তুমি আমার প্রাণ পর্ব -১৩

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১৩
#Mitu-মিতু

নদীর তীরকে মানুষ তার ভালো লাগা খারাপ লাগা সব প্রকাশ করার একটা মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছে। বাড়ির আশেপাশে যদি একটা নদী বা পুকুর থাকে তবে সবাই অবসর সময়ে সেই জায়গাটাতেই আসর জমায়। পানির কলকল শব্দের সাথে এক টুকরো শান্তি বিরাজ করে। শহরের শেষ দিকে একটা নদী বহমান।রিশার পরিক্ষা শেষে তাসরিফ রিশাকে নিয়ে সোজা সেই নদীর তীরে এসেছে।নদীর তীরে রিশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।তাসরিফ রিশার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। রিশার মনে চলছে দ্বিধা।

“আমি আমার মাকে কিভাবে দূরে সরিয়ে রাখলাম। সেই ছোটবেলা যে মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতাম সেই মাকে কাছে পেয়ে আমি মূল্য দিলাম না। বাবার ভালোবাসায় আমি কি সঠিক বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছি।”

তাসরিফ রিশার দিকে তাকালো।রিশার মনের অবস্থা সে বুজতে পারছে।তাসরিফ রিশার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো

“পুতুল চল এবার বাড়ি যাই।অনেকক্ষণ হলো এখানে আসা।আজকে তো আবার তানিয়া আসবে বাড়িতে। ”

“ভাইয়া! মা কি আমায় আর বুকে টেনে নেবে? আমি এমনটা কিভাবে করতে পারলাম।এতো ভালোবাসা আমি কিভাবে পায়ে ঠেলে সরিয়ে রাখলাম। আমি এখন কি করবো ভাইয়া..? আমি কিভাবে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো! বলো ভাইয়া কিভাবে? ”

রিশার কান্নামিশ্রিত কথায় তাসরিফ চমকে উঠলো।

“পুতুল তুই কাঁদিস না।চল আমার সাথে। ফুপি তোকে খুব ভালোবাসে। তুই শুধু মা বলে ডাকবি তাহলেই দেখবি ফুপি তোকে বুকে টেনে নিয়েছে। ”

“ভাইয়া!বাস্তবতা বুজতে পারার পর থেকে আমি মাকে খুব করে কাছে চাইতাম।জুইয়ের মা যখন জুইকে আদর দিতো তখন আমি আমার মাকে খুজতাম। ছোট মায়ের হাতের মার খেয়ে যখন ঘরের কোনে বসে থাকতাম তখন কেউ খোঁজ নিতো না আমার।আমি তখন আমার মাকে খুঁজতাম। ছোট মা যখন বলতো তোর মা তোকে ভালোবাসে না তাই তোকে সাথে নিয়ে যায়নি,,আমার ঘাড়ের ওপর রেখে গেছে তখন আমার খুব রাগ হতো মায়ের ওপর।মনে হতো ছোট মা ঠিকই বলেছে,, মা যদি আমায় ভালোবাসতো তাহলে ঐ নরকে রেখে আসতো না নিশ্চয়ই সাথে নিয়ে যেতো।বাবা যখন আমাকে ভুলিয়ে রাখার জন্য বলতো তোমার মা ভালো না তখন আমার সেটা সত্যি মনে হতো।মাকে কাছে পেয়ে মায়ের এতো ভালোবাসা দেখে মনে হতো সব আদিখ্যেতা। এতোদিন কোথায় ছিলো এতো ভালোবাসা এগুলো প্রশ্ন মনে উকি দিতো।কিন্তু আমি একবারও আমার মায়ের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করিনি কেনো ভাইয়া? আমার এখন দম আটকে আসছে,, আমি কিভাবে আমার মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো ”

রিশা কাঁদতে কাঁদতে নদীর তীরে বসে পরলো।তাসরিফ অস্থির হয়ে উঠলো রিশার কান্না দেখে।তার পুতুলের কি খুব কষ্ট হচ্ছে? পরবর্তীতে আবার ভাবলো সর্গ সুখ পেতে হলে একটু দুঃখ পেতেই হয়।তবে দুঃখ কি সত্যি একটু ছিলো? যে যখন যে অবস্থানে থাকে তখন সে সেই অবস্থান সম্পর্কে অবগত থাকে।জীবন যুদ্ধে আমরা একপাক্ষিক বিচার করতে পারি না।সঠিক সমাধান পেতে হলে নিজেকে অপরাধীর স্থানে দাঁড় করাতে হবে।তাসরিফ রিশার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে রিশার মাথায় হাত রাখলো।বললো

“চল তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই।আর কাঁদিস না পুতুল। তুই শুধু ফুপিকে একবার মা বলে ডাক দিবি দেখবি ফুপি তোকে অবহেলা করে নাকি?”

রিশা চোখ মুছে ঝটপট দাঁড়িয়ে পরলো।আর একমুহূর্ত দেরি করা যাবেনা।

“ভাইয়া! চলো আমি এখনি আমার মায়ের কাছে যেতে চাই। ”

তাসরিফ রিশাকে নিয়ে আনন্দপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

_______________

“মা আমি তোমার পায়ে পড়ি মা তুমি আমাকে ক্ষমা করো।আমি বুঝিনি।ছোটকালে আমার মনে যা গেঁথে গেছিলো তা নিয়েই আমি বসে ছিলাম।পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টাই করিনি।ও মা আমাকে একটু ভালোবাসা দিও আবার। আমার ভুলের জন্য তুমি আমায় দূরে সরিয়ে দিও না মা।আমি তোমায় ভালোবাসি। ও মা বলো না তুমি আমায় ভালোবাসবে?”

চেয়ারম্যান বাড়িতে পৌছার সাথে সাথে রিশা বাইক থেকে নেমে একটুও দাঁড়ায়নি বাইরে। দৌড়ে সোজার বাড়ির মধ্যে চলে এসেছে। সাহেরা বানুকে বসার ঘরে বসে থাকতে দেখে রিশা মায়ের পায়ের কাছে বসে পরলো।সাহেরা বানুর দু পা জরিয়ে ধরে তার মনের আকুতি প্রকাশ করলো।সাহেরা বানু মেয়ের এমন পাগলের মতো অবস্থা দেখে অবাক হলো। এমন মিনতি তার জন্য বুঝি? আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সাহেরা বানু তার আদরের পুতুলকে বুকে টেনে নিলো।তার শূন্য কোল পূর্ণ হলো।

“মহান আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করেছেন।আমার পুতুলকে তিনি আমার কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি আমার পুতুল কে পেয়ে গেছি।”

মতিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো

“ভাইয়া দেখো আমি আমার পুতুলকে বুকে পেয়েছি।আমার পুতুল ফিরেছে আমার কাছে। ভাইয়া দেখো আমার মেয়ে”

চলবে……

[পাঠক/পাঠিকাগন গল্প সম্পর্কে অবশ্যই নিজ নিজ মতামত জানাবেন। আর আমার এই ছোট পেজটাতে ফলো করে রাখবেন। আমি গল্প দিলে যেনো সবার আগে আপনাদের কাছে পৌঁছে যায় ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here