তুমি আসবে বলে পর্ব -৫+৬+৭

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪

সকাল থেকে আজ মির্জা বাড়িতে হই হুল্লোড়,কাজের তরজোর চলছে। হবেই না কেনো আজ বাড়ির বড় ছেলে ৫ বছর পর বাড়ি আসবে বলে কথা। তাই আয়েশা মির্জা সব নিজে দেখে শুনে কাজ করাছে। আদির রুম পরিচ্ছন্ন থেকে শুরু করে তার পচ্ছন্দের খাবার পযর্ন্ত করেছেন তিনি। দিদুন কিচেনে সবাই কে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে তখন অরনি তার দিদুন কে পিছেন থেকে জড়িয়ে ধরে বলো…

অরনিঃ কি করছো দিদুন

দিদুনঃ আদি দাদুভাইর জন্য রান্নার প্রিপারেশন নিচ্ছি দিদিভাই [বলে কাজ দেখাতে লাগলো]

অরনিঃ ওওও। আচ্ছা

দিদুনঃ হমমম। তো তুমি কিচেনে কেন?? সব সময় তো হাতে বই বা মোবাইল ফোন থাকে তো আজ আবার কিচেনে কেনো?

অরনিঃ কি বলে বুড়ি আমি কি কোনো দিন কিচেনা আসি না?? হুমম [কপট রাগ দেখিয়ে]

(আসলে অরনি সব সময় বই নিয়ে ব্যস্ত থাকে না হলে অন্তির সাথে সময় কাটায় আর তা না হলে ফোন নিয়ে থাকে। কিচেনে আসে খুব কম কিন্তু সব প্রকার রান্না পারে সে। অন্তু তাকে নিজের হাতে রান্না করা শিখিয়েছে) দিদুন হালকা হেঁসে আবার বলতে লাগলো…

দিদুনঃ জানি তো আমার দিদিভাই টা সব পারে সে কেন কিচেনে আসবে সব সময়। আচ্ছে রাখো সইসব কথা তুমি এক কাজ করো অন্তু দিদিভাইর জন্য খাবার তার রুমে নিয়ে যাও তো। অনেক বেলা হয়েছে খাতে আসলো না আজ নিচে।

অরনিঃ ওকে দিদুন

বলে সে দিদুনকে ছেড়ে দিলে তার দিদুন খাবার বেরে দেয় একটা ট্রে তে। অরনি খাবার নিয়ে অন্তু রুমের দিকে যেতে লাগলো….

অরনি অন্তুর রুমে এসে দেখে অন্তু বিছানার ওপর বসে হুমায়ুন আহমেদের “অপেক্ষা” বইটি পরচ্ছে। দরজা থেকে রুমে এসে অরনি খাবরটা টেবিলের ওপর রাখে দিলো। কিছু একটা রাখার শব্দে অন্তু বই থেকে মুখ তুলে দেখে অরনি খাবার নিয়ে এসেছে। অন্তু মৃদু হেসে বইটা তার পাশে রেখে অরনি কে বললো…

অন্তুঃ অরু আয় বস আমার কাছে। খাবার টা ওখানেই রাখ আমি পরে খেয়ে নেবো।

অরনি এসে অন্তুর পাশে মুখ ফুলিয়ে বসে বললো…

অরনিঃ তোমার সাথে কথা নাই দিদিয়া [মুখ ফুলিয়ে]

অরনিকে মুখ ফুলাতে দেখে অন্তু শব্দ করে হেসে দিলো। অন্তুর হাসি দেখে অরনি আরো মুখ ফুলালো। অন্তু হাসি থামিয়ে বলল..

অন্তুঃ কেন কেন কথা নাই কেন আমার সাথে?? আমি কি করলাম আবার।

অরনিঃ আমরা সবাই দাদাভাই কে আনতে যাবো তুই কেনো যাবি না। তুই জানিস তুই না গেলে দাদাভাই কতো কষ্ট পাবে।

অন্তুঃ আমি জানি দাদাভাই কষ্ট পাবে আমাকে এয়ারপোর্টে না দেখে কিন্তু সে বুঝবে আমি কেন যায় নাই।

অরনিঃ হুমম

(হয়েছে কি বাড়ির সবাই যাবে আদিকে আনতে কিন্তু অন্তু যাবে না।আসলে আয়রা প্রেগন্যান্ট আর দিদুন যাবে না তাই অন্তু ও যাবে না) অরনি জানে তার দিদিয়াকে দিদুন কে আয়রা কে একা থুয়ে কোথাও যাবে না তাই হালকা হেঁসে বলল…

অরনিঃ ওকে দিদিয়া তাইলে আমি যায় তুমি খাবারটা খেয়ে নিও।

অন্তু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে অরনি চলে যায় আর অন্তু খাবার নিয়ে খেতে লাগলো…

________________________

বেলা-১২ঃ৩০টা

নিজে কেবিনে বসে প্রাপ্য অফিসে কাজ করছিলো (আজ প্রাপ্যর রোদের সাথে অফিসে এসেছে। রোদ নিজে প্রাপ্য কে সব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে) তখন তার ফোনে ফোন আসলে প্রাপ্য ফোন নিয়ে স্ক্রিনের ওপরে অরনির নাম দেখে কাজ বন্ধ করে হেসে ফোন ধরে বললে…

প্রাপ্যঃ তো অরুসোনার এখন আমার কথা মনে পরলো বুঝি হুমম হুমম

অরনিঃ হুমম মনে পরলো জনাব। তা সকালে খাইয়ে আসছো

প্রাপ্যঃ হ্যাঁ, তুমি

অরনিঃ হুমম, কি করছো

প্রাপ্যঃ কাজ করছি। তুমি

অরনিঃ বসে আছি।

প্রাপ্যঃ তো কি মনে করে ফোন করেছো। তোমার তো আমার জন্য সময় হয় না তাইলে আজ কি হলো [মজা করে বললো]

