তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -২২+২৩

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam

সোহা দায়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে আর বকবক করে চলেছে।অবশ্য দায়ান নিজ হাতে খেতে পারলো না।এটিটিউড দেখিয়ে হাত থেকে প্লেট নিয়ে ও।সেটার জন্য ও মাঝে মাঝে খোঁচা দিয়ে চলেছে।

দায়ান নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছে, রিল্যাক্স দায়ান।একদম রা’গবিনা।এই মেয়েটা তোকে রাগানোর জন্য এমন করছে। আমার সাথে মজা নিচ্ছো তাই না।নিতে থাকো।জাস্ট একটু হাতটা ভালো হতে দাও তারপর দেখো আমি কি করি।

সোহা সবটুকু খাবার দায়ানকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়।তারপর খুব যত্ন করে মুখটা ওড়না টা দিয়ে মুছিয়ে দেয়।এখন তেমন জ্বর না থাকায়,কম্বল টা আলমারিতে ভাজ করে উঠিয়ে রাখে।একটা পাতলা চাদর এনে দায়ানকে বলে,,,,,
— শুয়ে পরুনতো দেখি।

— মাত্র তো ঘুম থেকে উঠলাম।এখন ঘুম আসবে না।

— ঘুম আসবে না মানে? ঘুমের চৌ’দ্দ ঘু’ষ্ঠি আসতেও বাধ্য।

— তুমি কি এখন ঘুমকে ডেকে নিয়ে আসবা? বললামতো ঘুম আসবেনা।আমি এখন ল্যাপটপে একটু অফিসের ই-মেইলের গুলো চেক করবো।ল্যাপটপ টা আলমারির প্রথম তাকে রাখা আছে দেওতো।

— এএ এই অসুস্থ শরীর নিয়ে উনি কাজ করবেন একদ’ম চলবেনা।ঘুমিয়ে পরুন।ঔষধের সাথে না ঘুমের ঔষধ ও আছে ওকে? এবার শুয়ে পরুনতো।

— সোহা তুমি কি শুরু করেছো বলোতো?

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে নিজেই দায়ানকে ধরে বালিশে শুইয়ে দেয়।তারপর কাঁথা টেনে শরীরে দিয়ে দেয়।নিজে দায়ানের মাথার পাশে বসে পরে। খুব সুন্দর ভাবে দায়ানের মাথার চুল গুলো টেনে দিতে থাকে।

দায়ান ঔষধের জন্য সাথে সোহার হাত বুলিয়ে দেওয়ায়।আবারো ঘুমিয়ে যায়। সোহা দায়ানকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।

মূহুর্তের মধ্যেই সোহার হাস্যে’জ্জ’ল মুখে নেমে আসে বিষা’দের ছায়া।

জানা নেই ভবিষ্যতে কি হবে।দায়ানের জ্বরের ঘোরে বলা কথা গুলো এখনো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দায়ানের প্রতি একরাশ অভিমান হয়েছে।দায়ানকে বুঝতে দেয়নি। এখন যতোই অভিমান করি কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।আরো বি’গ’ড়ে যাবে।

দায়ানের অতীত সম্পর্কে দায়ান নিজে থেকে না বললে আমি জিগ্যেস করবোনা।আমি চাই উনি নিজ থেকে উনার অতীত আমাকে জানাক।ততোদিন আমাকে ধৈর্য ধরতে হবে।
তারপর সোহা দায়ানের রুম থেকে বেরিয়ে দরজাটা একটু চাপিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

——————————————–

সকাল সকাল আজ পরিবারের সবাই একসাথে খেতে বসেছে। অবশ্য পরিবারের সবাই বললে ভুল হবে।নোহা বাদে সবাই।
নোহা এই পরিবারের সদস্য হয়ে উঠতে পেরেছে কিনা কে জানে।

সকালে সবাই এক সাথে খেতে বসে।নোহা তাদের খাবার বেড়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত। কেউ একবার বলবেও না যে তুমিও বসে পরো একসাথে খেয়ে নেও।পরে একা একা খাবে ভালো লাগবে না।

