তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -৩০+৩১

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩০
#Jhorna_Islam

তোমার পাশে এতো বড় একটা জল’জ্যা’ন্ত মানুষ বসে আছে,তোমার হাত থেকে মালা পরার জন্য আর তুমি তাকে দেখতেই পাইতেছো না? দিজ ইজ নট ফ্যায়ার বউ।

শেষ মেষ কি না আমি একটা কা’না মেয়েকে বিয়ে করলাম? এই ছিলো আমার কপা’লে।বলেই মুখটাকে দুঃখী দুঃখী ভাব করে ফেলল দায়ান।

সোহা ফ্যাল ফ্যাল করে দায়ানের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে।

এ আমি কি দেখছি। উনি কি সত্যিই আমার সামনে? নানা তা কি করে হয়।উনি আসবেন কোথা থেকে? আমার মনের ভু’ল।উনিতো আমায় চান না।ঘৃণা করেন।উনার জীবন থেকে চলে যেতে বলেছেন।সব আমার মনের ভুল।

লোকটা কে ভালোবেসে শেষ মেষ পা/গল ই হয়ে গেলাম আমি?

কি ব্যাপার পাগলি এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে? আমায় কি একটু বেশি সুন্দর লাগছে নাকি?
বলেই ব্রু উচায়।

সোহা তার এক হাত দায়ানের গালের কাছে নেয় ছোয়ার জন্য। আবার থেমে যায়।ভাঙা গলায় জানতে চায়,,,,,

আপনি এখানে? এটা সত্যি আপনিতো? আমি স্বপ্ন দেখতেছি তাই না? জেগে জেগেও আপনাকে দেখতেছি।

নিন আমার হাতে একটা চিমটি কাটেন তো।একবার মনে হচ্ছে আপনি বাস্তবেই আছেন। আরেকবার মনে হচ্ছে সবই আমার চোখের ভু’ল।বলেই দায়ানের সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়।

দায়ান মুচকি হেসে সোহার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।খুব যত্ন সহকারে হাত টা উঠিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়।

আমি তোমার কাছে সত্যি সত্যি এসেছি পাগলি এটা কোনো স্বপ্ন না।

সোহা দায়ানের কথাটা শুনে বুঝে গেছে সত্যি এটা দায়ান।তারপর হাতটা ছাড়িয়ে ছিটকে এক হাত দূরে সরে আসে।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,,, আ-আপনি আপনি এখানে কি করছেন? আর জানলেন কিভাবে আমি এখানে আছি?

তুমি ভুলে গেছো যার কাছে তুমি আছো।সে তোমার ভাই হওয়ার আগে আমার বন্ধু।

তার মানে রুশ ভাইয়া?

ইয়েস ম্যাম।

এরই মধ্যে রুশ এসে ওদের সামনে হাজির হয়।

সোহা রুশের দিকে রা’গী চোখে তাকায়। রুশ শুকনো ঢুক গিলে বলে,,এভাবে তাকাইস না বোন।আমার হার্ট টা খুব দূর্বল।তর তাকানো দেখে না জানি কখন এ’ট্যা’ক ফ্যা’টাক করে বসে।

বিশ্বাস কর আমি বলতে চাইনি।এই ব্যাটার অবস্থা দেখে খুব মায়া হচ্ছিল যতই হোক আমার বন্ধু না? দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াইতে ছিলো।তর জন্য। পুরো শহর অর্ধেক খোজে ফেলেছে তোকে।খাওয়া দাওয়া ঘুম সব ভুলে গিয়ে তোকেই খুজতেছিলো। সাথে আমাকে ও যেতে হতো।

কিন্তু দুঃখের বিষয় কি জানিস বোন? ওর কষ্ট সহ্য করতে পারতেছিলাম না দেখে আমি তোর কথা না শুনে ওরে বললাম তুই আমার বাড়িতে আছিস।আর ও কি করলো।দেখ আমার এতো সুন্দর নাকটায় ঘু’ষি মেরে দফারফা করে দিয়েছে।বলেই মুখে দুঃখী ভাব করে। ভালো মানুষের তো আজকাল কোনো দাম নাই।

সোহা রুশের নাকের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি অনেকটা ফুলে আছে।আহারে বেচা’রা ওদের দুইজনের চক্করে পরে,,কি অবস্থায় পরেছে।

সোহা রুশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে দায়ানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। যার মানে আমার ভাইকে আপনার মারার সাহস কে দিয়েছে?

কি ব্যাপার সোহা রানী এভাবে তাকাও কেনো? আমার কি দোকানে বলো? তোমার ভাই এটা ডিজার্ভ করে।

এবার চলোতো সব কথা পরে হবে।বাড়ি চলো এবার।

— কার বাড়ি কিসের বাড়ি?

— কার বাড়ি মানে? আমার বাড়ি।আই মিন আমাদের বাড়ি।

— আমার কোনো বাড়ি নেই।

— মাইর চিনো? মাইর লাগাবো।বাড়ি চলো।অনেক হয়েছে বাড়ি গিয়ে বাকি কথা হবে।চলো।

— আমি কোথাও যাবো না শুনেছেন আপনি।ভুলিনি আমি কিছু। আপনি আমায় কি কি বলেছিলেন। সব মনে আছে।আপনি আমায় ঘৃণা করেন? আমার থেকে মুক্তি চান? আমার মুখ ও দেখতে চান না।টাকার জন্য আমি আপনার কাছে পরে আছি?

