তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব -১৭+১৮

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam

হোয়াট আম্মু!
তুমি কি পা/গলে হয়ে গেছো? এসব কি যা’তা বলছো? তুমি ধারণা করতে পারছো তুমি কি বলছো?
কিছু না ভেবেই একটা বলে দিলেই হলো নাকি?
আমি আর সোহা? এটা কখনো পসিবল?

তুমি এটা ভাবলে কি করে আম্মু হাও?

কেনো কি হয়েছে?

— তুমি এখনো বুঝতে পারছো না?

— নাহ্ বল শুনি তোর সমস্যা টা কি সোহাকে নিয়ে? ওকি দেখতে শুনতে খারাপ? নাকি মেয়ে হিসেবে ভালো না,কোনটা বল আমায়?

— এসব কিছু না আম্মু। মেয়ে হিসেবে সোহার কোনো তুলনাই হয় না। ওর মতো কাউকে লাইফে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

— তাহলে তুই সেই ভাগ্য হাতে ঠেলে দূরে কেন সরিয়ে দিচ্ছিস?

আম্মু তুমি সব জেনেও কেনো অবুঝের মতো আচরণ করছো? এসবের ভূত তোমার মাথায় কি করে চাপ’লো?

যেভাবেই চা’পুক না কেনো সেইটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। প্লিজ বাপ আমার রাজি হয়ে যা।সোহাকে বিয়ে করে নে।নিজের জীবন টা আবার সুন্দর করে গুছিয়ে নে।তোকে এভাবে দেখতে আমার আর তোর আব্বুর ভালো লাগে না। তোকে নিয়ে জানিস কতো টেনশনে থাকি? এমন ভাবে কি থাকা যায়? একা একা কেউই থাকতে পারেনা।ভালো ভাবে বাঁচার জন্য কাউকে জীবনে প্রয়োজন। একান্ত প্রয়োজন। বুঝতে পারছিস?

দায়ান অসহায় দৃষ্টিতে একবার মায়ের দিকে তো একবার বাবার দিকে তাকায়। তারপর বলে,,,আব্বু তুমি এ’ট’লি’স্ট আমায় বুঝো।আম্মুকে বোঝাও।তুমি চুপ করে আছো কেনো?

দায়ানের বাবা এবার নড়েচড়ে বসে। এতোসময় মা ছেলের কথা চুপ করে শুনছিলেন তিনি।

দায়ান আশায় আছে এইটা ভেবে তার বাবা তার পক্ষে থাকবে।কিন্তু দায়ানের আশায় এক বালতি পানি ঢেলে তিনি ও বলে উঠেন দেখ দায়ান আমিও তোর মায়ের সাথে একমত। তোর মা যা বলছে মেনে নে।কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না।

দায়ান বাবার কথা শুনে বলে উঠে,,, বাহ্ ভালোইতো।দুইজন এক হয়ে নেমেছো।

আমার এই ছন্ন ছাড়া জীবনে ওকে কেন জড়াতে চাচ্ছো তোমরা? নিজের ইচ্ছেতে মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে চাচ্ছো? আমার অতীত তোমাদের জানা নেই? মেয়ে টা কে কেনো ঠকাতে চাচ্ছো তোমরা? আমার লাইফে কেউ ছিলো আম্মু। এটা নিশ্চই তোমরা ভুলে যাও নি?

ছিলো দায়ান। এখন তো আর নেই।পা’স্ট আর প্রেজেন্ট এর মাঝে বিস্তর ফা’রা’ক সেটা তোমাকে বুঝতে হবে। সে আর তোমার লাইফে এখন নেই।

দায়ান কিছু সময় মায়ের দিকে তাকিয়ে রয়। তারপর কোলে গিয়ে শুয়ে পরে।আমি পা/গল হয়ে যাবো আম্মু। আমি আর পারছি না।এসব নিতে পারছিনা আমি।

দায়ানের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,,সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই আমাদের কথাটা মেনে নে।সব দেখবি কি রকম সুন্দর হয়ে গেছে। ঐ মেয়েটা তোর অন্ধকার জীবনের আলো হয়ে আসবে।

বাবা মায়ের উপর তোর বিশ্বাস আছে তো?