অরনিঃ কেন ফোন দিতে পারি না আমি তোমাকে বুঝি। নাকি অফিসে কোন সুন্দরী মেয়ে পেয়ে গেছো। তাই আমাকে আর ভালো লাগছে না..[ রাগে কথাগুলো বলে ন্যাকা কান্না করতে লাগলো। অরনি জানে প্রাপ্য মজা করে বলেছে কিন্তু অরনি তাকে টাইট দেবার জন্য এমন করছে]

অরনির কান্না শব্দ শুনে প্রাপ্য ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলো…

প্রাপ্যঃ অরুসোনা কি হলো কান্না করছো কেন। দেখ আমি মজা করছিলাম সত্যি সোনা। দেখো আমি তোমার চোখের জল দেখতে পারি না তাও তুমি আমাকে শাস্তি দেবার জন্য এমন করো না প্লিজ। ইউ নো আই লাভ ইউ সো মাচ। আমি অন্য কাওকে দেখি পযর্ন্ত না তোমাকে ছাড়া প্লিজ এমন করো না।

অরনি হালকা হেঁসে বললো.. আই নো ইউ লাভ মি সো মাচ। তাই তো তোমার সাথে এমন করি। সরি আর কান্না করবো না আর আমি এমনি বলাম।

প্রাপ্যঃ আই লাভ ইউ সোনা

অরনিঃ আই লাভ ইউ। শোন যে জনে ফোন করলাম আজ দেখা হবে না দাদাভাই আসবে তাকে আনতে যাবো। পরশু দেখা করি ভার্সিটি শেষে কাল ব্যস্ত থাকবো।

প্রাপ্যঃ ওকে সোনা তোমার কথাই হবে। এখন রাখি কাজ করছি। আই লাভ ইউ

অরনিঃ আই লাভ ইউ। বাই

প্রাপ্যঃ বাই

ফোন দেখে কাজ করতে থাকে প্রাপ্য। কিছুক্ষণ পর মিস লিনা এসে বলো রোদ তাকে তার কেবিনে যেতে বলেছে। প্রাপ্য লিনা কে যেতে বলে সে রোদের কেবিনে গেলে রোদ তাকে বসতে বলে সে বসলে রোদ কাজ বন্ধ করে বললো….

রোদঃ প্রাপ্য আজ একটু আগে আমাকে বেরোতে হবে তুই যদি আজ কাজ গুলো দেখে নিতি। আমি জানি আজ তোর প্রথম দিন কষ্ট হবে করতে কিন্তু আজ…

প্রাপ্যঃ ভাইয়া প্লিজ এমন করে বলিস না আমি করে নেব সব তুই টেনশন করিস না। আর আমি একা না সবাই আছে আমি বুঝে নেব কাজ। তুই যা [রোদকে বলতে না দিয়ে প্রাপ্য বললো]

রোদঃ আসলে আনভি এখন ফোন করে কান্না করে বলছে তার নীল রঙের ডোল লাগবে মানে লাগবে। তুই বল এখন কি করি? তাই আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে মলে যাবো ডোল কিনতে। না হলে যেতাম না

প্রাপ্যঃ আমার পরীটা যা চায় তাই হবে তুই ডোল খুজে নিয়ে বাড়ি যাবি না হলে তোর এক দিন কি আমার এক দিন।

রোদ প্রাপ্যর কথা শুনে হেসে ফেলো। সে বললো…

রোদঃ ওকে। যা কাজ করতে দে

প্রাপ্যঃ ওকে

প্রাপ্য চলে যেতেই রোদ তার কাজে মন দিলো…

_______________________

বিকেল সাড়ে ৫টা…

অন্তু নিজের রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে ড্রইংরুমে এসে সোফায় বসলো। বাড়ির সবাই আদিকে আনতে গিয়েছে। দিদুন আর আয়রা রেস্ট নিচ্ছে তাই অন্তু বাইরে বসে আচ্ছে। অন্তু একবার সারা বাড়ি দেখে নিলো সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত আছে। কিছুক্ষন বসে থেকে কি মনে করে অন্তু উঠে দাড়িয়ে টেলিফোনের কাছে গেলো। কিছু সময় ভেবে একবার হাত বাড়াই টেলিফোনে আবার হাত গুটিয়ে নেই মন কে মানিয়ে অন্তু টেলিফোনে নিয়ে একটা নাম্বারে ডায়েল করলো আর মনে মনে বলতে লাগলো….প্লিজ আল্লাহ আজকে নাম্বারটা খোলা থাকে। [বলতে লাগলো]

(হুমম অন্তু যে নাম্বারে ফোন দিচ্ছে সেটা আর কেও না অর্ণবের নাম্বার। আজ ৪ বছর ধরে সে এই নাম্বারে ফোন দিচ্ছে কিন্তু প্রতিবার নাম্বারটি বন্ধ আসে দেখা যাক আজ কি হয়)

হঠাৎ অন্তু চেহারা রং পাল্টে যায়। অন্তু দাঁড়িয়ে থেকে বসে পরলো তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।(হুমম আজ নাম্বারটা খোলা পেয়েছে সে) কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো…

অন্তুঃ অর্ণব প্লিজ ফোন ধরো। আমি জানি তুমি আছো কেন এমন করছো আমার সাথে প্লিজ ফোন ধরো। [বলে কান্না করতে লাগলো]

হঠাৎ অন্তু ফোন রেখে দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। আজ আকাশে বার বার গর্জে গর্জে উঠছে। বৃষ্টির সাথে বাতাস হচ্ছে তুমুল এর মধ্যে অন্তু পাগলের মতো দৌড়াছে আর বিড়বিড় করে বলছে…আমি আসছি অর্ণব তোমার কাছে আমি জানি তুমি আসলে বাড়িতে যাবে আমি আসছি।

