#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_42
‘ দেখ তূর্য তোর সাথে আমার দ্বন্দ্ব কাজের সূত্রে। তুই আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে ঝামেলা করতে পারিস না। চলে যা তুই। আমাকে আমার কাজ করতে দে। ও আমার ভালোবাসা। ওকে পেতে যা করতে হয় আমি করবো। এই ব্যাপার এ তুই নাক গলাতে পারিস না। আমি বুঝতে পারছি না তুই কেন আমকে বাধা দিচ্ছিস। এখানে ওর ওই সো কল্ড হাজবেন্ড থাকলে মানা যেতো। কিন্তু ও তো আমার হাতেই বন্দি ওর তো আসা সম্ভব না।তুই কেন এসেছিস বল। নিদুর সাথে তোর কি সম্পর্ক বল?’
তূর্য ওর কথার উত্তর না দিয়ে বললো, ‘ ঝামেলা না করে দুজনকেই ছেড়ে দে। আমি তোর সাথে এখন লড়তে চাইছি না।’
‘ তুই নিজেকে কি মনে করিস। আমি তোকে ভয় পায়। তুই বলবি আর আমি তোকে ভয় পেয়ে ছেড়ে দিব ওদের ইম্পসিবল। জান থাকতে এখানে থেকে ওদের নিতে পারবি না। আর না তুই বেঁচে ফিরতে পারবি। বাঁচতে চাইলে চলে যা না হলে আমার হাতে তোকে মরতে হবে।’
‘তাই তাহলে আয় মার আমাকে। তোর কথা শুনে আমি তো খুব ভয় পাইছি দেখ আমি কাপতাছি। টিটকারি মেরে হাসতে লাগলো তূর্য।
আরিয়ান রেগে তূর্য এর বুকে লাথি মেরে বসলো। তূর্য ছিটকে পরলো।
আরিয়ান চিৎকার করে উঠল, ‘ আজ তোকে আমি দেখাবো আরিয়ানের সাথে লাগতে আসার ফল কি হয়। আমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে এসে কতোটা ভুল করেছিস আজ বুঝতে পারবি।’
বলেই এগিয়ে এসে আরেকটা লাথি মারলো। তূর্য হাত উঠানোর সময় পাচ্ছে না। কারণ ওকে ধরে রেখেছে আরিয়ানের লোকরা। তূর্য এর লোকরা ভেতরে আসতে পারিনি ওদের বাইরেই আঁটকে রেখেছে।
‘ মুখ আজ দেখেই ছাড়বো আমি তোর। আজ এখানে এসে কতো বড় ভুল করেছিস হারে হারে টের পাবি তুই।’
বলেই মুখের দিকে হাত বাড়াবে তূর্য এবার আরিয়ানকে ঘুসি মেরে বসলো। আরিয়ান আর্তনাদ করে উঠলো। আরিয়ানের লোক গুলো তূর্য এর উপর ঝাপিয়ে পড়ল। একজন যতই শক্তিশালী হোক না কেন এতো জনের সাথে পেরে উঠে না। তূর্য ও হাঁপিয়ে উঠেছে। তখন দরজা ভেঙে শাওন ও পেছনে আরো কয়েকজন ঢুকে আর সবাই দক্ষ হাতে লড়তে লাগে। শাওন গিয়ে আরিয়ান কে ইচ্ছে মতো ঘুসি মারছে। তূর্য নিদ্রা ও অভ্র কে খুঁজতে লেগে পরে। একটা দরজার কাছে এসে লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভেতরে এসে হাত পা বাঁধা অবস্থায় অভ্র কে দেখে শরীর এ মারের দাগ। তূর্য অভ্র কে ছাড়াতে যেতে আরিয়ান এসে ওকে পেছন থেকে আঘাত করে।অভ্র বোকা চোখে দুজনের মারামারি দেখছে। তূর্য,আরিয়ান ও অভ্র ছারা আর কেউ নাই এই রুমে। আরিয়ান চাকু বের করে তূর্য এর পেটে লম্বা টেনে আঘাত করে তূর্যের পেট থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে।