দায়ান মাথা নাড়িয়ে জানায় আছে।

তাহলে আমাদের কথাটা মেনে নে। আমরা কখনো তোর খারাপ চাইবো না।কোনো ভুল কিছু করবোও না।যেটাতে করে আমাদের ছেলে খারাপ থাকে।বাবা মা সব সময় বেস্ট ডিসিশনটাই বেছে নেয় তাদের সন্তানের জন্য।

আম্মু আমার আর সোহার বয়সের পার্থক্য জানো? ওতো একটা পিচ্চি মেয়ে।আমার সাথে তো ওর যাবে না আম্মু।

এসব বয়সের পার্থক্য কোনো ব্যপার না দায়ান। যদি লাইফ পার্টনার টা সঠিক হয়।আমার আর তোর আব্বুর বয়সের পার্থক্য তেরো বছরের।আমাদের মধ্যে এই নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে? হয়নি তো।তোর ও হবে না।

আমার লাইফের এতোকিছু জেনেও কেনো ওরা আমাকে সোহার জীবনে মানবে আম্মু? ওর বাবা মা কখনো মেনে নিবেন না। আর সোহা ও মেনে নিবে না আমায়।কেউই তার জীবন সঙ্গী অন্য জনকে ভালোবাসছে সেটা সহজে মেনে নিবে না।

দায়ানের মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,, এতোসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। সব আমার আর তোর বাবার উপর ছেড়ে দে।আমরা দুইজন সব সামলে নিবো।তুই শুধু রা’জি হয়ে যা। সোহার বাবা মায়ের সাথে আমি আর তোর বাবা কথা বলবো।আর সোহার ব্যাপারটা আরো আগে ছেড়ে দে।

তারপর দায়ানের মা মনে মনে বলে,, তুই তো জানিস না। সোহা নামের মেয়ে টা তোকে কতো ভালোবাসে।আমার আর তোর আব্বুর তো সেই প্রথম দিন থেকেই সোহাকে তোর জন্য পছন্দ। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম তুই একটু স্বাভাবিক হলেই তোর আর সোহার চার হাত এক করে দিবো সকলের সম্মতি তে।

————————————-
সোহার বালিশের নিচে রাখা দায়ানকে নিয়ে লিখা চিঠি টা আর কেউ নয় দায়ানের মা পেয়েছে। সোহা যখন কোচিং সেন্টার এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গিয়েছে তখন তিনি উপরে উঠে আসেন।জামেলা খালা তখন ঝুঁড়ি নিয়ে চলে গেছে।

দায়ানের মা বিছানার চাদর নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

অনেকদিন হয়ে গেছে সোহার রুমের বিছানার চাদর বদলানো হয়নি। কিছু টা ময়লা ময়লা হয়ে আছে।তাই আরেকটা বিছিয়ে সেটা ধোয়ার জন্য নিয়ে যাবেন।

রুমে ঢুকে বিছানায় গিয়ে বসে। তারপর বালিশ টা কোলে তুলে নিয়ে কা’ভা’র খুলতে যাবে,এমন সময় চোখ যায় বালিশ যেখানে রেখেছিলো ঐখানে একটা কাগজের দিকে।

এইখানে এটা রেখে দিয়েছে মেয়েটা? আর জায়গা পায়নি নাকি।পরেতো হাড়িয়েও যেতে পারে।দরকারি কাগজ হলে।তারপর সেটা হাতে উঠিয়ে নেয়।

কৌতূহল বসত দেখে নেয় ওটা কিসের কাগজ।তারপর চিঠিটা পরে দায়ানের মায়ের চোখে খুশির পানি চিকচিক করতে থাকে।কয়েক দিন ধরে দায়ানের মা সোহা আর দায়ান কে নিয়ে যে স্বপ্নটা মনের মধ্যে গেঁথে রেখেছেন।সেটা আরেক ধাপ বেড়ে গেলো।সোহা দায়ান কে ভালোবাসে।তার মানে দায়ানের মা এতোদিন ধরে যেটা ভেবে রেখেছিলো সেটা সম্ভব।