বলে দৌড়াতে লাগছে।(তখন ফোন না ধরাই অন্তু মনে করে অর্ণব ফোন যখন খোলা তাইলে সে তার বাড়িতে থাকতে পারে তাই সে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে) অন্তু দৌড়ে থাকে বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ অন্তু সামনে গাড়ি চলে আসে সে কিছু বোঝার আগে গাড়িটা অন্তুকে ধাক্কা লাগে সে কিছুটা দুরে পরে যায়। এদিকে, রোদ অফিস থেকে বেরিয়ে মলে গিয়ে অনেক খুজে নীল রঙের ডোল পেলো তারপর সেটা নিয়ে সে বাড়ি আসছে তখন দেখে বৃষ্টি হচ্ছে। সে গাড়ি নি যাবার সময় হঠাৎ দেখে একটা মেয়ে দৌড়ে তার গাড়ি সামনে আসছে রোদ গাড়ি থামাতে যাবে তার আগে ধাক্কা লেগে যায়। রোদ গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটি দেখার জন্য তার কাছে আসতে লাগলো। এদিকে অন্তু কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে সে অনেক কষ্ট তার বোজা বোজা চোখ দিয়ে তার সামনে আসা অবয়ব দেখতে লাগলো। সেই অবয়ব দেখে অন্তু ঠোঁটের কোণে হাসিঁ ফুটে উঠলো তার আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো সে অস্পষ্ট কন্ঠে বলতে লাগলো…. অ র্ণ ব অর্ণব…………
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৫

আয়রা উত্তেজিত হয়ে বার বার আয়ানকে ফোন করছে কিন্তু সে ফোন ধরছে না। সে কি করবে বুঝতে পারছে না কপালে বয়ে ঘাম ঝরছে। সে শেষ বারের মত ফোন করলো এবার ফোন ধরলো আয়ান। আয়ানকে কিছু বলতে না দিয়ে আয়রা বললো…

আয়রাঃ আয়ান তুমি কোথায়??

আয়ান কিছু কাজে তার পার্টি অফিসে যাচ্ছিল তখন আয়রার ফোন আসলে সে ফোন ধরলে আয়ার উত্তেজিত কথা শুনে গাড়ি ব্রেক দিয়ে গাড়ি থামায়। আয়ান চিন্তাত কন্ঠে বললো..

আয়ানঃ কি হয়েছে তোমার এতো উত্তেজিত কেন হচ্ছো তুমি?? পেটে ব্যাথা করছে?? বে বি বেবির কিছু হয়েছে?? কি হলো কথা বলছো না কেন??

আয়রাঃ আয়ান আমি ঠিক আচ্ছি আর বেবি ও। আসলে অন্তু অন্তু..

আয়ানঃ কি হয়েছে অন্তুর বলো

আয়রাঃ আসলে সন্ধার দিকে আমি যখন অন্তু রুমে তাকে দেখতে যায় তখন সে সেখানে ছিলো না। আমি ভাবলাম দিদুনের কাছে আছে কিন্তু আমি যেয়ে দেখি দিদুন নামাজ পরছে অন্তু ওখানে ছিলো না। আমি সারা বাড়ি দেখেছি সবার কাছে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু কেও জানে না। আমার অনেক টেনশন হচ্ছে তুমি কিছু করো একটু পর দাদাভাইরা চলে আসবে।

আয়ানঃ তুমি টেনশন নিও না আমি দেখছি। আর অন্তু যাবেই বা কোথায় এখন।

আয়রাঃ আয়ান তুমি একটা বার অর্ণব ভাইয়ার ফ্ল্যাটে যাবে। আমার মনে হয়ে অন্তু সেখানে গেছে।

আয়ানঃ ওকে আমি যাচ্ছি। তুৃমি রেস্ট নাও আর কাওকে কিছু বলতে হবে না।

আয়রাঃ ওকে।

বলে ফোন রাখলো আয়রা। আয়ান গাড়ি ঘুড়িয়ে অর্নবের ফ্ল্যাটের দিকে যেতে লাগলো। (আসলে অন্তু ৪ বছর ধরে অর্নবের ফ্ল্যাটে যাওয়া আসা করে। সে সপ্তাহে ২ বার যেয়ে ফ্ল্যাটা পরিস্কার করে আসে সে মানে অর্ণব আসলে এখানে আসবে তাই সব আগের মতো করে রাছে। বাড়ির সবাই জানে এই কথা এতে কেও মানা করে না)…..
__________________________

রোদঃ হ্যালো মিস শুনছেন।

রোদ বার বার অন্তুকে ডাকতে থাকে কিন্তু তার জ্ঞান ফেরাতে পারছে না। রোদ বিরক্ত হয়ে বললো..

রোদঃ কি মুসিবতে পরলাম আল্লাহ। এর তো জ্ঞান ফিরছে না কি করি।

বলে আবার বোতল থেকে পানি নিয়ে অন্তুর মুখে ছিটায়। এদিকে অন্তুর মুখে পানি পরলে সে পিটপিট করে তাকিয়ে তার সামনে অচেনা কাওকে দেখে ভয় পেয়ে যায় কিছু বলতে যাবে তার আগে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়৷ রোদ অন্তুকে চোখ খুলতে দেখে খুশি হয়ে কিন্তু তার সেই হাসি চিরস্থায়ী হবার আগে মিটিয়ে গেলো কেননা অন্তুর আবার অজ্ঞান হারাতে দেখে। রোদ বলতে লাগলো..