আরিয়ান এই সুযোগে তূর্য এর কাছে গিয়ে ওর মাক্স টেনে সরিয়ে দেয় আর তূর্য কে দেখে অভ্র ও আরিয়ান দুজনেই থমকে যায়।
আরিয়ান কিটকিট করে হেসে উঠে বলল, ‘ ও মাই গড এ তো দেখছি আইনের কর্মকর্তা। একদিকে সত্যবাদী অফিসার আরেকদিকে সন্ত্রাসী। তুই তো ভালো খেলোয়াড় রে।’
বলেই কঠিন মুখ করে তূর্য এর আঘাত করা জায়গায় আঘাত করে। শাওন এসে এসব দেখে ব্রো বলে চিৎকার করে উঠল। তূর্য মাক্স আবার পরে আরিয়ানের নাক বরাবর ঘুসি মারে। আরিয়ান দেয়ালে জোরে বারি খায়। আর চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসে আরিয়ানের। জ্ঞান হারানোর আগে তূর্য কে একটা কথা বলে,
‘ নিদুর সাথে তোর কি সম্পর্ক কেন ওকে বাঁচালি আমার হাত থেকে কি স্বার্থ এতে তোর।’
তূর্য আরেকটা আঘাত করে ওর মাথায় ও ঠলে পরে ফ্লোরে।
তূর্য ও পেটের আঘাতে নিস্তেজ হয়ে শরীর এর ভার ছেড়ে দের। শাওন ওকে জাপ্টে ধরে।
তূর্য ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
নিদ্রা আর অভ্রর নিখোঁজ হওয়ার নিয়ে থানায় জিডি করেছে অভ্রর বাবা মা। এটা জানতে পেরেই তূর্য যা বুঝার বুঝে গেছে। তারপর ই বেরিয়ে ছিলো। শাওন তূর্য কে নিয়ে তূর্য এর আরেক বাসায় চলে আসে আর ডাক্তারকে রাস্তায় থাকতেই কল করেছিলো তাই তিনি চলে এসেছে। অভ্র ও নিদ্রাকে ওদের লোক বাসায় পৌছে দিবে বলে। আরিয়ানের লোক আহত নিদ্রাকে একটা রুম বন্ধ করে রেখেছিলো। নিদ্রা অভ্র কে দেখেই জরিয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। অভ্রর শরীরে অনেক আঘাত ওই আরিয়ান করেছে তাই নিদ্রা এমন শক্ত করে জড়িয়ে ধরাতে আর্তনাদ করে উঠে। নিদ্রার চোখের পার কালো হয়ে গেছে দুই দিনে।
‘ কি হয়েছে তোর? নিদ্রা অভ্রকে ছেড়ে বলে।
‘ আগে বাসায় চল পরে এসব জিজ্ঞেস করিস!’
বলেই বেরিয়ে আসে এই নরক থেকে।
এদিকে বর্ষা গুটিগুটি পায়ে তূর্য এর বাবার রুমে উঁকি দিচ্ছে। আজ কি মনে করে যেন ভেতরে গেলো। লোকটার জন্য মায়া হলো। দুই মিনিট থেকেই চলে এসেছে। কেমন জানি অস্থির লাগছে ওর কোথা ও এক দন্ড দাঁড়িয়ে শান্তি পাচ্ছে না। সারা বাসা টইটই করে ঘুরে রান্না ঘরে এসে ঢুকলো। শান্তা রান্না করছে। সারাটা বাসা কেমন ফাঁকা কেউ নাই যেনো। কেবল নয়টা বাজে। খাবার ও খেতে ইচ্ছে করছে না। রুমে এসে বই খুলে বসলো। কিন্তু পরতেই ভাল্লাগে না। ফোন হাতে নিলো বাপি কল করে দুজনের সাথে কথা বলে নিলো। এখন খিদে লাগছে খাবার খেতে টেবিলে এসে বসলো। রান্না ঘরে থেকে ফিসফিস করে কথার আওয়াজ আসছে খাওয়া রেখে গিয়ে দেখলো কাছের মেয়ে শান্তা। আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো আর বললো,
‘ বউমনি কিছু লাগব। আমারে ডাকতেন কষ্ট করতে গেলেন কেন?’
