তুমি আসবে বলে পর্ব -১৯+২০

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব – ২০ (বোনাস)

-আজব তোহ,সমস্যা কি তোর,এমন মুখ কেনো করে আছিস যেনো কেও তোর গালে দুটো চা’টা মেরে গেছে

আমার কথায় ও কোনো হেলদোল নেই শিমুর,ও এখনো ওর বিশ্রি এক্সপ্রেসন দিয়ে মুখটা থেত’লে যাওয়া টমেটোর মতো করে রেখেছে।

-তুই যদি এক সেকেন্ডের মধ্যে তোর মুখটা ঠিক না করিস তাইলে,আমি জু’তা আনুম কিন্তু ভম্বলের বাচ্চা

আমার কথা শুনে বহু কষ্টে মুখটা স্বাভাবিক করলো শিমু। আমার চেয়েও বেশি আতং’কিত ও হয়ে আছে, যেনো বড়ো সরো কোনো ঝটকা খেয়েছে, যখন থেকে মেঘালয় চৌধুরীর ঐরূপ আচরণ এর কথা বলেছি তখন থেকে পটকা ফেটে যাওয়ার পর যেমনটি হয়, মুখায়ব ঠিক তেমনি করে রেখেছে

-মেঘালয় ভাইয়া এমন টা বলেছে। আমারতো ভাইয়া কে দেখলেই ভয় ভয় করে, কেমন রাগী রাগী মুখ করে থাকে,এবার থেকে তো আমি উনার সামনেও যাবো নাহ আর

লেও ঠেলা, আমি কার কাছে কি বললাম,আমার এখন নিজের গালে নিজের জুতা স্যান্ডেল দেওয়ার ভীষণ ইচ্ছে করছে, ইচ্ছা টাকে নিজের মনের ভেতর ই মাটি চা’পা দিয়ে উঠে আসলাম ভম্বল টার সামনে থেকে,আমি যতোক্ষণ থাকবো ওর মুখটা ঠিক ওমন ই থাকবে। আপাতত একটু ফ্রেসনেস দরকার।
রান্নাঘর থেকে এক কাপ কড়া করে ব্ল্যাক কফি আরেকটা লাইট কফি করে আনলাম।
লাইট করে বানানো টার কাপটা ওর সামনে রেখে বললাম,
-এটা গেল গিলে মাথা টা একটু চমোলক্ক বানা আর আমারে উদ্ধার কর,বলদের শেষ বংশধর।

বলেই ওর দিকে আর না তাকিয়ে নিজের কফি কাপটা নিয়ে বারান্দায় হাটা ধরলাম। রাত বেশ হয়েছে,এইতো মিনিট বিশেক আগেই ঘড়িটা ঢং ঢং শব্দে জানান দিলো রাত দশটা বেজেছে।
তখন এসেই বিছানাতে পরেছি,উঠেছি একেবারে সন্ধ্যার পর। ফ্রেস হয়ে আবারও ঘুম দিয়েছি। ঘুম ভাঙলো শিমুর ডাকে। উঠে আবারও ফ্রেশ হয়ে দুজন বসে খাচ্ছিলাম, আর সেই সময় ই আমি ওকে বিকেলে ঘটা অপ্রিতিকর ঘটনা জানায়। সাথে ও বাড়িতে থাকতে যা যা ঘটেছিলো। আর তার ফলেই গাধা টা ওমন রিয়েকশন দিয়েছে, তবে ওদের অভিব্যক্তি যেমন ই হোক ওদের কিছু না বলে আমি থাকতে পারি নাহ। ভেবেই মুচকি হাসলাম

অন্ধকার বারান্দায় টিমটিমে আলো জ্বলছে। এই লাইট গুলো আমি আর শিমু মিলেই লাগিয়েছি। হরেক রকমের আলোয় ওখন আশপাশ টা টিপটিপে আলোয় খেলা করে দেখতে বেশ লাগে আমার। রাতের মৃদু বাতাসে দোলনাতে বসে আরামে কফিতে চুমুক দিচ্ছি। গায়ের ঢিলাঢালা নাইট গাউন টা ফ্লোরে ছড়াছড়ি হয়ে আছে।

শান্ত আখিদ্বয় সুবিস্তীর্ণ আকাশের বুকে লেপ্টে থাকা মিটিমিটি মুক্ত কণা আর থালা সমান রূপালী আলোয় নিবন্ধিত।
উপরটায় ভীষণ শান্ত ভাবে থাকলেও ভেতরে তার তিনগুণ বিপরীতে তোলপাড় চলছে..
ঘাড় কাত করে তাকানো , ঠোঁট বাকানো মৃদু হাসি, রাগের দাপটে শক্ত হওয়া চোয়াল, লাল হওয়া কান, এলোমেলো চুল, সুগভীর সমুদ্রের ন্যায় শান্ত চোখের অস্থির চাহনি আর হুটহাট ছড়িয়ে পরা তার পুরুষালি কড়া সুবাস। সবটা যেনো মন মস্তিষ্কে গেথে আছে, কিছুতেই কোনো ভাবেই এক মুহূর্তের জন্য দূরে সরাতে পারছি নাহ। হৃদপিণ্ডের হাতুড়ি পেটা যেনো দিন দিন অস্থিরতায় মগ্ন হচ্ছে, হন্য হওয়া আন্দোলনে আমায় এক দন্ড শান্তি দিচ্ছে নাহ।