— এভাবে বলো না প্লিজ। বাড়ি চলো আমি সব তোমায় বুঝিয়ে বলবো।ওকে? সব শুনে যদি তুমি আমায় শাস্তি দিতে চাও।তাহলে তা আমি খুশি মনে মাথা পেতে নিবো।

— আমার কোনো বাড়ি নেই। আমি আপনার সাথে যাবো না।কেনো যাবো? কোন অধিকারে যাবো?

— ঐটা তোমারই বাড়ি পাগলি।আর তুমি আমার বউয়ের অধিকারে যাবে।

— চাইনা আমার কোনো অধিকার। কিসের জন্য আমার কাছে এসেছেন? আবার আমায় নিয়ে গিয়ে খারাপ ব্যবহার অপমান করার জন্য?

— এখনো বুঝতে পারতেছো না পাগলি কিসের জন্য নিতে চাই? থাক তুমি ছোটো মানুষ বুঝতে হবে না।

— সোহা চুপ হয়ে থাকে।

— চলো চলো বাড়ি চলো।এই কয়দিনে তো আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছো তুমি মেয়ে।না নিজের হাতে খেতে পারছি।আর তোমার হাতের কফিটাও খুব মিস করছি।দেখো এই কয়দিনে আমার অবস্থা কি হয়ে গেছে।

— সোহা এবার দায়ানের দিকে ভালো ভাবে তাকায়।সত্যি লোকটার চোখ মুখ খুব শুকনো লাগছে।চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। হয়তো না ঘুমানোর কারণে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।সব মিলিয়ে দায়ান কে কেমন অগোছালো লাগছে।সোহার খুব মায়া হলো।ভালোবাসার মানুষের কষ্ট কি দেখা যায়? সে যতই অন্যায় করুক না কেনো।

সোহা কিছু বলতে নিবে,,, তার আগেই ওর কাশি উঠে যায়।অনবরত কাশতে থাকে।কাশতে কাশতে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।

দায়ান তারাতাড়ি করে এগিয়ে আসে সোহার কাছে। এসে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। উফফ আল্লাহ কি রকম ঠান্ডা টা লেগে গেছে।

সোহা কাশি বাদ দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে দায়ানের দিকে তাকায়।

আর একটা কথাও না চলো বাড়ি চলো। বাড়ি গিয়ে কথা হবে।

আমি যাবো না আপনার সাথে।

সোহা মাথা ঠান্ডা আছে।ঠান্ডাই থাকতে দাও গরম করো না।তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের সামনে তোমায় কোলে তুলে নেই? আমার কোনো প্রবলেম নেই।তুমি চাইলে আমি নিতেই পারি।বলেই একটা চোখ টিপ দেয়।

সোহা অবাক হয়ে দায়ানের দিকে তাকায়।কি বলছে কি এই লোকটা।মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? আরেক বার রুশের দিকে তাকিয়ে দেখে রুশ মিট মিটিয়ে হাসছে।

দায়ান কে বলে,,,নি’র্ল’জ্জ লোক।

হুু আরো হবো যদি তুমি না যাও এখন।দেখতে চাও?

রুশ গলা খেকারি দিয়ে বলে।যা বোন বেচারাটাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ।আবার ও যদি তেরিবেরি করে তাহলে সোজা বাড়ি থেকে তোকে নিয়ে আসবো।

আরেকটু কাছে গিয়ে সোহার কানে কানে বলে,,সহজে মাফ করবি না বুঝলি।একটু ঘুরা দেখুক কেমন লাগে।এতোদিন পারতি না ঘুরাতে এখন পারবি কারণ তোরে বেচারা খুব ভালোবেসে ফেলেছে বুঝলি।

সোহা রুশের চোখের দিকে তাকায়।

রুশ চোখের ইশারায় তাকিয়ে বোঝায় যে হ্যা সত্যি।

খুশিতে সোহার মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়।

তার মধ্যে দায়ান সোহার হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,,,অনেক হয়েছে তোদের গোপন কথা।নাও আমি আমার বউকে নিয়ে গেলাম।বলেই সোহাকে নিয়ে যেতে লাগলো।

রুশ দায়ানের কান্ড দেখে হাসে।মনে মনে প্রার্থনা করে এই দুটিতে যেনো সুখে থাকে সবসময়।

—————————————–

নোহা আজ খুবই ব্যস্ত কারণ আজ তার নানি শ্বাশুড়ি ও ওমির মামাতো বোন আসবে তাদের বাড়িতে বেড়াতে।

তাই সকাল থেকেই সব গোছগাছ রান্না বান্না ঘর দুয়ার ভালো করে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। নোহার বিয়ের সময় যে এসেছিলো,আর আসেনি ওমির নানি।তখন নোহা নতুন ছিলো ভালো করে কথাও হয়নি।এতো লোকজন ব্যস্ততার জন্য। তার উপর বিয়ের দুইদিন পরই চলে গিয়েছিল ।

এতো বছর আর আসেনি। ওমিদের সাথে ওনার কথা হলেও নোহার সাথে হয়নি।উনি ও চায়নি কথা বলতে,নোহা ও আগ বাড়িয়ে বলেনি।
মহিলাটা খুবই গম্ভীর টাইপের।কথা খুব কম বলে।

