তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -০৯

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
৯.

আমি গান গাইতে গাইতেই হঠাৎ কারোর পায়ের শব্দ পেলাম।আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালাম।এখনই এই ঘর বন্ধ করতে হবে নাহলে যে ছাদে আসছে সে এই ঘরে ঢুকে যাবে আর নিজের এত বছর ধরে লুকিয়ে রাখা সত্য সব প্রকাশ পেয়ে যাবে।আমি তাড়াতাড়ি করে গিটার নিয়ে সেটা গিটারের ব্যাগে রেখে গিটার কাধে ঝুলিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি চিলেকোঠার বাইরে এসে চিলেকোঠার ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলাম।দরজা লাগিয়ে তালা লক করে যেই না চাবি পকেটে ঢুকালাম ওমনি দেখি নিভ্র ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি।আমি জানি ওর এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ কি। ও আমাকে গান গাইতে শুনেছে।

আমি কিছু না বলেই ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম তখনই আমার হাত ধরে আমায় নিজের সামনে নিয়ে আসে আর বলে,
নিভ্র: তুই গান গাইছিলি এত বছর পর?অনেক বছর তো গান গাস না তাহলে আজ হঠাৎ? এনি প্রবলেম?
ভাইয়ার কথায় আমার এবার রাগ উঠলো।নিজেকে সামলাতে না পেরে বললাম,
নিদ্রা: এখন কি গানও তোমায় বলে গাইতে হবে?

আমায় কথায় মনে হলো নিভ্র ভাই থতমত খেয়ে গেছেন।মুখটা কাচুমাচু করে আমতা আমতা করে বললেন,
নিভ্র: না মানে এমনই জিজ্ঞেস করলাম।তুই তো অনেক বছর হলো এই ঘরে আসিস না,আজ হঠাৎ করে এলি তাই আর কি।
নিদ্রা: হ্যাঁ তো আমার ইচ্ছা হইসে তাই আসছি।এটা যেমন তোমার বাড়ি তেমনি আমারও বাড়ি তাই আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে আসতে পারী।এর জন্য আমাকে কারোর পারমিশন নিতে হবে না বলেই আমি আর কথা না বাড়িয়ে ছাদ ছেরে নিজের ঘরে চলে এলাম।

নিভ্র নিদ্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
নিভ্র: তুই যদি বুঝতি আমি কেন এত তোর উপর নজরদারি করি তাহলে এই দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি হতাম রে রাত।তুই বুঝেও বুঝিস না যে #তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা যাকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ডও চলে না। বেচেঁ থাকার জন্য প্রতিটা ক্ষণ আমার তোকে প্রয়োজন কারণ তুই আমার নিত্যদিনের অভ্যাস যেটা আমি কখনোই ছাড়াতে পারব না।অদ্ভুত তাইনা? আমি তোকে চাই কিন্তু তুই বুঝিস না আর যে আমাকে চায় তার চাওয়া আমি বুঝতে পেরেও কিছু বলতে পারিনা কারণ আমি তো তাকে চাইনা।

আমি নিজের ঘরে এসে গিটার কাধ থেকে নামালাম। গিটারও বাবার দেওয়া আর সেটা আমার অষ্টম জন্মদিনে।বাবা কে গিটার বাজাতে দেখে শখ করেছিলাম আমারও গিটার চাই তখন বাবা আমায় শখ করে গিটার কিনে দে আর গীটার বাজানোও শিখায়।অবশ্য গিটার কিনে দেওয়া নিয়ে মা তুমুল কান্ড করেছিল কারণ আমি অনেক ছোটো বাচ্চা ছিলাম তখন তবে এখন আমি বড় হয়েছি। ছোটো থাকতে কাছের মানুষদের আগলে রাখতে জানতাম কিন্তু যত বড় হচ্ছি তত বাধ্য হচ্ছি কাছের মানুষের বাঁধন হালকা করে দিতে।

