তুই আমারই থাকবি পর্ব ২০+২১

পর্ব ২০+২১
#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_20
!
‘সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি,উনি আমার পা থেকে কিছুটা দূরে ঘুমিয়ে আছেন।উনার মাথাটা ঠিক আমার পায়ের নিচে,আর ঘুমের মধ্যে উনি উনার মাথা চুলকাচ্ছেন।দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো। দেখি,মাথায় উকুন আছে কিনা…আমি আবার ভালো উকুন আনতে পারি।আমার জানু আনিকা ইবনাত আমাকে উকুন আনার টেকনিকটা শিখিয়ে দিয়েছে।যাইহোক রাতে উনি আমার পা টিপে দিয়েছেন,এই এত বড় ঋণের বোঝা উকুন এনে শোধ করে দিই!আমার মহান মিনসেটা যে…….
!
কিন্তু ফাটা কপাল!যেই গেলাম উনার মাথার কাছে অমনি উনি লাফিয়ে উঠলেন।চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানায় সোজা হয়ে বসে বললেন,কী?পা ব্যাথা কমেনি?জ্বর কমেনি এখনো? আসলে চোখটা লেগে গিয়েছিল হঠাৎ করে।
!
-আমার জ্বর এখন আর নেই।পা ব্যথা নিরাময় হয়ে গেছে।এত ভালো ঔষধ থাকতে পা ব্যথা আর থাকার সাহস পাবেনা।
!
উনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,ঔষধ? কোথায় পেলে?আমি তো পা ব্যথার কোনো ঔষধ আনিনি…
!
-এই ঔষধ সেই ঔষধ না!
!
–উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,এটা আবার কেমন ঔষধ তাহলে?
!
-আপনি বুঝবেন না!
!
-কেন?আমি কেন বুঝবো না?আমাকে কী বোকা মনে হয়?
!
-না,ভ্যাবলা মনে হয়!
!
-হোয়াট? ভ্যাবলা মানে?অবাক হয়ে…..
!
-জানি না।বলেই বিছানা থেকে উঠে সোজা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। উনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। আর আমি উনাকে বোকা বানিয়ে বহুত আরাম পেলাম।
!
!
!
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুলাম। বেরিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।উনি আমার জন্য ভাত,মাছ,মাংস,ডাল,আলুভাজি, অমলেট আর দু-তিন রকমের আচার নিয়ে এসেছেন।আমি অবাক হয়ে বললাম,এসব কি?
!
উনি ক্রাশমার্কা হাসি দিয়ে বললেন,এভাবে বলে না সোনাপাখি,এভাবে বলতে হয় না।আমার ছোট সোনাপোকাটা জ্বর নিয়ে নিচে ব্রেকফাস্ট করতে যাবে,সেটা আবার হয় নাকি?
!
আমি বেক্কলের মতো বললাম,সোনাপাখি, সোনাপোকা এগুলো কে?
!
উনি এবার ব্রাশমার্কা হাসি দিয়ে বললেন,ওগুলো আমার বউয়ের নিকনেইম।তারপর লাজুক ভঙ্গিতে বললেন,সারারাত জ্বরে কষ্টপাচ্ছিল তাই আরকি এই ব্যবস্থা! সব খাইয়ে ছাড়বো আজ!
!
আমি উনার মতলব বুঝতে পেরে বললাম,তাহিলে আপনি আপনার সোনাপোকা বউকে খাওয়ান আমি আসি….বলেই দরজার দিকে দৌড় দিতে গিয়ে দেখি,ওটার উপরের ছিটকিনি লাগানো। আমি তো সারাজীবনেও নাগাল পাবো না….
!
পেছনে ঘুরে খেলাম ধাক্কা গুন্ডাটার সাথে,আর উনি সুযোগ বুঝে কাজ হাসিল করে নিলো,মানে ঠাস করে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বসলো। আমি চেহারা কালো করে বললাম,আসলেই আপনি বখাটে…..