কালই শ্বাশুড়ি জানিয়ে দিয়েছে,তার মা আজ আসবে।সব কিছু যেনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।উনার মা নোংরা জিনিস একদম পছন্দ করেন না।

তাই নোহা শ্বাশুড়ির কথা মতো ঘর-দুয়ার সব পরিষ্কার করে এখন নানি শাশুড়ী ও ননদের পছন্দের খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত।

অনেক সময় নিয়ে খুবই যত্ন সহকারে নোহা রান্না শে’ষ করে।তার মধ্যেই বাইরে হইচই, চেচামেচি শোনা যায়। যার মধ্যে নোহার শাশুড়ীর গলাটাই বেশি শোনা যায়। এই মহিলা একাই চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় তোলার জন্য যথেষ্ট। এই বয়সে এতো শক্তি কই থেকে পায় বোঝেনা নোহা।
বয়স হয়েছে কই রোজা নামাজ পড়ে দিন পার করবো তা না।কু’ট’নীতি’তে ব্যস্ত এই মহিলা।কিছু মানুষের প্রধান কাজই হচ্ছে অন্য কে জ্বালানো। তাদের মাঝে নোহার শাশুড়ীর নাম প্রথমে থাকতো যদি গণনা করা হতো।

নোহা রান্না ঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে।এসে দেখে সকলে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে।

শ্বাশুড়ি নিজের মায়ের সাথে কি যেনো বলছে।

আজ ওমিও নানি আসবে বলে কাজে যায়নি।সোফায় বসে ওমির মামাতো বোন তমার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।কি যেন নিয়ে হাসাহাসি করছে।তমা ওমির গায়ের সাথে গা ঘেঁষে বসে আছে। হাসতে হাসতে ওমির উপর ঢলে পরছে।
নোহা একবার ওমির দিকে তাকায়। তারপর আবার চোখ সরিয়ে নেয়।ব্যাপারটা দেখে নোহার যতটা খারাপ লাগার কথা তা লাগেনি আশ্চর্য।এসব বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে নানি শ্বাশুড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে সালাম দেয় হাসি মুখে।

ওমির নানি নোহার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে সালামের জবাব দেয়,গম্ভীর কন্ঠে।

তারপর ওমির মাকে উদ্দেশ্য করে বলে আমাকে রুমে দিয়ে আয়।বাইরে থেকে আসছি।শরীরে ময়লা ময়লা লাগতেছে।

নোহার শাশুড়ী সম্মতি জানিয়ে রুমের দিকে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে নোহাকে বলে যায়,যেনো রাতের খাবার সব ঠিকঠাক ভাবে টেবিলে রাখে।

নোহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।আবার না জানি কোন অশান্তি বাড়িতে এলো।তারপর আবার নিজের কাজে চলে যায়।

রাতের বেলা নোহা খাবার টেবিলে রেখে সবাই কে ডাক দেয় খাওয়ার জন্য।

ওমি আর তমা এতোসময় একইসাথে বসে গল্প করতেছিলো।খাওয়ার জন্য ডাক দেওয়ায় দুজন একসাথেই আসে।তমা ওমির হাত ধরে এসে টেবিলের পাশে আসে।দুজন পাশাপাশি চেয়ার টেনেই বসে।নোহা শুধু একবার ওদের দিকে চোখ বোলায় কিছু বলেনা।নোহার তাকানোর সময় তমা ও নোহার দিকে তাকায়। নোহাকে দেখে তমা একটা গা জ্বালানো বি’দ্রু’প হাসি দেয়। নোহা তমার থেকে চুপচাপ চোখ সরিয়ে নেয়।তখনই নোহার শাশুড়ী ও নানি শ্বাশুড়ি খাবার টেবিলে এসে বসে। নোহা তাদের খাবার বেড়ে দেয়।

নানি নোহাকে খেতে বসছেনা বলে,,নিজের মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,জামাই বাবাতো আসতে আসতে অনেক রাত হবে।ওর জন্য অপেক্ষা না করলেও চলবে।কিন্তু এখন যারা আছে সবাই একসাথে খেতে বসলে খুশি হতাম।এমন ভাবে আলাদা আলাদা খাওয়া আমার পছন্দ না। ওমির মা বোঝে গেলো নোহাকে উদ্দেশ্য করে তার মা এই কথা বলছে।তাই উনি বললেন খেতে বসে পরো।বলেই মুখটা কেমন করে খাওয়া শুরু করলেন।

নোহা কথা বাড়ায়নি নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসে পরে। খাওয়ার সময় সবাইকে মাছের টুকরো দেয় নোহা একটা করে।বাকি শুধু এক পিস আছে। নোহার শাশুড়ী বলে মাছ আর নেই? আহারে তোমার ভাগ্যে বোধয় নেই। ঐটা তোমার শ্বশুরের জন্য রাখো তুমি না হয় ঝোল দিয়েই খেয়ে নাও। নোহা বেশ বুঝতে পারছে উনি ইচ্ছে করেই একটা মাছের পিস কম দিয়েছেন। ওমির দিকে একবার নোহা তাকালো সে খেতে ব্যস্ত অন্য দিকে তার খেয়াল নেই।
নোহা অন্য তরকারি নিয়ে চুপচাপ খেতে থাকে। এতোসময় সব খেয়াল করেছিলো ওমির নানি।নিজের প্লেটের মাছের টুকরো টা তুলতে তুলতে বলে,,, আমার একদম মাছ খেতে ইচ্ছে করছেনা। বলেই নোহার প্লেটে তুলে দেয়।

ওমির মা বলে উঠে কিন্তু মা এটা তো তোমার প্রিয় খুব।তোমার জন্যই করা হয়েছে তুমি খাবে না?