কেমন একটা অসহনীয় পীড়ন অনুভূতি গ্রাস করে সবটা জুড়ে, এটা সহ্য করতেও পারছি নাহ,আর নাহ পারছি ছেড়ে থাকতে। আমার পার করা সুদীর্ঘ উনিশ টি বসন্তে এ যেনো এক নতুন চৌকাঠের বেরা। যা আমায় চারপাশে ঘিরে ধরেছে। সবকিছু কেমন অন্যরকম ঠেকছে নিজেকে চিনতে একটু দায় ই লাগছে।

এমন হাজারো চিন্তায় বুদ হয়ে থাকা মস্তিষ্কে মাথা এলিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে, মিহি দোলায় দুলাচ্ছি দোলনা টা। ইদানিং নিজেকে কেমন অচেনা লাগে। ভাবনার মাঝেই হঠাৎ মনে হলো একজোড়া চোখ ভীষণ মনোযোগ দিয়ে পরখ করছে আমায়। ধপ করে চোখ খুলে তাকালাম

আবারও,, আবারও সেই সুগভীর নয়নে নয়ন মিললো। ডিপ অ্যাশ কালার ফুল স্লিভ টি-শার্টের সাথে কালো রঙের ট্রাউজার পরনে। হাত দু’টো বরাবরের মতো পকেটে গুজে ঘাড় টা দাম্ভিকতার সহিত উচু রাখলেও উপলক দৃষ্টি নিবন্ধ কয়েক গজ নিচের বারান্দা টাতে। চোখটার চোখ প্রতিক্রিয়া হীন। আবার কেমন বহুরূপী ও। এক এক সময় এক এক রঙ দেখায়। কখনো চোখ টাকে সুগভীর সমুদ্র লাগে যেখানে ডুব দিয়ে নিজেকে তলিয়ে ফেলা যায়,আবার কখনও একেবারেই নির্ভীক, দায়সারা। যেনো অনুভূতিশূন্য।
ফট করে দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম। ওই চোখে তাকাতে চাইনাহ আমি। কিছুতেই নাহ। কিন্তু বেহায়া মন আমার কোনো বাধা মানবে নাহ জানি বারবার সেই নিষিদ্ধ জায়গা টাতেই নিজেকে হারাবে।
তাই এখানে আর এক মুহূর্ত ও নয়, কাপ টা হাতে নিয়ে এক ছুটে ঘরের মধ্যে চলে গেলাম, ধুকপুকানির ছোটাছুটি আমায় কিছুতেই শান্তি দিচ্ছে নাহ ইদানীং কোনো ভাবেই নাহ

~

মেঘের দৃষ্টি এখনো স্থীর পালকের বসে থাকা জায়গা টাই,মৃদু বাতাসে দুলে উঠা দোলনা টায় যেনো সফেদ জামা পরিহিত মেয়েটির প্রতিচ্ছবি এখনো জ্বলজ্বল করছে।
আচ্ছা মেয়েটা কি একটুও বুঝতে পারে নাহ যে তার মতো প্রাপ্তবয়স্ক চড়া মনের মানুষ টার ভেতরের পেলব অনুভূতি গুলো তার নামেই ডানা ঝাপটাচ্ছে। শুধু তাই নয় মনের ভেতর ভীষণ যন্ত্রণা ও দিচ্ছে। অদ্ভুত অনধিকার চর্চা করাচ্ছে বারবার। নিষিদ্ধ আবদারের ডালি বিছিয়ে দিচ্ছে বারবার। এই তো তার এখন যখন তখন মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করে, কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করে, নরম গাল দু’টোকে আঙুলের সাথে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে। ভীষণ টান লাগে মায়া লাগে। ওই চেহারায় অন্য কারো নজর একদম সহ্য হয়না,একদম ই নাহ।
কেনো ভেতরের দম বন্ধ করা অনুভূতির ডানা ঝাপটানোর শব্দ এক মুহূর্ত স্থির থাকতে দেয়না তাকে কেনো?

____________________

-আফু, এক গ্লাস জুস দে নাহ শিগগির।

-হুহ,শুরু হইলো, একটু কি করলো কি না উনার ঢঙ শুরু হইলো।

-তা তোর কি,তুই তো সারাদিন খালি গিলতে পারিস,আর দুলাভাইরে জালাইতে, আল্লাহ জানে তোরে পাচটা বছর ক্যামনে সহ্য করছে ভাই, আমারতো দিনে তিনবার তোরে চান্দে পাঠাই দিতে মন চাই

-রাইত্তা, আজাইরা রাফাইত্তা তোর পিঠ আজকে ফা’ডামু।

বলেই একটা প্ল্যাস্টিকের বোতল তুলে নিয়ে তা’ড়া দিলো রাফাত কে,রাফাত হুরমুরিয়ে সোফা থেকে উঠে দৌড় দিলো,সারা ড্রয়িং রুমটাতে ছুটাছুটি করছে রাফাত আর রুচি।

-আরে তোরা থাম, কি করছিস টা কি, বাচ্চাদের মতো এমন ছুটাছুটি তোরা করলে মিষ্টি কি করবে বল তোহ

নিলাশা চৌধুরীর কথায় দুজন ছুটাছুটি থামিয়ে চুপ করে দাড়ালো। রাফাত মুখ ফুলিয়ে বললো

-আপুকে বকো তোহ, ও নিজে তো আমায় সাহায্য করবেই নাহ উল্টো সারাদিন আমার পিছনে পরে থাকবে

-আমি তো ঠিক ই বলেছি তুই..

