তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -২৬+২৭

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৬
#Jhorna_Islam

দায়ান পরে গিয়ে তেমন একটা ব্যাথা পায় নি।ভা’জ্ঞি’স ডান হাতটা সামলে নিয়েছিলো।হাতে কোনো ভ’র পরেনি।যদি পরতো তাহলে হয়েই যেতো।আবার যদি হাতে ব্যাথা পেতো তাহলে হাত দিয়ে দুই-তিন মাস আর কিছু করা লাগতোনা।

দায়ান এখনো ফ্লোরেই বসে আছে।সোহার দিকে তাকিয়ে। রা’গে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সব কিছুর একটা লি’মি’ট আছে।এই মেয়েটা অতি’রি’ক্ত শুরু করছে।বা’চা’লপনার শে’ষ পর্যায়ে এসে গেছে এই মেয়ে।

একটা মানুষ এতো কথা কি করে বলতে পারে? সব কিছু নিয়ে ফা’ন করে।তাই দায়ান বলে উঠে,,,,

সোহা তোমার মুখে লা’গা’ম টানো বলে দিলাম।সব সময় এসব ফা/লতু জো’ক্স সব জায়গায় খা’টে না। হাসি মজা করার ও একটা সময় আছে।

সোহা দায়ানের কথা গুলো শুনে কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে যায়। সত্যিই বেশি করে ফেলেছে।

দায়ানের দিকে দুঃখী দুঃখী ভা’ব নিয়ে বলে,,,,,,স’রি আর এমন হবে না।খুব বেশি লেগেছে তাই না আপনার?

নো।

আসলে,,,,বাগানে ফুল ফোটেছে।তাই খুব এ’ক্সা’ই’টেড হয়ে গেছিলাম।দৌড়ে আপনাকে বলতে এসেছিলাম।হঠাৎ-আসতে গিয়ে আপনি সামনে এসে পরবেন,,তার উপর আবার ধা’ক্কা খাবো ভাবিনি।

নে’ক্স’ট টাইম সামনে দেখে শুনে চলবা।এখন আমি ব্যাথা পাইনি।সব সময় তো আর এমন হবে না।তাই আগেই সা’বধান করে দিলাম।

হুম খেয়াল রাখবো।নিন এইবার উঠে আসুনতো দেখি।বলেই দায়ানের দিকে হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দেয়।

দায়ান বসা অবস্থাতেই সোহার মুখের দিকে একবার ও সোহার হাতের দিকে তাকায়। তারপর কিছু না ভেবেই নিজে নিজে উঠে দাঁড়ায়।

সোহা মুখটা বে’জা’র করে হাতটা গু’টিয়ে নেয়।হুহ হাত ধরলে কি এমন হতো শুনি? আপনার ও হে’ল্প হতো, আমিও আপনার হাতের একটু প’রশ পেতাম। কথা গুলো মনে মনেই বলে সোহা।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,, আমি এতোটাও অ’কে’জো হয়ে পরিনি যে তোমার সাহায্য লাগবে।সামান্য পরে যাওয়ার থেকে উঠার জন্য।

হুু জানি।

খাবারের কিছু ব্য’ব’স্থা করো খু’দা লাগছে প্রচুর।

আগে বলবেন না আমায়।আমাকে জাস্ট পনেরো মিনিট টাইম দিন।আমি এখনই আসছি।

হুম যাও।বাট তা’ড়া’হু’ড়ো করার কিছু নাই। ধী’রে ধী’রেই করো সব। সাবধানে করো।আবার হাত পা পু’ড়ে ফেলো না যেনো।

সাবধানেই করবো।চি’ন্তা করবেন না।

তারপর সোহা রান্না ঘরে ও দায়ান নিজের রুমে চলে যায়।

—————————————-

ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক রাত এগারোটা বাজে,,,, তখন সব কাজ শেষ করে রুমে আসে নোহা।রুমে এসেই বাথরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

যাওয়ার আগে বিছানার উপর বসে থাকা ওমির দিকে একবার তাকায়। ওমি বসে বসে ফোন টি’প’তেছে।

ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছে ফেলে। হাত পায়ে নিত্য দিনের ব্যবহার্য প্র’সাধ’নী লাগিয়ে নেয়। ওমি মোবাইল চালানোর ফাঁকে ফাঁকে নোহাকে দেখছে।

চুলের অগোছালো খোপাটা টান দিয়ে খুলে ফেলে।মু’হূ’র্তের মধ্যে চুল গুলো কো’মড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে।দুই বোনের চুলই কোমড় ছারিয়ে। খুব সুন্দর করে চুল গুলো আ’চ’ড়ে বি’নু’নি পাকাতে থাকে। চুল গুলো এক সাইডে নেওয়া তে নোহার পি’ঠ’টা অনেকটাই দৃ’শ্য মান।