গিটার আমার ড্রেসিং টেবিলের পাশের সেলফে রেখে বাথরুমে ঢুকলাম।ঠিক করলাম ফ্রেশ হয়ে সাবুর বাসায় যাবো। সাবু হলো আমার সেই স্কুল জীবনের ফ্রেন্ড।নিরব, তন্দ্রা আর অভ্রর পরে ওর জায়গা সবার আগে।ওর পুরো নাম ইশকিয়া সাবা।আমি ভালবেসে ওকে সাবু ডাকি যার উপর একমাত্র কপিরাইট আমার যেন আর কেউ ওকে এই নামে ডাকতে না পারে।এমনিতে আমাদের পরিচিত সকলে ওকে ইশকি ডাকে শুধু আমি সাবু ডাকি।

ফ্রেশ হয়ে একটা লং কুর্তি সাথে ম্যাচিং করে মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে নিলাম আর চুলগুলো বেনি করে ফেললাম। হাতে কিছু রুপোর চুরি পরে নিলাম কারণ রুপোর গয়না আমার খুব পছন্দ।আমি রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই শাশুড়ি মাকে সাহায্য করতে চলে এসেছে নীলা। শুনেছে বিয়ের পর নাকি মেয়েদের সকাল সকাল উঠে কাজ করতে হয় কারণ তখন তার উপর অনেক বড় দায়িত্ব থাকে আর এমনিতেও আজ শশুর বাড়িতে তার প্রথম দিন তাই তাড়াতাড়ি তো উঠতে হবেই।

নীলা আর তার শাশুড়ি মিসেস রামিসা সকলের জন্য ব্রেকফাস্ট সাজাচ্ছিলেন টেবিলে।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই চলে আসবে খেতে। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় হাত চালাতে হবে। এমনিতেও আজ বিয়ের রিসেপশন আছে তাই ঘরের সব কাজ শেষ করে রাখতে হবে যাতে বের হওয়ার সময় ঝামেলা না বাঁধে।

আমাকে নামতে দেখে নতুন ভাবী বললেন,
নীলা: আরে নিদ্রা এসেছিস? আয় খেতে বস।সবাই চলে আসবে আরেকটু পরে।তারপর সবাই একসাথে মিলে খেতে বসবো।
নতুন ভাবীর কথায় আমি মুচকি হেসে এগিয়ে গেলাম ডাইনিং টেবিলের দিকে ।আমি বসতেই সেখানে বড় মা এলো।আমায় এরকম রেডি হয়ে অন্য কাপড়ে দেখে বললো,
নাদিরা(নিভ্রর মা): কিরে নিদ্রা কই যাচ্ছিস?
এতক্ষণে মার চোখও আমার দিকে গেলো।মা অবাক হয়ে বললো,
মা: কিরে কই যাস? আজ না শুভ্রর বউ ভাত? তাহলে বউ ভাতের অনুষ্ঠান ফেলে কই জাস?
নিদ্রা: উফ মা এত চিন্তা করছো কেন? আমি সাবুর বাসায় যাচ্ছি। ওখান থেকে রেডি হয়েই আমরা দুজনে একবারে কমিউনিটি সেন্টার এ যাবো।ভাইয়ার বিয়ের চাপে এতটাই হাপিয়ে উঠেছি যে সময়ই হয় না ওর সাথে কথা বলার। বেচারি অনেক রেগে আছে।ওকে একটু সময় দিলে যদি ওর অভিমানটা গলে তাই সাবুর বাড়ি যাচ্ছি।

আমার কথা শুনে বড় মা বললো,
নাদিরা: ঠিক বলেছিস এত কাজের চাপে তো সময়ই হলো না মেয়েটার খোঁজ খবর নেওয়ার।তুই ঠিক করেছিস।মেয়েটার সঙ্গে একটু সময় কাটা।নিজের ভাইয়ের বিয়েতেও ওর সঙ্গে মজা করার সুযোগ পেলি না।
নিদ্রা: সেটাই আমার ভাইয়ের বিয়ে তাতেই আমার এই অবস্খা।তোমরা তো কল্পনা করো আমায় বিয়ে দিবে।তোমাদের কল্পনা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আমি তো মরেই যাবো তার থেকে সাবুর বাড়িতে পাকাপোক্ত বাসস্থান করে ফেলি তাহলে যদি তোমরা বিয়ে দিতে চাও তখন পালিয়ে ওর বাড়ি যেতে পারবো।

