তুমি আসবে বলে পর্ব -৮+৯+১০

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৮

অরনির কথা শুনে অন্তু হাঁসবে না কাদবে বুঝে উঠতে পারছে না। অন্তু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অরনির দিকে। অরনি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো…

অরনিঃ দিদিয়া আমাকে বাঁচা, আজ নির্ঘাত ছোট ভাইয়ু আমার চুল কেটে ফেলবে৷

অন্তুঃ তুই এটা করতে গেলি কেন? যানিস না ছোট ভাইয়ু তার চুল নিয়ে কতোটা সেনসিটিভ। তোকে আজ আমি কেনো দাদাভাই ও রক্ষা করতে পারবে না

অন্তুর কথা শুনে অরনি কেঁদে দেয় আর বললে…

অরনিঃ আমি কি করবো সকালে আমাকে মোটু বলেছে তাই রেগে গিয়ে তার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিয়েছি। এখন ভাইয়ু ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে তার চুলের এই আবস্থা তাইলে আমার চুল কেটে ফেলতে এক বারও ভাবে না। দিদিয়া বাঁচা আমাকে প্লিজ।

অন্তু এখন কি করবে সে ভাবছে, আয়ান তার চুল নিয়ে অনেক সেনসিটিভ আর এই গধব মেয়ে নিজের রাগ আর কিছুর ওপর না ফলিয়ে একেবারে চুলের ওপর ফেলো। আজ বাড়িতে লাঙ্কাকান্ড বাধবে নিশ্চিত। (এবার বলি কি হয়েছে সকালে আয়ান অরনিকে মোটু বলায় তার রাগ হয় তাই সে মনে মনে ঠিক করে আয়ানকে সায়েস্তা করবে। তাই আয়ান দুপুরে এসে লাঞ্চ করে ঘুম আসলে অরনি চুপিচুপি তার রুমে গিয়ে তার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দেয়। অরনি যখন বোঝে সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে তখন সে অন্তুর কাছে সাহায্য চাইতে আসে। কেননা আয়ান অরনিকে মেরে ফেলেও অন্তুকে কিছু বলবে না, আয়ান অন্তুকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসা)

ওদের কথার মধ্যে আয়ানের গর্জন শুনে অরনি অন্তুর পিছনে গিয়ে লুকায়। আয়ানে গর্জন শুনে অন্তু ও ভয় পেয়ে যায় কিন্তু প্রকাশ করে না। আয়ান রাগে গজগজ করে তাদের সামনে এসে বললে…

আয়ানঃ অরু মোটু আজ তোর একদিন কি আমার বারোদিন, তোর বিনুনী আজ আমি কেটেই ফেলবো। বোনু তুই সামনে থেকে সর।

বলে অন্তুর পেছনে থাকা অরনিকে ধরতে নিলো। অরনি ভয়ে একেবারে ভেজা বিড়ালের মতো অন্তুকে জড়িয়ে ধরে আছে, যেন ছেড়ে দিলে কি না কি হয়ে যাবে। অন্তু আয়ানকে বললো…

অন্তুঃ ভাইয়ু এবারের মতো ছেড়ে দে অরুকে। ছোট মানুষ ভুল হয়েগেছে আর এমন করবে না আমি ওর হয়ে কথা দিচ্ছি।

আয়ানঃ ছোট মানুষ ভুল করলে শাস্তি পেতে হয়ে আজ আমি ওকে শাস্তি দিয়েই ছাড়বো তুই সামনে থেকে সর।[ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো]

অরনিঃ ভাইয়ু প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও আমি আর করবো না এমন। [বলে কান্না করে দিলো]

আয়ানের চেচামেচি দেখে দিদুন আর নিহিতা অন্তুর রুমে এসে দিদুন বললে..

দিদুনঃ এখানে কি হচ্ছে, এতো চেচামেচি কেনো। আয়ান দাদুভাই কি হয়েছে (বলে তার কাছে গিয়ে তার চুলে চুইংগাম দেখে বললো) দাদুভাই তোমার মাথায় চুইংগাম লাগালো কে

আয়ানঃ কে আবার তোমার গুনধর নাতনি অরু। ঘুম থেকে উঠে দেখি এই আবস্থা আর সকালে ওকে
মোটু বলায় এটা ও ছাড়া কেও করবে না

নিহিতাঃ এই বেয়াদব মেয়ে ভাইয়ের সাথে এমন করতে হয়। দিনে দিনে বড় হচ্ছও নাকি ছোট, আজ তোমাকে উচিত শিক্ষা দিতেই হবে যাতে আর কোনো দিন এমন না করো।

বলে অরনির দিকে তেরে গেলে আয়ান তার মাঝে আসে। আয়ানে দেখে নিহিতা বলে..

নিহিতাঃ আয়ান বাবা সামনে থেকে সরো আজ এই মেয়েকে ছাড়াব না

আয়ানঃ মা ও যা করছে আমার সাথে করেছে এতে তোমাকে কিছু করতে হবে না। আর অরুকে তুৃমি কিছু বলবে না অরু ওর ভাইয়ুর সাথে যা করার করছে অন্য করোর সাথে করে নাই তাই তুমি এসবের মধ্যে থেকে দূরে থাকো।

নিহিতা ছেলের কথা শুনে রেগে চলে গেলো। দিদুন অরুকে অন্তুর পেছন থেকে নিয়ে এসে বলে..

দিদুনঃ দেখলে দিদিভাই তোমার ভাইয়ু তোমার জন্য তোমার মার সাথে লড়াই করলো৷ আয়ান দাদুভাই তোমাকে ভালোবাসে অনেক তাই তোমাকে রাগায়। এর পর এমন করো না

অরনিঃ ঠিক আছে দিদুন। আর সরি ভাইয়ু আর হয়ে না এমন।

আয়ানঃ ইট’স ওকে [মুচকি হেসে বলো]

আয়ান চলে যায় সাথে দিদুন। অন্তু অরনির চোখ মুছে দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলো…
_______________________________

রাত-৯টা..

ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ডুকলো অর্ণব। অর্ণবের ফ্ল্যাটে ২টা রুম, ১টা কিচেন, ড্রইংরুম। হাতের ব্যাগ রেখে কিচেনে গেলো পানি খতে, পানি খেয়ে এসে সোফায় বসে চোখ বন্ধ করলো। চোখ বন্ধ করতেই সকালে সেই ঘটনা তার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো, অন্তুর কাপাস্বরে বলা আই লাভ ইউ বলা দেখে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে আনমনে তার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটলো। পরখনে অর্ণব তার মাথায় টোকা দিয়ে বলে..

অর্ণবঃ অর্ণব মহাশয় আপনি কি পাগল হয়ে যাচ্ছেন। সামান্য একটা ঘটনাকে এত গুরুত্ব দেওয়া ঠিক না আপনার। আর মেয়েটা যে মন থেকে বলেছে তা তাকে দেখে মনে হলো না মনে হচ্ছে কেও তাকে দিয়ে বলেছে। যাগে সে সব কথা এখন অনেক ক্ষুদা পেয়েছে রান্না করতে হবে তরপর পড়তে হবে। চলো অর্ণব বাবা

বলে অর্ণব উঠে ফ্রেশ হতে গেলো, ফ্রেশ হয়ে রান্না করে খেয়ে পড়তে বসে….

