তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -২৮+২৯

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৮
#Jhorna_Islam

রোদের তাপ দাহ বেড়েই চলেছে। কাল যেমন বৃষ্টি ছিলো,সব কিছু ভিজিয়ে ধুয়ে মুছে দিয়ে গেছে। আজ তেমনই রোদের উত্তাপ। সময় বাড়ার সাথে সাথে রোদের প্রখরতা ও বেড়ে চলেছে।

প্রচন্ড রোদের তাপমাত্রা জানালার ফাঁক গলিয়ে ভিতরে ঢুকছে। রোদের আলো দায়ানের মুখে পরায়,, ঘুম ভেঙে যায়। দায়ান চোখ মুখ কোচকে পিট পিট করে চোখ খুলে।ঘুম যেনো এখনো পরিপূর্ণ হয়নি।আরেকটু ঘুমুতে পারলে খুব ভালো হতো।চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানার উপর বসে পরে। মাথাটা ভা’র হয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে কতো সময় মাথার চুল টেনে বসে থাকে দায়ান।

আশে পাশে কোনো কিছুতেই যেনো খেয়াল নেই তার।কই আছে গতকাল কি হয়েছিল সব কিছু মুহূর্তের জন্য মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।

এখনই ক’ড়া করে এক কাপ কফি খেতে হবে।নয়তো মাথার এই ভা’র ভাব সারবে না।

সোহা,,,,,এক কাপ কফি দাও না!!

এইইই সোহা কফি বানিয়ে নিয়ে আসো প্লিজ। মাথাটা প্রচন্ড ভা’র হয়ে আছে। কফি না খেলে শান্তি পাবো না।

আজ এতো লে’ট করতেছো কেনো কফি দিতে? বলেই ঘড়ির দিকে তাকায় দায়ান,,,,,,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কা’মড়ে চোখ কচলিয়ে আবার তাকায়।

কি আজব ঘটনা ঘড়ি কি ন’ষ্ট হয়ে গেলো নাকি? এতো বেলা হলো কি করে সারে বারোটা বাজে? হাও? বলেই নিজের ফোনটা এদিক ওদিক হাত বাড়িয়ে খোজতে থাকে।

বালিশের পাশেই ফোনটা পায় দায়ান।তারাতাড়ি ফোনটা হাতে তুলে নেয় । ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ফোনটা আগে চালু করে।ফোনেও একই সময় দেখে মাথায় হাত। এতো বেলা পর্যন্ত কবে ঘুমিয়েছে দায়ানের মনে পরে না। তার থেকেও বেশি অবাক করা বিষয় হলো,,ফোনের স্ক্রিনে ভেসে থাকা সোহার তেইশ টা মিসড কল।

এসব কি হচ্ছে? বলেই দায়ান নিজের মাথার চুল গুলো টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কালকের ঘটনা গুলো ভাবার চেষ্টা করে। মাথায় একটু চা’প দেওয়া তে সব মনে ও পরে যায়।

কাল রাতের পার্টি।তিশার সাথে দেখা। পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা।রুমে এসেই দায়ান খুব অস্থির হয়ে পরেছিলো।কিছুতেই তিশার সাথে দেখা হওয়া তার সাথে কথা বলতে চাওয়া সহ্য হচ্ছিল না।ভিতরটা খুব অস্থির হয়ে গিয়েছিলো।তিশাকে নিজ হাতে মে/রে দিতে পারলে হয়তো শান্তি পেতো।

নিজেকে যখন কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলো না তখনই চোখ যায়,, বিছানার পাশে টেবিলের উপর রাখা বোতলের উপর।নিজের ভিতরের অস্থিরতা কমাতে কিছু না ভেবেই বোতল নিয়ে এক নিমিষেই শেষ করে দিয়েছিলো।

তারপর কি হয়েছিলো? তারপর কি হয়েছিলো? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে বারংবার। মাথায় আরেকটু চা’প দিতেই সব মনে হতে থাকে। সোহার কাল রুমে আসা।দায়ান কে দেখে অস্থির হয়ে কাছে আসতে নেওয়া। দায়ান সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলা সব কথা। নিজের কানেই বারি খাচ্ছে বারংবার।

