#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১১
#Mitu-মিতু
৯ বছর পর………
________________
“আব্বু আমি এখন বিয়ে করবো না! দেরি আছে বিয়ে করতে। ”
“২৮ বছর পার হয়ে যাচ্ছে তোমার তাসরিফ! আর কত দেরি করবে? ”
“আমার সময় হলে আমি তোমায় বলবো আব্বু! এখন প্লিজ এ বিষয়ে আর কথা বলবে না জোরও করবে না।”
“আর কবে সময় হবে! তুমি প্রতিষ্ঠিত একটা ছেলে এখন বিয়ে করে সংসার শুরু করো।আমাদের দাদা-দাদি হওয়ার বয়স হয়ে গেছে। কবে শুনবো দাদা ডাক”
“যাকে বিয়ে করবো তার বিয়ের সময় হয়নি এখনো আব্বু। বিয়ের প্রসঙ্গ এখন বাদ”
তাসরিফের এমন রাশভারি গলার কথা শুনে চেয়ারম্যান বাড়িতে বসার ঘরে বসে থাকা প্রত্যেকটা ব্যক্তি অবাক হয়ে গেলো।মুর্শিদা বললো
“তুমি প্রেম করছো তাসরিফ? ”
“আম্মা! আমি কখন বললাম আমি প্রেম করছি।আমার একজনকে ভালো লাগে। তার বিয়ের সময় আসুক। আমি তোমাদেরকে বলবো তখন তার কথা।
তাসরিফ বাড়ি থেকে বের হয়ে পরিচিত বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলো। সে বর্তমানে সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে চাকরিরত। কর্মজীবনে পদার্পণ করা কয়েক বছর হয়ে গেছে। কোনো এক ষোড়শীর মায়ায় না পরলে হয়তো এতোদিনে দুই সন্তানের বাবা হয়ে যেতো। নিজ হাতে গড়ে তোলা এক পিচ্চির মায়ার জরিয়ে গেছে সেই বারো বছর আগেই। দুজনের মাঝে বয়সের ব্যাপক ব্যবধান থাকা সত্যেও সে পিছুটান দেয়নি।সে এখন তার অনুভূতি সেই কন্যাকে বোঝাতে চায় যে এখন অষ্টাদশী কিশোরী।
——————-
সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সরু রাস্তা ধরে হাটছে এক অষ্টাদশী কিশোরী সাথে বয়স্ক এক লোক।কিশোরীর হাতে আছে গোলাপি রঙ্গের হাওয়াই মিঠাই।একটু পর পর খিলখিলিয়ে উঠা হাসিতে বয়স্ক লোক আনন্দিত হচ্ছে। তিনি মনে মনে আল্লাহর কাছে আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করেন। মেয়ের সুখ তার জীবনে শ্রেষ্ঠ উপহার।
” তুমি এতোদিন পর আসলে কেনো বাবা? আমার কথা মনে পড়ে না?” রিশার বিষন্ন স্বরের প্রশ্ন শুনে মজিদ মিঞা বললো
“এই কয়দিন কাজ ছিলো আম্মা। হেমন্তের ধান ঘরে তুললাম। তাই আসতে পারিনি।আম্মা মন খারাপ করো না। আজকে সময় নিয়ে তোমার কাছে আসলাম। বাবা-মেয়ে আজকে মেলায় যাবো।”
মজিদ মিঞা ৯ বছর আগে দেওয়া তার কথা সে রেখেছে। রিশা যখন স্কুলে পড়তো তখন রিশার স্কুলের সামনে দাড়িয়ে থাকতো মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য। মেয়ের একটু জ্বরের কথা শুনলে পাগল মতো দৌড়ে চলে আসতো রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়ি। বাবার সাথে থাকতে না পারলেও রিশার বন্ধু হয়ে উঠেছে মজিদ মিঞা।খারাপ লাগা,,ভালো লাগা সব গল্পের ঝুড়ি খুলে বসে মজিদ মিঞার কাছে। রিশার আরেকজন বন্ধু আছে তার গোমড়া মুখো তাসরিফ ভাই।অল্প বয়সে ঝরে যাওয়া রিশা তাসরিফের সান্নিধ্যে এসে আবার হয়ে উঠেছে এক হাসি-খুশি তরুনী। মজিদ মিঞা আর রিশা গল্প করতে করতে পাশের গ্রামের এক গ্রাম্য মেলায় হাজির হলো। মজিদ মিঞা রিশার সেই ছোটবেলার পছন্দের কথা মনে রেখে এখন পর্যন্ত মেয়ের জন্য ঝুড়ি ভর্তি চুড়ি কিনেন।
“আম্মা আসো আগে চুড়ি দেখি।”
“বাবা!আমার অনেক চুড়ি হয়ে গেছে। ”
“তাতে কি আম্মা? আমি আমার আম্মার পছন্দের জিনিস সবসময় আগলে রাখতে চাই। ”
রিশা জানে তার বাবাকে,, তাই বাধা না দিয়ে চুড়ির দোকানে গেলো বাবা-মেয়ে। পছন্দের কালারের চুড়ি নিয়ে তারা গেলো খাবারের দোকানের দিকে। সেখানে পৌছে রিশা,,মজিদ মিঞা দুজনেই অবাক। তাসরিফ আগে থেকেই তার বন্ধুদের সাথে বসে গল্প করছে।
“ভাইয়া তুমি এখানে?”