ওমি ফোন ফেলো উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে এসে নোহার পিছনে দাঁড়ায়।। নোহা এখনো খে’য়াল করেনি ওমিকে।সে এক মনে চুল বাঁধতেছে।

হঠাৎ করেই নোহাকে ওমি জড়িয়ে ধরে গলায়,, পিঠে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে।

নোহা হঠাৎ আ’ক্র’মনে ঘা’বরে যায়। তারপর শরীরে ওমির ছোয়া পেয়ে। নিজের হাত শ’ক্ত করে মুঠো করে ফেলে।

ওমির প্রতিটা ছোঁয়া বি/ষের মতো লাগছে একদম সহ্য হচ্ছে না। লোকটা প্রতিদিন নোহার কাছে আসে নিজের প্রয়োজন মেটাতে। আর এমনি একবার নোহার দিকে ফিরেও তাকায় না।

নোহার ভাবনার মাঝে ওমি নোহাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শুয়িয়ে দেয়।নিজেও এবার নোহার দিকে এগিয়ে যায়।

এইবার নোহার মাথায় কেনো জানি ওমির ছোয়ায় র/ক্ত উঠে যায়।এক ধা’ক্কা’য় বিছানার অপর পাশে ফেলে।হঠাৎ করে ধা’ক্কা লাগায় ওমি নিজেকে সামলাতে পারেনি।

পরে গিয়ে।নোহার দিকে রা’গী চোখে তাকায়।

নোহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠে,,, অনেক তো হলো ওমি এই বার আমাকে একটু শান্তি দিন।বিশ্বাস করুন আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।মা’নসিক ভাবে শাীররিক ভাবে।সব ভাবেই ক্লান্ত হয়ে গেছি।

অনেকতো চেয়েও চোখ বুঁ’জে ছিলেন।এবার চোখ খুলে চার পাশটা দেখুন।আমরা চোখে যা দেখি সব সময় কিন্তু সত্যি হয় না।নিজের আপন মানুষ গুলোই আমাদের বো’কা বানিয়ে রাখে।এবারতো সব টা ভালো ভাবে দেখার বোঝার চেষ্টা করুন। নিজেকে আর কা/পু’রুষ প্রমান করবেন না।

যেইদিন নিজেকে সঠিক রাস্তায় চালনা করতে পারবেন ভালোবেসে আমায় কাছে টানবেন,,,,শুধু শরীরের জন্য নয়। সেই দিন আমার কাছে আসবেন।আমি সা’দরে আপনাকে ভালোবেসে মন থেকে গ্র’হন করে নিবো।তার আগে আমাকে ছোঁয়ার ও চেষ্টা করবেন না।বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পরে।চোখ দিয়ে নো’না জল বয়ে চলেছে নিরবে।

নোহার কথা গুলো শুনে ওমির মাথায় রা’গ উঠে যায়।রা’গে বালিশ টা নিচে ফেলে দেয়।বিছানা থেকে নেমে। রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে যায়।দরজার আওয়াজে নোহা কেঁপে ওঠে। কান্না করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে যায়।

——————————————-

প্রতিটা রাত কাটিয়ে একটি দিনের নব্য’সূচনা ঘটে। রাতের সমাপ্তি জানান দেয় আরেকটি নতুন ভোরের।

আজ দায়ানের পার্টিতে যাওয়ার কথা। তাদের পার্টিটা মূলত রাতের বেলা। তার আগেই তাদের যেতে হবে।কারণ তাদের সকল ব্যবসায়িকদের একটা মিটিং এ অংশগ্রহণ করতে হবে। অবশ্য পার্টি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে মিটিং।

সকলের জন্যই রুম বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। তারা যেনো ঐখানে থাকতে পারে।

যেহেতু রাতের বেলা পার্টি তাই আলাদা ড্রেস লাগবে। ঐখানে পৌঁছে ও ফ্রেশ হতে হবে।তাই দুইটা করে ড্রেস নিয়ে নেয়। সোহা তার ড্রেস আর অলংকার গুলো গুছিয়ে রেখেছিলো।দায়ান তার ড্রেসের সাথেই সোহার ড্রেস নিয়ে নেয়। এতো ট্র’লির দরকার নাই।একদিনের জন্যই তো যাচ্ছে।

আজ আকাশটা মেঘলা।যে কোনো সময় বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে।

দায়ান রেডি হয়ে সোহার জন্য অপেক্ষা করছে ড্রইং রুমে বসে ।সোহা এখনো রেডি হয়েই চলেছে।আসার কোনো খবর নেই। বিরক্তি নিয়ে সোহার রুমের দিকে তাকায়।

সোহার রুমে তাকাতেই দায়ানের কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে যায়। হা করে তাকিয়ে থেকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় দায়ান।এক দৃষ্টিতে সামনের দিকেই তাকিয়ে রয়।