দায়ান আঁতকে উঠে। ইয়া আল্লাহ এটা আমি কি করলাম।নে’শা’র ঘোরে সোহা কে তিশা ভেবে আমি কি করে বসলাম।

সোহা,,,সোহা,,,,কই তুমি? গলাটা যেমন আটকে যাচ্ছে দায়ানের।বুক টা কাঁপছে কই গেলো মেয়েটা।বিছানা থেকে তারাতাড়ি নেমে বারান্দা ওয়াশরুম সব চে’ক করতে লাগলো।নাহ কোথাও নেই।সোহা কোথাও নেই।

তারাতাড়ি রুমে থেকে বের হয়ে হোটেলের সব জায়গায় খুঁজে। কোথাও বাদ রাখে না। রিসেপশনিস্টের কাছে গিয়ে ও জিজ্ঞেস করে কেউ কিছু বলতে পারে না।তারপর দারোয়ানের কাছে জানতে চায় দায়ান সোহার একটা ছবি দেখিয়ে। দারোয়ানের কথায় দায়ানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। রাতের বেলা নাকি দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো। দারোয়ান অনেক ডেকেছে শুনেনি। প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে ওনার কথা হয়তো শুনতে পায়নি।

দায়ান আর এক মুহূর্ত ও হোটেলে থাকেনি।গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে।আশেপাশে চোখ বোলাতে থাকে যদি দেখতে পায়। সোহার ফোনে একেরপর এক কল দিতে থাকে। নাহ বার বার বলছে ফোন বন্ধ।

দায়ানের মাথা কাজ করছে না।কই চলে গেলো মেয়েটা।একেতো রাস্তা ঘা’ট কিছুই চিনেনা।এই দিকের।তার উপর প্রচন্ড বৃষ্টি ছিলো এই দিকে।

সোহার কিছু হয়ে গেলো না তো? ভাবতেই বুক টা অজানা ভয়ে কেঁপে ওঠে। না না না দায়ান এসব তুই কি ভাবছিস।কিছু হবে না ওর।কিছু হতেই পারে না।

রাস্তায় অনেক খুঁজেছে। গাড়ি থেকে নেমে ছবি ও দেখিয়েছে লোকজন কে।কেউ কিছু বলতে পারছে না। ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশেই বসে পরে দায়ান। কই খুজবে এখন মেয়েটাকে। মোবাইল হাতে নিয়ে আবার কল লাগায়।বার বার একই কথা ভেসে আসে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে চারিদিকে। দায়ান এখনো সোহাকেই খোঁজে চলেছে সেই দুপুর থেকে। কোথাও নেই মেয়েটা।

তখনি মনে হলো বাসায় চলে যায়নি তো? ভেবেই তরিঘরি করে উঠে দাঁড়ায়। গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের বাসার দিকে ছুট লাগায়।

মনে মনে একটাই দোয়া করতে থাকে। সোহাকে যেনো বাসায়ই দেখতে পায়।

আধা ঘণ্টার রাস্তা দশ মিনিটে ড্রাইভ করে বাসায় আসে দায়ান। দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতে লাগে দায়ান।টেনশনে মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে যে দারোয়ান চাচা কে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারতো সোহা বাড়িতে এসেছে কিনা।

ভিতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছে।হাত পা যেমন মৃদু কাপছে। দরজার পাশে এসে অস্থিরতা টা আরো বেশি বেড়ে যায়। তার চেয়েও বেশি অবাক হয়।দরজা লক হওয়ার পরিবর্তে ভিড়ানো দেখে। মনে মনে খুশি ও হয়।তারাতাড়ি করে ভিতরে প্রবেশ করে চারিদিকে চোখ বোলায়।

রান্না ঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে। দায়ান ঐ দিকে এগিয়ে যায়। আস্তে আস্তে করে পা ফেলে।পা জোড়া যেনো চলছেই না।

রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার পাশে দাঁড়ায়। ভিতরের দিকে তাকিয়ে চোখ জোরা কতোক্ষন স্থির হয়ে যায়।

রান্না ঘরের ব্যক্তি টা কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনের দিকে তাকায়। দায়ানকে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠে,,,,,,,

