করা হবে কিন্তু রুবিনা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মানসিক হাসপাতালে রাখার আদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। হামিদ মঞ্জিল অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে কালো অতীতের সেই তীব্র যন্ত্রণাগুলোকে। তাদের নতুন জীবনে দিসার বা রুবিনা নামক কারো জন্য এক সেকেন্ড সময়ও নেই। ইয়াদ আর ইমার সম্পর্কের অনেকটা উন্নতি হয়েছে তবে এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। বাকি সব স্বামী স্ত্রীর মতো সম্পর্কটা নয়, তবে একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবাসতে শুরু করেছে।

ফোনের স্কিনে আরমানের একটা ছবি জলজল করছে আর সেদিকে টলমল চোখে তাকিয়ে আছে ইয়ানা। সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না, সেটা আগে অনেক শুনেছে। তবে আজ নিজের সাথে হওয়ার জন্য ইয়ানা বুঝতে পারছে অপূর্ণতার কষ্ট কতোটা যন্ত্রণাদায়ক। আরমান হয়তো কোনোদিন জানতেও পারবে না তাকে কেউ পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো, সবচেয়ে বেশি চেয়েছিলো। কখনো আর বলা হবে না তাকে, মনের লুকিয়ে রাখা কথাগুলো। কিছু ভালোবাসা হয়তো অপ্রকাশিত থাকাই ভালো।

ইয়াদ রাগী গলায় বললো, তুমি এতো কী রেডি হচ্ছো ? দেখতে আসবে ইয়ানাকে তোমাকে নয়, তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গিয়ে দেখো ইয়ানার হলো কিনা।

ইমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হিজাবটা পড়ছিলো আর ইয়াদ বেডে পায়ের উপর পা তুলে বসে কথাটা বলে উঠলে ইমা তার দিকে কড়া চোখে তাকালো।
#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ৩৬

ইমা কড়া চোখে তাকালো ইয়াদের দিকে আর কোমরে হাত দিয়ে বললো, কোথায় সাজতে দেখলেন আমাকে ? হিজাবটা না পরলে তো উনাদের সামনে যেতেও দিবেন না।

ইয়াদ বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো, হিজাব পরেও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। রেহান তো ইয়ানাকে পছন্দ করে কিন্তু ওর বাবা-মা না আবার ইয়ানাকে রেখে আমার বউ নিয়ে টানাটানি করে। তাই যাওয়ার দরকার নেই ওদের সামনে।

ইয়াদের কথা শুনে ইমা ফিক করে হেঁসে দিলো, তা দেখে ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো, হাসি বন্ধ করে ইয়ানার কাছে যাও।

ইমা হাসি থামিয়ে ইয়াদকে একটা ভেংচি কেটে ইয়ানার রুমে যাওয়ার জন্য বের হয়ে গেলো। ইমা যেতেই ইয়াদ মুচকি হাঁসলো। মেয়েটা এখন অনেকটা নরমাল হয়ে গেছে তবে ইয়াদের লাই পেয়ে দুষ্টুমিগুলো অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ এতো সহজে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে না, ইয়াদও পারেনি এখনো, এতটা পরিবর্তন হতে। তবে সে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবু মাঝে মাঝে আগের রুপ ফিরে আসে তার। ইমা ইয়াদকে ভয় পেলেও বুঝতে দেয় না। এমন ভাব করে যেনো ইয়াদের রাগে তার কিছুই আসে যায় না। ইয়াদ সেটা বুঝতে পেরে আড়ালে হাসে।

আপু আসবো ?

দরজায় ইমার গলা শুনে ফোনটা দ্রুত লুকিয়ে ফেললো ইয়ানা আর চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।

হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে বললো, হ্যাঁ ভাবি আসো।

ইমা গিয়ে দেখে ইয়ানা কিছুই করেনি এমনই বসে আছে তা দেখে ব্যস্ত গলায় বললো, এ কী আপু তুমি তো এখনো রেডি হওনি। উনারা তো এখনই চলে আসবে আর তোমার ভাইয়াও আমাকে পাঠালো তুমি রেডি হয়েছো কিনা দেখতে।

ইয়ানা নিচুস্বরে বললো, এখনই রেডি হয়ে নিচ্ছি।

ইয়ানার গলার আওয়াজে ইমার ভ্রু কুঁচকে গেলো, যে কেউ বুঝতে পারবে ইয়ানা কান্না করছিলো।

ইমা ব্যস্ত গলায় বললো, আপু তোমার গলা এমন লাগছে কেনো ? তুমি কী কান্না করেছো ?