তারাতারি করে উনি চিঠিটা নিয়ে বালিশ টা যথা স্থানে রেখে সোহার রুম থেকে বের হয়ে যায়।

তারপর নিজের রুমে ঢুকে যত্ন সহকারে চিঠিটা রেখে দেয়। দায়ানের বাবা বাড়ি আসলে সব জানায়।কারণ দুইজনেই দায়ানের জন্য সোহাকে পছন্দ করে ছিলো কিন্তু বলার সাহস হয়নি। এখন যেহেতু সোহা ও দায়ানকে চায়।তাহলে তারা যে করেই হোক এই দুইজন কে এক করবে।

তারপর ভেবে চিন্তে দায়ান হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলে উনাদের রুমে ডেকে নিয়ে আসে।তারপর বলে যে,,উনারা চায় দায়ান সুখে থাকুক ভালো থাকুক এটা দেখে শান্তিতে মরতে চান।এজন্য দায়ান কে বিয়ে করতে হবে। তাও আবার সোহাকে। সোহাকে উনারা দায়ানের জন্য পছন্দ করেছে।

———————————-

তোর চোখে ও আমি সোহার জন্য বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু দেখেছি।তুই হয়তো এখন বুঝতে পারছিস না।সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবি।কথা গুলো দায়ানের মা মনে মনেই বলেন।

আমি নিজের লাইফের সাথে কারো লাইফ জড়াতে চাচ্ছিলাম না আম্মু। আবারো বলছি ভালো করে ভেবে দেখে নেও।

আমারা অনেক ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি দায়ান।বয়স তো আর কম হলো না।ভালো মন্দ সবই বুঝি।বাবা মায়ের উপর ভরসা রেখে আশা করি ঠকবে না।বাবা মা কখনো তাদের সন্তানের সাথে বে’ঈ’মানী করে না।কোটিতে হাতে গুনা দুয়েকজন পাবে যারা এমন করে।

তুমি আমাদের একমাত্র ছেলে আমাদের সব চাওয়া পাওয়া, আশা ভরসা সব কিছু তোমায় নিয়ে।আশা করি তুমি আমাদের নি’রাশ করবেনা।

ঠিক আছে আম্মু তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।আমি আর বাঁধা দিবো না। জীবনে একটা বড় সিদ্ধান্ত তো আমি নিয়েছিলাম।এবার না হয় তোমরা নিলে।

দায়ানের বাবা মায়ের মুখে দায়ানের কথা শুনে হাসির রেখা ফোটে উঠে। দায়ান সেই হাসি মুগ্ধ চোখে দেখে।

সে লাইফ টা আবার সাজাবে।স্বপ্ন দেখবে নতুন করে। ভেবে নেয়।

———————————————————-
সোহা অনেক ভেবেও যখন চিঠি টা কোথায় আছে বুঝতে পারলো না।তখন ভাবনাই ছেড়ে দিলো।

ধূর আর ভাববেই না।হয়তো ঐ ঝুড়িতে ভুল করে ফেলে দিয়েছিলো।আর জমেলা খালা তা নিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছে।

নয়তো এতক্ষনে তো কিছু একটা ঘটতই যদি কারো হাতে চিঠি টা পরতো। নিশ্চয়ই চিঠি টা যার হাতেই পরতো সে যেই হোক চুপ করে থাকতো না।

অনেক ভেবে চিন্তা করতে করতে মাথা ধরিয়ে ফেলেছে।তাই আর এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না।এতো ভাবনা চিন্তায় শরীরে ক্লান্তি ভ’র করেছে। চোখ ঘুমে বু’জে আসছে।
এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার।

তাই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।কিছু সময়ের মধ্যেই দুই চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো।আর ঘুমিয়ে ও গেলো।