আরে দায়ান বাবা? তুমি আসছো। তোমরা নাকি কোথাও গিয়েছিলা? আমি আজ সকালেই এসেছি।তোমরা যখন নাই ভাবলাম কাজ গুলো এগিয়ে রাখি। মাত্রই মনে হয় এসেছো? তোমার কি কিছু লাগবে? লাগলে আমায় বলো আমি করে দিচ্ছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমায় খুব ক্লান্ত লাগছে।আমি শরবত করে দিচ্ছি। খেলে ভালো লাগবে।

দায়ান যেমন এখানে স্থির হয়ে গেছে। কতো আশা ছিলো।হয়তো সোহাকে এখানে দেখতে পাবে।। সব আশা ভেঙে গেছে। খা-খালা সোহা,,,,,

বৌমা? চিন্তা করো না বাবা। বৌমার জন্য ও শরবত দিবো।বৌমা ফ্রেশ হতে গেছে তাই না? তুমিও যাও।দায়ান বুঝে গেছে সোহা এখানে আসেনি।

দায়ান আর ঐখানে না দাঁড়িয়ে রুমে চলে আসে। রুমে এসে খাটে হেলান দিয়ে মেঝেতেই হাত পা ছড়িয়ে বসে পরে।

গ্রামে চলে যায় নিতো সোহা? বাই এনি চান্স যদি গিয়ে থাকে। কিন্ত খোঁজ নিবে কি করে সোহার বাড়ির নাম্বার ও তো নেই দায়ানের কাছে।কখনো নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করেনি।আজ আফসোস হচ্ছে কেন করে নি?

পরোক্ষনেই মনে হয় চাচার কাছে তো নাম্বার আছে। ভেবেই চাচাকে কল লাগায়।চাচা হয়তো মোবাইলের পাশেই ছিলো তাই তারাতাড়ি ই রিসিভ করে।

— হ্যা-হ্যালো চাচা।

— হ্যা দায়ান বাবা বলো। কি অবস্থা তোমার কেমন আছো? চাচারেতো ভুইলাই গেছো।কোনো খুঁজ খবর নাই।

— বিজি ছিলাম চাচা।তাই কল করে উঠা হয়ে উঠেনি।

— বুঝি বাবা।আমিতো এমনিই মজা করছিলাম।

— দায়ানের কথা বাড়াতে ইচ্ছে করতেছে না আজ।তাই কোনো ভ’নিতা ছাড়াই বলে উঠে,,, চাচা একটা দরকারে ফোন দিয়েছিলাম তোমাকে।

— কি দরকার বাবা? বলো।

— আসলে চাচা সোহার বাড়ির নাম্বার টা একটু লাগতো।

— এটাতো তুমি সোহার থেকেই নিতে পারো বাবা।

— এতোদিন হয়ে গেছে ওর বাড়ির নাম্বার আমার কাছে নাই। ভাবতেই কেমন দেখায় না? তাই তোমার কাছ থেকে খুজছি চাচা।প্লিজ দাও।

— ঠিক আছে বাবা।বুঝতে পারছি আমি।মেসেজে পাঠাচ্ছি।

— হুম বলেই দায়ান ফোন কেটে দেয়।ভিতরটা কেমন করছে।

মিনিটের মধ্যেই মেসেজের নোটিফিকেশন আসে। তরিঘরি করে দায়ান নাম্বার টা নিয়ে কল লাগায়,, সোহার বাড়িতে।

রাতের খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে সোহার বাবা মা মাত্রই শুয়েছে।গ্রামে নয়টা বাজা মানেই অনেক রাত। ঘুমে চোখটা মাত্র লেগেছে।তখনই ফোনটা বেজে উঠে। সোহার বাবা শোয়া থেকে উঠে বসে ফোনটা হাতে নেয়। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসায় কপাল কুঁচকে ফেলে।এতো রাতে কে কল দিলো আবার? এসব ই ভাবতে থাকে।

অপর দিক থেকে দায়ান কল রিসিভ হচ্ছে না দেখে অস্থির হয়ে ওঠে।

তারপর সোহার বাবা দরকারি কল ভেবেই রিসিভ করে।

— অপর পাশ থেকে রিসিভ হতেই দায়ান কাঁপা কাঁপা গলায় সালাম দেয়।কি আশ্চর্য দায়ানের স্বর কাপছে।

— সোহার বাবা সালামের জবাব দিয়ে জানতে চায় কে?