ইয়ানা থতমত খেয়ে বললো, ক,,কই না তো, কান্না করবো কেনো ?

আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করে লাভ নেই আপু, আমি ভালো করেই চিনি তোমাকে। তুমি কী উনাদের সামনে যেতে চাইছো না ? অন্য কাউকে ভালোবাসো তুমি ?

ইমার কথা শুনে ইয়ানা চমকে উঠে ইমার দিকে তাকালো আর অস্থির গলায় বললো, না না তেমন কিছু না। আসলে বিয়ে হয়ে গেলে ভাইয়াকে ছেড়ে, তোমাদের সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে তাই কষ্ট হচ্ছিলো।

তুমি দেখছি খুব বোকা, দেখে গেলেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি, বোকা ?

ইয়ানা কিছু না বলে মলিন হাসলো। ইমা ইয়ানাকে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো। তারপর নিজের হাতেই সাজিয়ে দিতে লাগলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা যদি ইমার মনের কান্নাটা দেখতে পেতো। ইয়ানা অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি আটকে রেখেছে। এদিকে ইশান ব্যস্ত সব ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা দেখতে। একমাত্র বোনকে দেখতে আসবে কোনো অভিযোগ যেনো করতে না পারে।

সব ঠিক আছে ইশান ?

ইশান পেছন ফিরে ইয়াদকে দেখে মুচকি হেঁসে বললো, হ্যাঁ ভাইয়া সব ঠিকঠাক।

ইয়াদ হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে বললো, তুই এমন হিরো সেজে বসে আছিস কেনো ? দেখ হিরো সেজে লাভ নেই, রেহান তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ওর কোনো ছোটবোন নেই।

কথাটা বলে ইয়াদ দুষ্টু হাসলো আর ইশানের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। চোখের সামনে কথার কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে তাকানো সেই মুখটা ভেসে উঠলো। নিজের অতীত ইশানের পথ আঁটকে দিয়েছে সে আর কথাী সামনে যায়নি গত তিন মাসে। তবে দূর থেকে দেখে গেছে আর আল্লাহর কাছে চেয়েছে ওর যারই হোক যাতে সুখী হয়।

ইয়াদ ইশানের পিঠ চাপড়ে বললো, কোন চিন্তায় ডুবে গেলি ? চিন্তা করিস না ইয়ানার পর তোর জন্যেও খোঁজে বের করবো কাউকে।

ইশান মুচকি হেঁসে বললো, খুঁজতে হবে না।

ইয়াদ সন্দেহ নিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে বললো, কেনো নিজেই খুঁজে রেখেছিস নাকি ?

ইশান মলিন হেঁসে বললো, না তেমন কিছুই না। এসব বাদ দিয়ে বলো উনারা কখন আসবে ?

রেহান আমাকে কল দিয়েছিলো বাসা থেকে বের হওয়ার সময়। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে,,,

ইয়াদের কথা শেষ হওয়ার আগেই ডোরবেল বেজে উঠলে ইয়াদ গিয়ে দরজা খোলে দিলো। রেহানরা চলে এসেছে। রেহান ভেতরে এসে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরলো।

ইয়াদ মুচকি হেঁসে রেহানের পিঠে হাত রেখে বললো, কেমন আছিস ইয়ার ?

রেহান ইয়াদকে ছেড়ে বললো, এই যে যেমন দেখতে পাচ্ছিস। তুই কেমন আছিস সেটা বল ?

ইয়াদ হাসিটা বজায় রেখে বললো, আলহামদুলিল্লাহ সব দিক থেকে ভালো রেখেছে উপরওয়ালা।

রেহান ইশানের দিকে তাকিয়ে বললো, এটাই বুঝি ইশান ?

ইয়াদ ইশানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো, হুম এটাই ইশান।

রেহান এগিয়ে গিয়ে ইশানকে হাগ করলো আর বললো, তুমি আমাকে চেনো না বাট আমি তোমাকে চিনি। তার কারণটা অন্য একদিন বলবো।

রেহানের মা মুখ ফুলিয়ে বললো, এটা কিন্তু ঠিক হলো না ইয়াদ। বন্ধুকে পেয়ে আঙ্কেল আন্টিকে চোখেই পরছে না।

