তুমি গহীন অনুভব পর্ব -০২

#তুমি_গহীন_অনুভব
#পর্ব_২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

নতুন সকাল সবার জীবনে নতুন কিছু বয়ে আনে। আজানের ধ্বনি কানে আসতেই চোখ খুললো ইরজা পাশে তাকাতেই দেখতে পেল ফুয়াদ ওর মাথার কাছে বসে আছে বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে ঘুমিয়ে আছে। সাইডে একটা বাটিতে জলপট্টির কাপড় দেখে বুঝতে পারল রাতে বোধহয় ওর জ্বর এসেছিল। এখন জ্বর নেই সবকিছু ভালোই লাগছে। ও নিজেই উঠে বসলো ওর নড়াচড়ায় ফুয়াদ উঠে গেল আর বলল,,

“মিস ইরজা উঠে পড়েছেন আমাকে ডাকবেন তো!দেখি আপনার জ্বর আছে কিনা রাতে অনেক জ্বর এসেছিল আপনার। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।

আজরিন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । তাই ওর দিকেই তাকিয়ে রইলো। আজরিন ইশারা করে দেখালো ওয়াশরুমে যাবে নামাজ পরবে। এটা দেখে ফুয়াদ ওকে সাহায্য করলো আজ কোলে তুলতে গেলেও আজরিন হাত দিয়ে বারন করলো শুধু হাঁটতে সাহায্য করতে বলল। আজরিন ফুয়াদের সাহায্য আস্তে আস্তে করে ওয়াশরুমে গেল ।ওযু করে এলো। তখন ফুয়াদ বলল,,

“আপনি একটু বসুন আমিও ওযু করে আসি একসাথে নামাজ পরবো।আপনি চেয়ারে বসে করবেন আর আমি নিচে।

আজরিন মাথা কাত করলো । ফুয়াদ আসতেই ওরা দুজনে একসাথে নামাজ পড়ে নিল। তারপর আজরিন ইশারা করলো বেলকনিতে যাবে। ফুয়াদ ওকে বেলকনিতে নিয়ে গেল। তখন ফুয়াদ বলল,,

“এখন কেমন লাগছে মিস ইরজা? পায়ের অবস্থা কেমন?

আজরিন আইজানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আর মাথা কাত করে দেখালো ভালো। তা দেখে আইজান মুচকি হেসে বলল,,

“কফি খাবেন?

আজরিন মানা করলো। ফুয়াদ বুঝতে পারলো আজরিনের মন খারাপ ও রুমে এসে কাউকে ফোন করে আজরিনের দিকে এগিয়ে দিল। আজরিন ফোনটা কানে নিল আর মুহুর্তেই ওর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। ফুয়াদ মুগ্ধ চোখে আজরিনের হাসি দেখলো। আজরিনের খুব ইচ্ছে করছে কথা বলতে ও কষ্ট হলেও একদম অল্প আওয়াজ এ বলল,,

“আমি ঠিক আছি তুমি ব্যস্ত হয়ো না। এদিকে সব ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি কোন ভালো কিছু ঘটবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে আছেন।

ওপাশ থেকে কি বললো তা এপাশ থেকে ফুয়াদ শুনতে পেল না। তবে তার শুভ্রপরী যখন হেসেছে আর কথা বলেছে তাতেই তার শান্তি। আজরিন ফোন রেখে দিল তখন ফুয়াদ বলল,,

“মিস ইরজা আপনি কথা বলতে পারছেন আমি তো বিশ্বাস -ই করতে পারছি না। ডাক্তার তো বলেছিল আপনি কয়েকদিন কথাই বলতে পারবেন না।আপনি জানেন আপনার কথা আমি কতো মিস করছিলাম।

ফুয়াদের বাচ্চামো দেখে আজরিন হাসলো। আর আস্তে করে বলল,,

“ডাক্তার তো বলেছিল আমি ইচ্ছে করলে তাড়াতাড়িই কথা বলতে পারবো জড়তা অনেকটাই কমে গেছে তবে এখানে তার কথা বলার জন্যই তাড়াতাড়ি কথা বলতে পারলাম আমার মনে হচ্ছিল এখন যদি আমি তাকে না থামাই তাহলে তার প্যানিক অ্যাটাক করবে। আচ্ছা যাই হোক ভালোই হলো কথা বলতে পারছি নাহলে আর বোবা শুনতে হবে না। এই খুশিতে এক কাপ কফি খাওয়া যাক। আপনি কিন্তু কফিটা দারুন বানান।