— আ- আঙ্কেল আমি বলছিলাম।মানে দায়ান।সোহার হাসবেন্ড। এই কথাটা বলতে পেরে কেনো জানি দায়ানের খুব শান্তি লাগছে।

— সোহার বাবা।নড়েচড়ে বসে।সোহার মাকে আস্তে করে ডাক দিয়ে বলে,,,এই শুনছো দেখো কে ফোন করেছে।আমাদের ছোটে জামাই।আমার ছোটো আব্বা ফোন দিয়েছে রমিলা।।

আস্তে করে বললেও পুরো কথাটাই কানে আসে দায়ানের।কতোটা প্রফুল্ল হয়েছে ওনারা দায়ানের কল পেয়ে।আর সেকি না এক দিন ও তাদের খোঁজ নিলো না।খুব অপরাধ বোধ কাজ করছে।

—- ছোটো আব্বা তুমি কেমন আছো?

— জ্বি আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা ভালো আছেন?

— হ ছোটো আব্বা আমরাও ভালো আছি। তা হঠাৎ ফোন দিলা যে আব্বা? সব ঠিক আছে? সোহা কিছু করে নাই তো ছোটো আব্বা? মেয়েটা আমার অনেক অবুঝ,,ছেলে মানুষি করে ফেলে। তুমি কিছু মনে করো না বাপ।একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে নিও।বোঝায় বললে ঠিক বুঝবে।

— নানা আংকেল সোহা কিছু করেনি।আমি জানি ও একটু অবুঝ।বাট এরকমই ঠিক আছে।

— সোহা কি পাশে আছে? না মানে ওর সাথে কথা বলতাম আরকি।দুই দিন হলো কথা হয় নাতো তাই।

দায়ান বোঝে গেলো সোহা ঐখানে ও নেই।

— আসলে আঙ্কেল আমিতো এখন অফিসে।সোহা বাড়িতে পরে কথা বলে নিয়েন ওর সাথে।আমি এমনিতেই আপনাদের খবরাখবর নিতে ফোন দিয়েছিলাম আর কি। এখন রাখি? পরে কথা হবে। এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে দ’ম নেয় দায়ান।জীবনে এক সাথে এতোগুলা মিথ্যা কথা কবে বলেছে জানা নাই দায়ানের।

আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।আল্লাহ হাফেজ।

——————————————–

বাড়ির চারিদিক টা যেনো হাহাকার করছে। শূন্যতা নেমে এসেছে। সব কিছু নিরব হয়ে আছে।

কই দায়ান তো আগে একাই থাকতো এমন তো হয়নি।আজ কেনো এই শূন্যতা পুরাচেছ। ভিতরটা কেনো এতো হাহাকার করছে।

কেউ রিনিকঝিনিক নূপুরের শব্দ তুলে এগিয়ে এসে বলছেনা,,, শুনছেন খাবেন চলুন।নয়তে অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।বুক ব্যাথা করবে।

আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করতেছে? আসুন আমি এখনই মাসাজ করে সব ভেনিশ করে দিচ্ছি। কেউ বকবক করে মাথা ধরাচ্ছে না। আশ্চর্য এতো দিন এগুলা বিরক্ত লাগতো।এখন এসব মিস করছে।মেয়েটার জন্য বুকটা হাহাকার করছে।

কোথায় তুমি সোহা? প্লিজ কাম না।একবার ফিরে আসো।আর কষ্ট দিবো না।

ঐ কথা গুলো তোমায় বলি নি।বলিনি আমি তোমায় ।। কেনো আমি এতোটা অস্থির হতে গেলাম? কেনো আমি ঐসব ছাই-পাশ খেতে গেলাম।কেনো আমি তোমাকে তিশা ভেবে ঐসব কথা গুলো বলতে গেলাম কেনো? কেনো? কেনো? বলেই হাত দিয়ে টেবিল ল্যাম্প টা তে সজোরে আ’ঘাত করে।ল্যাম্পটা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায়। হাতে লেগে কাটা হাত দিয়ে আবার র/ক্ত পরা শুরু হয়।ঘা টা এখনো শুকোয় নি।আবার আ’ঘাত পরায়।র/ক্ত পরতে শুরু করেছে টপটপ করে। সেই দিকে দায়ানের বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই।

