তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব -১৫+১৬

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৫(বোনাস)
#Jhorna_Islam

“আই লাভ ইউ দায়ান।”
কথাটা বলেই সোহা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে ল’জ্জা’য়। প্রচুর ল’জ্জা লাগছে তার।ইশশশ ভালোবাসি কথাটা বলতে এতো ল’জ্জা অ’স্ব’স্তি ঘিরে ধরে কেনো?

না না আই লাভ ইউ কথাটাতে এতোটা ও ফিলিংস কাজ করে না।যতোটা আমি আপনাকে ভালোবাসি কথাটাতে কাজ করে।

ইংরেজিতে লাভ ইউ বলার থেকে বাংলায় ভালোবাসি কথাটা বেশি সুন্দর।

তাছাড়া কেউ খুব সহজেই আই লাভ ইউ বলে দিতে পারে।আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারে না কেউ সহজে যদি কারো ভালোবাসায় কোনো খা”দ থাকে তাহলে একটু হলেও শব্দ তিনটি বলার আগে মুখে আটকাবে।

সোহা আই লাভ ইউ কথাটা খাতায় লিখে ছিলো।কিন্তু মন মতো হয়নি বলে কেটে খাতা থেকে ছিড়ে ফেলে।সোহা ঠিক করে রেখেছে ভালোবাসি কথাটা দায়ান কে চিরকুট হিসেবে দিবে।মুখে গিয়ে দায়ানের সামনে বলতেই পারবেনা।ল’জ্জা জড়তা সব এসে এক সাথে আ”ষ্টে পি’ষ্টে জড়িয়ে ধরবে।

মানুষের মনে যখন ল’জ্জা এসে হা’না দেয়।তখন মনের ভাব অন্য কে জানানোর জন্য চিঠির চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি হতেই পারে না।

একটার পরে একটা করে চিঠি লিখছে আর কেটে ফেলে খাতার পৃষ্ঠা ছিড়ে নিচে ফেলে দিচ্ছে। একটাও মন মতো হচ্ছে না।

—————————–
ঐদিনের পরে আরো এক মাসের মতো কেটে গেছে। রিসেশনে ঐদিন দায়ান আর যেতে পারে নি।সোহা দায়ানের মায়ের থেকে জানতে পেরেছিলো,,সোহাদের বাড়ি থেকে এসেই দায়ান হসপিটালে জয়েন হয়।আর কাজে প্রচুর ব্যস্ত হয়ে পরে। ডাক্তার দের তো আর ছুটি নেই।ওদের দিন রাত পার হয়ে যায় হাসপাতালে রু’গি’র সেবা করে।

রুশের রিসেশনের দিন ও দায়ান ছুটি পায় নি।মাত্র দুই ঘন্টার জন্য ছুটি নিয়ে সন্ধায় এসেছিলো।কিন্তু একটা রু”গির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো জরুরি অপারেশন করতে হবে নয়তো লোকটাকে বাচানো যাবে না। এজন্য দায়ান কে ফোন করা হয়েছে। তাই চলে যেতে হয়েছিলো।

সোহার আর তার পরিবারের লোকজন ঐদিন আর ফিরে আসেনি।থেকে গেছে দায়ানদের বাড়িতে।

পরেরদিন খুব ভোরেই সোহা ঘুম থেকে উঠে দায়ানদের বাড়ির ছাদে যায়।ছাদে গিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে রয়। চোখের পলক ই যেনো ফেলতে ভুলে গেছে।

দায়ান ছাদে থ্রি কোয়াটার টাউজার আর হাতা কাটা টিশার্ট পরে বু’ক ডাউন দিচ্ছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে।উফফ কি সুন্দর যে লাগছে।

দায়ান হঠাৎ করে ছাদে কারো অস্তিত্ব টে’র পেয়ে তাকিয়ে দেখে সোহা।তাই তারাতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।

হেই পিচ্চি বন্ধু কি অবস্থা তোমার?

আপনাকে বলবো কেনো আমার অবস্থা? হুয়াই?

ওরে বাবা রাগ করেছো বুঝি আমার উপর?

এটাও বলবো না!

