তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -২০+২১

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২০
#Jhorna_Islam

সোহা খুব যত্ন সহকারে দায়ানকে মুখে খাবার তুলে খায়িয়ে দিচ্ছে। দায়ান সোহাকো বেশি কিছু বলে নি।কারণ ওর ও খিদে লেগেছিলো প্রচুর। হাত কাটার জন্য খেতে যায়নি।কিভাবে খাবে কাটা হাত দিয়ে তা ভেবে।

দায়ান ভাতের লোকমা মুখে নিচ্ছে আর সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাত চিবোচ্ছে তবুও সোহার দিক থেকে চোখ সরাচ্ছে না।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে আছে এটা সোহা বুঝতে পেরে,,,চোখ তুলে দায়ানের দিকে তাকায়। দায়ানের মুখে ভাত দিতে দিতে খুব মিষ্টি একটা হাসি দেয়।

সোহার হাসি দেখে দায়ান নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে দেয়।নিজের হাতটা সোহার গালের কাছে নিয়ে যায়।

সোহা দায়ানের দিকে একবার দায়ানের হাতের দিকে একবার তাকায়।

হঠাৎ করেই দায়ান নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে আসে।

সোহা দায়ানকে কিছু বলেনা চুপচাপ দায়ানকে খাওয়াতে থাকে।

দায়ান সোহার কেয়ার দেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছেনা।মা ছাড়া কেউ তাকে খাইয়ে দেয়নি কখনো । খেতে বসে নিজে আলাদা প্লেট নিলেও অর্ধেক খাবার মায়ের হাত দিয়ে মায়ের প্লেট থেকে খেতো।কতো বছর মায়ের হাতে খাওয়া হয় না।মা মারা যাবার পর প্রথম কয়েক মাস খাবার মুখে দিতে পারেনি ভালো করে।খেতে গেলেই অতীতের স্মৃতি চোখের পাতায় ভেসে উঠতো।কি যে কষ্ট য’ন্ত্র’নায় সেই দিন গুলো অতিবাহীত করেছে দায়ান ই জানে।এসব ভাবতেই দায়ানের চোখে কোণে পানি জমে।চোখ লাল হয়ে গেছে।

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখের কোণে পানি।চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে আছে।

এইই আপনার কি হয়েছে? ঝাল লেগেছে? পানি খাবেন? কি হয়েছে বলেন না।হাত ব্যাথা করতেছে তাই না আপনার?
সোহা করুন চোখে দায়ানের গালে হাত রেখে এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে।

দায়ান সোহার প্রশ্ন শুনে সোহার দিকে তাকায়। সোহার চোখে মুখে একরাশ উদ্বি’গ্নতা’র ছোয়া।

দায়ান চোখ সরিয়ে নেয়।ঐই চোখে তাকানো যাবেনা।কি যেনো আছে।আশে পাশে তাকিয়ে নাক ছিঁ’চকে নিজের চোখের পানি আটকিয়ে রাখার চেষ্টা।

— কিছু হয়নি।

— হয়নি মানে? নিজেকে দেখছেন আপনি? চোখ মুখের কি হাল।চোখের কোণে পানি, চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে আছে।

— বল্লামতো তেমন কিছু হয়নি চোখে যেনো কি গেছে।

— কি গেছে মানে দেখি দেখি বলেই দায়ানের মুখটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে। চোখের দিকে তাকিয়ে বলে কই তেমন কিছুইতো দেখছিনা।তাহলে চোখের কোণ ভিজা কেনো? বলেই,,,,,,,,

বাম হাত দিয়ে ওড়না টা দিয়ে চোখের কোণ মুছে দেয়।

দায়ান সোহার কার্যকলাপ দেখে শুকনো মুখেই বি’ষ’ম খায়।কাশতে থাকে অনবরত।

আরে আরে করেনটা কি আপনি আবার শুকনো মুখেই বি’ষ’ম খেলেন।বলেই তড়িঘড়ি করে পানি এগিয়ে দেয়।দায়ান এক ঢুকে সব পানি শেষ করে ফেলে।তবুও কাশি থামেনা।

সোহা এবার দায়ানের ঘারে পিঠে আস্তে আস্তে থা’পড়াতে থাকে।আর বলতে থাকে,,,,,কে আবার আপনার নাম নিলো বলেন তো? আপনার কি কোনো শ’ত্রু আছেনি? কেরে আমার জামাইরে বকতাছস।সামনে পাইলে বোঝাইতাম আমি কি জিনিস।

