তুমি যে আমার পর্ব -৪০+৪১

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_40

অভ্র চিন্তিত মুখ করে তাকিয়ে আছে হাতে থাকা রিপোর্টটির দিকে। নিদ্রা যে ছোট বেলার কিছু স্মৃতি
ভুলে গেছে এমন কথা তো কখনো ওকে বলেনি। ওদের বন্ধুত্ব তো আর একদিনের নয়। অনেকদিনের তবুও এতো বড় কথাটা ওর থেকে লুকিয়ে গেছে কেন? ছোট বেলার ও মাথায় আঘাত পায় যার ফলেই তার আগের স্মৃতি ওর কিছু মনে নেই। আর সেই বিষয়টা ও আজ জানতে পারলো। অফিসার আদিলের বাসায় জ্ঞান হারানোর পর দিন ওকে হসপিটালে নিয়ে কিছু টেস্ট করিয়ে আনে। আর আজ তার রিপোর্ট দিয়েছে তা দেখেই সব ক্লিয়ার হয় অভ্রের কাছে।
অভ্র চাপা অভিমান হয় নিদ্রার উপর। ও ই
রিপোর্ট হাতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরে। এখন বাসায় গিয়ে ও লাভ নেই নিদ্রা বাসায় নাই। ও ওর হসপিটালে। তাই ও সেখানে যাওয়ার চিন্তা করে। এই মুহূর্তে ওর নিদ্রা কাছ থেকে সব জানা চাই না হলে শান্তি পাবে না। আর নিদ্রা কেন ওষুধ খায় না সে সবার জানতে হবে? ঠিকমতো ওষুধ খেলে আর এতদিন সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা! কিন্তু তা করেনি এজন্যই এখনো যদিও ওর দশ বছর বয়সের আগের কথা জানার চেষ্টা করে তাহলে মাথায় পেইন হয়। ও অভ্র গাড়ি নিয়ে ছুটে চলে নিদ্রার হসপিটালের উদ্দেশ্য এ।

হসপিটালে এসে গাড়ি থামতেই হনহনিয়ে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। বড় বড় পা ফেলে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে যায়।আর লিফটে উঠে চার তলায় এসে পৌঁছায়। বের হয়ে নিদ্রার কেবিনের দিকে পা বাড়ায়। এক নার্স ওকে দেখে বলে,

‘ স্যার আপনি এখানে?’

‘ হুম নিদ্রার কাছে এসেছি!’

‘ ম্যাডাম তো কেবিনে নাই?’

নার্সের কথা শুনে পা থেমে যায় অভ্রের ও ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

‘কেবিনে নাই তাহলে কোথায়? ওর কি আজকে কোন অপারেশন আছে। আমি তো কিছু জানি না।’

‘ না ম্যাডাম তো হসপিটালে নাই।’

‘হোয়াট? হসপিটালের নাই মানে?’

‘আসলে স্যার আমি বলতে চাচ্ছি ম্যাডাম তো আজকে হসপিটালে আসেই নাই।’

‘হোয়াট? কীসব যা তা বলছেন? হসপিটালে আসে নাই তো কোথায় গিয়েছে? ও তো আমার সাথেই বের হয়েছে। আপনি কি বলছেন প্লিজ আমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না। এমনিতেই আমার মাথাটা খুব গরম আছে আপনি দয়া করে এখান থেকে যান।’

বলেই নার্সটাকে রেখেই নিদ্রার কেবিনে ঢুকে গেলো। নিদ্রা আজকে ওর সাথেই হাসপাতালে আসার জন্য বের হয়েছে আর এই নার্সটা কিনা বলছে আজ ও আসে নাই। এটা ইম্পসিবল।

কেবিনে এসেও নিদ্রা দেখা মিলল না আজকে সারাদিন কেবিনে কেউ বসেছে বলে মনে হচ্ছে না। সবাই একথাই বললো অভ্র কে আজ নিদ্রা হাসপাতালে আসে নাই। অভ্র অবাক ও চিন্তিত মুখে বেরিয়ে এলো। রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়ালো অভ্র। সামনে ওর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে একহাত গাড়ির উপর রেখে ভাবতে লাগলো, নিদ্রা হাসপাতালে আসার নাম করে কোথায় যেতে পারে? কয়েকটা ফ্রেন্ড কে কল করলো কিন্তু যায় নাই।

মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে উঠে বসলো। এখন কেবল এগারোটা বাজে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলেই জানা যাবে। অভ্র আর হসপিটালে যায় না সোজা বাসায় চলে আসে।

.
এদিকে বর্ষা আজ অনেক দিন পর কলেজে এসেছে। তূর্য ওকে নামিয়ে দিয়ে গেছে। কলেজে গিয়ে মাঠে ওর সব বিচ্ছু বাহিনীকে বসে থাকতে দেখলে। ওরা সবাই ওর উপর রাগ করে আছে ও জানে। থাকা স্বাভাবিক। বান্ধবী বিয়ে করে নিলো অথচ ওরা কেউ খবর অবধি পেলো না। সব কটা ওর দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। যেন ওকে খেয়াল‌ই করে নি। বর্ষা গিয়ে চুপচাপ ওদের পাশে ঘাসের উপর বসে পড়ল।

‘ তোদের সবার কি খবর?’