নাহ খাবো না।যারে দিয়েছি সে যেনো চুপচাপ খেয়ে নেয়।

নোহা ছলছল চোখে নানির দিকে তাকায়।

নানি নোহার দিক থেকে চোখ সরিয়ে খেতে মন দেয়।

———————————————-

দায়ান সোহাকে বাড়িতে নিয়ে এসে নিজে গাড়ির ডোর খুলে দিয়ে সোহার হাত ধরে নামায়।

হাত ধরেই বাড়ির ভিতর ঢুকতে থাকে।

সোহা দায়ানের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠে,,, এমন ভাব করছেন যেনো আমি হাটতে পারি না।ছাড়েন আমার হাত।আমি একাই যেতে পারি।

হু হাটতে পারো কই শুধু তো দৌড়াও। এজন্যইতো দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলে। এজন্যই হাটতে শিখাবো আমি ধরে ধরে। আর হাত ছাড়বো মানে? এই যে ধরেছিনা হাত,, আর ছাড়া পাবা না গো বউ।ছাড়ছিনা আমি তোমায়।

সোহা দায়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। লোকটা কেমন হয়ে গেলো।কিসব বলে চলেছে।উনিতো এমন ছিলেন না।

দায়ান বাড়িতে এসে দেখে দরজা ভিড়ানো।কিছু না ভেবে সোহাকে নিয়ে ঢুকে পরে। ড্রয়িং রুমে জমেলা খালা টেবিল গুছাচেছন। দায়ান দের দেখে বলল,,,,, তোমরা এসে গেছো? কই ছিলে তোমরা? বাড়িতে এসে কাউকেই পাইনি।ঐদিন এসে দেখি দরজা খোলা তোমরা কেউ বাড়িতে নাই।ভাজ্ঞিস আমি এসেছিলাম অন্য কেউ না।আর খাবার গুলো টেবিলেই পঁচে পরেছিলো।আমি আবার রান্না করেছি।তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করতেছিলাম।তোমরা না আসলে খাবার ফ্রিজে রেখে চলে যেতাম।

দায়ান বাবা তোমার রুমে ঐসব কি করে ভাঙলো? র/ক্ত পরেছিলো।আমি সকালে পরিষ্কার করে দিয়েছি।কোথাও কি ব্যাথা পেয়েছো?
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি বলে,,,কিছুনা খালা তুমি এবার যাও আমরা খেয়ে নিবো।জমেলা খালা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।

দায়ান মেকি হেসে সোহাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। সোহা বুঝতে পেরেছে কিছু একটা লুকুচেছ তাই তারাতাড়ি দায়ানের রুমে যায়। দায়ান সোহাকে দেখে বলে তুমি? সোহা কিছু না ভেবে দায়ানের ডান হাত টা টান দিয়ে ধরে এনে দেখে।রুমাল বাঁধা রুমালটা ময়লা হয়ে আছে।
র/ক্ত শুকিয়ে গেছে। ক্ষ’ত টা মা’রা’ত্মক আকার ধারণ করেছে।সোহা দেখেই চোখ বন্ধ করে ফেলে।নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। নিজে ফাস্ট এইড বক্স এনে দায়ানকে বসিয়ে নিজে পাশে বসে।
দায়ান বলে আরে আমি করে নিবো।তুমি যাও কোনো সমস্যা নাই। সোহা রা’গী চোখে তাকায়। দায়ান আর কথা বাড়ায় না চুপ হয়ে যায়। হাতে নতুন করে বেন্ডেজ করে উঠে কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায় সোহা।দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে নিজেও ফ্রেশ হতে যায়।

———————————

সোহা ফ্রেশ হয়ে জামা পাল্টিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে।দায়ান তাকে ভালোবাসে রুশের কথাটা বারংবার কানে বাজতেছে।খুশিতে দৌড়ে গিয়ে দায়ানকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতেছে।

সোহার ভাবনার মাঝেই দায়ান সোহার রুমে এসে ঢুকে।সোহাকে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছু না বলেই,,,বিছানায় উঠে গিয়ে সোহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।

সোহা কিছুটা ভ’য় পেলেও নিজেকে সামলে নেয়।দায়ান কে নিজের কোলে মাথা রাখতে দেখে শরীর শিউরে ওঠে।

খাবার খাবানা পাগলি? খুব খিদে পেয়েছে তো। আসো খাবো।এই কয়দিন আমার কিছুই খাওয়া হয়নি।