মা: দেখলি তো নাদিরা তোর হবু ছেলের বউ কত শয়তান হয়েছে।আরে বিয়ে করা আল্লাহর নেয়ামত। এই পাগল মেয়েকে এখন কে বুঝাবে?
নাদিরা: আমি আছি কি করতে? আমার ছেলের বউ কে আমি বুঝাবো।বিয়ে দিবো তো তোর নিদ্রা। নিভ্রর সঙ্গে বিয়ে দিবো তোকে।তোকে আমার ছেলের বউ করার শখ আমার সেই কোন ছোটবেলা থেকে।

বড় মার কথায় আমি ভেংচি কেটে বললাম,
নিদ্রা: যেই চেহারা নাম তার পেয়ারা।তোমার রগচটা আর বাঁদর ছেলে কে বিয়ে করে আমার জীবন জাহান্নাম করার কোনো ইচ্ছা আমার নাই।আমি তো বিয়েই করবো না।কি দরকার শুধু শুধু বিয়েতে জড়িয়ে সিঙ্গেল সুন্দর লাইফটা নষ্ট করার।এর থেকে সিঙ্গেল লাইফ ভালো।
আমার কথায় আর কেউ কথা বাড়ালো না কারণ সবার জানা আছে বাবা বাদে কারোর যুক্তিই আমি মানতে রাজি নই আর ওরা এখন কথা বললে আমি কথা বাড়াবো।আমি আমার খাওয়া শুরু করে দিলাম। ফর্ক দিয়ে এক পিস মুখে দিতেই নিভ্র ভাইয়া কোথা থেকে এসে উড়ে এসে জুড়ে বসলো আমার পাশে।আমি ওর দিকে না তাকিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম কারণ এখন এতদিকে মন দেওয়ার সময় আমার নেই।

নিভ্র ভাই খেতে বড় মাকে জিজ্ঞেস করলেন,
নিভ্র: আম্মু তোমার আদরের হবু ছেলের বউ এত সাঝ দাঝ কে কোথায় যাচ্ছে?
নাদিরা: আমার আদরের হবু ছেলের বউ হলে সেটা তোরই হবু বউ হবে কারণ নিদ্রার বিয়ে তো আর অভ্রর সঙ্গে দিচ্ছি না।আর ও যেখানে মন চায় সেজে যাক তোর কি?
এবার বান্ধবীর এমন কথা শুনে আমার মার নিভ্র ভাইয়ার প্রতি দরদ উথলে উঠলো।এরা আবার আল্ট্রা লিজেন্ড কিনা কারণ এদের নিজের বাচ্চা ছেরে দুনিয়ার আর সব মানুষের বাচ্চার উপর দয়া আসে শুধু নিজের বাচ্চার উপর এক ফোঁটাও মায়া দয়া হয় না।মা বললো,
মা: এই নাদিরা নিভ্রর সঙ্গে এভাবে কথা বলছিস কেন? ভালো করে কথা বল।
নাদিরা: এর থেকে ভালো করে কথা বলা আমার স্বভাবে নাই কারণ শুভ্রর বিয়ের মেহেদীর অনুষ্ঠানের দিন ও নিদ্রা কে সবার সামনে মেরে যেই অন্যায়টা করেছে তারপর ওর সঙ্গে যে আমি কথা বলছি সেটাই ওর বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টির সৌভাগ্য।শুধু মেহমান ছিল বলে কিছু বলিনি নাহলে নিদ্রা কে থাপ্পড় মারার ফল ঔ হাতেনাতে পেত আমার থাপ্পড় খেয়ে।

নিভ্র ভাইয়া আর যাই হোক তার মাকে খুব ভালোবাসে আর তাই মায়ের সাথে তর্ক করেনা।মায়ের বকাগুলো চুপচাপ হজম করে খেয়ে চলেছে। বাবা আর বড় বাবা নাস্তা খেতে এসে বাবা আমার মাথায় আলতো চুমু খেয়ে নাস্তা খেতে বসে।আমি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে সবাইকে বিদায় জানিয়ে সাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরি আমার স্কুটি নিয়ে।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে আমি নিজের স্কার্ফ ঠিক করছি।আমার পরণে একটা ব্লু আর ব্ল্যাক কম্বিনেশনের লং কুর্তি সেই সাথে জিন্স আর মাথায় ব্ল্যাক স্কার্ফ। হাতে একটা ব্ল্যাক ওয়াচ আর মুখে ব্লু মাস্ক।পায়ে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট স্নিকার্স।আসলে এতদিন ধরে এত ভারী ভারী জামা কাপড় আর সাজ করতে করতে হাপিয়ে গেছি তাই এবার ঠিক করেছি এই সাজেই ভাইয়ার বিয়ের রিসেপশনে যাবো।আর আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানে এত সেজেগুজে কে যায়?

