তুমি কোন কাননের ফুল, পর্ব:২০

#তুমি_কোন_কাননের_ফুল
#পার্ট_২০
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া

শ্রাবণের শেষের দিক। সারাদিন ধরে বৃষ্টির না হলেও পরিবেশ ঠান্ডা। শিতল বাতাস নামে প্রকৃতিতে। মাঝেসাঝে চিরিচিরি বৃষ্টি।
প্রকৃতির মতোই ঠান্ডা যেন আদনান মহল।
ঘরময় অনাবিল নিরবতা। যেটুকু কথার তৈরি হয় তার বেশির ভাগের উৎস-ই হয় সাজেদা খানম। স্নিগ্ধাকে সে মেয়ের বাহিরে কিছু ভাবে না। ছেলেটা তার কতক্ষণ-ই-বা ঘরে থাকে? মেয়েটাই তো তার সারাদিনের সঙ্গী। চলে যাবে তা ভেবে খারাপ লাগলেও সে চায় মেয়েটা যেন ভালো থাকে। মনে যেন দুুঃখ তৈরি না হয় কখনো। তাই হয়তো মেয়েটার ভালো ঘরে বিয়ে নিয়ে এতো আগ্রহ। এত উৎসাহ।

স্নিগ্ধাকে দুই-এক দিনের মাঝেই আংটি বদলের কথা থাকলেও, সেটা কেন্সেল হয়ে যায় স্নিগ্ধার সিদ্ধান্তে। সে জানায়,
“এত তালবাহানা করে সে বিয়ে-টিয়ে করতে পারবে না, হয় ডিরেক্ট বিয়ে নয়তো কিছু নয়।” আরো বলে,
“ধুমধাম করে এ বিয়ে হবে না। তার বাবা, ছোট দুই ভাই আর নানু ছাড়া আর বারতি কেউ যেন না আসে এই বিয়েতে। ঘড়োয়া ভাবেই বিয়েটা সারতে চায় সে।”
সাজেদা খানম প্রথমে খুব অমত করে। কিন্তু স্নিগ্ধার জেদের কাছে হেরে যেতে হয় শেষে। ও বাড়ি থেকেও আর অমত করেনি। সম্ভবত সাইমের কারনেই অমত করেও বিশেষ লাভ হয়নি।
স্নিগ্ধার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেই এক সপ্তাহ পর বিয়ের ডেইট ফেলা হয়।
সাজেদা খানমও আর অমত করে না। সব কিছু ঠিকঠাক হলেই হলো। স্নিগ্ধার জন্য সাইমকেই তার যোগ্য মনে হয়। তার স্নিগ্ধা যেমন লক্ষ্মী সাইমকেও তার খুব ভালো মনে হয়। তাকে খুব মান্যগণ্য করে বলেই হয়তো এই বাড়তি ভালো লাগা।
আদনান এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না।
সে রাতে স্নিগ্ধার অভিমানে বলা সেই কথার রেশ ধরে রেখেই সে যেন পুরোপুরি হাত-পা গুটিয়ে বসলো স্নিগ্ধার ব্যাপারে। সেও যে স্নিগ্ধার উপর উল্টো অভিমান করেছে এমন নয় তবে তাকে যেই কথা বলা হয়েছিলো সেটা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে।
ঘরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে ব্যাপারে তার কোনোরূপ ভাবান্তর নেই। খায়-দায়, ঘুমায়, অফিস যায়, বাড়ি ফিরে। এই সব স্বাভাবিক এর মাঝেও কিছু একটা অস্বাভাবিক তো নিশ্চই আছে। সারাদিন একে অন্যের পিছে লেগে থাকা ছেলে-মেয়ে দুটো যেন দুই মেরুতে বসবাস করছিলো। একে ঘরে থেকেও তাদের মাঝে কথাবার্তার আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে গেলো। সাজেদা খানমের সেদিকে তেমন নজরদারী নেই। স্নিগ্ধার কি লাগবে না লাগবে সে দিকে নজরদারী দিতে লাগলো। ছেলে-মেয়ে দুটোর মান অভিমানে নজর দেয়ার সময় কই?
আদনান যেমন বুদ্ধিমান সেই সাথে খুব বোকাও! এই যে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে শোনার পর থেকে ওর যেই খারাপ লাগাটা তৈরি হয়েছে তার কারনটা ধরতে পারছে না এতদিনেও। নয়নতারার সাথে আরজুকে মিলিয়ে দেয়ার পরও এতটা খারাপ লাগেনি, যতটা স্নিগ্ধার সাথে সাইম এর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর লাগছে!
এই কয়দিন অনেক ভেবে আবিষ্কার করলো, ও সাইমকে অপছন্দ করে করে ব্যাপারটা ঠিক এমন না, ও আসলে জেলাস! স্নিগ্ধার সাথে সাইমকে জরিয়ে কোনো কথা সহ্য করতে পারে না। ইভেন স্নিগ্ধাকে যখন সাইম ফোন দেয় তখনও খুব রাগ হয়, হিংসে হয়। কিন্তু কেন? জেলাস কেন হচ্ছে তার কারন ধরতে পারছে না। ছেলেটা বুদ্ধিমান হয়েও এই সহজ কারন ধরতে না পারাটা নির্বোধ এর পরিচয় বহন করে। আসলে সে বুঝতে পারে না, নাকি বুঝতে চায় না?