সোহা বিয়ের দিন বাদে,, বিয়ের পর এই প্রথম শাড়ী পরেছে।সাথে হিজাব। সামান্যই সেজেছে। তাতেও কি যে সুন্দর লাগছে।
দায়ান এই প্রথম সোহাকে শাড়ী পরতে দেখলো।আর তাতেই আঁটকে গেলো।কি যে সুন্দর লাগছে। দায়ান বলতে বাধ্য সোহাকে আজ অপূর্ব সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানো দা’য়।এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।

সোহার কথায় ধ্যান ভাঙে।

চলুন।দেরি হয়ে গেছে না? আসলে শাড়ী পরতে একটু টাইম লেগে গেছে।

দায়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠে চলো।

সোহা ও মাথা নাড়িয়ে দায়ানের সাথে বেরিয়ে পরে।

——————————–

পার্টিটা মূলতো একটা ফাইভ স্টার হোটেলে করা হবে।

দায়ানদের গাড়ি এসে হোটেলের বড় গেটের সামনে থামে।বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।

সোহা গাড়ির ভিতর থেকেই চারিপাশটা দেখছে।আরো অনেক মানুষই আসতেছে,,,,তাদের ফ্যামিলি নিয়ে।

হোটেলের চার পাশে ক’ড়া সিকিউরিটি।গার্ডদের ও অভাব নেই।।

দায়ান হোটেলের গেটের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে কারণ,,তাদের সবাইকে ইনভিটেশন দেওয়ার সময়,,কার্ড দিয়ে দিয়েছে।ঐটা ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না।কার্ড দেখিয়ে তারপর ঢুকতে হবে।

দায়ান গাড়ির কাচ নামিয়ে।কার্ড চে’ক করে যে লোকটা তার কাছে নিজের পকেট থেকে বের করে দেয়।

লোকটা কার্ডটা চে’ক করে দায়ান কে স্বাগত জানায় হাসি মুখে।দায়ান ও মাথা নাড়ায়।

সোহা এদের কান্ড দেখে নিজের মনেই বিরবির করে বলে উঠে,,,,” বড় লোকের বড় বড় ব্যাপার স্যাপার।”

দায়ান গাড়িটা পাকিং ল’টে পার্ক করে সোহাকে নিয়ে তারাতাড়ি হোটেলে ঢুকে যায়। যেনো সোহার শরীরে বৃষ্টি না পরে। এই বৃষ্টিতে ঠান্ডা জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা আছে বেশি তাই। যাওয়ার আগে গাড়ির চাবি এইখানে ওদের জন্য নিয়োজিত এক স্টাফ কে দিয়ে যায়। যেনো ট্রলিটা গাড়ি থেকে নামিয়ে ওদের রুমে পৌছে দেয়।

রিসেপশনে গিয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ করে রাখা রুমের চাবিটা রিসেপশনিস্ট এর কাছ থেকে বুঝে নেয় দায়ান।

তাদের রুমটা এগারো তলায় পরেছে।আর রাতে পার্টিটা হবে দশ তলায়।।

দায়ান লিফটে আগে ঢুকে,,তারপর সোহা এগিয়ে যায় ঢুকার জন্য। এখন লফটে কেউ নেই।সোহা লিফটে ঢুকার পর দায়ান এগারো তলায় যাওয়ার জন্য লিফটের বাটনে চাপ দিয়ে দেয়।

দায়ান আর সোহা কেউই খেয়াল করেনি সোহার শাড়ির আঁচল অসাবধাানতা বসত লিফটেট দরজায় আটকে গেছে।

লিফট চলতে শুরু করার সাথে সাথে কেউ কিছু বোঝার আগেই সোহার শাড়ী খুলে চলে যেতে থাকে। সোহা লিফটের দরজায় কয়েকটা বারি খায়। গলা’ হাত ছিলে যায়।মাথায় ও বাড়ি খায়।মাথা ধরে আহ বলে উঠে সোহা।

দায়ানের পুরো ব্যাপারটা বুঝতে অনেকখানি টাইম লেগে যায়।যখন বুঝতে পারে তরিঘরি করে সোহার কাছে এসে নিজের কাছে টেনে নেয়।

ঠিক আছো তুমি? কি করলে এটা বলোতো? এতোটা কেয়ারলেস মানুষ কি করে হতে পারে সোহা।শাড়ির আঁচল টা তুমি সাবধানে রাখবানা।কি অবস্থা হতে পারতো তুমি ভাবতে পারতেছো? আমার তো ভাবতেই শরীরে কাটা দিচ্ছে।
দায়ান রা’গে বলে উঠে,,, এই বা** শাড়ি কে পরতে বলেছে হ্যা? যখন সামলাতেই না পারো।

সোহা শব্দ করে কেঁদে দেয়।

উফফ একদম কান্না করবেনা বলে দিলাম।আমার ভাবতেই মাথা ঘুরাইতেছে সোহা কি রকম দূ’র্ঘ’ট’না ঘটতে পারতো তুমি আইডিয়া করতে পারতেছো।তুমি আমায় পা’গ’ল করে দিবা। যদি তোমার বড় কিছু হয়ে যেতো?