সাবু বিছানায় বসে আমার সাজগোজ দেখছে।ওর পরনে একটা পিংক হোয়াইট কুর্তি উইথ ব্ল্যাক জিন্স আর গলায় স্কার্ফ। সাবু তেমন একটা স্কার্ফ পরে না কারণ স্কার্ফ পড়লে নাকি ওর দম বন্ধ লাগে। ওর যেহেতু প্রবলেম তাই আমি আর নক গলাই না। স্কার্ফ পড়বে কি না পড়বে সেটা ওর ব্যাপার।

সাবু আমার দিকে তাঁকিয়ে বললো,
সাবু: তুই কি করতে চাইছিস? মানে নিভ্র ভাইয়া কে কিভাবে টাইট দিবি?
আমি ওর কথায় ওর দিকে ফিরে বললাম,
নিদ্রা: টাইট দেওয়ার তো কিছু নেই এখানে।আমি ওকে টাইট দেওয়ার কে? আমি শুধু ওর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি যাতে পরবর্তীতে আমার কষ্ট নাহয়।তোর কাছ থেকে কি লুকাবো? তুই তো সবটাই জানিস।

সাবু: কি জানি?
আমি সাবুর কথা শুনে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,
নিদ্রা: জানিস তবুও আবার শুনতে চাইছিস?
সাবু: যখন জানিস শুনতে চাইছি তখন বলে দিলেই পারিস।
ওর কথা শুনে আমি লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ গলায় বললাম,
নিদ্রা: আমি ওকে ভালবাসি….এতটাই ভালোবাসি যে এক পলক না দেখলে আমার দম বন্ধ লাগে।উনি আমার প্রেমময় নেশা সাবু যাকে আমি এক পলকের জন্য অব্দি ভুলতে পারবো না।কিন্তু নিয়তি আমার বিপক্ষে।আমি উনাকে ভালো তো বাসতে পেরেছি কিন্তু কোনদিনও উনাকে পাবোনা কারণ উনি আমার ভাগ্যে নেই। আপসোস একটু এমন একজন কে ভালোবাসলাম যে আমার ভাগ্যে জোটে নী।আমি ভুল মানুষটা কে ভালোবেসেছি যে হয়তো কোনোদিনই আমার ছিলনা।
সাবু: বলছিস? নিভ্র ভাইয়ার তোর প্রতি কোনো অনুভূতি নেই? তাহলে উনি যে তোকে কেয়ারগুলো করে? তোকে নীরবের সঙ্গে দেখলেই যে রেগে গিয়ে শাস্তি দেন? সেগুলো? সেগুলো কি?
নিদ্রা: ওগুলো শুধু উনার এগ্রেসিভনেস।উনি একজন ভাইয়ের দায়িত্ত্ব পালন করছেন আর সর্বোপরি একজন বন্ধুর দায়িত্ব কারণ আমি উনার বন্ধুর বোন।উনি শুধু আমার বড় ভাই হওয়ার দায়িত্ত্ব পালন করছেন।