খাটে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে একই কথা বার বার বলছে।ঐ কথা গুলো আমি তোমায় বলিনি সোহা।ভুল হয়ে গেছে আমার।আর হবে না।প্লিজ কাম ব্যাক।তুমি ছাড়া সব শূন্য পরে আছে।এমন শূন্যতা আমার ভালো লাগছে না।

প্লিজ ফিরে আসো।

আই ব্যা’ড’লি নিড ইউ সোহা।তুমি ছাড়া একটা মূহুর্ত ও
বি/ষের মতো যন্ত্রনা দিচ্ছে।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৯(বোনাস)
#Jhorna_Islam

সোহার বাবা দায়ানের কল পেয়ে কি যে খুশি হয়েছে।সোহার মা শুধু লোকটার কান্ড দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

রমিলা আমার কিযে খুশি লাগতাছে রমিলা।আমি তোমায় কি করে বোঝাই। আমার ছোটো আব্বা আমারে ফোন দিছে।তুমি ভাবতে পারতেছো? আমারে ফোন দিছে।

আমাদের খুঁজ খবর নেওয়ার জন্য। আমাদের কথা কতোটা ভাবে দেখো।মেয়েকে না জানিয়েই আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে। বড় জামাইটা তো এক দিন ও ভুলেও আমার ফোনে কল করেছে কিনা বলতে পারবো না রমিলা।খোঁজ খবর নেওয়া তো দূরের কথা। আমার আজ আনন্দ লাগতেছে।আমার ছোটো আম্মা ভালো আছে।জামাই খারাপ থাকতে দিবোই না বুঝে গেছি আমি।

সোহার মা হাসে।হুম এবার ঘুমান অনেক রাত হইছে।

হুম।

——————————————

দায়ান একই ভঙ্গিতে বসে আছে।

দরজায় জমেলা খালা এসে কড়া নারে।ঐ খান থেকেই বলে উঠে,, বাবা আপনাদের জন্য শরবত আনছি।

দায়ান ভাঙা গলায় বলে খাবনা খালা। তুমি ডাইনিং টেবিলে রেখে যাও।আর তুমি এখন গিয়ে রেস্ট নাও।আজ তোমার কিছু করা লাগবে না।

জমেলা খালা আর কথা বাড়ায় না।চলে যায়।দায়ানের কথা না শুনলে আবার রে’গে যাবে।যেই রা’গী।

চলে যাওয়ার আগে বলে যায়।বাবা আমি সব রান্না করে দিয়ে গেছি।কিছুই করতে হবে না।টেবিলে ঢাকনা দিয়ে রেখে গেলাম খাবার।বৌমাকে নিয়ে খেয়ে নিও।এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে। আর বেশি রাত করো না।ঠান্ডা হয়ে গেলে খাবার খেতে ভালো লাগবে না।

তোমার বৌমাকে কোথায় পাবো খালা বলতে পারো আমায়? তাকে তো খুঁজে পাচ্ছি না।সেতো আমায় ভুল বুঝে কোথায় হাড়িয়ে গেলো।

না না এমনি বসে থাকলেতো হবে না।আমার তো খুঁজতে হবে সোহাকে।যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে।হাওয়াতো হয়ে যেতে পারে না।

কোথায় আছো তুমি সোহা? আই হোপ তুমি সুস্থ আছো।তোমার যেনো কিছু না হয়।

এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।খুঁজতে হবে।এভাবে তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব ও না।

পরোক্ষনে পুলিশের কথা মাথায় আসে।পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে।এভাবে খোজলে পাওয়া যাবে না।

ভেবেই উঠে দাঁড়ায়। আলমারির কাছে গিয়ে মানি ব্যাগে আরো কিছু টাকা ভরে নেয়। ক্রেডিট কার্ড ভরে নেয়।