অন্যদিকে স্নিগ্ধা? সে যেমন অভিমানী ঠিক তেমন জেদী! যে ছেলে একসাথে থেকেও একটা মেয়ের অনুভূতি বুঝতে পারে না, মূল্য দিতে জানে না তার সাথে আবার কিসের সখ্যতা? এমন রোবোট মার্কা ছেলের সাথে কখনই কথা বলবে না বলে কঠিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। প্রয়োজনে ঐ ডাক্তারকেই বিয়ে করবে। তবুও আর এই ছেলের সাথে কথা বলবে না! যেই ভাবা সেই কাজ। টানা পাঁচদিন একটা কথাও বলেনি। দেখা হয়েছে চোখাচোখি হয়েছে। কিন্তু কথা হয়নি। আদনান দু-একবার বলতে চেয়েছে কিন্তু স্নিগ্ধা পাশ কাটিয়ে চলে এসেছে। খারাপ লেগেছে ঠিকই কিন্তু ঐ যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা আর জেদ!

কিন্তু মেয়েটার আবেগের কাছে জেদটা বুঝি শেষমেশ হেরেই যায়!
বিয়ে কাল সন্ধ্যায়। সাজেদা খানম নিজের রুমেই ছিলো। ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলো। রাতেই সবাই চলে আসবে জানায়।
আদনান একটা নতুন প্রজেক্ট হাতে নিবে সেদিনই। বাড়ি কখন কিংবা কবে ফিরবে তার ঠিক নেই। হতে পারে আজ, কাল, কিংবা আরো পরে। ইচ্ছে করেই সে প্রজেক্টটাতে দেরি করতে চাচ্ছে। এক ডিলে দুই পাখি মারা হবে ভেবে। ফালতু ডাক্তারের সাথে ফালতু বিয়ে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই। মেহুর এত ইচ্ছে যেহেতু করুক বিয়ে, ও থেকে কি করবে? বিয়ে-টিয়ে শেষ হয়ে গেলেই বাড়ি ফিরবে বলে ঠিক করে।
সাজেদা খানম শোনার পর বেশ চেঁচামেচি করে। ঘরের ছেলেই যদি ঘরের মেয়ের বিয়েতে না থাকে, তবে কেমন করে হবে? ছেলে থাকতেও এই বিয়ে বাড়ি তাকে সামলাতে হবে এই বয়সে এসে? এ কেমন কথা?
আদনান বলে,
“এসব সামলানোর জন্য আমি কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছি তো মা। ওরাই সব সামলে নিবে। তোমার এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”
“নিজের ছেলে ঘরে থাকতে অন্যদের উপর দায়িত্ব কেন দিবো আমি? এটা কেমন কথা? তোর কোনো দায়িত্ব নেই মেয়েটার উপর?”
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে সাজেদা খানম।
স্নিগ্ধা কাছেই ছিলো। আদননান আড়চোখে একবার তাকাতেই সে স্থান ত্যাগ করল।

