#তুমিময়_বসন্ত
১০.
#writer_Mousumi_Akter
–বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা কৃষ্ণচূড়া গাছ টা ফুলে ফুলে লাল হয়ে আছে।গাছে দুই একটা সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে যেনো রক্তবর্ণের লাল সৌন্দর্যর সমাহার।ফাগুন কে বরণ করতেই কৃষ্ণচূড়ার এরুপ সাজ।বাসা থেকে নিচে এসে যেনো অপরূপ সৌন্দর্য্যর রাজ্য দেখতে পেলাম।আর একটু দূরে চোখ যেতেই চোখ পড়লো সারি সারি অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে।রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ গুলো লাল ফুলে ছেয়ে আছে।এখান দিয়ে যাতায়াতরত কোনো মানুষ এই সৌন্দর্য্য উপেক্ষা করতে পারছে না।সবাই ই মুগ্ধ হয়ে দেখছে এই অপরূপ দৃশ্য। আমার ভীষণ ইচ্ছে করছে একটা ফুলের ডাল ছিড়ে হাতে নিতে।কিন্তু এত বড় গাছের ফুল কিভাবে আনবো আমি।আমি কেনো কেউ ই নাগাল পাবেনা।গাছে বসে কোকিল কুহু কুহু করে ডাকছে।পাশের কিছু বাচ্চারা কোকিলের সাথে তাল মিলিয়ে কুহু কুহু ডাকছে।দৃশ্যটা দেখে আনমনে হেসে ফেললাম আমি।আমি নিচে পড়া থাকা ছোট ছোট কিছু ফুলের অংশ হাতে তুলে নিলাম।এই ফুল আমার ভীষণ প্রিয়।ইস কেউ যদি এক ডাল কৃষ্ণচূড়া দিতো আমায়।
রাস্টার ওপাশে ফোনের দোকান আছে।এই এরিয়া টা বেশ নিরিবিলি ধরনের।খুব একটা কোলাহল নেই বললেই চলে।রাস্তার ওপাশে মাত্র দুইটা ফ্লেক্সির দোকান।জানিনা তারা আমাকে ফোন করতে দিবে কিনা।কেননা এখন তো আর ব্যবসায়ী ফোন নেই আগের মতো।একটা ফ্লেক্সিলোড এর দোকানে গিয়ে বললাম,
‘আমার ফোনটা খুজে পাচ্ছিনা আমাকে একটু ফোন করতে দিবেন?’
অল্পবয়সী একটা ছেলে দোকানে।আমার দিকে তাকিয়ে দেখে বললো,
‘আপনার বাসা কোথায় আপু?’
‘আমাদের বাসাটা সরাসরি না দেখিয়ে বললাম একটু ভেতরেই।’
‘ছেলেটি বললো,৪-৫ মিনিটের বেশী কথা বলা যাবে না আপু।আমার পারসোনাল ফোনে বেশী টাকা নেই।আর এগুলা আমার ব্যবসায়ী ফোন।বিকাশ করি,ফেক্সি দেই।’
‘আমি সাথে সাথে একশ টাকা বের করে দিয়ে বললাম আপনার নাম্বারে ফ্লেক্সি দিন।আমি মাঝে মাঝে আসলে দুই এক মিনিট ফোন করতে নিয়েন।’
‘ছেলেটি বললো,না না আপনি কোথায় এক মিনিট কথা বলবেন টাকা দেওয়া লাগবে না।’
‘আমি খুশী হয়েই দিচ্ছি।রেগুলার এমনি এমনি কথা বললে পরের দিন আসলে আর দিবেন না।আপনি প্লিজ নিন।আমার জোরাজোরিতে ছেলেটি টাকা টা নিয়ে আমাকে ফোনটা দিলো।’
–আমি ফোন নিয়ে একটু সাইডে গেলাম।ভেতরএ টানা এক উত্তেজনা কাজ করছে।অভির কন্ঠ শুনলে আমি কিভাবে সহ্য করবো।এসব ভাবতে ভাবতেই অভির নাম্বার ডায়াল করলাম কিন্তু ফোন বন্ধ।আপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে।কথাটা যেনো হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধলো আমার।নিয়তি কি চাইছে না আমাদের এক হতে দিতে।নিয়তি কি এটাই চাই আমাদের আর কখনো যোগাযোগ না হোক।কেনো বন্ধ অভির ফোন।অভির কি কিছু হয়েছে।ভীষণ দুঃচিন্তা ঘিরে ধরলো আমাকে।কেমন আছে আমাকে ছাড়া।দম ফাটা কাঁন্না আটকাতে পারলাম না আমি।কয়েকবার ট্রাই করার পরেও অভির নাম্বারে ফোন ঢুকলো না।দোকানদার কে ফোন টা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে দোকান থেকে চলে এলাম আমি।
দু’মাস আগের কথা আমার ফোন হঠাত নষ্ট হওয়ায় একদিন যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম না অভির সাথে।একদিন পরে অভিকে আরহীর নাম্বার থেকে ফোন দিতেই
অভি পাগলের মতো বলেছিলো,
‘মুগ্ধ কোথায় তুমি।কোথায় হারিয়ে গিয়েছো তুমি।কথা বলছো না কেনো মুগ্ধ।জানো কত হাজার বার ফোন দিয়েছি আমি পাগলের মতো ফোন দিয়েছি,মেসেজ করেছি কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি আমি।কি হয়েছে মুগ্ধ আমায় বলো প্লিজ।
‘নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে বেসামাল ভাবে কেঁদে দিয়েছিলাম আমি।কাঁদতে কাঁদতে কোনো কথা বলতে পেরেছিলাম না আমি।আমার কাঁন্না থামাতে বারবার অভি বলছিলো প্লিজ মুগ্ধ কেঁদোনা।তোমার কাঁন্না আমি সহ্য করতে পারিনা।আর এটা কার ফোন। তোমার ফোন কোথায়?আমার সাথে আজ ই দেখা করো।’
সেদিন মজা করে বলেছিলাম,অভির মন বুঝেছিলাম আমার প্রতি অভির ভালবাসা কতটা গভীর সেটাই দেখছিলাম।
‘আমাদের আর দেখা হবেনা অভি।’
‘কিন্তু কেনো মুগ্ধ?’