ইয়াদ লজ্জিত হয়ে বললো, আম,, সরি আন্টি আসলে এতোদিন পর দেখা তো তাই আর কী ,,,

রেহানের মা ইয়াদের মাথা হাত রেখে বললো, মজা করলাম তো, আমরা কিছু মনে করিনি।

ইয়াদ মুচকি হেঁসে রেহানের বাবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিলো। সবার সাথে অনেক কথাবার্তা হলো। ইয়াদ আর রেহানের কথায় বুঝা যাচ্ছে তারা অনেক পুরনো ফ্রেন্ড। কথার মাঝেই ইয়াদ একজন সার্ভেন্টকে ডেকে বললো ইয়ানা আর ইমাকে দ্রুত নিচে আসতে। হালকা নাশতা করছে আর গল্প করছে সবাই। ইয়ানাকে দেখতে আসছে বললে একটু ভুল হবে, কারণ রেহানের পরিবার ইয়ানাকে আগে থেকেই ভালো করে জানে। এখানে মূলত বিয়ের ডেট ফিক্স করা হবে। ইমা ইয়ানাকে নিয়ে সবার সামনে আসলে ইয়ানা মিষ্টি করে সালাম দিলো ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে। ইয়ানাকে নিয়ে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসিয়ে দিলো ইমা আর নিজে গিয়ে ইয়াদের পাশে বসলো কিছুটা দূরত্ব রেখে।

রেহানের মা বললো, ইয়াদ তুমি কিন্তু চিটিং করেছো চুপচাপ বিয়ে করে নিয়ে। তবে মাফ করে দিলাম বউমা দেখে।

ইয়াদ মুচকি হাঁসলো তার কথায় আর ইমা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। রেহান আড়চোখে বারবার ইয়ানাকে দেখে যাচ্ছে, তবে ইয়ানা এখনো কোনো দিকে তাকায়নি, তার দৃষ্টি ফ্লোরে। শরীরটা এখানে থাকলেও মনটা এখানে নেই। কী হচ্ছে, না সেটা দেখছে আর না বুঝতে পারছে। রেহানের মা রেহানের অবস্থা বুঝতে পেরে দুজনকে আলাদা কথা বলতে বললো। রেহানের মা বলার প্রায় সাথে সাথে রেহান উঠে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো তবে ইয়ানা বসেই আছে। আসলে সে কিছুই খেয়াল করেনি এখানে কী হচ্ছে। ব্যাপারটা কেউ খেয়াল করার আগেই ইমা ইয়ানার হুঁশ ফেরালো আর ছাঁদে যেতে বললো। রেহান এই বাড়িতে আগে একবার এসেছিলো আর থেকেও ছিলো দুতিনদিন তাই বাড়িটা তার চেনা। ছাঁদে গিয়ে চারপাশ ঘুরে দেখতে লাগলো রেহান। আগের থেকেও অনেকটা সুন্দর হয়ে গেছে ছাঁদটা।

৩৫.
কেমন আছো ইয়ানা ?

পরিচিত গলা শুনে চমকে পেছন ফিরে তাকালো ইয়ানা। ছাঁদে এসে কোনোদিকে না তাকিয়ে একপাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো। তখনই পেছন থেকে পরিচিত গলাটা শুনতে পেলো।

পেছনে দাঁড়ানো মানুষটা দেখে ইয়ানার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো।

রেহান ইয়ানার অবস্থা দেখে ফিক করে হেঁসে বললো, হা বন্ধ করো মশা ঢুকে যাবে তো।

বিষ্ময়কর কণ্ঠে বললো, রেহান ভাইয়া তুমি এখানে ?

রেহান ভাব নিয়ে বললো, হুম আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম আসবো আর কথা রাখতে চলেও এসেছি।