মায়ের চেঁচামেচিতে একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়েই আদনান মিছেমিছি বলে, সে দুই-এক ঘন্টার মাঝেই চলে আসবে। মিছে বুলিতেই সাজেদা খানম গলে পানি হয়ে যায়। শান্ত হয়েও কপট রাগ দেখিয়ে বলে, ঠিক ঠিক চলে আসবি কিন্তু। দেরি হলে খবর আছে।
আদনান বাধ্য ছেলেদের মতো সম্মতি জানায়।

স্নিগ্ধার কষ্ট লাগে খুব। এই শেষ বেলাতেও ছেলেটা ওকে একটু বোঝার চেষ্টা করছে না। বিষাদে ভরা মন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠলো যেন।
নিজের রুমে এসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ নির্বিকার ভাবে। ঠান্ডা বাতাস এসে লাগে চোখেমুখে। চোখের পাতাও যেন কেঁপে উঠে সাথে কাঁপে মন। আহা! কষ্ট! অনুভূতি এত কষ্টেরও হয় বুঝি?
হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে ভাবনাচুত্য হয় মেয়েটা। জানালার দিক থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে আদনান দাঁড়িয়ে আছে। কালো সুট, সাদা রংয়ের শার্টে শুভ্রতাময় সুন্দর লাগছে। মুখ জুড়ে সেই চমৎকার হাসি। সে হাসলে তার ঘন কালো ভ্রুযুগলের চোখজোড়াও হাসে যেন! চুলগুলো বেশ পরিপাটি তার মতোই। কি দারুন মোহনীয় দেখায় ছেলেটাকে!
স্নিগ্ধা জানালার পাশ থেকে নড়ে না। আদনানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে জানালার বাহিরে তাকায়। আদনান কাছে আসে। পকেটে দুই হাত গুঁজে দিয়ে পা ভাঁজ করে স্নিগ্ধা সামনাসামনি জানালার সাথে ঠেঁস দিয়ে দাঁড়ায়। আস্তে করে বলে,
“তোর হাতটা দুটো দে একটু।”
বলে নিজের এক হাত বাড়িয়ে দেয়।
স্নিগ্ধা ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকায়। আদনান পুনরায় বলে,
“কি হলো? দে?”
স্নিগ্ধা ছোট্ট করে বলে,
“পারবো না। তুই এখান থেকে যা। প্রজেক্টে দেঁড়িয়ে হয়ে যাবে নাহয়!”
আদনান আর কথা বাড়ায় না। এই মেয়ের জেদ আর অভিমানের সাথে পেরে উঠে না কখনই। কিসের এত অভিমান এই মেয়ের? সব মেয়েগুলোই এমন জেদী হয় নাকি? আজব! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেই নিজের হাতে তুলে নেয় স্নিগ্ধার হাত। স্নিগ্ধা চমকে উঠে যেন। বহুবার ওর হাত ধরেছে, কিন্তু এমন লাগেনি কখনো! পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো আদনানের দিকে।
আদনান পকেট থেকে দুইটা বালা বের করে প্রথমে ডান হাতে পরালো তারপর বা’হাতে।
সুন্দর হাত দুটো ফুটে উঠলো যেন। মুগ্ধ হয়ে দেখে আদনান। স্নিগ্ধা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! দমিয়ে রাখা অনুভূতি গুলো আর দমিয়ে রাখতে পারলো না।