দায়ান তার বাবা মায়ের রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সোহার রুমের দরজায় চোখ যায়।দরজা টা খোলাই আছে।দায়ান দরজার কাছে এগিয়ে আসতেই বিছানার উপর ঘুমন্ত সোহাকে দেখতে পায়।

কিছু সময় দরজার বাইরেই দাড়িয়ে সোহার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রয় দায়ান।মেয়ে টা কো’ক’ড়ে শুয়ে আছে। হয়তো শীত লাগছে।তার উপর দরজা এমন হা করে খোলা রেখে কেউ ঘুমায়? দায়ান সোহার রুমের ভিতর ঢুকে।

এগিয়ে গিয়ে সোহার পাশে দাঁড়ায়। কোনো কিছু না ভেবেই পায়ের নিচ থেকে কা’থা’টা নিয়ে সোহার শরীরে মেলে দেয়।তারপর সোহার মাথায় হাত দিতে গিয়ে ও থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে দরজাটা চাপিয়ে দেয়।

আবার বাবা মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে ন’ক করে।

দায়ানের বাবা মা দরজার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে,, তার আগেই দায়ান বলে,,,

“আম্মু আমি সোহাকে বিয়ে করতে রাজি আছি।” তবে আমার একটু সময়ের প্রয়োজন। ওর মনে কি চলছে সেটা আমি জানতে চাই।আর ওর সাথে ভালোবাসাহীন ভাবে কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না।নিজের মন থেকে ওকে গ্রহন করতে চাই।৷

আশা করি বুঝতে পেরেছো।বলেই দায়ান নিজের রুমে চলে যায়।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৮(বোনাস)
#Jhorna_Islam

প্রতিটা ভোর মানে নতুন দিনের আর নতুন কিছুর আগমন।
সোহা আজও ঘুম থেকে দেরি করে উঠতো।প্রতিদিন ই এমন হচ্ছিলো এলার্ম দিয়ে রাখলেও দেরি হয়ে যায়। আর দৌড়াদৌড়ি লেগে যায় কোচিং এ যাওয়ার সময়।

আজ দায়ানের মা নিজে এসে সোহা কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গেছেন।কাল অবশ্য রাতে খাবার টেবিলে সোহা নোহা কে বলেছিলো সকালে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য।

দায়ানের মা সোহার কথা শুনে নিজে দায়িত্ব নেয়।যে তিনি উঠিয়ে দিবেন সোহাকে সকালে।নোহাকে উঠাতে হবে না । সোহা প্রথমে অমত করলেও পরে রাজি হয়।

তাই আজ দায়ানের মা সোহাকে ডেকে গেছেন।বলেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে।সোহা ও মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

দায়ানের মা বেরিয়ে গেলে সোহা ও ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

ফ্রেশ হয়ে কোচিং এ যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়ে সোহা নিচে নামে।

নিচে নেমে দেখে বাড়ির পুরুষ গণ খাবার টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছেন।কারণ সকলেই তাদের নিজ নিজ কর্মস্তলে চলে যাবে।

সোহা খাবার টেবিলের সামনে যেতেই দেখতে পেলো ওর বোন ওর দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। সোহা ব্রু কোচকে বোনের দিকে তাকিয়ে রয়।

খাবার টেবিলে ডান পাশে দায়ানের বাবার পাশে একটা চেয়ার।আরেকটা বাম পাশে অর্থাৎ দায়ানের পাশে একটা চেয়ার। অন্য চেয়ার গুলো তে যেতে হলে ঘুরে যেতে হবে। তাই এই দুটোর যেকোনো একটাতেই বসতে হবে।

সোহা প্রথমে দায়ানের পাশের চেয়ারটা তে বসতে চাইলেও পরে মত পাল্টে ফেলে।সবাই কি ভাববে এটা ভেবে দায়ানের বাবার পাশের চেয়ারটা তে বসতে যেই না এগিয়ে যাবে।অমনি দায়ানের মা এসে দায়ানের পাশের চেয়ারটায় ধরে তারাতাড়ি বসিয়ে দেয়।

