তুমি যে আমার পর্ব -০৪

#গল্পের_নাম_তুমি_যে_আমার
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৪

ইলহাম দাড়িয়ে আছে নিজ বাবার সামনে ইশরাক সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে তেজি কন্ঠে বললেন,

~এতো কিছু করে কোনো লাভ নেই ইলহাম এসব বন্ধ করো।

ইলহাম বাবার কথা শুনে মৃদু হেসে বললো,

~তোমার পরামর্শ কেউ চাইনি বাবা।তুমি কখন থেকে আমার জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করলে?

ইশরাক সাহেব গর্জে উঠে বললেন,

~বাবার মুখে ত/র্ক করছো এই তোমার শিক্ষা।

ইলহাম আর তার বাবার কথার শব্দ শুনে মাহমুদা বেগম রুম থেকে বের হয়ে আসলেন ইলহাম মাকে দেখে বললো,

~মা,তুমি ব্যাগ গুছিয়ে নেও আমার সাথে চলো।

ইশরাক সাহেব অবাক হয়ে বললেন,

~তোমার মা কোথায় যাবে?সে আমার স্ত্রী আমার বাসা থেকে সে কোথাও যাবে না।

মাহমুদা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

~ইলহাম,তুই মাথা ঠান্ডা কর যা হয়েছে ভুলে যা আমার কথাটা তুই রাখ।

ইলহাম মায়ের হাত ধরে বললো,

~মা,তুমি জানো না এই লোকটা কতোটা খা/রা/প নিজ স্বা/র্থে/র জন্য সে সব কিছু করতে পারবে।

ইশরাক সাহেব বললেন,

~অনেক হয়েছে ইলহাম এতো কিছু করেছি তোমাদের জন্য।

ইলহাম তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বললো,

~এতো সবকিছু আমাদের জন্য?সিরিয়াসলি বাবা তাহলে কানাডা তুমি একা কেন সিফ্ট হতে যাচ্ছো মাকে কেন নিয়ে যাচ্ছো না?

ইলহামের কথা শুনে ইশরাক সাহেব চুপ হয়ে গেলেন মাহমুদা বেগম অবাক নয়নে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

~এসব কী বলছে ইলহাম?এগুলো কী সত্য?

ইশরাক সাহেব রুমাল দিয়ে মাথার ঘাম মুছে বললেন,

~মাহমুদা,আমি তোমাকে নিয়ে যাবো কিন্তু পরে আগে সব গুছিয়ে তো নেই তারপর

ইশরাক সাহেবের কথার মাঝেই ইলহাম বলে উঠলো,

~অনেক মিথ্যা বলেছেন আর বলে লাভ নেই।আমি সবই বুঝে গেছি আপনার ওসব কথায় আমার মন গলবেনা।

মাহমুদা বেগম মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে বললেন,

~আমি তৈরি হয়ে আসছি ইলহাম তুই একটু অপেক্ষা কর।

ইশরাক সাহেব বললেন,

~তুমি কোথায় যাবে মাহমুদা এই পৃথিবীতে আমি ছাড়া কেউ নেই তোমার।

মাহমুদা বেগম টলমল চোখে বললেন,

~আমার ছেলে ছাড়া এ পৃথিবীতে আমার কেউ নেই আপনার সব অ/প/রা/ধ আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি কারণ আমি আপনার স্ত্রী। হেমন্তি আর ওর পরিবারের সাথে যা করেছেন তাতেও আমি আপনাকে কিছু বলিনি আপনি আমাকে বুঝিয়েছেন এসবে আমাদেরই ভালো তাই চুপ থেকেছি।কিন্তু আর না এখন আমি কিছু সহ্য করবো না কিছু না।

বলেই সে ইলহামের হাত ধরে বাহিরের দিকে চলে আসতে লাগলো হঠাৎ আবার থেমে গিয়ে বললেন,

~আপনার কোনো কিছুই আমি নিয়ে যাবো না আপনি একাই ভালো থাকেন।

ইলহাম মাকে নিয়ে বের হয়ে আসলো গাড়ির চাবি সে টেবিলে রেখে এসেছে বাবার কোনোকিছু আর ব্যবহার করবেনা সে।একটা রিক্সা নিয়ে চলে আসলো নতুন নীড়ে ফ্ল্যাটের কলিংবেল টি/প/তে/ই হেমন্তি দরজা খুললো।হেমন্তিকে দেখে মাহমুদা বেগম অবাক হয়ে গেলেন ইলহামের দিকে তাকাতেই ইলহাম চোখ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে বললো।মাহমুদা বেগম ভিতরে ঢুকে পরলেন হেমন্তি বললো,

~আন্টি এখানে কেন?