আদনান স্নিগ্ধার হাত দুটোর দিকে একপলক চেয়ে থেকে চোখ তুলে তাকালো স্নিগ্ধার চোখে। সুন্দর হেসে বলল,
“এটা আমার তরফ থেকে তোর জন্য গিফ্ট মেহু। পছন্দ হয়েছে? তুই তো জানিস, আমি কখনো কোনো কিছু পারফেক্টলি চয়েজ করতে পারি না। সব সময় ভুল জিনিস চয়েজ করি। যা আমার তা বেশিরভাগ সময়ই আমার চোখে লাগে না। পছন্দ না হলে খুলে ফেলিস, অসুবিধে নেই।”
এতটুকু বলে স্নিগ্ধা মাথার এক পাশে হাত রেখে মৃদু হেসে বলে,
“ভালো থাকিস মেহু! তুই আমার অনেক প্রিয়, এটা সত্যি কথা।”
আর কিছুই বলে না। রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
এইটুকু সময়ের মাঝে কি হয়ে গেলো কে জানে! স্নিগ্ধা তাল হারিয়ে ফেলে। আদনান চলে গেলো সেদিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে। চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পরে হাতে, বালায়। মেয়েটা চোখ নামিয়ে চায় হাত দুটোর দিকে। শত কষ্টেও কান্না না করা মেয়েটার চোখ বেড়ে অনবরত পানি ঝড়তে থাকে। গলা ভেঙে আসে। ভীষণ ম্যাচিউর মেয়েটারও ইমম্যাচিউর দের মতো ভয়াবহ কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হলো।
হাত দুটো চোখের সামনে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ। তারপর কি হলো কে জানে! চট করে বালা দুটো খুলে ফেললো এক এক করে। চোখ মুছলো দুই হাত দিয়ে।
.

আকদের পর থেকে একদিনও আরজুর সাথে কথা বলেনি নয়নতারা। বারবার বাসায় গিয়েও ফেরত চলে আসতে হয়েছে ওকে। দুই পরিবার মিলে এতো বুঝালো কিন্তু কারো কথা শুনলো না ও! দরজা আটকে রুমে বসে ছিলো। এই মেয়েটা জেদের সাথে কেউ পেরে উঠে না। আরজু ভেবে পায় না, এমন মায়াভরা মুখখানার অধিকারী মেয়েটা এমন নিষ্ঠুর কেন? পা থেকে মাথা অব্দি এত রাগ নিয়েও ফুলের ন্যার সৌরভ ছড়ায় কি করে?
এই পাঁচ দিনে হাজারের উপর কল দিয়েছে মেয়েটার ফোনে। কিন্তু ওই যে তার জেদ? ফোন ধরেনি সে। মাঝে দুবার ধরেছে তবে কোনো কথা বলেনি। আরজু এত করে ডাকলো,
“ফুলটুসি, রাগী ফুল? এই মেয়ে? কথা বলো প্লিজ! কী করেছি তা তো বলো? চলেই তো যাবো! তবুও এমন ক্যান করো?”
চলে যাওয়া কথাটা ভুলেও বলে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেয়।
কাল ছেলেটার ফ্লাইট কিন্তু মেয়েটার রাগ-অভিমান এখনও কমছে না। আরজু ফোনটা বের করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো ফোনের স্ক্রিনে। ওয়ালপেপারে জ্বলজ্বল করা অসম্ভব রূপবতী কিশোরী মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আরজুর ঠোঁটের কোণে এক ঝিলিক হাসির রেখা উঁকি দেয়। এই ছবিটা নতুন না। অনেক পুরাতন। নয়নতারা সদ্য কিশোরী তখন! আকাশি আর সাদা রং এর ইউনিফর্ম পরিহিত এক কিশোরী বালিকা। এক কাঁধে স্কুল ব্যাগ। দুই পাশে দুই বেনি। ভ্রু জোড়া সামান্য কুঞ্চিত। দেখলে মনে হয় খুব বিরক্ত সে!