রুচিকে সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই নিলাশা চৌধুরী থামিয়ে দিলেন,
-থাম তো,তোরা না আমার লক্ষী বাচ্চারা, এমন করিস নাহ,রুচি মা দেখ তো মেঘ কোথায়, আজকে অফিসে যেতে পারেনি তাই সকাল থেকেই ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে একটু ওর নাস্তা টা দিয়ে আই না মা।

-এক্ষুণি যাচ্ছি মামনী
বলেই রাফাত কে একটা ভেংচি কেটে চলে যায়

-দেখলে মামনী, সবসময়ই এমন করে, আমাকে একটুও ভালোবাসে না কেও।

নিলাশা চৌধুরী রাফাতের কথায় হেসে,নিজের আচল দিয়ে রাফাতের মুখ মুছিয়ে দিয়ে বলে
-কে বলেছে বাবা,তুই তো আমার সোনা ছেলে তোকে আমরা সবাই ভালোবাসি।

মামনীর আহ্লাদে আটখানা হয়ে জড়িয়ে ধরে রাফাত।

-এই দেখো তাফাত,আমি পুল এনেচি

তোতলানো কথা গুলো শুনে রাফাত পেছনে তাকিয়ে দেখে পালক মিষ্টি কে কোলে নিয়ে হাস্যজ্বল চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে, আর মিষ্টির গলায় গলায় মাথায় হাতে ছোট ছোট মালা পরিয়ে দিয়েছে ফুলের। পালক কে দেখে এগিয়ে এসে রাফাত বলে

-আফু,কই ছিলি তুই আমিতো ডাকছি কখন থেকে

আমি হেসে উত্তর দিলাম।
-এইতো নিচেই ইয়ার্ডে, এঞ্জেলের সাথে খেলা করছিলাম।

-এখন তুই আমার সাথে চল। নিচে সব গুলো ওয়েট করছে।

-হ্যাঁ এক্ষুনি যাবো। মামনী ডেকেছিলো শুনেই আসছি।

-তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু
বলেই ছুট লাগালো। কিন্তু ওই যে, রাফাইত্তা তো। অকাজ করবেই,যাওয়ার সময় মিষ্টির মাথায় পরয়ে দেওয়া মালা টা একটানে ছিড়ে নিয়ে চলে গেলো।।আর মিষ্টির কান্না শুরু, বাচ্চাটা ফুল মাথায় দিয়ে কতো আনন্দ করছিলো ব’জ্জাত টা কাদিয়ে রেখে গেলো।

-কি হয়েছে রে,মিষ্টি কাদছে কেনো আফু।

রুচি আপু রান্নাঘর থেকে খাবারের ট্রে টা হাতে নিয়েই এসে জিগাসা করলো।

-আর বলোনা তো। এই যে ফুলের মালা গুলো করে দিয়েছি, এতে বেজায় খুশি হয়েছে, রাফাত যাওয়ার সময় টান দিয়ে একটা ছিড়ে দিলো এই জন্যেই

-দেখেছিস ওকে কি আমি সাধে বকি,সব জাগায় বাদরামি। বোন আমার একটা কাজ করে দে না প্লিজ,না করিস না

-আরে এতো বলার কি আছে, তুমি দাও তো কি কর‍তে হবে

আমার কথা শুনেই রুচি আপু হাত থেকে ট্রে টা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েই বললো,

-এই নাস্তা টা একটু কষ্ট করে মেঘ কে দিয়ে আই না বেচারা সকাল থেকে না খেয়ে আছে, নিচে অনেক কাজ আমায় যেতে হবে

বলেই মিষ্টি কে কোলে নিয়েই হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলো। আমি এখনো থ হয়ে আছি৷ আমি কি না এখন মেঘালয় চৌধুরীর ঘরে যাবো, ওই সিরিয়াস চৌধুরী কে খাবার দিতে।
কিছুক্ষণ আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। কি করবো? ওই লোকটার ঘরে ঢুকার চেয়ে পানিতে ঝাপ দেওয়া ঢের ভালো। উলটা পালটা ভাবতে ভাবতে এসে দাড়ালাম কাঠের উপর ইউনিক স্টাইলে নকশা করা বিশাল দরজাটার সামনে। এই লোকটার সব জিনিস ই অন্যরকম। আলতো ভাবে টোকা দিলাম দরজায় দুবার। কিছুক্ষণেই সেই চিরচেনা পুরুষালি ভরাট গলা টায় ছোট্ট দু শব্দের উত্তর আসলো
-কাম ইন