!
উনি বাঁশমার্কা ডাটিয়াল হাসি হেসে বললো,সোনাপোকা এত দুষ্টুমু করে না।আসো,খাবার শেষ করো।বলেই টানতে টানতে আমাকে নিয়ে গেলেন।
!
-আমি এত খাবার খাবো না।
!
-খেতেই হবে।রেগে…..
!
-খাব না!
!
-একগুয়েমির ফল ভালো হবে না।সো চুপ থাকো।
রেগে
!
-বুঝলাম কাহিনী করে লাভ নেই।বললাম,আপনি ভাত, মাছ এনেছেন কেন?
!
-আমার ইচ্ছে!পকপক বন্ধ করো।রেগে
!
-আসলে……
!
-আহ!বলেছি পকপক অফ রাখো।নইলে মজা দেখাবো….তাড়াতাড়ি খাবারগুলো শেষ করো। রেগে
!
-আমি উনার চিৎকারে ভয় পেয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম।আর উনি একদৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়েই আছেন।এভাবে তাকিয়ে থাকলে কী খাওয়া যায়?আমি বেশ আনইজি ফিল করলাম।
!
!
!
-শেষমেশ বলেই ফেললাম, এই!আপনি অন্যদিকে তাকান।
!
-হোয়াট?
!
-মানে,আমার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকান!
!
-না।
!
-আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,কেন?
!
-আমার সোনাপোকা বউয়ের দিকে আমি তাকাবো,তাতে আমি কারো কথা শুনবো না।তুমি খাও…
!
-আমি এভাবে খেতে পারছিনা।এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কি খাওয়া যায়?এমন করছেন কেন?
!
-সেটা তোমার ব্যাপার!আর আমি কাউকে এক্সকিউজ দেবো না!
!
-আমার কথা বলার ইচ্ছেটাই চলে গেলো। উনার কান্ডকারখানা দেখিয়া জ্ঞান হারাইবার দশা আমার।গিরগিটিও এতবার নিজের রঙ পাল্টায় না।উনি এই ভালো তো এই খারাপ।বুঝলাম না, উনার কি মানসিক প্রবলেম আছে?আজব!যদি মানসিক প্রবলেম থাকে তাহলে?হায়……শেষমেশ মানসিক রোগীর সাথে আমার বিয়ে হলো!এই দুঃখ আমি কই রাখি?ওয়্যারড্রোবের ভেতর রাখব নাকি?রাখার জায়গাও নাই!
!
!
!
বিকেলবেলা।
!
সারাদিন আমি আর মামানি বসে বসে গল্প করলাম সানাচাচীর সাথে।জ্বর আর নেই,মামানিতো জ্বরের কথ শুনে গুন্ডা আবরার আগুনকে বকে দিলেন ইচ্ছেমতো। সেই রাগে উনি বাসা থেকে বেরিয়ে সাদাফ ভাইয়ার বাসায় বসে আছেন। যাইহোক, এখন আমি সুস্থ। তাও মামানি একটু পরপর গায়ে হাত দিয়ে দেখছেন,জ্বর আছে কিনা!
!
আর মামা যখন শুনলো এই নিউজটা মামানির কাছ থেকে,তখনই ডিসিশন নিলো,আমাকে হসপিটালে এডমিট করতে হবে।
!
আর আরহাম ভাইয়া,উনি রীতিমতো খাবারের আয়োজন করেই চলেছেন।একটু পরপর জিজ্ঞেস করছে,কি খাবো,কি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে,বমি আসছে কিনা?নানান প্রশ্নের ভারে আমার জ্বর মামা ভয়েই গা ঢাকা দিয়েছে!ব্যাটা আর ফেরত আসবে কিনা সন্দেহ!
!
!
!
সন্ধ্যার কিছু পর!
!
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। রিসিভ করে আসসালামু আলাইকুম বলতেই ওপাশ থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ এলো। বুঝলাম না কে হতে পারে।যখন বুঝলাম,তখন আমি এতটাই অবাক এবং…….. ‘
!