আচ্ছা বলতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি। আমার ডাক্তার ম্যাডাম আমার উপর প্রচুর খে”পে আছে।

আসলে আমি স’রি। তোমাদের বাড়ি থেকে আসার পর হসপিটালে জয়েন হয়ে একটুও সময় হয়ে উঠেনি।দেখলেই তো কাল যাই একটু সময় নিয়ে এসেছিলাম তাও চলে যেতে হলো।
তারপর সোহা মনে মনে বললো আপনার মায়ের কাছে শুনেছি।মুখে কিছু বলেনা চুপ করে থাকে।

সোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে দায়ান বলে,,ঠিক আছে আর রা’গ করো না কয়েকদিন আমাদের বাড়িতে থেকে যাও।আমি সময় বুঝে আমাদের শহর তোমায় ঘুরিয়ে দেখাবো।

থাক আর ঘু”ষ দিতে হবে না। আমি উনাকে আমাদের গ্রামে ঘুরিয়েছি বলে উনি উনাদের শহরে ঘুরিয়ে সমান সমান করতে চাইছে হুহ।

আরে কি বলো ঘু”ষ কেনো হবে? তুমি আমার বি’য়া’ই’ন না? তার উপর আবার আমার ডাক্তার পিচ্চি বন্ধু।তোমার একটা হ”ক আছে না?

সোহা তারপর কিছু একটা ভেবে বলে ঠিক আছে। আপনি আগে ফ্রি হোন পরবর্তীতে এসে ঘুরবো।আজ আপুকে নিয়ে চলে যাবো।

আচ্ছা ঠিক আছে। এই কয়েকদিন আমারো একটু বেশি কাজের চা’প।তারপর হয়তো একটু ফ্রি হবো।

তারপর সোহা তার বাবা মায়ের সাথে নোহা ও রুশকে নিয়ে ঐদিন ই সকালের খাবার খেয়ে চলে যায়।

ওখানে গিয়ে রুশ আর নোহা আরো এক সপ্তাহ থাকে।
সোহার এইচএসসির রেজাল্ট দিতে আরো অনেক দেরি। ভালোভাবে পড়াশোনা করে এডমিশন টেষ্ট দিতে পারলেতো চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু এই মেয়ে পড়ছেই না।আগে যাই নোহা জোর করে পড়তে বসাতো। এখন তো নোহা ও নেই। সোহা নোহাকে ছাড়া কারো কাছে পড়তেও চায় না যে, টিচার রেখে দিবে।

এসব নিয়ে নোহার বাবা মা নোহা ও রুশের সাথে আলাপ করেছিলো।
রুশ সব কথা শুনে বলে,,,,সোহাকেও তাদের সাথে নিয়ে যাবে।ওখানে নোহা পরাবে।না হয় কোচিং এ ভর্তি ও করিয়ে দিবো।আর বাড়িতে ও এক্সট্রা টিচার রেখে দিলাম কোনো সমস্যা নেই। আর এডমিশনের জন্য ঢাকা তো যেতেই হবে।

নোহা রুশের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। বোনকে তাহলে নিজের কাছে রাখতে পারবে।বাবা মা কে ও বলে রাজি হওয়ার জন্য।

সোহার বাবা মা ভেবে বলে,,দেখ তোরা যা ভালো বুঝিস কর।কিন্তু সোহা কি যেতে রাজি হবে?

নোহা বলে,,এটা না হয় আমার উপর ছেড়ে দাও।

নোহা গিয়ে সব সোহাকে বলে। সোহা সব শুনে প্রথমে রাজি হয় না। নোহার জোরাজোরিতে আর দায়ান কে দেখতে পাবে এই ভেবে পরে রাজি হতে যায়।

পরেরদিন ব্যাগ পেক করে রুশ আর নোহার সাথে সোহা ও দায়ানদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। সকলেই ওদের সাথে সোহাকে দেখে অনেক খুশি হয়।

——————–
দায়ানের সাথে সোহার আবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। হাসপাতাল থেকে ছুটি বা বন্ধ পেলেই দুটিতে মিলে শহর ভ্রমনে বেরিয়ে পরে।