‘অভি সব কিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।বদলে গিয়েছে সব কিছু।আলাদা হয়ে গিয়েছি আমরা।’
‘প্লিজ মুগ্ধ আমায় খুলে বলো।’
‘আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে অভি।কথাটা বলেই আবার ও বেসামাল ভাবে কেঁদে দিলাম আমি।’
‘বিয়ে মানে।আর তুমি বিয়ে মেনে নিলে।আমি ছাড়া অন্য কাউকে কবুল বললে।’
‘পরিস্হিতি আমাকে বাধ্য করেছিলো।আমি নিরুপায় ছিলাম অভি।’
‘তুমি আমার মানে শুধুই আমার মুগ্ধ।এসব বিয়ে আমি মানিনা মুগ্ধ।আমি ছাড়া পৃথিবীর কারো পাশে তোমাকে আমি মেনে নিতে পারবো না। তুমি কোথায় আছো মুগ্ধ আমাকে বলো।তুমি আমার সাথে চলে আসবে।আজ মানে এক্ষুনি।কি ভাবছো মুগ্ধ জাস্ট চলে এসো। চুপ করে আছো কেনো? ‘
‘আমি যেতে পারবো না অভি।’
‘কেনো মুগ্ধ?’
‘আমি গেলে বাবা আর মা দুজনেই সুই*সাইড করবেন লজ্জা আর অপমানে।কারো বিবাহিত মেয়ে স্বামির সংসার ছেড়ে পালিয়ে গেলে সেই মা -বাবা কি কারো সামনে মুখ দেখাতে পারে।সমাজের মানুষ ছিঃছি করবে।আমাকে বলবে চরিত্রহীনা কলংকিনী,দুঃচরিত্রা, আমি স্বামির ঘর ছেড়ে পালিয়েছি।মা -বাবার উপর যতই অভিমান করি আমি আমার জীবনে মা আর বাবাকে সব থেকে বেশী ভালবাসি অভি।আমার নিজের শান্তির জন্য পালিয়ে গেলে তারা মা*রা গেলে এ আমি সহ্য করতে পারবো না।’
‘কি অপরাধ আমার মুগ্ধ।তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসা নাকি তোমাকে নিয়ে একটা জীবন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা।তোমার মা-বাবা কেনো এমন করলো মুগ্ধ।আমার পারিবারিক কলহে কবে আমার ফ্যামিলি থেকে কাকে খু*ন করেছিলো সেই দোষ কেনো আমার উপর চাপিয়ে আমার থেকে তোমাকে আলাদা করলো মুগ্ধ।এই দোষ কি আমার ছিলো।’
‘আমি জানি অভি এখানে তোমার কোনো দোষ নেই।’
‘দোষ নেই তাহলে কেনো ছেড়ে গেলে আমাকে।আমি তোমাকে জোর করবো না মুগ্ধ।হয় তুমি চলে আসবে না হলে আমি মরে গিয়ে প্রমান করে দিবো আমার ভালবাসা ভুল ছিলো না।’
‘প্লিজ অভি তুমি এসব বললে আমি কিভাবে বাঁচবো।’
‘তুমি কি আসবে নাকি আসবে না মুগ্ধ।আমার ডিসিশন নেওয়া হয়ে গিয়েছে এখন তোমার উত্তরের অপেক্ষায় আছি।’
তখন ই হেসে দিয়ে বলেছিলাম আরে বুদ্ধু আমি মজা করছি।আমি ম*রে গেলেও তুমি ছাড়া কাউকে বিয়ে করবোনা।সেদিনের আমার করা মজাটা যেনো আজ সত্যি হয়ে গেলো।সেদিন বলেছিলাম মজা করে আজ সত্যি সত্যি অভিকে এগুলো বলতে হতো।ভীষণ মন খারাপ নিয়ে বাসায় ফিরলাম।কি ঠিক কি ভুল কিছুই বুঝতে পারছিনা।
দুপুর বারোটার দিকে হঠাত কলিং বেল চাপলো কেউ।দরজা খুলে দেখি একটা ছেলে আয়াস এর বয়সী হবে। আমাকে দেখে বললো,
‘ ভাবি কেমন আছেন?’