বর্ষা ওর ভয় পাওয়া চেহারা দেখে সন্দেহ করলো আরো বেশি। কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ও করলো না। চলে এলো। এগারোটা বেজে গেছে বই রেখে বিছানায় শুয়ে ভাবছে তূর্য এখনো আজ আসছে না কেন? প্রতিদিন তো চলে আসে। ভেবে নিজেই চমকালো। ওই নিষ্ঠুর লোকটার কথা আমি ভাবলাম কেন? ছিঃ উনি আসলে আসুক না আসলে না আসুক আমার কি? উনি এখনো আসেনি আমার ই তো ভালো। প্রতিদিন জোর করে জরিয়ে ধরে ঘুমানো কিস করা এসব থেকে আমি নিস্তার পেলাম। মনকে এসব বলে বর্ষা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু হায় কপাল ঘুম আসছে না। সারা বিছানায় গড়াগড়ি খেয়েও ঘুম চোখে আনতে পারলো না। কেমন জানি খালি খালি লাগছে। ঘুম আসছে না। বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো বর্ষা। যাকে সব চেয়ে ঘৃণা করে। যার কাছে থাকলে নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হয় এখন কিনা তার অনুপস্থিতিতে তাকে তীব্র মিস করছে ছিঃ
নিজের উপর রাগ হচ্ছে। তূর্য এর বুকে ঘুমাতে ঘুমাতে বদ অভ্যাস হয়ে গেছে দেখছি।
নিজেকে কঠিন ভাবে বকে শুয়ে পরলো। তাও ঘুম হলো সারা রাত জেগে পার করতে হলো। সকালের দিকে ঘুমিয়ে ছিলো। সকালে উঠে তূর্য কে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো। না পেয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তূর্য কে মিস করলেও পাত্তা দিলো না। দুইদিন তূর্য বাসায় এলো না। না চাইতেও বর্ষা ওই নিষ্ঠুর পাষাণ লোকটাকে মিস করেছে। আবার সাথে সাথে মনকে ধমক দিয়ে বলেছে,
‘ ছিঃ বর্ষা ওই লোকটাকে তুই মিস করছিস কি করে যার জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে কেন মিস করছিস? তার কিছু হলে তোর কি কিছু না তোর। লোকটা মরে গেলে তো তুই বেঁচে যাবি!’
তূর্য এর মরার কথা ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠলো ওর। আমি বোধহয় একমাত্র স্ত্রী যে নিজের স্বামীর মৃত্যু কামনা করলাম। যতই খারাপ হোক তার মৃত্যু আমি চাইতে পারি না। নিজেকে বকে আবার তূর্য এর সুস্থতা কামনা করলো বর্ষা।
যে মানুষটার থেকে দূরে থাকতে চেয়ে আজ মানুষটা দুইদিন চোখের আড়াল হতেই বর্ষা তার জন্য ছটফট করছে।
তূর্য বাসায় এলো দুইদিন পর রাতে বর্ষা বই খুলে তখন উদাস হয়ে তূর্য এর কথাই ভাবছিলো। ধ্যান ভঙ্গ হলো ঘাড়ে কারো কোমল স্পর্শ পেয়ে। ভয় পেয়ে যায় বর্ষা চিৎকার করতে যাব কিন্তু পরিচিত একটা কন্ঠ স্বর শুনে চুপ করে যায় বর্ষা।
‘ বর্ষা মনি।’
তূর্য এর কথা শুনে কেঁপে উঠে বর্ষা। বর্ষা তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে তূর্য এর দিকে তাকায়। আর ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
‘ আপনি দুইদিন বাসায় আসেন নি কেন? কোথায় ছিলেন? জানেন আমি কতো চিন্তা করেছি।’
উত্তেজিত হয়ে কি থেকে কি বলে দিয়েছে বর্ষা নিজেও জানে না। তূর্য বর্ষার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বর্ষা ওর জন্য চিন্তা করেছে ভাবা যায়। কানে ভুল শুনলো না তো।
তারপর কি যেন ভেবে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।
তূর্য বর্ষার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললো, ‘ আমার বউ আমার জন্য চিন্তা করছে। এটা আমি কি শুনলাম বর্ষামনি! কানে ভুল শুনলাম না তো?’