সোহা তো দায়ান বলতে এখন প্রায় পা/গল।সারাক্ষণ দায়ানের সাথে দুষ্টুমি করে।

দায়ান ও সোহাকে তেমন কিছু বলে না।মনে মনে হয়তো সোহার দুষ্টুমি গুলো সেও বেশ উপভোগ করে।

দায়ান যতক্ষন বাড়িতে থাকবে সোহা সারাক্ষণ দায়ান কে লুকিয়েছে লুকিয়ে দেখতে থাকে।কি যে ভালো লাগে। ইচ্ছে করে দায়ানকে নিজের সামনে বসে পলকহীন ভাবে দায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকতে।

সোহা এতোদিনে নিজের মন কে বোঝে গেছে।যে সে কেনো দায়ানকে এক পলক দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠে। দায়ান কাছাকাছি থাকলে কেনো তার বুকটা শব্দ করে ঢিপ ঢিপ করে। আসলে এসব তো ভালোবাসারই একটা অংশ। হে সোহা দায়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে। এই লোকটা কে ছাড়া সোহা এখন কিছু ভাবতেই পারে না। দায়ানের মনে কি চলছে তা সোহা জানে না। সে শুধু জানে দায়ানকে সে ভালোবাসে।জীবন টা দায়ানের সাথেই কাটাতে চায়। দায়ান কে পাওয়ার জন্য যা করা লাগে করবে।সোহার শুধু একটাই চাওয়া লোকটা যেনো সোহার ভালোবাসা বোঝে।সোহাকে ও যেনো একটু ভালোবাসে।

————————-

আজ দায়ানের মায়ের সাথে দায়ানের হাসপাতালে গিয়ে ছিলো দুপুরের খাবার নিয়ে।

দায়ানের মায়ের সাথে ক্যাবিনে ঢুকে দেখতে পায়,, দায়ান একটা নার্সের সাথে কি যেনো নিয়ে কথা বলছে আর হাসছে।

এই দৃশ্য দেখে সোহাট মাথায় র/ক্ত উঠে যায়।উনি কেনো এই সুন্দরী সাথে হেসে হেসে কথা বলবে? নার্সের চাহনি দেখেই বোঝে গেছে সোহা যে মেয়ে টা দায়ানকে হয়তো পছন্দ করে।

তমা শাঁ/কচু”ন্নি থেকে বাঁচিয়েছে। আর কতোজন থেকে বাঁচাতে হবে? লোকটা দিন দিন এতো সুন্দর হচ্ছে কেনো?

এসব ভেবে দায়ানের সাথে কথা না বলেই আজ এসে পরেছে।এসেই সেই যে বসেছে চিঠি লিখা নিয়ে। কিন্তু একটাও মন মতো হচ্ছে না ধূ”র।

ইচ্ছে করছে দায়ানকে নিজের আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতে।তাহলে যদি কেউ লোকটার দিকে না তাকায়।

#চলবে,,,,,,,,,,,

বিঃদ্রঃ কেমন হলো জানাবেন।#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৬
#Jhorna_Islam
সোহা অনেক চেষ্টার পর একটা চিঠি ভালো করে লিখে।এইটায় ভালো মতো লিখতে পারলেও অনেক কাটাকাটি গেছে। তাই এইটা আবার নিচে ফেলে দেয়।

আরেকটা ভালো ফ্রেশ কাগজ নিয়ে সুন্দর করে আগেরটার মতো লিখতে থাকে।

ফেলে দেওয়া কাগজটা জানালা দিয়ে আসা বাতাসে উড়ে রুমের বাইরে চলে আসে।সোহা তা বুঝতে ও পারে নি।

সেতো আরেকটা চিঠি লিখতে বি’জি। উড়ে আসা চিঠিটা রুমের বাইরে এক কোণে গিয়ে জায়গা করে নেয়।তাও আবার কারো পায়ের কাছে।মানুষ টা তখন এই পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো। কাগজে কি আছে কৌতূহল বসত উঠিয়ে হাতে নেয়। পরতে নিয়ে প্রথমেই দায়ানের নাম দেখে ব্রু কোঁচকায়। ভালো করে পড়তে নিবে ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠে। তাই কথা বলতে বলতে নিজের রুমে ঢুকে কা’বা’র্ডের ভিতর চিঠি টা রেখে দেয়। তারপর আবার কথা বলায় মন দেয়।