‘আপনি.. আসলে আমি তো কাউকে চিনিনা।’
‘আয়াস স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন ভাবি।’
‘ওহ আচ্ছা।’
‘স্যার একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।হঠাত স্যার এর শ্বাসকষ্ট বেড়েছিলো।ডাক্তার এসে দেখে ও গিয়েছিলো।স্যার এর প্রেসার পুরোপুরি লো।আসলে স্যার অনেক পরিশ্রম করেন।আমাকে পাঠিয়েছেন একটা হলুদ কালারের ফাইল নাকি ফেলে গিয়েছেন ওটা নিতে।’
‘উনি অসুস্থ। ‘
‘তেমন কিছু হয়নি আপনি চিন্তা করবেন না।আপনি খুব লাকি ভাবি।স্যারের মতো একজন মানুষ পেয়েছেন।’
‘কেনো?’
‘জানেন ভাবি স্যার এত বড় একজন অফিসার কিন্তু আমাদের সাথে আপন ভাই এর মতো মিশেন।তাকে দেখে মনেই হয়না আমাদের থেকে অত বড় পোস্টে চাকরি করেন।আমাদের সারিকা ম্যাম স্যার এর এই গুনের জন্য স্যার কে খুব পছন্দ করতেন।তবে স্যার কখনো পাত্তা দেন নি।স্যার আপনাকে পছন্দ করতেন।স্যার কে বলবেন রাত জেগে কাজ না করতে।স্যার অনেক দায়িত্বশীল। মনে হয় একভাবে কাজ করছে খাওয়া দাওয়া নেই তাই শরীর দূর্বল।’
ছেলেটার কথা শুনে ভেতরে কেমন খারাপ লেগে উঠলো।কেমন যেনো তার অসুস্থতার জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে।কেনো জানিনা মনে হচ্ছে আমার জন্য না খেয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
‘ছেলেটিকে বললাম ভেতরে আসুন বসুল আমি ফাইল দিচ্ছি।’
‘না ভাবি স্যার বাসায় নেই আমি যেতে পারবো না’
‘সমস্যা নেই আসুন।’
‘না ভাবি ঠিক আছে।’
‘আমি আসছি আমার একটু লেট হবে। ‘
‘জ্বী ভাবি আপনি নিয়ে আসুন, আমি অপেক্ষা করছি।’
–বুয়ার রান্না শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।আমি টিফিন বক্সে খাবার ভরে একটা শপিং ব্যাগে রাখলাম।শাড়িটা চেঞ্জ করে আরেক টা শাড়ি পরলাম।আয়াসের অফিসে অনেক মানুষ আছে।আমাদের মাঝে যা সমস্যা হোক বাইেরর মানুষকে বুঝতে দিয়ে আয়াস কে ছোট করা যাবেনা।একটা লাল শাড়ি পরে ম্যাচিং গহনা পরলাম।শাড়ি অনেক বার খুললাম আর পরলাম তবুও ঠিক ভাবে পরতে পারছি না।আবার ওদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে।এলোমেলো শাড়ির কুচি নিয়েই খাবারের বক্স হাতে নিয়ে রওনা হলাম।
আমাকে দেখে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি বললো,
‘আপনি যাবেন ভাবি।’
‘হ্যাঁ। ‘
‘চলুন তাহলে।আপনার হাতের খাবার খেলে স্যার সুস্থ হয়ে যাবেন।আপনাদের বিয়ের আগে অনেক বার ই স্যার আপনাকে নিয়ে কথা বলেছে।আর আজ সকাল থেকে অনেকবার ই বলেছে আপনার কথা।’
তার মানে উনি আমার সামনে নয় আমার আড়ালেও আমার কথা ভাবেন।যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটাও খারাপ নন উনি।
ক্যান্টনমেন্ট এ প্রবেশ করেই একটা মেয়ে সৈনিক কে দেখে ভাবলাম এই কি সেই সারিকা।হঠাত সারিকার কথা মনে পড়লো কেনো আমার।যে মেয়ে কে দেখছি তার কথায় ভাবছি এই কি সারিকা। ধ্যাত যা তা অনুভূতি হচ্ছে আমার।মন কে স্ট্রং করে এদিক সেদিক না তাকিয়ে আয়াসের কাছে গেলাম।
#তুমিময়_বসন্ত
১১.
