তুমি আসবে বলে পর্ব -১০

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১০

চোখের দৃষ্টি স্থির জানালার বাহিরে। যানবাহন আর দালান গুলোর ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাওয়া দেখছি।ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক তাকানোর মতো সাহস বা মনোবল কোনো টাই পাচ্ছি নাহ। ওভাবে সকলের সামনে কোলে তুলে আনায় আমি একটু বেশিই হতবাক হয়েছি। কাল কাল নাহয় আঘাত পেয়ে হুস ছিলো নাহ,কিন্তু আজ তো সজ্ঞানে ছিলাম,পুরোপুরি হুস ছিলো। মস্তিষ্ক আর নিউরন সবটাই সচল ছিলো। আর তার চেয়েও একটু বেশি চঞ্চল ছিলো হৃদযন্ত্র টাহ। বক্ষের ভেতরের ধুকপুকানি যেনো নিজ কান অবদি পৌছে ছিলো। হুট করে কোলেই নেওয়ায় কোনো রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারিনি। শুধু অপলক চোখে তাকিয়ে ছিলাম। সুদর্শন চেহারা টার দিকে, যার এসবে কোনো হেলদোল ই নেই। যেনো দায়সারা ভাবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। সকলের সামনে দিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে হনহন করে গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো। শিমু পেছন পেছন এসে দরজা টা খুলে দিতেই খুব সাবধানে আমায় বসিয়ে দিলো। শিমু গিয়ে বসলো পেছনের সিটে। মিনমিন করে বললাম

-আমিও পেছনেই বললো

তৎক্ষনাৎ গা হিম করা কঠিন কণ্ঠে কাঠকাঠ জবাব দিলো

-আ’ম নট এ ড্রাইভার

ব্যাস,হয়ে গেলো। আর কোনো শব্দ ব্যায় করার সাহস হয়নি। চুপচাপ দরজা খুলে পাশে এসে বসলো, চাবিটা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। এভাবে তাকানো দেখে ফট করে মাথা নুইয়ে নিলাম, ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে,এদিকে ঝুকে আসলো। ইয়া খোদা উনি আমার দিকে কেনো ঝুকে আসছেন,আবারও থা’প্পড় দিবে না তো। ভয় ভয় মুখ করে দু’হাতে গাল ঢেকে ধরলাম।
আমার ধারণা টিকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে উনি,সিট বেল্ট টা লাগিয়ে দিয়ে আবারও নিজের জাগায় ফিরে গেলো। ইসস,কি একটা গাধা টাইপ কাজ করে ফেললাম, আমায় নিশ্চয় টিউবলাইট ভাবলো। ধ্যাত,উনি থা’প্পড় কেনো দিতে যাবেন। এই আমার মাথা টা গেছে কিসব ভেবে কি করি।

সরু চোখে আমার দিকে একবার চেয়েই স্কেলেটরে চাপ দিয়ে, অভ্যস্ত হাতে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়িটা ঝড়ের বেগে ছুটিয়ে নিলো।
আর আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বাহিরে তাকালাম। সেই তাকিয়েছি আর এদিক ফিরি নি।
উনার দিকে না ফিরেই স্পষ্ট বুঝতে পারছি এর মাঝে উনি একটা বারের জন্যেও এদিক ফিরে তাকায়নি। কেমন গম্ভীর মুখ করে হাত ঘুরিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে ঘাড় টা ঘুড়িয়ে তাকালাম। নীল রঙের শার্ট টার হাতা যত্নসহকারে ভাজ করে কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে। ফর্সা হাতটাতে কালো ঘড়িটা যেনো বেশিই মানিয়েছে। ছোট ছোট লোম আবৃত শুভ্র হাত টা দক্ষতার সাথে ঘুরিয়ে নেওয়া টা দেখতে একটু বেশিই ভাল্লাগছে, কেমন অপলক তাকিয়ে আছি। ছোট ছোট পলক ফেলে তাকিয়ে আছে লোকটা রাস্তার দিকে, একবার ও এদিক ফিরছে নাহ। আর আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে একবার ও চোখ ফেরাতে পারছি নাহ।