সোহা ২য় নাম্বার চিঠিটা খুব নিখুঁত ভাবে যত্ন আর ভালোবাসা নিয়ে লিখে।একবার পরে দেখে নেয় কোনো ভুল আছে কিনা।নাহ কোনো ভুল নেই। এতো সময় পর পরিশ্রম স্বা’র্থক হলো।তারপর সুন্দর করে চিঠিটা ভা’জ করে।

চিঠি টা ভালো করে রাখবে এমন সময় নোহার ডাক শুনতে পায় সোহা।নোহা তাকে ডাকছে নিচে যাওয়ার জন্য খাবার খেতে।

সোহা নোহার ডাকে বেশ অবাক হয়। এতো তারাতাড়ি কেনো ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য?

তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।সাড়ে নয়টা বেজে গেছে অলরেডি। দায়ানদের বাড়িতে রাতের খাবার সকলে এক সাথেই সাড়ে নয়টার দিকে খায়। এতো সময় হয়ে গেলো চিঠি লিখতে গিয়ে সোহার কোনো হুঁশ ই নেই।সেই কখন এসব নিয়ে বসেছে।

তাই তাড়াহুড়ো করে হাতের ভাজ করে রাখা চিঠি টা বালিশের নিচে চা’পা দিয়ে রাখে।

বিছানা থেকে নিচে নামতে গিয়ে মেঝেতে তাকিয়ে দেখে রুম আর রুম রাখেনি।ছোটো খাটো একটা ডা’স্টবিন বানিয়ে ফেলেছে।

নোহা যে সোহাকে ডাকতে ডাকতে কাছাকাছি চলে এসেছে বুঝতে পারছে।কিছু সময়ের মাঝেই হয়তো রুমে এসে পরবে। তাই সোহা তারাতাড়ি নেমে সব গুলো হাত মু’চ’রি’য়ে রাখা চিঠি গুলো একে একে মেঝে থেকে উঠাতে থাকে।

মিনিট একের মাঝেই সব গুলো কাগজ তুলে ওড়নাতে ভরে নেয়। তারপর রুমের কোণে রাখা ঝুড়িতে একটু ঝুকে সব গুলো কাগজ ওড়না থেকে ঝুড়িতে ফেলে।

তারপর সোজা হয়ে দাঁড়ায় কোমড় ধরে।ঠিক তখনই নোহা ভিতরে ঢুকে।

সোহা বোনের দিকে তাকিয়ে ভাবে বাহ্ হোয়াট এ টাইমিং আপু।আমার কাজ ও শেষ তুই ও এ’ন’ট্রি নিলি।

— কিরে সোহা তোকে কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাসনি?

— শুনেছিতো আপু।

— তো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন? জানিস না এই টাইমে যে এই বাড়িতে সকলেই রাতের খাবার খায়?

— জানিতো।

— তাহলে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

— আচ্ছা যাচ্ছি। তুমিও এসো।

তারপর নোহা কিছু একটা ভেবে বলে,,,এই এক মিনিট তুই রুমের কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলি রে?

ককই কি ককরছিলাম আপু কিছুই না। আসলে চকলেটের খোসা ফেলতে ছিলাম ঝুড়িতে আরকি।ঐযে রুশ ভাইয়া যে আমায় চকলেট গুলো এনে দিয়েছে না ঐগুলোর।

তুই এখন রাতের খাবারের আগে কিসের চকলেট খাচ্ছিলি।পরে পেট ব্যাথা হলে কি হবে?