সোহা হি’চ’কি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি বুঝতে পারিনি।খেয়াল ছিলোনা আচল টা যে বাইরে রয়ে গেছে।

খেয়াল ছিলো না মানেটা কি? খেয়াল কোথায় থাকে তোমার হ্যা? বলেই চেচিয়ে উঠে।

সোহা দায়ানের চেঁচানো তে ভ’য় পেয়ে যায়। ব’দ্ধ লিফটে দায়ানের গলার স্বর বারবার প্রতি’দ্ধ’নিত হচ্ছে। সোহার কান্নার বে’গ আরো বেরে যায়।

রা’গ দমন না করতে পেরে হাত উঠায় চ’র দেওয়ার জন্য দায়ান।

সোহা চোখ ব’ন্ধ করে ফেলে। দায়ান সোহার কান্নারত মুখটা দেখে হাত নামিয়ে নেয়। নিজের রাগকে ক’ন্টো’ল করে বলে,,,,

তুমি কি বুঝতে পারো? নিজেতো শে/ষ হবাই সাথে আমাকেও শে/ষ করবা তুমি।

বলেই সোহাকে নিজের আরো কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে। সোহা যেনো এটারই অপেক্ষাতে ছিলো শক্ত করে দায়ানকে জড়িয়ে ধরে।

দায়ান ফিল করতে পারছে সোহার হাত পা মৃদু কাঁপতেছে।দায়ানের ও এই অবস্থা দেখে হা’র্ট’বি’ট বেড়ে গিয়েছিলো।

গলাটা কতো খানি কেটে গেছে দেখছো? হাত পা গুলাও ছিলে গেছে।

দায়ানের কথা সোহার কান দিয়ে ঢুকছেই না।সে কেঁদে কেটে দায়ানের শার্ট ভিজাতে ব্যস্ত।

পাগলি আর কাঁদে নাতো।শান্ত হও।আর কাঁদতে হবে না।অসুস্থ হয়ে পরবেতো বাবা শান্ত হও এবার।বলেই দায়ান আরেকটু শক্ত করে সোহাকে জড়িয়ে ধরে।

লিফটটা পাঁচ তলায় আসতেই থেমে যায় তার মধ্যে। লিফটের ভিতরের লাইট ও অফ হয়ে যায়।

সোহা অন্ধকার দেখে আরো ঘাবড়ে যায়।

দায়ান ওহ নো বলেই একহাতে মাথার চুল খামচে ধরে।

#চলবে,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২৭
#Jhorna_Islam

লিফট অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় সোহা আরো ঘা’বড়ে যায়।অনবরত কাঁদতে থাকে।

দায়ান ফোন নিয়ে ফোনের ফ্ল্যা’শ জ্বা’লা’বে এমন সময় আবার আলো জ্বলে উঠে লিফট চলতে শুরু করে।

সোহা চোখ বন্ধ থাকায় বুঝতেই পারেনি।সেতো অনবরত কেঁপে চলেছে।

দায়ান হয়তো বুঝতে পারছে সোহা ভ’য় পাচ্ছে। তাই বলে উঠে,,, হেই লিসেন সোহা,,,চোখ খোলো দেখো সব ঠিকঠাক। কোনো কিছু হয়নি। স্বাভাবিক হও আমার সাথে কথা বলো।সোহা তাও দায়ানের কথা শুনছে না।দায়ান এইবার সোহা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

দায়ান সোহার কান্নারত মুখের দিকে একবার তাকিয়ে,,, সোহাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে। নিজের শরীর থেকে ব্ল্যা’জার টা খুলে পরিয়ে দেয়।

সোহা কান্না থামিয়ে দায়ানের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকায়। এতোক্ষনে ওর হুঁশ হয়।তারাতাড়ি করে নিজেকে দায়ানের দেওয়া ব্ল্যা’জার দিয়ে ভালো করে ঢেকে নেয়।

মাথার হিজাবটা নিচে পরে আছে।শাড়ীর সাথে হিজাব সেফটিপিন দিয়ে আটকানো ছিলো বলে,,,হিজাবটাও খুলে গিয়েছে।

দায়ান হিজাব টা তুলে সোহার হাতে দেয়।

সোহা হাত বাড়িয়ে হিজাবটা নিয়ে মাথায় দিতে থাকে।

ভালো ভাবে দাও। যেনো মাথার চুল একটাও না দেখা যায়।

সোহা দায়ানের কথায় মাথা নাড়িয়ে হিজাবটা সুন্দর করে মাথার মধ্যে পেচিয়ে নেয়।

লিফট অনেক আগেই থেমে গেছে।

দায়ান সোহাকে জিজ্ঞেস ,,এভাবে যেতে পারবা? আইমিন পেটি’কো’ট পরে?