বর্ষা কথাটা বলে সবার দিকে চাইলো কিন্তু কেউ ওর দিকে তাকালো না। নিজের মতো কথা বলে যাচ্ছে ওকে পাত্তা দিচ্ছে না। বর্ষার এসব দেখে খুব খারাপ লাগলো। তিশার হাত ধরে বললো,

‘ প্লিজ তুই অন্তত কথা বল। এমন করছিস কেন তোরা?’

তিশা হাত ছাড়িয়ে নিলো।

‘ কেউ কি আমার সাথে কথা বলবি না। এতোটা পর হয়ে গেলাম আমি তোদের?’

এবার কথা বললো একজন বললো, ‘ তুই আমাদের আপন ছিলি সব সময় কিন্তু আমরা ছিলাম না কখনো তাই তো এতো বড় কাজটা লুকিয়ে চুরিয়ে করলি।কিভাবে পারলি রে দাওয়াত না দিতি বলতে তো পারতি! বললিই না আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ের কথা কিনা অন্য মানুষের মুখে শুনতে হয়।’

‘ আমি তোদের অভিমানটা বুঝতে পারছি রে। কিন্তু আমি বিশ্বাস কর আমি এমনটা চাইনি। সব ঠিক থাকলে তোদের ঠিক জানাতাম। কিন্তু আমিই তো এই সবের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে…

‘ ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। তুই আমাদের আপন ভাবিস না আমরা বুঝতে পেরেছি।

‘ এই সামান্য কারণে তোরা আমার সাথে এমন করছিস? আমি কি খুব খুশি মনে আনন্দ উল্লাস করে বিয়ে করিছি যে এমন করছিস? আমি যে কতোটা কষ্টে আমি সেটা কেউ বুঝছে না তোরাও বুঝছিস না। থাক কথা বলা লাগবে না। আমার কষ্ট আমি একাই সহ্য করি তোরা তোদের রাগ নিয়ে থাক। বাই।’

কষ্ট বুকটা ফেটে যাচ্ছে এতো দিন পর ওদের সাথে দেখা আর ওরা এমন করলো। কেউ আমাকে কেন বুঝে না।সব জায়গা থেকে খালি আমি কেন কষ্ট পাই কেন? চোখের কোনে জল চলে এলো আমি উঠে দাড়াতেই তিশা আমার হাত চেপে ধরে আবার বসিয়ে দিলো। আমার চোখে পানি দেখে সবাই অবাক হয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নিজেরাই সরি বলতেই লাগলো।

‘ আরে সরি ইয়ার কাঁদছিল কেন? আমরা শুধু অভিমান করে কথাগুলো বললাম। সত্যি কি তোর উপর রাগ করতে পারি। এটা জাস্ট মজা ছিলো প্লিজ কাদিস না।’

তিশা আমার হাত ধরে বললো, ‘ তোর আবার কি কষ্ট বলতো? সত্যি করে বলবি তোর জামাই কি পরকীয়া করে? তোকে মেনে নেয়নি। আচ্ছা আমি তো শুনলাম তিনি নাকি নিজেই বিয়ের কথা বলেছিল তাহলে এখন তোকে কষ্ট কেন দিচ্ছে সব শেয়ার কর। ওই পুলিশ ব্যাটা যদি কিছু করে থাকে বল একদিন টাইট দিয়া দিমু আমরা আমাগো কলিজারে কষ্ট দেওয়া বের করমু।’

ওদের এসব কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি থেকে ওরা ও হাসলো। সব দুঃখ ভুলে গেলো যেন কিন্তু ছুটির পর‌ই আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো সবাই কথা বলতে বলতে বের হতেই তূর্য কে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। তূর্য কে দেখে বর্ষার হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

তূর্য এগিয়ে এলো ফোন হাতে। বর্ষার বান্ধবী রা বর্ষাকে জিজ্ঞেস করলো, এই কি আমাদের দুলাভাই?