___________________________

রাত-১০টা

সবে রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসলো অন্তু। আজ সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই সে বেডে শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছু সময় পর মাথায় কারোর হাত পরে সে চমকে উঠে কিন্তু যখন বুঝলো হাতের মালিক তার দিদুন তখন হাসতে লাগলো কিন্তু চোখ খুলো না। দিদুন মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো..

দিদুনঃ দিদিভাই আজকের দিনটা কেমন ছিলো তোমার

দিদুনর কথা শুনে অন্তু চোখ খুলে তার কোলে মাথা রেখে বলতে লাগলো..

অন্তুঃ ভালো খারাপ দু’টোই ছিলো দিদুন। কোনটা ছেরে কোনটা বলবো বলো।

দিদুনঃ আগে ভালোটা বলো তারপর খারাপটা বলো

অন্তুঃ ওকে। আজ ভালো ছিলো কম বেশি, আজ আমি আর আদিবা অনেক মজা করেছি। সবার সাথে পরিচয় করেছি স্যার ভালো, ক্লাস ভালো। এখন আসি খারাপ দিকে, আজ আমার আর আদিবাকে কিছু সিনিয়ার মিলে র্যগ করেছে। আদিবাকে গান গাইতে বলেছে আর আমাকে (বলে চুপ করে কিছু ভেবে আবার বলো) আমাকে ও তাই করতে বলেছে দিদুন

দিদুনঃ তাদের এতো সাহস তারা অন্তরা মির্জা কে র্যগ দিয়েছে। আমি এখনি আজাদ কে বলছি তাদের শাস্তি দিতেই হবে

অন্তুঃ না না দিদাুন এটা বাবা, দাদাভাই বা ভাইয়ু জানলে কাল থেকে বাড়ি বসে থাকতে হবে না হলে বডিগার্ড নিয়ে যেতে হবে প্লিজ দিদুন কিছু বলো না কাওকে।

দিদুনঃ ওকে আমি কিছু বলবো না এখন। তুমি ঘুম আসো। আমি যায়।

দিদুন যাবার আগে অন্তুর রুমের দরজা থেকে কেও সরে যায়। দিদুন চলে গেলে অন্তু ঘুম আসে…

_______________________

পরের দিন ভার্সিটিতে…..

পরপর দু’টো ক্লাস করে হয়রান হয়ে গেছে অন্তু আর আদিবা। তাই তারা দুজন মিলে কেন্টিনে গিয়ে বসলে কথা বলতে থাকে। হঠাৎ অন্তুর নজর যান তাদের থেকে কিছু দূরে বসে থাকা ছেলেটির দিকে ছেলেটি এক মনে বই পড়ছে। অন্তু ছেলেটিকে দেখে চিনতে পারলো ছেলেটি কালকের ছেলে, অন্তুর মেনে হলো তাকে কালকের জন্য সরি বলা দরকার তাই সে উঠে দাঁড়ায়। অন্তুকে উঠতে দেখে আদিবা বললে…

আদিবাঃ কি হলো তুই কোথায় যাচ্ছিস

অন্তুঃ ওখানে কালকের ছেলেটা বসে আছে তাকে কালকের জন্য সরি বলতে যাচ্ছি।

অন্তুর কথা শুনে আদিবা সেই দিকে তাকায়। দেখে সত্যিই কালকের ছেলেটা বসে আছে। আদিবা অন্তুকে বলে..

আদিবাঃ অন্তু দেখ ছেলেটাকে সরি বলতে গেলে যদি হিতেবিপরীত হয় তখন কি হবে। তাই বলছি কিছু করতে হবে না প্লিজ

অন্তুঃ না আমি সরি বলবো। কি হবে না হবে তা পরে দেখা যাবে।

বলে চলে গেলো ছেলেটির দিকে। এদিকে অর্ণব বসে পড়ছে তখন হঠাৎ তার পাশের চেয়ারে কারোর উপস্থিত টের পেলে অর্ণব সামনে তাকায়৷ সামনের মানুষটিকে দেখে অর্ণব বিস্মত হলো সে ভাবছে এই মেয়ে এখানে কি করছে। অন্তু অর্ণবকে তার দিকে এখাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ইতস্তত করছিলো সে আমতা আমতা করে বললো…

অন্তুঃ সরি

অন্তুর সরি শুনে অর্ণব চমকে যায়। অর্ণব চোখ ছোট ছোট করে বললো..

অর্ণবঃ মানে

অন্তুঃ আসলে কালের জন্য সরি, আমি আপনাকে মিন করে ওটা বলতে চায়নি। সিনিয়ার আপু বলো তাই করতে হয়েছে৷ তাই সরি

অর্ণব এবার বুঝলো কেন সরি বলো। সে হাসি মুখে বললো…

অর্নবঃ নো প্রবলেম। আমি কাল আপনাকে দেখেই বুঝেছি আপনি ওই কথাটা নিজের ইচ্ছায় বলেন নি কেও আপনাকে এটা করতে বাদ্ধ করেছে। তাই সরি বলতে হবে না

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু সস্তির নিঃশ্বাস নিচো সে হসে বলতে লাগলো…

অন্তুঃ আমি অন্তরা মির্জা অন্তু। আপনার নাম

অর্ণবঃ আমি অর্ণব আহমেদ

অন্তুঃ আমি এ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট ইয়ারে স্টুডেন্ট। আর আপনি

অর্ণবঃ সেম ডিপার্টমেন্ট কিন্তু ফাইনাল ইয়ার।

অন্তুঃ ওও ভালো। আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।

অর্ণব অন্তুর কথা শুনে থমকে গেলো। এই মেয়ে দেখে সব কিছুতেই ফাস্ট দ্বিতীয় দেখাতেই বন্ধুত করতে বলছে। অর্ণব বললো

অর্ণবঃ কেন নায় অবশ্যই

বলে অন্তুর হাতে হাত মিলায়। অন্তু খুশি হয়ে অনেক কথা বলতে লাগলো আর অর্ণব তার দিকে তাকিয়ে থাকলো এক ধ্যানে। হঠাৎ আদিবা এসে অন্তুকে বলে..

আদিবাঃ আর কতো কথা বলবি থাম অন্তু। চল যেতে হবে আমাদের ক্লাস আছে।

অন্তুঃ যাচ্ছি দাড়া। অর্ণব ভাইয়া এ হলো আমার বেস্টফ্রেন্ড আদিবা আর আদিবা ইনি হলো অর্ণব ভাইয়া আমাদের ডিপার্টমেন্টর ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট

আদিবা সালাম দিলো অর্ণব সালামের উত্তর দিয়ে তাদের বললো..

অর্ণবঃ তোমরা থাকো পরে কথা হবে আমাকে যেতে হবে বাই

অন্তু আর আদিবা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুখন। তরপর চলে যেতে নিলে কালকের ভাইয়া আর আপু এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। কর্ণা বলে..

কর্ণাঃ সরি কালকের জন্য আমরা জানতাম না যে তুমি আজাদ মির্জা মেয়ে তাই না যেনে ভুল করে ফেলেছি

আবিরঃ সরি বোন এই কথা তুমি প্রিন্সিপালের কাছে বলো না।

অন্তু তাদের কথা শুনে থ মের দাঁড়িয়ে থাকে। তার মাথায় আসছে না তার পরিচয় এরা কি করে যানলো আর যানলো যানলো তাকে সরি বলতে আসলো কেন। তাদের দেখে মনে হচ্ছে অনেক ভয় পেয়ে আছে কে তাদের ভয় দেখিয়েছে। অন্তু বললো..