সোহা ধীর গলায় বলে,,,সমস্যা নাই।এটা পেটি’কোট না।প্লাজু পরেছিলাম শাড়ীর নিচে।

ওহ আচ্ছা চলো।বলেই সোহার এক হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে লিফট থেকে বের হয়।

লিফটের সামনে দুইজন দাঁড়িয়ে ছিলো। লিফটে উঠার জন্য। দায়ানরা লিফট থেকে বেরিয়ে হতেই ঐ দু’জন লিফটে ওঠে চলে যায়। এই দিকে তেমন আর কোনো মানুষ নেই।

দায়ান নিজেদের জন্য রাখা ব’রা’দ্দ’কৃ’ত রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।

এসেই বিছানার উপর বসে পরে। সোহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের কাছে ইশারা করে বসার জন্য।

সোহা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে দায়ানের পাশে বসে।

হিজাব, ব্ল্যা’জারটা খুলো। খুলে দেখো কোথায় কোথায় কেটেছে।

দায়ান বসা থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফাস্ট-এইড বক্স খোঁজার চেষ্টা করে। এসব বড় বড় হোটেলে প্রয়োজনীয় সব কিছুর সুবিধাই পাওয়া যায়।

সোহা দায়ানের কথা মতো ব্ল্যাজারটা খুলে ফেলে।মাথা থেকে হিজাব টা খুলে শাড়ীর মতো করে শরীরে জড়িয়ে নেয় যতোটুকু পারে।

দায়ান ততোসময়ে ফাস্ট -এইড বক্স পেয়ে গেছে।ফাস্ট -এইড বক্স টা নিয়ে এসে সোহার পাশে বসে। দেখি কোথায় কোথায় লেগেছে বলে,,, নিজেই সোহার দুই হাত সামনে এনে চে’ক করতে থাকে।হাতের কুনুইর পাশে অনেক টাই কেটে গেছে। সেখানে ঔষধ লাগিয়ে দেয়। তারপর গলায় চোখ যায়,,গলার কাছটায় অনেকখানি কেটেছে। ফোটায় ফোটায় র/ক্ত ও পরেছে।দায়ান প্রথমে তুলো দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে নেয়।তারপর ঔষধ লাগাতে থাকে।ঔষধ লাগানোর সাথে সাথে সোহা আহ করে উঠে।

সোহার ব্যাথাতুর শব্দ শুনে দায়ানের হাত টা একটু থেমে যায়। তারপর আস্তে করে গলার কাছটায় ফু দিতে থাকে। ও ঔষধ লাগাতে থাকে। দায়ান সোহার গলায় ফু দিতে দিতে অনেকটাই কাছে চলে এসেছে।

দায়ানের গরম নিশ্বাসে সোহার ভিতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। বিছানার চাদর দুই হাতে খামচে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।

দায়ানের চোখ যায় সোহার গলার কাছটার তি’লটায়।কিছুটা যেমন ঘোরে চলে যায়।আরেকটু এগিয়ে যায় দায়ান সোহার দিকে। সোহা দায়ানের উপস্থিতি নিজের আরো কাছে টের পেয়ে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।

দায়ান আস্তে করে হাত বাড়িয়ে সোহার গলার নিচের তিলটা হালকা করে ছুয়ে দেয়।দায়ানের স্পর্শে সোহার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। দায়ান মুখটা সোহার গলার কাছে নামিয়ে তিলটায় চুমু খেতে যাবে।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। দুইজনেই ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে।

দায়ান সোহার কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়।কি করতে যাচ্ছিলো সে? ভাবতেই মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

সোহা লজ্জায় এখনো চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

দায়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,, তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। যাও লাগেজ মনে হয় নিয়ে এসেছে।আমি তোমার ড্রেস দিচ্ছি।

সোহা মাথা নাড়িয়ে তারাতাড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

দায়ান নিজেই মনে মনে গা’লি দিতে থাকে। কি করতে যাচ্ছিলি দায়ান? কি হয়েছে তর? মনে মনে দরজার ঐ পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটাকে দায়ান ধন্যবাদ জানায়।তার মধ্যে আবার কলিং বেল বেজে উঠে।

দায়ান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ঐ পাশে একটা লোক এক হাতে লাগেজ নিয়ে ও অন্য হাতে ড্রিংকস এর বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দায়ান হাত বাড়িয়ে লাগেজ টা নেয়।ড্রিংকস এর বোতল টা দেখে বলে,,এসবের দরকার নেই আমি খাইনা।তুমি নিয়ে যাও এটা।