দায়ানের কথা শুনে সোহার খুব খারাপ লাগলো।তাও নিজেকে সামলে নিয়ে মনে মনে বলল,,আপনার উপর থেকে আমার রা’গ কখনই পরে গেছে। তাও আপনাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।দেখি আপনি কি কি করতে পারেন আমার জন্য,,, এতোদিন অনেক তো অবহেলা করেছেন।এখন একটু কষ্ট করেন।বেশি না জাস্ট একটু খানি।এক চিমটি আপনাকে বেশি কষ্ট দেওয়া কি আমার পক্ষে সম্ভব? উহু কখনো না।

#চলবে,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩১
#Jhorna_Islam

সোহাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে দায়ান সোহার হাতটা নিজের মাথায় টেনে নেয়।
মাথাটায় একটু হাত বুলিয়ে দাওতো ঐদিনের মতো।মাথাটা খুব ধরেছে।খুবই আদুরে ভঙ্গিতে বলে।

সোহা চুপচাপ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
দায়ান সোহার হাতের ছোয়া পেয়ে চোখ বুঁজে নেয়।।।

আরেকটু জোরে টানো। বলেই চুপ হয়ে যায়।

সোহা প্রায় বিশ মিনিটের মতো দায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটার গভীর নিশ্বাস পরছে।ঘুমিয়ে গেছে।জাগাতে ইচ্ছে করলো না।আরো আধা ঘণ্টার মতো দায়ানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে বসে রইলো।

পরোক্ষনেই মনে হলো দায়ানের খিদে পেয়েছে অনেক বলেছিলো।কিছুই খাওয়া হয়নি এই কয়দিন। চোখ মুখ শুকিয়ে আছে।এরকম ভাবে না খেয়ে থাকলেতো অসুস্থ হয়ে পরবে।

এখনই ডাকতে হবে লোকটা কে ভেবেই সোহা আস্তে করে দায়ানকে ডাকে,,, শুনছেন? উঠুন খাবেন না? আপনার না খিদে পেয়েছে?

দায়ানের কোনো সারা শব্দ নেই সে ঘুমে ব্যস্ত। সোহা আবার ডাকে দায়ানকে তাও কোনো সারা পায় না।

এইবার দায়ানের শরীরে একটু ধা’ক্কা দিয়ে ডাক দেয়।

দায়ান নড়েচড়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে,,,একটু ঘুমোতে দাও না।প্রচুর ঘুম পেয়েছে।এই কয়দিন এক ফোঁটা ও ঘুমোতে পারি নি।এখানে তোমার কোলে প্রচুর শান্তি লাগছে ঘুমোতে।বলেই আবার চোখ বুজতে নেয় দায়ান।সোহা দেয়না তারাতাড়ি দায়ানকে কোল থেকে উঠিয়ে দেয়।

দায়ান এতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বিরক্তিকর চোখে সোহার দিকে তাকায়।

সোহা দায়ানকে পা’ত্তা না দিয়ে ব’লে উঠে,,,,, ঘুম পরে আগে খাওয়া।আপনার না খিদে পেয়েছে? উঠুন খাবেন চলুন।পরে যতো ঘুম পারেন ঘুমিয়ে নিয়েন।এখন খেয়ে নিবেন আসুন।এখন ঘুম আসলেও পরে খিদের জন্য ঠিক ঘুম ভেঙে যাবে।আরাম করে ঘুমোতে পারবেন না। সো চুপচাপ আসুন খেয়ে গিয়ে ঘুমান।নয়তো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।

দায়ান আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়,, ঠিক আছে তুমি যাও।আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে আসি।নয়তো চোখ থেকে ঘুম সরবেনা।খেতেও পারবোনা।সোহা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।

খাবার টেবিলে খাবার প্লেটে নিতে নিতেই দায়ান এসে পরে।সোহা দায়ানের দিকে তাকায়। বিনিময়ে দায়ান মুচকি হাসি দেয়।

সোহা দায়ানের সামনে প্লেট দিয়ে বলে নিন খাওয়া শুরু করুন।

দায়ান একবার প্লেটের দিকে তো একবার সোহার দিকে তাকায়।

অসহায়ের মতো বলে,,,,তুমি আমার সাথে মজা করার জন্য এনেছো না।আমার হাতের অবস্থা দেখে ও তুমি আমায় নিজ হাতে খেতে বলছো? ঠিক আছে আমি খাবো না। তুমি খেয়ে নাও।আমি গেলাম।আমার খিদে নেই ঘুম পেয়েছে ঘুমোবো।

চুপচাপ বসুন এখানে দিচ্ছি খাইয়ে।একদম উঠবেন না।

দায়ান মনে মনে খুশি হলেও বাইরে প্রকাশ করলো না।দায়ান তো এটাই চায় সোহা তাকে সব সময় খাইয়ে দেক।সোহার হাতে খাবার খেয়ে দায়ান তৃ’প্তি পায়।

সোহা চুপচাপ দায়ানের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরে। খাবার প্লেট টা নিজের কাছে এনে ভাত মাখাতে থাকে।মনে মনে ভাবে ভালো হয়েছে আজ খালা ভাত করেছে। লোকটার এতোদিন ধরে ভালো মতো খাওয়া নেই।ভাত না খেলে শরীরে ব’ল পাবে না।সোহা ভাত মাখাতে ব্যস্ত।