দায়ান এবার সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,, সোহা প্লিজ স্টপ করো।তোমার জন্য আমার এ অবস্থা।আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি আর খাবো না।এগুলা এখন নিয়ে যাও।আমার শরীরটা ভালো লাগতেছে না। আমি এখন শুবো।

কি বলেন আগে বলবেন না বলেই তাড়াতাড়ি করে হাত ধুয়।দায়ানের মুখ ভিজা হাত দিয়ে মুছে দেয়। ঔষধ এনে খাইয়ে দেয়। ঔষধ খাওয়ানো হলে আবার নিজের ওড়না দিয়ে মুখটা মুছে দেয়।

তারপর প্লেট নিয়ে চলে যাওয়ার সময় দায়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে যায়।

দায়ান চুপচাপ শুয়ে পরে লাইট বন্ধ করে।শরীরটা সত্যিই ভালো লাগতেছে না। মাথাটাও কেমন ধরে আছে।

সোহা সব কিছু গুছিয়ে রেখে রুমে এসে উল্টো হয়ে শুয়ে পরে।নিজের ওড়নাটা হাত দিয়ে এনে চুমু খায়।তুইতো উনার কতো কাছে যেতে পারস। উনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারস। এতোদিনে মনে হয় আমার ওড়না গুলো উনার ছোঁয়ায় ধন্য হয়েছে। আমি উনাকে কবে ভালো করে যে মন ভরে দেখতে পাবো। বড়ই হাস্যকর ব্যাপার এখন আমার নিজের ওড়নার উপরই হিংসে হচ্ছে।

তুইতো উনার প্রেমে যে সে পড়া পরিস নিরে সোহা।একবার পা পিছলে পরেছিস।নিজেই নিজেকে বলে উঠে সোহা।তারপর লজ্জা পেয়ে পাশ থেকে বালিশ নিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।

এক সময় দায়ানকে নিয়ে নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতে সোহা ও ঘুমিয়ে যায়।

—————————————-
মাঝরাতে হঠাৎ করেই কিছুর শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ভয় পেয়ে যায় সোহা।হাত পা কাঁপতেছে।গলা শুকিয়ে গেছে।এদিক ঐদিক তাকিয়ে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করে। কই থেকে শব্দটা আসছে।থেমে থেমে আসছে শব্দটা।

এএএ-এটা কিসের শ-শব্দ ভূ’ত টু’ত নয়তো।এতো রাতের বেলা তো তারাই আশে পাশে ঘুরাঘুরি করে। এসব ভেবে সোহার আরো ভয় বেড়ে যায়। এতোদিন তো এমন ছিলো না। তেমন কিছুই দেখিনি। এসব আওয়াজ তো পাইনি।তাহলে আজ হঠাৎ করে কেনো?

তেনারা আমাকে তেনাদের সাথে নিয়ে যাবে নাতো? নাকি আমাকে মেরে ফেলবে।মরার আগে কি আমার র/ক্ত খেয়ে নিবে।

এসব ভাবতেই সোহা খাট থেকে নামে।নাহ ম’রা যাবে না। যে করেই হোক বাঁচতে হবে। এসব ভাবনার মাঝেই সোহা আবার আওয়াজ শুনতে পায়। এবার যেমন স্পষ্ট শুনতে পেলো কারো গো’ঙ্গা’নির আওয়াজ।সোহা একটু সাহস নিয়ে দরজার কাছে আরেকটু এগিয়ে যায়। এবার যেমন স্পষ্ট হয়ে গেছে পুরোপুরি। পাশের রুম থেকে আসছে আওয়াজটা।তার মানে উনি?

