তুমি আমার প্রেমবতী পর্ব -০৭

#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ৭
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা

১৪.
‘দয়া করে একটু সাইড দিন!’

মেয়েলি কন্ঠে পিছনে তাকায় অভি।রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করছে সে।স্কুলে যাবার পথে রাস্তার পাশে ফুসকার দোকান দেখে স্মৃতি আর সাথী বায়না করে ফুসক খাবে।তার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে অভি। তাদের ফেরার অপেক্ষা করছে সে।

অভি পিছনে ঘুরতে নিলে আচমকা হাত লেগে মেয়েটির ফুলের ঝুড়ি নিচে পরে যায়।ফুলগুলো ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে।ফুল গুলো পরে যাওয়ায় আহত হয় প্রেমা।দ্রুত ফুল গুলো তুলতে তুলতে বলে, ‘আপনি চোখে দেখতে পান না?আশ্চর্য! দিলেন তো আমার সব শেষ করে।এই বড় লোক সাহেব’দের জন্য রাস্তায় বেরুনো মুশকিল হয়ে গেছে।’

গায়ে সালোয়ার কামিজ পরিহিত এক অষ্টাদশী কন্যাকে দেখে কিছুটা চমকায় আভি।মাথার চুলগুলো বিনুনি করা।দেখতে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ।অবাক হয়ে মেয়েটির কথা শুনছে অভি।ঠিক আছে তার ভুল হয়েছে।তাতে কি? এর জন্য সব ধনীদের মেয়েটা এই ভাবে বলবে নাকি?

প্রেমা আবার বলে,’ফেলে দিয়েছেন। আবার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন!ভারী অকৃতজ্ঞ মানুষ তো আপনি!ভুল স্বীকার করে একটু সাহায্য তো করতে পারেন।

অভি,’হুম’ বলে ফুলগুলো তুলতে নিলে প্রেমা থামিয়ে দিয়ে বলে,’থাক আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না।হাতে ময়লা লেগে যাবে।ধনীর দুলাল কিনা?’

অভি নিচু হয়ে ছিল তাই প্রেমার সাথে চোখাচোখি হয়।ক্ষানিকটা বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকে অভি।কী সুন্দর সেই চোখ!এই ১ম বোধ হয় কোনো পুরুষ শ্যামকন্যাকে দেখে মোহিত হয়েছে।
কিন্তু পরমুহূর্তেই প্রেমার তিক্ত কথাগুলো মগজে এলোপাতাড়ি ছুটতে শুরু করে।ঠোঁট উল্টিয়ে অভি বলে,’আরে আজব মেয়ে তো আপনি!নিজেই বললেন সাহায্য করতে। আর যখন সাহায্য করতে গেছি তখন অপমান করছেন।এই জন্যই বলে মানুষের ভালো করতে নেই।’

‘সাহায্য করেছেন মানে? আপনি নিজে ভুল করেছেন। ভালোটা কোথায় করলেন আপনি?উল্টো আমার কত ক্ষতি করে দিলেন আপনি।’

‘এই লিসেন! আমি আপনার ফুল গুলো ইচ্ছে করে ফেলে দেই নি।আপনি একটু দূরে দাঁড়ালেই তো হতো!তা নয়তো আমার এত কাছে এসে দাঁড়িয়ে সাইড চাচ্ছিলেন কেন?আপনার দোষেই আপনার ক্ষতি হয়েছে।’

‘আপনাদের মতো বড় লোকেরা নিজেদের দোষ কোনো দিন স্বীকার করতে পারে না।এখন আমার চোখের সামনে থেকে সরেন তো আমাকে যেতে দেন।’

‘আপনার কত টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে?অভি কারো ঋণ রাখে না।বলুন আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি।’

‘সেটার আর কোনো প্রয়োজন নেই।আপনাদের মতো বড় লোকদের আর আছে কি টাকার অহংকার ছাড়া?’

এই বলে প্রেমা যেতে নিলে অভি আবার সামনে এসে দাঁড়ায়।অভি পকেট থেকে হাজার টাকার দুটো নোট বের করে প্রেমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,’আশা করি আপনার ঐ এক ঝুড়ি ফুলের দাম এর থেকে বেশি নয়।এটা নিন।”

প্রেমা শান্ত গলায় বলে,’প্রেমা কারো দয়া নেয় না।আপনি যদি ফুলগুলো ফেলে দিয়ে সামান্য সরি বলতেন আমি হেসে চলে যেতাম।কিন্তু কি বলুন তো,আপনাদের ইগো খুব বেশি।সামান্য ফুল ওয়ালী’কে সরি বলতে আত্নসম্মানে বাঁধে কিনা!আপনার ঐ টাকা নিজের কাছেই রেখে দিন।কোনো দিন আমার মতো অন্য কোনো রাস্তার ছেলে মেয়ে পেলে দিয়ে দিবেন।আমার হয়ে টাকাটা আপনি দান করে দিয়েন।আসি!’

অভি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইল।এই এতটুকু রাস্তার মেয়ে তাকে জ্ঞান দিয়ে চলে গেল!কত সাহস মেয়েটার! অভি প্রেমাকে পিছু ডাকতে নিলে স্মৃতি আর সাথী চলে আসে।

:এই ভাইয়া?ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছিস?আর এই মেয়েটাই বা কে!দূর থেকে দেখলাম এতোক্ষন ধরে দেখলাম কি সব কথা বলছে তোর সাথে?