দায়ান সোহাকে দেখতে ব্যস্ত।

সোহার ভাত মাখানো হলে দায়ানের মুখের কাছে এক লোকমা নিয়ে ধরে।

সোহা যে মুখের সামনে খাবার ধরে আছে,,দায়ান এখনো বুঝতেই পারেনি। সে সোহাকে দেখে চলেছে।ধ্যা’ন ভাঙে সোহার কথায়।

কি হলো কই হারিয়েছেন গেলেন? কখন থেকে মুখের সামনে খাবার ধরে আছি।নিন খান তারাতাড়ি।

দায়ান কিছুটা হকচকিয়ে যায়।পরোক্ষনে নিজেকে সামলে,,হাসি মুখে হা করে।সোহা খাবার মুখে তুলে দেয়।

দুই লোকমা খাবার পরই দায়ান দুষ্টুমি করে সোহার হাতে কা’মড় বসায়।সোহা উহ্ বলে উঠে ।

ছিঃ বউ এগুলা কি ধরনের আওয়াজ? লোকে শুনলেতো খারাপ ভাববে।মজার ছলে বলে দায়ান।

সোহা মনে মনে বলে বে’টা খ/বি’শ। আমার সাথে মজা নেয়।

মুখে বলে,,, একদম বা’জে কথা বলবেন না বলে দিলাম। হাতে কাম’ড় দিয়েছেন কেনো? রা/ক্ষস হয়েছেন।বলেই চোখ রাঙায়।

দায়ান কিছুটা ভ’য় পাবার ভা’ন করে বলে,,,ওকে বাবা স’রি।আর দুষ্টুমি করবো না।

সোহা মুখ ভেংচি কেটে আবার দায়ানের মুখে খাবার তুলে দেয়।

দায়ান মুখে খাবার নিতে নিতে বলে,,,তুমি খাবানা? খেয়ে নাও এখান থেকেই। এক সাথে খাই দুজনে।পরে একা খেতে ম’জা পাবানা।

আমি পরে খেয়ে নিবো।এখন খিদে নেই। আপনাকে এতো আমার কথা ভাবতে হবে না।নিজের খাবার চুপচাপ খেয়ে গিয়ে ঘুমান।

ঠিক আছে আমিও আর খাবোনা।তুমি না খেলে।বলেই উঠে দাঁড়ায়।

সোহা আবার দায়ানের হাত টেনে বসিয়ে দেয়।উফফ কি শুরু করলেন বলুনতো।খাচ্ছি আমিও।এবার খুশি? এখন খান।

হ্যা এখন খুশি।তারপর দুজনেই এক সাথে এক প্লেট থেকে খাবার খেয়ে নেয়।

খাওয়া শেষ হলে দায়ান উঠে দাঁড়ায়। সোহার উড়না টান দিয়ে নিজের মুখ নিজেই মুছে। রুমের দিকে হাঁটা দিলেন।

সোহা সব কিছু গুছিয়ে রাখতে রাখতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসে।

সব কিছু গুছিয়ে সোহা নিজের রুমে চলে যায়। নিজের ও ঘুমের প্রয়োজন। এতোদিন তার ও ঘুম হয়নি।বিছানায় গিয়ে শুতে নিবে,,,,এমন সময় দায়ান এসে হা’জির হয়।

একি আপনি এখানে? না ঘুমিয়ে এখানে কি চাই?

দায়ান মাথা চুলকিয়ে বলে,,,না মানে আসলে।

কোনো আসলে নকলে নাই গিয়ে ঘুমান।আপনার ঘুম প্রয়োজন। আমিও ঘুমাবো হাই তুলতে তুলতে।

ঠিক আছে তুমি ঘুমাও।তুমি ঘুমালেই আমি চলে যাবো।

না এখনই যান।

দায়ান চুপচাপ সোহার পাশে এসে দাড়ায়।সোহাকে নিজে বিছানায় শুইয়ে দেয়।।

আরে কি করছে,,,,,,

হুসসস।কোনো কথা না।
সোহার শরীরে কাথাটা টেনে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে সোহার দিকে একটু ঝুঁকে কপালে গাড়ো একটা চুমু খায়। মুচকি হেসে বলে,,,একদম ভ’য় পাবা না ওকে? আমি পাশের রুমেই আছি।কোনো দরকার হলেই আমাকে ডাকবা।

আবার মিনমিনিয়ে বলে,,, তুমি চাইলে আমি এখানেই থাকতে পারি।

সোহা শুনে বলে কি বললেন আপনি?

নানা কিছু না। তুমি ঘুমাও ওকে? আমি গেলাম।বলেই দায়ান বেরিয়ে যায়।

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে নিজের কপালে চুমু দেওয়া জায়গায় হাত বুলায়। মুচকি হেসে বলে,,, আমার পাগল।বলেই লজ্জা পেয়ে দুই হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে।

চারিপাশ নিরব শুনশান। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে মানুষ এখন,,,ঘুমে বিভোর।

ঘড়ির কাটা যখন দুইটার ঘরে,, তখনই সোহার ঘুমের মাঝেই অনুভব করলো,,অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে সে।কেউ যেনো গলা টিপে ধরেছে।কাশি হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারতেছেনা ঠিক মতো।ছটফট করতে লাগলো।

একসময় এক প্রকার চিল্লিয়ে মা বলে ডেকে বসে পরে।রীতিমতো ঘাম ছুটে গেছে হাঁপাচ্ছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।