ইয়া আল্লাহ বলেই ছুট লাগায় দায়ানের রুমে সোহা।

রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ করা।আমি এখন ঢুকবো কি করে? উনি দরজা লক করে,,,,,বলতে বলতেই দরজা আস্তে করে ধাক্কা দেয়। দরজাটা খুলে যায়।সোহা স্বস্থির নিশ্বাস নেয়।

দায়ানের রুম পুরাই অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে সুইচবোর্ডে খুজে চলেছে সোহা।অনেক খোজে অবশেষে পায়।তাড়াতাড়ি লাইট জ্বালায়।

সোহা লাইট জ্বালিয়ে দায়ানের দিকে তাকায়। দায়ান গু’টি শুটি মেরে বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছে।খনে খনে কেঁপে উঠছে।আর গোঙা’চ্ছে।

দৌড়ে দায়ানের কাছে গিয়ে কপালে হাত দেয়।কপালে হাত দিয়েই মূহুর্তের মধ্যে হাত এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে আসে।

জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। হাত দেওয়া যাচ্ছে না শরীরে।
সোহা তাড়াতাড়ি এদিক ওদিক তাকিয়ে আলমারির কাছে চলে যায়। আলমারি খুলে ক’ম্বল বের করে নিয়ে আসে।দায়ানের পাশে খাটে বসে পরে। পুরো শরীরে সুন্দর করে কম্বল টা মেলে দেয়।

কপালে আবার হাত দেয়।শরীরের তাপমাত্রা মনে হয় বেড়েই চলেছে। এখন আমি কি করবো? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। এখনই মাথায় পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।ভেবেই বাথরুমে চলে যায়। একটা বাটিতে পানি ও কাপড় এনে জলপট্টি দিতে থাকে।

শরীরটা ও মুছে দেওয়া দরকার।কিন্ত কিভাবে কি করা উচিত বুঝতে পারছেনা সোহা।খুবই আনইজি লাগছে।

শুনছেন,,,,উঠুন না।আপনার শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
একটু মুছে নিন না।দায়ান শুনছেন? বলেই দায়ানের হাতে আস্তে করে ধাক্কা দেয়। অনেকবার৷ ধাক্কানোর পর দায়ান আস্তে করে চোখ খুলে।

সোহা দায়ানের চোখ খোলা দেখে,,, দায়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে একটু উঠে বসে শরীরটা মুছে দিন না।ভালো লাগবে।বুঝতে পারছিনা কেনো এতো জ্বর আসলো।জ্বরের ঔষধ তো তখন খাইয়ে ছিলাম।

সোহার কথায় দায়ান উঠে বসার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।জ্বর মনে হয় সব শক্তি শু’ষে নিয়েছে।

দায়ান উঠতে পারতেছেনা বলে,,সোহা নিজেই দায়ানকে ধরে উঠায়।পিছনে একটা বালিশ দিয়ে দেয়।দায়ান শরীরটা হেলিয়ে বসে থাকে।

সোহা কাপড় ভিজিয়ে দেয়,,দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে আমার পক্ষে সম্ভব না।

সোহা কিছু না ভেবেই নিজেই করতে যায়।এখন জড়তা দেখালে হবে না।মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। প্রথমেই দায়ানের টি-শার্ট টা আস্তে আস্তে খুলে দেয়। তারপর ভিজানো কাপড় দিয়ে মুছতে থাকে।

দায়ান শরীরে ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠে।

সোহা শরীর মুছে উঠে দাঁড়ায় বাটির পানি টা বদলে নতুন পানি আনার জন্য। আবার কপালে জলপট্টি দিবে বলে।

কিন্তু হায় যাওয়া হলো না।যাওয়ার আগেই উ’ত্তপ্ত গরম দুটো হাত কোমড় পেচিয়ে খাটের উপর নিয়ে এসে ফেলে।

হাতের পানি ভর্তি বাটি মেঝেতে পরে বিকট শব্দে গড়াগড়ি খাচ্ছে। যার শব্দে সোহার অন্তর আ’ত্না কেঁপে ওঠে। প্রথমে কিছু বুঝতেই পারলোনা কি হলো।

শরীরের উপর কারো ভ’র পেয়ে নিজের জ্ঞানে ফিরে আসে সোহা।এতোখন ভাবতে ছিলো কি হচ্ছে।

দায়ান সোহার উপর উঠে এসেছে।

সোহা দায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। দায়ান কেমন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সোহা দায়ানের দৃষ্টিতে বেশি সময় তাকাতে পারেনা।কেমন নে/শার মতো।

দায়ান দুই হাত দিয়ে সোহার আঙুলের ভিতর আঙুল দিয়ে মুঠো করে ধরে।

দায়ান কি করছেন আপনি? হুঁশে আসুন।আপনি ঠিক নাই প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।