অবশ্য নোহা আশাও করে না।এতোদিনে যখন কেউ বলেনি।ভবিষ্যতে বলবে এটাও নোহা আশা রাখেনা।

মাঝে মাঝে সকালে সবাই খেতে বসলে।নোহা বেড়ে দেওয়ার সময় ওমির দিকে তাকায়।শশুর শ্বাশুড়ি নাই বলতে পারে। কিন্তু ওমি উনিতো একবার মুখের কথাটাও বলতে পারে।

কোনোদিন বলেনি।খাবার টেবিলে নোহাকে হু’কু’ম দিতে ব্যস্ত এটা এগিয়ে দেও।ওটা এগিয়ে দেও। অথচ মুখ তুলে একবার তাকিয়ে ও দেখেনা।মেয়েটা ওমির থেকে একটু কেয়ার একটু সাপোর্ট পাবার জন্য তৃ’ষ্ণার্ত কা’কের মতো ওমির পানে ওমির দিকে তাকিয়ে রয়।

ওমির থেকে কিছু আশা করা। আর কোনো জড় বস্তুর থেকে আশা করা দুইটাই সমান।

খাবার টেবিলে চামচের টুংটাং আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই।মাঝে মাঝে নোহাকে বলা হচ্ছে এটা ওটা দিতে।

এই একটা সময়ই নোহা কাজ করলেও শান্তি তে থাকে।শ্বাশুড়ি মায়ের ঝামেলা সহ্য করতে হয় না।শ্বশুর যখন বাড়িতে থাকে শাশুড়ি তখন দুধে ধোয়া তুলসি পাতা।

শ্বশুর সাংসারিক ব্যাপারে উদাসীন হলেও।যদি সংসারের অশান্তির কথা জানতে পারে,,তাহলে শ্বাশুড়ি কেই ঝাড়বে।নোহা শ্বশুর কে এই মহিলা ভ’য় পায়। তাই চুপচাপ থাকে।

খাবার টেবিলের নীরবতা ভাঙে নোহার শ্বশুরের কথায়।

— ওমি ঐদিকে সব ঠিকঠাক?

— জ্বি বাবা।

— প্রচারণা কেমন চলছে?

— ভালোই।তবে আর কিছু টাকা পয়সা লাগবে।লোকজন কে দিতে হবে। নয়তে এরা মন দিয়ে কাজ করবেনা।

— টাকা লাগলে টাকা নাও।প্রচারণা বাড়িয়ে দাও।বাড়িতে বাড়িতে যাও।ইলেকশনের কিন্তু বেশিদিন বাকি নেই।

— হুম বাবা।

— হুম বললে চলবে না।আমি ফলাফল চাই।এইবারো যেনো আমার পজিশন ঠিক থাকে।

— ওকে।

কথাগুলো বলেই নোহার শ্বশুর খাওয়া শেষ করে উঠে যায়।ওমি আর ওর মা এখনো খেয়ে যাচ্ছে।

এতোদিন নোহা যেই কাজটা করেনি আজ তাই করলো।শ্বশুর উঠে যাওয়ার পরপরই নোহা টেবিলে খেতে বসে পরলো।

ওমি একবার নোহার দিকে তাকায়।কিন্তু কিছু বলেনা নিজের খাওয়ায় আবার মন দেয়।

নোহার শাশুড়ী কটমট করে নোহার দিকে তাকায়।

আস্তে করে বলে,,,এই মেয়ে আমাদের খাবার শেষ না হতেই তুমি বসে পরলে কেনো খাবার খেতে?

আপনাদের খাওয়া তো প্রায় শেষের দিকে মা। তাই ভাবলাম আমিও বসে পরি।

শেষের দিকে শেষ তো হয়নি।

ওমি ততক্ষণে খাওয়া শেষ করে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দেয়।

তোমার সাহস দিন দিন বেড়ে চলেছ দেখছি।

সাহস আমার আগে থেকেই ছিলো কিন্তু দেখাই নি।

বড্ড বার বেড়েছো তুমি।

কথা বাড়াবেন না মা।শ্বশুর নিশ্চয়ই নিজের ঘরের অশান্তি সকালে কাজে যাওয়ার সময় সহ্য করবেন না।আর কার উপর রাগ ঝাড়বেন আপনি নিশ্চয়ই জানেন?

