তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ১+২

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০১)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
আদ্র ভাইয়া আমার গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো এই মেয়ে নিজের শরীর দেখাতে এসেছিস কলেজে??এতই যদি শরীর দেখানোর ইচ্ছে তোর তাহলে ওড়নাটা কেনো নিয়েছিস? ফেলে দে ওটা। বলেই উনি আমার ওড়নাটা টেনে ছুরে ফেলে দিয়ে দেয়ালে অনেক জোরে নিজের হাতে আঘাত করলো।
আমার চোখ থেকে গাল বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে,এ অপমান জনক কথাগুলো আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আদ্র ভাইয়া আজ আমাকে এসব বাজে কথা শোনালো! রাগে অভিমানে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। আমি আর একমুহুর্ত না দাড়িয়ে ওড়নাটা তুলে চোখ মুছতে মুছতে চলে এলাম।
.
.
কিছুক্ষণ আগে……
আমি কলেজের ক্যানটিনে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম….স্যার ক্লাসে যাচ্ছিলো দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে আসতে নিলে আমার গায়ে থাকা টপসটা চেয়ারের কোনে বেধে যাওয়ায় আমি নিচু হয়ে চপসটা ছাড়ানোর সময় ওড়নাটা কাধের উপর থেকে পড়ে যায়। আমি টপস ছাড়াতে ব্যস্ত ছিলাম তাই তেমন খেয়াল করিনি। হঠাৎ কানে ভেসে এলো…..দোস্ত পাখিটাকে দেখ একে তো খাঁচায় আটকাতেই হবে।
কথাটা শুনে আমি নিজের ওড়নাটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে নিয়ে পেছনে ঘুরে আদ্র ভাইয়াকে দেখতে পাই উনার চোখ পুরোই লাল হয়ে ছিলো। প্রচুর রেগে আমার হাত ধরে টেনে ক্যানটিনের একপাশে নিয়ে এসেছে বাকীটাতো আপনারা জানেন।
.
চলুন এবার পরিচয় দেওয়া যাক….
আমি আরিশা তাসনীম আরিশা বলেই ডাকে সবাই,আর আদ্র ভাইয়া আরু বলে ডাকে।আমি এবার ইন্টার ২য় বর্ষ পড়ছি। আদ্র ভাইয়া আমার বড় চাচ্চুর ছেলে আমরা একই বাড়িতে থাকি উনি মাস্টার্সে পড়ছে পাশাপাশি চাচ্চুর ব্যবসা দেখাশুনা করে।
.
.
বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে এসে দরজাটা লক করে ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে এলাম সাওয়ার ছেড়ে বসে পড়লাম নিচে। আমার যখন খুব রাগ হয় তখন এই কাজটাই করি আমি। তাতে রাগটা একটু হলেও কমে। আদ্র ভাইয়ার বলা কথাগুলো আবার মনে পড়তেই ভীষন রাগ হচ্ছে আমার ইচ্ছে করছে সিল্কি চুলগুলো টেনে ছিড়তে…আমার চুল নয় কিন্তু আদ্র ভাইয়ার চুল ছেড়ার কথা বলেছি।
অনেকক্ষণ সাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই দেখলাম,মা বড় কাকিমা বেডে বসে আছে। আমাকে দেখে যেনো ওনারা চাঁদ পেয়েছে।

কাকিমা আর মা দুজনেই আমার পাশে এসে দাড়ালো মা বললো….আরিশা মা কি হয়েছে তোর কলেজ থেকে এসেই দরজা আটকে দিলি,চোখ নাক লাল কেনো কেঁদেছিস তুই??

মায়ের কথা এড়িয়ে বললাম…তোমরা আমার রুমে আসলে কি করে?? দরজা তো ভেতর থেকে লক করা ছিলো।

কাকিমা বলে উঠলেন তোকে এভাবে দরজা আটকাটে দেখে তো আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তারপর তোর রুমের ডুপ্লিকেট চাবিটা খুজে দরজা খুলেছি। আর এসে দেখলাম তুই ওয়াশরুমে তাতেই বুঝতে পেরেছি তোর আজ কোনো কারনে রাগ হয়েছে।

মা বললো কি হয়েছে মা বল রাস্তায় কেউ কিছু বলেছে তোকে?

আমি বিড়বিড় করে বলছি কে কি বলবে,তোমাদের আদরের আদ্র সেই তো একাই একশো আমার রাগ উঠাতে। হনুমান একটা।

আরিশা কি বিড়বিড় করছিস তোর মা আর আমার তো চিন্তা হচ্ছে বল কিছু? তুই মনমরা হয়ে থাকলে আমাদের ভালো লাগে বল। তুই ছাড়া আর কে…..