কিছুই হবে না আপু জাস্ট একটাই খেয়েছি।চলো এবার সবাই হয়তো বসে আছে আমাদের জন্য। আর আমারও প্রচুর খিদা লেগেছে।বলেই সোহা নোহা কে টেনে নিয়ে নিচে যেতে থাকে। মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে বলে,,ভাগ্যিস আপু আমার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে।

কাল সকালেই জমেলা খালাকে দিয়ে কাগজ গুলো ফেলে দিতে হবে।

——————————–

সোহা নোহার সাথে খাবার খেতে এসে দেখে সকলেই উপস্থিত আছে।এমনকি আজ দায়ান ও উপস্থিত। শরীরে ফর্মাল ড্রেস ই পড়া।হয়তো এখনই বাইরে থেকে এসেছে। আর দায়ানের মা এই সুযোগে দায়ানকে নিচ থেকেই হয়তো বলেছে সকলের সাথে খেয়ে নিতে।কাজের জন্য প্রতিদিন তো আর সবার সাথে খেতে পারে না।

সকলেই খেতে বসেছে জমেলা খালা বেড়ে দিচ্ছে। দুইটা চেয়ার খালি আছে শুধু এখন।রুশের দুই পাশে দুইটা। তাই সোহা কিছু না ভেবেই দায়ানের বড়াবড় রুশের ডান পাশে বসে পরে। নোহা গিয়ে রুশের বা পাশে বসে।

সোহা বসতেই দায়ানের বাবা বলে উঠে,, কি ব্যাপার সোহা মা তুমি আজ সবার পরে আসলে? খিদে লাগেনি না কি খাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলে?

আসলে বড় ফুপা কখন যে খাওয়ার সময় হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি।( দায়ানের বাবা কে সোহা আর নোহা বড় ফুপা বলেই ডাকে আর দায়ানের মা কে বড় ফুপি।)

ওহ আচ্ছা তাই বলো।আমিতো ভাবলাম খাওয়ার কথা হয়তো ভুলেই গেছো। তোমাদের দুই বোনকে কতো বলি একটু বেশি বেশি করে খাও।আজকাল কার দিনে শরীর এমন থাকে? দুইটায় ই শুকনো পাট কাঠি।

দায়ানের বাবার কথা শুনে সকলেই হেসে দেয়।

দায়ানের মা বলে,,চুপ করুন তো ওদের চুপচাপ খেতে দিন।আপনিইনা সব সময় বলতেন খাবার সময় বেশি কথা বলতে নেই।এখন দেখি আপনিই সবার থেকে বেশি কথা বলেন।

কি করবো বলোতো দুইটা মা পেয়েছি।ওদের দেখলেই আমার মনটা আকুপাকু করে কথা বলার জন্য।

সোহা আর নোহা মা তোমরা কি আমার কথায় বিরক্ত হও?

একদম না ফুপা।সোহা আর নোহা এক সাথেই বলে।

তারপর দুইবোন দুই জনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।

দায়ানের মা আবার বলে ঠিক আছে। অনেক কথা হয়েছে এবার খাও।

সোহা খেতে খেতে দায়ানের দিকে তাকায়। তখন দায়ান ও তাকায় সোহার দিকে দুইজনের ই চোখাচোখি হয়ে যায়।দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বিনিময়ে মুচকি হাসে।

সোহা তারাতাড়ি চোখ নিচে নামিয়ে আবার খাওয়ায় মন দেয়।

খাওয়ার মাঝেই আবার দায়ানের কন্ঠ শুনতে পায়।

আহ্ আমাদের রুশ হুশ এর কি কপাল,,,এক সাইডে বউ আরেক সাইডে শা/লিকা নিয়ে খেতে বসেছে।

রুশ মুখের মাঝে মাত্র মাংসের হাড্ডি টা নিয়ে যাচ্ছিল কামড় দিতে।কিন্তু দায়ানের কথা শুনে থেমে যায়।

ভাই আমার পছন্দের হাড্ডি টা তে মাত্র কা’মড় বসাতে যাচ্ছিলাম।এখনই তোর আমায় নিয়ে ম’জা করতে মন চাচ্ছে। এখনের মতো ম’জা করা ছেড়ে দে একটু মনোযোগ দিয়ে খেতে দে।

তুই তো শুরু করে দিবি কিন্তু শেষ তো ইনি করবেন।ডান পাশে সোহাকে দেখিয়ে। রুশের কথা শুনে সকলেই হেসে দেয়।

আচ্ছা যা আজকের মতো তোকে ছেড়ে দিলাম।খা শান্তি তে।

তারপর সকলের আগেই দায়ান খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ায়। যেতে যেতে বলে,, আম্মু আমি গেলাম গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দেওয়া লাগবে।কাল সকাল সকাল জটিল একটা অপারেশন আছে।তাই এখন ঘুমিয়ে মাথাটা কে শান্ত রাখতে হবে।