নোহার শাশুড়ী রা’গে গ’জ গ’জ করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়।
নোহা উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মন দেয়।

————————————

দেখতে দেখতে দুই দিন কেটে গেছে।দায়ানের হাতের এখনো তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।সেলাই করা জায়গা শুকাতে টাইম লাগবে।

এই দুই দিন দায়ানের শরীরে হালকা জ্বর ছিলো।তবে এখন আর নেই।হাতে অবশ্য হালকা ব্যাথা আছে।

সোহাই দায়ানকে খাইয়ে দেয় এখন।দায়ান কিছু বলে না।এখন সোহার হাতে খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

এই দুইদিন অফিসে ও যায় নি।অফিসের কাজ রুশই সামলাচ্ছে। দায়ান অবশ্য যতোটুকু পারছে বাড়িতে বসেই কাজ করছে।

সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোহা,,দায়ানকে খাইয়ে দিয়ে এখন সোফায় বসে টিভি দেখছে।খুব মনোযোগ সহকারে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।

দায়ান রুমে বো’র হচ্ছিলো বলে ল্যাপটপ টা নিয়ে,,সোফার রুমে চলে আসে।এসে দেখে সোহা বসে টিভি দেখছে। দায়ান কথা না বাড়িয়ে অপর পাশের সোফায় পা তুলে বসে,,পায়ের উপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে।

সোহা টিভিতে কোনো ফানি সিন দেখে খিলখিলিয়ে জোরে হেসে দেয়।

দায়ান ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে সোহার হাসির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে,, মুখে বিরক্তিকর ছাপ ফুটিয়ে তুলে।

উফফ সোহা কি শুরু করেছো বলোতো? বাচ্চাদের মতো।এরকম ভ’য়ংকর ভাবে হাসলে,আশে পাশের মানুষ তো ভ’য় পাবে।

— কি বললেন আপনি?

— কেন তুমি কালা? শুনতে পাওনি কি বলেছি?

— আমার হাসি ভয়ংকর?

— তার উপর যদি কিছু থেকে থাকে ঐটাই।

— ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিলাম।

— আমিও তাই বলছি।তোমার এভাবে হাসা একদম ঠিক হচ্ছে না।

— আমার হাসি সুন্দর দেখে আপনার হিংসা হচ্ছে আমি জানি।নিজেতো আমার মতো হাসতে পারেন না।তাই আমার টা দেখলে হিংসে হয়।

— আমার বয়েই গেছে তোমার এরকম হাসির উপর হিংসে হতে।

–বুঝি বুঝি,,,

— ক’চু বুঝো।এরকম ভয়ংকর ভাবে আর হাসবে না।আশে পাশে কতো দূর্বল হার্টের মানুষ আছে।তারা ভয়ে হা’র্টঅ্যা’টাক করবে। আর আমি এদেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব আছে না।তাই তোমায় সাবধান করে দিলাম।

— এএএএ আসছে আমার সচেতন নাগরিক রে।আপনি জানেন আমার হাসি দেখে মানুষ ফি’দা হয়ে যেতো।কতো ছেলেরা আমার প্রেমে পরেছে আমার হাসি দেখে।

— ঐসব ভালো মানুষ না।তোমার মতোই পা’বনা ফেরত আধ-পা/গল বুঝলা।কোনো সুস্থ মানুষ তোমার এই হাসি দেখে প্রেমে পরবে না ভ’য় পাবে।

সোহা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দায়ানের ফোনটা বি’কট শব্দ তুলে বেজে উঠে।

দায়ান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে,,নিজের মুখে আঙ্গুল দেখিয়ে সোহাকে চুপ থাকতে বলে।