#writer_Mousumi_Akter
আয়াসের অফিসকক্ষের রুমে দরজা উঁকি দিতেই দেখি আয়াস নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে খুব মনোযোগ সহকারে একবার ফাইল দেখছে আর একবার ডেস্কটপ এর কি-বোর্ড চাপছে।আমি পাঁচ মিনিট ধরে খেয়াল করছি আয়াসকে।মানুষ টা কাজে কত মনোযোগী।আয়াসের চোখে মুখে গভীর মনোযোগের ছাপ স্পষ্ট লেগে আছে।কপালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর ফাইল দেখছে।বারবার ডেস্কটপ এ কিছু চেক করছে। আয়াস কি-বোর্ড এ খুব জোরে চাপ দিয়ে উচ্চারণ করলো ওহ শীট বলেই হাতের ফাইল টা ছুড়ে মারলো।মনে হচ্ছে কোথাও কিছু গড়মিল হয়েছে।কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে আয়াস।আশে পাশের অনেক মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।সবার ফিসফিস করে বলা কথাও আমার কানে পৌছাচ্ছে।যে কথা আমাকে দেখে ফিসফিস করে বলা হচ্ছে সে কথা যদি আমার কানে পৌছাবে তাহলে বলার কি দরকার।তবে কেউ খারাপ কিছু বলছে না সবাই এটাই বলছে আয়াস স্যার এর ওয়াইফ ভারী মিষ্টি হয়েছে দেখতে।দুজন কে পাশাপাশি দাঁড়ালে মনে হবে যেনো ভাই-বোন এত মিল দুজনের চেহারার।আয়াস কি আমার ছবি দেখিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়িয়েছে এই মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি,এইযে আমার বউ।না বললে মানুষ জানলো কিভাবে।
আমি দরজায় উঁকি দিয়ে নরম কন্ঠে বললাম,
‘আসবো। ‘
আমার কন্ঠ শুনে আয়াস অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে।একটা মানুষ ভীষণ অবাক হলে চোখ মুখের ভাব যেমন হয় আয়াসের চোখ মুখের ভাব হুবহু তেমন।আয়াস এক নজরে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমার উপস্হিতি যেনো আয়াসের কাছে স্বপ্ন দেখার মতো।দুই ঠোঁটের মাঝ খানে কিঞ্চিত ফাঁকা অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাকে।আমি আবার বললাম,
‘আসবো।’
আয়াস এবার নড়েচড়ে বসে বললো,
“মুগ্ধতা তুমি।”
ভীষণ অবাক করা ছিলো তার কন্ঠস্বর।
আমি ভেতরে প্রবেশ করে আয়াসের খুব কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালাম।এতক্ষণ মন ভীষণ ছটফট করছিলো তাকে৷ দেখার জন্য।মনে হচ্ছিলো সে কি খুব অসুস্থ। তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ডান হাতে সাদা ব্যান্ডেজের কাপড় দিয়ে ব্যান্ডের করে রাখা।সকালে তো বাসা থেকে ভালো ভাবেই বের হয়েছিলো তাহলে এখন কি হলো।আয়াসের দিকে তাকিয়ে কিছু না ভেবেই আয়াসের কপালে হাত রাখলাম।তাকে ছোঁয়ার ইচ্ছা ছিলো না,তবুও ছুয়ে দেখলাম।এসব ই কেনো জানি অনিচ্ছায় করলাম,আবার না করলেও মনের মাঝে অশান্তি হচ্ছে।জানিনা কেনো ওর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো ওর কপালে রাত রেখে দেখি ওর কি জ্বর এসছে কিনা, ওর কি শরীর অনেক খারাপ কিনা।আমি আয়াসের কপালে হাত রাখতেই আয়াস যেনো শিউরে উঠলো।আয়াসের শরীরে যেনো অবস হওয়ার উপক্রম।আমি আয়াস কে বললাম,
‘এখন কেমন লাগছে?’
আয়াস তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।অন্য মনস্ক ভাবে বললো,
“আগে কেমন ছিলাম জানিনা মুগ্ধতা তবে এখন মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ টা আমি,সব থেকে সুস্থ মানুষ আমি।”
আয়াসের চোখের গভীর চাহনী দেখে দ্রুত হাত সরিয়ে নিলাম আমি।কি ভাবছে আয়াস কি জানি।হুট করেই তার কপালে হাত ছুইয়ে যেনো লজ্জা পেলাম।নিজের ভেতরে জড়তা এসে ভর করেছে।আয়াস এবার ব্যাস্ত হয়ে বললো,
“ঘেমে কি অবস্থা হয়েছে তোমার।রোদের মধ্য দিয়ে এসেছো নিশ্চয়ই, ছাতা ছিলো বাসায় নিয়ে আসলে না কেনো।গরম লেগে যদি জ্বর হয় তোমার।বসো তুমি রেস্ট নাও।পাশের থেকে আরেক টা কালো গদির চেয়ার টেনে আমাকে নিজেই ধরে বসিয়ে দিয়ে আয়াস পকেট থেকে রোমাল বের করে আমার কপালের ঘাম মুছে দিলো।আলতো ভাবে কপালে রোমাল চেপে ধরে ঘাম মুছিয়ে দিতে দিতে বললো,এটা এর আগে কখনো ইউজ করিনি।তোমার কপালের ঘাম মোছানোর জন্য এক্সট্রা কিনে রেখেছিলাম।কখন কাজে লাগে বলা যায়।এইযে এখন কাজে লেগে গেলো।”
