তুমি যে আমার পর্ব -০৫

#গল্পের_নাম_তুমি_যে_আমার
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৫

বিয়ের দিন সকাল থেকেই বাবা আর আবির ভাই নানান কাজে ব্যস্ত এরই মধ্যে ইলহামের বাবা এসে উপস্থিত হয়েছিল।তাকে দেখে সবাই ঘা/ব/ড়ে গিয়েছিলো বাবা একবার আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ইলহামের বাবা কে জিজ্ঞেস করলেন,

~ভাইসাহেব আপনি এই সময় কোনো প্রয়োজন।

ইলহামের বাবা হাতের ফাইলটা টেবিলে রেখে বললেন,

~আমাদের যে প্রজেক্টটা রয়েছে তারই ফাইল এটা আপনার আর আবিরের সিগনেচার প্রয়োজন।

বাবা সেদিন হেসে হেসে সেই ফাইলে সাইন করে দেয় আবির ভাইও ইলহামের বাবার ওপর বিশ্বাস করে না পড়েই ফাইলে সাইন করে দেয়।ইলহামের বাবা ফাইলটা হাতে নিয়ে মৃদু হেসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আমরা সবাই আবার নিজ নিজ কাজ করতে থাকি দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো আমি বউ সেজে বসে ছিলাম ইলহামের জন্য হাতে মেহেদীতে ইলহামের নামটি দেখে আমি লজ্জায় নুয়ে পরছিলাম।রাত ১০টা বেজে যাওয়ার পরও যখন বরযাত্রা আসলোনা তখন বাবা অনেক চিন্তিত হয়ে পরলো আবির ভাই ফোন করতে শুরু করলো।কিন্তু কেউই ফোন রিসিভ করছিলো না আবির ভাই সব মেহমানদের সামলাতে শুরু করেছিলেন।বাবা চেয়ারে বসে ছিলেন মাথায় হাত দিয়ে আমি শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম ফ্যালফ্যাল করে আমার মন যে সেসময় কু ডাকছিলো।রাত ১১টা পুলিশের গাড়ি এসে থামলো আমাদের দরজায় পুলিশকে দেখে বাবা আর আবির ভাই এগিয়ে গেলেন।পুলিশ তাদের দুজনকে দেখে বললেন,

~আপনাদের কোম্পানি যে অ/বৈ/ধ সম্পদ পা/চা/র করেছে তা এখন আমাদের দখলে আপনাদের আমাদের সাথে আসতে হবে।

পুলিশের কথা শুনে আমাদের মাথায় আকাশ ভে/ঙ্গে পরেছিলো।বাবা পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,

~আপনার কাছে কী প্রমাণ আছে এসব আমার দ্বারা করা হয়েছে?

পুলিশ একটা ফাইল বের করে বাবা আর আবির ভাইয়ের সামনে রাখলো। আবির ভাই ফাইলটা হাতে নিয়ে পরতেই সে অবাক হয়ে গিয়েছিলো সে ফাইলে লেখা ছিলো এসব অ/বৈ/ধ সম্পদ তারাই পা/চা/র করছে তাও ২বছর ধরে।আবির ভাই বললো,

~আমরা এসব কিছুই করেনি স্যার সব মিথ্যে স্যার।

পুলিশ সেদিন আমাদের কোনো কথা শুনেনি সেদিন আবির ভাই আর বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের সাথে।আমি পুলিশদের অনেক অনুরোধ করেছিলাম একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য তারা শুনেনি এতো মানুষদের সামনে আমার বাবা আর ভাইকে নিয়ে চলে গেলো। সব সম্মান আমাদের সেদিন চলে গিয়েছিলো বাবা আর ভাইকে নিয়ে যাওয়ার পরই ইলহামের বাবা আমাদের বাসায় আসে তাকে দেখে রুমকি ফুপি এগিয়ে বললেন,

~ভাইসাহেব অনেক বড় ঘটনা ঘটে গেছে।

ইলহামের বাবা ফুপিকে থামিয়ে বললেন,

~আমি সবই জানি আসুন রুমে গিয়ে বসি এখানে আলোচনা করা ঠিক হবে না।

আমি আর ফুপি তাকে নিয়ে রুমে চলে আসলাম সে এসেই বললেন,

~এসব আমিই করেছি আপনাদের জন্য ভালো হবে চুপ থাকা ওই সকল ব্যবসা সবই আমার।এই বিয়ের আসল উদ্দেশ্যই এটা ছিলো গত ৪মাস ধরে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছিলো তখনই তোমার বাবার সাথে আমার দেখা এতে সহজ-সরল একটা মানুষ তাই ভাবলাম তাকেই টার্গেট করি আর দেখেন সব হয়ে গেছে।

তার কথা শুনে আমি আর ফুপি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

~আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলেন?