সোহা দায়ানের কথার উত্তর দিতে না পারায় রাগে ফুঁসছে।

দায়ান কল টা রিসিভ করে।

— হ্যা রুশ বল।

— স্যার না মানে দোস্ত। আজ তো দেশের বাইরে থেকে একজন আসার কথা।তর সাথে মিটিং ফিক্স ছিলো আজ বিকালে।উনি এসে পরেছেন।

— এক কাজ কর উনাকে বাড়িতে নিয়ে আয়।বাড়িতেই মিটিং সেরে ফেলি।এক সাথে লাঞ্চ ও করে নিবো।

— ওকে।

— আমি খাবার অর্ডার করে দিতেছি।

এতোসময় সোহা দায়ানের সব কথাই শুনেছে,,তাই খাবার অর্ডারের কথা শুনেই বলল,,এই খাবার অর্ডার দিবেন কেনো? আমি কি রান্না করতে পারি না নাকি? আমি করবো।

তুমি পারবানা দেশের বাইরে থেকে আসছে লোক।তার উপর আমি, রুশ।এতো জনের রান্না পারবানা।

আল’বাত পারবো।

কিন্ত,,,,,,,,,,,,

তাহলেতো ভালোই হয় দোস্ত। দোস্ত মানা করিস না।মি. এলেক্স সোহার রান্না পছন্দ করবে দেখিস।

ঠিক আছে তোরা যা ভালো বুঝিস।

দুপুরের আগে,আগেই রুশ মি. এলেক্স কে নিয়ে দায়ানের বাসায় উপস্থিত হয়।

সোহা ও ড্রইং রুমেই ছিলো।মি. এলেক্স এসেই দায়ানের সাথে হাত মিলাতে যায়।দায়ানের কাটা হাতের জন্য আর তা হয়ে উঠে না।তাই এমনিতেই দায়ান কে প্রশ্ন করে,,,,

হেই ডা’য়ান হোয়াটস আপ?

দায়ান কে ডা’য়ান বলায় সোহা ফি’ক করে হেসে দেয়। সোহার দেখা দেখি রুশ ও হেসে দেয়।

দায়ান সোহা ও রুশের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।

দায়ানের তাকানো দেখে ওরা মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়।

মি. এলেক্স সোহা কে দেখে আধো আধো বাংলায় বলে,,,,হেইই টুমি কি মিসেস শেখ?

সোহা হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।

ওহহ নাইস টু মিট ইউ।হেয়াটস ইউর নেইম?

জ্বি সোহা।

চোহা? নাইস নেইম।

এইবার দায়ান শব্দ করে হেসে দেয়। সাথে রুশ ও।

সোহার মুখটা চুপসে যায়।

মি. এলেক্স বলে উঠে,,হেই হুঁশ আমি ফ্রেশ হবো।রুশ কে উদ্দেশ্য করে।

দায়ান এবার টিপ্পু’নি কেটে বলে,,আমার নাম শুনে খুব হাসি পাইতেছিলো তাইনা? আমার টা তাও দেশে আছে।কিন্তু তোমাদের টা।

চোহা,হুঁশ আহা তোমরা যেনো আবার হয়ে যেয়োনা বেহুঁশ।

#চলবে,,,,,,,

বিঃদ্রঃ নাম গুলো লিখে আমি নিজেই হাসতে হাসতে শে’ষ।#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৩
#Jhorna_Islam

নোহার মনটা আজ বেশ ফুরফুরে। তাই নিজের মনে গুন গুন করে গান গাইছে আর কাজ করছে।

ঐ কু’ট’নি মহিলাকে জ’ব্দ করতে পেরেছে কিছুটা হলেও।আহা শান্তি শান্তি লাগছে।।

মানুষের একটা স্বভাব আছে দাড়াতে দিলে বসতে চায়।এই মহিলাটা ও এমনই হয়েছে।নোহা কিছু বলে না বলে,সব কিছু মুখ বুজে মেনে নেয় বলে পেয়ে বসেছে।