দায়ান সোহার কথায় পাত্তা দেয় না।সোহার কম্পনরত ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে মুখটা৷ এগিয়ে নিয়ে আসে।

এবার সোহার কেদে দিতে মন চাইছে।সোহা এক নাগারে বলেই চলেছে,,,শুনুননা দায়ান হুশে আসুন প্লিজ। জ্বরের ঘোরে কি করতেছেন আপনি নিজেই বুঝতে পারতেছেন না।

দায়ানের সোহার কথা কানে যাচ্ছে না।

কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে,,সোহা চোখ খিচে বন্ধ করে রাখে। দায়ানের উ’ত্তপ্ত গরম নিশ্বাস সোহার মুখে আছড়ে পরছে।৷ মনে হচ্ছে মুখের চামড়া ঝলসে যাচ্ছে।

চোখ বন্ধ করে রাখা অবস্থায় খুবই কোমল স্পর্শ পায় নিজের কপালে।

সোহা চোখ খোলে দায়ানের দিকে তাকায়। ততোক্ষনে দায়ান সোহার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।কি যে নো বিরবির করে বলতে থাকে।
দায়ানের মুখটা সোহার কানের কাছে হওয়ায় স্পষ্ট দায়ানের কথা গুলো কানে আসে।

তুমি আমার সাথে কেন এমন করলে? সব শেষ করে দিয়েছো তুমি সব।সব কিছু তোমার জন্য হয়েছে।আমার মা বাবা,,আজ আমার সাথে নেই।তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।
কি দোষে তুমি আমাকে পুরোপুরি শেষ করে দিলে? তুমি কেনো আমার পাশে থাকলে না।আমিতো তোমায় ভালোবেসে ছিলাম তি,,,,,,আর কোনো শব্দ কানে আসছে না।হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।

কিন্তু দায়ানের কথাগুলো আরেকজনের মনে যে প্র’লয় সৃষ্টি করে দিয়েছে সেটা যদি দায়ান টের পেতো।

সোহার দুই চোখ দিয়ে পানি পরে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। এই কারণে উনি আমাকে মেনে নেয়নি? উনি অন্য কাউকে ভালোবাসে।

আল্লাহ এই কথা শুনার আগে আমায় মেরে কেন ফেললেনা? এই লোকটা কে যে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।নিজের ভালোবাসার মানুষটার মনে অন্য কারো বসবাস।এই কথা শুনার পর কেউই ঠিক থাকতে পারে না। সোহা ও নেই।একদম ঠিক নেই।নিজের মনে জন্ম নেওয়া ভালোবাসা তাকে শেষ করে দিচ্ছে।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২১(বোনাস)
#Jhorna_Islam

দায়ানের জ্বরের ঘুরে বলা কথা গুলো শুনে সোহা স্থ’ব্ধ হয়ে রেয়েছে।গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করতেছে। কেন উনি আমাকে ভালোবাসেন না।উনি কেন অন্য কাউকে ভালোবাসেন?

এখানে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না।এখনই নিজের রুমে গিয়ে কেঁদে নিজেকে হালকা করতে হবে।নয়তো দ/ম বন্ধ হয়ে যাবে।

তাই নড়েচড়ে দায়ানের বাধন থেকে ছোটার চেষ্টা করে। কিন্তু দায়ানের বাঁধন থেকে ছোটা এতোই কি সোজা।দায়ানের মতো এতো শক্ত সামন্ত পুরুষের থেকে এতো সহজে ছোটা সম্ভব না কখনো না। দায়ান যদি না চায় তাহলে সোহার ছোটা অসম্ভব এই হালকা পাতলা শরীরে এতো শক্তি নেই।

সোহার এতো নড়াচড়া তে দায়ানের ঘুমে ব্যা’ঘাত ঘটে।বিরক্ত তে চোখ মুখ কোচকে ফেলে।

ঘুমু ঘুমু চোখে মাথা টা একটু উঠিয়ে সোহার দিকে তাকায়। কি সমস্যা তোমার? এমন করতেছো কেনো? ঘুমুতে দেও।এতো নড়াচড়া করতেছো কেনো।চুপচাপ ঘুমাও না।আর আমাকেও ঘুমোতে দেও।কতোদিন হয়ে গেলো শান্তি তে ঘুমোতে পারি না।