কতোদিন পর শুনলাম এ কণ্ঠ? যানা নেই,সেদিন বিকেলের পর প্রায় দু’দিনের বেশি উনার সামনেই পরিনি। আজকেও পরতে চাইনি। কিন্তু জলে থাকবো আর পানি ছুবোনা এই ব্যাপার টা যেমন অকল্পনীয়, তেমন যার বাড়ির প্রতিটি মানুষের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছি,সেই বাড়ির লোকটাকে অগ্রাহ্য করে চলাটাও একই।

আজ সন্ধ্যায় পার্টি হবে মিষ্টির জন্মদিন আর মেঘালয় চৌধুরীর দেশে ফেরা উপলক্ষে। খানকিটা দেরি করে করলেও কোনো প্রকার ত্রুটি রাখেনি, সে নিয়েই ব্যাস্ততা সারা বাড়ি জুড়ে।

দরজায় কিছুক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে করে ঠেলে ভেতরে এক পা রাখলাম। গা বরাবর হিম করা বাতাস বইয়ে গেলো। এসির পাওয়ার টা একটু বেশিই বাড়ানো। আস্তে করে আরও দু কদম এগোতেই নজরে আসলো সুদর্শন চেহারা টা। ইস চোখ দু’টো যেনো পরম আবেশে ভরে গেলো। এই দুটো দিনে যেনো দু বছর পর দেখছি। অপলক চেয়ে আছি,পলক ফেললেও যেনো মিস করে যাবো। হালকা নীল,কালো,আর সাদা রঙের মিশ্রনের একটা চেক শার্ট আর কালো জিন্স পরে,ডিভনে বসে ল্যাপটপ টা দ্রুতগামী হাতে চালাচ্ছে। সকালের রোদ এসে উনার গলা,চিবুক,ঠোঁট ছুয়ে যাচ্ছে। টকটকে গড়নের চেহারা টা যেনো আরও জ্বলজ্বল করে উঠছে। উফ ছেলে মানুষ কেনো এতো হ্যান্ডসাম আর পার্ফেক্ট হবে,চোখ ফেরানো যায়না যে

-দেখা হলে এগিয়ে আসো

উনার কথা শুনে আকাশ থেকে পরলাম।ইয়া মা’বুদ আর কতো অপদস্ত হবো উনার সামনে,আমি যে হা করে চেয়ে আছি এটাও বুঝে গেলো চোখ না তুলেই? একটুও অবাক হলো নাহ,আমার প্রথম উনার ঘরে আসায়?

-তুমি কি ওখানে দাড়িয়েই দিন পার করে দিতে চাও? আমার কিন্ত খুব একটা আপত্তি নেই। তবে কেও যদি এমন হা করে তাকিয়ে চোখ দু’টো দিয়ে স্ক্যান করে তাকলে কিন্তু একটু লজ্জা লাগতেই পারে,আফটার অল আ’ম ভেরি ডিসেন্ট পারসন ইউ নো

বলেই ল্যাপটপ টা পাশে রেখে দুহাত ছড়িয়ে গা এলিয়ে বসলো। আমার পা যেনো জমে গেছে, লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে গেছে। এই লোকটা আমাকে বিশ্রী পরিস্থিতিতে ফেলার পিএইচডি করেই জন্মেছে। চুপচাপ ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে খাবারের প্লেট টা সামনে রেখে বললাম

-মামনী কাজে ব্যস্ত তাই আমাকে খাবার দিতে বলেছিলো

-মামনী তো আমাকে খাইয়েও দেয়,তো তোমাকে শুধু প্লেট টাই দিতে বলেছে, নাকি খাইয়ে দিতেও বলেছে।

উনার কথা শুনে,চোখ তুলে চেয়ে দেখি কেমন বাকা বাকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে,আমি তাকাতেই ইনোসেন্ট একটা মুখ করে বললো

-না মানে,তুমি দিতে চাইলে আমি কিন্তু আপত্তি করবো নাহ,যদিও তুমি আমাকে খাওয়াবে কম আমাকেই চোখ দিয়ে গি’লে খাবে বেশি, তবুও আমি এ্যাডযাস্ট করে নিবো যদি তোমার ইচ্ছে করে

আল্লাহ,কি বলছে এই লোক। এতো পটরপটর কথার ঝুলি ফুটলো কি করে চৌধুরীর মুখে,এমনি তে তো বো’ম মার’লেও বেটার মুখ থেকে প্রয়োজন ব্যতীত কথা বেরোই নাহ। আবার কেমন মিচকা হাসি দিচ্ছে।

-দেখুন,আমায় দিতে বলেছিলো। দিয়েছি ব্যাস,আমার কাজ শেষ
বলেই পেছন ঘুরে হাটা ধরলাম

-তোমায় কি হা করে তাকিয়ে থাকতেও বলেছিলো তোমার মামনী?

উনার কথা শুনে পা দুটো জমে গেলো। আজ উনি পণ করেই রেখেছে আমায় সব রকম ভাবে বিব্রত করবেন,আর করছেন ও।

-কাম হেয়ার

উনার কথা শুনে চুপচাপ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছি,লোকটার হাবভাব কিছুই ভালো ঠেকছে না আমার

-আই ড’ন্ট লাইক রিপিটিং, কা’ম হেয়ার

বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো,আমার বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শব্দ করছে,এখন কি তাকিয়ে থাকার জন্য বস্তায় ভরে ফেলে দেবেন আমায়।

-তুমি কি চাও আমি আসি?