ইলহাম বললো,

~মা এখানেই থাকবে।

হেমন্তি কোনো কিছুই বুঝতে পারলোনা তখনই খালা সেখানে উপস্থিত হলো মাহমুদা বেগম নিজ বোনকে সামনে দেখে কেঁদে উঠলেন খালা গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন আর বললেন,

~আর কেদোঁ না আপা যা হয়েছে ভুলে যাও।

হেমন্তি শুধু তাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।মাহমুদা বেগম চোখের জল মুছে ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললেন,

~তোর খালা কবে এসেছে আর হেমন্তি এখানে কেন?

ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

~খালা ৪দিন আগে এসেছে আমি এই ফ্যাল্টটা ভাড়া নিয়েছি খালা সাহায্য করেছে বাবার কোনো কিছুতে আমার অধিকার নেই বন্ধুদের সাহায্যে চাকরি খোজ করছি।হেমন্তি মেহমান হিসেবে আছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার পর তাকে ঘরের বউ করে নিয়ে আসবো।

বলেই সে হেমন্তির দিকে তাকালো হেমন্তি চোখ গরম করে ইলহামের দিকে তাকালো।হেমন্তি কিছু না বলে নিজ রুমে চলে গেলো মাহমুদা বেগম বললেন,

~ওকে সবকিছু বলে দে ইলহাম তোর যে কোনো দো/ষ নেই তা বলে দে।

ইলহাম বললো,

~সব বলবো দুদিনের সময় দেও।

খালা ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললেন,

~হেমন্তির প্রয়োজনীয় অনেক কিছু আনতে হবে আমি টাকা দিচ্ছি তুই নিয়ে আয়।

ইলহাম বললো,

~নাহ খালা লাগবে না আমি এক বন্ধু থেকে ধার নিয়েছি।

খালা কিছুই বললেন না ইলহামের জন্য অনেক খা/রা/প লাগছে তার।ইলহাম বাসা থেকে বের হয়ে গেলো তার এখন থেকে অনেক কাজ সবকিছু ধাপে ধাপে শেষ করতে হবে। হেমন্তি রুমে বসে আছে মাহমুদা বেগম ঘরে প্রবেশ করলো তাকে দেখে হেমন্তি ঠিক হয়ে বসলো।মাহমুদা বেগম বললেন,

~তোমার হয়তো সবকিছু অনেক ঘোলাটে লাগছে চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

হেমন্তি কিছুই বললো না মাহমুদা বেগম তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~বাসার কথা মনে পরছে খুব তাড়াতাড়ি তুমি তাদের কাছে যাবে।

হেমন্তি বললো,

~আপনার ছেলে অনেক খা/রা/প একটা লোক।

মাহমুদা বেগম বললেন,

~সময়ের সাথে তুমি সব জানতে পারবে।

হাসান সাহেব পুলিশের সামনে বসে আছে তার চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ পাশেই বসে আছে আবির।আবির বললো,

~স্যার আমরা এখন কী করবো?

পুলিশ অফিসার বললেন,

~সরি মিস্টার আবির এখানে আপনার বোনের সিগনেচার রয়েছে তাই আমরা কোনো কিছুই করতে পারবো না।

হাসান সাহেব বললেন,

~এগুলো সব মিথ্যে কাগজ।

পুলিশ অফিসার বললেন,

~এখানে আমাদের কিছুই করার নেই সরি।

হাসান সাহেব আর আবির চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পরলেন এরপর থানা থেকে বের হয়ে আসলেন তাদের যেতেই ইলহাম সেখানে হাজির হলো পুলিশ অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বললো,

~ধন্যবাদ আঙ্কেল হেল্প করার জন্য।

সেই পুলিশ অফিসার হেসে জবাব দিলেন,

~ফাহিম(ইলহামের বন্ধু) আর তুমি আমার কাছে একই তুমি চিন্তা করো না সব কিছু তোমার পরিকল্পনা মতো হবে।

হেমন্তি বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ পাণের দিকে তাকিয়ে ৬মাসে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা মনে করছে।যেদিন ইলহাম আর তার পরিবার তাকে প্রথম দেখতে আসবে রুমকি বেগম তাকে নিজ হাতে তৈরি করে দিয়েছিল। হেমন্তি সেদিন লজ্জায় নুয়ে পড়ছিল হেমন্তির বাবার সাথে ইলহামের বাবার ব্যবসায়িক ভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠে ছিলো সেখান থেকেই হেমন্তিকে ইলহামের জন্য পছন্দ করে ইশরাক সাহেব কিন্তু এই পছন্দের পিছনে যে অনেক কাহিনী ছিলো তা কারোরই জানা ছিলনা। বিয়ের দিনের কথা ভাবতেই হেমন্তির চোখ বেয়ে জল পরতে লাগলো এতোটা নি/ষ্ঠু/র দিন সে কোনোদিন দেখেনি।

চলবে

(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here