কাকিমাকে থামিয়ে অথই বলে উঠলো…হ্যা আরিশা আপুই তোমাদের সব আমি তো কেউ না। অথই গাল ফুলিলে কথাটা বলে বেডে বসে পড়লো।(অথই আদ্র ভাইয়ার ছোট বোন ক্লাস নাইনে পড়ে)

আমি অথইকে বললাম…বনু আমার তুই সবাইকে তোর করে নিয়ে যা আমার কাউকে লাগবে না। আর এটাও বলে দিস আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না।

মা মুখটা কালো করে বললো এভাবে কথা বলছিস কেনো তুই?

কিভাবে বলেছি!!

অনু থাক বাদ দে এসব তোর মেয়েটা যে জেদি তা তো আমাদের অজানা নয়। আরিশা তোর কি হয়েছে বলতে হবে না। এত রাগ ভালো নয় মা এখন খেতে চল।

খাবো না আমি তোমরা যাও। মা কাকিমা অথইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম,কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেও পারিনি। জোরে জোরে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। বিরক্ত নিয়ে উঠে চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দিয়ে আবারো এসে বেডে বসে পড়লাম। কে এসেছে সেদিকেও খেয়াল নেই আমার। আমি ঘুমে ঝিমতে ঝিমতে বলে উঠলাম…..ধুর কেউ আমাকে বুঝে না এত মজার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলো। আর একটুখানি ঘুমাতে দিলে কি হতো শুনি!

মহারাণীর ঘুমটা ভাঙিয়ে দিয়ে তাকে খুব বিরক্ত করলাম তাইনা? তো ম্যাম কয়টা বাজে সে খেয়াল কি আপনার আছে? খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন।

কন্ঠটা শুনে আমার ঘুমটা একছুটে পালিয়ে গেলো ভ্রু জোড়া কুঁচকে সামনে তাকিয়ে বললাম আপনি! আপনি আমার রুমে কেনো? ওও আবারো কি থাপ্পড় মারতে এসেছেন?? এসবই তো পারেন আপনি শুধু শুধু আমাকে বকেন আর আর আজ তো মারলেনও।

আদ্র ভাইয়া হাত ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো আরু তুই আমাকে আপনি করে কথা বলা শুরু করলি কবে থেকে!! তুমি করে বলতি ওটাই তো ঠিক ছিলো।

এখন থেকে আপনি করেই বলবো। আপনি তো আমাকে মারতে এসেছেন নিন মারুন দাড়িয়ে আছেন কেনো।

আদ্র ভাইয়া রেগে বললো একটা থাপ্পড় মেরেছি বলে কেঁদে কেঁদে কয়েকঘন্টায় চেহারার ১২ টা বাজিয়েছিস আর একটা মারলে তো তোকে খুজেই পাওয়া যাবে না। থাক ওসব কথা বাদ দে যা ফ্রেস হয়ে আয় তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি খেতে হবে।

আমার জন্য খাবার আনতে বলেছি নাকি আপনাকে। নিয়ে যান খাবার খাবো না আমি। আর শুনুন আপনার সাথে আমি আর কথা বলবো হুম,বলবো না মানে বলবো না ব্যাস।

আরু আর একটা কথা বললে এবার সত্যি আরো একটা মারবো তোকে। কথাটা বলেই আদ্র ভাইয়া আমাকে হাত ধরে টেনে পাশে থেকে পানির বোতলটা নিয়ে ব্যালকনিতে এনে বললো..জলদি মুখটা ধুয়ে নে।
আমি কিছু বলতে নিলে উনি বলে উঠলো…চুপ একটা কথা নয় যা বলেছি কর। আমার রাগ হচ্ছে খুব কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। মুখটা ধুয়ে বেডে উপর বসে পড়লাম। আদ্র ভাইয়া প্লেটটা হাতে নিয়ে এক লোকমা ভাত আমার মুখের সামনে ধরলেন….আরু খেয়ে নে।

খাবো না আমি।

উনি একটু চুপ থেকে বললো আচ্ছা বাবা সরি আমার ভুল হয়েছে আর মারবো না তোকে। তখন নিজের রাগটা কনট্রোল করতে পারিনি তাইতো তোকে…

হুম তাই তো আমাকে এত এত বাজে কথা শুনিয়ে দিলেন আর মারলেন ও। খুব কষ্ট হয়েছিলো আমার। কি দোষ ছিলো আমার হ্যা? আমি কি জানতাম নাকি ওই ছেলেগুলো…

ওসব কথা এখন আর না বলি চুপচাপ খেয়ে নে প্লিজজ।

আদ্র ভাইয়া আমাকে না খাইয়ে এখান থেকে এক পা ও নরবে না তাই বাধ্য হয়ে অল্প কিছু খেলাম। উনি প্লেট রেখে হাত ধুয়ে উঠে দাড়াতেই বললাম….আচ্ছা ভাইয়া এখন কয়টা বাজে আমি কি দুপুরের খাবার খেলাম??