নাহ এটা মোটেও ঠিক নাহ,নিজেকে এতোটা বেহায়া কোনো দিন লাগেনি। আমি কিছুতেই আর ও চেহারার দিকে তাকাবো নাহ,ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তার দিক দৃষ্টি স্থির করে রাখলাম বাড়ি পৌছানো পর্যন্ত। আচানক ব্রেক কসায় ভাবনা ভঙ্গুর হলো। বাড়ি পৌঁছে এসেছি। সিট বেল্ট টা খুলে গাড়ি থেকে নেমে এদিকটাই এসে আমার পাশের দরজা টা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বললাম

-আম আমি এবার হেটে যেতে পারবো

-শুধু হাটবে কেনো,তুমিতো দৌড়ে যেতে পারবে,
যাও

উনার কথায় ভীষণ রাগ হলো। একটু ব্যাথা পেয়েছি বলে এভাবে বললো। আমার পা ঠিক থাকলে ঠিক দৌড়ে যেতাম,উনার সামনে এক মুহূর্ত থাকার ইচ্ছে আমার নেই। মুখটা ফুলিয়ে চুপ করে থাকলাম।
আমার দিকে স্থীর তাকিয়ে আছে লোকটা। কি হলো? আবার রেগে গেলো?
চোখ তুলে উনাকে দেখতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে হাটুর নিচে আর ঘাড়ের পেছনে হাত গলিয়ে এক ঝটকায় তুলে নিলেন। তাল সামলাতে না পেরে দু’হাতে ঝাপটে ধরলাম। এক হাতে শার্টের বুকের কাছটার অংশে মুচড়ে ধরে আরেক হাতে ঘাড় জরিয়ে ধরলাম। আবারও গটগট করে হাটা ধরলো।
উফ এই লোকটা এমন কেনো। এমন অদ্ভুত লোক আমি দুটো দেখিনি,এই ভালো তো এই গোমড়ামুখো। মামনী কি করে পেটে রেখেছিলেন নয় মাস আল্লাহ জানে,ওখানেও হয়তো এমন হুটহাট তোলপাড় করতো আমি সিউর।
বড়ো বড়ো পা ফেলে সিড়ি বেয়ে এসে দাড়ালো চারতলায়,আমার রুমের সামনে। হো করে মুখ দিয়ে দম ছাড়ে। আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষন নিঃশব্দে চেয়ে বললো

-আমি যদি কলিং বেলে চাপ দেয় তাহলে বেলের সাথে তোমার কোমড় টাও বাজবে

মানে? কোমড় কেনো বাজবে আজব,আমার কোমড় কি বেল নাকি। উনার কথায় ভ্রু কুটি করে তাকালাম।
আবারও ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বললো

-পাগল করে ছাড়বে

বিড়বিড়িয়ে বললেও আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি

-কি বললেন আপনি,আমার জন্য পাগল হয়ে যাবেন? কে বলেছিলো আপনাকে আমায় কোলে তুলে আনতে হ্যাঁ? আমিতো বললাম একাই যেতে পারবো। নিজেই আমায় গুন্ডার মতো তুলে আনলেন আবার খোটা দিচ্ছেন যে পাগল হয়ে যাবেন

একদমে হরহর করেই কথাগুলো বললাম। চুপচাপ কথাগুলো হজম করে বললেন

-শেষ? নাকি আরও কিছু বলার আছে? তোমায় শান্তশিষ্ট ভেবেছিলাম,তুমি তো আস্ত ঝগড়ুটে

-কিহ আমি ঝগড়ুটে? আমি কি আপনার সাথে ঝগড়া করেছি? আমায় ঝগড়ুটে বললেন আপনি।

-ভুলভাল দিকে মাথা না ঘামিয়ে ভালো কিছুতে দিলে এতোক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হতো নাহ।
আমার হাত নিশ্চয় তিনটা নয়,তোমাকে দু’হাতে রাখলে বেল দেবো কিভাবে