হঠাৎ পরিচিত কন্ঠে প্রশ্ন শুনে তাসরিফ পাশ ফিরে তাকালো।মজিদ মিঞার সাথে রিশাকে দেখে উঠে আসলো ওদের কাছে।
“এসেছি বন্ধুদের সাথে”
রিশাকে কথাটা বলে তাসরিফ মজিদ মিঞার দিকে তাকিয়ে বললো
“আঙ্কেল ওকে নিয়ে আপনি তাড়াতাড়ি বাড়ি যান।সামনে ওর H.S.C পরিক্ষা। এখন ঘুরে-ফিরে সময় নষ্ট করা বৃথা। ”
তাসরিফের কথায় রিশার মুখ চুপসে গেলো। মনে মনে এসেছে আদেশ দাতা বলে ভেংচি কাটলো।মজিদ মিঞা তাসরিফের কথা অমান্য করলো না। মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলো।
“আম্মা! তুমি মন খারাপ করো না।তোমার পরিক্ষার পর আমরা বেশি বেশি ঘুরবো বুজলে।”
“আচ্ছা ”
রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো মজিদ মিঞা।
“এখন তুমি যাও আম্মা! মনোযোগ দিয়ে পড়া-শোনা করবে।”
“আবার কবে আসবে বাবা?”
“সময় হলেই চলে আসবো।”
রিশা চেয়ারম্যান বাড়িতে ঢুকে গেলে মজিদ মিঞা নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। মজিদ মিঞা চেয়ারম্যান বাড়িতে প্রবেশ করে না তবে মেয়ে অসুস্থ হলে সে দিন-দুনিয়া ভুলে যা।মজিদ মিঞা ভাবে যাকে দিয়ে এই বাড়ির সাথে সম্পর্ক তার সাথেই তো তার বিচ্ছেদ। অতীতে পরনারীতে আসক্ত হলেও এখন মজিদ সাহেরা বানুর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তার করা ছোট এক পাপের জন্য সে আজ মেয়ে থেকে এতদূরে।
_________________
তাসরিফ বাড়ি আসলো সন্ধ্যায়। মেলা থেকে তার প্রেয়সীর জন্য নিজের পছন্দ মতো উপহার এনেছে। তাসরিফ মেলা থেকে ফিরে সোজা এসে রিশার ঘরের সামনে দাঁড়ালো
“ঘরে আছিস?”
রিশা বিছানায় শুয়ে থেকে ফোনে গেম খেলছিলো।তাসরিফের কন্ঠ শুনে ধরফর করে উঠে বসলো।
“আছি ভাইয়া! আসো ঘরে। ”
“আমি এখন ভেতরে যাবো না।তুই বাইরে আয়।”
রিশা জামাকাপড় ঠিক করে ঘরের বাইরে আসলো। তাসরিফ রিশার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে গটগট পায়ে তার ঘরে চলে গেলো। রিশা আনন্দে আত্মহারা। তাসরিফ এনেছে মানে সেরা কিছু এনেছে। রিশা ঘরের দরজা বন্ধ করে ব্যাগ নিয়ে বিছানয় বসলো। ব্যাগ থেকে একে সবকিছু বের করলো।কালো পুতির ডিজাইন করা পায়েল,,চুলের জন্য ১০ জোড়া আলাদা ডিজাইনের রাবার,,স্টোনের কাজ করা ব্রেসলেট সাথে ছোট ছোট আরোও অনেক কিছু। বেশি দেরি না করে রিশা পায়েলটা পায়ে পরে নিলো। হলুদ ফর্সা পায়ে কালো রাঙ্গা পায়েল মানিয়েছে দারুণ। সবকিছু রেখে রিশা বই নিয়ে পরতে বসলো।তাসরিফ বাড়িতে থাকা মানে রিশা সভ্য মেয়ে।তার কাছে মনে হয় গোমড়া মুখো ভাইয়ের ধমকের থেকে পড়তে বসা অনেক ভালো।
______________
সময় নদীর স্রোতের মতো বহমান।জীবন থেকে চলে যাওয়া প্রত্যেক টা মূহুর্ত/সময় আর ফিরে পাওয়া যায় না। সময়ের তালে পরিবর্তন আসে সবকিছুতে। পরিবর্তন এসেছে চেয়ারম্যান বাড়িতেও। এক তলা বাড়ি হয়ে গেছে এখন দোতলা।
রাত ১০ টা…….
চেয়ারম্যান বাড়ির সবাই খাবার টেবিলে উপস্থিত হলেও রিশা এখনো আসেনি।মুর্শিদা রিশাকে ডাকার জন্য উঠে দাঁড়ালেও রিশাকে দোতলা থেকে নামতে দেখে বললো
“ঐ যে আসছে ”
মুর্শিদার কথায় তাসরিফ দোতলা থেকে নামার সিড়ির দিকে তাকালো।প্রেয়সীর পায়ে নিজের পছন্দের পায়েল দেখে আড়ালে একটুখানি মিষ্টি হাসি দিলো।
চলবে……
[পাঠক/পাঠিকাগন গল্প সম্পর্কে অবশ্যই নিজ নিজ মতামত জানাবেন। আর আমার এই ছোট পেজটাতে ফলো করে রাখবেন। আমি গল্প দিলে যেনো সবার আগে আপনাদের কাছে পৌঁছে যায় ]