সাবু: নিদ্রা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? উনি বড় ভাই হওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন? বড় ভাই কিস করে? এটা আদৌ সম্ভব?
নিদ্রা: উনি আমার নিজের বড় ভাই নন তাইতো এমন করছেন।উনি শুধু চাইছেন আমাকে প্রোটেক্ট করতে কারণ উনি চাননা এসবের জন্য ভাইয়ার সাথে উনার সম্পর্ক খারাপ হোক।
সাবু: তোকে বুঝানো পাগলেরও কাম্য নয়।আমি জীবনেও পারবো না তোকে বুঝাতে।
নিদ্রা: যাসও না বুঝাতে পাগল হয়ে যাবি।এসব ছাড় এখন।চল বের হই।
সাবু: হুম চল বাই দ্যা ওয়ে দোস্ত তোরে কিন্তু হেব্বি লাগছে।আমি ছেলে হলে তোরে বিয়েই করে ফেলতাম।
নিদ্রা: ডস কম দে।আমি জানি আমাকে কেমন লাগছে।বিয়ের অনুষ্ঠানে এভাবে সেজে যাচ্ছি দেখিস সব গেস্টরা কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকাবে।
সাবু: তাকালে তাকাবে তাতে তোর কি? আর তোর এখন দেরি হচ্ছে না?
আমি হালকা হেসে আচ্ছা চল বলে সাবু কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

প্রজ্ঞা কমিউনিটি সেন্টার এ আয়োজন করা হয়েছে শুভ্র আর নীলার বিয়ের রিসেপশনের অনুষ্ঠানের।অনেক গণ মান্য ব্যক্তি এসেছে যারা আজিজ তালুকদার, মেহেরান হোসেন আর শুভম চৌধুরীর পূর্ব পরিচিত।পুরো হলটাকে অনেক সুন্দর ভাবে বেবী পিংক আর হোয়াইট রোজ দিয়ে ডেকরেট করা হয়েছে যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট।

নির্ধারিত আসনে নীলা আর শুভ্র কে বসানো হয়েছে। শুভ্রর পরণে কালো রঙের পাঞ্জাবি যা ওর গায়ের রঙের সঙ্গে খুব ভালো মানিয়েছে।নীলার পরণে ম্যাজেন্ডা কালারের মধ্যে গোল্ডেন ওয়ার্ক করা লেহেঙ্গা আর ম্যাজেন্ডা কালারের ওড়না।নীলা কে নিদ্রার পছন্দমত হালকা সাজে সাজানো হয়েছে কারণ তার ননদিনির কড়া আদেশ বিয়ের এত অনুষ্ঠানে এত ভারী মেকআপ করার পর তার নতুন ভাবীর চেহারার অবস্থা বিবর্ণ তাই নতুন ভাবী কে যেন ন্যাচারাল লুক দেওয়া হয় আর সেটা হতে হবে ফ্ললেস। নীলা কে এরকম ভাবে সজ্জিত অবস্থায় দেখে শুভ্র খেই হারিয়ে ফেলেছে। শুভ্র কে এরকম হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র শুভ্র কে গুতো দিলো।সাথে সাথে শুভ্রর হা বন্ধ হয়ে গেলো।

আজ হলে থাকা সব মেয়েদের নজর শুভ্রর সঙ্গে নিভ্রর উপরেও কারণ দুই বন্ধু একই রকমের পাঞ্জাবি পড়েছে।দুজনের পাঞ্জাবির রঙই কালো আর দুজনের লুকটাও একই।প্রথমে দুই বন্ধু কে একই সাজে দেখে নীলা থতমত খেয়ে গেছিলো কিন্তু খানিকক্ষণ বাদে হেসে উঠেছিল তাদের চিনতে পেরে।নীলার সঙ্গে নিরব,তন্দ্রা আর অভ্রও সাথ দিয়েছিল।

নিভ্র বারবার এন্ট্রান্স গেটের দিকে তাকাচ্ছে।তার রাত এখনো এসে পৌঁছয় নি।সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে চলেছে কিন্তু রাতের পাত্তা নেই। অবশেষে নিভ্রর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগমন হলো নিদ্রার।নিদ্রার সঙ্গে সাবুও ওর পাশে।নিদ্রা কে দেখে নিভ্র খেই হারিয়ে ফেলেছে সেই সাথে প্রচন্ড অবাকও হয়েছে।নিজের ভাইয়ের বিয়ের রিসেপশনে কে এরকম প্রফেশনাল লুকে আসে?

