তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -১০

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
১০.

খেতে বসেছে সকলে।এতক্ষণ এত গেস্টদের অ্যাটেন্ড করতে করতে শুভ্র ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সেই সাথে সেই যে সকালে খেয়েছে তারপর তো আর খাওয়াই হয়নি তাই শুভ্রর পেট চো চো করছে।খেতে বসে সাথে সাথে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে শুভ্র।এইদিকে নীলারও খিদে পেয়েছে কিন্তু হাতের মধ্যে এত বাহারি রকমের মোটা মোটা সোনার চুরি যে খেতেই পারছে না।খেতে গেলেই খাবারের সঙ্গে লেগে যাচ্ছে।

শুভ্রর খাওয়া তখন প্রায় অর্ধেক শেষ।এতক্ষণে শুভ্রর সম্বিত ফিরেছে কারণ ওর পেট শান্ত হয়েছে।পাশে তাকিয়ে দেখে নীলা মুখ কাচুমাচু করে বসে আছে।নীলার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর খিদে পেয়েছে কিন্তু এত সাজ পোশাকের জন্য খেতে পারছে না।নীলার চোখ শুভ্রর দিকে পড়তেই শুভ্র রাগী গলায় গরম চোখে বললো,
শুভ্র: তুমি যে খেতে পারছ না সেটা একবারও বলার প্রয়োজন বোধ করলে না?

নীলা শুভ্রর রাগী গলায় ভয় পেয়ে গেছে।সবাই এতক্ষণ নিজেদের মধ্যে খাওয়া আর কথাবার্তা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।নিদ্রা যখন দেখে ওর ভাইয়া ওর নতুন ভাবী কে বকছে তখন ও বলে,
নিদ্রা: ভাইয়া নতুন ভাবী অনেক ট্রাই করেছে কিন্তু খেতে পারছিলো না।আমি বলেছিলাম খাইয়ে দিবো কিনা কিন্তু ভাবী বলেছে ভাবী ম্যানেজ করে নিবে আর তুমি তো খাচ্ছিলে তাই তোমাকে ডাকে নী।

শুভ্র: আমার আর নীলার মাঝে কথা বলবি না নিদ্রা। ভুলেও নিদ্রার হয়ে সাফাই গাইতে যাবি না তাহলে ফল কিন্তু ভালো হবে না.. শেষের কথাটা শুভ্র খানিকটা চিৎকার করেই বলে যদিও সেটা ওদের খাওয়ার টেবিল অব্দি সীমাবদ্ধ।
শুভ্রর চিৎকারে নিদ্রা চুপ করে যায় কারণ নিদ্রা বুঝতে পারছে ওর ভাই রেগে আছে আর নীলা কেপে উঠে। শুভ্রর এই ব্যবহার ওর কাছে এক্সপেকটেড কারণ শুভ্র বাইরে দিয়ে যেরকম দেখতে আসলে সেরকম না। শুভ্র কে দেখলে যে কেউ বলবে অনেক শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ছেলে কিন্তু আদতে সেটা নয়। শুভ্র অল্পতে রেগে যায় তবে সেটা প্রকাশ করে শুধুমাত্র নিদ্রা আর নীলার কাছে।

নীলা ভার্সিটি তে যখন অ্যাডমিশন নিয়েছিল শুভ্র তখন সবে মাত্র মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে।একদিন নীলা ওর বন্ধু আরিয়ানের সঙ্গে একটু কথা বলেছিল তার জন্য শুভ্রর যেই রূপ ও দেখেছিল তারপর সব ছেলে বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্ব ভেঙে দিয়েছিল এবং আর কোনোদিন সাহস করে কোনো ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেনি।

ওদের দুজনের দুই বছরের ভালোবাসার সম্পর্কতেও শুভ্রর জেদের কারণে জড়িয়েছিল নীলা কারণ শুভ্র ওকে শর্ত দিয়েছিলো হয় শুভ্রর সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে হবে নয়তো সাদিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব ভাঙতে হবে যেটা নীলার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় কারণ সাদিয়া ওর ছোটবেলার বান্ধবী।তারপর থেকে শুভ্রর সঙ্গে থাকতে থাকতে নীলাও শুভ্র কে ভালবেসে ফেলে এবং শুভ্রও বাড়িতে ওদের সম্পর্কের কথা জানায়।তারপরই ওদের এরকম ধুমধাম করে বিয়ে হয়।