আয়াসের কথার মাঝে ভীষন ব্যাস্ততা,আর হ্যাপিনেস।একটা মানুষ ভীষণ খুশি হলে কথা বলতে গিয়ে যেমন একটার মাঝে আরেকটা বলতেই থাকে আয়াস ও হুবহু তাই করছে।ভীষণ আনন্দে ভীষণ এক্সাইটেড ভাবে কথা বলছে।
আমি আয়াস কে বললাম,
“আপনি অসুস্থ শুনে রোদ,নাকি বৃষ্টি খেয়াল ছিলো না।অসুস্থ হয়ে ও এত কাজ করার কি প্রয়োজন।”
“কাজ করাটায় তো আমার ডিউটি।কাজ না করলে কিভাবে হবে মুগ্ধতা।তবে আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি এত কাজ করার কি প্রয়োজন।”
“একদিন কাজ একটু কম করলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবেনা।রেস্ট নিবেন আজ আপনি।”
“এর আগে কেউ কখনো বলেনি আজ একটু কম কাজ করলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবেনা।আজ রেস্ট নাও।”
“কেউ বলে নি তো কি হয়েছে।ডাক্তার কি বললো।”
“তুমি কিভাবে জানলে।”
“জেনেছি।”
“শফিকুল বলেছে। আমি তাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলাম এসব নিউজ পাচার করেছে গিয়ে।”
“ভাজ্ঞিস বলেছে নাহলে আমি জানতাম কিভাবে।আপনি জানেন আপনি অসুস্থ শুনে আমার হঠাত ভীষণ খারাপ লাগছিলো।জানিনা কেনো এমন হলো। ”
আয়াস মৃদু হাসলো,ভীষণ সুন্দর সে হাসি।আয়াস হাসলেই বেশী সুন্দর লাগে।আমি আয়াস কে সহ্য করতে পারিনা বলে কখনো প্রকাশ করিনি।তবে ওর মৃদু হাসিটা বেশী সুন্দর।
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে ডাকলো,
“মুগ্ধতা।”
এই ডাকের মাঝে ভীষন আবেগ আর আকুতি।মায়াবী এক সুর আছে আয়াসের হঠাত হঠাত আমার নাম ধরে ডাকার পেছনে।আমি ডাক শুনলাম।
“হুম।”
“একটা কথা বললো।”
“হুম।”
“তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে মুগ্ধপরী।প্রথম যখন দরজায় উঁকি দিলে তোমার পাতলা গোলাপি ঠোঁটে বললে আসবো। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।আমার দু’চোখ আটকে গিয়েছিলো তোমার মিষ্টি মুখে।মুগ্ধতা তোমার চোখ দুটো ভীষণ টানা টানা কাজল পরলে একটু বেশী সুন্দর লাগে।তোমার আরেক টা জিনিস আরো বেশী নজর কাড়ে মাইন্ড করোনা প্লিজ।তোমার ঠোঁট দেখতে ভীষণ সুন্দর। আমার বার বার তাকাতে ইচ্ছা করে। তোমার নাম টা যে মুগ্ধতা রেখেছে তাকে পৃথিবী শুদ্ধ সব ধন্যবাদ দিলেও কম হবে।কেননা পৃথিবীর সব মুগ্ধতা তোমার মাঝে লুকিয়ে আছে।”
“বেশী বেশী পাম দিচ্ছেন। সব ই আজেবাজে কথা।”
“জানি কারো মুখের উপর প্রশংসা করলে সে খুব লজ্জা পায়।তোমাকে আর লজ্জা দিতে চাইছি না।”
আমি খাবারের বক্স খোলার জন্য উঠে দাঁড়াতেই শাড়ির কুচি খুলে গেলো।কুচি হাতের মুঠোয় ধরে আয়াসের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।আয়াস আমার চাহনি দেখে বুঝে গেলো আমার সমস্যা।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শাড়ির কুচি কি খুলে গিয়েছে?”
“মনে হচ্ছে।”
“আমি ঠিক করে দিচ্ছি।তোমার শাড়ি ঠিক করে দেওয়ার বাহানায় তোমাকে একটু ছুঁতে পারি। রোজ ই এলোমেলো শাড়ি পরবে আর আমি ঠিক করে দিবো।”
এটুকু বলেই আয়াস নিচু হয়ে বসে আমার শাড়ির কুচি ঠিক করে বললো,
আমি কি কুচিগুলো গুজে দিবো।বলেই আয়াস উঠে দাঁড়ালো তার ভাবখানা এমন আমি আর দুই সেকেন্ড চুপ করে থাকলেই সে কাজ টা করে বসবে।
আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম শুনে।দ্রুত তার হাত থেকে কুচি গুলো কেড়ে নিয়ে গুজে নিয়ে বললাম,
“আপনার জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নিন।দুইদিন ঠিকভাবে না খেয়ে আপনি দূর্বল হয়ে গিয়েছেন।”
“কিভাবে খাবো মুগ্ধতা?”