রোদঃ কি হলো এটা। চোখ খুলেও আবার বন্ধ করে নিলো। এই যে মিস চোখ খুলুন আপনার বাড়ি কোথায় বলুন। ধ্যাত….একে তো এই এক্সিডেন্ট তার ওপর এই গাড়ি গেলো নষ্ট হয়ে আর ফোন তাও বন্ধ। এখন কাকে সাহায্য জন্য ডাকবো।

কিছু সময় সে কি করবে তা ভাবতে লাগলো রোদ।(তখন রোদ এসে দেখে অন্তু অজ্ঞান হয়ে আছে সে অনেক ডাকার পরও উঠছে না আর এদিকে বৃষ্টি ও জোরে হচ্ছে তাই রোদ ইতস্তত করে অন্তুকে কোলে নিয়ে গাড়ির ব্যাকসাইডে নিয়ে শুয়ে দিয়ে যখন গাড়ি স্টার্ট দিতে যায় তখন দেখে গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না আর তার ফোন ও ওফ। রোদ আবার অন্তুর কাছে এসে ডাকতে লাগলো) হঠাৎ তার চোখ গেলো শুয়ে থাকে অন্তুর দিকে তাকিয়ে আচ্ছে একধ্যানে। রোদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো…অন্তুকে নীল রঙের থ্রি-পিস পরা, ঠোঁটের নিচে তিল মুখটা শুকিয়ে গেছে। কি মায়াবী মুখ খানা, হঠাৎ রোদ হুশ আসে সে কি করছে ভেবে তখন তার নিজের ওপর রাগ হলো। সে গাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো আর বলতে লাগলো….

রোদঃ সরি জান আ’ম সরি আমি কি করে পারলাম এটা করতে সরি। আমি কি করে তোমাকে ভুলে এক মুহূর্তের মোহে পরলাম কি করে[বলে গাড়ির সাথে সর্বোচ্চ জোরে ঘুসি মারে] সরি সরি আর হবে না।

বলে সামনে এগিয়ে যায় তাকে এখন একটা গাড়ি থামতে হবে। এই ভেবে সে আগাতে লাগলো। রোদ রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালে একটা গাড়ি আসলে তাকে থামায়। সে যেয়ে গাড়ির গ্লাসে ঢোকা দিলে জানলা নামিয়ে দিলে রোদ বলো…

রোদঃ সরি কিছু মনে করবে না। আমি একটা বিপদে পরেছি প্লিজ একটু হেল্প করবেন৷

আয়ানঃ কি হয়েছে বলুন।

(হ্যাঁ গাড়িতে আয়ান ছিলে)

রোদঃ আসলে আমার গাড়ি নষ্ট হেয়ে গেছে আর ফোন বন্ধ। তার ওপর আমার গাড়ির সাথে একটা মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে তাকে হসপিটালে নিতে হবে৷ সামনে একটা হসপিটাল আছে আপনি প্লিজ ওখানে আমাদের নামিয়ে দেবেন

রোদ আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। আয়ান ভেবে বললো ওকে। রোদ হসে তার গাড়ির কাছে এসে তার পিছু আয়ান ও আসে। রোদ গাড়ির দরজা খুলে আয়ান মেয়েটির দিকে তাকালে চমকে যায়। সে তাড়াতাড়ি করে অন্তুকে ধরে বলতে লাগলো….

আয়ানঃ অন্তু বোনু কি হয়েছে৷ কথা বল আমার সাথে অন্তু [উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো]

রোদ আয়ান কে উত্তেজিত হতে দেখে সে ভিশন অবাক হয়। কি বলবে ভেবে না পেয়ে সে বললো…

রোদঃ ওর জ্ঞান নেয়। আর ওর বেশি কিছু হয় নিই সামান্য ছিলে গেছে। মেয়েটা আপনার কেও হয়??

আয়ান রোদের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বললো..

আয়ানঃ আমার বোন। আমি ওকে নিয়ে বাড়ি যাবো। আপনাকে কোথায় নামিয়ে দেবো

রোদঃ না আমি চলে যাবো আপনি ওকে নিয়ে যান।

আয়ানঃ হুমম

বলে অন্তুকে কোলে নিয়ে তার গাড়ি তে নিয়ে শুয়ে দিলো। তারপর গাড়ি নিয়ে চলে গেলো বাড়ির দিকে….আর রোদ তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো…
________________________

আদি মির্জা বাড়ির আসার পর থেকে সবাই কে মাতিয়ে রেখেছে। দিদুন আদিকে দেখে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে আদি তাকে বুঝিয়ে চুপ করায়। আদির সাথে অরনি আয়রার পরিচয় করিয়ে দেয়।কেননা আদি শুধু জানত আয়ান বিয়ে করেছে বেবি হবে কিন্তু আয়রা কে দেখে নাই সে তাই। সবার সাথে কুনিশ বিনিময় করে যখন অন্তু কথা আদি জিজ্ঞেস করে তখন আয়রার টেনশন দ্বিগুণ বেরে যায়। এদের কথা বলার মধ্যে আয়ান অন্তকে কোলে করে বাড়িতে ডুকতে লাগলো। হঠাৎ অরনি কথা বলতে বলতে পেছনে তাকাতেই দেখে আয়ান অন্তুকে কোলে করে আনছে। তা দেখে সে দিদিয়া বলে দৌড়ে আয়ানের কাছে গেলো। অরনিকে এভাবে অন্তু নাম ধরে চিতকার করে দৌড়াতে দেখে সবাই প্রথমে অবাক হয় পরে পিছনে তাকিয়ে অন্তুকে এই আবস্থায় দেখে আদি দৌড়ৈ এসে অন্তুকে আয়ানের কাছ থেকে কোলে নিয়ে সোফাতে শুয়ে দিয়ে তাকে ডাকতে লাগলো…

আদিঃ অন্তুপাখি কি হয়েছে তোর। আয়ান কি হয়েছে অন্তুর ওর কপাল কাটলো কি ভাবে। বল কি হয়েছে।