লোকটা বলে উঠে স্যার না খেলেও রেখে দিন।আমাদের অর্ডার দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক গেস্টদের দেওয়ার জন্য। দায়ান আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ বোতল টা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

বোতলটা বিছানার পাশে টেবিলটাতে রেখে দেয়।

লাগেজ খুলে সোহার একসে’ট জামা নিয়ে বাথরুমের দরজায় ন’ক করে।

সোহা তোমার ড্রেস নাও।

সোহা দরজাটা খুলে হাতটা বাড়িয়ে দেয়।

দায়ান ড্রেস গুলো সোহার হাতে দিয়ে বারান্দায় চলে আসে।

সোহা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসার শব্দ শুনে,,দায়ান রুমে আসে।লাগেজ খুলে নিজের ড্রেস বের করে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। একবারও সোহার দিকে তাকায় নি এর মধ্যে।

দায়ান ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে,,সোহা ও টাওয়াল দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে বারান্দায় চলে যায়।চার পাশের পরিবেশ টা খুবই মনোমুগ্ধকর। উপর থেকে দেখতে যেমন আরো সুন্দর লাগছে সব কিছু। তারউপর বৃষ্টি হচ্ছে। সব কিছু ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সোহার ইচ্ছে করছে বৃষ্টির পানি গায়ে মাখাতে।তাতো সম্ভব নয়।কারণ এই অসুস্থতা সব শখ শেষ করে দিয়েছে।তাই কিছুই করার নেই।দূর থেকেই দেখতে হবে।কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই।

প্রায় অনেকসময় ধরে এক দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে সোহা।

দায়ান এই দিক দিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে গেছে মিটিং এটেনড করার জন্য।

যাওয়ার আগে সোহাকে ডাক দেয়।

দায়ানের ডাকে সোহা দৌড়ে রুমে আসে।

আমি মিটিং এ যাচ্ছি। জানিনা কতো সময় লাগবে।কিছুসময় পর এসে খাবার দিয়ে যাবে।তুমি খেয়ে নিও আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আর শুয়ে রেস্ট নাও।বাই।

সোহা মাথা নাড়ায় ।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।

—————————————–

চারিদিকে জমকালো আয়োজন। সব কিছু হাই ফাই কোয়ালিটি তে করা হয়েছে।আয়োজন দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হবে। হবেই না কেনো বড় বড় ব্যবসায়িদের মিলন মেলা বলে কথা।

এর মধ্যে সকলেই প্রায় উপস্থিত হয়ে গেছে। কিছুসময়ের মাঝেই পার্টির মূল আয়োজন শুরু হবে।

সকলে সবার সাথে কথা বার্তা হাই,হ্যালো করতে ব্যস্ত।সবাই তাদের ফ্যামিলি কে সাথে করে নিয়ে এসেছে।

সোহা আর দায়ান ও এই মাত্র উপস্থিত হয়েছে।

সোহা দায়ানের পিছন পিছনে যাচ্ছে। দায়ান যেখানেই যায়।

দায়ানকে কেউ একজন ডাক দেয়।তাকিয়ে দেখে চার-পাঁচ জন দাঁড়িয়ে কথা বলছে।ঐখানে যাওয়ার জন্যই ডাক দেয়।দায়ান ওদের ভালো করেই চিনে।ওদের সাথে বিজনেস ডি’ল করেছে অনেক।না গেলে কেমন দেখায়।তাই কিছুটা কোলাহলহীন ফাঁকা টেবিল দেখে সোহাকে নিয়ে গিয়ে বসায়।
তুমি একটু বসো এখানে।আমি ওদের সাথে একটু কথা বলে আসছি।
ঐখানে তোমায় নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। একদম ভয় পাবেনা।আমি আশেপাশেই আছি।আর কোনো দরকার হলে ফোন তো আছেই আমাকে ফোন দিবা। তুমি এখানেই থাকবে। আবার অন্য কোথাও চলে যেও না ওকে?

সোহা মাথা নাড়ায়।

দায়ান সোহার মাথায় হিজাবের উপর দিয়েই হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।

দায়ান সবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

সোহা বসে বসে অরেঞ্জ জুস খাচ্ছে আর আশে পাশের লোকজন দেখছে।কতো রকম কতো মানুষ এসেছে।কেউ খেতে তো কেউ গল্প করতে বিজি।

দায়ান কথা শেষ করে সোহার কাছেই এগিয়ে আসতেছিলো।হঠাৎ করে কেউ সামনে এসে দাঁড়ায়। তাতে দায়ান কিছুটা ভরকে যায়।দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয়।কপাল কোচকে সামনের দিকে তাকায় ।

সামনের মানুষটাকে দেখে।নিজের অজান্তেই অস্পষ্ট স্বরে একটা নাম বেরিয়ে আসে তিশা।

মূহুর্তের মধ্যেই দায়ানের কানে অতীতের কিছু বি/ষা’ক্ত কথা বাজতে থাকে।

আমি তোমার সাথে সারাজীবনের জন্য থাকাতো দূর কোনো সম্পর্কই রাখতে পারবো না দায়ান।তুমি আমায় ভুলে যাও।

— কি বলতেছো তুমি তিশা?