অন্তুঃ না না আপু আমি কাওকে কিছু বলবো না। আর আমার কাছে সরি চয়তে হবে না।

আবিরঃ তাহলে আমরা আসি

বলে চলে গেলো। আদিবা ইশারায় বলো এদের কি হলো এরা এমন করলো কেন। অন্তু বলে সে জানে না। হঠাৎ অন্তু ফোন বেজে ওঠে অন্তু দেখে আয়ানর ফোন। সে ফোন তুলে কিছু বলবে তার আগে আয়ান বললো..

আয়ানঃ তোর কাছে আবির আর কর্ণা ক্ষমা চেয়েছে তো নাকি কোনো উল্টা পাল্টা আবার কিছু করেছে। আমাকে বল তাদের আমি ছারবো না।

অন্তুর এখন বুঝতে বেগ বেতে হলো না কাহিনী কি। কাল রাতে অন্তু যখন তার দিদুনকে র্যগের কথা বলে তখন কিছু দরকারে আয়ান অন্তর রুম যায় কিন্তু তাদের কথা শুনে ভেতরা যায় না, সব শুনে রেগে তার রুমে চলে যায়। তাই সকলে এসে সেই ছেলেমেয়ে গুলোকে খুজে শাসিয়ে যায় যাতে অন্তুর সাথে খারাপ কিছু না কের। অন্তু বললো

অন্তুঃ না ভাইয়ু সব ঠিক আছে। তুমি টেনশন করো না। রাখি

বলে ফোন রেখে আদিবাকে সব বলে। সব শুনে আদিবার মাথায় হাত অন্তু ও টেনশনে কিন্তু এসব বাদ দিয়ে রিলাক্স মুডে ক্লাসে গেলো,….

________________________________

বিকেলে……

অন্তু তার দিদুন আর অরনির সাথে বসে গল্প করছে। অরনি বই নিয়ে পরছে তার পাশে গল্প করছে আর দিদুন অন্তুর চুলে তেল দিচ্ছে। অন্তু তাদেরকে কালকের সত্যি কি কি হয়েছে আর আজ কি কি হয়েছে তাদের বলছে। অন্তু তার দিদুন আর বোনের কাছে কিছু লুকাতে চায় না আর লুকালেও তা পরে বলে দেয় আর আজ তাই করছে। অরনি পড়তে পড়তে বললো…

অরনিঃ দিদিয়া ভাইয়াটা অনেক ভালো তাই না, তাই বেশি কিছু করলে না৷ তাইনা দিদুন

অরনির কথায় শায় দিয়ে দিদুন বললো..

দিদুনঃ হ্যাঁ অরু দিদিভাই ঠিক বলেছে। আজ কালকের দিনে এতো নম্র, ভদ্র, বুঝদার ছেলে কোটা পাওয়া যায় বলতো অন্তু দিদিভাই।

অন্তুঃ হুম দিদুন

অরনিঃ দিদিয়া একটা বার ওই ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখা করাস। তোর কাছ থেকে যা শুনাল তাতে আমার দেখতে ইচ্ছা করছে ওই হ্যান্সাম ভাইয়াকে।

অন্তুঃ ওরে বাজি চেয়ে পড়া বাদে এসব। দাঁড়া আজ চাচি কে বলবো সব কথা তখন চাচির হাতে মার খাবে তাইলে ভালো হয়ে যাবি

অরনিঃ না দিদিয়া এমন করো না এই দেখো আমি পড়ছি

বলে পড়তে লাগলো তা দেখে দিদুন আর অন্তু হাসতে লাগলো। হাসির মাঝে ও অন্তু ভাবতে লাগলো..অর্ণবের সেই মুচকি হাসি, তার শান্ত স্বরে কথা বলা, তার ব্যবহার সব তাকে মুগ্ধ করেছে। যখন অর্ণবের সাথে কথা বলো তার বুকের মাঝে ধুকপুক করতে ছিলো। কেমন অস্থিরতা লাগছিলো তার। তার সাথে কি হচ্ছিল সে যানে না কিন্তু তার ভালো লাগছিলো ওই মুহূর্তটাকে কেন লাগছিলে সে যানে না বা জানতেও চায় না। অন্তু অর্ণবের কথা ভাবতেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৯

সকাল সকাল তারাহুরো করে রেড়ি হয়ে নিচে আসলো অন্তু। অন্তুকে তারাহুরা করতে দেখে আকাশ (অন্তুর চাচ্চু) বললো…

আকাশঃ মামনি এতো তারাহুরা করে না, না হলে তুমি কোথাও ব্যাথা পাবে।

অন্তু খেতে খেতে বললো..

অন্তুঃ না চাচ্চু আজ লেট হয়ে গেছে আমার। আজ একটা ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে। তার ওপর দাদাভাই আজ নিয়ে যাবে না তার মিটিং বলে আমাকে একাই যেতে হবে….[বলে খেতে মন দিলো]

আকাশঃ হুম আমাকেও যেতে হবে আদি অফিসে আগেই চলে গেছে…বাই

বলে তিনি চলে গেলো। অরনি একবার সবার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো..

অরনিঃ বড় আব্বুর একটা কথা ছিলো

আজাদঃ হ্যাঁ অরু মামনি বলো কি হয়েছে।

অরনিঃ আমাদের স্কুল থেকে সামনের মাসে পিকনিকে যাবে। আমার ইচ্ছে আছে যাবার তাই তুৃমি যদি পারমিশন দিতে..

অরনির কথা শুনে নিহিতা মির্জা রেগে বললো…

নিহিতাঃ এই মেয়ে তোর না সামনে এক্সাম তাইলে এখন কোথাও যাওয়া যাবে না পড়াই মন দাও।

নিজের মায়ের কথা শুনে অরনির মন খারপ করে খেতে লাগলো। আজাদ মির্জা অরিনর শুকনো মুখ দেখে বললো..

আজাদ মির্জাঃ আহ নিহিতা ওর যখন মন ও যাবে। অরু মামনি তুমি অবশ্যই যাবে আমি তোর টিচারের সাথে কথা বলে নেবো।

অরনিঃ থ্যাঙ্ক ইউ বড় আব্বুর

তারপর সবাই খেতে লাগলো, যখন আজাদ মির্জা পারমিশন দিয়েছে তখন নিহিতা মির্জা কিছু বলতে পারবে না। অন্তু খেয়ে অরু কে নিয়ে চলে যায়…

_________________________

সবে ক্লাস করে অন্তু আর আদিবা বের হলো। তারা কথা বলতে বলতে কেন্টিনের গিয়ে বসে৷ কিছু সময় পর নাহিদ এসে তার পাশে বসে বলো…

নাহিদঃ তো বোনরা কি নিয়ে এতো গবেষণা আমাকেও বলো।

নাহিদের কথা শুনে অন্তু আর আদিবা তার দিকে তাকিয়ে হেঁসে ফেলো। অন্তু হাসতে হাসতে বললো..