নোহা এখন বুঝতে পারছে।নিজে মুখ বুজে এসব সহ্য করলে কোনোদিন ও থামবে না এসব অত্যা’চা’র চলতেই থাকবে। নিজের জন্য নিজেকেই ল’ড়’তে হবে।

ভেবেছিলো সব মুখ বুজে সহ্য করলে একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।আর এতো অশান্তি হবে না। অথচ সবই ভুল মুখ বুঝে সহ্য করলে এই অশান্তি দিন দিন বাড়বে ছাড়া কমবে না।

অনেক হয়েছে আর না। এখন থেকে এদের প্রতিটা কাজের জবাব দিবে নোহা। এতোদিন কিছু বলেনি কারণ যদি নোহার সংসারটা ভেঙে যায় তাহলে সেই প্রভাব টা সোহার উপর পরতো।এখন আর কোনো ভ’য় নেই বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন কেউ আর বোনকে কিছু বলতে পারবেনা।

নোহার ভাবনার মাঝেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে বাড়ি থেকে কল এসেছে।মনটা যেমন আরো ভালো হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে কলটা রিসিভ করে নিজের ঘরে চলে যায়।

— হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

— ওয়ালাইকুম আসসালাম। বড় আম্মা আমি বাবা বলছি।

— নোহা চুপ থাকে কিছুসময়। মনে মনে ভাবে অনেক মান অভিমান হয়েছে বাবার সাথে আর না। এবার সব ঠিক করে নিবে। তাই খুশি মনে বলে উঠে,,, হুম বাবা বলো।কেমন আছো তুমি? শরীর ঠিক আছে? মা কেমন আছে? তোমাদের কতো দিন দেখি না বাবা।একবার আসো না বাবা।

— নোহার বাবা নোহার এমন উৎফুল্ল মনে কথা শুনে কিছু সময় স্থব্ধ হয়ে যায়।চোখের কোণে পানি জমা হয়।কতোদিন পর তার মেয়ে তার সাথে এমন করে কথা বলছে। বাবা বলে ডাকছে। ধরা গলায় নোহার মাকে ডেকে উঠে রমিলা কই তুমি? দেখে যাও আমার বড় আম্মা আমারে দেখতে চায়।আমার সাথে ভালো করে কথা বলতেছে।

নোহা বাবার কথা শুনে বুঝতে পারে বাবার চোখে পানি জমেছে। নোহার চোখ দিয়েও পানি পরতে থাকে।এই মানুষটাকে কতো কষ্ট দিয়েছে।এই মানুষটার তো কোনো দোষ নেই।

বাবা তোমার বড় আম্মা এতোদিন তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছে তাইনা? ক্ষমা করা যায় না বাবা।আমি খুবই দুঃখিত।

এসব কি ধরনের কথা বড় আম্মা। আমি কিছু মনে করিনি।সব ভুলে যাও। এখন এইযে আমায় অভিমান ভেঙে বাবা বলে ডাক দিয়েছো আমার পরাণটা জুড়ায় গেছে।

তারপর এতো বছরের জমিয়ে রাখা কতো কথা বলতেছে।নোহা ও মন খুলে কথা বলছে একবার হাসতেছে তো আবার কাঁদতেছে।

নোহার মা দরজার পাশে দাড়িয়ে বাবা মেয়ের কথা শুনে মুখে হাসি ফোটে। তাদের মাঝখানে গিয়ে আর বিরক্ত করতে চায়নি।এতেদিনের জমানো মান অভিমান শেষ হয়েছে।বলুক কথা ওরা।

—————————————

মি. এলেক্স কে ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুশ গেস্ট রুমে দিয়ে এসেছে।

দায়ান এবার সোফায় পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসছে।সোহা ও রুশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,

খুব হাসি পাইতেছিলো না আমার নাম শুনে? নাও নাও এবার হাসো। এখন মন খুলে দুটোতে হাসতে পারবা।কারণ তোমাদের নাম দুটো খুবই হা’স্যকর। দায়ান বলে উঠে।