বর্ষা কথা বলে নিজেই চমকে উঠেছে। উত্তেজিত হয়ে কি বলে ফেললো আল্লাহ।
‘ ছাড়ুন আমাকে অসভ্য বাজে লোক।’
‘ বর্ষা মনি কি এই অসভ্য বাজে লোকটার প্রেমে পরে গেলো নাকি? ভালোবেসে ফেললে এখন কি হবে?’
বলতে বলতে বর্ষার কানে চুল গুজে দিলো। বর্ষা ধাক্কা দিয়ে তূর্য কে সরিয়ে নিলো নিজের থেকে আর বললো, ‘ আমি আপনাকে ভালোবাসবো অসম্ভব। একটু চিন্তা করেছি সেটা ভালোবাসা ভেবে ভুল করবে না। মানুষ হিসেবে চিন্তা করেছি এছাড়া আপনার কিছু হলে আমার কিছু যায় আসে না।আপনি মরে গেলেও আমার চোখ থেকে জল বের হবে না উল্টা আমি খুশি হবো। আপনার মতো চরিত্রহীন লম্পট লোকের জন্য আমি চিন্তা ও করবো না আর কখনো ।’
রাগে গজগজ করতে করতে বর্ষা বেরিয়ে এলো রুম থেকে। আর তূর্য হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বুকে ব্যথা করছে ওর। বর্ষা বুকে ধাক্কা দিয়েছে তাই আঘাণ পাওয়া স্থানে আবার আঘাত পেয়েছে তূর্য। কিন্তু তার থেকেও বেশি আঘাত করেছে বর্ষার কথায়। শার্ট খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো ব্যান্ডেজ এর ভিতরে থেকে ব্লিডিং হচ্ছে। দরজার আড়ালে থেকে বর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখলো।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_43
নিচে এসে শান্তার পাশে বসে ছিলো বর্ষা। অনেকক্ষণ পর রুমে এসে দেখলো তূর্য বিছানায় শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। ঘনঘন শ্বাস ফেলছে। বর্ষা দরজার আড়ালে উঁকি মেরে দেখছে। ঘুমিয়ে পরেছে ভেবে ধীরে শব্দ হীন পায়ে এগিয়ে গেলো বর্ষা তূর্য এর দিকে। কাছে এসে গভীর ভাবে তাকালো তূর্য এর মুখের দিকে। কি নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। কে বলবে এই লোকটা কতোটা জগন্য নিংস্র হয়ে উঠে জাগ্রত অবস্থা। আর এখন ইনোসেন্ট মুখ করে ঘুমিয়ে আছে।
বুকের দিকে চোখ যেতেই তখনকার ব্যান্ডেজের কথা মনে পরলো বর্ষার। বুকের কাছে দুটো বোতাম খোলা তাতে ভেতরের ব্যান্ডেজ উঁকি মারছে। এই ব্যান্ডেজ কেন!উনাকে আঘাত ই বা কে করলো! এই দুদিন ছিলোই বা কোথায়!