তারপর সকলেই একে একে খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়।

সোহা আর নোহা ড্রয়িং রুমে বসে বসে টিভি দেখতে থাকে।কিছু সময় পরই নোহার ডাক পরে রুশ ডাকছে।কি নাকি রুশ খুঁজে পাচ্ছে না।নোহা সোহাকে ও নিজের রুমে যেতে বলে চলে যায়।

সোহা নোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে,,হুহ কিছু খুজেখুজে পাচ্ছে না ছা’ই।বাহানা দিয়ে নিজের বউ কে নিয়ে গেলো।

সোহা ও কিছু সময় টিভি দেখার পর আর ভালো লাগে না। একা একা সোহার এমনিতেও ভালো লাগে না। তাই টিভি অফ করে উপরে নিজের জন্য ব’রা’দ্দ’কৃ’ত রুমে চলে যায়।

রুমে গিয়ে কিছু সময় এফবিতে ঘুরে রেখে দেয়। প্রচুর ঘুম পেয়েছে।চিঠির কথা বে’মা’লু’ম ভুলে গিয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে যায়।

—————————————
সকালে ফোনের এলার্মে ঘুম ভেঙে যায় সোহার।এলার্ম বন্ধ করে আরো দশ মিনিট ঘুমিয়ে নেয়। আড়মোড়া ভেঙে বসে এবার ফোন হাতে নেয়। তারপর তাকিয়ে দেখে কোচিং এর আর মাত্র দশ মিনিট বাকি আছে।এখান থেকে কোচিং এর দূরত্ব প্রায় পনেরো মিনিট হেটে গেলে আধা ঘণ্টা। রুশই সোহাকে কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।

সোহা দৌড়ে বাথরুমে ঢোকে।তারপর পাঁচ মিনিটে যতটুকু পেরেছো তৈরি হয়েছে।দৌড়ে নিচে যাওয়ার সময় জমেলা খালার সাথে দেখা হয়।খালাকে বলে দেয় সোহার রুমের ঝুড়িতে রাখা কাগজ গুলো যেনো ফেলে দেয়। কাউকে যেনো আবার না দেখায়।খালা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

তারপর আবার দৌড়ে বেরিয়ে যেতে নিতেই দায়ানের মা ডাকা শুরু করে। আরে সোহা মা না খেয়ে চলে যাচ্ছো কেন? খেয়ে তারপর যাও।নয়তো অসুস্থ হয়ে পরবে।

হবো না বড় ফুপি আজ একদম টাইম নেই দেরি হয়ে গেছে। আমি কিছু খেয়ে নিবো চিন্তা করো না।বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

গেটের কাছে আসতেই দেখে দায়ান গাড়ি বের করছে।সোহাকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দেয়। গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে,,উঠে এসো আমিও তো ঐ রাস্তা দিয়েই যাই।নামিয়ে দিয়ে যাবো।

সোহা কথা বাড়ায় না। দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।

সিট বেল্ট লাগাও।

তারপর সোহা সিট বেল্ট লাগিয়ে বসে।

সোহার কোচিং সেন্টারের সামনে দায়ান সোহাকে নামিয়ে দেয়। সোহা নেমে দায়ান কিছু বলার আগেই দৌড়ে ঢুকে গেছে।

তাই দায়ান ও গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।

———————————-
দুপুরের দিকে সোহা ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে।এখন মনে হয় সকলেই দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। সোহা ও বাইরে থেকে তার এখানকার এক বান্ধবীর সাথে মিলে খেয়ে এসেছে।তাই উপরে উঠে রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুশের মায়ের রুমে কিছু কথা শুনেই পা চলা থেমে যায়। রুশের মা রুশের সাথে দায়ানের ব্যপারে কথা বলছে।

রুশ তুইতো তোর নিজের জীবন টা সাজিয়ে নিলি।আমাদের সব চিন্তা তো এখন দায়ানকে নিয়ে। ছেলেটা কি এমন ভাবেই থাকবে নাকি? বিয়ের বয়স তো কবেই হয়েছে।আমাদের ও তো ইচ্ছে করে দায়ানের সংসার দেখার জন্য।

কি করবো আমি মা।সকলে মিলেই তো ওকে বুঝিয়েছো।আমি কি কম বুঝিয়েছি? সে তো বুঝতে চায় না।

তিশাকে ভালোবেসে ছেলেটা সব সুখ হারিয়ে গেলো তাই না রে?