আয়ান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আর ইতি মধ্যে অন্তু দিদুন কান্না করছে অন্তুর আবস্থা দেখে। অরনি অন্তুর পায়ের কাছে বসে একধ্যানে তাকে ডেকেই যাচ্ছে। আদি আয়ানে দিকে তাকলে আয়ান বললো…

আয়ানঃ আসলে দাদাভাই অন্তু বৃষ্টি দেখে বাইরে গেছিলো কিন্তু হঠাৎ একটা গাড়ি সাথে ধাক্কা লাগায় কপাল কেটে যায় আর অজ্ঞান হয়ে যায়। আমি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম অন্তুকে দেখে নিয়ে আসলাম।[মাথা নিচু করে বলতে লাগলো]

দিদুনঃ আদি দাদুভাই সে সব কথা পরে ভেবো। আগে ওকে রুমে নিয়ে চেঞ্জ করে ডক্টর ডেকে আনার ব্যবস্থা করো, আমার দিদিভাইয়ের কষ্ট হচ্ছে।

আদি দিদুনের কথা শুনে কিছু না বলে অন্তুকে কোলে করে রুমে গেলো। আর অরনিকে বললো ওকে চেঞ্জ করে দিতে। আদি দিদুন কে বুঝিয়ে তার রুমে দিয়ে আসে আর বলে..সে সব ঠিক করে দেবে। এদিকে আয়রা আয়ানের কাছে আসলে আয়ান তাকে ইশারায় বলে…টেনশন করো না সব ঠিক আছে। তরপর আয়রা কে নিয়ে রুমে যায় সে জানে এই মেয়েটা সন্ধ্যা থেকে টেনশন করছে আর টেনশন বেবির জন্য খতি তাই তাকে রুমে নিয়ে শুয়ে দিয়ে তার পাশে বসে থাকলো।

কিছুক্ষন পরে ডক্টর এসে অন্তুকে দেখে বলে..

ডক্টরঃ বেশি কিছু হয়নি। আমি ডেসিং করে দিয়েছি। আর এই খানে কিছু মেডিসিন আছে ওকে খাওয়াবেন। আর রাতে ওর জ্বর আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আমি আসি…

আয়ান ডক্টরের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ডক্টর কে দিয়ে আসলো আর ঔষধ গুলে আনতে গেলো। অরনি অন্তুর কছে আছে তাই আদি নিজে ফ্রেশ হতে গেলো। আসার পরে আর ফ্রেশ হওয়া হয় নি তাই সে রুমে চলে গেলো…
____________________________

বৃষ্টি অনেক আগে থেমে গেছে এখন হালকা বাতাস হচ্ছে শুধু। রোদ সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ডোল হাতে করে বাড়িতে আসে। ভেতরে এসে দেখে মি.চৌধুরী চা খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। সে রোদকে দেখে চার কাপ নিচে রেখে বলল..

মি.চৌধুরীঃ রোদ তুই এমন ভিজে বাড়িতে আসলি কেন?? আর তুই তো সেই বিকেলে অফিস থেকে বের হয়েছিস তাই লে এতো রাত হলো কেন??

রোদ হাতের ডোলটা সোফায় রেখে মাথার চুল ঝারতে ঝারতে বললো..

রোদঃ আর বলো না বাবাই গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে মাঝে পথে আর ফোন ও ওফ হয়ে গেছে যে কাওকে বলবো আমি কোথায়। তাই রাত হয়ে গেছে আর বাইরে বৃষ্টি ছিলো তাই ভিজে গেছি

রোদ তার এক্সিডেন্টের কথা তার বাবাইর কাছ থেকে লুকিয়ে গেলো। সে জানে তার সামান্য চোট লাগলে তার বাবাই অনেক উত্তেজিত হয়ে যায়। তাই আর কিছু বললো না।

মি.চৌধুরীঃ ঠিক আচ্ছে তুই আগে ফ্রেশ হয়ে নে না হলে জ্বর আসবে আবার।

রোদঃ ঠিক আছে বাবাই[বলে চলে যেতে নিলে কি মনে করে আবার পেছন ফিরে বললো] বাবাই

মি.চৌধুরীঃ হুমম বল

রোদঃ আনভিকে তো দেখছি না ও কোথায়। সব সময় আমি আসলে আগে দৌড়ে আসে তাহলে আজ কি হলো এখনো আসলো না কেন।

মি.চৌধুরীঃ আনভি প্রাপ্যর রুমে আচ্ছে ওর সাথে। আর আনভি কে মালা খাইয়ে দিয়েছে আগেই।

রোদ আর কিছু না বলে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে। ৩০মিনিট পর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে সোজা চলে গেলো প্রাপ্য রুমে। রোদের মন খচখচ করছে তার বাবাই কথা শুনে আনভি রাতে তাকে ছাড়া কখনো খাই না তাইলে আজ কি এমন হলো সে আগেই খেয়ে নিলো। রোদ প্রাপ্য রুমের সামনে এসে দরজায় হাত দিতেই ভেতর থেকে যে কথা শুনলো এতে রোদের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। শরীর মৃদু কাপছে সে যা শুনলো সে ভাবতে ও পারেনি এমন হবে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬

হালকা চিতকার দিয়ে উঠলো অন্তু। অন্তুর এমন চিতকার শুনে অরনি চেয়ারে বসা থেকে উঠে দৌড়ে তার কাছে গিয়ে তাকে বললে….