— ঠিকই বলছি। আমি কেনো কেউই তোমার সাথে এখন থাকতে চাইবে না।কি আছে তোমার? ফ্যামিলির সাথে তো বিজনেস টাও রসা’তলে যাচ্ছে। তাছাড়া তোমারতো আর কেউ নেই তুমি একা।ফ্যামিলির মানে তুমি কি বুঝবে? কিছু আছে তোমার সব তো শে/ষ। কেউতো আর নিজে জেনে বুঝে পায়ে কু’ড়ো’ল মারবে না।আমার এতো সুন্দর লাইফটা তোমার একার জীবনের সাথে জড়িয়ে শে’ষ করে দিতে পারবো না। আর তোমাকে একটা কথা বলি? আমিতো তোমার সাথে থাকবো না সিউর।কিন্তু তোমার এই একাকিত্ব জীবনের সাথে আর কাউকে জড়িয়ে তার জীবন টা নষ্ট করো না।

— দায়ান তিশার কথাগুলো শুনে নিজেকে সামলে বলে উঠে,,, কিন্তু আমার এই পরিণতির জন্য কে দায়ী তিশা? সব কিছুতো তোমার জন্যই হয়েছে।

— ওহ প্লিজ দায়ান।এসব ড্রামা তোমায় মানায় না অফ যাও।তোমার মতো এ’তিম ছেলে কে কেউই পছন্দ করবে না।সে যতো সুন্দরই হও না কেনো।সেই তো এ’তি’ম ই এরা সংসার করা,,,ফ্যামিলি এসবের মর্ম বুঝে না।সো প্লিজ আমার আশা ছেড়ে দাও।বাকি জীবন টা তোমার একাই কাটাতে হবে। সো একাই বাঁচতে শিখো।

— জাস্ট শাট-আপ তিশা।আর একটা কথাও বলবে না তুমি।আমার জীবনটা ধ্বং’স করে দিয়েছো তুমি। তোমার জন্য শুধু মাত্র তোমার কারণে আজ আমার বাবা মা আমার সাথে নেই।না তুমি ঐদিন আমায় জোর করতে।আর না ঐ বুদ্ধি টা দিতে। তাহলে সব ঠিক থাকতো।আজ থেকে দায়ানের ঘৃ’ণা দেখবে। ভাবতেও আমার নিজের উপর ঘৃ’ণা হচ্ছে তোর মতো মেয়েকে আমি ভালোবেসে ছিলাম।আজকের পর থেকে আমার সামনে তুই কোনোদিন ও আসিস না।সেই দিন আমি কি করবো নিজেও জানিনা।

দায়ানননন। বলেই তিশা ডেকে উঠে।

তিশার ডাকে দায়ান অতীত থেকে বের হয়ে আসে।

দায়ানের চোখ গুলো টকটকে লাল হয়ে গেছে।রাগে কপালের র’গ ফুলে উঠেছে।

তিশা আরেকটু এগিয়ে এসে দায়ানকে কিছু বলতে নিবে,,,তার আগেই দায়ান অন্য পাশে তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের মধ্যে আঙুল দিয়ে তিশাকে বুঝিয়ে দেয়।একটা কথা ও যেনো না বলে।

তবুও তিশা বলার চেষ্টা করে,, দায়ান প্লিজ,,,,,,,,,, আর কিছু বলতে পারে না।তার আগেই দায়ান উল্টো ঘুরে চলে যায়।

তিশার চ’ক্ক’রে দায়ান ভুলেই যায় তার জন্য যে কেউ একজন অপেক্ষা করে আছে।

দায়ান সোজা পার্টি থেকেই বেরিয়ে যায়।সোহা যে একা বসে আছে সে দিকে তার খেয়াল কই।তার ভিতর তো অতীতের ভয়াবহ স্মৃতি এসে ভ’র করেছে।

সোহা প্রায় দুই ঘন্টা সময় ধরে একই জায়গায় বসে আছে।কোমড়টা ব্যাথা হয়ে গেছে। তার উপর দায়ান কে আশে পাশে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।

নাহ এখানে আর এভাবে বসে থাকা সম্ভব না। এক জায়গায় এতে সময় নিয়ে বসে থাকায়।আশেপাশের লোক জন সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই কিছু না ভেবেই উঠে দাঁড়ায় সোহা।