অন্তুঃ কে যে বলেন ভাইয়া আমরা গবেষণা করনি না আমরা হিসাব মিলায়। আজ স্যার কি ম্যাথ করলো কিছুই বুঝলাম না। তাই সেটা নিয়ে কথা বলছি..তা তুমি একা কেন আরেক জন্য কোথায়।

নাহিদঃ আমার সাথেই আসছিলো কিন্তু কর্ণার সাথে কথা বলছে কি ম্যাথ বোঝে নাই তাই তাকে দেখিয়ে দিছে

নাহিদের কথা শুনে অন্তু মন খারাপ হয়ে গেলো কিন্তু কাওকে বুঝতে দিলো না কিন্তু অন্তু মন খারাপ নাহিদের চোখ ফাকি দিতে পারলো না। তাদের কথার মাঝে আদিবার ফোনে কল আসে সে তাদের থেকে একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে লাগলো, নাহিদ খাবার অর্ডার দিতে গেলো আর অন্তু তার ভাবনার জগৎ

অন্তু এখনো মনে আছে, সেই দিন অর্ণবের সাথে কথা বলে তারা ফ্রেন্ড হলেও অর্ণব তার সাথে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করতো। অন্তু অনেক ছুতোই অর্ণবের সাথে কথা বলতো, যেমন পড়ার নিয়ে, ম্যাথ না বুঝলে, আস্তে আস্তে অর্ণবের সব ইতস্তত বোধ কাটিয়ে তারা দুজনে ভালো বন্ধু হয়ে উঠো। অন্তুর ভালো লাগতো অর্ণবের সাথে সময় কাটাতে, কিন্তু কেন লাগতো সে জানে না, কোনো মেয়েকে তার সাথে কথা বলতে বা আসে পাশে দেখলে রাগ হয়, অর্ণবের কাছে গেলে তার অস্থিরতা হয়, বুকের মাঝে ধুকপুক করে, হৃদয়ের স্পন্দন বেরে যায়, লজ্জায় হয় কেন তা জানে না। আর নাহিদ তার সাথে তো অন্তুর সেই মিল, অর্ণবের মাধ্যমে নাহিদের সাথে পরিচয়। নাহিদ মানুষ হিসেব ভালো, মিসুক প্রকৃতির কিন্তু বন্ধু হিসেবে অনেকে ভালো। অন্ত আর আদিবাকে বোন বলে মনে করে তাদের ভার্সিটিতে কোনো অসুবিধা না হয় সে খেয়াল রাখে। দেখতে দেখতে ১ মাস হয়ে গেছে তাদের সাথে এই বন্ধুত। সেদিনের সিনিয়রা তাদের ডিপার্টমেন্টর আয়ানের ধমকিতে আর কিছু করে নাই এরা। এই ১ মাসে অন্তু অর্নবের বিষয়ে সব খোঁজ খবর নিয়েছে কিছু নাহিদের কাছে আর কিছু ভার্সিটির সবার কাছে থেকে। অন্তু যখন জানলো অর্ণব অনাথ তখন কষ্ট পায় সে অর্নবের সাথে কথা বলে জানতে পারে…অর্ণবের বয়স যখন ৫বছর তখন তাকে মাদার মানে অনাথ আশ্রমে হেড তাকে পায় রক্ত আবস্থাতে, তারপর অর্ণবকে সে নিজের সাথে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসা করে। কিন্তু তার আগের সব কথা ভুলে যায় সে কোথায় থাকে, কে, তার বাবা মা কে কিছু যানতে পারে না তাই তিনি অর্ণব কে তার কাছে রেখে মানুষ করে। তারপর অর্ণবের প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাকে একটা ফ্ল্যাট দেয় আর পাট টাইম জব। আর নাহিদ ভাইয়ার সাথে তার ৪ বছরের পরিচয়, তাদের বন্ধুত্ব অনেক গারো। নাহিদ ভাইয়ার অর্ণবকে নিজের আপন ভাইয়ের মতো ভালোবাসে অর্ণব ও। অন্তুর ভাবনার মধ্যে অর্ণব তাকে ডাক দেয় এতে তার ধ্যান ভাঙে, অন্তু নড়েচড়ে ভালো হয়ে বসে। অর্ণব বলে..

অর্ণবঃ কোথায় হারিয়ে ছিলে কখন থেকে তোমাকে ডাকছি। কি হলো কথা বলছো না কোনো তুমি…

অর্ণবের মুখে তুমি শুনে অন্তুর মনে শিহরণ জাগে। একটা গভীর অনুভূতি অনুভব হয়, অন্তুর এখনো মনে আছে এই তুমি ডাকা নিয়ে সে অর্ণবের সাথে কম ঝামেলা করে নাই সে। অর্ণব কিছুতেই তুমি করে বলতে চায় নাই, কিন্তু অন্তু ও নাছর বান্দা সেই তুমি বলিয়ে ছেরেছে। এই ডাক শোনার জন্য অন্তু তিন দিন অর্ণবের সাথে কথা বলে নাই চতুর্থ দিন অর্ণব অন্তুকে বলে…

অর্ণবঃ অন্তু আপনি এমন করছেন কেন বলুনতো

আপনি শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে অন্তু সে বলে…

অন্তুঃ এই তুমি আমাকে আপনি আপনি করছেন কেন, আমি তোমার থেকে বড় নাকি যে আপনও করে বলবে। আমি অনেক ছোট তোমার থেকে তাই আমাকে তুমি করে বলবে, না হলে কথা বলবে না আমার সাথে।

অন্তুর কথা শুনে আদিবা আর নাহিদ হেসে কুটিকুটি। অর্নবের আসহায় মুখ বললো..

অর্ণবঃ আমি কখন কোনো মেয়েকে তুমি বলে ডাকি নিই তাই ডাকতে ইতস্তত লাগে। আপনি বোঝার চেষ্টা তো করুন

অন্তু রেগে ওখান থেকে চলে যেতে নিলে অর্ণব তাকে আটকিয়ে বলে..

অর্ণবঃ ওকে ওকে ফাইন আমি এখন থেকে আপনাকে তুমি বলে ডাকবো হেপ্পি এখন

অন্তুঃ হুম অনেক হেপ্পি [অনেক খুশি হেয়ে বলো]

হঠাৎ আদিবার ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসে, অন্তু আদিবাকে ইশারায় বলে..কি হয়েছে আদিবা ইশারায় বলে…সামনে দেখ অর্ণব ভাইয়া। অন্তু সামনে তাকিয়ে অর্ণবকে দেখে বলে…

অন্তুঃ তেমন কিছু না তুমি বলো কর্ণা আপুর ম্যাথ বোঝানো হলো…[দাঁতে দাঁত চেপে বলো]

অর্ণবঃ হুমম হয়েছে। তোমার ক্লাস কেমন হলো..[খেতে খেতে বলো]

অন্তুঃ ভালো

অর্ণবঃ আদিবা তোমার কোনো ম্যাথে সমস্যা নেই তো। থাকলে বলতে পারো আমি দেখিয়ে দিচ্ছে।

আদিবাঃ না ভাইয়া কোনো সমস্যা নাই

নাহিদঃ এই সব বাদ দাও মজার কথা শোনো

অন্তুঃ কি ভাইয়া

নাহিদঃ তোমাদের তো নবীন বরণ হয় নাই কিছু সমস্যা জন্য

আদিবাঃ হ্যাঁ তাই

নাহিদঃ তাই ২ সপ্তাহে পরে তোমাদের নবীন বরণ হবে

অন্তু আর আদিবা এক্সাইটেড হয়ে বলে…তাই

অর্ণবঃ হুমম

অন্তুঃ তাইলে তো অনেক মজা হবে৷ চল আদিবা অনেক কাজ আছে৷ তোমরা থাকো আমরা গেলেম

বলে আদিবাকে নিয়ে চলে গেলো। অর্ণব অন্তুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। নাহিদ অর্ণবের কাধে হাত দিলে অর্ণব তার দিকে তাকায়। নাহিদ সরাসরি বলে…