অরনিঃ দিদিয়া কি হয়েছে এমন চিতকার কেন করলি?? এই দিদিয়া

অরনির কথা অন্তুর কান পযর্ন্ত যাচ্ছে কি না সে যানে না। সে নিজে কি কি বিড়বিড় করে বলছে তা অরনি বুঝতে পারছে না। হঠাৎ অন্তু উঠে দাড়িয়ে বাইরে চলে যেতে নিলে অরনি তাকে আটকায়। অরনি অন্তুর দুই বাহু ধরে ঝাকায় আর বলে…

অরনিঃ দিদিয়া নিজের হুশে আস। তুই কেন করছিস এমন পাগলামি। প্লিজ এমন করিস না। কি হয়েছে বল আমাকে…[বলে কান্না করতে লাগলো]

অরনির কথা শুনে অন্তুর হুশ আসে। সে অরনিকে দেখে কান্নায় ভেঙে পরে। আস্তে আস্তে নিচে বসে পরে সাথে অরনি ও। অন্তু অরনিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো….

অন্তুঃ আমি আবার ও অর্ণবকে হারিয়ে ফেলাম। ও আমার কাছে আসলো না। ও রাগ করছে আমার ওপর আমি ওর কথা রাখতে পারি নি বলে। এমন কেন করলো বলতে পারিস অরু….

বলে কান্না করতে লাগলো। অরনি কিছু বুঝতে পারলো না অন্তু কথা। তাই সে বললো..

অরনিঃ কি হয়েছে দিদিয়া বলো আমাকে….

অন্তু অরনিকে ছেড়ে তাকে বিকেলের সব ঘটনা বলতে লাগলো এক এক করে…অরনি সব শুনে কি বলবে ভাবতে পারছে না। অরনির মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, এর মধ্যে অন্তু আবার উঠে চলে যেতে নিলে অরনি তাকে ধরে বলতে লাগলো…

অরনিঃ দিদিয়া পাগলামি করিস না

অন্তুঃ আমাকে যেতে দে অরু আজ আমি অর্ণবের কাছে যাবো ছাড়া বলছি। ও নিজেকে কি মনে করে আমাকে শাস্তি দেবে আমি তার কথা না রাখায়। আমি আজ নিজেকে শেষ করে দেবো।

বলে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো। অরনি শুধু অন্তুর পাগলামি দেখছে সে কি করে।হঠাৎ অন্তুর হাতে চাকু দেখে অরনি ভয় পেয়ে যায় সে দৌড়ে অন্তুর হাত থেকে চাকু নিয়ে ফেলে দেয়। অরনি রেগে বলতে লাগলো…

অরনিঃ নিজেকে কি মনে করো দিদিয়া তুমি। তুমি শুধু একাই কষ্ট পাচ্ছো আমরা সবাই পাচ্ছি না। আজ ৪ বছর ধরে তোমাকে তিলে তিলে মরতে দেখে আমরা সবাই মরছি। তোমার কাছে অর্ণব ভাইয়া সব আমরা কিছু না। তোমার কারনে দিদুন এতো কষ্ট পায় সেটা তোমার চোখে পরে না। আজ দাদাভাই বাড়ি আসলো কিন্তু কি হলো তোমাকে ওই আবস্থাতে দেখে দাদাভাইর কি আবস্থা হয়েছে তোমার কোনো আইডিয়া আছে। তা হবে কেনো তোমার তো শুধু তোমার কষ্ট দেখছো কিন্তু আমাদের কষ্টা তো তুমি দেখবে না। যাও তুমি তোমার শান্তি লাগবে তাই না যাও আমরা মরি বাঁচি তোমার ভাবতে হবে না।যাও..

বলে নিরবে চোখের জল ফেলছে অরনি। অন্তু স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে অরনির কথা শুনে। অন্তু ভাবছে..সে শুধু তার কষ্ট দেখছে তার জন্য দিদুন, দাদাভাই, অরনি, চাচা, বাবা কষ্ট পাচ্ছে সে কেন বুঝতে পারছে না। ভেবে কান্না করতে লাগলো। অন্তু অরনির কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো…

অন্তুঃ সরি অরু আমি শুধু নিজে কষ্ট নিয়েই ছিলাম কখনো তোদের কথা ভবি নাই সরি। আমি আজ প্রমিজ করছি তোর কাছে আমি আর পাগলামি করবো না আর না আমার জন্য কেও কষ্ট পাবে। আমি এখন থেকে হাসিয় খুশি থাকবো। কোনো পাগলামি করবো না

অরনি অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বললো…

অরনিঃ সত্যি দিদিয়া

অন্তুঃ সত্যি

অরনি অন্তুকে ছেড়ে দাড়িয়ে চোখ মুছে মৃদু হাসতে লাগলো। অরনি হাসি দেখে অন্তুর মুখেও হাসি ফুটলো। তাদের কথার মধ্যে আদি রুমে ঢোকে খাবার হাতে আর বলে…

আদিঃ এতো হাসছিস কেনো তোরা। কি হয়েছে আমাকেও বলল আমি ও হাসি…[বলে খাবার টা টেবিলে রেখে তাদের কাছে আসে]

অন্তু আদিকে দেখে জড়িয়ে ধরে। আজ ৫বছর পর সে তার দাদাভাইয়ের দেখলো স্পশ করলো ভেবে চোখ বসে জল পরলো। আদি ও তার আদরের বোনকে জড়িয়ে ধরে সেই খুসি উপভোগ করলো। অরনি তাদেরকে এমন দেখে অনেক খুশি হলো সে বলো…

অরনিঃ কিছু না দাদাভাই এমনি।

আদি অন্তুকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে তাকে বলো…

আদিঃ অন্তুপাখি তুই আজ যা করলি আর কখনো করিস না জানিস তোকে ওই আবস্থাতে দেখে আমার কেমন লাগলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো আমার অন্তুপাখি আর আমার সাথে কথা বলবে না…

অন্তুঃ সরি দাদাভাই [বলে মথা নিচু করে নিলো]