বুকে হাত দিয়ে ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠেছিলো তখন তূর্য। ব্লিডিং হচ্ছিল উনি কি তা নিবারণ করেছে? পিন কালারের শার্ট পরনে তূর্য এর। বুকের কাছে চোখ আটকে যায় লাল হয়ে আছে।কিছু একটা ভেবে বর্ষা তূর্য এর পাশে বসে পরে আর কাঁপা হাতে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে। শার্ট সরিয়ে বুক উন্মুক্ত করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তূর্য এর ব্যান্ডেজের সাদা জায়গা লাল টকটকে হয়ে আছে। এখনো ব্লিডিং হচ্ছে। আতকে উঠে বর্ষা। দিশেহারা হয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে রক্ত পরিষ্কার করতে লাগে। এই অবস্থায় উনি শুয়ে আছে কি করে। লোকটা আসলেই পাগল দেখছি। তূর্যের রক্ত মাখা ব্যান্ডেজ খুলে ফেলল বর্ষা। নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। অদ্ভুত বিষয় এর মাঝে তূর্য একটুও নড়ে না বর্ষা ভয় পেয়ে তূর্য কে নিচু স্বরে ডাকতে লাগে। নো রেসপন্স জোরে ডাকতে লাগে তাও কাজ হয় না। তার মানে জ্ঞান হারিয়েছে। ভয়ে বর্ষার হাত পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে। কি করবে এখন? যাকে একটুও সহ্য করতে পারে না তার জন্য বর্ষা কাঁদছে এটাও সম্ভব। বর্ষা কি ভেবে যেন দৌড়ে পাশের রুমে থেকে ডাক্তারকে ডেকে আনে। তিনি তূর্য এর বাবার ডাক্তার তার কথা মনেই ছিলো না। তিনি এসে তূর্য কে দেখে বলেছে। বুকে গভীর ক্ষত হয়েছিলো।সে জায়গায় আবার আঘাতের জন্য জ্ঞান হারিয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে খুব তারাতাড়ি ই জ্ঞান ফিরবে। রাতে জ্বর আসতে পারে বর্ষাকে ভয় পেতে মানা করলো। ডাক্তার ব্যাথার ইনজেকশন পুশ করে দিলো। তারাতাড়ি তিনি চলে গেলো।
বর্ষা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে। শুকনো মুখটা দেখে ওর বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে। এই নিষ্ঠুর লোকটার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে কেন? তার যা খুশি আমার কিছু যায় আসে না। কিচ্ছু না। উনি যদি মরে যায় তাহলে তো আমার ই ভালো আমি ঝন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবো। নিজের মনে কথা গুলো আওড়ারে আওড়াতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এই নিষ্ঠুর লোকটাকে নিয়ে একদম ভাববো না। কিন্তু বললেই কি হয় বর্ষা ভাবতে না চাইলেও ভাবনা এসে যায় অজান্তেই।
শান্তা একবার এসে খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে বর্ষা খাবে না বলে দিয়েছে। বারান্দায় একাই জোসনা বিলাস করতে লাগলো। হঠাৎ কারো আর্তনাদে হতচকিত উঠলো বর্ষা। রুমে থেকে আসছে বর্ষা তূর্য এর কথা ভেবে ছুটে আসলো।
একটু আগেই তূর্য কে নিয়ে কতো কথাই না ভাবছিলো বর্ষা কিন্তু এখন সেই তূর্য এর গুঙ্গরানি শুনে সব ভুলে ছুটে এলো। তূর্য এর কাছে এসে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি হয়েছে আপনার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলুন।’
তূর্য বিরবির করে কিছু বলছে বর্ষা বুঝতে পারছে না
তাই তূর্য এর মুখের কাছে ঝুঁকে কান পেতে শুনতে থাকে। তূর্য পানি চাচ্ছে। বর্ষা গ্লাসে পানি এনে তূর্য কে খাওয়াতে মাথার নিচে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করে খাওয়াতে লাগে। তখন তূর্যকে স্পর্শ করতে বুঝতে পারে তূর্যের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
তূর্য পানি বেশি খেতে পারলো না। একটু খেয়েই পরে রইলো। বর্ষা কপালে হাত দিয়ে চেক করে দেখলো আগুনের মতন গরম হয়ে আছে শরীর। ডাক্তার বলেছে জ্বর আসা স্বাভাবিক। কিন্তু এতো জ্বরে এইভাবে ফেলে রাখাটা মন সায় দিচ্ছে না বর্ষার মন। তূর্য দূর্বল চোখে একবার তাকিয়ে ছিলো। চোখের সামনে বর্ষাকে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে থাকতে দেখেছে। বর্ষার চিন্তিত মুখ দেখে জ্বরের ঘোরেই মনে মনে হাসে তূর্য।