বর্ষা হ্যা না কিছু বললো না। তূর্য নিজে থেকেই সবার সাথে কথা বললো। আর নিজের পরিচয় দিলো। তারপর সবার সামনেই বর্ষার হাত ধরে টেনে এগিয়ে গেলো। বর্ষা রাগে ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিজেই গাড়িতে উঠে বসলো।
বর্ষার ফ্রেন্ড রা হা করে তূর্য কে দেখছে। বর্ষার আর কথা না বললেও তূর্য সবার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বাই বললো।

‘ আমাদের দুলাভাই তো সেই হ্যান্ডসাম রে।’ তিশা বললো।

সবাই বললো, ‘ হ্যা রে বর্ষা কপাল আছে বল। কিভাবে নিয়ে গেলো। খুব ভালোবাসে বর্ষাকে বোধহয়।’
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#extra_part

অভ্র বাসায় এসে এক ঘুম দেয়। বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। সন্ধ্যায় বিছানা ছেড়ে উঠে যখন জানতে পারে নিদ্রা এখনো বাসায় ফিরেনি তখন চিন্তিত হয়ে পড়ে।
সারা দিন বাসায় ফিরে নি। তাহলে ও আছে কোথায়? হাসপাতালেও তো যায় নাই!’

সোফায় বসে ফোনে কল করে। কিন্তু নাম্বার বন্ধ রাগে ফোনটাই আছাড়ে ফেলে অভ্র। ছুটে আসে অভ্র মা।

আতঙ্কিত মুখে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে এমন করছিস কেন?’

‘পাগল হয়ে যাব আমি। জ্বালা যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না।’

‘ কি হয়েছে বলবি তো?’

‘নিদ্রা এখনো বাড়ি ফিরে নি।’

‘ হ্যা তুই তো বলেছিলি। ফ্রেন্ড এর বাড়ি গেছে।

‘ মিথ্যে বলেছিলাম। ও আজ হসপিটালে ও যায় নি। আমার পরিচিত কোন কোন ফ্রেন্ডের বাড়িতে ও যাইনি।

‘তাহলে কোথায় গেছে?’

‘সেটাইতো বুঝতে পারতাছিনা! আমিতো ভেবেছি সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে আসবে কিন্তু এখনো আসেনি।’

‘ নিদ্রার কোন বিপদ হলো না তো?’ চিন্তিত মুখে বললো অভ্ররের মা।

‘আমি কি করে বলব আম্মু? আমি কি ওর সাথে ছিলাম! বারবার করে বলেছিলাম চাকরিটা ছেড়ে দে ছেড়ে দে কিন্তু ও তো আমার কোন কথাই শুনবে না। যেদিন বাসা থেকে বের হবে সেদিন ই কিছু না কিছু ঘটে। আজ ও এখন কোথায় খুঁজবো তুমিই বলো।’

অভ্রের ভাবি এসে বলে, ‘ কি মেয়ে বিয়ে করলা খালি হারায় যায়। দুই দিন পর পর এক তামাশা। বয়ফ্রেন্ড- টয়ফ্রেন্ড সাথে থাকতে পারে।’

অভ্র আর ওর মা বিরক্ত মুখে তাকায় তার দিকে তিনি থামার বদলে আরো কয়েকটা কথা বলে রান্না ঘরে চলে যায়। অভ্র বাবা এসেও এসব শুনে বিরক্ত হয়। বিয়ে দিয়েও শান্তি নাই এতো যন্ত্রণা। সে কি ছোট বাচ্চা প্রতিদিন তাকে খোঁজে আনতে হবে। বিরক্ত মুখে নিজের রুমে চলে যায়। অভ্র নিজেই বাসা থেকে বের হয়। সবাই বিরক্ত হলেও অভ্রকে নিদ্রাকে কে খুঁজে বের করতে হবে। নিশ্চয়ই ওর কোনো বিপদ হয়েছে না হলে ফোন বন্ধ করে রাখত না। সকালে আমি কেন যে এটা সিরিয়াসলি নিলাম না। এখন এই রাতের বেলা কোথায় খুজবো।

শশুর বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হয় অভ্র। না আজকে এখানে কেউ নাই। নিদ্রা চাচা চাচি বললো,

‘কি বলতেছো তুমি নিদ্রা আমাদের এখানে আসেনি। তুমি তোমার বউ নিয়ে গেল এখন আবার আমাদের এখানে এসে হাঙ্গামা করতেছ কেন?’