নাহিদঃ তুই অন্তুকে যখন পছন্দ করিস তাইলে ওকে বলে দিচ্ছিস না কেন? দেখ অর্ণব মনের কথা মুখে আনতে হয় না হলে সামনের মানুষটি কেমনে বুঝবে তোর মনের কথা বল আমাকে।

অর্ণব হতাশ কন্ঠে বললে… আমি অন্তুর জন্য যোগ্য না নাহিদ, আমার মতো অনাথকে কখনো ওর বাড়ি কেও মেনে নেবে না। আর তুই জানিস অন্তুর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে তারা এই সম্পর্ক মানবে না।

নাহিদঃ তুই অন্তুর ফ্যামিলি নিয়ে কেন আগে থেকে ভাবছিস বলতো৷ আগে তো তোকে অন্তুকে তোর মনের কথা বলা উচিত।

অর্ণবঃ আমি চাই না আমার একতরফা ভালোবাসা নিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হক বা অন্তু আমাকে ভুল বুঝুক তাই আমার ভালোবাসা আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল আর থাকবে বুঝলি..

নাহিদঃ যদি অন্তুও তোকে ভালোবাসে আর ভালোবাসি কথাটা তোর মুখ থেকে শুনতে চায় তাইলে।

অর্ণব আর কিছু বলতে পারলো না, সে ভাবছে অন্তু কি সত্যি তাকে ভালোবাসে। নাহিদের কথা যদি সত্যি হয় তহলে আমার কি করা উচিত, আমরা কি একটা বার অন্তুকে আমার মনের কথা বলা উচিত। অন্তু কি আমার অনুভূতি গুলো বুঝবে, তার জন্য আমার কেয়ার, প্রটেক্ট করা যদি না বোঝে তাইলে এখন কি আমাদের বন্ধুত্ব শেষ করে দেবে। না না আমি এই বন্ধুত্ব শেষ হতে দেব না, আমি তো অন্তুর সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না কি করবো বুঝি না। অর্ণবের অস্থিরতা দেখে নাহিদ বলে…এতো ভাবতে হবে না তুমি তোর সময় নে তার পরে না হয় বলিস। এখন চল যেতে হবে। নাহিদের কথা মতো তার সাথে চলে গেলো…

অর্ণব অন্তুকে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিলো। অন্তুর ড্যাব ড্যাব করে তাকানো, তার বলা আই লাভ ইউ, আর তার ঠোটের কোণে হাসি দেখে অর্ণবের মনে গেথে যায়। তারপর অন্তুর সরি বলা বন্ধুত্ব করা তে মুগ্ধ হয়, আর অন্তুকে তুমি না বলায় তিনদিন কথা না বলা মুখ ফুলিয়ে থাকা তার প্রতি অধিকার খাটানো সব কিছু অর্ণবের মনে নতুন এক অনুভূতি সৃষ্টি করে। আস্তে আস্তে সেই অনুভূতি ভালোবাসায় প্রকাশ পায়। কিন্তু অর্ণব অন্তুকে বলতে ভয় পায় যদি তাকে ভুল বোঝে, ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করে বা অন্তু ফ্যামিলি না মানে তাকে তাইলে……

______________________________

দুপুর-১ঃ৩০

আজ রোদটা অনেক প্রখর ছিলো, গরম ছেড়ে শীতে পা দেবে দেবে এমন সময়ে এতো রোদ ভাবা যায় না। অন্তু সবে বাসায় আসে, তখন তারাহুরো করে বেরিয়ে শপিং মলের গিয়েছিলো তারা। অন্তু ইচ্ছে নবীন বরণে সে আর আদিবা একই রঙের শাড়ি পরবে তাই। অনেক খুঁজে অন্তুর পছন্দের নীল রঙের শাড়ি তার মাঝে কারুকাজ করা মাল্টি কালারের। অন্তু ২টা শাড়ি নেলে তাতে আদিবা বাঁধা দেয় সে বলে..

আদিবাঃ অন্তু এতো এক্সপেন্সিভ শাড়ি আমি নেবো না প্লিজ..

অন্তুঃ তোকে তো আমি কিছু দিচ্ছি না আমি তো আমার ভাবিকে দিচ্ছি। তাই চুপ করে শাড়িটা নেয়ে নে।

আদিবাঃ না অন্তু এটা আমি নিতে পারবো না।

অন্তুঃ তুই নিবি নাকি দাদাভাই কে ফোন দেবো৷ আর দাদাভাই কি করে তোকে শাড়ি নিতে বাদ্ধ করে তা তুই বুঝতেই তো পারছিস। এখন বল কি করবি নিবি না দাদাভাই কে ফোন করবো।

আদিবাঃ ওকে নিছি…[অসহায় মুখ করে বলো]

এতে অন্তু খুশি হলো, আদিবা যে শাড়ি নেবে না তা অন্তু ভালো করে যানে তাই আদির নাম নিয়েছে। আদিবা আদিকে যমের মতো ভয় পায়, কিন্তু ভালোও অনেক বাসে। তারপর আদিবাকে তার বাড়ি নামিয়ে সে সোজা বাড়ি আসে। বাড়ি এসে দেখে সবাই ড্রইংরুমে মন মরা হয়ে বসে আছে। অন্তু এগিয়ে গিয়ে বলে…কি হয়েছে। সবাই অন্তুর দিকে তাকায়, এর মাঝে অরনি এসে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে কাদো কাদো গলায় বলে….

অরনিঃ দিদিয়া দাদাভাই নাকি বিদেশে চলে যাবে…

আদি বিদেশে চলে যাবে শুনে অন্তু মাথায় যেন বাজ পরলো৷ যেই দাদাভাই অন্তুকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না সে কি না তাকে ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবে। অন্তু ছলছল চোখে আদির দিকে তাকায়, আদি তার অরুপাখির চোখে জল দেখে মনে হচ্ছে তার বুকে কেও ছুরি মারছে৷ আদি জানে অন্তু সবাইকে ছেড়ে থাকতে পারলেও তাকে ছাড়া থাকতে পারে না। ভাই-বোনের সম্পর্কেই এমন কাছে থাকলে সব সময় মারামারি, রাগ, অভিমান করবে থাকে কিন্তু দূরে গেলে তাদের ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। অন্তু কেমন করে থাকবে তার দাদাভাইকে ছাড়া ভাবতেই আদির চোখে কোণায় জল চিকচিক করে উঠে। আদি অন্তুর কাছে গেলে অরনি অন্তুকে ছেড়ে দেয়, আদি অন্তুকে জড়িয়ে ধরতেই অন্তু আটকে থাকা কান্না এখনে বেরিয়ে যায়। অন্তু ফুপিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো..