ওহহ এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম উনার কথার মানে,তা বেল দিতে হবে এটা সোজাসাপ্টা বললেই হতো এতো পেচিয়ে কথা বলার কি আছে

-হ্যাঁ তো বেল দিতে হবে তা সোজা বললেই হয়,এতে পাগল হয়ে যাওয়ার কি আছে হ্যাঁ

বলেই বেশ রাগের সাথে ধপধপ করে তিনবার বেল বাজালাম। ততোক্ষণে শিমু এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে,এই বলদ টারে এখন পারলে ধাক্কা দিয়ে ফেলি,কই এতোক্ষনে কই মরেছিলো। কাটকাট দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম ওর দিকে, ও আমার দৃষ্টি দেখে বললো

-কি হয়েছে? তুই কি রেগে আছিস

নাও শুরু হলো,আসলে আমার ই দোষ ওর দিকে তাকানোই ভুল হইছে আমার।

-তেমন কিছুই হয়নি,তোমার বান্ধবীকে রোজ এক গ্লাস দুধ খেতে দিও,বুদ্ধি বাড়বে

উনি কি বলতে চাইলেন,আমার বুদ্ধি নেই? অপমান! আবারও আমায় অপমান করলো। এ আমি কিছুতেই মানবো নাহ, রেগে আবারও পরপর তিনবার বেল চাপলাম
এবার ভেতর থেকে দরজা খুললো

-ওয়েলকায়া…

বাকিটুকু বলতে পারলো না,আগেই হা হয়েই দাড়িয়ে রইলো।হ্যাঁ আমি জানতাম। এভাবে আমায় মেঘালয় চৌধুরীর কোলে দেখলে আর কিছু হোক না হোক আরশির বাচ্চির মাথায় জগাখিচুরি ঠিকি হবে। ওকে এভাবে স্টাচু হয়ে থাকতে দেখে মেঘালয় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললেন

-আম, ভেতরে যাওয়া কি নিষিদ্ধ?

উনার কথায় মুখটা বন্ধ করে ফরফর করে বললো,
-আরে না না আসুন। নিষিদ্ধ কেনো হবে আপনাদেরই তো বাড়ি,আসুন আসুন

বলেই সরে দাড়ালো,মেঘালয় আমায় নিয়ে সোজা ঘরে গিয়ে খাটের উপর আধসোয়া করে বসিয়ে দিলেন। তখনি অনেকগুলো শব্দ একসাথে কানে আসলো

-ওয়েলকামমম!!!

এমন শোরগোলের শব্দে চমকে গিয়ে তাকিয়ে দেখি রাফাত,নিবিড় আদ্রিশ সবাই দাড়িয়ে আছে। হাতে কতোগুলো বেলুন আর ফুল নিয়ে। মাথায় কিসব টুপি পরে আছে, এতোক্ষনে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম,পুরো ঘরটাতে লাইট আর বেলুন দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।
এই সবই করছিলো তাহলে সবাই মিলে,এর জন্য সকাল থেকে একটার ও সুরত খানা দেখবার সৌভাগ্য হয়নি।

-এই সর সর,আমায় যেতে দে তোহ

বলেই আদ্রিশ শিমুকে সরিয়ে এসে আমার পাশে বসে আমার হাতে দুটো বেলুন ধরিয়ে দিয়ে আমারও মাথায় কুইন ব্যান্ড পরিয়ে দিয়ে বললো

-আফু দেখ পুরো ঘর কেমন সাজিয়েছি,তোর পছন্দ হয়েছে? আমি জানি পছন্দ হয়েছে। বেলুন গুলোও আমি লাগিয়েছি,আর তোর পছন্দের জারবেরা ফুল এনেছি।