‘আমার বিশ্বাস আপনার‌ই নিদ্রাকে আবার তুলে এনেছেন না হলে আপনার ওই ছেলে কোথায় সে? সত্যি করে বলুন কোথায় এখন? নিদ্রা আমার স্ত্রী।ওকে নিয়ে টানা হাচরা করবেন না আমি মেনে নেবো না। এমন করলে আমি আপনাদের ও আপনার ছেলেকে পুলিশের হাতে দিবো।

‘কি কইলা তুমি আমাদের পুলিশের কাছে দিবা? এত বড় সাহস তোমার! বের হয়ে যাও আমাদের বাড়ি থেকে।আমাদের বাড়িতে এসে আমাদেরকেই হুমকি দিচ্ছো। নিজের বউ সামলে রাখতে পারো না আবার আমাদের দোষারোপ করছো। আমাদের মাইয়া না পাইলে উল্টা আমরা তোমার নামে কেস করে দিমু।’

‘ এই বাড়ি আপনাদের না মাথায় রাখবেন। নিজেরাই তো অন্যের বাসায় থাকেন আবার আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন? হাহাহা আপনি তারানোর কে? আমি নিদ্রাকে না নিয়ে বাসা থেকে এক পা ও নড়ব না বলে রাখছি।’

বলে অভ্র সোফায় বসে পড়ল। একটু আগে সারা বাড়ি তল্লাশি করে এসেছি কিন্তু নিদ্রাকে খুঁজে পায়নি। ও নিশ্চিত এই লোক গুলো জানে নিদ্রা কোথায় আছে। তারা না জানলেও তার ছেলে অবশ্যই জানে। সে বাড়ি ফিরা না পর্যন্ত আমি বাসা থেকে বের হবো না।
নিদ্রার চাচা চাচি চেষ্টা করেও অভ্রকে এক চুল পরিযান নড়াতে পারল না। এদিকে নিজের ছেলেকে ফোন করে যাচ্ছেন। নিদ্রা তো সত্যিই তার ছেলের কাছে আছে এটা তারা জানেন কিন্তু সেটা অভ্র কে বলতে পারবে না। ছেলে তার নিদ্রার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমাদের কথা শুনলে তো।
ফোন রিসিভ করছে না। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অভ্রকে দেখে যাচ্ছে।

.
বর্ষাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তূর্য কোথায় জানি চলে‌ গেছে। বর্ষা ফ্রেশ হয়ে শুয়ে ছিলো বিকেলে উঠে একবার তূর্য এর বাবার রুমে উঁকি মেরেছে। তিনি বিছানায় শুয়ে আছে। আর অদ্ভুত বিষয় বর্ষাকে উঁকি মারতে তিনি দেখে ফেলেছে। বর্ষা চমকে উঠে চলে আসে আবার ভাবে ধ্যাত উনি দেখলে তাতে কি হলো? উনি তো কথাই বলতে পারেন না। বর্ষা উল্টা ঘুরে বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। ঘুরতে ঘুরতে ছাদের দরজায় এসে থামে ইয়া বড় একটা তালা ঝুলানো।
বর্ষা উঁকি ঝুঁকি মেরে নিচে নেমে আসে। শান্তার দেখা মিলে,

‘ বউ মনি কই গেছিলেন?’

‘কোথাও না এমনি হাঁটছিলাম। আচ্ছা তোমার কাছে কি ছাদের চাবি আছে?’

‘না তো বউ মনি।’

‘ ছাদে কি তুমি গেছিলা আসার পর?’

‘ না তো একবার স্যার এর কাছে চাইলাম বলছে ওখানে যাওয়ার দরকার নাই।’

‘ ওহ।’

‘ ব‌উমনি আপনার আর স্যারের কি প্রেমের বিয়ে?’

বর্ষা বাগানের দিকে যাচ্ছিলো। পেছনে পেছনে শান্তা ও এলো‌ আর প্রশ্নটা করলো ওর কথা শুনে আমি ওর দিকে তাকালাম।

‘ কেন তোমার এমনটা মনে হলো কেন?’

‘জানিনা বউ মনি। কিন্তু আমার তাই মনে হয়। স্যার আপনারে কত্তো ভালোবাসে। আবার দুজনেই কি সুন্দর দেখতে একদম পারফেক্ট জুটি। তাই মনে হয় আপনাদের সম্পর্ক করে বিয়ে।’

‘তোমার ধারণা একদমই ভুল শান্তা। উনি আমাকে একটুও ভালোবাসে না। আর না আমাদের সম্পর্ক ছিল আগে। উনার সাথে আমার শত্র….
বলতে গিয়ে থেমে গেলো বর্ষা। শান্তা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

‘ না মানে বলছিলাম যে। আমাদের আগের চেনা পরিচিত ছিলো না। উনাকে আমার বাপি পছন্দ করে তাই বিয়েটা হয়েছে।’

‘ ওওওও’