দায়ানকে আশে পাশে খুজতে থাকে। কোথাও নেই ওয়াশরুম ও বাদ রাখেনি খোঁজার। কোথাও দায়ানের চিহ্ন টুকুও নেই।হাওয়া হয়ে গেলো নাকি লোকটা? তারপর ফোনের কথা মাথায় আসে। দায়ান বলেছিলো দরকার হলে ফোন দিতে।সোহা কল দিতে থাকে দায়ানকে।কল রিং হয়ে বাজতে বাজতে কেটে যায়। ঐ পাশ থেকে রিসিভ হয় না।অনেকবার কল দেওয়ার পর ও যখন রিসিভ হয় না কল টা তখন সোহা চিন্তায় পরে যায়।উনি ঠিক আছেন তো।ভেবেই রুমের দিকে এগোয়। হয়তো রুমে আছে এটা ভেবে।

রুমে এসে দরজার ন’ব টা ঘুরিয়ে দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সোহা। ভিতরে অন্ধকার। সোহা ফোনের ফ্লাশ জালিয়ে রুমের লাইট জালায়।৷

পিছনে ঘুরে দেখতে পায় দায়ান মাথার চুল খামচে ধরে বসে আছে।লাইটের আলো পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে সোহার দিকে একবার তাকায়।

দায়ানের চোখ দেখে সোহা শিউরে ওঠে। একি অবস্থা উনার।

আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? ঠিক আছেন আপনি?
বলেই দায়ানের দিকে এগুতে নিবে,,,তার আগেই দায়ানের মুখের বাক্য শুনে থেমে যায়।

একদম আমার কাছে আগানোর চেষ্টা করবিনা।তুই কি ভেবেছিস আমি একা থাকতে পারবো না।দেখ আমি কতো ভালো আছি।চলে যা আমার সামনে থেকে। বে’হা’য়া মেয়ে মানুষ।তর লজ্জা করে না এতো কিছুর পরও আমার কাছে আসার চেষ্টা করিস।টাকা লাগবে তর? বল আমায় কত টাকা লাগবে কতো টাকা হলে মুক্তি দিবি আমায়? আমি তোকে জাস্ট ঘৃ’ণা করি। তুই আমায় আর জালাইস না।মুক্তি দে আমায়।

সোহা দায়ানের কথায় স্ত’ব্ধ হয়ে রয়েছে।উনি আমায় ঘৃ’ণা করে? মুক্তি চায় আমার থেকে। আমিকি উনার টাকার জন্য উনার সাথে আছি।এসব ভেবেই কেদে দেয়।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,,, আ-আপনি এগুলা কি বলছেন দায়ান? কি হয়েছে বলেন আমায়? আমি কি কিছু ভুল করেছি? আপনি এগুলো মন থেকে বলছেন না তাইনা দায়ান আমি জানি।

শুধু মন থেকে না অন্তর থেকে বলতেছি এসব বুঝলি? আর ভুল তুই কি ভুল করবি? ভুলতো করেছি আমি তোকে আমার লাইফে জায়গা দিয়ে। কিন্তু আর না তোর ছায়া ও দেখতে চাইনা।বেরিয়ে যা এখান থেকে সাথে আমার জীবন থেকেও।তর মুখ ও আমি দেখতে চাইনা।বলেই অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে নেয় দায়ান।

সোহা আর দায়ানের কথা গুলো নিতে পারে না।দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে প্রচন্ড বেগে বৃষ্টি হচ্ছে সেই দিকে সোহার খেয়াল নেই। এক দৌড়ে হোটেল থেকে বের হয়ে মাঝ রাস্তা দিয়েই দৌড়াতে থাকে।হঠাৎ করেই কোথা থেকে একটা গাড়ি দ্রুত বেগে ছুটে আসে।গাড়ির আলোর ঝলকানি চোখে মুখে লাগতেই সোহা চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।এই বুঝি সব শে/ষ।দায়ান ও এবার মু’ক্তি পেয়ে যাবে।

দায়ান সোহার চলে যাওয়ার পর উঠে দাঁড়ায়। বিছানায় ভালো করে শুয়ার জন্য এগিয়ে যায়। হাঁটতে গিয়ে কিছু একটার সাথে হোঁচট খায়। । চোখ কচলে তাকিয়ে দেখে বোতল।আর কিছু না ভেবেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে।

আর বির বির করে বলে,,,,,আই হেইট ইউ।আই জাস্ট হেইট ইউ।আমি তোমায় কখনো ক্ষমা করবোনা। কখনো না।স্বা’র্থ’পর। কখনো আমার চোখের সামনে আর আসবানা। আসলে তোমায় খু/ ন করে ফেলবো তিশা।

বলেই ঘুমিয়ে যায়।

#চলবে,,,,,,

বিঃদ্রঃ দায়ানের পুরো অতীত খুব শি’ঘ্র’ই সামনে নিয়ে আসবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here