উনার কথা শুনে চোখ দু’টো আপনা আপনি বড়ো হয়ে গেলো, কোনো প্রশ্ন হীনা,চুপচাপ গিয়ে দাড়ালাম উনার পাশে। আমায় পাশে বসতে ইশারা করে খাবারের প্লেট টা হাতে তুলে নিলেন। আমি এখনো দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছি।কোনো রকম ঢক গিলে বসলাম।
স্যান্ডউইচে কামড় লাগিয়ে আরামসে গিলে যাচ্ছেন লোকটা একটু পরপর জুসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন।আমার সেদিন খেয়াল নেই। এক কোণায় জড়োসড়ো হয়ে বসে হালকা গোলাপি রঙের ওড়না টা অনবরত আঙ্গুলে পেচাচ্ছি।
উনি খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে তাকালেন। কোনো শব্দ হীনা চুপচাপ তাকিয়ে আছে,উনার এভাবে তাকানোই বেশ ভড়কে গেলাম৷ কোনো হেলদোল নেই নীলাভ চক্ষু জোড়া তীক্ষ্ণ ভাবে চেয়ে আছে আমার দিকে

-আ আম..কি হয়েছে

আমার প্রশ্নেও কোনো হেলদোল নাই,এখনো স্থীর তাকিয়ে। এবার আমার বুকের ভেতর দামামা শুরু হয়েছে। আমি এখন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি লোকটা রা’ক্ষস হয়ে আমাকে বস্তা’য় ভ’রে ফেলে দিচ্ছে। ধপ করে দাঁড়িয়ে পরলাম উনি আমার দিকে কড়া চোখে তাকালেই আমি “মামনী” বলে চিৎকার দিয়ে এক দৌড়। কোনো থামাথামি নেই এক ছুটে সিড়ি বেয়ে নেমে দরজার বাইরে

মেঘ এদিকে হাহা করে হেসেই চলেছে অনবরত। মেয়েটার অমন ভয় ভয় মুখ দেখে মেঘের মনে দুষ্টু বুদ্ধি চেপেছিলো। ইচ্ছে করে ওকে বিব্রত করার জন্য চেয়েছিলো ওভাবে। কিন্তু এতোটা ভয় পেয়ে যাবে ও আশা করেনি, এবার আর ভুলেও এমুখো হবে না মাস খানেকের মধ্যে। মেঘ আবারও হেসে দিলো পালকের ভীতু চেহারা টা মনে করে
“পাগলি মেয়ে” বলেই আবারও ল্যাপটপে হাত দিলো
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১৯

দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। দীপ্তিমান সূর্য টা আকাশের পশ্চিমের বুকে ঢলে পরবে প্রায়, ক্লান্ত শরীরে ঢুলতে ঢুলতে হাটছি রাস্তার পাশ দিয়ে। আমার সামনেই শিমু আর আরশির ননস্টপ পকপক চলছে।
এক তো এই বারো হাইত্তা কাপড় তার উপর সারাদিন লোক সমাগমে থেকে আমার অবস্থা পাগল প্রায়। এতো লোকের ভীড় আমার একেবারেই পছন্দ নয়। এনার্জি লেভেল একেবারে লো। কিন্তু ঢাকা শহরের যেই জ্যাম রিকশাতে উঠলে পাক্কা দু ঘন্টা বসে ঝিমোতে হবে।
রাফাত আর নিবিড় গেছে আদ্রিশের বাড়ি। আদ্রিশের বাবা মা তাদের অফিস থেকে দুদিনের টুরে খাগড়াছড়ি গেছে সাথে দশ বছরের মেয়ে আমিশা কেও নিয়ে গেছে। তাই সারা বাড়িতে আদ্রিশ একা,এই সুযোগের ব্যবহার করে তিনটা মিলে আজ নাকি পার্টি করবে। ওদের পার্টি? বেশ জানা। সারা বাড়ি ঘর গোয়াল বানাবে বাদর গুলো। মুভি,গেইম আর ফুডপান্ডা এইসব ই গলো ওদের পার্টি।

আর আমার সামনের দুজন আরেক কাহিনি নিয়ে ব্যস্ত। আরশি বিরতিহীন ভাবে আরাব ভাই কেই ঘেটে চলেছে, পার্পল কালার পাঞ্জাবীতে নাকি ভাইকে পুরো কাপকেক লাগছিলো,ও পারেনা খে’য়ে ফেলতে। উফ আরশি আর ওর আরাব ভাই,পাগল হয়ে যাবো। শিমু চোখ মুখ কুচকে হজম করছে ওর কথা,একেবারে মাথার হালুয়া বানিয়ে দেওয়ার মতো পেচাল।
পেছন থেকে কয়েকজনের হাসি আর কথার ইঙ্গিতে ফিরে তাকালাম

-হেই বেবি,লুকিং সো হ*ট

এহেন কথায় তাকিয়ে দেখি অল্পবয়স্ক ছেলেদের তিনজনের দল। মুখে ঝুলানো শয়’তানি হাসি আর বিদ্রুপ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আগা গোড়া নজর বুলাচ্ছে।

-হাই? আই লাইকড ইউ সো মাচ,ওয়ানা বি মাই গার্লফ্রেন্ড?