বর্ষা হাঁটতে হাঁটতে একপাশে এসে দাড়ালো। ওর পাশে শান্তা ও আছে। ওর সাথে কথা বলছে। হঠাৎ শান্তা লক্ষ্য করলো দূর থেকে তূর্য ওকে ইশারা করে ভেতরে যেতে বলছে। শান্তা তা দেখে আর কোন দিক না তাকিয়ে চলে গেলো। তূর্য শব্দহীন পায়ে হেঁটে বর্ষার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আর দুহাতে জাপ্টে ধরে পেছন থেকে। বর্ষা আচমকা কারো স্পর্শ পেয়ে লাফিয়ে উঠে। কেঁপে উঠে ও। শুরু করে দেয় ধস্তাধস্তি করা ছাড়া পেতে। তূর্য বর্ষার কাঁধে থুতনি রেখে বলে,

‘ আরে এমন করছো কেন? তোমার হাজবেন্ড তোমাকে জরিয়ে ধরেছে শান্ত থাকো।’

স্পর্শ পেয়েই বর্ষা তূর্য কে চিনতে পেরেছে। ওর কথা শুনে রেগে বললো,

‘ ছাড়ুন আমাকে। আপনার মতন নির্লজ্জ বেহায়া লোক আমি জীবনে দেখিনি। এতবার বলার পরও আপনি আবার আমাকে টাচ করছেন।’

‘আমি যদি নির্লজ্জ না হয়ে তোমার মতো হয়। তাহলে আর এ জীবনে আমার বাবা ডাক শুনা হবে না। তাই আমাকে তো নির্লজ্জ হতেই হবে। প্রত্যেকটা পুরুষ ই তার বউয়ের কাছে নির্লজ্জ হয়ে থাকে বুঝেছ বর্ষা মনি।’

‘ বাজে কথা বন্ধ করে ছাড়ুন আমাকে।’

তূর্য ছারলো না। দশ মিনিট এর মতো ধরেই থাকলো। বর্ষা ওর হাতে চিমটি কেটে দিয়েছে তাও ছাড়েনি। ফট করেই ছেড়ে দিলো বর্ষাকে। বর্ষা ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালো। আর রেগে তাকালো তূর্য এর মুখের দিকে।

‘ তোমার হাতের নখ আগে আমার কাটতে হবে।’

বলেই হাতের চিমটি দেওয়া স্থানে ঠলতে লাগলো। বর্ষার রাগী দৃষ্টি তূর্য সেসব তোয়াক্কা না করে হেলেদুলে হেঁটে বাসায় ভেতরে ঢুকে গেল। বর্ষা ওরনা শক্ত করে চেপে ধরে ভাবছে যদি তূর্য কে একটা ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতে পারতাম। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ভাবছে আমার ঘুষিতে ওই শক্তিশালী খাম্বার কিছু হবে না উল্টা আমার হাত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_41

কমিশনারের মেয়ের বাথর্ডে পার্টিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে তূর্য। বিছানায় বসে আছে বর্ষা। ওর হাতে ফোন যেটা তূর্য কে দেখিয়ে হাতে নিয়ে বসেছে। কিন্তু ওর নজর তূর্য এর উপর। একটু পর পর আড়চোখে তূর্য এর দিকে তাকাচ্ছে।
তূর্য কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো কোর্ট পরেছে। চুল ঠিক করছে, পারফিউম দিচ্ছে। একদম নায়ক সেজেছে। বর্ষা বুঝতে পারছে না এতো সেজে গুজে যাচ্ছে কোথায় এই রাতের বেলা?
বিকেলে ওকে বিরক্ত করেই তুর্য বাসার ভেতরে এসেছে। বর্ষা সন্ধ্যা নাগাদ রুমে এসেছে। তখন তূর্য ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে ওর দিকে তাকিয়ে একটা কথাই বলেছে,

‘ রেডি হয়ে নাও।’

তূর্য এর কথা শুনে বর্ষা বলে, ‘ রেডি হয়ে নেব মানে কোথায় যাব?’

‘ গেলেই দেখতে পাবে।’

‘ আমি আপনার মত লোকের সাথে কোথাও যেতে রাজি নয়। আপনি একাই যান। আমি কোথাও যেতে পারবো না। আর আমাকে জোর করতে আসবেন না।’ বলেই ফোন নিয়ে টিপতে লাগল বর্ষা।

তূর্য ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে। আলমারি থেকে ড্রেস বের করে রেডি হতে শুরু করে দিয়েছে। 1 ঘন্টা যাবত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এটা-ওটা মাখছে। আমি যে এত সাজগোজ করি আমিও বোধহয় ওনার মত এতক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি না। বর্ষা ওর কান্ঠ কারখানা দেখছে খালি। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ভাব! এই ভাব, সৌন্দর্য দেখিয়ে যে কত মেয়ের জীবন সর্বনাশ ডেকে এনেছে আল্লাহ জানে। আমার মতো কতো মেয়েকে যে…