টাকা লাগবে।টাকা ছাড়া কিছুই হবে না।বর্তমানে টাকা ছাড়া কেউ এক পা ও এগোয় না।টাকা নাকি সব পারে।

রুম থেকে বের হতে নিবে তার মধ্যেই দায়ানের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। মাথা ধরে দায়ান তারাতাড়ি খাটে গিয়ে বসে।সারাদিন না খাওয়ার ফলে হয়তো এমন হয়েছে।সারাদিন পেটে এক গ্লাস পানি ও পরে নি।চ’ক্ক’র দেওয়াটাই স্বাভাবিক। তার উপর এতো দৌড়াদৌড়ি। এতো টেনশন।হাত টা ও বাজে ভাবে কেটে আছে।ড্রেসিং করার ও যেনো সময় নেই। একটা রুমাল পেচিয়ে রেখেছে। সময় নেই নাকি ইচ্ছে নেই বুঝা গেলো না।হয়তো নিজেকে এটা একটা ছোটো শাস্তি দেওয়ার প্রয়াস মাত্র।

নিজের এরকম পরিস্থিতি দেখে দায়ান বোঝে গেলো,,একা কিছুই করতে পারবে না অর্ধেক রাস্তা যেতে পারবে কি না সন্দেহ।

সবকিছু ভেবে রুশকে ফোন লাগায়।রুশই একমাত্র ভরসা এখন।আর কেউ নেই।

————————————

দায়ান রুশকে একের পর এক ফোন দিতেই আছে। কখনো বলছে বিজি,কখনো বা রিং হচ্ছে ঐ পাশ থেকে নো রেসপন্স।

কাম অন রুশ পিক আপ দা ফোন।পিক আপ দা ফোন প্লিজ ইয়ার।

অনেকবার কল করার পর ঐ পাশ থেকে রুশ কল রিসিভ করে।

দায়ান রুশকে কিছু না বলতে দিয়ে নিজেই বলতে শুরু করে

হোয়ার আর ইউ রুশ? কখন থেকে কল দিতেছি তোকে? রিসিভ কেনো করতে ছিলিনা ড্যা’ম? রা’গে দাত কিরমমির করে বলে উঠে দায়ান।

রুশ বলে,,,,আমি এখন বিজি আছি দায়ান পরে কথা হবে।
কাল কথা বলি? আমার একটু রেস্ট ও নেওয়া লাগবে।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।

গো টু হে’ল ইউর বি’জি এন্ড রেস্ট। আমার সাথে এখনই দেখা কর।খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।

কিন্তু,,,,,,,

কোনো কিন্তু না প্লিজ ইয়ার আই নিড ইউর হেল্প।

রুশ একটা দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে। এখন না গিয়ে কোনো উপায় নেই।যেতে হবেই। এই ছেলেটা এতো জে’দী এখন না গেলে, বাড়িতে এসে উঠিয়ে নিয়ে যেতেও দুই বার ভাববে না।দায়ান যেইটা বলে সেইটাই শুনতে হবে।

— ঠিক আছে আমি আসছি।

— থেংকস দোস্ত থেংক ইউ সো মাচ।তুই ওয়েট কর আমি তোকে বাড়ি থেকেই পিক করবো।

— ন-না না তার দরকার নেই। তুই বড় রাস্তার মোড়ে আয়।আমি আসতেছি।

— ওকে বলেই দায়ান তারাতাড়ি বের হয়ে যায় । যাওয়ার সময় দরজাটা ও লাগাতে ভুলে যায়।

রুশ আস্তে ধীরেই রাস্তার মোড়ে আসে।এসে সামনে তাকিয়ে অবাক।দায়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশ মনে মনে বলে উঠলো এতো ফাস্ট?

— কিরে কি হয়েছে?