দেখেন মোটেও আমাদের ম’জা নিবেন না।আমাদের দুইজনের নাম তো একা বলেনি।আপনার টা ও বলছে।বলেই সোহা মুখ ভেঙায়।

দায়ান থেকে ডা’য়া’ন।আর আপনি জানেন না ডা’য়া’ন কে কি বলে। ডা/ই/নী বলে বুঝলেন।আপনাকে সোজা কি বানিয়ে দিলো এবার ভাবেন।অবশ্য ঠিক জিনিসটাই বানিয়েছে।আপনার সাথে নামটা পার্ফেকট ম্যাচ করেছে আহা। আহা ডা’য়া’ন।

শাট আপ সোহা।

কেনো এখন চুপ করতে বলেন কেনো? নিজের উপর পরায় এখন খুব গায়ে লাগছে তাইনা?

রুশ সোহা আর দায়ানের ত’র্কা’ত’র্কি নিরব দর্শকের মতো হা করে দেখছে। দায়ান কথা বলার সময় দায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।সোহা কথা বলার সময় সোহার দিকে তাকাচ্ছে।

দোস্ত,,,,,,,,, রুশ অবাক হয়ে দায়ান কে ডাক দেয়।

দু’জনেই রুশের দিকে তাকায়।

দোস্ত তুই কি আমার দোস্ত?

এটা আবার কেমন প্রশ্ন রুশ?

না মানে হয়েছে কি।তর তর্কা’তর্কি দেখে কনফিউজড হয়ে গেছি।তুই সত্যিই দায়ান কিনা।তরেতো এভাবে কখনে তর্ক করতে দেখিনি।স্পেশালি মেয়েদের সাথে।তুই মেয়েদের মতো পায়ে পা লাগিয়ে ঝ’গ’ড়া করছিস। ভাবা যায় এগুলা?

একটা প্রবাদ আছে জানিসতো রুশ? “সঙ্গ দো’ষে লোহা ভাসে।” এখন সামনা সামনি আমাকে দেখে তার সত্যতা দেখ।এই মেয়ের সাথে থাকলে মুখ বন্ধ রাখার উপায় আছে? ভালো মানুষকে ও বা’চা’ল বানিয়ে দেয় এই মেয়ে।যার জল’জ্যা’ন্ত প্রমান আমি তর চোখের সামনে।

সোহা এবার কোমড়ে হাত রেখে বলে উঠে,,,, এএএএ এখন যতো দো’ষ সব আমার হয়ে গেলো বললেই হলো নাকি? আমি আপনার থেকে শিখছি এরকম ত’র্কা ত’র্কি। আপনি না হুহ।

আমার থেকে শিখছো তুমি? লাইক সিরিয়াসলি সোহা?

হুম,,,একটু ভা’ব নিয়ে।

ভাই থাম। মেয়েদের মতো ঝগড়া লাগতেছিস কেনো আবার? আজিব কি হয়ে গেলো তোর ভাই। দায়ান কে উদ্দেশ্য করে রুশ জিজ্ঞেস করে।

দায়ান রুশের দিকে আ’ঙ্গুল তুলে জিজ্ঞেস করে,,,কি বললি তুই রুশ? আমি মেয়েদের মতো ঝ’গ’ড়া লাগি মানে? তোর কানের নিচে এমন এক থা’প্প’ড় লাগাবোনা।

একেবারে রুশ থেকে হুঁশ তারপর বেহুঁশ। বোনের হয়ে বন্ধুর সাথে লাগতে আসছে।

ভাই দয়া কর আমায় দুই হাত এক করে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠে রুশ। তরা ঝগড়া শুরু কর আবার আমি সোফায় বসে হাত তালি দিয়ে তোদের উৎসাহ দেই।নে শুরু কর।কারো সাইড ই আমি নিবো না। তরা তোদের কাজ চালিয়ে যা।