ওদের দুই বছরের সম্পর্কে শুভ্র অসংখ্য বার রেগে গেছে কিন্তু শুভ্রর রাগ মোটেও নিভ্রর মত নয়। শুভ্র রেগে গেলে এমন এমন কাজ করে যেটাতে নীলার প্রতি ওর ভালোবাসা আরও বেশি প্রকাশ পায়। শুভ্র তো ওদের রিলেশন চলাকালীন একদিন নীলার দিকে একটা ছেলেকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলার সামনে কেঁদেই দিয়েছিল ভয়ে কারণ তার শুধু মনে হচ্ছিল যে কেউ তার নীল পরীকে নিয়ে যাবে।সেদিন নীলা অনেক কষ্টে অনেক বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল আর তখন থেকে আজ পর্যন্ত শুভ্র নীলা কে চোখে চোখে রাখে যেন কেউ ওর নীল পরীর দিকে চোখ না দেয়।অবশ্য শুভ্র নীলা কে যতটা ভালোবাসে ঠিক ততটাই শাসনের উপরেও রাখে। শুভ্র নীলা কে ভালোবাসলেও কোনোদিন মুখে সেটা বলে না শুধু কাজেকর্মে বুঝিয়ে দেয় যেটা নীলার কাছে খুব ভালো লাগে।

শুভ্রর এই রাগ সম্পর্কে নিদ্রা আর নীলা ওয়াকিফ কারণ শুভ্র সবার সামনে স্বাভাবিক থাকলেও একাকী যখন থাকে তখন তার রাগ আকাশচুম্বী হয়ে যায়।একা থাকলেই ওর রাগের বহিঃ প্রকাশ ঘটে।তবে শুভ্রর নীলা কে নিয়ে এই পসেসিভনেস নীলার খুব ভালো লাগে কারণ ও চায় যে ওকে ভালোবাসে সে যেন ওর সবটাই ভালোবাসে।

শুভ্র অবশ্য নীলা কে সেই ছোটো বেলা থেকে ভালোবাসতো যখন নীলা সদ্য জন্মেছিল।ছোটো নীলা কে প্রথম ওই কোলে নিয়েছিল আর কোলে নিয়ে অস্ফুটে ধীর কণ্ঠে বলেছিলো আমার নীল পরী।নীলার নীলাদৃতা নাম শুভ্রই রেখেছে।

নীলা ভয়ার্ত চোখে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,
নীলা: না মানে শুভ্র ভাইয়া আপনি তো খাচ্ছিলেন তাই আর কি…
ভাইয়া ডাকটা শুনে শুভ্রর মেজাজ আরও বিগড়ে গেলো তবে নিজেকে শান্ত রাখলো কারণ এখন কিছু করা যাবে না।ভাইয়া বলার শাস্তি নীলা কে রাতে দিবে তবে আপসোস টা রয়ে গেলো বউ তার রিলেশন চলাকালীনও ভাইয়া ডাকতো আর এখন বিয়ের পরও ডাকছে যেটা ওর জন্য অনেক কষ্টের কথা।

মুখে অদ্ভুত একটা হাসি টেনে বললো শুভ্র,
শুভ্র: মিসেস তালুকদার আপনি আমায় বললেই পারতেন।আমি আপনার স্বামী কাম শুভ্র ভাইয়া আছি কি করতে? আপনাকে আমি খাইয়ে দিবো।
শুভ্রর কথা নীলার কর্ণকুহর হতেই ও বুঝতে পারলো কি ভুল করেছে ও।আজ ওর কপালে শনি নাচছে কারণ তার বর মশাই খুব রেগে গেছেন ভাইয়া ডাক শুনে।

শুভ্রর কথা সবাই ভালো করেই বুঝতে পারলো তাই সকলে আড়ালে মিটিমিটি হাসছে। শুভ্রর হাসি দেখে নীলা অসম্ভব পরিমাণে ভয় পেয়ে গেছে।নীলা আমতা আমতা করে বলল,
নীলা: না আসলে শুভ্র আপনি খাচ্ছিলেন…আপনি তো সেই কখন থেকে না খেয়ে আছেন তাই ভাবলাম যে আপনি খেয়ে নিলে তারপর বলবো।
শুভ্র: আমি খাবো কী না খাবো সেটা আপনার ভাবলেও চলবে মিসেস তালুকদার।আপনি আপনার খাওয়ায় মন দিন কারণ না খেয়ে থাকার অভ্যাস কিন্তু আমার নেই।খিদে পেলে আপনাকেও খেয়ে নিতে পারি তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন আমার খিদে পাওয়ার আগে।

