তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ২৯+৩০

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২৯)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
সকালে আদ্রর আগে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আদ্র আমাকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে আছে। উনার মুখের দিকে তাকাতেই আমার চোখ আটকে গেলো। কতো নিষ্পাপ লাগছে দেখতে ছোট বেবিদের মতো ঠোঁট চেপে রেখে ঘুমিয়ে আছে। দেখতে বাচ্চাদের মতো লাগছে বাবা হতে চলেছে অথচ উনাকেই এখন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। ইসস আমি যে আবারো প্রেমে পড়ে গেলাম উনার!
আচ্ছা আমাদের বেবিটা কার মতো হবে আদ্রর মতো নাকি আমার মতো?? উমম আমি চাই আমাদের বেবি আদ্রর মতো হোক।

আদ্র নরে উঠতে আমি চোখটা নামিয়ে নিলাম। হঠাৎই কালকের কথা মনে পড়লো উনি তো আমাকে বকেছে,তাহলে এখন জড়িয়ে রেখেছে কেনো। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে বেড থেকে নামতে নিলে ওড়নায় টান পড়লো। পেছনে তাকাতেই আদ্র মুচকি হসে উঠে বসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

কি হচ্ছে কি ছাড়ো।

উহু ছাড়বো না আজকের মর্নিং কিসটা পাইনি আগে দেবে তারপর ছাড়বো।

পাবে না কোনো কিস। আমি রেগে আছি তোমার উপর এখনো। ছাড়ো বলছি না হলে হাতে চিমটি কাটবো।

কিস না পেলে নো ছাড়াছাড়ি। আর কি বললে রেগে আছো সারারাত তো আমার বুকে ঘুমালে তখন রাগটা কোথায় ছিলো? এই নাও চিমটি কাটো তোমার মতো একটা পিঁপড়ার চিমটিতে আমার কিছু হবে না।

ভালো হবে না কিন্তু ছাড়ো আমাকে। কাল তো মুখ ফিরিয়ে রাখলে বেবির কথা শুনে। আমার উপর রাগ দেখিয়েছো তাহলে এখন এতো ঢং কিসের হুম??

আদ্র আমার ঘাড়ে ছোট ছোট কিস করে বললো……..ঢং না গো বউ একে আদর বলে। আমার আরু সোনা আমাকে এমন একটা উপহার দিচ্ছে তাকে আদর না করে থাকা যায় বলো। এখন থেকে তো ডাবল আদর পাবে আমার বউ আর বেবি দুজনেই।

তাহলে কাল ওমন করলে কেনো জানো কতো খারাপ লেগেছিলো আমার।

আমি জানি সোনা তোমার খারাপ লেগেছে। তুমি আমার কথা না শুনে এই ডিসিশন নিয়েছো তাই খুব রাগ হয়েছিলো। আ’ম সো সরি বউ।

আমি তোমাকে মারতে চাই এ কথা কেনো বলেছিলে??

আদ্র একটু চুপ থেকে বললো…….আরে ওসব কিছু না রেগে কি থেকে কি বলেছি বাদ দাও। এখন আমার বেবিটাকে একটু আদর করতে দাও তো।

আদ্র আমার পেটে হাত বুলিয়ে গালে চুমু খাচ্ছে। আমি হেসে উঠে বললাম…….তুমি বেবিকে আদর করছো নাকি আমাকে??

দুজনকেই করছি। তোমাকে একা আদর করলে তো আমাদের বেবিটা রাগ করবে বলবে ওর বাবা ওকে একটুও আদর করে না।

আদ্র তুমিও না! হয়েছে ছাড়ো এখন তোমার অফিসে যেতে হবে তো।

বলেছি না মর্নিং কিস না দিলে ছাড়বো না।

উফ এতো জ্বালাও কেনো তুমি। আদ্রর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম……হয়েছে?

না হয়নি আজ থেকে ডাবল দিতে হবে তোমার টা তো দিবাই সাথে আমাদের বেবির টাও দিতে হবে। কপালে দিলে চলবে না এখানে দিতো হবে”””ঠোঁট দেখিয়ে”””

ইসস কি আবদার পারবো না আমি।

ঠিকআছে না পারলে আজকের মতো না হয় আমিই…..