“প্লিজ ডোন্ট ডিসটার্ব। ” বলেই দায়ান হাতের বাঁধন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সোহাকে।

সোহা দায়ানের ঘুমু ঘুমু কন্ঠে এসব কথা শুনে স্থির হয়ে যায়।কি বলছে লোকটা জ্বরের ঘোরে নিজেও জানেনা।

সোহা দায়ানের দিকে ঘার ঘুড়িয়ে ভাবতে থাকে,,, এই লোকটাকে ছেড়ে আমি কি করে থাকবো? আমি পারবো না উনাকে ছেড়ে থাকতে।কখনো পারবো না।

আমি উনাকে কেনো ছাড়বো কখনো ছাড়বনা।ছাড়ার প্রশ্নই আসেনা।উনিতো বললেনই উনি ঐই মেয়ে না কাকে এখন ঘৃণা করে। আর ঐসব তো অতীত।এরকম অতীত এখন প্রায় সবারই আছে।উনারো থাকতেই পারে।ঐসব নাটক সিনেমার মতো আমি আমার স্বামীর অধিকার কাউকে দিবো না।

আমি উনার বিয়ে করা বউ। এখন শুধু আমার অধিকার। আমাদের বৈধ সম্পর্কের জোরে আমি উনাকে আমার কাছে বেধে রাখবো।

উনি নিশ্চই এখনো অন্য কাউকে ভালো বাসলে আমাকে নিয়ে করতো না।যে যাই বলুক উনি না চাইলে উনাকে কেউ জোর করে বিয়ে করাতে পারতো না।উনি চেয়েছিলেন উনার জীবনে কেউ আসুক।তাই আমি এসেছি।

সোহা মাথাটা উচু করে দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,, এই যে জামাই জান আপনি শুধু আমার বুঝলেন।অতীতে যেই রঙ,ঢঙ ই করেন না কেনো।এখন সব বন্ধ। আপনার মনে ভালোবাসা জাগাবো নতুন করে আমার জন্য।

শুনছেন আমার কথা? বলেই দায়ানের গালে চুমু খায়। আবার নিজে নিজেই হাসে।দেখো কি নিশ্চিন্তে শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে লোকটা।আচ্ছা যদি জানতো আমি উনাকে চুমু খেয়েছি তাহলে কি করতেন উনি? নিশ্চই খুব রা’গ করতো।

সোহা নিজেই এবার সব জড়তা বাদ দিয়ে,, দুই হাত দায়ানের পিঠে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

দায়ান সোহার আলিঙ্গন পেয়ে আরো কাছে এসে ঘুমিয়ে যায়।

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।এই যে বর মশাই আপনিতো আমাকে জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমুচ্ছেন।আমারতো আর ঘুম আসবে না আজ। সব সময় তো ঘুমিয়েই রাত পার করি। আজ না হয় আমার জা’ন টারে দেখেই রাত কাটিয়ে দিবো।

কবে না কবে আবার এমন সুযোগ পাবো কে জানে।আপনি যেই মু’ডি। তাই সুযোগ যখন পেয়েছি আপনাকে কাছ থেকে দেখার তাই আর হা’ত ছাড়া করবো না।

একজন মনের মানুষকে প্রান ভরে দেখতে ব্যস্ত। আরেকজন শান্তির ঘুম ঘুমোতে ব্যস্ত।

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানেনা। সকাল বেলা জানালার ফাঁক দিয়ে আসা রোদের আলোতে ঘুম ভেঙে যায় সোহার।
ঘুমে ব্যা’ঘা’ত ঘটলে কারই বা ভালো লাগে।সোহা বিরক্ত হয়ে চোখ পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায়।বাইরে মানুষ জনের আওয়াজ শুনা যায়।

সোহা এবার ঘাড় ফিরিয়ে দায়ানের মুখের দিকে তাকায়। দায়ান এখনো ঘুমুচ্ছে।হাত দিয়ে দায়ানের কপাল চেক করে। নাহহ জ্বর এখন বেশি নেই। কপালটা হালকা গরম।
ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।

এখন এখান থেকে যে করেই হোক কেটে পরতে হবে। নয়তো দায়ান উঠে গেলে সব শে’ষ।

ঘুমের ঘোরে দায়ানের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেছে। সেই সুযোগে সোহা আস্তে করে খুব সাবধানে বেড়িয়ে আসে দায়ানের বাধন থেকে।