ইলহামের বাবা বললেন,

~ইমোশনালি তোমার বাবা আর বিশেষ করে তোমার ভাইকে একটু নিজের কন্ট্রোলে করার জন্য।দেখেছে কীভাবে ফাইলটা সাইন করে দিয়েছিলো এটাই প্ল্যান ছিলো।

আমি বললাম,

~ইলহামও কী সব জানে?

ইলহামের বাবা বললেন,

~অবশ্যই জানে আর সরি তোমার বিয়েটা আর হচ্ছেনা।

বলেই সে চলে গিয়েছিলো আমি সেদিন ছন্নছাড়া হয়ে বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছিলাম সকল মানুষ আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছিলেন।আমার সেদিন কিছুই করার ছিলোনা সেদিন শুধু চোখের পানি ছাড়া আমার হাতে কিছুই ছিলোনা।
হেমন্তি অতিত ভাবতে ভাবতে ডুকরে কেঁদে উঠে এতোটা কষ্ট তার কেন হচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে সে বারান্দায় বসে পরলো। তখনই ইলহাম সেখানে হাজির হলে হেমন্তিকে এভাবে কাঁদতে দেখে ইলহামের মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো।ইলহাম গিয়ে হেমন্তির পাশে বসে বললো,

~কী হয়েছে হেমন্তি কান্না করছো কেন?

হেমন্তি মাথা তুলে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললো,

~আমার কাছে আসবেন না প্লিজ আপনাকে আমার সহ্য হয় না।

ইলহাম হেমন্তির অবস্থা দেখে বললো,

~আমি এখনই চলে যাবো তুমি কান্না করো না।

হেমন্তি চোখ মুছে বললো,

~কান্না বন্ধ করেছি এখন আপনি যান।

ইলহাম একবার হেমন্তির দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো হেমন্তি সেখানেই বসে রইলো আকাশের দিকে মুখ করে।

ইলহাম রুমে বসে একটা ফাইল ভালো মতো পর্যবেক্ষণ আর ল্যাপটপে চোখ বুলাচ্ছে।তখনই তার ফোন বেজে উঠলো ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার বাবা ফোন করেছে।ইলহাম বাঁকা হেসে ফোন রিসিভ করে বললো,

~জ্বী বলুন।

ইশরাক সাহেব কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন,

~তোমরা চলে আসে ইলহাম তোমাদের ছাড়া আমি অসহায় তুমি যদি চাও তাহলে আমি হেমন্তির সাথেই তোমার বিয়ে দিবো সবার থেকে মাফ চাইবো।

ইলহাম আলতো হেসে বললো,

~আপনার এসব করতে হবে না আপনি নিজ প্রাসাদে থাকুন আরামে।

ইশরাক সাহেব বললেন,

~এমন ভাবে বলে না বাবা।

ইলহাম বললো,

~আপনি জেনে গেছেন আমার কাছেই আসল ফাইলটা রয়েছে চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।

বলেই সে খট করে ফোন রেখে দিলো ইশরাক সাহেব রা/গে ফুসতে লাগলেন এতে কোনো কাজ হবে না বড় কিছু করতে হবে। হাসান সাহেব মেয়ের চিন্তায় কোনো কিছুই খেতে চাইছেন না আবির আর রুমকি বেগম এখন ক্লান্ত হয়ে গেছেন তাকে বুঝাতে বুঝাতে।হাসান সাহেব নামাজ পড়া শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখছিলেন তখনই তার ফোন বেজে উঠলো সে ফোন হাতে নিয়েই ভ্রুকুচকে ফেললেন কারণ ফোনের ওয়ালপেপারে “ইলহামের” নামটা জ্বলজ্বল করছে।সে ফোন রিসিভ করতেই ইলহাম সালাম দিয়ে বললো,

~কেমন আছেন?

হাসান সাহেব থমথম গলায় বললেন,

~যার মেয়ে নিখোঁজ সে কীভাবে ভালো থাকতে পারে।

ইলহাম বললো,

~চিন্তা করবেন না সকালে আপনাকে নিতে আসবো হেমন্তির সাথে দেখা করিয়ে দিবো।

হাসান সাহেব বললেন,

~সত্যি বলছো?

ইলহাম বললো,

~হুম কিন্তু শুধু আপনি আর কেউ না।

হাসান সাহেব বললেন,

~ঠিক আছে কেউ জানবেনা।

ইলহাম ফোন রেখে দিলো হাসান সাহেব দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালেন।তারপর হেমন্তির ছবিতে হাত বুলিয়ে বললেন,

~তোর বাবা তোকে দেখতে আসছে মা।

চলবে

(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here