আদিঃ তোর কিছু হলে আমার কি হবে একটা বার ভাবছিস। তোকে ছাড়া আমার কে আছে বল যে আমাকে বকবে, আদর করবে, শাসন করবে, ভালোবাসবে বলে। তোকে ওমন দেখে শুধু আমার মার শেষ কথা মনে পরছিলে…মা আমাকে তোর দেখাশোনার দ্বায়িত্ব দিয়েছিল। বলেছিলো অন্তুকে কখনো যেনো আমার কাছ থেকে আলাদা না করি সব সময় তার পাশে থাকি। তুই একটা বার ভাব তোর কিছু হলে আমি মাকে কি মুখ দেখাতাম। মাকে কি জবাব দিতাম আমি তার কলিজার টুকরা মেয়েকে দেখে রাখতে পারলাম না। বল কি জবাবা দিতাম

অন্তুঃ দাদাভাই আমি আর কখনো তোমাদের কষ্ট দেবো না সত্যি। সরি আর হবে না এমন এবারের মতো মাফ করে দাও…[বলে ইনোসেন্ট ফেস করে কানে দু হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো সে]

আদি হেসে বলো…

আদিঃ পাগলি একটা

অন্তুঃ তোমারি তো বোন

বলে তারা তিনজনে হাসতে লাগলো। আদি হাসি থামিয়ে বলো…

আদিঃ ওকে এখন হাসি থামাও। অনেক রাত হয়েছে খেতে হবে। আজ আমি নিজের হাতে আমার অন্তুপাখিকে খাইয়ে দেবো। অনেক দিন পর এই সুযোগ পেয়েছি হাতছাড়া করতে চায় না।

বলে খাবার হাতে নিযে অন্তুকে খাওয়াতে লাগলো। এদিকে অরনি মুখ ফুলিয়ে বলো..

অরনিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো শুধু তোর একটাই বোন তাই তাকেই আদর করে খাওয়াও আমি তো তোমাদের কেও না তাই না।

আদি+অন্তুঃ হুমম হুমম

অরনিঃ আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না কেও আমাকে ভালোবাসে না কেও না…[কাদো কাদো মুখ করে]

আদি এবার মজার ছলে বললো..

আদিঃ দাঁড়া আমি চাচ্চুকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করি। অনেক তো আমাদের ঘাড়ের ওপর খেলি এখন বরের ঘাড়ের ওপর খা। কি বলিস অন্তুপাখি

অন্তুঃ হুমম দাদাভাই

আদির কথা শুনে অরনি কেঁদে দিলো সে কিছু না বলে চলে যেতে নিলে আদি তাকে ধরে ফেলে তারপর হাতে খাবার নিচে নামিয়ে রেখে অরিন চোখের জল মুখে এক কান ধরে বলো…

আদিঃ সরি আমার অরুবুড়ি বুঝি দাদাভাইয়ের উপর রাগ করেছে। আমি আর এমন বলবো না সরি

অরনি কিছু না বলে আদিকে জড়িয়ে ধরলো অন্তু ও এসে তাদের সাথে জয়েন্ট করলো। কিছুক্ষণ পর আদি তাদের ছেড়ে খাবার হাতে নিয়ে গল্প করতে করতে তাদের খাইয়ে দেয়…

এদিকে, আদি অরনি অন্তুর ভালোবাসাময় মুহূর্তে খুনসুটি দেখে একজনের চোখ দিয়ে জল বের হচ্ছে। সে আর কেও নয় আয়ানের এতখন সে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের খুনসুটি দেখছিলো। হঠাৎ কাধে কারোর স্পর্শ পেতেই আয়ান চোখ মুছে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে আয়রা দাঁড়িয়ে আছে। আয়রাকে দেখে আয়ান তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো…

আয়ানঃ আয়ারা দেখো ওরা কতো ভালো আছে। ওদের ভালোবাসার মধ্যে আমি নেই। জানো আগে আমার সব ভাইবোন মিলে কতো মজা করতাম। কিন্তু এখন দেখো কি হলো অরনি আমার সাথে প্রয়োজন ছারা কথা বলে না আর অন্তুর জীবন নষ্ট করে দিলাম আমি এখন যদি দাদাভাই ও আমাকে ভুল বোঝে তাইলে আমি কি নিয়ে থাকবো বলতে পারো।

আয়রাঃ আয়ান দেখো সব আগের মতো হয়ে যাবে শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমার সব ভাইবোন আবার আগের মতো সময় কাটাবে দেখে নিও। এখন রুমে চলো অনেক রাত হয়েছে।

বলে আয়রা আয়ানকে নিয়ে রুমে চলে গেলো….

__________________________

আনভিঃ চাচ্চু আমাল(আমার) মাম্মা নেই কেন। পাপা বলে মাম্মা কোলো(কোনো) এক কালে(কাজে) গেছে সে চলে আসবে আমাদের কাছে সে কবে আসবে….[বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো]

আনভির এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে প্রাপ্য ভেবে পাচ্ছে না৷ একটা বাচ্চার কাছে তার মা কি সে ভালো করে যানে কেননা তার যখন ৫বছর বয়স তখন তার মা মারা যায় এরপর তার বাবাই আর ভাই তাকে মানুষ করেছে কিন্তু দিন শেষ তার মা প্রয়োজন ছিলো সেটা কেও বোঝেনিয়। প্রাপ্য নিজে চোখের জল আড়াল করে আনভিকে তার কলে বসিয়ে বললো…

প্রাপ্যঃ আমার পরীটা কাদে না মাম্মা আসবে তো। সে এখন অনেক কাজে ব্যস্ত তাই আসতে পারছে না দেখবে কাজ ফুরালে এসে পরবে…[বলে চোখের জল মুছিয়ে দিলো]