#Part_21
!
‘-আমি এতই অবাক হলাম যে,বলার বাইরে!ওপাশ থেকে সাদাফ ভাইয়া হ্যালো হ্যালো বলছেই!আমি বললাম,উনি কোথায়?
!
-আমার পাশে বসে আছে।
!
-তাহলে কান্না করে কেন?বুইড়া বয়সে ভীমরতি, যত্তসব!
!
-আরে বকো না।আমার জানের জিগার কান্নাকাটি করে চোখমুখ লাল করে ফেলেছে!সাদাফ ভাইয়া বলল,
!
-রাখেন,এসব ঢং।বাসায় আসতে বলুন উনাকে!
!
-ও তো বাসায় যেতেই চাচ্ছে।ইনফেক্ট নতুন অসুস্থ ওয়াইফ বাসায় রেখে ওর মন এখানে টিকছে না।
!
-তাহলে আসছে না কেন?
!
-আরে আন্টি নাকি ওকে তোমার অসুস্থতার জন্য বকাঝকা করেছে।এখন আন্টি যতক্ষণ ওকে বাসায় যেতে না বলবে ততক্ষণ ও যাবে না।ওর এতটাই আত্নসম্মান!আন্টি স্রেফ ওকে বাসায় যেতে মানা করে দিয়েছে!
!
-ওহ…এতই সেলফ -রেসপেক্ট যখন তখন আবার কান্নাকাটি করে কেন?লজ্জা করে না?
!
-আহ!তুমি বাচ্চা নাকি?বুঝো না?সাদাফ ভাইয়া বলল,
!
-আমি অবাক হয়ে বললাম,কী বুঝি না?
!
-উনি আমতাআমতা করে বললেন,কিছুনা।আচ্ছা রাখি!গুড নাইট বলেই ফোন কেটে দিলেন সাদাফ ভাইয়া।
!
আমিও ফোন রেখে দিয়ে ব্যলকুনিতে গেলাম।বুঝলাম না,গুন্ডা আবরারের প্রবলেম কী?আজব মানুষ। এতবড় গুন্ডামী দেখায় সে নাকি এখন মায়ের ভয়ে বাসায় আসতে পারছেনা।গিরগিটি একটা,জ্বালিয়ে খেলো।আমার এখন খুব ইচ্ছে করছে ওনার কান্নামাখা লাল ফেইস দেখতে!হাউ কিউট…….
!
!
!
পরিষ্কার আকাশ বিকেলের দিকে ছিলো। কিন্তু এই গভীর রাতে এখন সেটা বর্ষার মেঘলা আকাশ হয়ে গিয়েছে।আকাশে চাঁদ থাকলেও সেটা মেঘের ফাঁকে উকিঝুকি দিচ্ছে।চাঁদের আলো ছড়াচ্ছে খুব অল্প অল্প।শীতল বাতাসে গাছের পাতার শনশন শব্দ বেশ জোরালো। ব্যলকুনিতে বসে আছি।হাজারো ভাবনা মনে উঁকি দিচ্ছে।হাহ,,,পৃথিবী কত সুন্দর! এই ঠান্ডা হাওয়া শরীরে এক ধরণের পবিত্র শিহরণ বইয়ে দেয়।আমার কাছে মনে হয়,বেহেশতের বাতাস এমন অনুভূতি জাগানো!
!
মনে খালি রোমান্টিক ভাবনা আসছে।ভাবলাম একটা গান গাই,দরজাও তো ভেতর থেকে লাগানো। আর আমি ব্যলকুনিতে সো কেউ শুনবে না।যদিও মোটামুটি মধুর সুরেলা গলা আমার তাও আড়ালে গান গাইতেই ভালোবাসি!তো শুরু করি,,,,
!
‘কে আবার বাজায় বাঁশি,এ ভাঙ্গা কুঞ্জবনে?
হৃদি মোর উঠলো কাঁপি,চরণের সেই রণনে!
কোয়েলা ডাকলো আবার,যমুনায় লাগলো জোয়ার!
কে তুমি আনিলে জল ভরি,মোর দুই নয়নে?’
!
এটুকু গেয়ে নিজেই নিজেকে বললাম,বাহ!খুব সুন্দর গলা তোর।চাইলেই বিশ্বের নামকরা গায়িকা হতে পারবি।বাহ!বাহ!সবাই আসবে অটোগ্রাফ নিতে।আমি গাড়ি থেকে সিনেমাটিক স্টাইলে নামবো।আর আমার ভক্তরা লাইন করে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েট করবে।ওয়াও সো নাইস!বাট সবাইকে অটোগ্রাফ দিলেও এই গুন্ডা,ছিঁচকাদুনে আবরার আগুন চৌধুরীকে কখনোই অটোগ্রাফ দেব না।যত্তসব….উনার কথা মনে হতেই মুড অফ হয়ে গেলো।
!
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার মুখের দিকে উনার সেই ক্রাশমার্কা বড় পিকচারটা যেন তাকিয়ে আছে।আমিও ভেংচি কেটে শুয়ে পড়লাম।তাও ছবিটা যেন বলছে,সোনাপোকা বউ আমার!এতরাতে কেউ ঘুমায়?দাঁড়াও ভুল যখন করেছ তখন নো অপশন। তোমাকে এর পানিশমেন্ট পেতেই হবে।আর এর শাস্তি হলো,আমি তোমার পেটের উপর ঘুমাবো!বলেই ডাঁটিয়াল হাসি হাসলেন উনি।আমার মনে এলো,
!
‘প্রাণ দিতে চাই,মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান, সারাক্ষণ দিতে চাই,তোমাকে
—— ——–
স্বপ্ন সাজাই,নিজেকে হারাই
দুটি নয়নের ও…….. ‘
!
!
!
!
সকালবেলা।ঘুম থেকে উঠে উনাকে পাশে দেখতে না পেয়ে খুশিই হলাম।যা বন্ধুর বাসায় গিয়ে থাক।আমি এতদিন শান্তিতে কাটাই।এসব ভাবতেই মন ভালো হয়ে গেলো।যাইহোক,ফ্রেশ হয়ে ব্যলকুনিতে গেলাম।ফুলের গাছগুলোতে পানি দিলাম।টবে লাগানো বিভিন্নরকম ঘাসফুল, ক্যাকটাস, এ্যালোভেরা,গোলাপ আর অজানা নানা ফুল।ওগুলো বিদেশী ফুলগাছ।আবরার মিয়ার ফেভারিট ফুল, যত্ন না নিলে আস্ত কাচা খাবে আমায়,সাথে চিলি সস লাগিয়ে।কিন্তু এইভয়ে কাজ করছিনা আমি।গাছগাছালি আমি খুব ভালোবাসি,তাই করছি।
!
আজ ও সারাদিন সানাচাচী,মামানি,ভাইয়া, মামু ওদের সাথে কাটালাম।খুব মজা করে।আবরার মিয়াকে মামানি বাসায় আসতে না করায় উনি ওখানেই রইলেন।
!
তিনিদিন পর।রাতে রুমে সাউন্ডবক্সে গান লাগিয়ে একটু ড্যান্স করছিলাম।এমন সময় কে যেন পেছন থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকাতেই………’
!

চলবে……

(ভালো লাগলে নেক্সট দেবো,ইনশাল্লাহ 💜)

(ছোট হয়েছে প্লিজ কেউ কিছু বলিয়েন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here