বর্ষার ভাবনা থেমে গেলো হাতের স্পর্শে। তূর্য এর সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাত শক্ত করে ধরেছে। ও কিছু বলার আগেই টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলো টেনে।আর হাতের মুঠোয় থাকা অ্যাশ কালারের শাড়িটা বর্ষার হাতে দিয়ে বলল,

‘ আধা ঘন্টা সময় দিলাম।তাড়াতাড়ি শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নাও। আর যদি না হও রেডি, যেভাবে আছে এভাবেই তুলে নিয়ে যাব। আমাকে তো চেনো। আমি যখন নিয়ে যাব বলেছি নিয়ে যাব‌ই। তাই যদি এভাবে যেতে না চাও তাড়াতাড়ি রেডি হও।’

বলেই হনহন করে রুমের বাইরে চলে গেলো। বর্ষা শাড়িটা ছুড়ে মারলো ফ্লোরে। ডান হাত টেনে ধরে ছিল তূর্য। বর্ষা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো। হাতটা লাল হয়ে গেছে ব্যথাও করছে। ওর চোখে জল চিকচিক করছে ওইভাবে আবার শক্ত হয়ে বসে পরলো বর্ষা।পরবে না শাড়ি ও। লোকটা পেয়েছে কি পুতুলের মত আমাকে নাচাবে নিজের ইচ্ছামত। আমি বর্ষা নাচবো না উনার কথায়। যাব না বলেছি যাব না। দেখি উনি আমাকে কিভাবে নিয়ে যায়। সব সময় জোরজবরদস্তি না করলে উনার পেটের ভাত হজম হয়না। এত নিকৃষ্ট আর খারাপ লোক দুনিয়াতে বোধহয় দুটো নেই। এই লোকটাকে কিনা আমার ভাগ্যে জুটতে হলো। আধা ঘন্টা পর তূর্য রুমে ঢুকে দেখে বর্ষা ফ্লোরে শাড়ি ফেলে রেখেছে। আর শক্ত হয়ে বসে আছে বিছানায়। ওর চোখের কোনে জল। সেদিকে তোয়াক্কা করল না তূর্য। ওর রাগ মাথায় উঠে গেলো বর্ষা এখনো রেডি হয়নি তা দেখে। তূর্য বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো বর্ষার দিকে। আর হুংকার দিয়ে উঠলো।

‘ আমার ভালো কথা তোমার ভালো লাগে না তাই না।ওকে নো প্রবলেম বর্ষা মনি তোমাকে কিভাবে সাইজ করতে হয় আমার জানা আছে।’

বলেই বর্ষার বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো তূর্য। বর্ষা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তূর্য কে আর বললো,

‘বিয়ে করে আপনার বাড়িতে এনে আমাকে টর্চার করছেন আমি মুখ বুঝে সহ্য করছি। এখন জোর করে আমাকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না ভালো হবেনা কিন্তু। আপনার যেখানে খুশি একা চলে যান। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।’

‘আমি যেহেতু বলেছি যেতে হবে। তাহলে তো তোমাকে যেতেই হবেই সেটা ইচ্ছায় হোক অথবা অনিচ্ছায়।’

বলতে বলতেই বর্ষার ওরনা টেনে ছুড়ে মারলো। জামায় হাত দিতে যাবে বর্ষা ছিটকে দূরে সরে যায়। দুহাত বুকের উপর রেখে কেঁদে উঠে,

“আচ্ছা আমি রেডি হচ্ছি আপনি বাইরে যান প্লিজ।’

‘অসম্ভব আমি কোথাও যাব না। রেডি হলে আমার সামনে হও। আর না হলে আমি তোমাকে জোর করে শাড়ি পরাবো। তখন চলে গিয়েছিলাম সময়টা কাজে লাগাওনি। আমার টাইম লস করছো তাড়াতাড়ি করো।’

‘এটা কি বলছেন আমি আপনার সামনে চেঞ্জ করবো। অসম্ভব প্লিজ দয়া করে আপনি বের হোন। আমি এবার আর জেদ করব না সত্যি রেডি হবো।’

‘নো এক্সকিউজ তাড়াতাড়ি করো না হলে কিন্তু আমি হাত চালাতে বাধ্য হব!’

বর্ষা অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে। তূর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো আর বললো,

‘ ওকে অন্যদিকে তাকিয়েছি। এবার করো তোমার দিকে আমি তাকাচ্ছি না।’

‘ আপ….