“আপনি এমন কেন বলুন তো তবে আমার মনে হয় আজ কষ্ট করে না কথা বলাই বেটার হবে।কাল থেকে শুরু করুন। আর আমি কফি আনছি গরম কফি খেলে গলাটা আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

তখন আজরিন বলল,,

“বারে আজ কতো গুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আপনার আমি সাথে থাকবো না বুঝি। তাছাড়া আমি চাইনা এখন কেউ আমার বিষয়ে জানুক‌। নতুন গল্প বানাতে হবে।”

“আমি গল্প বানাতে হবে না যা সত্যি তাই বলবো ভেবে নিয়েছি আমি একজন সি আইডি অফিসার আমি জানি কোন জিনিস টা কোন সময় করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আপনার কথা বলা বন্ধ রাখুন আমাদের বাড়িতে যে সবাই আমার মায়ের মতো ভালো তা কিন্তু নয় এখানে কিছু খারাপ মানুষ ও আছে আমি চাই না আজ ঝামেলা করতে। কাল থেকে আপনি কথা বলবেন আজ যা বলার আমি বলবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“আপনি বসুন আমি কফি আনছি!

ফুয়াদ নিচে চলে গেল ও নিচে গিয়ে দেখতে পেল ওর মা কিচেনে বাকিরা কেউ বোধহয় এখনো উঠেনি। ও গিয়ে বলল,,

“আরে মা তুমি এতো সকালে কিচেনে?

তখন আয়েশা চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,,

“নামাজ পড়ে মনে হলো একটু চা খাই তাই এলাম তা তুই এখানে কি করছিস। আর মেয়েটা এখন কেমন আছে?

“ওহ আচ্ছা হুম ও এখন ভালো আছে। এখন সরো কফি বানাই!

“তুই বোস আমি বানিয়ে দিচ্ছি।

“না মা ও আমার হাতে কফি খেতে চেয়েছে।”

এ কথা শুনে আয়েশা চৌধুরী অবাক হয়ে বলল,,

“মেয়েটা কফিও খায়! না মানে,,

“আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছো গ্ৰামের মেয়ে হয়েও কফি খাবে ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না তাই না। আরে গ্ৰামে থাকে বলে কি তাদের কফি খাওয়া বারন নাকি।”

“আমি তা মিন করিনি।

“হুম তুমি কফি খাবে বানাবো?

“আমি তো চা খেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ছেলে যখন কফি বানাবে তাহলে কফিই খাই।”

ফুয়াদ মুচকি হেসে তিন মগ কফি বানালো। আর মুচকি হেসে আয়েশা চৌধুরী এর দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিল। তারপর দুই মগ কফি খেয়ে উপরে চলে যেতে নিল। তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“তোরা কি নাস্তা নিচে এসে করবি নাকি রুমে পাঠিয়ে দিব।”

“হুম নিচে এসে করবো নাহলে চৌধুরী বাড়ির কিছু রক্ত আবার বলবে বিয়ে করেই বউ নিয়ে ঘর আঁটকে বসে আছি। নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে মেয়ে।

“তুই আর ভালো হলি না। তা মেয়েটা নিচে আসতে পারবে তো?

“না পারলে কোলে নিয়ে আসবো বুঝলে।”

বলেই ফুয়াদ রুমে চলে গেল। আজরিনের দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিল। আজরিন মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দিল। আজরিন খেয়ে বলল,,

“আপনি কফিটা ভালোই বানান। আজকের কফিটাও ভালো হয়েছে।”

“ধন্যবাদ মিস বিউটিফুল!”

“বিউটিফুল?”

“আজরিন অর্থ কি বলুন তো?

“সুন্দর!”

“সুন্দর ইংরেজি কি?”

“বিউটিফুল!’

“তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো বলুন তো আমি কিন্তু আপনার আরেকটা নামেই ডাকলাম।”

“আপনি পারেন ও বটে। আচ্ছা আপনার পরিবার কি আমাকে মেনে নেবে।

“”না মানলে মানিয়ে নিবেন। আর আমি জানি আপনি পারবেন।”

“আপনি আজ অফিস যাবেন না।

“হুম যাবো তারপর তো স্যারের সম্পর্কে কিছু তথ্য জমা দিতে হবে। সবকিছু ক্লিন শিট বের করতে হবে যাতে এই খবরটা বাইরে না বের হয়। অবশ্য আমি আগেই সব ইমেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তাই কেউ কিছু জানতে পারে নি তাই সমস্যা হবে না ।”

এগুলো শুনে আজরিনের মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও কিছু বললো না প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তখন ফুয়াদ বলল,,

“জীবনে অপত্যাশিতভাবে অনেক কিছুই ঘটে। তবে আপনি চিন্তা করবেন না সবকিছুর হিসাব দিতে হবে তাদের। সবাইকে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পেতে হবে।”

আজরিনের আর ভালো লাগছে না। ও আস্তে আস্তে রুমের ভেতরে চলে গেল ফুয়াদ অবশ্য সাহায্য করলো। আর বিছানায় আধশুয়া হয়ে রইলো। তখন ওদের রুমে নক পড়লো।ফায়জা এসেছে,

“ভাইয়া আসবো?

“হ্যা আয়!

ফায়জা এসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন আছো?

আজরিন আস্তে আস্তে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি?

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আরেব্বাস ভাইয়া কাল বলছিল তুমি দুদিন কথা বলতে পারবে না কিন্তু তুমি তো আজ থেকেই কথা বলতে পারছো। আমি হলাম তোমার একমাত্র আপন ননদ আরেকটা ননদ ও আছে তোমার আমাদের কাকাতো বোন তিশা আপু ।ভাবি তুমি মাইন্ড করো না আমি আসলে কাছের মানুষদের আপনি করে বলতে পারি না। আর তুমি ও আমাকে প্লিজ তুমি করে বলো আপনি করে বলো না। আমার লজ্জা লাগে এমনিতেও তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি আমার বড়।

তখন ফুয়াদ বলল,,

“এসেই ট্রেনের মতো কথা চালু করে দিলি তো। এই জন্যই কাল আসতে তোকে বারন করেছিলাম। ইরজা ও হচ্ছে আমার বোন ফায়জা এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কিন্তু ভাব ধরে বাংলাদেশ পাশ করেছে।

“ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না। তুমি সবসময় আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করো এটা মোটেও ঠিক নয়।

“যা সত্যি তাই বললাম।

“আমি কিন্তু ভাবির কাছে বিচার দিব।

“তো করনা আমি ফুয়াদ আইজান চৌধুরী আমি কাউকে দেখে ভয় পাই না বুঝলি।

“ভাবি তুমি প্লিজ কিছু বলো!”

এতক্ষণ আজরিন অবাক চোখে ফুয়াদ কে দেখছিল। এগুলো দেখে ওর পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে চোখে পানি চিকচিক করছে। ফায়জার কথা শুনে আজরিন আস্তে আস্তে করে বলল,,

“মিস্টার আইজান বাচ্চাদের মতো কি শুরু করেছেন। এটা কিন্তু ফুয়াদ আইজান চৌধুরীর সাথে যায় না। এরকম ছোট বাচ্চার সাথে ঝগড়া করছেন।”

ফুয়াদ আজরিনের দিকে তাকিয়ে আবার ফায়জার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“এখন তোর সাথে ঝগড়া করার মুড নেই তাই আর করলাম না। তা আরেকজন কই নাকি কাল সময়মতো আসিনি বলে রাগ করে আছে।

“হুম রাগ করে আছে।

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

“আমি রাগ করে নেই ভাইয়া। নতুন ভাবি যে পেয়ে গেছি।

তখন পেছনে তাকিয়ে দেখলো তিশা এসেছে। তখন ফুয়াদ বলল,,

“সরি বোনু কাল ওভাবে, আসলে একজায়গায় আটকে পড়েছিলাম তাই আসতে পারিনি।

“তোমাকে এক্সপ্লেইন করতে হবে না ভাইয়া আমি জানি। আর ভাবি আমি হলাম তোমার ননদ তিশা। ভাবি কেমন আছো তুমি?

আজরিন মুচকি হেসে আস্তে আস্তে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আমি তোমার জামাইয়ের ছোট তাই আপনি বলতে হবে না। তুমি করেই বলো। আচ্ছা ভাবির কি হয়েছিল ভাইয়া যে কথা বলতে পারছিল না।

“আসলে ওর গালে আর গলায় ব্যাথা ছিল তাই কথা বলতে পারছিল না। এখন ব্যাথা কমে গেছে তাই আস্তে আস্তে কথা বলতে পারছে।

“গলা ব্যাথা কিভাবে হলো?

“ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল।

“ওহ আচ্ছা!”

ওরা কিছুক্ষণ কথা বললো তারপর চলে গেল। এতক্ষণ আজরিন সবকিছু দেখছিল কোন কথা বলে নি। আজরিন বুঝতে পারল ফুয়াদের সাথে ওদের সম্পর্ক ভালো। যেমনটা ওদের মাঝে ছিল।

চৌধুরী বাড়ির সকলে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে। সবাই নামলেও আজরিন আর ফুয়াদ আইজান এখনো নামেনি। কিছুক্ষণ পর আইজান আজরিন কে ধরে ধরে নিচে আসলো সকলে উৎসুক জনতার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আজরিন দাঁড়িয়ে আছে তখন আয়েশা চৌধুরী বলল,,

“মা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো আর ফুয়াদ তুই দাড়িয়ে আছিস কেন তুই ওকে নিয়ে বোস।”

তখন ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা বসো এমনিতেও মেয়েটা অসুস্থ।”

এ কথা শুনে সকলে ইশতিয়াক চৌধুরীর দিকে তাকালো।উনি কি মেয়েটাকে মেনে নিয়েছে। ওরা বসলো আয়েশা চৌধুরী সকল কে খাবার দিল। আজরিন অল্প অল্প করে খাচ্ছে। সকলে খাচ্ছে আর আজরিন কে দেখছে। মেয়েটা সুন্দরী বলা চলে সুন্দর করে মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে এসেছে। মেয়েটার মুখ দেখলে যে কেউ মায়ায় পড়ে যাবে।

( ফুয়াদের বাবারা দুই ভাই তাদের এক বোন আছে। বাবা ইশতিয়াক চৌধুরী মা আয়েশা চৌধুরী বোন ফায়জা চৌধুরী। চাচা ইসহাক চৌধুরী তার স্ত্রী তমা চৌধুরী তাদের এক ছেলে এক মেয়ে ছেলে তুহিন চৌধুরী সে বাবা চাচাদের সাথে বিজনেস করে তার স্ত্রী স্বপ্না চৌধুরী তাদের দু বছরের ছেলে আছে নাম তৌকির। মেয়ে তিশা তার কয়েকদিন পর বিয়ে হবে। ফুপু মায়মুনা চৌধুরীর তার মেয়েই মলি সে চাইতো তার ননদ কে ফুয়াদের সাথে বিয়ে দিতে ।)

সবার খাওয়া শেষ হলে ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“তো আমরা কি এখন জানতে পারি তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো?

তখন ফুয়াদ বলল,,

“আসলে আমি ইরজাকে পছন্দ করতাম তাই বিয়ে করেছি।”

“এটা কোন কারন হতে পারে না। যদি পছন্দ-ই করতে তাহলে আমাদের জানাতে পারতে আমরা কথা বলতাম ওর পরিবারের সাথে।

“আপনি তো গ্ৰামকে পছন্দ করেন না তাই বলিনি।

এ কথা শুনে শুনে সবাই ফুয়াদের দিকে তাকালো। তখন ফুয়াদ বলল,,

“ওর ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমরা যাই ।

“মেয়েটার বাবা কি করে? নাম কি? সেগুলো তো জানাই হলো না।

তখন আজরিন আস্তে আস্তে বলল,,

“আমার বাবার নাম আজাহার মির্জা। আপনি নামটা বোধহয় শুনেছেন !

এ কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে আজরিনের দিকে তাকালো এই মেয়েটা কথা বলতে পারছিল না কাল অথচ আজ বলছে । ইশতিয়াক চৌধুরী উঠে এসে চমকে গেলেন নাম শুনে তিনি ধীর পায়ে আজরিনের সামনে এসে বলল,,,

“মধুপুর তোমার গ্ৰাম তাই না।

“হুম।

“আল্লাহ তায়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। “ফুয়াদ তুমি এখন ওকে ওপরে নিয়ে যাও। আর খেয়াল রাখবে আজরিনের যেন কোন অসুবিধা না হয়। বাকিরা যে যার কাছে যাও। আর হ্যা আজরিন আমাদের বাড়ির বউ এটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।ও এ চৌধুরী বাড়ির বউ তাই তার কোন অসম্মান হয় এরকম কোন কাজ করবে না।