ইয়ানার বিস্ময় এখনো কাটেনি। ইউকে পাশাপাশি বাসা ছিলো রেহান আর ইয়াদের। এই একটা মানুষের জন্য ইয়ানাও ইয়াদের মতো রোবটে পরিণত হয়নি। সবসময় ইয়ানাকে হাসিখুশি রাখতো রেহান। রেহানের মা বাবাও ইয়ানাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো। বাসায় থাকলে বেশির ভাগ সময় রেহানদের বাসায় থাকতো ইয়ানা। ইয়াদ ইউকে গিয়ে রেহানের ক্লাসেই ভর্তি হয়েছিলো। ইয়াদ যেমন গম্ভীর রেহান ঠিক ইয়াদের বিপরীত। রেহান ইশানের মতোই হাসিখুশি আর সহজ সরল আর রেহান পেশায় ডক্টর। ইয়াদ একমাত্র এই রেহানের সাথে একটু ক্লোজ, রেহান ইয়াদের কষ্টের সময়ের সাথী ছিলো। সেদিন ইয়াদের জন্মদিন পালন করতে রেহানও ইয়াদের সাথে বাংলাদেশে এসেছিলো। রেহানের পুরো পরিবার ইউকে সেটেল্ড হয়ে গেছে অনেক আগে, রেহানের জন্মই হয়েছে ইউকে। ইয়াদ ইয়ানাকে নিয়ে ইউকে ব্যাক করার পর নিজেকেই সামলে উঠতে পারছিলো না। ইয়ানার কী খেয়াল রাখবে। সেই সময়টাতে ইয়ানার খেয়াল রেখেছে রেহান। অবশ্য ধীরে ধীরে ইয়াদ বোনের প্রতি যত্নশীল হয়ে উঠে তবে রেহানও সবসময় ইয়ানার খেয়াল রাখতো। ইয়ানা বড় হবার পর একদিন রেহানকে বলেছিলো, সে কেনো এতো খেয়াল রাখে ইয়ানার। উত্তরে রেহান বলেছিলো নিজের বউ নিজের হাতে মানুষ করে নিচ্ছি যাতে পরে কষ্ট করতে না হয়। ইয়ানা কথাগুলো কখনো সিরিয়াসলি নেয়নি তবে আজ বুঝতে পারছে রেহান মজার ছলে বললেও মনের কথাই বলে গেছে।

ইয়ানা চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে বললো, আমি কিছু বুঝতে পারছি না রেহান ভাইয়া, আপনারা বাংলাদেশে কবে আসলেন আর এসব কী ?

রেহান রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বললো, বাংলাদেশে এসেছি তাও প্রায় একমাস হতে চললো। একেবারে চলে এসেছি তো তাই সব ঠিকঠাক করতে একটু সময় লাগলো।

ইয়ানা অবাক হয়ে বললো, একেবারে চলে এসেছো মানে ?

রেহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ আসতে হলো তোমার জন্য। ইয়াদ নিজের বোনকে ছাড়া থাকতে পারবে না, আমি ইউকে থাকলে আমার সাথে বিয়ে দেবে না। তাই আর কী করার চলে এলাম।

ইয়ানা স্তব্ধ হয়ে গেছে রেহানের কথা শুনে। শুধু তার জন্য সব ছেড়ে এখানে চলে এসেছে। সেখানে রেহানের কতো ভালো একটা ক্যারিয়ার ছিলো। এই মুহূর্তে ইয়ানার মাথা থেকে আরমান নামটা পুরোপুরি বের হয়ে গেছে। তার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রেহানকে নিয়ে।

ইয়ানা বোকার মতো বললো, আমি এখনো কিছুই বুঝতে পারছি না,,, আপনি আমার,,,,

রেহান ইয়ানাকে ইশারায় চুপ করতে বললো আর নিজে মুচকি হেঁসে বললো, তোমার সব প্রশ্নের উত্তর একটাই। ভালোবাসি তোমাকে, দিন বা মাস ধরে নয়। তোমাকে ভালোবাসি সেটা অনেকগুলো বছর ধরে। ইয়াদের কাছে নিজেকে তোমার যোগ্য প্রমাণ করতে কোনোদিকে না তাকিয়ে ক্যারিয়ারে ফোকাস করেছি পুরো দমে। নিজেকে প্রমাণ করার পরই নিজের প্রাপ্যটা বুঝে নিতে এসেছি।

ইয়ানা গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। ইয়ানার প্রায় মনে হতো রেহান তাকে ভালোবাসে কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হতো সে মজা করেছে। রেহানের আচরণে বুঝা যেতো না সে কোনো বিষয়ে সিরিয়াস আর কোনো বিষয়ে উদাসীন। ইয়ানার কী বলা উচিত বা করা উচিত ইয়ানা বুঝতে পারছে না।

রেহান বুঝতে পারলো ইয়ানার মনের অবস্থা আর তাই বললো, আজ বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে এসেছিলো বাবা-মা।

ইয়ানা চমকে তাকালো রেহানের দিকে, মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

রেহান মুচকি হেঁসে বললো, ভয় নেই আমি তোমাকে সময় দিয়ে যাচ্ছি। তবে উত্তরটা যেনো হ্যা হয় সেটা খেয়াল রেখো।

রেহান চলে যেতে গিয়ে আবার থেমে গেলো আর ইয়ানার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, আজ তোমাকে ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছে যেমনটা সবসময় আমি নিজের মনে সাজাতাম তোমাকে।