‘বেশি কথা বললে কিন্তু ঘুরতে আমার এক সেকেন্ড সময় লাগবে না! অনলি টেন মিনিটস দিলাম এর মধ্যে কাজ শেষ করবা।’

বর্ষা আর কথা বাড়ালো না। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো আর পেটিকোট ব্লাউজ পড়ে সে শাড়ি পরতে লাগলো। তাড়াতাড়িতে ও এখন কুচি তুলতে পারছ না কি এক মুশকিল। তূর্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। টেন মিনিট হতে পেছনে ঘুরে গেল। বর্ষা আঁচল বুকে দিয়ে কুচি তুলার চেষ্টা করছে কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে কুচি টা খুলে গেল। ও ব্যর্থ হয়ে আবার তোলার চেষ্টা করছে‌। বেখেয়ালিতে ওর আঁচলটা পড়ে গেলো তূর্য চমকে উঠলো। ঢোক গিলে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ইডিয়েট আচল ঠিক করো। একটা শাড়ি পড়তে পারো না ঠিকমতো যতসব।’

তূর্য এর আওয়াজ পেয়ে বর্ষার বুক ধক করে উঠল। তাড়াতাড়ি কুচি ফেলে আঁচল টেনে নিল। আর বললো,

‘ আমি ঠিক ভাবে পড়তে পারছি না এখন কি করব?’

তূর্য রাগী চোখে তাকালো বর্ষার দিকে। বর্ষার অসহায় মুখ দেখে আর কিছু বললো না। এগিয়ে আসতে লাগলো। আর নিজেই কুচি তুলতে লাগলো। বর্ষা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। তূর্য কাছে আসাতে ওর গলায় সমস্ত কথা আটকে গেছে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। হাত-পা কাঁপছে তুর্য কুচি করে ওর হাতে দিয়ে সরে দাঁড়ালো বর্ষা তাড়াতাড়ি তা গুজে নিলো।

.
গাড়ি থেকে নামতেই একটা বিশাল বড় বাড়ি চোখে পড়লো বর্ষার। ও তাকিয়ে আছে বাড়িটার দিকে। তূর্য এসে ওর হাত ধরলো শক্ত করে তারপর হাঁটতে লাগলো ভেতরের দিকে।
না চাইতেও এই খবিশটার সাথে বর্ষার পা মেলাতে লাগলো।যত ভেতরে যাচ্ছে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। গাড়ি থেকে নামতেই বুঝতে পেরেছে বর্ষা এটা বার্থডে পার্টি। তাই আর তূর্য কে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পড়ে নি। বর্ষা চুপচাপ তূর্য এর সাথে হাঁটছে। এত মাঝে কতো জনের সাথে যে কথা বলেছে তূর্য হিসেব নাই। বর্ষা শুধু তাকিয়ে দেখছে।
সবাই কথা বলার মাঝেই বর্ষার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কে ও।

তূর্য শান্ত ভঙ্গিতে বলেছে, ‘ শি ইজ মাই ওয়াইফ।’

কিন্তু বর্ষা একজনের সাথেও কথা বলেনি। মুখে কুলু পেতে ছিলো। সবাই ভাবি বলে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেছে। বর্ষা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। তূর্য তখন নিজেই কিছু বলে ম্যানেজ করেছে। আর কঠিন চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়েছে। অনেকে আবার বর্ষাকে চিনে যারা ওদের বৌভাতে ছিলো তারা দেখেই ভাবি বলে মুখে ফেনা তুলেছে কিন্তু বর্ষা নির্বিকার ভাবে ছিলো কথা আজ বলবে না বলে পর্ণ করেছে যেন।

আলতাফ মাহমুদ এর সাথে অনেকক্ষণ কথা বললো তূর্য তার মেয়ের বার্থডে পার্টি। তার মেয়ে জেসির দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। মেয়েটা পুতুলের মতো সুন্দরী। সাদা গাউন পরেছে দেখতে ঠিক শুভ্র পরী লাগছে। মুখে নজর কাড়া হাসি। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে হাসাহাসি করছে। বর্ষা হাঁ করে মেয়েটার সৌন্দর্য দেখছিলো। কিন্তু তা ব্যাঘাত ঘটায় একটা স্পর্শ। লাফিয়ে উঠে দেখে তূর্য ওর কোমর চেপে ধরেছে। বর্ষা চোখ বড় করে বলি,

‘ এখানে আবার আপনার অসভ্যতামি শুরু করে দিলেন? সরুন আমার থেকে দূরে থাকুন।’

তূর্য জেসির বাবার সাথে কথা বলছিলো বর্ষা সুযোগ বুঝে হাত ছাড়িয়ে একটু সরে দাঁড়িয়েছিলো। আর জেসি কে দেখছিলো। তখন এসব ঘটলো।

তূর্য ছারলো না ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো, ‘ কাকে দেখছিলে বর্ষা মনি?’

‘ এতো মানুষের মধ্যে ও আপনি এমন বেহায়াপনা বাদ দিবেন না?’

‘ নো, আমার ব‌উ তাই আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। তুমি এমন গভীর ভাবে কাকে দেখছিলে জেসি কে?’