-ওমাহ,ওমনিই হয়ে গেলো? বেলুন গুলো না আমি আনলাম,তুই তোর নামে কেনো চালাচ্ছিস

রাফাত তেতে বলে উঠলো,রাফাতের কথায় সায় দিয়ে আরশি বললো

-আর ফুলগুলো তো আমি এনেছি,তুই কোন সাহসে নিজের ক্রেডিট নিচ্ছিস

-ক্রেডিট কই নিলাম,তোরা এনেছিস তো কি ওকে তো আমিই দিলাম,আমি দিলাম বলেই ফুলগুলো এতো ফ্রেস আর সুন্দর,নাহ তো তুই তো ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনেছিলি,বিশ্রী দুর্গন্ধ আসছিলো

আরশি এবার রেগে মেগে বলে উঠলো

-তাই? ফুল তুই এনেছিস বলে ভালো হয়েছে তাইলে তো এবার এটাও বলবি যে কেক টাও তুই এনেছেস বলে ভালো হয়েছে

-অবশ্যই ই তাই। আমিই তো অর্ডার করে বলেছি স্পেশাল করে বানাতেই এই জন্যেই ভালো হয়েছে।

-তোরা দুজন থামবি??

নিবিড়ের ধমকে দুজন তর্কাতর্কি থামালো। নিবিড় হতাশ হয়ে বললো

-কেক টা না আফুকে সারপ্রাইজের জন্য ছিলো? দুটো ঝগড়া করতে গিয়ে হরহর করে বলে দিলি।

নিবিড়ের কথা শুনে আরশি আর আদ্রিশ বকা বনে যায়,জিভে আলতো কামড় দিয়ে আরশি বললো

-এই যাহ,আমিতো ভুলেই গেছি। এই সব দোষ এই উগান্ডার,এই আদ্রিসশা তোরে কেডায় কইছিলো আইতে হ্যাঁ, তুই যেখানেই থাকিস গোলমাল করে দিস।।

-ওহ তাই বুঝি? তুই যে বলদ ছাগলের মতো ভরভর করে সব উগড়ে দিস সেই দোষ আমারে দিচ্ছিস,তোরে পাচতালার ছাদে টাঙায় রাখুম বলদি

-আদ্রিইশা..

-থামবি তোরা দুজন,নাহ তো দুটোকেই বাথরুমে লক করে রাখবো

-কিন্তু তুই তো একা উঠতেই পারবি নাহ,ডক্টর নিষেধ করেছে

ব্যাস,আমার ধমকে দুজন চুপ করলেও, গগণ্যমান্য বলদেশ্বরি তার বিখ্যাত বানী দিয়ে ধন্য করলেন।চোখ পাকিয়ে তাকালাম শিমুর দিকে,আমার এখন ওকে এতো বিশ্রী গালি দিতে ইচ্ছে করছে যে আমি ভাবতেই পারছি নাহ কি বলবো

-আফু?

ছোট্ট নরম কণ্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি,রুচি আপু দাড়িয়ে মিষ্টি কে কোলে নিয়ে। ইস বাচ্চাটাকে ভীষণ মিস করছিলাম,ওকে দেখে হাসির রেখা ছড়িয়ে গেলো অধর জুড়ে। আপু মিষ্টিকে কোলে নিয়েই আমার পাশে এসে বসলো

-কেমন আছিস আফু? ব্যাথা কেমন,ভালো লাগছে আগের থেকে?