বিষয় টা খুবই দ্রুততার সঙ্গে করেন তিনি।দায়ান আর সোহা দুজনেই হকচকিয়ে দায়ানের মায়ের দিকে তাকায়।

বাকিরা দায়ানের মায়ের কান্ডে মিটমিটিয়ে হাসে।

দায়ানের মা এসব কে পাত্তা না দিয়ে সোহার সামনে খাবার দিতে থাকে। সোহার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। সে বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ করে রুশের দিকে চোখ পরে।রুশ দাঁত কে’লি’য়ে হাসে সোহার দিকে তাকিয়ে। তারপর চোখ টিপ মারে। এরা জামাই বউ সোহার দিকে তাকিয়ে এমন হাসাহাসি কেনো করছে সোহার বোধগম্য হলো না।তাই আর এসব নিয়ে চিন্তার সাগরে ডুব ও দিলো না।নিজের খাওয়ায় মন দিলো।

খাবার খেয়ে রুশ আর দায়ানের বাবা এক সাথেই উঠে দাঁড়ায়। ওরা একটু আগে বসেছে খাবার খেতে তাই আগেই খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। দুজনে এক সাথেই অফিসে যাবে।সকলের কাছে ওরা বলে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরে।

এবার নোহা আর রুশের মা কেও দায়ানের মা খাবার খেতে বসিয়ে দেয়।

সোহা খাবার খাচ্ছে কম এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বেশি।দুয়েকটা করে মুখে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে গুণে গুণে মুখে দিচ্ছে।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,,, এমন ভাবে খাচ্ছো কেনো?

না মানে আসলে,,,,,,

না মানে আসলে না করে চুপচাপ ভালো করে খাও।এমন ভাবে কেউ খাবার খায়?

সোহা দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান সোহাকে চোখের ইশারায় ভালো করে খেতে বলে।

সোহা আবার খাবারের দিকে তাকিয়ে আগের মতোই খেতে থাকে। এবার বিষয় টা দায়ানের মায়ের চোখেও পরে।

সোহা মা কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেনো মা, খাবার কি পছন্দ হয় নি?.

না বড় ফুপি আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না।

আচ্ছা দাঁড়াও। বলেই দায়ানের মা সোহার প্লেট টা হাতে তুলে নেয়। তারপর সোহা কিছু বলার আগেই মু্খে খাবার দিতে থাকে। সোহার বারণ শুনলেতো সোহার প্লেটে যতটুকু খাবার ছিলো তা শেষ করে আবার নিয়ে।আরো কয়েক লোকমা খাইয়ে দেয়।

সোহা এবার কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,,, আর দিও না প্লিজ।আমি আর খেতে পারবো না।তুমি আমায় দুই দিনের খাবার মনে হয় এক বারেই খাইয়ে ফেলেছো।আমি এবার নড়তেই পারবো না।

দায়ানের ও সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হলো।তাই তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,আম্মু তুমি এই খাবারের অ’ত্যা’চার সোহার উপর প্রয়োগ করা শুরু করলে? এখন দিও না আর।দেখতে পাচ্ছো না বেচারি খেতে পারছে না।পরে আবার সব ব’মি করে ফেলে দিবে।এক জায়গায় যাবে এখন।ক্লাস করতে পারবে না অস্বস্তি তে পরবে।এখনের মতো ছেড়ে দাও বাসায় আসলে আবার শুরু করে দিও। বলেই মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে নিজের খাওয়ায় মন দেয়।

দায়ানের মা কে এবার নোহা ও বলে হ্যা বড় ফুপি ছেড়ে দাও নয়তো সত্যি সত্যি ব’মি করে দিবে।

আমার ইচ্ছে মতো খাওয়াতেই পারলাম না।মেয়েটা কতো শুকনো।এমন শুকনো হলে চলে নাকি?