“হাত দিয়ে।”
“আমাকে আরো কতদিন না খেয়ে থাকতে হবে তার ঠিক নেই।দেখো হাত কেটে গিয়েছে,পাতাবাহার গাছ সাইজ করতে গিয়ে।ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।কেউ খাইয়ে দিলে খাওয়া যেতো।বাট কেউ কি দিবে খাইয়ে।”
“চামচ দিয়ে খান।”
“আমি চামচ দিয়ে খেতে পারিনা।ওসব বড়লোকী ব্যাপার আমার পোষায় না।বুঝেছি কেউ হয়তো বলবে না আমি খাইয়ে দিচ্ছি।একজন কষ্ট করে খাবার এনেছে না খেলে সে কষ্ট পাবে।আর তার সামান্য কষ্ট আমার কাছে বহুগুন যন্ত্রনার সমান।যেকোনো ভাবে আমাকে খাবার খেতেই হবে।এখানে আমার ফ্রেন্ড আছে সারিকা ওকে বলি ও খাইয়ে দিবে।”
সাথে সাথেই আমার রাগ হয়ে গেলো অজানা কারনে কিন্তু প্রকাশ করতে পারলাম না।রাগে অটোমেটিক শ শরীর জ্বলে উঠলো।ব্যাপার টা মেনে নিতে পারছিনা উনাকে অন্য কেউ খাইয়ে দিবে।আমি উনাকে ভালবাসি আর না বাসি উনি তো আমাকে ভালবাসেন।তাই উনার পাশে অন্য মেয়ে আসুক এটা আমার ভাল লাগছে না।
আমি আয়াস কে বললাম,থাক সারিকা না ফারিকা তাকে ডাকা লাগবে না।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।এটা ভাবার কারন নেই যে আমি ভালবেসে খাইয়ে দিচ্ছি।একটা মানুষ না খেয়ে থাকবে আমার কাছে ব্যাপার টা ভালো লাগবে না।যেহেতু আমি আছি তখন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আমি না থাকলে সারিকা না ফারিকা তার থেকে খেয়ে নিয়েন।
আয়াস ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।কিছু সন্দেহ করলো নাতো।ওভাবে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ক্যানো?যে ট্যালেন্ট এমনিতেই ভেবে বাড়তি কয়েকটা বলে বসবে তার ঠিক নেই।আয়াস কে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিলাম।যতক্ষণ খাইয়ে দিয়েছি ও এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে অস্বস্তিতে ফেলেছে আমাকে।
আয়াস কে খাবার খাইয়ে দেওয়ার পর আয়াস বললো,
“ইয়ে মুগ্ধতা কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি।”
‘কি পোড়ার।”
“কারো মন।”
“কার মন।”
“বললে স্বীকার করবে না থাক বলবো না।তবে যেদিন সম্পূর্ণ পুড়বে ঠিক ই বলবো।”
এরই মাঝে একটা মেয়ে ইউনিফর্ম পরে আয়াসের রুমে প্রবেশ করলো।
#তুমিময়_বসন্ত
১২.
#writer_Mousumi_Akter
–আয়াসের অফিস কক্ষে নক না করেই লম্বা, ফর্সা,সুন্দরী একটা মেয়ে প্রবেশ করলো।মেয়েটি আয়াসের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।আয়াস ও স্বভাবসুলভ হাসলো।মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সর্বপ্রথম নজর গেলো নেইম প্লেটের দিকে।স্পষ্ট আর ক্লিয়ার ভাবে লেখা আছে সারিকা।নাম টা পড়া মাত্র মেয়েটি আমার অপছন্দের লিস্টে চলে গেলো কিন্তু কেনো সেটা জানিনা।আমি কোনো কথা বলছিনা চুপচাপ বসে আছি চেয়ারে।
সারিকা রুমে প্রবেশ করেই আয়াসের হাত ধরে বললো,
“তুমি আর এত কাজের চাপ নিও না আয়াস। তোমার জন্য চিন্তা হয় আমার। তুমি অসুস্হ হয়ে পড়লে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।প্লিজ আয়াস নিজের কথা ভাবো।নিজের জন্য না হোক অন্য কারো জন্য তো ভাবো।কেউ না কেউ তো আছে যে তোমার সুস্থতায় হাসে,তোমার অসুস্থতায় কাঁদে।অন্তত তাদের কথা নিজের খেয়াল রেখো।তোমার কিছু হলে তার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় আয়াস।”
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার কথা কেউ ভাবে কই আগে তো জানতাম না।”
“আশে পাশে তাকালেই বুঝতে পারবে কেউ ভাবে কিনা।”
আয়াস আবার ও আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে সারিকার থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে নিয়ে বললো,
“আশে পাশেই তো তাকিয়ে আছি। তার চোখ তো কিছুই দেখছি না।”
“আমার চোখের দিকে তাকাও আয়াস।”
আয়াস সারিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ইম সারিকা তোমার চোখের মনি দুটো একটু বাদামী।আরেক টু কালো হলে বেশী বেটার লাগতো।”
“আয়াস তুমি সব সময় কথা ঘুরাও কিন্তু।”
তাদের এসব দেখে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার।কিন্তু রাগ টা প্রকাশ করতে পারছিনা।কিভাবে প্রকাশ করবো।আয়াস ভাববে আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি।ব্যাপার টা মোটেও এমন নয়।আমার জাস্ট রাগ হচ্ছে, আর সেটা অকারণ রাগ।মাঝে মাঝে মেয়েদের এমন হয় নিজে ভাল বাসুক আর না বাসুক তার পাশে অন্য কাউকে দেখলে ব্যাপার টা কেউ মেনে নিতে পারেনা।আমার ও সেইম অনুভূতি হচ্ছে।আমি ভালবাসি না ঠিক আছে তাই বলে কি আয়াসের পাশে অন্য মেয়ে এসে ঘুরঘুর করবে।আমি কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়ালাম চট করে।
“আর বললাম আমি এখন আসি,বাসায় যাবো।”
সারিকা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“মুগ্ধতা রাইট।আসলে আয়াসের জন্য একটু চিন্তিত ছিলাম তাই তোমাকে দেখেও কথা বলা হয়ে ওঠেনি।তারপর কেমন আছো বলো মুগ্ধতা?নিশ্চয় ই অনেক ভালো।”
সত্যি বলতে আমার কোনোপ্রকার হাসি পাচ্ছেনা।আমার হাসি পাওয়ার কথা ও না।মনে প্রচন্ড রাগ নিয়ে আমি অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললাম,
“কেনো অনেক ভালো থাকার কথা কেনো?”