ওদের মুখের এহেন কথায় বেশ বিব্রত হলাম। ছেলেগুলো বয়সে আমার ছোটই হবে, এই বয়সেই এদের এরূপ আচারণ?ওদের মাঝে আরেকজন বলে উঠলো

-রাস্তায় এমন হিরোইন এর দেখা মিললে তো এখন থেকে আর ফিল্মের টিকেট কাটতে হবে নাহ

বলেই হাসাহাসি শুরু করলো

-ফিল্মের টিকেট কাটা লাগবে কি নাহ জানি নাহ,কিন্তু হাসপাতালের টিকেট আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখো, পরে যদি ইমার্জেন্সি বেড না পাওয়া যায়

চেনা স্বর শুনতেই চমকে উঠলো পালক।পাশ ফিরে তাকাতেই আবারও ঝংকার তুলে উঠলো শরীর জুড়ে।
গায়ের কোট টা খুলে রেখেছে, শুভ্র সফেদ শার্ট টার বুকের কাছে দুটো বোতাম খোলা। কবজি পর্যন্ত আবৃত রাখা শার্ট এর হাতা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত রাখা। জেল দিয়ে পরিপাটি করা চুলগুলোও দমকা হাওয়ায় এলোমেলো।
তার কালো রঙের মার্সিডিজ টার হেলান দিয়ে বরাবরের মতোই দুহাত পকেটে গুজা,তবে এবারের দৃষ্টি টা ভিন্ন। ভীষণ তীক্ষ্ণ কড়া চোখে চেয়ে আছে ছেলেগুলোর দিকে।
পকেট থেকে হাত বের করে সোজা হয়ে দাড়ালো। আমার দিকে একবার চেয়ে পা ফেলে এগিয়ে একদম সামনে গিয়ে দাড়ালো ছেলেগুলোর।

আমাকে মন্তব্য করা ছেলেটার গাল এক হাতে চেপে ধরে বললো

-দুধের দাতগুলো এখনো পরেনি, এক থা’প্পড়ে দাত গুলো যখন ফেলে দেবো। নতুন দাত গজালে আবার এসো খোকা, একদম চান্দের সফর করিয়ে দেবো।

বলেই ছেলেটার পিঠে বার কয়েক চাপড়ে দিলো।
ছেলেগুলোর মুখ একদম কাচুমাচু করে আছে।
একবার আমার দিকে তাকিয়ে স্থান ত্যাগ করলো তৎক্ষনাৎ।
এবার লোকটা ঘাড় ঘুরিয়ে আমায় দেখলো। এক মুহূর্ত অবলোকন করে পুরো ঘুরে দাড়ালো। একদম আমার সামনে বরাবর এসে দাড়ালো

-সব জাগায় পাকনামি করা তোমার বাজে অভ্যাস হয়ে গেছে? আমাকে না বলে কেনো এসেছো

শেষের কথাটি বেশ ধমকের সুরে বললে কেপে উঠি আমি। মাথা নিচু রেখেই আস্তে করে বললাম

-আমি ভেবেছি আপনি চলে গেছেন

আমার উত্তরের সাথে সাথেই বললো

-রাস্তা দিয়ে আকাশ বাতাস এক করে গালগল্প জুড়ে হাটা ধরলে দেখবে কি করে গেইটের সামনে কেও ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে

উনার কথায় মাথা উচিয়ে তাকালাম,শীত মোটেও নেই এসময়, কিন্তু শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো। আলাদা এক অনুভূতি!অন্যরকম ভালো লাগার শিহরণ!

এবার আমার থেকে চোখ সরিয়ে পেছনের আপদ দুটোর দিকে তাকালেন মেঘ। দুটো গল্প করতে করতে এদিকের খেয়াল ই নেই। ওমন হুট করে ছেলেদের কথা শুনে থামলেও কোনো রকম অভিব্যক্তি দেওয়ার আগেই গুরুগম্ভীর চেহারা টা দেখে চুপসে গেছে দুটো। এরা কেনো জানি মেঘালয় নামক লোকটাকে দেখলেই পজ হয়ে যায়,শিমু তো খুব বাধ্য না হলে সামনেই আসবে নাহ

-এভাবে আরও কিছুক্ষণ দাড়িয়ে এসেম্পিলি করার ইচ্ছে আছে?

মেঘের কথা চিন্তা ভাবনা সরিয়ে নড়েচড়ে দাড়ালাম। শিমু গুটিগুটি পায়ে আমার কাছে এসে দাড়ালো,

-আফু তোরা যা হ্যাঁ, আমার বাড়ি এসে গেছে

বলেই পাশের গলিটার মধ্যে দৌড় লাগালো আরশি। ভাবা যায় কতো বড়ো ব’জ্জাত, আমাকে রেখে ঠিকি পালালো।
লম্বা চওড়া লোকটা গটগট করে হেটে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে আমার দিকে তাকালো। যেনক চোখ দিয়েই ভ’স্ম করে দিবেন। উনার চেহারা দেখে আরও রাগিয়ে দেওয়ার মতো রিস্ক আমি নেবো নাহ, সুরসুর করে গিয়ে বসে পরলাম পাশের সিট টাই। আমি বসতেই ধপ করে সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো। খানিক কেপে উঠলাম। শিমুও ভয়ে ভয়ে পেছনে গিয়ে চুপচাপ বসে পরলো।