বর্ষা হঠাৎ মনে পরে ওর জ্বর হলে আম্মু মাথার কাছে বসে ওর মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিতো রাত জেগে। শরীর মুছে দিতে এতে কাজ হতো। বর্ষার তাই করার কথা ভেবে এক টুকরা কাপড় ভিজিয়ে আনে। আর বাটিতে করে পানি এনে তূর্য এর ডান পাশে বসে জলপট্টি দিতে লাগে। এর মাঝে তূর্য দুইতিন বার তাকিয়েছে। বর্ষা সেসব এ তোয়াক্কা করেনি। ঘুমে তাকাতে পারছে না বর্ষা তবুও ওইভাবেই তূর্য এর কপালের জলপট্টি দিতেই আছে। বসে থাকতে থাকতে বর্ষা ক্লান্ত হয়ে যায়। তূর্য অনেক ক্ষণ ধরে তাকায় না। ঘুমিয়ে পরেছে ও। বর্ষা ওইভাবেই সারারাত বসে রইলো।শেষ রাতে তূর্য এর জ্বর কমে এসেছে। ও এখন ঘুমিয়ে আছে। সকালের মিষ্টি এক ফালি সোনালী রোদের আলো চোখে পরতেই তূর্য এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য এর আলো। বুকের ব্যাথা কম লাগছে তূর্য এর কাছে। ও আস্তে করে চোখ মেলে তাকায়। শরীর ভাল হয়ে আছে, দূর্বল লাগছে। সাথে ডান হাতের বাহু ব্যাথা করছে। চোখ মেলেই ডান দিকে তাকাতেই চমকে উঠে। বর্ষা তূর্য এর ডান হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। কাল ঘুমের ঘোরে ওকে এখানেই বসে সেবা করতে দেখেছে তূর্য কাল অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে ও কিছু বলতে পারিনি। নিজের জন্য এতো চিন্তা আর সেবা করা দেখে তূর্য এর ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি আসলো। এলোমেলো ভাবে চুল গুলো বর্ষার গালে লেপ্টে আছে। বাম হাত বাড়িয়ে তূর্য চুল সরিয়ে কপালে অধর ছুঁয়ে দিলো। সাথে সাথে বর্ষার ঘুম ভেংগে গেলো আর ধরফরিয়ে উঠে বসলো।
তূর্য এর কথা মনে হতেই তূর্যের কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করতে লাগলো। এখন কম অনেকটা জ্বর। তূর্য যে জেগে ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে সেদিকে বর্ষার খেয়াল ই নাই। হঠাৎ তূর্যের চোঁখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো বর্ষা। তূর্য জেগে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। বর্ষা ছিটকে উঠে গেলে বসা থেকে।
আর তারা তারি রুমে থেকে বেরিয়ে যায়।
সকাল সকাল শাওন এসে হাজির। এসেই তূর্য এর কাছে বসে আছে। তাই বর্ষা বেঁচে গেছে। কালকে নিজের পাগলামীতে নিজেই অবাক। তূর্য ঠিক চেপে ধরবে আর বলবে,
আমাকে না সহ্য করতে পারো না। আমি মরি বাঁচি তাতে তোমার কিছুই না তাহলে কালকে এতো সেবা যত্ন কেন করলে?
তখন কি উওর দিবো আমি। শান্তা কে দিয়ে তূর্য এর জন্য সূ্্যপ আর শাওন এর জন্য কফি পাঠিয়ে দেয়। আমি মুখোমুখি হতে না চাইলেই কি শান্তা এসে জানায় তূর্য আমাকে জরুরি তলব করে ডেকেছে। আমি কাচুমাচু মুখ করে রুমে আসি।
‘ আমাকে ডেকেছেন কেন?’
আমার কথায় দুজনের কথা ভঙ্গ হয়। তূর্য আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ শাওনের সাথে আজ কলেজে যাও। অনেকদিন তো কলেজে যাওয়া হয় না।’
তূর্য এর কথা শুনে চোখ তুলে তাকালো। তূর্য কে এই অবস্থায় রেখে যাওয়ার ইচ্ছা করছে না কিন্তু সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না।
‘ আমি একাই যেতে পারবো। যারতার সাথে যাওয়ার দরকার নাই।’
‘ একা তো আমি ছারবো না জানোই। তাই যেতে চাইলে রেডি হয়ে নাও। শাওন তোমাকে পৌছে দিবে। আসার আগে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো চলে আসবা।’
‘ উনার সাথে আমি যাব না।”
‘ জেদ করো না বর্ষা। না হলেই এই শরীর নিয়েই আমাকে বের হতে হবে।’
‘ আপনারা আমাকে একা কেন ছাড়ছেন না আমি একা গেলে সমস্যা কোথায়? খাঁচায় বন্দী পাখির মতো টর্চার কেন করছেন আমার সাথে?’