সোহার চিৎকার শুনে দায়ানের ঘুম ভেঙে যায়। যেহেতু পাশাপাশি রুম তাই সোহার চিৎকার টা ভালো ভাবেই শুনতে পায়।

তরিঘরি করে বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে সোহার রুমে আসে।

এই কি হয়েছে তোমার সোহা? তুমি ঠিক আছো।

সোহা এখনো হাঁপিয়ে চলেছে।

দায়ান সোহার পাশে বসে সোহাকে দুই হাতে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

কি হয়েছে? ভ’য় পেয়েছো? এভাবে ঘেমেছো কেনো এই শীতের মাঝেও।হাঁপাচ্ছো ও।

দায়ানের কথাতে সোহার হুঁশ আসে।সোহা দায়ানকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। সোহার শরীরের কম্পন দায়ান বেশ ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।

সোহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।মনে হলো কে যেনো আমার গলা চেপে ধরে আছে।আমাকে কোথায় যেনো টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।আমি কিছু করতে পারতেছিলাম না।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতেছিলো।বলেই হাঁপাতে থাকে।

দায়ান সোহার মুখের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,,,কিছু হয়নি,,সোনা।স্বপ্ন দেখেছো।কেউ নেই।শান্ত হও।

সোহা এবার কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতে বলে,,আমি খুব ভ’য় পেয়ে,,,,, আর বলতে পারে না কাশি শুরু হয়ে যায়। অনবরত কাশতে থাকে।

দায়ান সোহার অবস্থা দেখে, পিঠে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।আর কাদেনা।রিলেক্স হও।

কাশতে কাশতে সোহার শ্বাস বেড়ে যায়। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।একেকটা শ্বাস নেওয়ার সময় দায়ানের পিঠে রাখা হাত খামচে ধরে। দায়ান বুঝতে পারে সোহার শ্বাস কষ্ট উঠে গেছে।ঐদিনের মতো হলে মেয়েটা বেশি দূর্বল হয়ে যাবে। তাই তারাতাড়ি কিছু করার জন্য চোখ এদিক ওদিক ঘুরায়। সোহাকে জড়িয়ে ধরে আগলে নিয়েই এক হাতে,বিছানার পাশে রাখা ছোটো টেবিলের ড্রয়ার টা খুলে।কাংখিতো বস্তুুটি পেয়ে যেনো স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।

তারাতাড়ি করে ই’নহে’লার টা নিয়ে সোহার মুখের সামনে ধরে বলে।শ্বাস নাও সোনা।
সোহা দায়ানের কথা মতো আস্তে আস্তে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছুটা।

দায়ান ই’নহে’লারটা ঠিক জায়গায় রেখে দেয়। দুই হাতে সোহার মুখ আগলে ধরে।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখের পানিতে ভিজে আছে মুখটা।দায়ান যত্ন সহকারে হাত দিয়েই মুখটা মুছে দেয়।

সোহা চোখ বন্ধ করে আছে।

দায়ান সোহার মুখটা আরো কাছে নিয়ে আসে। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে সারা মুখে।

সোহা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই কেপে উঠে দায়ানের ঠোঁটের স্পর্শে।আরো জোরে দায়ানকে আকড়ে ধরে রাখে।

দায়ান প্রায় অনেক সময় নিয়ে সোহার সারা মুখে চুমু খেয়ে তারপর সোহার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকায়। কিছু হয়নি জান।কেউ নেই। একদম ভ’য় পাবানা।আমি আছি না।ঠান্ডা লাগায় তোমার এমন মনে হয়েছে।

তারপর সোহাকে বালিশে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে বলে তুমি ঘুমোও।

সোহা ভ’য়ার্ত দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকায়।
দায়ান সোহার তাকানো দেখে বুঝে যায় মেয়েটা ভ’য় পাচ্ছে। আ’শ্ব’স্ত করে বলে,,,,ভ’য় পেতে হবে না পাগলি।তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও।এই যে আমি পাশে আছি।কোথাও যাবো না। ঘুমাও বলেই সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে দায়ান।

সোহা তাও যেনো কিছুতেই নিজের ভ’য় টা শান্ত করতে পারছিলোনা।তাই দায়ানের টি-শার্টের নিচের অংশ হাতের মুঠোয় শ’ক্ত করে ধরে রাখে।দায়ান সেই দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসে।

দায়ানের হাত বুলিয়ে দেওয়ার একপর্যায়ে সোহা ঘুমিয়ে যায়। দায়ান এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে বসে নিজেও ঘুমিয়ে যায় বুঝতেই পারে না।

————————————–

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নোহা থালা বাসন ধুয়ে। ঘর দুয়ার ঝাড়ু দেওয়ার জন্য ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখতে পায়।

ওমি আর তমা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। এতো সকালে ওমি কখনো ঘুম থেকে উঠে না।বিয়ের পর নোহা অন্ততো দেখেনি।আজই প্রথম এতো সকালে উঠতে দেখলো।বেশ অবাক হয়েছে নোহা।

তারপর তমার সাথে বাইরে যেতে দেখে কপালে ভা’জ পরে।এ তো সকালে এরা কোথায় যাচ্ছে? এমন তো নয় যে এরা জগিং করে।

নোহা কৌতুহল হয়ে নিজেকে দ’মাতে পারে নি।জিজ্ঞেস করেই বসে,,এতো সকাল সকাল কোথাও যাচ্ছেন আপনারা?