শুভ্রর কথা কারোরই বোধগম্য হলো না আর নীলা শুভ্রর হাত থেকে এক লোকমা মুখে নিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে। শুভ্রর কথার মানে ও ভালো করেই বুঝতে পারছে। শুভ্র লোকটা যে এত নির্লজ্জ সেটা ওর আগে থেকেই জানা ছিল তাই বলে সবার সামনে এভাবে বলবে।লজ্জায় নীলার নাক কাটা যাওয়ার অবস্থা। কোনমতে কয়েক লোকমা মুখে নিয়েই বললো,
নীলা: আমার শেষ আপনি খান।
শুভ্র বাকা হেসে বললো,
শুভ্র: মিসেস তালুকদার আপনি না খেলে কিন্তু আপনারই ক্ষতি আর আমি চাইনা আমার ওয়াইফের কোনো ক্ষতি হোক।

নীলা চোখ দুটো বড় বড় করে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু শুভ্র ওর অবাক দৃষ্টি পাত্তা না দিয়ে নীলার মুখে আবারও খাবার তুলে দেয়।নীলা কে খাওয়ানো শেষ হলে এবার নিজের অর্ধেক খাবারে হাত দেয়।এতক্ষণ এই দুই কপোত কপোতীর রোম্যানস দেখে নিভ্র এবার শুভ্র কে টিটকারী দেয়,
নিভ্র: কিরে ভাই তোরা? নিজেরা বিয়ে করে আমার সামনে বসে প্রেম করছিস।তোদের প্রেম দেখলে যে আমার মত সিঙ্গেল মানুষের বুকে আগুন লাগে জানিস তোরা? এখনও তো বিয়েই করতে পারলাম না কিন্তু বিয়ের আগেই তোদের প্রেম দেখে এক্সপেরিয়েন্স হয়ে যাচ্ছে বিয়ের পরের সিন।
শুভ্র: তোকে সিঙ্গেল থাকতে কে বলেছে? তোর ভাইয়ের তো প্রেমিকা যুটেই গেছে এখন তুইও জুটিয়ে নে।না পেলে আমাকে বলিস। নিদ্রার সঙ্গে তোর সেটিং করিয়ে দেই।আমার বোনও সিঙ্গেল তুইও সিঙ্গেল।দুই সিঙ্গেল মিলে মিংগেল হয়ে যা।

শুভ্রর কথা শুনে নিভ্র নিরার দিকে তাকিয়ে দুঃখী মুখ করে বলে,
নিভ্র: যার পাত্তা দেওয়ার সে তো পাত্তাই দেয়না।
নিভ্র ভাইয়ার নিরা আপুর দিকে তাকিয়ে কথা বলাটা আমি দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসি। নিভ্র ভাইয়া পাগল হয়ে গেছে।নিরা আপু তো সারাদিন ওর আশেপাশেই ঘুরে তাহলে পাত্তা কখন দিলো না।
নিরা নিভ্রর দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলে,
নিরা: তুই তাকে মনের কথা বললেই সে তোকে পাত্তা দিবে নিভ্র। সে থরি তোর মনের ভিতর ঢুকে বসে আছে যে তোর মনের কথা জানবে।

নিরা আপুর কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম,
নিদ্রা: আপু নিভ্র ভাইয়া তো তোমাকে বলেই দিয়েছে মনের কথা তবুও আবার শুনতে চাইছো। তোমারও বা দোষ কোথায়? ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা তো বারবার শুনতে মন চাইবেই কারণ সে ও যে তোমায় ভালবাসে।

নিভ্র নিরার দিকে মলিন হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে আর নিরা ওকে আশ্বস্ত করছে ইসারায়।