বলেই ইশতিয়াক চৌধুরী রুমে চলে যেতে লাগলেন সাথে আয়েশা চৌধুরী ও।তার চোখ দুটো ভিজে উঠছে। বাকিরা ইশতিয়াক চৌধুরী এর এরকম ব্যবহার বুঝতে পারল না। বাবার নাম শুনে আজরিন কে মেনে নিল। আজরিন ওনার অবস্থা বুঝতে পারলো। ফুয়াদ ও হয়তো একটু আন্দাজ করতে পারছে। ‘আংকেল শুনুন! এ কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী থেমে গেলে আজরিন আস্তে আস্তে তার কাছে গেল সাথে ফুয়াদ ও আজরিন আস্তে আস্তে বলল যাতে কেউ না শুনে,,

“বাবা আপনার জন্য একটা চিঠি রেখে গিয়েছেন তিনি একবার হলেও আপনাকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পান নি।

কথা বলার সময় আজরিনের গলা ধরে আসছিল। আজরিনের কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন,,

“রেখে গিয়েছেন মানে টা কি? আজাহার কোথায় গিয়েছে।

তখন ফুয়াদ ও আস্তে আস্তে বলল,,

“স্যার সাত দিন আগে মারা গেছেন বাবা।”

এ কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী এক হাত পিছিয়ে গেলেন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না সে পৃথিবীতে নেই। আয়েশা চৌধুরী ইশতিয়াক চৌধুরী কে ধরলেন। বাকিরা কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। ওদের কাছে সব রহস্যময় লাগছে ইশতিয়াক চৌধুরী রুমে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পেছনে আয়েশা চৌধুরী ও আছে। তিনি আয়েশা চৌধুরী কে বললেন,,

“আমি পারি নি আয়েশা আমি আমার কথা রাখতে পারি নি। মেয়েটা কে দেখো প্রথম দিনই বোবা আর গ্ৰামের মেয়ে বলেছি অথচ মেয়েটা আজকে কিছুই বললো না শুধু বাবার কথা জানিয়ে গেল । আয়েশা আজরিনের মা ওকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা গেছে তুমি ওকে মায়ের মতো আগলে রেখো।

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“হুম রাখবো! আজাহার ভাইয়ের মেয়ে ও কিন্তু আজাহার ভাই তো একজন আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ওদের সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে আমার মনে হচ্ছে। ফুয়াদ আজরিন দুজনেই কিছু লুকাচ্ছে।
____________________

ফুয়াদরা ওপরে ওঠার সময় মলি দেখিয়ে দেখিয়ে তার ননদ কে বলল,,

“বুঝলি তো নিধি সবার পেটে ঘি হজম হয় না। এই জন্যই বোধহয় ঐ জিনিস টা আস্তে আস্তে কষ্ট হলেও খেয়ে যায় যাতে লোকে বুঝতে না পারে সে কোথা থেকে উঠে এসেছে। আমরা তো জানি গ্ৰামের মেয়েরা এসব ভালো খাবার চোখেও দেখেনি। তাই তো দেখে লোভ সামলাতে পারে নি জোর করে হলেও খেয়ে গেছে।

একথা শুনে আজরিন থেমে গেল সে বুঝতে পেরেছে তাকেই মিন করে কথাগুলো বলেছে। ফুয়াদ আজরিনের দিকে তাকালো আজরিনের অবস্থা বুঝতে পেরে আজরিনের হাত ধরে কানে কানে বলল,,

“এখানে মন খারাপ করার কোন দরকার নেই মিস । অন্যের কথায় নিজেকে ছোট ভাববেন না আর আপনি যা নন সেটা নিয়ে তো একদমই নয়। আসলে এর মাথার স্ক্র একটু ঢিলা আছে।আপনি হলেন আমার রাজ্যের রানী তাই রানীর মতো থাকবেন কে কি বলল তাতে কান দিবেন না। আসলে মানুষ টা কখন কি করে বা বলে সেটা নিজেই জানে না।গাধা কোথাকার!