আরজু ফোনটা আরো কাছে এনে দেখে। ফোনের স্ক্রিনে হাত রেখে বড় ছোট করে দেখে। মুগ্ধ হয়ে দেখে, বিমোহিত হয়ে দেখে।

দূর সম্পর্কের এক কাজিনকে স্কুলে দিয়ে আসতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলো নয়নতারার মায়ায়। সেই যে ফাঁসল আজও নিস্তার মিললো না ছেলেটার।
ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো এক পলক দেখতে। ছোট মেয়েটার ব্যক্তিত্ব খুব টানতো ওকে। এইটুকু একটা মেটে অথচ কি স্ট্রং পারসোনালিটি! একরোখা, জেদী!
আরজুর কলেজ থেকে এক ঘন্টার দূরত্বে ছিলো নয়নতারার স্কুল। স্কুল ছুটির সময় এক পলক দেখবে বলে নিজের শেষ ক্লাসটা করতো না ছেলেটা। বাইক নিয়ে এক টানে চলে আসতো নয়নতারার স্কুলের সামনে। মেয়েটা হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলতো আর ও মুগ্ধ হয়ে দেখতো। সেই কিশোরী মেয়েটার মায়ায় আজও আবদ্ধ হয়ে আছে। রাজ্যের যত পাগলামি আছে সব করতে ইচ্ছে করে এই মেয়েটার সাথে। মেয়েটার রাগি রাগি মুখটা দেখার জন্যে হলেও রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করে বারংবার! কি অদ্ভুত ইচ্ছে এই ছেলেটার!
ফোনটা বুকের উপর রেখে চোখ বুজে শুয়ে থাকে।
মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলো আরজু।
মাকে দেখতে পেয়ে মনে আরো শান্তি বেড়ে গেলো। স্বচ্ছ হাসলো।
সাবেরি আলম নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
“শুয়ে আছিস ক্যান বাপ? নয়নতারার সাথে কথা হয়নি?”
আরজু মায়ের কোলে মাথা রেখে শুলো। ছোট্ট করে বলল,
“উঁহু। ওকে তুমি চিনো না মা। ওর অনেক জেদ। আমার কি মনেহয় জানো মা? ওর এই জেদের মাঝেই ভালোবাসা। তাই তো আমি সয়ে নিতে পারি মেয়েটার সব রাগ-জীদ। শুধু ওর দুুঃখ আমি সইতে পারি না।”
সাবেরি আলম ছেলের মাথায় হাত বুলায় পরম আদরে। তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তিনটা বছর ছেলেটা কেমন ছটফট করেছে তা তো তিনি নিজ চোখে দেখেছে। তারপর নয়নতারাকে ফিরে পাওয়ার পর বাচ্চাদের মতো খুশি হওয়াও দেখেছে। ছেলেটা ওর বাবার মতোই হয়েছে ছটফটে স্বভাবের। যাকে ভালোবাসবে একেবারে উজাড় করে ভালোবাসবে। নিজের পুরোটা দিয়ে ভালোবাসবে।
আরজু উঠে বসে। নিজের ফোনটা মায়ের সামনে ধরে বলে,
“দেখ মা? পিচ্চি একটা মেয়ে! আদরমাখা মুখ! কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখ?”
বলে খটখট করে হাসে। মা মুগ্ধ হয়ে দেখে ছেলেকে। ছেলে আবার বলে,
“এই মা? ভাবতে পারো? এই বাচ্চা মেয়েটা এখন আমার সম্পদ! হাফ বধু! ফুল বউ আমার! হা হা!”
একটু থেমে আবার বলে,
“সেদিন যেই মেয়েটা তেজ দেখিয়ে বলত, ‘আপনি খুবই অসহ্যকর একটা লোক। আপনাকে আমার সহ্য হয় না!’
আজ সে ‘আমি চলে যাবো তা আগে বলিনি বলে অভিমানে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে!’ ভাবতে পারছো মা?
আমি এই মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসি, মা! অসম্ভব ভালোবাসি। ওকে ভালোবেসে আমি ক্লান্ত হইনা, মা। এই পৃথীবিতে তোমাদের দুজনকে ভালোবেসে আমি কখনো ক্লান্ত হবো না। কখনোই না!”………….(চলবে)

(সম্ভবত আর অল্পবাকি!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here