‘ওকে যাওয়ার দরকার নাই। তুমি আর লেখাপড়া না করলেও আমার প্রবলেম নাই। আমি তোমাকে এইভাবেই মেনে নিবো।’
শাওনকে একটুও সহ্য করতে পারে না বর্ষা। দুজনের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিচে চলে এলো।
রাগে গজগজ করতে করতেই বর্ষা আলমারি থেকে ড্রেস নিয়ে রেডি নিচে নেমে গেল। বর্ষা নিচে এসে শান্তা কে খুব করে বলে গেলো তূর্য এর দিকে নজর রাখতে ও তারাতাড়ি ই চলে আসবে।
শাওন বর্ষার যাওয়ার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে তূর্যের দিকে অসহায় মুখে তাকিয়ে বললো,
‘ ব্রো ভাবি তো আমাকে তোমার থেকেও বেশি ঘৃণা করে দেখছি।’
‘ হুম কারণ ওর কাছে প্রথম ঠকবাজ তো তুই তাই।’
‘ ভয়ে আছি ভাবির জন্য না আমার প্রেম ব্রেকাপ হয়ে যায়।’
‘ হা হা হা তারাতাড়ি যা।’
শাওন চলে গেলো।
বর্ষা সারা রাস্তা মুখটা গম্ভীর করে রাখলো। কলেজে কাছে নামিয়ে শাওন চলে গেলো। তার আগে বাই ভাবি বললো। কিন্তু বর্ষা ফিরেও তাকালো না। ফ্রেন্ডরা সবাই ওকে দেখে এতোদিন আসেনি কেন জিজ্ঞেস করতে লাগলো। মিথ্যা কথা বানিয়ে বললো বর্ষা। তিশার সাথে বসে বর্ষা আনমনে বললো,
‘ তিশু একটা কথার জবাব দিবি!’
‘ কি কথা বল? তোর কি মনে খারাপ চোখ গুলো ও ফুলে আছে রাতে ঘুমাসনি?’
তিশার কথার জবাব না দিয়ে বললো বর্ষা, ‘ আচ্ছা ধর একজন কে আমি খুব ঘৃণা করি। যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে অপছন্দ করি, এক মূহুর্ত ও তাকে আমি সহ্য করতে পারিনা। তাকে দেখলেই আমার রাগ উঠে। তার থেকে সব সময় পালাতে চাই। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেলো। আগের মতো তাকে আমি ঘৃনা করতে পারছি না। আগের মতো আর রাগ ও হয়না। আগে যার মৃত্যু কামনা করতাম এখন তার অসুস্থতায় আমি কষ্ট পায়। তাকে অসুস্থ হতে দেখলে দিশেহারা হয়ে পরি তাকে সুস্থ করতে। আনমনেই তার জন্য ভালো দোয়া করি এমনটা কেন হচ্ছে আমার সাথে বল না প্লিজ।
তিশা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে উওর এর আশায় তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ ও বললো, ‘ হায় হায় বলিস কি? এই তোর না বিয়ে হয়ে গেছে। এমন কার জন্য হয় তোর। জামাই রাইখা কারে ভালোবাসলি তুই? সত্যি কইরা বল। তোর জামাই কত্ত হান্ডসাম তাকে এই ভাবে ঠকালি।’
‘ হোয়াট কি সব বলছিস? ভালোবাসা আসবে কোথা থেকে আমার কথা শুনে কি তোর এটাকে ভালোবাসা মনে হচ্ছে ফালতু।’
‘ মনে হওয়ার কি আছে। আমি তো সিউর তুই তোর ওই অসহ্য লোকটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। এখন কথা হচ্ছে এই লোকটা কে?’
বর্ষা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিশার দিকে। তারপর তিশার সাথে ঝগড়া করলো। তিশা ওর ঝগড়ার কিছু বুঝলো না। বর্ষা রাগ করে চলে গেলো ক্লাসে। তিশা এটা কি বললো ও নাকি ওই অসভ্য লোকটাকে ভালোবাসে অসম্ভব এটা হতেই পারে না। উনাকে আমি শুধু মাত্র ঘৃণা করি।
#চলবে……
#চলবে…..