আহ্ মা এসব কথা এখন আর বলো না।দায়ান শুনলে কষ্ট পাবে।আমি নিজে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকবার বিয়ের কথা বা নিজের জীবনে কাউকে আনার কথা বলেছিলাম।

কিন্তু ও কি শুনবে? সেই এক কথা আমি বিয়ে করবো না।তিশা কে পাইনি আর কাউকে দরকার নেই।

সোহা এতটুকু শুনেই নিজের রুমে চলে আসে।সেতো ভুলেই গিয়েছিল দায়ানের মনে যে অন্য কেউ আছে।দায়ান তিশা আপুকে ভালোবাসে।আপু নেইতো কি হয়েছে উনিতো এখনো ভালোবাসে।

এ আমি কি করতে যাচ্ছিলাম? আমি যদি উনাকে চিঠি টা দিতাম তাহলে তো উনি আমার সাথে কথা বলা তো দূর বন্ধুত্বই রাখতনা। না না দেওয়া যাবে না।ভাগ্যিস দেই নি।তাহলেতো উনি আমায় খারাপ ভাবতো।

তারপর চিঠির কথা মনে হতেই দৌড়ে গিয়ে বালিশ টা উল্টায় চিঠি নেওয়ার জন্য। কিন্তু একি চিঠি কোথায়? কোথাও নেই।বিছানা উলটপালট করে খুজতে থাকে চিঠির কোনো চিহ্ন মাত্র নেই।আলামারি ও ঘেটে ফেলে কোথাও নেই।

উফফ সোহার মাথা টা এবার সত্যি সত্যি ধরে যায়।মনে মনে দোয়া করতে থাকে কারো হাতে যেনো চিঠিটা না পরে।তারপর মনে আসে জমিলা খালা কে বলেছিলো ঝুড়ি থেকে কাগজ গুলো নিতে এটা ও নেয় নিতো?

দৌড়ে নিচে রান্না ঘরে জমেলা খালার কাছে আসে।খালা বসে বসে তরকারি কাটতেছিলো।সোহা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে জানতে চায় খালার কাছে যে সে কোনো কাগজ পেয়েছে কি না ঝুড়ি বাদে।ওর রুমের অন্য কোথাও বা বালিশের নিচে থেকে।

জমেলা খালা জানায় সে পায় নি আজ রুম ও ঝাড়ু দেয়নি।শুধু ঝুড়ি টা নিয়ে এসে পরে।

সোহা তারপর জিজ্ঞেস করেছিলো ওর রুমে অন্য কাউকে যেতে দেখেছে কি না।

তিনি জানায় দেখেন নি।

সোহা নিজের রুমে এসে বসে পরে। কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো চিঠিটা? আর যাই হোক এই বাড়ির কারো হাতে যেনো না পরে।

কেন যে তিশা আপুর কথা আর দায়ানের তিশার প্রতি ভালোবাসার কথা একবারো ভাবলো না চিঠি টা লিখার আগে।

সোহা মনে মনে ঠিক করে দায়ানকে বলবেনা ভালোবাসার কথা। গোপনে ভালোবেসে যাবে।যদি দায়ান ওর কাছে ভালোবেসে আসে কখনো সেই দিনটার অপেক্ষায় থাকবে।বাকিটা না হয় আল্লাহ যা চায় তাই হবে।

#চলবে,,,,,,,,,,

বিঃদ্রঃ একটা বিষয় খুবই খারাপ লাগে,,এক অংশ পরে পরবর্তী অংশ নিজের মতো করে ভেবে নেন। বায় দা রাস্তা চিঠি গুলো কার হাতে পরলো বলে মনে হয়? দেখি এইবার কার অনুমান সঠিক হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here