নোহা হাসতে হাসতে বলে,,,সুযোগ তো পাচ্ছোই বড় ফুপি।সোহা কে মোটা করার।এখন না হয় ছেড়ে দাও।

সোহা এদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।যে কথা বলে সে সময় শুধু তার দিকে তাকিয়ে রয়।

আচ্ছা ঠিক আছে বলেই উনি হাত ধুয়ে ফেললেন।দায়ান খাবার খেয়ে উঠে গেছে। উপর থেকে ফাইল আনতে হবে।সেই উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

পিছন থেকে দায়ানের মা দায়ানকে ডাক দেয়। দায়ান ঘুরে দাঁড়াতেই বলে উঠে,,, সোহা কে তুই তোর সাথে নিয়ে যাবি।নিজে পৌঁছে দিবি।শুধু আজ না আজ থেকে প্রতিদিন ওকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তোর।

সোহা দায়ানের মায়ের কথায় বলতে নিবে এসবের দরকার নেই বড় ফুপি। আমি যেতে পারবো।বেশি দূরে না তো।কিন্তু বলতে পারলো না।

সোহা কিছু বলার আগেই দায়ানের কথা শুনতে পায়।

“ঠিক আছে আম্মু নিয়ে যাবো।” সোহা তুমি পাঁচ মিনিট ওয়েট করো আমি ফাইল টা নিয়ে তৈরি হয়ে আসছি।

সোহা অবাক হয়ে দায়ানকে দেখে।এক কথায় সোহাকে প্রতিদিন নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো? এসব ভাবা যায়? আজকি সোহার অবাক হতে হতে কাটবে নাকি।

নোহার ও ততক্ষণে খাওয়া শেষ। সোহা দৌড়ে বোনের কাছে যায়।

— এই আপু ব্যাপার কিরে?

— কিসের ব্যাপার?

— তুই আমার দিকে তাকিয়ে ঐসময় এমন করে হাসতে ছিলি কেনো? বল আমাকে কাহিনি কি?

— কাহিনি কি থাকবে কিছুই না।আমি কি হাসতে পারবো না? হাসতে কি আমার মানা নাকি?

— তা হবে কেন? কিন্তু আমাকে দেখেইতো তুই হাসছিলি।

— তাহলে শোন কেনো হাসছিলাম।খুশিতে।আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে বোঝাতে পারবো না।রীতিমতো লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। বুঝতে পারছিস তুই কি পরিমাণ খুশি আমি?

— কি নিয়ে এতো খুশি তুই? সুখবর আছে নাকি কোনো।খালা মনি হতে যাচ্ছি?

— নোহা সোহার মাথায় আস্তে করে থা”প্প”ড় মেরে বলে,, তুই আবারো প্রমাণ করলি তুই কোন লেভেলের গা”ধী।বিয়ে হয়েছে কয়দিন রে তুই যে এখনই খালামনি হওয়ার স্বপ্ন দেখিস।বাচ্চা হওয়া কি এতোই সহজ? নাকি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যায় কোনটা?

–তাহলে তুই আমায় বলছিস না কেনো? বলনা আমায় কি নিয়ে তুই এতো খুশি।রুশ ভাইয়া ও তোর মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে তখন হেসেছে।সাথে আবার চোখ ও মেরেছে। বল প্লিজ আপু আমিও শুনে একটু খুশি হই।

— না বোন বলা যাবে না। এটা তোর জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ বুঝলি?

ধূর,,,,,,,,,

তখনই দায়ান ফাইল হাতে নিচে নেমে এসে সোহা কে বলে,,, সোহা চলে এসো।

নোহা সোহাকে ঠেলে বলে,,যা যা তারাতাড়ি যা।

তারপর ওদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে নোহা মুচকি হাসে।

————

দায়ান আর সোহার বিয়ের ব্যাপারটা সকালেই পরিবারের সকলের কাছে জানায় দায়ানের মা। সকলেই শুনে বেশ অবাক হয়।

রুশ বলে উঠে দায়ান জানে এসব?