এখন রাত প্রায় ১০ টা বাজে তুই রাতের খাবার খেলি।

কিহ!! দুপুর থেকে এতক্ষণ আমি ঘুমিয়েছি!!

জি ম্যাম। নিজে তো আরামে ঘুমিয়েছিস এদিকে বাড়ির সকলের আরামকে হারাম করেছিস সাথে আমারো।

আপনার আবার কি করেছি??

আরু আপনি আপনি করবি না তো,খুব তো তুমি তুমি ডেকে মাথা খারাপ করিস আজ উল্টোটা করার মানে কি।

আমি এটা বলেই ডাকবো এখন থেকে।

চুপ বেয়াদব মেয়ে, এক চড়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো খুব কথা বলতে শিখেছিস না।

আমি মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালাম উনার প্রবলেমটা ক? এই ভালো তো এই খারাপ। আমার সাথে কেনো এমন করে বুঝি না।

শোন কাল থেকে আমি তোকে কলেজে নিয়ে যাবো আবার নিয়ে আসবো কোনো বাড়াবাড়ি করবি না,আর কলেজে গিয়ে এদিক ওদিকে না ঘুরে ক্লাসে থাকবি। মনে থাকে যেনো।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। হুহ আপনার কথা শুনতে আমার বয়েই গেছে শুনবো না আপনার কথা দেখি কি করেন আপনি।
#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০২)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
সকালে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। ক্লাস শুরু হতে ৪৫ মিনিট সময় বাকী বাড়ি থেকে কলেজে পৌছোতে ২০ মিনিট সময় লাগে আমি আগেই বেড়িয়ে পড়েছি,আমি চাই না আদ্র ভাইয়া আমাকে নিয়ে আসুক। অসহ্য লোক একটা কারনে অকারনে আমাকে বকে। বলে কিনা আমি তোকে নিয়ে যাবো নিয়ে আসবো….আমিও কম যাই না সে ঘুম থেকে উঠার আগেই বেড়িয়ে পড়েছি হুহ।
.
কলেজে এসে সোজা পুকুর পাড়ে চলে এলাম এখনো ২০ মিনিট সময় আছে প্রায়। পুকুর পাড়ে এসে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো একমাত্র কলেজের এই জায়গাটাই আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে,আর এখানে এসব ছি…পুকুরপাড়ে সিঁড়িতে একটা ছেলে ও মেয়ে বসে আছে শুধু বসে নেই একে ওপরকে জড়িয়ে বসে আছে। আচ্ছা এদের কি লজ্জা বলতে কিছু নেই? কলেজে এসেও প্রেম করতে হয়!!!
ওখানে আর বসা হলো না রাগে গজগজ করতে করতে আমার ক্লাসের সামনে চলে এলাম। সবাই একে একে আসছে ক্লাসরুম খুলে দিতেই গিয়ে বসে পড়লাম। একটু পরেই মনিকা এসে আমার পাশে বসলো।
(মনিকা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অষ্টম শ্রেণি থেকে আমরা একসাথে আছি আমি ওকে মনি বলে ডাকি আর ও আমাকে আদ্র ভাইয়ার মত আরু বলে ডাকে)

আমি কিছু বলছি না দেখে মনিকা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো…আরু তুই তো এমন চুপচাপ বসে থাকার মেয়ে নয়!! কি হয়েছে মন খারাপ??

মন মেজাজ দুটোই খারাপ।

কেনো বাসা থেকে কেউ কিছু বলেছে তোকে??

বাসা থেকে কে কি বলবে,বাসার সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে একজনই তো আছে যে মাঝে মাঝেই আমার মন খারাপের কারন হয়ে দাড়ায়।

আরু তুই কি আদ্র ভাইয়ার কথা বলছিস উনি আবার তোকে বকেছে তাইনা??

শুধু বকেনি রে ওই হনুমানটা এবার আমাকে মেরেছে। কাল তো তুই আসিস নি আসলে দেখতে পারতি।

সেকিরে কেনো মেরেছে তোকে!!!