বিছানা থেকে নেমে নিজের গায়ে ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে নেয়।যাওয়ার জন্য হাঁটা দিতেই কিছুর সাথে হোঁচট খায়।যাতে করে শব্দের সৃষ্টি হয়।

সোহা চোখ বন্ধ করে। না জানি উনি জেগে গেছে। দায়ানের দিকে আস্তে করে তাকায়।দায়ান হালকা করে নড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। সোহা স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। মেঝে তে পরে থাকা বাটি আর কাপড় টা উঠিয়ে নেয়।নিচে পরে থাকা পানি গুলো একটা কাপড় দিয়ে মুছে নেয়।

রুম থেকে বেরিয়ে এসে ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য নিজের রুমে ঢুকে যায়।ফ্রেশ হয়ে আবার উনার জন্য রান্না করতে হবে।অনেক বেলা হয়ে গেছে।খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে। নয়তো আবার জ্বর আসবে।লোকটা যা কান্ড করলো জ্বরে।

—————————————-

রান্না সেরে সোহা দায়ানের রুমের দিকে এগোয়। উঠিয়ে ফ্রেশ হতে বলে,,তারপর খাবার নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিবে।

দায়ান মাত্রই ঘুম থেকে ওঠেছে।উঠার মতো শক্তি পাচ্ছে না। হাত পা কেমন ম্যা’জ ম্যা’জ করছে।খুব কষ্টে উঠে বসে।

তখনই সোহা এসে রুমে ঢুকে।

উঠে গেছেন আপনি? আমি আপনাকেই ডাকতে এসেছিলাম।ভালো হয়েছে উঠেছেন।যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।

দায়ান সোহার দিকে তাকায়। কাল জ্বরের ঘোরে কি করেছে কিছুই মনে করতে পারছেনা সব ঝাপসা।

–কাল তুমি আমার রুমে এসেছিলে?

— হুম। জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছিলো। আমি এসে জলপট্টি দিয়েছি।শরীর মুছে দিয়েছি।

দায়ান শরীর মুছে দেওয়ার কথা শুনে,,নিজের দিকে তাকায়।নিজের শরীরে টি-শার্ট না দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে সোহার দিকে তাকায়। তুমি আমার শার্ট খুলেছো?

–হুম কেনো?

— হোয়াট!

— এতো চিললানোর কি আছে?

— চিল্লাবোনা তো কি করবো? তুমি আমার পার্মিশন ছাড়া আমার শার্ট চেঞ্জ করেছো।

— তো কি হয়েছে?

— কি হয়েছে মানে,,,জানোনা কি হয়েছে?

— এমন ভাব করছেন যেনো আমি আপনার ই’জ্জ’ত হ’রণ করেছি।হুহ

— এর থেকে কম কি করেছো মেয়ে।

— এজন্য মানুষের ভালো করতে নাই।যার জন্য করলাম চু’রি সেই বলে চো’র।

— ওটা চো’র না চু’ন্নি হবে।

— আপনি এটা আমায় বলতে পারলেন? আপনার বু’ক টা একটুও কাঁপলো না?

— মুখে বলেছি বু’ক কাঁপবে কেনো? আশ্চর্য!

— হয়েছে হয়েছে। থামেন এবার।ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার আনছি।

দায়ান উঠে দাঁড়ায় বাথরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।এক পা হাঁটা দেওয়ার পরই মাথাটা কেমন চ’ক্কর দিয়ে উঠে।ব্যালেন্স রাখতে বেডের পাশের আলমারি ধরে।

দায়ানকে এমন করতে দেখে সোহা এসে দায়ানকে ধরে।

আপনি কি বলুন তো আমায়।মাথা ঘুরে যদি এখন পরে যেতেন কি হতো? আমায় বলতে পারলেন না,,বলে সোহা দায়ানকে ধরে ওয়াশরুমের ভিতরে দিয়ে আসে।

আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি ওয়াশরুমের বাইরেই আছি।

দায়ান ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে। সোহা দায়ানকে ধরে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়।দায়ানের হাত মুখ মোছা হয়নি এখনো।