“আয়াসের মতো ভালো স্বামি আছে যার তার তো এমনিতেই ভালো থাকার কথা।”
“ওহ ধন্যবাদ। আমাকে এখন যেতে হবে।বাসায় একটু কাজ আছে। ভালো থাকবেন কথাটা বলেই দরজা খূব জোরে খুলে বেরিয়ে এলাম।”
বাইরে আসতেই কানে আয়াসের কথা ভেষে এলো।আয়াস দাঁতে দাঁত চেপে বলছে,
“আমার হাত ধরার কি প্রয়োজন ছিলো সারিকা।”
“কেনো মুগ্ধতা ছিলো বলে।”
“মুগ্ধতা থাকা আর না থাকা ফ্যাক্ট নয়।”
“তাহলে কি মুগ্ধতার মাঝে জেলাসি এসেছে।”
“জাস্ট সাট আপ সারিকা। এখানে মুগ্ধতার জেলাসি ও ফ্যাক্ট নয়,মুগ্ধতার আমার সামনে থাকাটাও ফ্যাক্ট নয়।ফ্যাক্ট আমার হাত কেনো ধরেছো তুমি।মুগ্ধতার সামনে হোক,আর আড়ালে হোক অন্য কোনো মেয়ে আমার হাত ধরুক আমি সেটা মেনে নিবোনা।এই রাইট শুধু মুগ্ধতার ই আছে।মুগ্ধতা ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের আমাকে স্পর্শ করার অধিকার নেই।মুগ্ধতা আর আমার পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট হতে আমি দিবোনা।”
“কিন্তু আয়াস তুমি কেনো মুগ্ধতার জন্য এতটা পাগল।ও তোমায় ভালবাসে না আয়াস,আর কখনো বাসবে ও না।তোমাকে একদিন হলেও আমার কাছে ফিরে আসতে হবে।”
“মুগ্ধতা আমায় ভালবাসবে। ”
আমি আর না দাঁড়িয়ে সোজা হেঁটে চলে এলাম।মনের মাঝে এটুকু শোনার পর কিছুটা ভালো লাগলো তবুও রাগ হচ্ছে।আমার রাগের কোনো কারণ নেই তবুও রাগ হয় মাঝে মাঝে।অকারণ রাগ কেনো হয় জানিনা।রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি অটো বা রিক্সার জন্য। কিছুক্ষণের মাঝেই দেখি আয়াস আমার পিছু পিছু আসছে।পুরুষ মানুষের হাঁটা দু’লাফে আমাকে ধরে ফেলেছে।
আমি আয়াস কে বললাম,
” কি ব্যাপার চলে এলেন যে অফিস শেষ। ”
আয়াস বললো,
“হুম উপরের অফিসার নিজে থেকেই ছুটি দিয়েছেন।”
“এখন কি বাসায় যাবেন।। ”
“না। ”
“তাহলে?”
“তোমাকে নিয়ে একটু শপিং যাবো।”
“আমি কোনো শপিং টপিং যেতে পারবো না।”
আয়াস বেশ ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি কি রেগে আছো মুগ্ধতা।”
আমার আয়াসের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম,
“নাতো। ”
“তোমার মুখ দেখে তেমন মনে হচ্ছে।”
“না গরমে অস্হির লাগছে সেজন্য।”
আমার আসলেই ভীষণ রাগ হচ্ছে কিন্তু বলতে পারছি না।রাগে সব কিছু ভেঙে চুরে ফেলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিনা।কিভাবে প্রকাশ করবো।এই রাগ প্রকাশের কোনো অধিকার আমার নেই।এখনি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিতে মন চাচ্ছে আমার।
আয়াস আমাকে বললো,
“চলো রিক্সায় একটু ঘুরি।দুজনের রিক্সায় ঘোরার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের।”
এক বাক্য বলে দিলাম “না আমি যাবোনা।”
“আহা!চলোনা ভালো লাগবে।”
আয়াস একটা রিক্সা ডাকলো।রিক্সাওয়ালা আয়াসের ডাকে ভয়ে ভয়ে আসলো।রিক্সাওয়ালার চোখে মুখে ভীষণ ভয়।ভাবছে আয়াস হয়তো অন্য কিছু বলবে।আয়াস রিক্সাওয়ালার মুখ দেখে হেসে দিয়ে বললো আমাদের একটু নিয়ে চলুন।যেদিকে যেতে চায় নিয়ে যাবেন।ভাড়া নিয়ে ভাববেন না ঠিক আছে।রিক্সাওয়ালা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললো চলুন স্যার।আয়াস আমার হাত ধরে টেনে রিক্সায় উঠালো।রিক্সায় ওঠার পর আয়াস বললো,
“হুডি তুলে দিবো।”
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললাম,
“জানি না।”
“এবার ও কি অসহ্য গরমের জন্য বলছো।”
“জানি না।”
“আয়াস রিক্সার হুডি তুলে বললো,মনিহারের দিকে চলুন সিনেমা দেখবো।”
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমি কোনো সিনেমা দেখবোনা।”
“পোড়ামন মুভি চলছে দেখে আসি।মন পুড়ার মতো যন্ত্রণা আর কোনো কিছুতে নেই তাইনা মুগ্ধতা।”
“আমি কিভাবে জানবো আমার কি কখনো মন পুড়েছে নাকি।”
“ওহ আচ্ছা এই হচ্ছে কাহিনী তোমার তাহলে কখনো মন পোড়ে নি।”
“না।”
“তোমার সো কলড বয়ফ্রেন্ড তার জন্য মন পোড়েনি।”
“না মন পুড়বে কেনো?সেকি আমায় রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করেছে নাকি।মন পুড়লে তার পুড়বে বিকজ আমি তাকে রেখে আপনাকে বিয়ে করেছি।”
“পোড়ামন এর বিশ্লেষণ টা জানতে পেরে ভালো লাগলো।”
সারিকাকে নিয়ে কিছু বলতে না পারলে ভালো লাগছে না।আবার আয়াস ভাববে আমি তার প্রেমে পড়েছি।কি মুশকিল।অথচ সারিকাকে নিয়ে কিছু বলতে না পারলে রাগ কমছে না।দম নিয়ে চুপচাপ বসে৷ আছি।
কিছুক্ষণ পরে বললাম,
“আপনার ফ্রেন্ড সারিকা একটু গায়ে পড়া টাইপ আছে তাইনা?”