হ্যা দায়ানের থেকে অনুমতি পেয়েই আমরা এগিয়েছি।দায়ান রাজি সোহাকে বিয়ে করতে। শুধু কয়েকদিনের সময় চেয়েছে।নোহা ওদের কথা নিশ্চুপ হয়ে শুনছে।

রুশ তো সেই খুশি হয়েছে। সেও মনে মনে সোহাকে দায়ানের জন্য ভেবে রেখেছিলো।কিন্তু কাউকে জানানোর সাহস হয়নি।এমনকি নোহা কে ও না।

রুশের মা বলে উঠে কিন্তু বড় ভাবি।আমার ভাই আর সোহা কি রাজি হবে?

সোহার ব্যাপারটা ছেড়ে দে ছোটো।তারপর সোহার দায়ানের প্রতি ভালোবাসার কথা ও চিঠির কথা সকলকেই বলে,,এটা ও বলে সোহা কে যেনো চিঠির ব্যাপারে কেউ কিছু না বলে।আর ওদের বিয়ের কথা উঠেছে এটাও।

সোহা দায়ানকে ভালোবাসে শুনে কেউ কিছু আর বললনা।সকলেই চায় দায়ান ঘুরে দাড়িয়ে নিজের জীবন টা আবার নতুন করে শুরু করুক।আর সকলেরই এটা ভরসা আছে যে দায়ান সোহাকে খুব সুখে রাখবে।কষ্ট পেতে দিবে না।সবাই মিলেই সোহার পরিবার কে রাজি করাবে বলে ঠিক করে নেয়।।

নোহা ও এতে সায় দেয়। তারতো খুশি ধরছেই না।সোহা সারাজীবনের জন্য তাহলে তার কাছেই থাকবে।আহ্ কি আনন্দ। খবর টা জানার পর থেকে নোহা হাসি খুশি দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। ঠিক করেছে বাবা মা রাজি না হলে নিজে বোঝাবে।

—————–

দায়ান সোহাকে বলে তারাতাড়ি করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সোহা দায়ানের সাথে হাটায় না পেরে দৌড়াতে থাকে। দৌড়ে দায়ানের পাশে যায়।গিয়ে আরেক বিপত্তি ঘটে।ভুলবশত পা বে’কা’য়দা’য় পরে চিৎ হয়ে পরতে নেয়।

ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে বলে,,গেলো গেলো।আমার নাক মুখ সব গেলো।

তারপর অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরও যখন ব্যথার কোনো চিহ্ন পাওয়া গেলোনা শরীরে তখন চোখ তুলে তাকায়।

তাকিয়ে দেখে দায়ান তার খুব কাছে।আর মিটমিটিয়ে হাসছে।বুঝতে আর বাকি নেই দায়ান পরতে যাওয়ার আগেই ধরে ফেলেছে।

সোহা এক দৃষ্টিতে দায়ানের হাসির দিকে তাকিয়ে রয়।

কি ম্যাডাম এভাবে থাকার ইচ্ছে নাকি? কোচিং এ যাবেন না?

সোহা তারাতাড়ি করে উঠে ঠিক হয়ে দাড়ায়।

দায়ান সোহার জন্য গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে,,সাবধানে হাটবানা যদি এখন পরে যেতে তাহলে কি হতো?

তারপর ইশারায় উঠে বসতে বলে।

সোহা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। দায়ান ঘুরে এসে নিজেও উঠে বসে। তারপর কিছু না ভেবে সোহার অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে।

দায়ান এতো কাছে আসায় সোহা ঘাবড়ে যায়।দায়ানের কড়া পার্ফিউমের সুবাস এসে নাকে বারি খাচ্ছে।

সোহা চোখ ছোটো ছোটো করে দায়ানের দিকে তাকায়।দায়ান তার সিট বেল্ট বেধে দিয়ে সরে গেছে। সোহা লম্বা করে একটা দ’ম নেয়।

দায়ান গাড়ি চালাতে শুরু করে সোহার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবারো মিটমিটিয়ে হাসে। যা সোহার চোখ এড়ায় না।সোহা ভাবতে থাকে কি হয়েছে এদের। সকলে আজ এমন ভাবে হাসছে কেনো?

“আজকি হাসার দিন মানে হাসি দিবস নাকি?”

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here