‘ও কিছু না স্মৃতি। মেয়েটা বোধ হয় রাস্তায় ফুল বিক্রি করে।’

‘তা ফুল ওয়ালীর সাথে কি কথা বলছিলি তুই?স্পেশাল কারো জন্য ফুল কিনছিলে বুঝি?’

‘একদম পাকনামি করবি না।ফুল কিনলে তো আমার হাতেই থাকতো।তোর ঐ মাথায় আজাইরা চিন্তা ছাড়া কিছু আসে?চল চল গাড়িতে ওঠে বসে পর!স্কুলে দেরি হয়ে যাবে!’

অভি আর কথা বাড়ায় না।তাদের স্কুলে দিয়ে আসার উদ্দেশ্যে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

১৫.
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে পড়শী।শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজে গুছে এসেছে সে।আজ কলেজে একটা অনুষ্টান আছে।সেখানেই নৃত্য প্রদর্শন করবে পড়শী।

‘বাহ! পড়শী তোমাকে খুব ভালো লাগছে আজকে।একদম অপরূপা।’

পড়শী পেছনে তাকিয়ে শিহাবকে সৌজন্য মূলক একটা হাসি উপহার দিয়ে ধন্যবাদ বলে।আজকে পড়শীর সাথে নাচবে শিহাব।সেও পড়শীর ক্লাসমেট। শিহাবও পড়শীকে খুব পছন্দ করে।কয়েক বার নিজের মনে কথা বলেছেও পড়শীকে। কিন্তু পড়শী বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে শিহাব’কে এড়িয়ে গেছে।শিহাব পড়শীর সাথে নানা অজুহাতে কথা বাড়িয়ে একটু সময় কাটাতে চাচ্ছে।কথায় কথায় এক পর্যায়ে শিহাব পড়শীর হাত ধরে বলে,

‘আই লাভ ইউ পড়শী।তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিবো না।’

পড়শী হতবাক হয়ে গেছে শিহাবের কান্ডে।কি বলছে কি শিহাব!হাতটা ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকে পড়শী।

শিহাব আরও শক্ত করে পড়শীর হাত ধরে বলে,’আমি সত্যি বলছি পড়শী। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।তোমাকে আজকে দেখে আমি আরও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।তোমাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে।আর..’

কথা শেষ করার আগেই একটা থাপ্পড় পরে শিহাবের গালে।এক ঝংকারে পড়শীর হাতটা শিহাবের থেকে ছাড়িয়ে দেয় সাক্ষর।সাক্ষর নিজেও জানে শিহাব পড়শীকে পছন্দ করে এইজন্য সব সময় নানা অজুহাতে পড়শীকে শিহাব থেকে দূরে থাকতে বলে।কিন্তু আজকে পড়শীর হাত শিহাব ধরেছে দেখে রক্ত উঠে যায় সাক্ষরের মাথায়।

‘এই শিহাব তোর সাহস কি করে হয় পড়শীর হাত ধরার?আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো।’

শিহাবের কলার পাকড়ে ধরে সাক্ষর।পড়শী ছূটে এসে ছাড়িয়ে দেয় শিহাবকে সাক্ষরের থেকে।সাক্ষর রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে আবার পড়শীকে ঠেলে শিহাবের গলা চেপে ধরে।শিহাব নিজেও ধস্তাধস্তি শুরু করে সাক্ষরের সাথে ততক্ষনে লোকজন জমা হয়ে গেছে।অনেকে এই সব দেখে মজা নিচ্ছে।সবার ভীর থেকে তাওহিদ দৌড়ে আসে।এই মাঝে ই পরিস্থিতি খারাপ দেখে সাক্ষর কে সরাতে আবার ছূটে আসে পড়শী। সাক্ষরকে দমাতে না পেরে এক পর্যায়ে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারে পড়শী। থেমে যায় সাক্ষর। তাওহিদ সহ কয়েকজন ছূটে সরিয়ে নেয় শিহাবকে।শিহাব চেঁচিয়ে বলে,’তোর কেউ এতো জ্বলছে?আমি পড়শীকে বলেছি। ওর হাত ধরেছে তুই কে?আমাকে কিছু বলার?তুই কেন পড়শীর ব্যাপারে নাক গলাবি? এই কু*ত্তা*র বাচ্চা কে তুই?’

সেই সব কথা কানে না তুলে থাপ্পড় খেয়ে সাক্ষর বাহু চেপে ধরে পড়শীর। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’আমার অনুপস্থিতিতে অন্য কেউ তোকে স্পর্শ করলে আমার কষ্ট হয় সেটা কি তুই জানিস?আমার অবর্তমানে কেউ তোর হাত ধরে প্রেম নিবেদন করছে আর সেটা তুই উপভোগ করছিস?বাহ!আবার তাকে ছাড়াতে আমার গালে থাপ্পড়ও মা*র*লি!ঠিক আছে।একেই বলে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।’

এই বলে পড়শীরকে ছেড়ে বেরিয়ে যায় সাক্ষর।তাওহিদ সাক্ষরের পেছন পেছন ছূটে। পড়শী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সবার নায়ক আর নায়িকা নিয়ে প্রশ্ন।এই গল্পের নায়ক হচ্ছে অভি আর নায়িকা প্রেমা।আর বাকী কে ভিলেন বা অন্য কিছু গল্পে ক্লিয়ার করবো।আজকে খুব ব্যাস্ত তাই ছোট হয়ে গেছে। রি চেক করতে পারি নি।বাবান ভুল গুলো ক্ষমা করবেন।সাথে থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here