অন্তুঃ দাদাভাই তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি। আমি কি করে থাকবো তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারনো না তোকে ছাড়া। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না…

বলে জোরে কান্না করতে লাগলো, বাড়ির সবার চোখে জল, হবেই না কেন এমন দৃশ্য দেখে যেকেউ কান্না করবে৷ সবাই জানে আদি আর অন্তু একে ওপরকে ছাড়া থাকতে পারে না আর এখন আদি যখন বিদেশে যাবে তখন অন্তুর কি আবস্থা হবে সেটা সবাই জানে…

আদিঃ অন্তুপাখি কান্না করে না। প্লিজ পাখি আমার কথাটা শোনো, তুমি যানো আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পরি না

অন্তুঃ আমি কোনো কথা শুনতে চাই না তুমি যাবে না মানে যাবে না।

আদিঃ ওকে ওকে আগে শান্ত হও তারপর কথা বলি প্লিজ।

আদির কথা শুনে অন্তু কান্না বন্ধ করে কিন্তু এখনো ফুপিয়ে যাচ্ছে। আদি তাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাতে হাত রেখে বলতে লাগলো….

আদিঃ অন্তুপাখি জানি তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারো না আর আমি ও তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না। কিন্তু আমি কি করবো বলো…এই বিজনেসটা আমি নিজের হাতে আমার অন্তুপাখির নামে করেছি ” অন্তরা গ্রুপ অফ কোম্পানি “টা আমার স্বপ্ন অন্তুপাখি। একদিন বিদেশের মাটিতে তোর নাম হবে ভেবে আমি কাজটা শুরু করেছি। এখন যখন এতো বড় সুযোগ পেয়েছি আমি চায় না হাতছাড়া হোক বোঝো আমার কথা।

(হ্যাঁ আদির কোম্পানিতে একটা ভালো অফার আছে তার বিজনেসটাকে বিদেশের মাটিতে নাম করার। তাই আদি বিদেশে যেতে চায় কিন্তু সে জানে তাকে ছারা তার বোনু থাকতে পারে না আর সে ও থাকতে পারে না। কিন্তু সে এই কাজটা করতে চায়) অন্তু চোখের পানি মুছে বলে…যাওয়া কি খুব দরকার

আদিঃ হুমমম

অন্তু কিছুখন ভাবতে লাগো, সে ভাবে তার ভাই অনেক কষ্টে এই কোম্পানি দাঁড় করিয়েছে তার নামে কারোর সাহায্য নেয় নিই তার উচিত তার ভাইকে সাপোর্ট করা। সে মুচকি হাসি দিয়ে বলো.. ওকে তুমি যেতে পারো কিন্তু আমার সাথে সব সময় কথা বলতে হবে।

আদিঃ ওকে

বলে তাকে জড়িয়ে ধরলো। অরনি আর আয়ান ও তাদের সাথে যোগ দিলো। তাদের দেখে দিদুন তার চোখের জল মুছে নিলো। নিহিতা বলে সবাইকে খেতে ডাকলে তারা সবাই যায়। আদি তার তিন ভাই-বোনকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়…….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১০

একটি নিরিবিলি জায়গাতে পাশাপাশি বসে আছে আদি আর আদিবা। তাদের মধ্যে কেও কারোর সাথে কথা বলছে না। আদি এক দৃষ্টিতে আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে, আর আদিবা মাথা নিচু করে আছে। কিন্তু কিছুখন পরপর তার শরীর হালকা নড়ে নড়ে উঠছে, আদি বেশ বুঝতে পারছে মেয়েটা তার বিদেশ চলে যাবা নিয়ে মন খারাপ করে কান্না করছে। (আজ সকালে আদি অন্তুকে ভার্সিটিতে রেখে আদিবাকে নিয়ে এই নিড়িবিলি জায়গাতে এসেছে। আসার পরে আদি আদিবাকে সব খুলে বলে তার বিদেশ যাবা নিয়ে বলে আদিবা একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়, তার একটু পরে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। আর তখন থেকে মেয়েটা কান্না করছে কিন্তু আদি থামাছে না) আদি এবার তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার এক হাতে আদিবার এক হাত আর অন্য হাত দিয়ে আদিবার মুখ তুলে দেখতেই তার বুকের বা পাশটাতে মোচর দিয়ে উঠলো। একটু সময়ের ব্যবধানে মেয়েটা তার কি আবস্থা করেছে না জানি সে চলে গেলে কি করবে। আদি তার চোখের জল মুছে দিতেই আদিবা আদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আদিবার আকাম্মসিক কাজে আদি স্তব্ধ, যে মেয়ে সামান্য হাত ধরতেই লজ্জা পায় সেই মেয়ে আজ এই এলাহীকান্ড করে বসবে আদি জানতো না। আদি আসে পাশে দেখে নিলো ভালো করে না কেও নেয় এইদিকটাতে সে আদিবাকে নিজেও জড়িয়ে ধরে। আদির ছোঁয়া পেতেই আদিবা কান্নারত কন্ঠে বলতে লাগলো…

আদিবাঃ প্লিজ আদি আপনি কোথাও যাবে না। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ…[বলে কান্না করতে লাগলো]

আদি তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করতে লাগলো। আদি বলতে লাগলো…

আদিঃ প্লিজ আদু কান্না করো না, আমি আমার কাজ শেষ হলে এক মুহূর্ত থাকবো না সেখানে থেকে দৌড়ে তোমার আর অন্তুপাখির কাছে চলে আসবো। তোমারা দুজন ছাড়া আমার যাবার কোনো জায়গা নেই। তুমি শুধু আমার জন্য অপেক্ষা করো কিছুদিন প্লিজ আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমার কাছে চলে আসবো।

আদিবা ওই আবস্থাতে বললো… আদি আমি জানি আপনি যখন বলেছেন আপনি #তুমি আসবে বলে তাইলে আমি #অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকবো, আপনি কবে আসবেন।

আদিঃ আমি আমার কথা রাখবো আদু তুমি শুধু নিজের খেয়াল রেখো তাই হবে। তুমি এখানে কষ্টে থাকলে আমি ওখানে কষ্টে থাকবো। তাই তুমি হেপ্প থেকেও আমার এই কথাটা রাখবে বললো…

আদিবাঃ আমি রাখবো আপনার কথা। আদি আই লাভ ইউ…

আদিঃ আই লাভ ইউ আদু

আদি আদিবাকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে তার দু গালে হাত রেখে কপালে ডিপলি কিস করে কিছুটা সময় নিয়ে। আদি কিস করে সরে আসতে নিলে আদিবা আদির শার্টের কোলার খামছে ধরে, এতে আদি অবাক হয়ে কেননা আদিবা কখনো এমন কাজ করে না তাইলে আজ কেন করলো ভেবেই আদি অবাক হলো। আদি ইশারায় আদিবাকে জিজ্ঞেস করলে আদিবা কিছু না বলে নিজের ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে আদির ওষ্ঠে স্পর্শ করে। আদি নিজের ওষ্ঠের ওপর নরম ওষ্ঠের স্পর্শ পেতেই অবাকের শেষ পর্যায় চেলে যায়, আদিবা এমন কিছু করবে সে কখনো ভাবতেও পারে নেয়, তাদের ২ বছরের সম্পর্কে দুই একবার সে আদিবার হাত ধরেছে কিন্তু এটা কখনো আশা করেনিই। আদি আগসে চোখ বন্ধ করে নিলো নতুন অনুভূতির সাথে তার পরিচয় হলো,ভালো লাগা, আবেগ, মিশ্রিত অনুভুতি। আদি আদিবাকে আরেকটু তার কাছে টেনে নেয়। আদির ছোঁয়া পেতেই আদিবার বন্ধ চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। কিছু সময় পর আদিবা সরে এসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো আদির ও সেই একই আবস্থা, আদিবার এখন আদির দিকে তাকাতেও অনেক লজ্জা পাচ্ছে তাই মাথা নিচু করে আছে। সে কখনো আদির এতো কাছে আসে নিই, এমনকি আদি ও কখনো তাকে জোর করেনিই কাছে আসার জন্য। কিন্তু আজ সে নিজের ইচ্ছেতে আদির এতোটা কাছে এসেছে ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। আদি আদিবার লজ্জা রাঙানো মুখে আবস্থা দেখে হালকা হাসতে লাগলো, সে ভাবলো কিছু বলবে পরক্ষনে আর কিছু বললো না, কেননা মেয়েটা আগে থেকে লজ্জায় লালা হয়ে আছে তার দিকে তাকাতে পারছে না এখন কিছু বলে না জানি কি করবে৷ আদি আদিবার হাত ধরে বললো…