আমরা বসতেই উনিও এসে বসলেন ড্রাইভিং সিটে। গাড়িটা স্টার্ট করেই দারুন বেগে ছুটিয়ে নিলো।ফর্সা পুরুষালি হাত টা বেশ জোরেই এলোমেলো ভাবে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে চলেছে,হাতের সাথে ঘড়িটাও নড়ছে সমানতালে।আমি অপলক তাকিয়ে আছি,বেশ ভাল্লাগছে, চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে নাহ,ফর্সা মুখটা গম্ভীর, কান দুটি লাল টকটকে হয়ে আছে, আচ্ছা উনার কান কেনো লাল হয়ে আছে?
আমার ভাবাভাবির পরোয়া না করেই দুম করে ব্রেক কষলো। পনেরো মিনিটের রাস্তা দশ মিনিট না ছুতেই পেরিয়ে দিয়ে বাড়ির ফটকে গাড়িটা দাড় করালো।
গাড়িটা থামাতেই শিমু তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে বাড়ির ভেতর হাটা ধরলো,এক প্রকার পালালো বেয়াদব টা। ভাবা যায়! কত্তো বড়ো গিরগিটি, এমনি সময় আঠার মতো চিপকে থাকে,আর এখন আমারে এই রা’ক্ষস টার কাছে রেখে পালালো। আজ ওর গু’ষ্টির স’ষ্টি যদি না করেছি।

আমিও সিট বেল্ট টা খুলেই বেরোতে যাবো তখনই পুরুষালি শক্ত হাতটা আমার ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে এক টান দিলো৷ তাল সামলাতে না পেরে হুরমুরিয়ে পরলাম প্রসস্থ বুকটাই। আমায় পিঠে উনার হাত ছুয়ে চেপে ধরলো। সারা শরীরে কম্পন দিয়ে উঠলো আমার, ঝড়ের বেগে নিঃশ্বাস টানছি৷ অস্থির লাগছে। এসি থাকা সত্ত্বেও কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে শুরু হয়েছে।
পিঠের মধ্যিখান থেকে ধীরে ধীরে হাতটা উপরে উঠছে, এ অসহনীয় অনুভূতি নিতে পারছি নাহ। রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোলপাড় শুরু হয়েছে দুহাতে খামচে ধরলাম উনার বুকের কাছে।
এবার উনার ছোয়ায় বেশ রূঢতা প্রকাশ পেলো পিঠের মাঝখানে ন’খ বসি’য়ে দিলেন, যন্ত্রণায় অস্ফুটে আর্তনাদ বেরিয়ে আসলো মুখ থেকে।

আমার মুখের কাছে মুখ এনে হিসহিসিয়ে বললেন

-এতোই যখন পিঠের তিল দেখানোর শখ তাহলে এটাও বাদ দিয়ে দাও
বলেই এক টান দিয়ে ব্লাউজের পেছনের দিকটাই ছিড়ে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব, পিঠে হাতরে দেখি বেশ খানিকটা কাপড় ছিড়ে গেছে, উনি বার কয়েক শ্বাস ফেলে আবারও বললেন

-নেক্সট টাইম ভুলেও যদি এ ধরনের ড্রেস আপ দেখেছি, আমার চেয়ে খারা’প কেও হবে নাহ

বলেই এক ঝটকায় আমায় ছেড়ে দিলো।
এবার উনার এতোটা রাগের কারণ স্পষ্ট।।
এই ব্লাউজ টা রেডিমেড কেনায় বেশ ঢিলাঢালা হয়েছিলো, যার ফলে পিঠের বেশ অনেকটা অংশই অনাবৃত হয়ে ছিলো। রুচি আপু শাড়ির আচলের সাথে সেফটি পিন লাগিয়ে এডযাষ্ট করে দিয়েছিলো। কিন্তু কখন পিনটা খুলে গেছে খেয়ালই হয়নি। কতখানি রাস্তা এভাবে এসেছি খোদা জানে। নিজের এমন বোকামিতে লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে।
কোনো রকম দরজা খুলেই ছুট লাগালাম, কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার উপর উপর হয়ে শুয়ে পরলাম।

~

-চুপ কর ছেমরি, এতো দিন আরাব ভাইরে নিয়ে তোর মাথার তার ছিড়ছে জানতাম এখন আমার ভাইরে নিয়েও পরবি এটা ভাবি নাই

-সাট আপ, একদম ফালতু পেচাল পারবি নাহ রাফাইত্তা। আমি যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি

পাশ থেকে আদ্রিশ বলে

-তোর ঠিক কেনো এমনটা মনে হচ্ছে বলতো আরু

-কারণ আমি বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছি।মেঘালয় ভাইয়া আফুকে নিয়ে অনেক বেশিই কেয়ারিং। আজকে যা দেখলাম এরপর তো আমি সিউর যে শুধু কেয়ারিং ই নাহ পসেসিভ ও