রুচি আপু পরপর প্রশ্ন করলো।

-আমি ঠিক আছি আপু,তুমি একদম অস্থির হইয়ো নাহ তো

এবার মিষ্টি পাশ থেকে তুতলিয়ে বললো

-আফু মাম্মাম বলেছে আমি পচা কাজ কলেচি বলে তুমার ব্যাতা লেগেচে। আমি সরি আফু

ইস বাচ্চাটার গোলগাল চোখ আর লাল গাল দু’টো দেখলেই মন ভরে আদর দিতে ইচ্ছে করে,

-না সোনা,তুমি তো আমার এঞ্জেল। তুমি তো পচা কাজ করতেই পারোনাহ

বলেই এক হাতে জড়িয়ে নিলাম। মিষ্টি ও আদর পেয়ে চুপটি করে পরে থাকলো আমার কোলে
রুচি আপু মুখ ছোটো করে বললেন

-আমায় ক্ষমা করে দিস আফু,সবটা আমার জন্যেই হয়েছে। আমি যদি মিষ্টি কে দেখে রাখতাম তাহলে ও দৌড়ে যেতেও নাহ,আর না তোর এতো বড়ো ক্ষতি হতো। তোর কিছু হলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতাম নাহ

আপুর চোখের কোনে পানি জমা হয়ে গেলো আমি এক হাতে আপুর হাতটা ধরে বললাম

-এভাবে কেনো বলছো আপু। আমারতো কিছু হয়নি,ঠিক আছি আমি। আর মিষ্টি কি তোমার একা? আমার নাহ? ওর জন্য কি আমি এটুকু করবো নাহ,এতোটাই পর আমি?

আমার কথা শুনে রুচি আপু আমায় বকে জড়িয়ে ধরে বললো

-কে বললো তুই পর,তুই তো আমার ছোটো বোনের চেয়েও বেশি আফু। তোর মতো লক্ষী বোন যার থাকবে তার চেয়ে ভাগ্যবান কেও নাহ

বলেই কেদে দিলো, আমিও জড়িয়ে নিলাম আপুকে,চোখের কোনে বিন্দুকণা আমারও জমেছে। আসলেই, কিছু সম্পর্ক থাকে যা রক্তের হয়না,যার সামাজিক পরিচয় তুচ্ছ,কিন্তু মোনের গহীনে সম্পর্কের ভালোবাসা এতোটা ছাড়িয়ে যায় যে তাদের আপন থেকেও আপন মনে হয়। মানুষে মানুষে সম্পর্ক ভালোবাসা শুধু আত্মীয়তা থেকেই হয়না। দুটো মন,সম্পর্ক একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ আস্থা ভরসা থেকেই তৈরি হয়। নাহ তো আপন মানুষ গুলোই তো কষ্ট বেশি দেয়। কিছু রক্তের বাইরের সম্পর্ক গুলোও ভীষণ মধুর হয়,কিছু মানুষের ভালোবাসা স্নেহ কোনো নাম ছাড়াই হৃদস্পর্সী

আপু আমায় ছেড়ে দু’হাতে মুখ ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো

-তুই ভীষণ ভালো রে, দোয়া করি তুই অনেক সুখী হ,সৃষ্টিকর্তা এক আকাশ সমান ভালোবাসার অধিকারী করুন তোকে, দোয়া করি, এক আকাশ পাগলামী ভালোবাসার ভুক্তভোগী হও। এতোটা বেশি ভালোবাসা তোর জন্য হোক, যেনো তোর মুখের এই অমূল্য হাসি কখনো না কমে।তোর মতোই কোনো পবিত্র মনের রঙিন ভালোবাসায় মুড়ে থাক, সুদুর কোনো প্রেমপ্রাঙনে কারো সবটা পাগলামী ভালোবাসা তোর জন্য হোক। কজ ইউ ডিসার্ভ ইট।

আপুর কথায় কেনো জানি ভীষণ লজ্জা লাগলো। স্মিত হেসে মাথা নামিয়ে নিলাম। তখনি পেছন থেকে আরশি বলে উঠলো

-এবার কিন্তু একটা সেলফি চাই ই চাই,সবাই একসাথে একটা সেলফি না তুললেই নাহ

-হ্যাঁ আমিও তো ভাবছি,এখনো বান্দরের মতো মুখ করে ছবি তোলার কথা শুনলাম নাহ কেনো,না শুনলে তো মনেই হবে নাহ এখানে কোনো বিন্দি উপস্থিত আছে।