— দোস্ত এখন এতোসব বলার সময় নেই। চল আমার সাথে।

— আরে কোথায় যাবি সেটাতো বল।

— সোহা কে খুঁজে পাচ্ছি না ইয়ার।পুলিশ স্টেশনে যাবো।এবার চল আর একটা প্রশ্ন ও করবিনা।

রুশ দায়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে।

দায়ান ও গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করে।

————————————

পুলিশ স্টেশনে এসে দায়ান রুশকে রেখে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যায়। রুশ ও দায়ানের পিছন পিছনে যায়।

দায়ান গিয়ে এসিপির সাথে কথা বলে। সব শুনে উনি আরেকটা অফিসার কে দেখিয়ো দেন। মিসিং ডায়রি লিখানোর জন্য। যেহেতু চব্বিশ ঘন্টা হয়ে গেছে। উনার একটু কাজ আছে।

দশ মিনিট পর ই আমি এসে পরবো।ততোক্ষণে আপনারা মিসিং ডায়রি টা লিখান।বলেই এসিপি চলে যায়।

দায়ান অন্য অফিসারটার কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরে। মিসিং ডায়রি লিখানোর জন্য। রুশ পাশেই চুপচাপ দাড়িয়ে রয়।

অফিসারটা লিখতে লিখতে ক’টাক্ষ করে বলে,,,কি সাব? হুদাই এসব করে পেরা নিতাছেন।এসব কে’স তো আর কম দেখিনাই।দেখেন হয়তো কোনো প্রেমিকের সাথে প’লায় গেছে।আপনা কে দিয়ে পো’ষা’য় না বলে।বলেই একটা বি’শ্রী হাসি দেয় অফিসারটা।

দায়ানের মাথায় যেমন র/ক্ত চেপে বসে।এই অফিসার মুখ সামলে কথা বল।বলেই উঠে চ’ড় লাগাতে যায়।তার আগেই রুশ আটকে দেয়।দায়ান কে পেচিয়ে ধরে রাখে।

অফিসার টাও রে’গে দাড়িয়ে যায়।তোর এতো বড় সাহস।তুই আমার গায়ে হাত তুলতে আসিস? তর কি হা’ল করবো জানিস? তকে এখনি জে’লে ভ’রে দিবো।

তুই আরেকবার আমার ওয়াইফের নামে কিছু বল।তারপর আমার সাহস দেখবি।

রুশ দায়ানকে বলে শান্ত হো দোস্ত প্লিজ।

ততোক্ষনে এসিপি এসে পরে।এতো হইচই দেখে জানতে চায় কি হয়েছে।

রুশ সব খুলে বলে।সব শুনে এসিপি ও অনেক রে’গে যায়।অন্য অফিসার টা কে ধমক দিয়ে ঐখান থেকে তাড়িয়ে দেয়।তারপর নিজে সব কাজ সম্পন্ন করে।দায়ানকে আশ্বস্ত করে।যে তারা তাদের যথা স্বা’দ্ধ চেষ্টা করবে খোঁজার।

রুশ দায়ানকে নিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসে।

তারপর দায়ান রুশকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকে।কোথাও পায় না।

দেখতে দেখতে আরো একটা দিন কেটে গেলো।দায়ান সোহাকে তন্ন তন্ন করে খুজে চলেছে পায় না।

রুশ এর মধ্যে বাড়ি থেকে এসে দায়ানের গাড়ি তে গিয়ে বসে সোহাকে খুজার জন্য।

— দোস্ত কিছু খেয়ে নে আগে।তোকে ঠিক লাগছেনা।কাল কতো জোড় করে শুধু মাত্র একটা রুটি খাওয়াতে পেরেছি।অসুস্থ হয়ে যাবি।

— আমার গলা দিয়ে কিছু নামবেনা দোস্ত। আই নিড সোহা।এনে দিবি দোস্ত এনে দেনা।দেখ আমার এখানে কষ্ট হচ্ছে। বুকের বাম পাশে দেখিয়ে। বাবা মা মারা যাওয়ার পর এই প্রথম আমার এতো কষ্ট হচ্ছে। কেন হচ্ছে বলনা? মেয়েটা কখন আমার এতো আপন হয়ে গেলো।কতো অবহেলা করেছি তাও মুখ বুঁজে সব সহ্য করে নিয়েছে।দোস্ত এনে দিতে পারবিরে আমায়? বলেই দায়ান চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

রুশ স্পষ্ট লক্ষ করতে পেরেছে দায়ানের চোখের পানি চিকচিক করছে। এই কয়দিনে কি হা’ল করেছে নিজের।বেচা’রা বুঝতেই পারতেছে না সোহাকে কতোটা ভালোবেসে ফেলেছে।