রেহানের ফিসফিস গলার আওয়াজ ইয়ানার কানে লাগতেই সারা শরীর কেঁপে উঠলো অজানা কারণে। রেহান নিচে চলে গেলো আর ইয়ানা ছাঁদের ফ্লোরে বসে পড়লো। কী করবে সে এখন ? একটা মানুষ তাকে এতবছর আগলে রেখেছিলো, এতগুলো বছর ধরে ভালোবেসে গেছে নিঃস্বার্থভাবে। তাকে কীভাবে ফিরিয়ে দেবে ইয়ানা আর অন্যদিকে তার মনে অন্যকারো বসবাস। ইয়ানার হঠাৎ আতিকের কথা বলে পরে গেলো। হিসাব মিলিয়ে দেখলো আজ থেকে অনেকগুলো বছর আগে যেখানে আতিক দাঁড়িয়ে ছিলো আজ সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে রেহান। পার্থক্য খব একটা খোঁজে পেলো না। কলিকে না পেয়ে আতিকের জীবনটা আজও ছন্নছাড়া ভাবে চলছে। এখনো প্রতিটা মুহূর্তে চোখের পানি ফেলে মানুষটা।

৩৬.
ইয়ানা আর নিচে নামেনি ছাঁদেই বসেছিলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে তবু ইয়ানার কোনো হেলদোল নেই। খোলা পাশটায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে চুপচাপ আর দৃষ্টি আকাশের দিকে। ইয়ানা কী করবে বুঝতে পারছে না।৷ চিন্তায় এতোটাই মগ্ন ইয়াদ কখন তার পাশে এসে বসেছে টেরই পায়নি।

নে কফিটা ধর।

কারো গলার আওয়াজে চমকে উঠে পাশে তাকালো ইয়ানা। ইয়াদের হাতে দু কাপ কপি তার মধ্যে এক কাপ ইয়ানার দিকে এগিয়ে দিয়েছে।

ইয়ানা কফির কাপটা নিয়ে বললো, তুমি কখন এলে ভাইয়া ?

ইয়াদ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো, তুই যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলি তখন।

ইয়ানা কিছু বললো না চুপচাপ কফি খেতে লাগলো আর ইয়াদ একটু নড়েচড়ে বসে বললো, রেহানকে দেখে তুই অবাক হবি আগেই জানতাম। তাই আমি তোকে আগেই জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু রেহান বললো তোকে সারপ্রাইজ দেবে তাই আর বলতে দেয়নি। ইয়ানা আমি জানি তোর কারো সাথে কোনোরকম সম্পর্ক নেই। তাই চেয়েছিলাম আজই ডেট ফিক্সড করতে কিন্তু রেহানের কী হলো জানি না, নিচে গিয়ে বললো কিছুদিন পরে করার জন্য।

ইয়ানা রেহান অনেক ভালো ছেলে। আমি নিজের পর একমাত্র ওর কাছেই তোকে নিরাপদ মনে করতাম, তাই ওর সাথে থাকলে নিশ্চিন্তে থাকতাম। রেহান তোকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে আর সেটা প্রথমে তোকে না বলে আমাকে বলেছিলো। আমি ওকে বলেছিলাম আমার বোনের যোগ্য হিসাবে নিজেকে তৈরি করতে পারবে আমি নিজে তোকে ওর হাতে তুলে দিবো। ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে তবেই এসেছে তাই এবার আমার কথা রাখার পালা। ও তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে আর আঙ্কেল আন্টি তোকে কতটা ভালোবাসে সেটা আমার থেকে তুই বেশি ভালো জানিস। জীবনে বাবা-মায়ের ভালোবাসা না পাওয়ার আফসোস পূরণ করে দেবে ঐ মানুষ দুটো। আর সবদিক বিবেচনা করেই আমি রাজি হয়েছি, তবুও তোর যদি রেহানকে পছন্দ না হয় তাহলে আমাকে জানাস। জীবনটা তোর তাই আমি কখনোই তোর উপর কিছু চাপিয়ে দেবো না, জোর করে। প্রয়োজনে রেহানের কাছে মাফ চেয়ে নিবো তোর খুশির জন্য, এবার সিদ্ধান্ত তোর।

ইয়াদ উঠে চলে গেলো আর ইয়ানা সেখানেই বসে রইলো। ভাইয়ের বলা প্রত্যেকটা কথা ভাবতে লাগলো।

চলবে,,,
চলবে,,,,
চলবে,,,,,
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here