-রাফাতত,তোরে আজকে কুচি কুচি করুম

রাফাত আর আরশির কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে উঠলো।
হাসতে হাসতেই চোখ গেলো বা পাশের দিকটাই।

গম্ভির মুখ খানার হাসি বুঝি এতোটাই স্নিগ্ধ হয়? কোনো পুরুষের হাসিতেও বুঝি মনের ভেতরে এতোটা ঝংকার ওঠে, হাসির তালে চোখের দু পাশের ভাজে যেনো নিজেকে হারানো যায়। হাসির সাথে নীলাভ চোখ দুটোও যে হাসছে অপলক চেয়ে আছি হঠাৎ ই কানে বেজে উঠলো রুচি আপুর বলা কথা টা “সুদূর কোনো প্রেমের আঙিনায় কারো পাগলামি ভালোবাসা তোর জন্য হোক”
ধক করে উঠলো বুকের ভেতর, এমন কেনো হলো,এই লোকটাকে দেখে এমন কেনো মনে হলো,কেনো হৃদয়হরণ করা বাক্যটার প্রতিধ্বনি তার চেহারা পানেই থমকে গেলো।
চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। আমি কিছুতেই দেখবো নাহ লোকটাকে কিছুতেই নাহ।

এর মাঝেই রাফাত আর আরশি গিয়ে কেক আনলো।এদের পাগলামি কখনও কমবে নাহ, ছুড়ি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আদ্রিশ বললো

-আফু ফটাফট কেক টা কেটে বল কেমন হয়েছে, আমি এনেছি

পেছন থেকে আরশি ধপ করে এক ঘা বসিয়ে দিলো আদ্রিশের পিঠে

-বাপ রে,,এ হাত না লোহা৷ পিঠ ফাডাই দিছে বাপের সরকারি টাকাই লোহা কিন্না খাস নাকি ছেমরি

ওদের কথা শুনে আবারও হাহা করে হেসে উঠলো সবাই।
পাশ থেকে পুরুষালী চমৎকার কণ্ঠে বললো

-তাইলে তোমরা থাকো আমি আসি, কোনো প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলবে

মেঘালয়ের কথায় রুচি আপু বললো

-এখানে আমাদের সাথে আরেকটু থাক মেঘ

-না আপু,আমার অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কাজ পেন্ডিং আছে,আই হ্যাভ টু গো

বলেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন,আপুও জানে উনাকে বলে কোনো লাভ নেই,তাই অন্যদিকে মনোযোগী হলেন।
আমি চেয়ে আছি লোকটার যাওয়ার পানে,একবার ও কি ফিরে তাকাবেন নাহ?
গটগট করে হেটে বের হওয়ার দরজাটার নব মুচরে খুললেন। জানি তো তাকাবেন নাহ,কেনোই বা তাকাবেন। সামাজিকতার খাতিরে সাহায্য করেছিলেন, এখন তো উনার আর আমায় নিয়ে ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই,আমিই অহেতুক ভাবছি। মনটা হঠাৎ ই ভীষণ খারাপ হয়ে এলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ তুলে আবারও তাকাতেই শরীর জুড়ে অদ্ভুত দোলা লেগে গেলো,কেনো এতো ভালো লাগছে।
লোকটা এক হাতে দরজার নব ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিকেই তাকিয়ে আছে,চকচকে নীলাভ মনি টা স্পষ্ট অপলক অবলোকন করছে আমায়। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে গেলো। তবুও তাকিয়ে আছি দুবার পলক ঝাপটে মৃদু ঠোঁট এলিয়ে চলে গেলেন
এখনো কেমন অস্থির লাগছে,উনি চোখ দিয়ে কি ইশারা করলেন? যাওয়ার আগে হাসলো না একটু?
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here