মনিকাকে কালকের সব কথা খুলে বললাম,পুকুর পাড়ের বিষয়টাও বললাম যার কারনে আমার মেজাজ খারাপ আছে।ও সব শুনে বললো….পুকুরপাড়ে ওসব রোজই হয় কমন হয়ে গেছে ওইদিকে খেয়াল না করাই ভালো। তবে তোর কপালে যে আজ আরো দুঃখ আছে সেটা আমি বুঝতে পারছি।

আমি কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে বললাম,মনি তুই কি বলতে চাইছিস হুম??

আদ্র ভাইয়া তোকে নিজে কলেজে নিয়ে আসবে বলেছে আর তুই নাচতে নাচতে চলে এসেছিস। ভেবে দেখেছিস উনি রেগে গেলে কি করবে!!

এই তুই আমার বেস্টু তো! নাকি ওই আদ্রর কিছু হস হুমম?? আমি মাঝে মাঝে ভীষণ কনফিউজড হই যে তুই আসলে কার দলের!!

আরু কি বলছিস তুই এসব!! আমি জাস্ট তোকে…..
এর মাঝেই স্যার চলে এলো মনি চুপ হয়ে গেলো আমি ফিসফিসিয়ে বললাম…আর যদি ওই হনুমানটার পক্ষ নিয়ে আমাকে কিছু বলিস তাহলে তোর সাথে আমি ব্রেকআপ করে দিবো,মনে থাকবে তো মনি বেবি?

মনিকা চোখ বড় বড় করে তাকালো কিছু বললো না আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম…এভাবে চেয়ে আছিস কেনো আমাকে না দেখে সামনে তাকা ক্লাসে মন দে।
.
.
পরাপর ৩ টা ক্লাস হলো আর বসে থাকতে মটেও ইচ্ছে করছে না আবার ক্ষিদে ও পেয়েছে।এদিকে মনিকাও চুপ করে আছে হয়তো একটু অভিমান করছে। আমি মনিকার হাত ধরে বললাম…মনি চল ক্যানটিনে যাই সকালে খেয়ে আসি নি এখন খুব ক্ষিদে পেয়েছে।

তোর ক্ষিদে পেয়েছে তো আমার কি তুই একাই যা আমি যাবো না।

আমি কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম সত্যি যাবি না তো??

মনিকা আমার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে উঠে আমার আগে হাটা দিলো আমিও হেসে ওর পেছনে ছুটলাম। মনিকা খুব ভালো মেয়ে খুব তাড়াতাড়ি সবার সাথে মিশে যেতে পারে। আমার সাথে যতই ঝগড়া হোক না কেনো কখনো রেগে থাকতে পারে না। আমার ফেস দেখলেই নাকি ওর রাগ হাওয়া হয়ে যায়।
.
.
ক্যানটিনে আমি আর মনিকা সামনা সামনি বসে আছি আমি খাবার দিতে বলেছি এখনো দেয়নি। মনিকা সামনে তাকিয়ে ভীত চোখে আমাকে বলল….আরু পেছনে তাকা।

কেনো কি আছে পেছনে??

তাকা না তাহলেই বুঝতে পারবি।

আমি পেছনে তাকাতেই দেখলাম আদ্র ভাইয়া আমাদের দিকে আসছে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে আমি দেখেও না দেখার ভান করে চুপচাপ বসে রইলাম। এর মধ্যেই খাবারো দিয়ে গেলো আমার ফেভারিট চিকেন নুডুলস। আমি খেতে শুরু করলাম।

আরু ভাইয়া কিন্তু এদিকেই আসছে আর তুই নিশ্চিন্তে খাচ্ছিস!!

আমি একবার মনিকার দিকে তাকিয়ে আবারো খেতে লাগলাম। আদ্র ভাইয়া এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। একবার মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম চোখটা লাল হয়ে আছে কপালের রগ গুলো ভেসে উঠেছে উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রং তাই রগগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আদ্র ভাইয়া যখন ভীষণ রেগে যায় তখনি এমনটা হয়।

আমি ভয়ে ঢোক গিললাম মনে মনে বলছি…আরু একদম ভয় পাবি না,তোর সামনে কোনো বাঘ বসে নেই যে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিবি।
নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হেসে বললাম ভাইয়া নুডুলস খাবেন?? টেষ্ট হয়েছে অনেক।

হাতটি টেবিলের উপর জোরে বারি দিয়ে বললো কি বললি তুই??

ননুডুলস খেতে বলেছি।

তোকে না আপনি করে বলতে না করেছি,তারপরেও তুই ওটাই বলছিস।

এবার আদ্র ভাইয়া আরো রেগে গেলো। এক কাজ করা যাক তুমি করে বলি তাহলে আর উনি রেগে থাকবে না।
সরি ভাইয়া ভুল করে বলে ফেলেছি, তুমি নুডুলস খাবে??