সোহা এবার বলে শুনুন আপনারা। ঝ’গ’ড়া ঝাটি সব বাদ।এখনের জন্য পরে আবার এখান থেকেই শুরু করবো।মনে করিয়ে দিবেন কোথায় ছিলাম।

এখন আমি ঝ’গ’ড়া করতে পারবোনা।ঝ’গ’ড়া করার মেইন পয়েন্ট গুলা এখন ভুলে গেছি। পয়েন্ট গুলা আবার মিলিয়ে নেই তারপর আবার ঝ’গ’ড়া করবো। নয়তো আমার পরে খুব আফসোস হবে।কেনো ঐ পয়েন্ট গুলা বলতে পারলাম না। তাছাড়া খেয়ে দেয়ে নেই।এখন ঝ’গ’ড়া করার মতো একদম শক্তি নেই।

রুশ হা করে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। দায়ানের একটু কাছ ঘে’ষে বসে।কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,,,,ভাই তুই এইটা কই পাইলি? তর জীবন যে ভবিষ্যতে তে’জপাতা হয়ে উড়ে বেড়াবে। আমার বোন বলে বলছিনা।পাইছোস এক খা’ন দোস্ত।

ওদের কথার মাঝেই মি. এলেক্স ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে।

তাই সবাই চুপ হয়ে যায়।

মি. এলেক্স এসে দায়ান ও রুশের পাশে বসে। অফিসিয়ালি কথা বার্তা বলতে থাকে ওরা।

সোহা তাই এখানে না দাঁড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।মি.এলেক্স আসার আগেই সব রান্না শেষ করে রেখেছিলো।এখন পরিবেশনের পা’লা।
খাবার গুলো সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে টেবিলে নিয়ে রাখে। তারপর দায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,, এই আপনারা এখন এসব কথা বার্তা বাদ দিন।লাঞ্চ করে নিন আগে। তারপর বইলেন।নয়তো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।তাড়াতাড়ি আসেন খেয়ে নিন।

মি.এলেক্স লেটস গো। বলে দায়ান উঠে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে পরে। রুশ আর এলেক্স ও এসে বসে।

সোহা সবাই কে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।

দায়ান টেবিলে সব বাঙালি খাবার দেখে রুশের কানে কানে আস্তে করে বলে,,,,, রুশরে ব্লা’ন্ডা’র হয়ে গেছে।

কি? রুশ জিজ্ঞেস করে।

আমার তো মাথায় ই ছিলো না।মি., এলেক্স বিদেশি চাইনিজ খাবার খাবে।দেশীয় খাবার না। এখন এগুলা ইনি কি করে খাবেন? সব দোষ তো তোদের দুটোর। ঐ মেয়ে রান্না করার জন্য নাচতে শুরু করলো আর তুই হাত তালি দিয়ে তাকে উৎসাহ দিয়েছিস গা/ধা। এমনিতেই নাচনি বু’ড়ি তার উপর দিয়েছিস তুই ঢুলের বারি। লও এবার ঠে’লা সামলাও।তাড়াতাড়ি খাবার অর্ডার দে।যেনো বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছায়। আমি দেখি মি. এলেক্স কে মেনেজ করার ট্রাই করি।

রুশ হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।

দায়ান কিছু বলতে যাবে মি.এলেক্স কে উদ্দেশ্য করে । তার আগেই,,,,,,,,

ওয়াও!! বেঙ্গলি ফুড? আই লাইক ইট ভেরি মাচ।

রুশ মাত্র খাবার অর্ডার দিতে নিয়েছিলো।মি. এলেক্স এর দিকে তাকিয়ে আবার দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান আর রুশ একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্বস্থির নিশ্বাস নেয়।

রুশ দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে দোস্ত তর কাটা হাত দিয়ে খাবি কিভাবে? চামচ ধরতে পারবি কি না সন্দেহ আছে।