আদিঃ চলো আমার সাথে

আদিবাঃ কোথায়

আদিঃ চলো তো গেলেই দেখতে পাবে।

আদিবা কিছু না বলে চুপচাপ আদির সাথে চলে গেলো….
__________________________

শিউলি গাছের নিচে বসে আছে অর্ণব আর অন্তু। আজ আদিবা না থাকায় অন্তুকে একাই ক্লাস করেছে। অন্তুর ক্লাস শেষে অর্ণবের তাকে নিয়ে শিউলি গাছের নিচে বসে ম্যাথ বুঝিয়ে দিতে, কিন্তু অন্তুর মন ম্যাথে না বসিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছে দেখে অর্ণবের কাছে কেমন যেনো লাগছে। কেননা অন্তু পড়াশোনার নিয়ে অনেক সেনসিটিভ, তাহলে আজ অন্তুর কি হলো ভেবে অর্ণব অন্তুর হাত ধরে ডাক দিলে অন্তু হচকে গিয়ে অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব বলতে লাগলো…

অর্ণবঃ কি হয়েছে তোমার আজ অন্তু। অনেক ক্ষন থেকে দেখছি তুমি অন্যমনস্ক হয়ে আছে। তুমি তো আগে কখনো এমন করো না তাইলে আজ কি হয়েছে।

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু ছলছল চোখে একটু তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিল। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের জল মুছে নিলো। অন্তুকে কান্না করতে দেখে অর্ণবের মনের মধ্যে ঝড় উঠে, কি এমন হয়েছে যার জন্য অন্তু কান্না করছে ভেবে অর্ণব তার মধ্যে থাকতে পারছে না। চোখের সামনে ভালোবাসর মানুষ কষ্ট পেতে দেখে অর্ণব ঠিক থাকতে পরলো না, সে কোন কিছু না ভেবে, আসেপাশে না দেখে অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উত্তেজিত হয়ে বললো….

অর্ণবঃ এই পাগলি কান্না করছো কেন কি হয়েছে আমাকে বললো প্লিজ।

অর্ণবের স্পর্শ পেতেই অন্তু হালকা কেঁপে উঠে, কান্না থেমে যায় তার কিন্তু নাক টানতে থাকে সে। এই প্রথম সে অর্ণবের এতো কাছে এসেছে তাও আবার অর্ণব নিজে তাকে কাছে টেনে নিয়েছে। কেমন মিশ্র অনুভূতি অনুভব করতে লাগলো সে, লজ্জা, ভয়, ভালো লাগা, স্পন্দনের বেগ দূরত্বগতিতে চলতে লাগলো, অন্তু ওভাবেই বলতে লাগলো….

অন্তুঃ দাদাভাই ৩ দিন পর বিদেশে চলে যাবে কাজের জন্য। তাই মন খারাপ কিছু ভালো লাগছে না।

অন্তুর কথা শুনে অর্ণবের মনে পরলো আদির কথা। অন্তু তার দাদাভাই কে অনেক ভালোবাসে, কখনো তাকে ছাড়া থাকতে পারে না। এই পাগল মেয়ে যাবার আগেই এতো কান্না করছে না জানি যাবার পর কি করবে। অর্ণব অন্তুকে ছাড়িয়ে চোখ মুছিয়ে বললো..

অর্ণবঃ এই পাগলি এই কথাতে কেও কান্না কের

অন্তুঃ আমি করি।

অর্ণবঃ অন্তু দেখো তোমার দাদাভাই শুধু তোমার জন্য এই সব করছে। এতো কষ্ট করছে তাই তোমারো উচিত তার ডিসিশনে তার সাথে থাকা নাকি তাকে দূর্বল করে দেওয়া৷ কিছু বুঝলে আমার কথা

অন্তু নাক টেনে বলল…হুমম

অর্ণবঃ ওকে তাইলে কান্না করতে হবে না ম্যাথ বোঝো।

বলে পড়াতে লাগলো। অন্তু অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো…তোমার মধ্যে কি আছে যে আমি বার বার তোমাতেই হারিয়ে যায়। আমাকে এতো কেন বোঝ তুৃমি, আমার কিসে কষ্ট, ভালো, খারাপ তুমি ও দাদাভাইর মতো বুঝে যায়ও। আছা আমি কি তোমাকে কোনো ভাবে ভালোবেসে ফেলেছি নাকি তোমার মোহে আটকে আছে। কিছু জানি না কিছু বুঝি না কেনো তোমাকে ছাড়া, তোনাকে একমুহূর্ত না দেখলে কেমন পাগল পাগল লাগে, আবার তোমার কাছে গেলে অস্থির লাগে, কেমন অনুভূতি অনুভব হয়…এটাকে কি নাম দেবো। বলে সে খাতাতে মন দিলো।
_____________________________

সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না, সময় স্রোতের মতো বয়ে যায়। তেমনি অন্তুর সাথেও তাই হচ্ছে আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে আদির বিদেশ যাওয়া। আদি যেদিন বিদেশে যাবে সেই দিন অন্তু কান্না কাটি করে না, সে কান্না করলে তার দাদাভাই কষ্ট পাবে ভেবে। আদি যখন এয়ারপোর্টে ভেতরে চলে যায় তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, আয়ান আর অরনিকে ধরে অনেক কান্না করেছিলো সেই দিন তারপর আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হয়ে যায়। ভার্সিটিতে ঠিক মতো যায়, সবার সাথে হাসি খুশি থাকে, মজা করে সময় কাটছে তার।

আজ ভার্সিটিতে এসে সে অর্ণবকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পেলো না তাকে৷ আজ প্রথম না সে অর্ণবকে খুঁজে পাচ্ছে না, ৪দিন তার কোনো খোঁজ নাই ফোন বন্ধ, ভার্সিটিতে আসে না তার সাথে নাহিদ ভাইয়া গ্রামে গেছে কিছুদিন আগে। আদিবা অন্তুর হাত ধরে থামিয়ে বললো…

আদিবাঃ অন্তু আর কতো খুঁজবি ভাইয়াকে সে আজ ও আসে নিয় মনে হয়।

অন্তু অর্ণনের প্রতি অনেক রাগ হচ্ছে তাকে না বলে কোথায় গেছে সে। রাগ, বিরক্তি, অভিমানে তার চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। কি এমন অসুবিধা ছিলো যে আমাকে বলো না। চোখ মুছে প্রসঙ্গে বদলে বললো….