আনভিঃ জানো চাচ্চু আজ জখম(যখন) আল্নি(আন্টি) সাথে পার্কে গিয়েছিলাম তখল(তখন) দিয়া আমাকে বলো তার মাম্মা তাকে চুল বেধে দয় তার জন্য তকলেট(চকলেট) নিয়ে আসে। তাকে ঘুল(ঘুৃম) পাড়িয়ে দেয় আরো অনেক কিছু। আমি বলাম আমার মাম্মা তখন(যখন) আসবে আমাকে এসব করে দেবে। জানো চাচ্চু তখন ও বলো আর মাম্মা নাকি মলে(মরে) গেছে সে আর আসবে না…[বলে কান্না করতে লাগলো]

এদিকে দরজার বাইরে রোদ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে আনভির প্রতিটি কথা শুনে। তার ছোট মেয়ের মনে এতো কষ্ট সে মেনে নিতে পারছে না তার ওপর তার চোখে জল সে কখনো আনভির চোখে জল আসতে দেবে না বলে প্রমিজ করেছিলো একজনকে কিন্তু সে আজ ব্যর্থ তার সে কথা রাখতে পারলো না। রোদ কোন কিছু না বলে দরজা খুলে ভেতরে গলো। প্রাপ্য আনভিকে শান্তি করতে থাকে কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না সে শান্তি। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে সে সামনে তাকার আর রোদকে দেখে সে ভয় পয়ে যায় কেন না রোদের চোখ লাল হয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে কান্না করার ফলে হয়েছে। প্রাপ্য বুঝে ফেলো আনভির কথা রোদ সব শুনেছে। রোদ এসে আনভি কে প্রাপ্যর কোল থেকে নিয়ে নিলো তার কোলে। আনভি রোদকে দেখে তার গলা জড়িয়ে ধরে থাকলো। রোদ তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলো..

রোদঃ আম্মু কান্না করে না। আমার কথা শোনো তোমার মাম্মা চাই তাই না।

আনভিঃ হুম

রোদঃ ওকে আমি প্রমিজ করছি তোমর ৪র্থ তম জন্মদিনে তোমার মাম্মা তোমার কাছে থাকবে। আম্মু তোমার পাপা তার সব কথা রাখা তাই না তাহলে তার এই কথাটাও রাখবে। আম্মু কান্না করেনা।

আনভিঃ সতি(সত্যি) পাপা…[উৎসাহিত হয়ে বললো]

রোদঃ হুমম।

আনভি রোদের গালে চুমু দেয়, রোদ আনভি চোখ মুছিয়ে তার সারা মুখে চুমু দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে। প্রাপ্য রোদের কথা শুনে আবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে আছে…সে বুঝতে পারছে না তার ভাই এখন কি করবে। একবার যখন প্রমিজ করেছে সে কোন ভাবেই তার কথা রাখবে সে জানে। প্রাপ্য কিছু বলতে যাবে তার আগে রোদ তার রুম থেকে চলে গেলো কিছু না বলে। প্রাপ্য শুধু চেয়ে রইলো রোদের যাওর দিকে…

রাত-১২ঃ৩০

রোদের বুকে নিশ্চিতে শুয়ে আছে আনভি। রোদ আনভির চুল গুলো সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়ে আনভিকে দেখতে থাকলো। কিছু সময়ের ব্যবধানে আনভির ফর্সা চেহার লাল আভা তৈরি হয়েছে অতিরিক্ত কান্না করার ফলে। রোদ আনভিকে বেডে ভালো ভাবে শুয়ে দিসে উঠে জানলার কাছে এসে দাঁড়ায়। রোদ আকাশে দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো…

রোদঃ দেখেছো জান আজ আমাদের মেয়ে কতোটা কষ্টে আছে। ওর তোমাকে প্রয়োজন ভিশন ভাবে প্রয়োজন। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি আর আমার আম্মুটাকে কষ্টে দেখতে পারছি না। আমি আমার আম্মু কে আর কষ্ট পেতে দেবো না এতে আমাকে যা কিছু করতে হয় আমি তাই করবো। প্লিজ জান কামব্যাক প্লিজ। রোদ আনভির কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে……
______________________________

রাতে-১ঃ৩০

রাতে নিরবতা মাঝে এক সুন্দর রমনীয়ও ভাব আছে। বৃষ্টির কারনে হালকা শীত শীত ভাব। অন্তু তার বেড থেকে নেমে তার পড়ার টেবিলে ওখনানে যায় গিয়ে চেয়ার টেনে বসে। কিছু বইয়ের মাঝে থেকে একটা বই বের করে তার মধ্যে থেকে একটা ছবি বের করলো। ছবিটি দেখে মৃদু হাসলে ছবিটিতে অনেক স্মৃতি আছে তার। ছবিটি এমন অর্ণবে কোলে অন্তু বসে আছে তার হাতে গিটার অর্ণব তাকে সেটা বাজানো শেক্ষাচ্ছে তাদের ঠোঁটে লেগে আছে ভুবন ভুলানো হাসি। ছবিটি আদিবা (অন্তুর বেস্টফ্রেন্ড) তুলে দিয়েছিলো। ছবিটি সামনে রেখে টেবিলে মাথা দিয়ে অন্তু বলতে লাগলো…

অন্তুঃ তোমার মানে আছে অর্ণর আমাদের প্রথম দেখা। সেদিন আমি অনেক বড় একটা কাজ করেছিলাম এতে তুমি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। আমার ভাবতেই ভালো লাগে সেই দিনের কথা…

বলে তার চোখ বন্ধ করে নিলো। আস্তে আস্তে ভেসে গেলো সেই দিন গুলোতে যেখানে আছে অফুরন্ত ভালোবাসা আদর আবদার খুনসুটি রাগ আভিমান সব কিছু তার থেকে বেশি ছিলো অর্ণবের পাগলামি অন্তুর প্রতি…..

অতীত…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here