আমি এখন খাবো না।খিদে নেই পরে খেয়ে নিবো।তরা খাওয়া শুরু কর।

কিন্তু,,,,,

কোনো কিন্তু না আপনারা খাওয়া শুরু করুন,,উনি আমার সাথে খেয়ে নিবে।সোহা বলে।

রুশ মজার ছলে বলে,,,,ওমাগোওওওও টুরু লাভ।

দায়ান চোখ পাকিয়ে তাকায় রুশের দিকে।

রুশ হাসার চেষ্টা করে খেতে শুরু করে। নয়তো এখন আর কিছু বললে খাবার টেবিলেই ধো’লা’ই দেওয়া শুরু করবে।

মি. এলেক্স এক চামচ খাবার মুখে নিয়েই বলে,,,,ইট’স রিয়েলি ইয়ামমি। মিসেস. চোহা গুড কুকিং।

সোহা মনে মনে বলল আবার আমায় চোহা বললে তরেই কুকিং করে ফেলবো।

মুখে বলল মাই নেইম ইজ সোহা।ইট’স সোহা।নট চোহা।

চোহা।(মি.এলেক্স)

সোহা।বলার চেষ্টা করুন।

মি. এলেক্স অনেক চেষ্টা করে ও বলতে পারলো না সোহার সঠিক নাম টা।

সোহা এবার বিরক্ত হয়ে বলে থাক অনেক হয়েছে বাদ দিন।নাম যখন নতুন করে রেখেছেন ই এবার আ’কী’কা টা দিয়ে দিয়েন কেমন?

মি.এলেক্স বুঝতে না পেরে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে রয়।

তারপর আর কথা বাড়ায় না।খুবই মনোযোগ দিয়ে খাবার খেতে থাকে।

সোহা দায়ান ও রুশের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলে,,,,আমার কি ইচ্ছে করছে জানেন?

দায়ান আর রুশ সোহার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানতে চায় কী?

আমার ঐই স্পেশাল ভর্তা এই ব্যাটারে খাওয়াই।কেমন হবে বলেন তো? বেশ হবে বলেন? দারুণ না আইডিয়াটা?

সোহার কথা শুনে রুশের গলা শুকিয়ে যায়। ঐদিনের দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে। তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে খেতে থাকে।

দায়ান বলে একদম না।

সোহা মুখ ভেঙায়।

সোহা মি. এলেক্স কে বলে,,,,,মি. গেলেস আপনার কিছু লাগলে বইলেন কেমন? একদম লজ্জা পাবেন না।খাবারের মাঝে আবার কিসের লজ্জা? আপনার সামনেই সব রাখা আছে সব।আপনি যতোটুকু খাবেন নিয়ে খান। ঠিক আছে মি. গেলেস?

দায়ান শুকনো কাশি দিয়ে জানতে চায়,, মি. গেলেস মানে? গেলেস কি সোহা?

আরে আপনি গেলেস চিনেন না? আমাদের দিকে গ্লাস কে গ্রাম্য ভাষায় গেলেস বলে।বুঝলেন? আর উনি আমাদের কতো সুন্দর সুন্দর নাম দিয়েছে।তাই ভাবলাম আমিও একটা দেই।আমি আবার কারো ঋণ রাখিনা।সুন্দর না নামটা গেলেস? নাম দিয়ে দিছি কিন্তু আ’কী’কা দিতে পারবোনা।উনারটা উনারে দিয়ে নিতে বলবেন আমার আবার এতো টাকা পয়সা নাই।

দায়ান অনেক কষ্টে দুই হাতে মুখ চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে।

রুশ সোহার কথা শুনে খাবার নাকে মুখে উঠে বি’ষ’ম খেয়ে কাশতে লাগলো।

সোহা মিটমিটিয়ে হাসে এদের অবস্থা দেখে।

মি. এলেক্স বে’চা’রা খেতে খেতে এদের তিনজনের কান্ড দেখছে।এতোটাও বাংলা তিনি বলতে বা বুঝতে পারেন না।তাই বোধগম্য হয়নি।।ওরা কি বলেছে।বা কি নিয়ে এতো হাসাহাসি, কা’শা’কা’শি করছে।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here