খাওয়াচ্ছি তোকে নুডুলস। তোকে কাল রাতে বলেছিলাম না আমি তোকে কলেজে নিয়ে আসবো,তুই সে কথা না শুনে একাই চলে এসেছিস কোন সাহসে??

তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকি নি। তাছাড়া আমি কি ছোট আছি যে আমাকে নিয়ে আসবে আবার নিয়ে যাবে। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি একাই চলাফেরা করতে পারবো।

আদ্র ভাইয়া উঠে দাড়িয়ে আমার দিকে ঝুকে বললো ও আচ্ছা তাই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তুই!! ঠিকআছে তোর যা ইচ্ছে কর,যেখানে খুশি যা আমি কিছুই বলবো না বাট লিমিট ক্রস করবি তো মরেছিস। হাত পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।

আদ্র ভাইয়া কথাগুলো বলে হনহন করে চলে গেলো সেখান থেকে আর আমি হা করে তাকিয়ে আছি উনার যাওয়ার দিকে। কি বলে গেলো? কিসের লিমিট ক্রস করবো আমি? সব সময় বাড়িয়ে কথা বলে। আজব লোক একটা।

এতক্ষণ মনিকা চুপ করে সব শুনছিলো ছিলো এখন মুখ খুললো…আরু এটা কি হলো বলতো??

কি হলো??

আমি তো ভেবেছিলাম আদ্র ভাইয়া তোর গালে আজও একটা চড় বসাবে। কিন্তু উনি তেমন কিছুই করলো না এমনকি তেমনভাবে রেগেও কিছু বললো না!!

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম মনি তুই কি চেয়েছিলি আদ্র ভাইয়া আজও আমাকে মারুক?? এই তুই আমার শত্রু হয়েছিস কবে থেকে বলতো??

আরু তুই না অলঅয়েজ উল্টোটা বুঝে নিস। আর ঠিক এই কারনেই তুই আদ্র ভাইয়ার কাছে বকা খাস। আমি কি বলেছি সেটা না বুঝে তুই বিপরীতটা ভেবে নিলি।

মনিকা ব্যাগটা নিয়ে উঠে চলে গেলো…যাহ বাবা মনির কি হলো আবার!!রাগ করে নি তো?? আমি ওকে কি একটু বেশি বলে ফেলেছি?? সব হয়েছে আদ্র ভাইয়ার জন্য উনার জন্য আমার বেস্টুটা রাগ করলো। ইচ্ছে করছে উনার মাথার সব গুলো চুল টেনে টেনে ছিঁড়তে।
.
.
রাতে সবাই মিলে ডাইনিং এ খেতে বসেছি। আমি চুপচাপ বসে খাচ্ছি একটু পর পর আড় চোখে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। উনিও খেয়ে চলেছেন কোনো কথা বলছে না,সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে উনার। ইসস এমন চুলগুলো আমি ছিঁড়তে চাই! উনার ফর্সা মুখের সাথে কালো চুলগুলো দারুন মানিয়েছে। আর ঠোঁটের নিচে বা পাশের কালো তিলটা উনার মুখের মাঝে এক মায়াবি আভা ফুটিয়ে তুলেছে।

এই আপু খাওয়া বাদ দিয়ে এত ভাবছো তুমি?? অথই এর কথায় একটু কেঁপে উঠলাম,কিযে ভাবছিলাম আমি ধেত। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাকিমা আমার পাশে এসে বললো…আরিশা কি ভাবছিলি খাওয়া বাদ দিয়ে হুম?

কিছু না কাকিমা এইতো খাচ্ছি।

কিছু না বললেই হলো,খাওয়ার সময় তো পুরো ডাইনিং তুই একাই মাতিয়ে রাখিস বক বক করে আর আজ এত চুপচাপ বসে আছিস!

আসলেই তো আমি আজ এত চুপচাপ কেনো! আর কেনোই বা আদ্র ভাইয়াকে ওমন ভাবে দেখছিলাম।
আমি কাকিমাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আদ্র ভাইয়া বললো

মা তোমরা অযথাই আরুকে নিয়ে ভাবছো ওর কিছু হয়নি, ও এখন বড় হয়ে গিয়েছে। কিরে আরু ঠিক বলেছি তো??

আদ্র ভাইয়ার কথাটা শুনতে কেমন যেনো লাগলো। আমি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে এলাম। এসে বেডের উপর চোখ পড়তেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম আমার মন খারাপটা এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো।
·
·
·
চলবে………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here