-আরে ভাই বরাবর ই এমন, মেয়েদের অসম্মান করা একেবারেই পছন্দ করে নাহ, আফুর জাগায় তুই বা অন্য কোনো মেয়ে থাকলেও ভাইয়া ঠিক ই প্রটেস্ট করতো

-না রাফাত,শুধু আজ বলেই নাহ। আমরা সবাই কিন্তু জানি মেঘ ভাইয়া কেমন। উনার মতো গম্ভীর, মুডি, ইগোইক পারসনের ক্ষেত্রে একটা মেয়ের জন্য এতোটা কেয়ার শুধু শুধুই আসবে নাহ

রাফাত বেশ বিরক্ত হয়ে বললো

-তাইলে তুই কি বলতে চাচ্ছিস

-এই যে মেঘ ভাইয়া লাইকস আফু

-হোয়াটট!!
রাফাত আর আদ্রিশ একসাথে বলে উঠলো

-উফফ চিল্লায়ে কান ফাটাবি নাকি ইতরের দল।

-তুই কি পাগল হয়েছিস আরু, ভাই পছন্দ করবে কোনো মেয়েকে? ভাই ছোট থেকেই একরোখা। কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড ও রাখতো নাহ, বিদেশে থাকলেও ভাইয়ার মেয়ে ফ্রেন্ড এর সংখ্যা খুবই কম, হাতে গোনা এক থেকে দুইজন। ভাই যা করেছে সব দ্বায়িত্ববোধ থেকে

-একটা মেয়ের প্রতি একটা ছেলের কোনটা দ্বায়িত্ব বোধ আর কোনটা অধিকারবোধ তা আমরা মেয়েরা একটু বেশিই বুঝি রাফাত। আমি যা বলছি তা মোটেও ভুল নাহ,এ্যন্ড আ’ম সিউর

এ পর্যায়ে নিবিড় বেশ গম্ভীর হয়ে বললো

-আরশি কিন্তু একেবারেও ভুল বলছে নাহ দোস্ত। মেঘ ভাইয়ের আফুর প্রতি বেশি খেয়াল রাখা টা আমিও দেখেছি। হসপিটালে আফুকে নিয়ে ভাইয়ের বিচলিত হওয়া অস্থির হওয়া আমরা সবাই দেখেছি, আবার সেদিন রাতের কথা তো তুই নিজেই বলেছিস। ভাই আফুর প্রতি অনেক বেশিই যত্নশীল যেটা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা যায় নাহ

নিবিড়ের কথায় সায় দিয়ে আরশি আবারও বললো
-এক্সাক্টলি, দ্বায়িত্বের খাতিরে হয়তো রুচি আপুর কথা শুনে ভাইয়া পালক কে ভার্সিটিতে সাথেই আনলো কিন্ত কাজ শেষেও ভার্সিটির বাহিরে এক ঘন্টা আফুর জন্য অপেক্ষা করা টাও কি দ্বায়িত্বের মধ্যেই পরে?

বলেই একটু দম নিয়ে আবারও বললো

-মেঘ ভাইয়ার আফুর প্রতি ব্যস্ত হওয়া,এতোটা খেয়াল রাখা, পসেসিভনেস সবটা পসেটিভ কিছুরই সাইন দিচ্ছে

রাফাত কিছুক্ষণ ভাবুক হয়ে থাকে, তারপরই ওর চোখ দু’টো জ্বলজ্বল করে ওঠে, বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে ওঠে

-তোরা যা মিন করছিস তাই যদি হয় তবে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেও হবে নাহ,আফুরে সারাজীবন রাইখা দিম, সাথে নুডলস তো ফ্রী, এহহ জোসস

রাফাতের এমন বলদ মার্কা কথায় ওরা পারেনা ওরে ধরে ফেলে দিতে, নিবিড় পাশ থেকে ঠাস করে পিঠের উপর একটা থা’প্পড় দিয়ে বলে

-আবে চালতা ফিরতা ঝামেলা কি দুকান।আগে হোক, যা ভাবছি তা হোক।। তোর ভাইকে নিশ্চয় তুই চিনিস ও বেটা কোন ধাচের লোক,আর আফুর কথা তো বলে দেওয়া লাগবে নাহ, একটা বুনো ওল তো আরেকটা বাঘা তেতুল। এই দুই ঘাড় ত্যাড়া রে এক করা এতোটাই ইজি মনে হচ্ছে তোর?

-এক্সাক্টলি , শোন আমার মাথায় দুর্দান্ত একটা আইডিয়া আছে

আরশির কথায় বেশ মনোযোগী হলো তিনজন। তিনটার ফুসুরফাসুর শুরু হলো আবার, আরশি বাড়ি এসেই ওদের হুরহুর গ্রুপে ফোন লাগাইছে, শিমু আর পালক অনলাইন না থাকায় চারটা মিলে আলাপচারিতা করছে এতোক্ষণ ধরে, তার মূখ্য বিষয় হলো মি.সিরিয়াস চৌধুরী আর আফু। চারটিতে মিলে এবার কি খিচুড়ি পাকাবে,তা ওরাই ভালো জানে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

হীডিংঃ বেশি বেশি রিয়েক্ট কমেন্ট করুন,আজ রাতেই বোনাস পার্ট দিবো ইনশাআল্লাহ।
হ্যাপি রিডিং 🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here