“কেনো?”
“আপনি খাইয়ে দিতে চাইলেন সে রাজি হয়ে গেলো।”
“ফ্রেন্ড না এইজন্য।”
“আমরা বুঝি কারো ফ্রেন্ড না।আমাদের বুঝি কোনো ফ্রেন্ড ট্রেন্ড নেই।”
“আমার একটু বেশী ক্লোজ।”
আমাদের তো আর ক্লোজ ফ্রেন্ড নেই।আমরা এসব বুঝিনা তাইনা।আমাদের ফ্রেন্ডরা তো এসব বলে না আর বললেও জীবনেও রাজী হতাম না।”
“ওহ আচ্ছা!”
“সারিকা একটু গায়ে পড়া আছে আপনি যায় বলুন না কেনো?”
আয়াস ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আয়াসে চাহনি একটু সুবিধার লাগছে না।এক্ষুনি বলে উঠবে তুমি কি জেলাস ফিল করছো।আয়াসের ঠোঁট কাটা এক্ষুনি বলে উঠবে আমাকে আবাত ভালবেসে ফেলোনিতো।কি অসহ্য একটা মানুষের পাশে বসে আছি।
আয়াস একটু মৃদু হেসে বললো,হঠাত সারিকা কে নিয়ে পড়লে কেনো?তোমার সাথে তো খারাপ ব্যাবহার করেনি।বরং আরো ভালো ব্যবহার করেছে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম,
“কোনো মুভি দেখতে ইচ্ছা করছেনা।অন্য একদিন দেখবো।ভালো লাগছেনা কিছু।রিক্সাওয়ালাকে বললাম রিক্সা ঘুরান প্লিজ।”
আয়াস আর জোরাজুরি করলো না।রাস্তার মোড় থেকে কাশন দিয়ে আমড়া আর পেয়ারা মাখা বেশী করে কিনলো আয়াস।কিছুক্ষণের মাঝেই আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় এসে রিক্সা থামলো।আয়াস রিক্সাওয়ালা কে টাকা দিয়ে বিদায় করে দিলো।মাত্র এতটুকু রাস্তা ঘুরলাম ১৫০ টাকা দিয়ে দিলো।দেখে মনে হচ্ছে আয়াসের গরীব মানুষের উপর ভালোই মায়াদয়া আছে।
যে দোকান থেকে ফোন করেছিলাম দোকানদার আমাকে ডাকলো,
“আপা।”
আমি চমকে গিয়ে তাকালাম।সাথে আয়াস আছে।দোকানদার কি আয়াসের সামনে বলে দিবে আমি ফোন করতে এসছিলাম।বেশ ভয় পেয়ে গেলাম।চোখে মুখে ঘাবড়ে যাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট আমার।আয়াস কিছু বলার আগেই বললাম,শুনুন না যাওয়ার সময় টাকা নিতে ভুলে গেছিলাম উনার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম।
“আয়াস দোকানদার এর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,কি ব্যাপার সুমন কেমন আছো?তোমার ভাবী কত টাকা নিয়েছিলো।”
দোকানদার কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম, “একশ টাকা নিয়েছিলাম।”
আয়াস একশ টাকা দিয়ে বললো”, তোমার ভাবী যা চায় দিয়ে দিবে টাকা নিয়ে ভাববে না কেমন।যা নিতে আসুক তুমি দিয়ে দিবে।আমি টাকা দিয়ে দিবো।”
“ঠিক আছে স্যার।”
আসলে মিথ্যা কথা কখনো গুছিয়ে বলা যায়না।হাতে এক টাকা থাকতেও টাকার কথা বললাম।ভাজ্ঞিস আয়াস খেয়াল করেনি।কিন্তু এই ছেলেটা আমাকে ডাকলো কেনো?আমি যে অভিকে মেসেজ করে গিয়েছিলাম তার কি কোনো উত্তর দিয়েছে।মনের মাঝে আবার ও তোলপাড় শুরু হলো ভীষণ ভাবে।আমাকে যে ভাবেই হোক জানতেই হবে।
চলবে,,
চলবে,
(রি-চেইক নেই।রেসপন্স করবেন সবাই।)
চলবে,,
(কষ্ট করে রেসপন্স করবেন একটু।)