তুমি আমার প্রাণ পর্ব -১২

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১২
#Mitu-মিতু

হেমন্তের বাতাসের সাথে মিশে থাকে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় ঘুম প্রিয় মানুষ ঘুমাতে দেরি করে না।রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়িতে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যার যার ঘরে চলে গেছে। রিশা যখন নিজের ঘরে যাচ্ছিলো তখন তাসরিফ বলেছে

“ঘরে যাচ্ছিস ভালো তবে ঘুমিয়ে পরলে খুব খারাপ। গিয়ে বই নিয়ে বসবি।আমি একটু পর পর এসে দেখে যাবো কি করছিস।”

“ভাইয়া!তোমার কষ্ট করা লাগবে না তুমি গিয়ে ঘুমাও আমি পরবো।”

“কেমন পরবি তা আমার জানা আছে। বেশি কথা না বলে ঘরে যা আর লক্ষি মেয়ের মতো পরতে বস।”

তাসরিফের গুরুগম্ভীর কথায় রিশা বিরবির করতে করতে ঘরে গেলো

“ধুর! আজ আর ঘুম হচ্ছে না তোর রিশা।” এখন পড়তে বসা লাগবে তোর। মিঃ আর্মির হুকুম। ”

রিশার বিরবির করা মুখ দেখে তাসরিফ একটুখানি হাসলো। মনে মনে বললো

“মহারানী নিশ্চয় এখন আমায় বকছে।ছোট পুতুল আমার।”

তাসরিফ নিজের ঘরে গিয়ে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।এখন কাজ না থাকলেও ঘুমাবে না তাসরিফ। সে জানে রিশা সুযোগ পেলে ঠিক পড়া বাদ দিয়ে ঘুমাবে।আধা ঘন্টা পর তাসরিফ রিশার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজা দিয়ে আলোর রশ্মি আর গুনগুন শব্দ শুনে আবার নিজের ঘরে ফিরে গেলো।ভাবলো কথাটা শুনেছে তাহলে।রিশা জোর করে এতক্ষণ চোখ খোলা রাখলেও এখন তার দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছে না জেগে থাকা। সে টেবিলের ওপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেলো। আরো একঘন্টা পর তাসরিফ আবার রিশার ঘরের সামনে আসলো।ঘরের আলো দেখে বললো

“আজ পুতুল এতো ভালো মেয়ে হলো কি করে? সবসময় তো শুধু ফাঁকি দেওয়ার চিন্তা নিয়ে বসে থাকে আর আজ একটুতেই কাজ।”

তাসরিফ নিজের ঘরে ফিরে যেতে লেগেও আবার কি ভেবে যেনো পিছিয়ে আসলো।দরজায় হাত দিয়ে একটু ধাক্কা দিতেই তা খুলে গেলো।তাসরিফ অবাক হলো না কেননা তারা কয়েকজনই ঘরের দরজার সিটকিনি বন্ধ করে না।রিশাকে টেবিলে বইয়ের ওপর মাথা দিয়ে ঘুমোতা দেখে তাসরিফ হেসে ফেললো।

“এর পড়ার জন্য আমি রাত জেগে আছি আর উনি তো দেখি ঘুমে কাদা। এত ঘুমকাতুরে মেয়ে হয় নাকি।”

রিশাকে কোলে করে বিছানায় আনলো তাসরিফ। ভালোবাসার মানুষ কাছাকাছি থাকলে সভ্য পুরুষের মনেও বাজে চিন্তারা উঁকি দেয় তবে তাদের মধ্যে অনেকে না ছুয়েই ভালোবাসতে জানে। আগে ভালোবাসাকে সম্মান করো,,অর্জন করো তারপর ছুয়ে দেখো বিষয়টা সুন্দর। তাসরিফ রিশাকে ঠিকভাবে শুইয়ে দিয়ে একটুখানি সময় তাকিয়ে থাকলো তার মুখের দিকে।

“এই পুতুলটা আমার চাই।একেবারে আমার নামে দলিল করে। আমার মনের রাজ্যের রানি করে। আমার প্রাণ। ”

রাশভারি গোছের তাসরিফ ও ভালোবাসার কাছে কাবু।সে আর বেশিক্ষণ সেখানে না থেকে নিজের ঘরে চলে গেলো।