সোহা নিজের ওড়না টা দিয়ে দায়ানের মুখ হাত মুছে দেয়।

— ওড়না দিয়ে কেনো মোছতেছো? আজব টাওয়াল আছে না।

— থাকুক। আমি এইটা দিয়েই মোছবো।

— এইটা হাত পা মুখ মোছার জন্য নয় বুঝলে? সব কিছুই একটা নির্ধারিত কারণে তৈরি করা হয় ওড়নার একটা নির্ধারিত কারণ রয়েছে। ঐটা হাত পা মোছার জন্য নয়।গায়ে জড়ানোর জন্য।

— সে যেই কারণই থাকুক।আজ থেকে আমার ওড়না কে আপনার সেবায় নিয়োজিত করে দিলাম।

আজ থেকে আপনার হাত,পা,মাথা,মুখ সব আমার ওড়না দিয়েই হবে।
টাওয়াল আপনার জন্য আমি নিষিদ্ধ করে দিলাম।

” তবে মনে রাখবেন এই কাজ শুধু আমি আমার ওড়না দিয়ে করবো।” অন্য কেউ না।

— দায়ান শুধু ড্যা’প ড্যা’প করে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়।

কিন্তু,,,,,,,,,,,,,,

— কোনো কিন্তু না।কেনো আপনার ভালো লাগেনা? আমার ওড়না দিয়ে এই কাজ গুলো করলে?

দায়ান এবার চুপ হয়ে যায়।কি বলবে সে? বলার মতো কিছু রেখেছে এই মেয়ে।কেমন কথার পেঁচে ফেলে দিলো।

মনে মনে দায়ান বলে,,,,ভালো লাগে না মানে?খুব ভালো লাগে।প্রতিদিন এই কাজ গুলো করে দিলে খুবই ভালো হয়।আমার করতে একদমই ভালো লাগে না। তুমি এই কাজগুলো করার দায়িত্ব নিয়ে নাও প্লিজ।

তাহলে আমার বিরক্ত ও লাগবেনা।তোমার ওড়না থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ টা আমি প্রতিদিন উপভোগ করতে পারবো।

আবার নিজের মন কে বুঝ দেয়।এসব কি বলছিস দায়ান? তর মাথা ঠিক আছে তো? কি সব বলছিস।এই আধা পা/গল মেয়েটার সাথে থাকতে থাকতে আমিও পা/গল হয়ে যাচ্ছি উফফ।

এই কথা গুলো যদি এই মেয়ে শুনতো,, তাহলে আকাশে উড়ে বেড়াতো।

দায়ানের আ’বোল’তা’বোল ভাবার মাঝেই কখন যে খাবার আনতে গিয়ে,আবার খাবার নিয়ে রুমে এসে পরেছে বুঝতেই পারেনি দায়ান।

সোহা খাবার দায়ানের মুখের সামনে ধরে,,,নিন খান বলার পর দায়ানের হুঁশ আসে।

নিজেকে স্বাভাবিক করে সোহার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে বলে,,,আমাকে দাও। আমি নিজেই খেতে পারবো।

কিন্তু আপনি কাটা হাতে খাবেন কি করে?

চামচ আছে কি করতে?

বলেই টেবিলে থাকা বাটি থেকে চামচ উঠিয়ে নেয়।

সোহা দায়ানের কান্ড গুলো দেখছে।হুহ নিজের কাটা হাতে খাবে ঢং!

দায়ান অনেক চেষ্টা করেও ডান হাতে চামচ ধরবে দূরে থাক।আঙ্গুল ই সোজা করতে পারছে না।ব্যাথায় ট’নট’ন করছে।

কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বাম হাতে চামচ দিয়ে খাবার উঠিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করে। বাম হাতে কি খাওয়া যায় নাকি? প্লেট থেকে কোনোভাবে খাবার উঠাতে পারছেনা চামচ দিয়ে। অল্প উঠাতে পারলেও বার বার হাত কেঁপে কেঁপে পরে যাচ্ছে।

সোহা দায়ানের কান্ড দেখে হেসে দেয়।

সোহার হাসি দেখে দায়ান রা’গী চোখে তাকায়।

সোহা দায়ানকে পাত্তা না দিয়ে আবার খাবার নিয়ে দায়ানের মুখের সামনে ধরে।

বুঝলেন এই দুনিয়ায় ভালো মানুষের কোনো দা’ম নাই।
তাতে আমার কী? আমিতো বিরিয়ানি খাবো।তাও আমার জামাইর হাতে বানানো।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here