ভাইয়ার রিসেপশন শেষে আমি যখন আমাদের গাড়ির বদলে সাবুর গাড়ির দিকে এগিয়ে যাই তখন বড় বাবা বললো,
মেহেরান: কি মামণি? বাড়ি যাবে না?
আমি আলতো হেসে বললাম,
নিদ্রা: বড় বাবা অনেকদিন সাবুর সঙ্গে থাকি না।আমি সাবুদের বাড়ি থাকবো কিছুদিন।কিছুদিন থেকে তারপর আসবো আসলে এত ঝড়ঝাপটা গেছে তাই হাপিয়ে গেছি।আমার ওয়েদার চেঞ্জ দরকার।
মেহেরান: আচ্ছা তাহলে তুমি ঈশকির বাড়ি যাও।কোনদিন বাড়ি ফিরবে জানিয়ে দিও।আমি নিভ্র বা অভ্র কে পাঠিয়ে দিবো তোমায় নিতে।
নিদ্রা: আচ্ছা।

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে সাবুর গাড়িতে উঠে গেলাম। নিভ্র ভাইয়ার একটা জরুরী কাজ পরে গিয়েছিলো তাই ও অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়েই বেরিয়ে পড়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। ওখানে কারখানায় নাকি কি ঝামেলা লেগেছে তাই যেতে হলো এত রাতে।অবশ্য বড় মা কাল যেতে বলেছিল, এত রাতে যেতে বারণ করেছিল কিন্তু নিভ্র ভাইয়া শুনলে তো।অবশ্য নিভ্র ভাইয়া থাকলে আমার সাবুর বাড়ি যাওয়া হতো না কারণ ভাইয়া কিছু না কিছু একটা করে আমার সাবুর বাড়ি যাওয়াতে বাঁধা দিয়ে দিত।

আমরাও সাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আর বাবারাও তালুকদার-হোসেন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সাবুর বাড়ি তালুকদার হোসেন বাড়ীর যাওয়ার পথের উল্টোদিকে পড়ে তাই আমরা দুইজন দুইদিকে চলে গেলাম।আমাদের সঙ্গে সাবুর মা বাবা মানে আঙ্কেল আন্টিও আছেন।আমি, অ্যান্টি আর সাবু পিছন দিকে আর আঙ্কেল সামনের দিকে।

বাড়ি ফিরে আমি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস বদলে নিলাম।অনেক ক্লান্ত লাগছে।আমি সকালেই লুকিয়ে লুকিয়ে গাড়ীতে আমার জামা কাপড় উঠিয়ে রেখেছিলাম যেটা পরে ড্রাইভার কে বলে আনিয়েছিলাম। বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়তেই সাবু এসে আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।আমিও ওর গায়ের উপর পা তুলে দিলাম। হঠাৎ সাবু বললো,
সাবু: নিদ্রা তুই কিন্তু এখনও বললি না তুই কি করতে চাইছিস?
নিদ্রা: তোকে যদি বলেই দেই তাহলে তুই লাইভ টেলিকাস্ট দেখে মজা কিভাবে পাবি।তাই তোকে বলব না।একেবারে লাইভ টেলিকাস্ট দেখাবো।
সাবু: আচ্ছা কি এমন হয়েছে যে তুই নিভ্র ভাইয়ার থেকে দূরে দূরে থাকিস? ছোটবেলায় তো সারাদিন ভাইয়ার পিছন পিছন ঘুরতি আর ভাইয়াও তোকে বেশ স্নেহ করতো। হঠাৎ কি এমন হলো যে তুই এক ঝাপটায় ভাইয়ার থেকে এতদূর হয়ে গেলি? তোদের দুজনের মন আলাদা হয়ে গেলো?

নিদ্রা: তিক্ত স্মৃতি আমি মনে করতে চাইনা সাবু। দৃশ্যটা মানসপটে ভেসে উঠলেই আজও কষ্ট পাই। চোঁখের ধারা বাঁধ ভাঙ্গে।
সাবু: তোর বোঝার ভূলও তো হতে পারে।তুই আমায় বল।আমি যদি তোকে হেল্প করতে পারি।
নিদ্রা: আমি ভুল দেখিনি সাবু।কানের শোনা ভুল হতে পারে কিন্তু চোখের দেখা কখনো ভুল হয়না।আমি নিজের চোখে সেটা দেখেছি।নিজের চোখকে কি করে অবিশ্বাস করি বলতো?
সাবু: ঠিকাছে বল না। শুনি তো আগে।

