তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১৮

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ১৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

আরহাম মেহেভীনকে বাড়িতে ঢুকেই শুনতে পায়, কারো হাসাহাসির শব্দ। আরহাম ও মেহেভীন গিয়ে দেখে, আরহামের মায়ের সাথে একজন বয়স্ক মহিলা ও একজন যুবতী মেয়ে। মেয়েটাকে দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটা গর্ভবতী। আরহামকে দেখেই বয়স্ক মহিলাটি এগিয়ে এসে বললেন, ‘ আমার আরহাম বাবা যে। কেমন আছো? ‘
আরহাম সৌজন্যের হাঁসি দিয়ে বললো, ‘এইতো ভালো আছি। আপনারা সবাই কেমন আছেন? ‘
মহিলাটি এইবার মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘এইতো বাবা। আমরা ভালোই আছি। এই মিষ্টি মেয়েটা বুঝি তোমার বউ। ‘

‘বউ ‘ ডাকটা শুনে মেহেভীন আরহামের দিকে তাকায়। আরহামের দৃষ্টি নীচের দিকে। আরহাম কোনরকম ‘আসছি ‘ বলে, তাড়াহুড়ো করে উপরে চলে যায়।
মহিলাটির প্রশ্নে সঙ্গে সঙ্গে আরহামের মা বললেন,

‘ হ্যা আমাদের আরহামের বউ। বড্ড মিষ্টি বউমা আমার। ‘

আরহামের মা বুঝতে পারলেন মেহেভীন অজ্ঞাত বয়স্ক মহিলাটি ঠিক কে তা বুঝতে পারছে না। তাই আরহামের মা বললেন,

‘ মেহু মা উনি হচ্ছেন তোমার খালা শাশুড়ি বলতে পারো। আমার মামতো বোন রুবি। রুবি তার বউমাকে নিয়ে আমাদের জন্যে মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। আসলে আমাদের রুবির বউমা মা হতে চলেছে। ‘

বয়স্ক মহিলাটি মেহেভীনকে দেখে কিছুটা সংদেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

‘ তোর বউকে দেখেও তো মনে হচ্ছে সে সন্তানসম্ভবা। যতটুকু শুনেছি। তা আমাদের মিষ্টি দিলি না যে। তার মধ্যে তোর ছেলে লুকিয়ে বিয়েও করলো। তার ও কিছু জানলাম না। এতো কিসের লুকোচুরি? আমাদের বউমার খবর জানার পরে, তো আমরা পুরো এলাকায় জানিয়ে দিয়েছি। আমার ছেলে তো বাবা হওয়ার খবর জানার পরেই,পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরন করেছে। আচ্ছা তোমরা কী কিছু লুকাচ্ছো? ‘

বয়স্ক মহিলাটির এইরকম বিভ্রান্তকর প্রশ্নে মেহেভীন কি বলবে বুঝতে পারছি না। সে তো জানে, সে আরহামের বউ না। কিংবা তার সন্তানও আরহামের নয়। শুধুমাত্র নয়টা মাসই সে এবং তার সন্তান আরহামের পরিচয়ে এই বাড়িতে রয়েছে। আচ্ছা নয় মাস পরে কি হবে? কি হবে এই সন্তানের আসল পরিচয়। এইসব ভাবতে গেলেও মেহেভীনের মাথা ধরে যায়। আরহামের মা কোবরকম হেসে বললেন,

‘ আসলে কিছুটা তাড়াহুড়ো করেই বিয়েটা হয়েছে৷ তার মধ্যেই বাচ্ছা হওয়ার খবর। আরহামের বাবাও এইসময় বাড়িতে নেই।কাল–পরশুর মধ্যে চলে আসবে। তিনি আসলেই আমরা সবাইকে একেবারে মিষ্টি খাইয়েই সুখবরটা জানিয়ে দিবো। ‘

মহিলাটা হেসে বললেন,

‘ তা বউমা জানো আমার ছেলেটা কত পাগল? পুরো বাড়িতে বাচ্ছারা খেলনায় পরিপূর্ন করেছে। আমার বউমাকে একবারেই চোখের আড়াল করেনা। রাত-দিন ধরে শুধু বাচ্ছার নামকরন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।প্রথম বাচ্ছা বলে কথা,কোন শখ আমার ছেলে অপূর্ন রাখবে না। তা মেহু মা তোমার বর ও বুঝি এইসব করেছে? ‘

মেহেভীন ভাবলো বাড়িতে জায়গা দিয়েছে এইটাই অনেক। তার মধ্যে আবার এইসব করবেন উনি? তাও যদি সত্যিকারের বর হতো, তাহলেও মানা যেত।মেহেভীনকে এইসব আপত্তিকর প্রশ্ন থেকে আরিয়ান এসে বাচিয়ে দিলো। আরিয়ান ঢুকেই মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ভাবি তুমি আমার জামা টা কোথায় রেখেছিলে? ঠিক পাচ্ছি না। এসে খুঁজে দিয়ে যাও তো। ‘