______________________

দুঃখের পর সুখের পরশ যেমন সবার জীবনে আসে তেমনি এসেছে রিশার জীবনে। মামা-মামী,, বাবার অঢেল ভালোবাসায় সে পরিপূর্ণ তবে মায়ের সাথে এখনো তেমন সখ্যতা গড়ে উঠেনি।এতোগুলো বছরেও সে তার মায়ের সাথে সবার মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি। কিন্তু এখানে রিশাই পিছিয়ে আছে। ছোটবেলার মাকে নিয়ে মনে যে বিষন্নতা এসেছে তা এখনো কাটেনি। সাহেরা বানু মেয়ের সাথে দূরত্ব মেনে নিতে পারেনা।তিনি অনেকবার চেষ্টা করেছে রিশাকে বোঝাতে তখন তার কিছু করার ছিলো না কিন্তু রিশা মানতে নারাজ।এভাবেই কেটে গেলো কয়েকদিন। তাসরিফের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর দুইদিন পর সে চলে যাবে। আজকে রিশার H.S.C. পরিক্ষার শেষ দিন।শহরে পরিক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় রিশার সাথে তার মামা যায়।আজকে মতিন সাহেবের ইউনিয়নে কাজ থাকায় তাসরিফ কে যেতে হবে।রিশা সকালের নাস্তা শেষ করে তাসরিফের জন্য অপেক্ষা করছেবাড়ির সামনে। বাইকের চাবি নিতে ঘরে এসেছে তাসরিফ। দোতলা থেকে নামার সময় সিঁড়ির পাশের ঘর থেকে কেমন শব্দ আসায় সে ঐ ঘরের দিকে গেলো।ফুপিকে কান্না করতে দেখে তাসরিফ সাহেরা বানুর পাশে বসে মাথায় হাত রাখলো।

“তাসরিফ বাবা!আমার পুতুল কেনো আমায় মেনে নিতে পারে না।আমার সাথে কি একটু কথা বলা যায় না। আমি কি খুব খারাপ? আমার জন্য কি একটুও মন কাঁদে না ওর?”

“তুমি আমার ভালো ফুপি।অনেক কান্না করছো আর না।আমি আজকে পুতুলের সাথে কথা বলবো তুমি এখন কান্না থামাও।”

তাসরিফের কথায় সাহেরা বানু একটু শান্ত হলো।তাসরিফ ঘড়িতে সময় দেখে বেড়িয়ে পরলো।ভেবে রাখলো আজকে রিশার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে।

_________________

“জানিস! ফুপি যেদিন তার চারবছরের ছোট পুতুলকে রেখে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো সেদিন তিনি পাগলের মতো আচরণ করেছিলো।ইনজেকশন দিয়ে ঘুমে রাখা হতো।জেগে উঠলেই কান্নাকাটি শুরু করতো।নাওায়া-খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু পুতুল পুতুল করতো।তার কথাই ছিলো একটা আমার পুতুলকে এনে দেও।আব্বু বোনের এমন অবস্থা দেখে ভেঙ্গে পরে। যে বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আসা হয়েছে সেই বাড়িতে আব্বু অনেকবার গেছে পুতুলকে ফিরিয়ে আনতে।কিন্তু পুতুল যে তার বাবারও প্রাণ ছিলো তিনি মেয়ে দিতে নারাজ।আব্বু প্রতিবার খালি হাতে ফিরে আসতো সেই সময় আর ফুপির কাছে যেতো না।এভাবে কয়েকদিন পার হয়ে গেলো।হঠাৎ একদিন ফুপি চুপিচুপি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো তার পুতুলের কাছে যাওয়ার জন্য।কিন্তু শরীর অতিরিক্ত দূর্বল থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি।মাঝ রাস্তায় মাথা ঘুরে পরে যায়।আব্বু যখন শুনলো ফুপি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে তখনই তিনি বোনকে খুজতে বের হন।দুপুরের খা খা রোদের মধ্যে ফুপি অবচেতন হয়ে পরে থাকতে দেখে আব্বুর জান যায় যা অবস্থা।বাড়ি এনে প্রোপার ট্রিটমেন্ট করার পরেও ফুপি স্বাভাবিক না হলে আব্বু আবার যায় আনন্দপুর। কিন্তু কেনো লাভ হয় না।শেষে তানিয়াকে তুলে দেয় ফুপির হাতে। আমি,,তানিয়া সবসময় ফুপির কাছে থাকতাম।দীর্ঘ এক বছর পর ফুপি স্বাভাবিক হলো।আমাদের কে আগলে তিনি তার মেয়ের অভাব পূরন করতে চাইতো কিন্তু পেরে উঠতো না।রাতের অন্ধকারে তিনি ঠিন না ঘুমিয়ে কান্না করতো এখনো করে। তুই যদি একটু ভালো করে তাকাস তবে দেখতে পাবি ফুপির চোখের নিচে কালি পরে গেছে রাত জাগার কারনে। মাঝ বয়সেই কেমন বুড়িয়ে গেছে।তুই বল পুতুল ফুপির কি দোষ এখানে?”

তাসরিফের গম্ভীর কন্ঠে এতগুলো কথা শুনে রিশা হতভম্ব হয়ে গেছে। সে কেনো এতোগুলো বছর তার মাকে অবহেলা করলো?

চলবে……

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here