ফ্ল্যাশব্যাক ১৫ বছর আগে,

আজ আমি খুব খুশি।আজ আমার মন উড়ুউড়ু করছে কারণ আজ বাদল নেমেছে আকাশে। বৃষ্টি হবে ভালোবাসা হবে আর ভালোবাসার অনুভূতিও হবে।আজ আমি মনের সুখে গান গাইবো তাও আমার তবলা পার্টি থুড়ি গিটার নিয়ে।

আমি নাচতে নাচতে ছাদের সিড়ি দিয়ে উঠছি কারণ চিলেকোঠার ঘরে উঠবো আর সেখান থেকেই আমার গিটার নিয়ে গান গাইবো চিলেকোঠার ঘরের দরজার কাছে ডিভানের উপর বসে।

যেই ভাবা সেই কাজ।আমি ছাদে চলে এলাম।তাড়াতাড়ি দৌড়ে চিলেকোঠার ঘরের সিমেন্টের চালের নিচে চলে এলাম।আমার পরণে থাকা ফ্রকের পকেট গলে চাবি বের করলাম চিলেকোঠার ঘরের।তাড়াতাড়ি চাবি দিয়ে খুললাম চিলেকোঠার ঘর।

আমি তখনও জানিনা ছাদের আরেক কোনায় নিভ্র ভাইয়া আর নিরা আপু আছে।আমি ঘরে ঢুকে গিটার টা হাতে নিলাম।বেশ কয়েকবার নাড়াচাড়া করে পরখ করে নিলাম।না ঠিকই আছে।আমি গিটার নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াই তখনই আমার চোখে পড়ে চিলেকোঠার ঘরের জানালা খোলা আর সেখান থেকে বৃষ্টির ছেটা ভিতরে এসে পড়ছে।আমি গিটারটা রেখে দৌড়ে গেলাম জানালা লাগাতে।জানালার ধারে যেতেই আমি এমন কিছু একটা দেখলাম যার পর আমার সমস্ত দিন দুনিয়া উল্টে গেল।আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা যে এ আমি কি দেখলাম।বারবার মনে হচ্ছে ভুল দেখেছি।

নিভ্র ভাইয়া নিরা আপু কে জড়িয়ে ধরে আছে।দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার।দুজনের পুরো শরীরে জামা কাপড় বসে গেছে আর দুজনে একে অপরকে আকড়ে ধরে আছে। নিভ্র ভাইয়া নিরা আপুর কানের কাছে চুমু খেয়ে আমায় অবাক করে দিয়ে বলল তোকে অনেক ভালবাসি …অনেক।এতটাই ভালোবাসি যে আমি বলে বুঝাতে পারব না।তোকে আমি আমার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। #তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা।তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না….
বাকিটা আর শুনতে পারলাম না। কাদতে কাদতে দৌড়ে চিলেকোঠার ঘর তালা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

আমার সঙ্গেই এমন টা হওয়ার ছিল।কেন পেলাম না তাকে? চেয়েছিলাম সে আমাকে বলুক নিদ্রা #তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা কিন্তু উনি নিরা আপু কে বললেন।উনি তাহলে আমায় ভালোবাসেন না।উনি নিরা আপু কে ভালোবাসেন নাহলে এই কথাগুলোও বলতেন না আর নিরা আপুকে চুমুও খেতেন না।আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না।আমার সব তাহলে শেষ। নিঃস্ব আজ আমি।

বর্তমান….

সাবু: তাহলে এই জন্যই তুই ভাইয়ার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াস? এমনও তো হতে পারে উনি অন্যকিছু বলছিলেন আর তুই বুঝতে ভুল করেছিস।
সাবুর কথা শুনে আমি চোখের অশ্রু সন্তপর্নে মুছে বললাম,
নিদ্রা: চোখের দেখা কখনো ভুল হয়না সাবু।মানলাম আমি ভুল শুনেছি তাহলে কিস! উনি নিরা আপু কে কেন কিস করেছিলেন? এর কোনো এক্সপ্লানেশন আছে তোর কাছে?
আমার কথা সাবু চুপ করে গেল।আমি আর কিছু বললাম না। গাঁয়ে কম্বল টেনে আমার সাইডের বেড ল্যাম্প অফ করে বললাম,
নিদ্রা: ঘুমিয়ে পর সাবু।কাল থেকে কলেজ যেতে হবে।অনেক বন্ধ দিয়েছি।এবার থেকে পড়াশুনা করতে হবে।তোর ছোটো মাথায় এত চাপ দিস না।নিতে পারবি না।