আরিয়ানের তালে সায় দিয়ে, মেহেভীন বললো,

‘এইতো আসছি। ‘

মেহেভীন আরিয়ানের পিছনে, আরিয়ানের ঘরে চলে যায়। আরিয়ানের ঘরে এসে যেন, মেহেভীন হাফ ছেড়ে বাঁচে।

মেহেভীন বিছানায় বসে বললো, ‘আজকে তুই আমাকে সত্যি বাঁচিয়ে দিলি। ‘

আরিয়ান নিজের হাতের ঘড়িটা টেবিলে রাখে বলে,

‘ তুই কীভাবে এদের টলারেট করিস বল তো? সারাদিন শুধু এইটা সেইটা জিজ্ঞাসা করতে থাকে। মানুষের ঘরের খবর জেনে, তা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে দিলে এদের পেটের ভাত হজম হয়না। ‘

মেহেভীন ঠেস দিয়ে বসে বলে,

‘ শরীরটা আবারো কেমন যেন দূর্বল লাগছে। ‘
। আরিয়ান কিছু একটা ভেবে বলে,

‘ আজকে মেহু তুই আজকে প্রপারলি খাওয়া -দাওয়া করেছিস? ‘

মেহেভীন অসহায় ফেস করে বলে,

‘ সকালে খেতে পারিনি। বমি আসছিলো তাই না খেয়েই ভার্সিটি চলে গিয়েছি। ‘

‘ আর ইউ সিরিয়াস মেহু? এই টাইমে প্রপারলি খাওয়া -দাওয়া করাটা কতটা ইম্পোর্টেন্ট তাই জানিস? টাইমলি না খেলে তো বেবীর ক্ষতি হবে।সত্যি তোকে কিচ্ছু বলার নেই।’

‘ এমনি এমনি কী আর এই মেয়েকে স্টুপিড বলি আমি? ‘

আরহাম রাগান্বিত সুরে কথাটি বলেই, রুমে ঢুকলো। আরহামকে দেখেই মেহেভীন শুকনো ঢুগ গিলল। এইবার সে গেছে একেবারে। আরহাম মেহেভীনের দিকে তেড়ে এসে বলে,

‘ একটা কথা বললে কি তোমার মাথায় যায় স্টুপিড কোথাকার। ইউ আর জাস্ট আ ব্লাডি গার্ল। ‘

কথাটি বলেই, আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে বলে,

‘ আমার সাথে এখুনি যাবে তুমি। তোমার ব্যবস্হা করছি আমি। ‘

মেহেভীন অসহায় ফেস করে, আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আরিয়ান ভাই আমার। এই জল্লাদের থেকে আমাকে বাঁচা। ‘

আরিয়ান অন্যদিকে ঘুড়ে বলে, ‘ আমি জানি না। এইবার দোষ টা তোর। ‘

আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো, ‘ আমাকে জল্লাদ বলা তাইনা? এইবার সত্যি তোমাকে জল্লাদগিরি করে দেখাবো আমি। ‘

মেহেভীন পারলে তো কেদেই দিবে এইবার।
_______________
মায়রাকে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখে,ঘাবড়ে যায় অভ্র। অভ্র তাড়তাড়ি মায়রার কাছে গিয়ে, মায়রার জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু সে ব্যর্থ। অভ্র মায়রাকে কোলে করে,তাদের বেড রুমটায় নিয়ে যায়। অতঃপর ডক্টরকে ফোন করে জানায়। ডক্টর জানিয়েছে,সে আসছে। অভ্র পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে, মায়রার দিকে ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরানোর চেস্টা করে,তবুও মায়রার জ্ঞান ফিরছে না। অভ্র বুঝতে পারছে না হঠাৎ মায়রার কি হলো?
________________
ডক্টর এসে মায়ারাকে চেকাপ করছে। ইশরা বেগম অভ্রের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তিনি বুঝতে পারছেন তার ছেলেই মায়রার এরুপ অবস্হার জন্যে দায়ি। ডক্টর কিছুক্ষন পরে বললেন,

, ‘কিছুক্ষন পরেই মায়রার জ্ঞান ফিরে আসবে। ‘

‘ কিন্তু হঠাৎ মায়রা অজ্ঞান হয়ে গেল কেন? ‘

অভ্রের প্রশ্নে ডক্টর বললেন, ‘ সেইটা আমিও বুঝতে পারছি না। আপনি বরং আপনার স্ত্রীকে নিয়ে কাল আমার চেম্বারে আসুন। আমি কয়েকটা টেস্ট করাতে চাই উনার। ‘

ডক্টর কথাটি বলেই বেড়িয়ে গেলেন। ইশরা বেগম তার ছেলের কাছে এসে বললেন,

‘ এইসব কি করেছো তুমি অভ্র? আজকে মেয়েটা তোমার জন্যে অসুস্হ হয়ে পড়েছে। মায়রার বাবা যদি মেয়ের এই অবস্হার কথা জানতে পারেন, তাহলে কী হবে বুঝতে পারছো? ‘

অভ্র এইবার মুখ খুলে বলে,
‘ আমাকে ক্ষমা করবে মা। আমার মনে হচ্ছে না আমি ভূল কিছু করেছি। মায়রা মেহেভীনের নামে বাজে মন্তব্য করেছে। তা আমি কী করে সহ্য করবো বলো? যতোই হোক মেহেভীন আমার প্রাক্তন স্ত্রী। আমার মতে, মায়রা যদি পুনরায় মেহেভীনের বাজে কিছু বলে, তাহলে আমার হাত সত্যি সত্যি উঠে যাবে। ‘

ইশরা বেগমের অবাকের সুরেই বললো,

‘ অভ্র এইসব কি বলছো? এখন কি তোমার কাছে মায়রার থেকেক মেহেভীন বেশি কিছু হয়ে গেলো?’