দায়ানের অবস্থা দেখে রুশ আর চুপ থাকতে পারলোনা।

“দোস্ত সোহা আমার কাছে আছে।আই মিন আমার বাড়িতে।”

কি বললি তুই বলেই দায়ান রুশের দিকে তাকায়।

রুশ মাথা নাড়িয়ে যানায় যে সত্যি বলছে।

সাথে সাথে রুশের নাক বরাবর ঘু’ষি মেরে বসে দায়ান।শা*লা আমি এইদিক দিয়ে আধম’রা হয়ে গেছি।আর তুই সব জেনে তা’ম’শা দেখলি।বলেই আরেকটা লাগাতে যায়।

রুশ ও নাকের থেকে হাতটা সরিয়ে দায়ানের হাত ধরে ফেলে। রা’গে চিললিয়ে বলে কি করতাম আমি? কি অবস্থা তে ওরে পাইছি তোর কোনো আইডিয়া আছে?

ঐদিন পার্টিতে যেতে আমার একটু লে’ট হয়ে গিয়েছিলো। রাস্তায় পা/গলের মতো এই বৃষ্টিতে দৌড়াচিছলো।আরেকটুর জন্য আমার গাড়ির নিচে পরে নি। বৃষ্টিতে ভিজে শ্বাস বেরে গিয়েছিল। হসপিটালের নিয়ে যেতে হয়েছে।একদিন ঐ খানে ছিলো। এখনো ঠান্ডায় মেয়েটার অবস্থা বে’হা’ল। গলা বসে গেছে। তোকে ফোন করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সোহা দেয়নি। তার থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম।তুই কিছু একটা ঘটিয়েছস। আমাকে ভাই ডাকছে মেয়েটা।আমিও নিজের বোনই ভাবি।কে তার বোনের এমন কষ্ট সহ্য করতে পারতো বল আমায়?

দায়ান সব কথা শুনে চোখ বন্ধ করে রাখে।

তাও তোর আমায় বলার দরকার ছিলো।তারপর রুশকে ঐ দিনের পুরো ঘটনা খুলে বলে।তিশার কথাও।রুশ তিশার ব্যাপারে আগে থেকেই সব জানে যেহেতু।

সব শোনে রুশ দায়ানের দিকে অপ’রা’ধীর মতো তাকায়।মিনমিনিয়ে বলে স’রি দোস্ত।

দায়ান রুশের দিকে তাকিয়ে বলে তোর স’রির গু’ষ্টি কি’লাই। আগে তোর বোনের ব্যবস্থা করি তারপর তোকে দেখেনিবো শা*লা।

একদম আমার বোনকে কিছু করবিনা।তাহলে তোর কাছে যেতে দিবো না।

হুহ আসছে বোনের চা’ম’চা। বলেই রুশের বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোরায়।

————————————

রুশদের বাড়ির সামনেও ছোটো একটা বাগান আছে। সেখানে সোহা মন খারাপ করে বসে আছে।কিছু সময় পর পর কাশি উঠছে।মনটা খুব খারাপ দায়ানের বলা কথা গুলো কাউকে বলেনি। দায়ানকে দেখতে খুব ইচ্ছে করতেছে।

মন খারাপ করে বাগানের শিউলি গাছের নিচ থেকে বসে বসে ফুল কুড়িয়ে এনেছে।মালা গাথে আর ভাঙা গলায় আস্তে আস্তে গান ধরে।

সে যে কেনো এলো না কিছু ভালো লাগে না,
এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো।
যদি ফুল গুলো হায়,অভিমানে ঝড়ে যায়।
আমি মালা গেথে বলো কারে পরাবো?

আর গাইতে পারে না।কাশি উঠায় কাশতে থাকে।ঠিক তখনই পাশে এসে কেউ একজন বসে।

তোমার পাশে এতো বড় একটা জল’জ্যা’ন্ত মানুষ বসে আছে।তোমার হাত থেকে মালা পরার জন্য। আর তুমি তাকে দেখতেই পাইতেছো না? দিজ ইজ নট ফ্যা’য়ার বউ।

#চলবে,,,,,,
#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here