বিছানার কোণে চুপচাপ বসেছিল নীলা।প্রচুর ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমাতে পারছে না আর তার কারণ হলো তার বর মশাই। শুভ্র গাড়িতে আসার সময় বলেছে যে ভুল করেও যেন রাতে ঘুমিয়ে না পরে নাহলে কপালে ডাবল শাস্তি জুটবে যার ভয়েই এখন নীলা ঘুমোতে ঘুমোতে ঢুলে পরে যাচ্ছে তবুও বিছানায় গা এলিয়ে দিচ্ছে না।

ঠাস করে জোরে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে ঘরে ঢুকলো শুভ্র।ঘরে ঢুকেই নীলা কে দেখতে পেল।মেয়েটা একেবারে সিটিয়ে বসে আছে বিছানার সঙ্গে।নীলার এই করুন অবস্থা দেখে শুভ্রর হাসি এলো তবে হাসলো না কারণ এখন হাসলেই নীলা সাহস পেয়ে যাবে।

নীলার কাছে না গিয়ে আলমারি থেকে জন্য কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো শুভ্র। শুভ্র কে অদ্ভুত বিহেভ করতে দেখে নীলা ভ্রু কুচকে ফেললো।লোকটা নির্ঘাত পাগল হয়ে যাচ্ছে রাগে নাহলে এত শান্ত কি করে আছে।লোকটার শান্ত থাকা ধ্বংসের পূর্ব লক্ষণ।

কিছুক্ষণ পর শুভ্র বেরিয়ে এলো আর বারান্দায় টাওয়েল মেলে দিয়ে প্রথম দিনের মতোই আবারও শুয়ে পড়লো।এবার নীলা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যাক তাহলে শুভ্রর শাস্তির কথা মনে নেই।নীলা আস্তে আস্তে বিছানা ছেরে উঠে দাড়ায়।কাপড় চেঞ্জ করে নীলাও শুয়ে পড়বে সেই উদ্দেশ্যে।

বাথরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেই না পা বাড়াবো ওমনিই শুভ্র নীলার ওড়না টান দিয়ে নীলাকে বিছানার উপর ফেলল আর নিজের নীলার উপড় ঝুঁকে নীলার উপর ওর শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলে।এই লোকটা দেখতে যেমন মাসল ম্যান তার ওজনও তেমন।নীলার দমবন্ধ হয়ে আসছে।

শুভ্র অন্ধকারের মধ্যে বাকা হাসে যেটা নীলার চোখে পড়লো।নীলা ভয়ে চুপসে গেল। শুভ্র ওর ডান হাতের অনামিকা দিয়ে নীলার কপাল থেকে ঠোঁট অব্দি স্লাইড করলো।তারপর ঠোটেও স্লাইড করতে করতে বলল,
শুভ্র: নীল পরী শুয়ে পড়েছি তারমানে শাস্তির কথা ভুলে গেছি ভেবে তুমি ভুল করলে। শুভ্র তালুকদার কোনোকিছু এত সহজে ভুলে না।আমাকে ভাইয়া ডাকার শাস্তি তো তোমায় পেতে হবে।

নীলা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল,
নীলা: শুভ্র আপনি… কি কি… কি করতে…. চাইছেন??
শুভ্র আগ্রাসী কণ্ঠে বলল,
শুভ্র: তোমার এই গোলাপী রঙা ঠোঁটে ডুব দিতে চাইছি, তোমার সঙ্গে মিশে যেতে চাইছি। তোমায় ভালোবাসাময় অত্যাচার করতে চাইছি।

শুভ্রর কথা শুনে নীলার চোখ দুটো আপনিতেই বড় হয়ে গেলো। শুভ্র ওর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,
শুভ্র: আজ সারারাত তোমায় আমার ভালোবাসাময় অত্যাচার সহ্য করতে হবে।কাল ছেরে দিয়েছি কিন্তু আজ ছাড়বো না। শুভ্র তালুকদার ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না… বলেই নীলার ছোটো কোমল ঠোঁটটায় শুভ্র ডুবিয়ে দিলো তার রুক্ষ ঠোঁট জোড়া আর নীলা কে ভাসিয়ে নিলো তার ভালোবাসার রাজ্যে।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here