অভ্র কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘হয়তো তাই। ‘

অভ্র আর দাঁড়ালো না। দ্রুততার সাথে বেড়িয়ে গেলো। মায়রার জ্ঞান ততক্ষনে ফিরে গিয়েছে, সে অভ্রের বলা সব কথাই শুনে ফেলেছে। সে শুয়ে থেকেই কেদে উঠে। মায়রার কান্নার আওয়াজ শুনে,ইশরা বেগম মায়রার কাছে যায়। মায়রা ইশরা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ দেখলেন আন্টি আমি বলেছিলাম না? অভ্র আগের মতো নেই। অভ্র দিন দিন পসেসিভ হয়ে উঠছে মেহেভীনের প্রতি। দূর্বল হচ্ছে ধীরে ধীরে।
এইভাবে চলতে থাকলে মেহেভীন ঠিক অভ্রের লাইফে ফিরে আসবে। ‘

‘ আমি থাকতে তা হতে দিবো না। ছেলের সংসার ভেঙ্গে যাক তা আমি কিছুতেই চাইবো না। আমার কাছে একটা উপায় আছে। ‘

ইশরা বেগমের কথায়, মায়রা বললো,
‘কি উপায় আন্টি? ‘

______

আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসায়। মেহেভীনকে বসিয়ে, আরহাম নিজের ব্লেজার টা রেখে, বাইরে চলে যায়। মেহেভীন বুঝতে পারছে না আরহাম হঠাৎ কোথায় গেলো। আরহাম রান্নাঘরে গিয়ে দেখে, রাহেলা রান্না করছে। আরহাম রাহেলার উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ মা কোথায়? ‘

‘ বড় খালা তো এইতো এইমাত্র গেলো তার বইনের লগে কই জানি। আফনে হঠাৎ রান্নাঘরে কিছু লাগবে? ‘

‘ হুম। আমি সুপ রান্না করবো। তুমি এখন রান্নাঘর থেকে যাও। ‘

‘কিন্তু ভাইজান আফনে রান্না করবেন? ‘

‘ নাহলে কী করবে? তুমি তো সুপ করতে পারো না। তার মধ্যে মাও নেই। এদিকে মেহেভীন সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি।বড্ড স্টুপিড মেয়েটা। সুপটা খেলে একটু মুখে রুচি আসবে।দেখি সরো। ‘

রাহেলা রান্নাঘর থেকে সরে গেলো। তার বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছে,যেই আরহাম এক গ্লাস পানিও নিজে থেকে খেত না,সে নাকি আজ রান্না করবে। সত্যি ভাইজান বড়ভাবিকে বড্ড ভালোবাসে। কথাটি বলে রাহেলা মুচকি হাসে।

আরহাম ইউটিউভ বের করে, সুপ রান্না করে ফেললো খুব সহজেই। মেহেভীন রুমে বসে ছিলো, আরহাম সুপের বাটিটা রেখে বললো,

‘ এইযে স্টুপিড মেয়ে এই সুপটা খেয়ে ফেলো। আমার সামনেই খাবে তুমি। যদি এইটা ফিনিশ না করো দেখবে কি করি আমি। ‘

মেহেভীন উঠে দাড়িয়ে বললো, ‘ আন্টি তো বাসায় নেই। তাহলে সুপ কে করলো?
এই সুপ কী আপনি করেছেন? আপনি রান্না করেছেন তাও আমার জন্যে। ‘

‘বড্ড বেশি কথা বলো তুমি। আগে খেয়ে নাও। আচ্ছা প্রচন্ড গরম সুপটা। আমি বরং খায়িয়ে দিচ্ছি। ‘
আরহাম সুপের বাটিটা হাতে নিয়ে, সুপে হাল্কা ফু দিয়ে মেহেভীনের মুখের সামনে তুলে ধরে। মেহেভীন ও খেয়ে নেয়। আরহাম খুব যত্নে মেহেভীনকে খায়িয়ে দিচ্ছে। মেহেভীনের কেন যেন বড্ড ভালো লাগছে। মানুষটা কতটা যত্ন করে তাকে। সবটাই কি দায়িত্ব থেকে? মেহেভীনের মুখে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠে।

চলবে….ইনশা-আল্লাহ। 💖

[জানি বড্ড অগছালো হয়ে গিয়েছে পার্টটা 🙂বাট কি করমু সারাদিন এক্সাম দিয়ে আমার লেখার মুড চলে যায় 🤕তাও আপনাদের জন্যে লিখলাম।কেমন হয়েছে জানাবেন কিনতু 💖]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here