অন্তুঃ আদু দাদাভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে তোর

আদিবা বুঝতে পারলো অন্তু প্রসঙ্গে বদলানর জন্য এমন করলো সে বললো….হুমম হয়েছে আদি কাজে ব্যস্ত যখন সময় হয় ফোন দিয়ে কথা বললে…

অন্তুঃ ভালো চল..

বলে চলে যেতে লাগলে নাহিদ তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ নাহিদকে তাদের সামনে আসাতে তারা দুজনে চমকে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে অন্তু আগে বললো….নাহিদ ভাইয়া আপনি কি অর্ণব ভাইয়ার কথা কিছু জানেন। আমি অনেক চেষ্টা করেও খোজ নিতে পারি নিই। আপনি জানলে বলুন

নাহিদ অন্তুর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। সে আশাও করেনি অন্তু তাকে দেখে তার খোঁজ খবর না নিয়ে সোজা অর্ণবের কথা শুনেতে চায়। নাহিদ হালকা হেসে বললো…. অন্তু আসলে অর্ণবের ৪দিন ধরে জ্বর এসেছে তাই আসতে পারে নিই ভার্সিটিতে।

নাহিদের কথা শুনে অন্তু কেমন হাসফাস করতে লাগলো৷ মনের মধ্যে কেও করে উঠলো তার, অর্ণবের জ্বর শুনে তার এতো খারাপ লাগছে কেনো। অন্তু কিছু না বলে সেখান থেকে বাইরে চলে আসলো। অন্তুকে কিছু না বলে চলে যেতে দেখে প্রথমে অবাক হয় নাহিদ আদিবা পরক্ষণে কিছু ভেবে তারা জোরে শব্দ করে হেসে চলে গেলো।
_____________________________

অর্ণবের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আচ্ছে অন্তু। তখন কিছু না বলে চলে এসে অন্তু সোজা অর্ণবের বাসায় চলে আসে কেন আসলো তা নিজে ও জানে না। শুধু মন বলছে একটাবার অর্ণবকে দেখলে তার মনের জ্বালা মিটবে। কলিংবেল বাজায় সে মিনিট পাঁচেক পর দরজা খুলো অর্ণব। দরজার খুলো অন্তুকে তার সামনে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে যায় সে, অর্ণব ভাবতেও পারে নিই অন্তু এখানে আসবে। অন্তু অর্ণবকে দেখে বুকের মাঝে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো, কিন্তু এ কি হাল করেছে অর্ণব মুখ শুকিয়ে গেছে শরীল টাও দেখে মনে হচ্ছে দুর্বল। অন্তু অর্ণবের সাথে বাড়ির ভেতরে এসে বসলো। অন্তু বললো…..

অন্তুঃ একটা বার ও বলে না তোমার জ্বর এসেছে। যানো তোমাকে কতো খুজেছি আর তোমার ফোন বন্ধ করেনো তুমি কেন বোঝো না আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম।

অর্ণবঃ সরি আসলে আমি ভাবলাম তোমার দাদাভাই চলে যাবাই তোমার মন ভালো না তাই আর কি৷ আর ফোন টা চুরি হয়ে গেছে তাই কাওকে বলতে পারি নিই, কাল নাহিদ এসেছিলো তাই ও জানলো। তুমি কেন এতো টেনশনে ছিলে অন্তু

অর্ণবের এই প্রশ্ন শুনে অন্তু মিটিয়ে গেলো সে কি উত্তর দেবে অর্ণবকে সে নিজেই যানে না কেন এতোটা টেনশনে ছিলো সে৷ অন্তু বললো… তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে সকাল থেকে কিছু খাওনি দাড়াও আমি কিছু করে নিয়ে আসি। বলে এক প্রকার পালিয়ে গেলো সে। অন্তুকে পালাতে দেখে অর্ণব হেসে দিলো৷ সেদিন কাজ থেকে আসার সময় বৃষ্টিতে ভেজার কারনে তার জ্বর আসে আর তার ফোনটা কোথায় পরে গেছে সে জানে না। অর্ণব উঠে তার রুমে এসে শুয়ে পরে তার ভালো লাগছে না।

কিছুখন পরে হাতে খাবার নিয়ে অন্তু অর্ণবের রুমে আসে। এসে অর্ণবকে ডাক দিলে সে উঠে বসে বলে…তুমি শুধু শুধু কষ্ট করলে আমি পরে করে নিতাম।

অন্তুঃ তোমাকে ভাবতে হবে না এখন চুপ করে খেয়ে নাও

বলে ভাত আর আলু ভর্তা মাখিয়ে অর্ণবর মুখের সামনে নিয়ে ধরে। এতে অর্ণব বিস্মিত হয় অন্তু ইশারায় খেতে বলে সে মৃদু হেসে খেতে লাগলো। অন্তু খাওয়াতে থাকে আর অর্ণব অন্তুকে দেখতে লাগলো, তার আজ অন্তুকে তার বউ মনে হচ্ছে, তার প্রতি অধিকার খাটানো দেখে ভালো লাগছে। অর্ণব ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বললো…অন্তু তোমাকে আজ বউ বউ লাগছে

অর্ণবের কথা শুনে অন্তুর হাত থেমে যায়। সে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো….ওও তাই বুঝি

অর্ণবঃ হুমম

অন্তু হয়ে বাকি খাবার খাইয়ে হাত ধুয়ে এসে অর্ণবকে ঔষধ দিতে লাগলো। আজ অর্ণব অন্তুর মধ্যে অন্য রকম ভালোবাসা দেখছে। অর্ণব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে অন্তুর দিকে, সে তার মধ্যে নেয়ে দেখেই মনে হচ্ছে। আজ অনেক বড় ভুল করতে যাচ্ছে অর্ণব, সে অন্তুর বাহু ধরে তার কাছে টেনে নিয়ে আসে। হঠাৎ হাতে টান পরতেই অন্তু হচকে যায় ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্তুর মুখে অর্ণবের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পরেছে, অর্ণবের ঘোর লাগা দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সরে আসতে নিলে অর্ণব অন্তুর ঠোঁটের বা পাশের তিলটাতে ঠোঁট ছোঁয়ায়। অন্তুর সারা শরীলের আবস হয়ে আসতে লাগো অর্ণবের স্পর্শে। হাত বা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো অন্তুর, অর্ণবকে সরানোর মতো শক্তি টুকু নেয় তার। এদিকে অর্ণব তাকে আরো কাছে টেনে নিতে ব্যস্ত হয়ে গেলো, অর্ণব ঠোঁট অন্তুর ঠোঁটে একদাম নিকট নিয়ে আসে। কিনচিক পরিমান জায়গা তাদের ঠোঁটের মাঝে, অর্ণবের নিজের ঠোঁটে অন্তুর ঠোঁটে স্পর্শ করতে যাবে তার আগে অন্তু তাকে ধাক্কা দিলে অর্ণবের হুশ আসে সে কি করছিলো। অর্ণব অসহায় দৃষ্টিতে অন্তুর দিকে তাকায় দেখে অন্তু ছলছল চোখে তারদিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণব কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তু দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়। আর অর্ণব অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অন্তুর যাবার দিকে…..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here