তূর্য এর হাত কোমর থেকে সরিয়ে দিলো বর্ষা। তারপর রাগী চোখে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
‘ খবিশ।’

‘ হুম কতো সুন্দর দেখছেন একদম পুতুলের মতো।’

বলেই বর্ষার জেসির দিকে তাকালো। তূর্য ওর দিকে এগিয়ে এলো। এবার আর স্পর্শ করলো না।

‘ এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করার থ্রেট দিয়েছিলো জানো!’

বর্ষা চমকে তাকালো তূর্য এর দিকে। তার পর তাচ্ছিল্য করে বললো,

‘ আপনার এই মিথ্যে কথা আমি বিশ্বাস করবো অসম্ভব। দেশের সব মেয়ে আপনার জন্য পাগল এটাই তো বুঝাতে চান সব সময়।’

‘ বুঝানোর কি আছে। যা সত্যি তাই বললাম। আমার এতো নিজেকে নিয়ে বানিয়ে বলার দরকার হয় না।’

‘ এই মাত্র বললেন এখন আবার ভাব নিচ্ছেন আসলে আপনি….

‘ চুপ দেখো কে আসছে।’

বলেই সামনে তাকাতে বললো। বর্ষা সামনে তাকিয়ে দেখে জেসি ওদের কাছে আসছে। এসেই তূর্য এর দিকে তাকিয়ে হাসলো আর বললো,

‘ হাই আদিল, হাউ আর ইউ?’

‘ আই এ্যাম ফাইন।’

জেসি বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ শি..

জেসির কথা শেষ হ‌ওয়ার আগেই তূর্য বললো, ‘ আমার একমাত্র ব‌উ।’

জেসি এতোক্ষণ তূর্য এর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। এখন পূর্ণ দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকালো। বর্ষাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নিলো। তারপর তূর্য চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ তোমার পাশে একদম মানাচ্ছে না। তোমার পাশে আমার মতো কাউকেই মানায়। এই মেয়েকে তুমি কি দেখে পছন্দ করলে আদিল? গায়ের রং ও ফর্সা না। এই মেয়ের জন্য তুমি আমাকে ছাড়লে।’

জ্বলন্ত চোখে বর্ষা তাকিয়ে আছে জেসির দিকে। অগ্নিমূর্তি ধারণ করে একবার তূর্য এর দিকে তাকালো। রাগে ওর গা জ্বলে যাচ্ছে। এতো বড় অপমান করলো এই শাকচুন্নি মেয়েটা আমাকে। এতোক্ষণ এই জেসিকে নিয়ে যত ভাবনা ছিলো নিমিষেই সব চূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেলো। তূর্য আর জেসি কি যেন কথা বলছে। বর্ষা সেসব কানেও নিচ্ছে না। ওর কান দিয়ে তো গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। ওকে গায়ের রং নিয়ে খোটা দিলো মেয়েটা। এতো বড় সাহস। কখনো এই গায়ের রং নিয়ে ওকে অপমান করে নি কেউ। ওল্টা সবাই ওর গায়ের রংটি পছন্দ করে। ওকে কখনো কেউ কালো বলে নি। ফর্সা না বললেও কখনো কেউ কালো বলতে পারেনা। আমি অতোটাও কালো না উজ্জ্বল ফর্সা শ্যামলা আমার গায়ের রং। আমি এতেই হ্যাপি। কিন্তু এই মেয়ে আমাকে কি বললো আমাকে তূর্য এর সাথে মানায় নি। কাগজের মতো ফর্সা না তাই এইভাবে অপমান।তূর্য এর ধরে রাখা হাতের দিকে তাকালো বর্ষা। তূর্য আমার থেকে অনেক বেশি ফর্সা। ধবধবে ফর্সা হাতের সামনে আমার হাত কালোই লাগছে। বর্ষা তাও আফসোস করছে না। কিন্তু এই মেয়ের বলার জন্য বর্ষার রাগ আকাশ উঠে গেছে। বর্ষা কটমট করে মাথা উঁচু করলো। জেসি চলে যাচ্ছে।

বর্ষা ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘শাকচুন্নি, পেত্নী।’একটু জোরেই বলেছে কথাটা বর্ষা। তাই তূর্য সহ আশেপাশের অনেকে কথাটা শুনেছে আর চোরা চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়েছে।
বর্ষা সবাইকে তাকাতে দেখে থতমত খেয়ে চুপ করে গেলো। এই বাসায় আর একটা খাবার ও খেলো না।যেখানে ওকে অপমান করেছে সেখানকার কিছু মুখে তুলবে না ও। তূর্য ও জোর করলো না।

#চলবে…..
#চলবে…….
#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here