নিদ্রা এমন সাজ দিয়েছে যেন ও কোনো অনুষ্ঠানে নয় বরং ভার্সিটি যাচ্ছে।অনুষ্ঠানে এরকম সাজ দেওয়ার মানে কি?নিদ্রা হলে সাবুর সঙ্গে ঢুকেছে ঠিকই কিন্তু ওর চোখ ফোনের দিকে।নিদ্রা ফোনে কিছু একটা ঘাটতে ব্যস্ত যা নিভ্র কে ভাবিয়ে তুলছে।

নিদ্রা ফোন টিপছিল তাই নিভ্র ওর দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু মাঝপথে থেমে যায় কারণ নিরব নিদ্রার সঙ্গে কথা বলছে। নিভ্রর প্রচন্ড রাগ উঠছে কিন্তু ও নিজেকে সামলে নেয় কারণ নিদ্রা তো আর এগিয়ে যায়নি নীরবের সঙ্গে কথা বলার জন্য।

নীরব: ওই ওই কেউ গোলাপের পাপড়ির ব্যবস্থা করো।আমাদের অ্যাপল অফ দা ফাংশন চলে এসেছে….

নীরবের কথা বলতে দেরি কিন্তু কাজটা হতে দেরি নেই।নিরব বলার সাথে সাথে সত্যি সত্যি উপর থেকে নিদ্রার উপর বর্ষিত হলো শত গোলাপের পাপড়ি।আমি স্তম্ভিত হয়ে আছি।নিরব সবসময়ই আমার সঙ্গে মজা করে কিন্তু তাই বলে যে সত্যি সত্যি এমন একটা কান্ড ঘটাবে সেটা আমার মাথাতেই আসেনি।আমি ভয়ার্ত চোখে নিভ্রর দিকে তাকালাম। নিভ্র ভাইয়ের চোখ বিভৎস ভাবে লাল হয়ে আছে। আমার খুব ভয় করছে। আমি বুঝে গেছি এক মুহূর্তও আমি একা একা থাকতে পারব না।আজ বাড়ি কোনোমতেই যাওয়া যাবে না। সাবুর বাড়ি যেতে হবে আর ওখান থেকেই শুরু হবে আমার আসল প্ল্যান ভাবতেই আমার চেহারায় থাকা ভয় নিমেষেই উড়ে যায় আর তার পরিবর্তে ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি ফুটে উঠে।

নিভ্র নিদ্রার দিকে রাগ ভুলে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।নিরব যা করেছে তাতে হয় নিদ্রা ভয় পাবে নয়তো বিরক্ত হবে কিন্তু নিদ্রা ডেভিল হাসি দিচ্ছে। ওর মাথায় কী কিছু চলছে? চললে কি চলছে?

নিরব: কিরে নিদ্রা হাসছিস যে? আমার সারপ্রাইজ ভালো লেগেছে?
নিদ্রা: ভালো তো লাগার কথা কারণ মেয়েরা ফুল বলতে পাগল বাট আনফর্চুনেটলি আমি ফুল প্রিয় নই তাই ব্যপারটা সুন্দর হলেও আমার মন জয় করতে পারেনি।তুই অন্য ট্রিকস এপ্লাই করতে পারিস বলেই আমি সাবু কে নিয়ে ওখান থেকে সরে এলাম আর নিরব আহাম্মকের মত দাড়িয়ে আছে এবং আমার এই জবাবে নিভ্র ভাইয়া তৃপ্তির হাসি হাসলেন।

সাবু: তোর মাথায় কি চলছে বলতো? তুই কি করতে চাইছিস?
নিদ্রা: গেম তো এখন শুরু হবে। জান্নাতুল তিরানা নিদ্রা কে এত সহজে বাগে আনা গেলে তো অনেক কিছুই করা যেত।আজ তোর বাড়ি যাচ্ছি আর কিছুদিন সেখানেই থাকবো।আমি বাড়ি ফিরছি না দেখে নিভ্র ভাই আমার কাছে যাবেন আর তারপর টিক টিক টিক বুম….

নিদ্রার কথার আগাগোড়া কিছুই সাবুর মাথায় ঢুকলো না তবে ও ভালো করে জানে নিদ্রা ফাঁকা হাওয়ায় গুলি ছোড়ার মানুষ না। ও যখন বলেছে তখন নিশ্চই কিছু একটা করবে আর সেটাই মোড় আনবে সবার জীবনে।এখন দেখার পালা নিদ্রা কি করে কারণ নিদ্রার দ্বারা কোনো কিছুই করা ইম্পসিবল না।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here