ওমি কিছু বলতে নিবে,তার আগেই তমা ওমিকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,, কেনো নোহা তোমার কাছে বলে যেতে হবে? আমরা যেখানে ইচ্ছে যাই নিজের কাজে মন দাও।

নোহার ও তমার প্রশ্নে মাথায় রা’গ উঠে যায়। সে চি’বিয়ে চি’বিয়ে বলে অবশ্যই বলে যেতে হবে। আমার স্বামী কে নিয়ে যাচ্ছো।তো আমায় বলে যাবা না। আর তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো কেনো? সম্পর্কে আর বয়সে দুটোতেই আমি তোমার থেকে বড়।সো সম্মান দিয়ে ভাবি ডেকে কথা বলবা।

তোমাকে আমি ভাবি ডাকবো? কখনো না।

ওমি এবার বলে,,,আহ তমা তুমি বড্ড বেশি কথা বলো।বলে দিলেইতো হতো কোথায় যাচ্ছিলাম এতো কথা বাড়াও কেনো।তাছাড়া মা তো পরে আমাদের খুজতো।তাই না?

কিন্তু,,,,,,,,,,

এর মধ্যেই ওমির নানির গলা ভেসে আসে।তে’জি কন্ঠে তমা কে ডাকছে।তমা ঢুক গিলে বলে জ্বি দাদি।

কই যাচ্ছিস তুই রুমে আয়।আমার পা ব্যাথা করতেছে টিপে দে এসে।তোকে এখানে টইটই করে ঘুরার জন্য আমার সাথে পাঠায়নি তর মা।আমার খেয়াল রাখার জন্য পাঠিয়েছে।চুপচাপ রুমে আয়।নয়তো আমার হাত কিন্তু উঠবে তর গালে।বলেই নিজের রুমে চলে যান।

তমা নোহার দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়।

এতোসময় নোহা ওমির দিকেই তাকিয়ে ছিলো।নোহার চাহনিতে কেমন অ’স্ব’স্থিতে পরে যায় ওমি।তাই তারাতাড়ি নোহার থেকে চোখ সরিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দেয়।

নোহা ওমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে আওড়ায়,, কা/পুরুষ।

—————————————–

পাখির কিচিরমিচির ও বাইরে গাড়ির হ’র্ণে’র শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সোহার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।

হাই তুলতে তুলতে ঘড়ির সময় তাকিয়ে চক্ষু চ’ড়’কগাছ। আয় হায় এতো বেলা হয়ে গেছে। আর আমি এখনো ঘুম।ভাবা যায় এগুলা?

এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় আওয়াজ হয়।সোহা চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের প্রিয় মানুষটার মুখ দেখে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।

গুড মনিং পাগলি।

সোহা নিজেকে সামলে বলে হুু।

ঘুম হয়েছে ভালো মতো?

হুু।

যাও উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো?

সোহা মাথা নাড়িয়ে উঠে যায়। ১০ মিনিট পর বেরিয়ে আসে।

আজ ঘুম থেকে উঠতে লে’ট হয়ে গেছে। আপনি বসুন আমি এক্ষনি আপনার কফি করে নিয়ে আসছি।

তোমাকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না।নিজের পাশে দেখিয়ে বলে,,,এখানে বসো।

সোহা চুপচাপ গিয়ে দায়ানের পাশে বসে।

এতোদিন তো তোমার হাতের কফিই খেয়েছি। আজ ভাবলাম বউটা যখন ঘুমুচেছ আমিই নাহয় আজ কফি বানিয়ে ফেলি।
একটা কাপ সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,টেস্ট করে দেখোতো কেমন হয়েছে।

যদিও সোহা কফি তেমন খায় না।তাও দায়ান এতো কষ্ট করে বানিয়ে এনেছে।তাই হাতে নিয়ে চুমুক বসায়।উমম অনেক টেস্টি হয়েছে।

দায়ান সোহার কথায় হাসে।

সোহা অর্ধেক কফি খেয়ে কাপটা রেখে দেয়।

দায়ানকে বলে,,একি আপনি খাচ্ছেন না কেনো? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো আপনার টা।

দায়ান সোহার কথাতে সোহার খাওয়া কফিটাই উঠিয়ে খেতে থাকে।

সোহা অবাক হয়ে বলে আপনি আমার এঁটো খাচ্ছেন কেনো? আপনার টা না খেয়ে?

বউয়ের এটো খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে বুঝলা।আর একটাইতো কফি।

একটাই মানে ঐটাতে কি তাহলে?

ঐটাতো খালি?

খালি কেনো? কফি কই?

আনিনি এই এক কাপ ই এনেছি।ঐটা এমনিই এনেছি।আর আমি জানতাম তুমি পুরো কফিটা খাবে না।

সোহা অবাক হয়ে বলে,,,এই আপনি ঠিক আছেন? কি রকম আ’জব বিহেভ করছেন? পে’ত্নিয়ে ধরেছে নাকি আপনাকে?

হ্যা। ধরেছেতো তবে পে”ত্নি না প’রিতে ধরেছে।

“আমার বউ প’রি”

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here