এ কথা শুনে আজরিনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। বাকিরা কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। অন্য কোন মেয়ে হলে অপমানে এখানে থাকতো না। তখন আজরিন মলির দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার হেসে দাঁড়িয়ে আছে তাই ও বলল,,

“মাশাআল্লাহ আপু আপনার হাসিটা তো অনেক সুন্দর। আপনার মনটা যদি আপনার হাসির মতো সুন্দর হতো তাহলে আরো বেশি ভালো লাগতো।”

এ কথা শুনে ফুয়াদ ফায়জা আর তিশার মুখে হাসি ফুটে উঠল। তবে মলির মুখটা চুপসে গেল সে ভাবেই নি এত সুন্দর করে কেউ তাকে অপমান করতে পারবে। ফুয়াদ জানতো তার শুভ্রপরী এরকম কিছুই বলবে তাই ও কিছু বলে নি। তখন ফুয়াদ বলল,,

“হেই মলি আমার বউয়ের সাথে লাগতে আসলে তোকে আগে থেকে প্ল্যান করে আসতে হবে। সো বি কেয়ারফুল।”

একথা শুনে মলি রাগে অপমানে ওখান থেকে চলে গেল। বড়রা আগেই চলে গেছে। মলির হাজবেন্ড খুব খুশি হয়েছে এ কাজে। আজরিন আস্তে আস্তে ওপরে উঠতে নিল তখন ফুয়াদ ওকে কোলে তুলে নিল আর হাঁটা ধরে বলল,,

“অনেক হেঁটেছেন আজ আর হাঁটতে হবে না।আপনার কষ্ট হচ্ছে সেটা আমি দেখতে পাচ্ছি।”

“সবার সামনে এরকম করলে সবাই কি ভাববে নামান এমনিতেও সবাই আমাদের ভালো চোখে দেখছেন না।”

“আমার বউ আমি কোলে নিয়েছি আপনার কি তাতে?

“হুট করে বেশি হয়ে যাচ্ছে না!”

“এখন মনে হচ্ছে আপনার মুখটা বন্ধ থাকলেই ভালো থাকতো মিস।”

কথা বলতে বলতে ওরা রুমে এসে পড়েছে। ও রুমে এসে ওকে নামিয়ে দিল। আর বলল,,

“বাহ আপনি এই ছয়দিন কথা বলতে পারেন নি আজ কথা বলতে পারলেন কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে না।”

“হুম এখন কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে না।”

আজরিন এর হুট করে মন খারাপ হয়ে গেল। আর বলল,,

“আংকেল কে চিঠিটা দিয়ে আসুন! আমার ব্যাগের প্রথম পকেটে আছে।”

একথা শুনে ফুয়াদ বুঝতে পারলো আজরিনের মন খারাপ। সদ্য সাত দিন হয়েছে সে তার বাবাকে হাড়িয়েছে যাকে নিজের থেকেও ভালোবাসাতো আজরিন। কাল পর্যন্ত মেয়েটা নিষ্প্রাণ ছিল। আজ একটু স্বাভাবিক হচ্ছে নাহলে এই ছয়দিন কেমন ছিল সেটা ও জানে ঘুমের মাঝে হাঁসফাঁস করতো। ওদের বিয়েটাও হয়েছে তিনদিন হলো । এতকিছুর চাপ একসাথে পড়েছে ও চায়না আর কোন কষ্ট দিতে।ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“অফিস যাওয়ার সময় দিয়ে যাব। আজ তো আপনার জন্য শপিং ও করতে হবে। আপনি ঠিক থাকলে আপনাকে নিয়েই যেতে পারতাম কিন্তু এটা পসিবল না। আমি বিকেলেই ফিরে আসবো। ততক্ষনে আপনি রুম থেকে বের হবে না। আমি মাকে আর ফায়জাকে বলে যাব। ”

“আমাকে নিয়ে আপনার টেনশন করতে হবে না। আপনি অফিস যান আর হ্যা ল্যাপটপ টা দিয়ে যান আমার কিছু কাজ আছে। এতদিনে ওগুলো ভুলে বসে ছিলাম আপনার তাড়াতাড়ি একটা মিশনে যেতে হবে মনে হচ্ছে।”

“মানে?”

“বাবার কাছে কিছু তথ্য ছিল ওগুলো তো আপনাকে দেওয়াই হয়নি আমি পাঠিয়ে দিব আপনাকে নাহলে রাতে এসে দেখে নিয়েন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফুয়াদ রেডি হয়ে অফিসে চলে গেল যাওয়ার সময় ইশতিয়াক চৌধুরী কে চিঠি দিয়ে গেল আর আয়েশা চৌধুরী আর ফায়জাকে আজরিনের খেয়াল রাখতে বলে গেল।

~চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here