তুমি কি??

আদ্র আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো…..সকালে এমন মিষ্টি খাওয়ার মজাটাই আলাদা।

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম…….অসভ্য,দুষ্টু লোক একটা। ছাড়ো আমাকে।

আদ্র আমাকে ছেড়ে দিয়ে জোরে হেসে উঠে বললো……আরু তোমার মুখে অসভ্য কথাটি শুনতে খুবই ভালো লাগে,আমি ভাবছি তোমাকে আরো বেশি জ্বালাবো আর তুমি বেশি বেশি অসভ্য বলবে আমাকে। ভালো হবে না বলো??

ভালো না ছাই হবে। বলেই আমি ওয়াশরুমে চলে এলাম উনার সামনে থাকলে না জানি আর কতো কি শুনতে হতো।
.
.
প্রেগন্যান্সির পাঁচ মাস চলছে। এ কয় মাসে আমার দুই মা আর অথই আমাকে সব সময় আগলে রেখেছে। আব্বু বাবা ও খুব খুশি তাদের ছোট একটা নাতি/নাতনি আসবে বলে। আর আদ্রর কথা কি বলবো,আমার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নামতে প্রবলেম হবে বলে নিচের রুমে থাকার ব্যবস্থা করেছে। কতো করে বললাম এখনি কেনো আমি তো ঠিকঠাক চলাফেরা করতে পারি। কিন্তু কে শোনে কার কথা উনার জেদের কাছে হার মেনে নিচের রুমেই থাকতে হচ্ছে।
রাতে ঘুমানোর আগে পেটের কাছে কান পেতে বাবুর সাথে কথা বলে। বাবু নাকি বলে বাবা আমাকে আদর করে দাও। উনার এমন কথা শুনে খুব হাসি পায় তখন। আদ্রর ভালোবাসা কেয়ার করা আগের থেকে আরো বেড়ে গিয়েছে।
মাঝে মাঝে বলি…বউ কি তোমার একার আছে আর বেবিও কি হয় না করো যে এতো কেয়ার করো তুমি? আদ্র বলে…বউ আমার বেবিটাও আমার সো আমি কেয়ার করবোই। অন্যদের বউ আছে বেবি, ওসব নিয়ে আমি ভাবি না।

দুপুর থেকে আদ্রকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি বারবার রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কিন্তু উনি একবারো ফোন ধরছে না। বাবার কাছেও ফোন দিয়ে শুনলাম আদ্র নাকি বাড়িতে আসবে বলে ১২ টার পরেই অফিস থেকে বেড়িয়েছে। এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে তাহলে উনি এখনো কেনো এলো না? খুব চিন্তা হচ্ছে আমার। যদি কোনো কাজে থাকে ফোনটা একবার ধরে বলতে পারে বিজি আছে সেটাও করছে না।
আমার মা পাশেই বসে আছে আদ্রর মা ঠিক করে বসছে ও না একবার উঠে বাইরে যাচ্ছে তো আবার ভেতরে আসছে। ছেলের জন্য যে উনার ও চিন্তা হচ্ছে।

আমি উঠে গিয়ে বললাম……….মা তুমি চিন্তা করো না তোমার ছেলে হয়তো কোনো কাজে আটকে পড়েছে চলে আসবে।

মা একটু হাসার চেষ্টা করে বললো………চিন্তা কি আমি একা করছি তুই করছিস না? এ সময় চিন্তামুক্ত থাকতে হবে না হলে বেবির ক্ষতি হবে। দুপুর থেকে তো কিছুই খাসনি এমন করলে কি করে সুস্থ থাকবি তুই? চল কিছু খেয়ে নিবি।

না মা আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

মা উঠে এসে বললো………আরিশা বেবির কথা তো ভাব একটু চল আমি খাইয়ে দেই তোকে।

আদ্রর মা বলে উঠলো……..হ্যা অনু যা ওকে খাইয়ে দে।

বললাম তো খাবো না আদ্র আসবে তারপর খাবো।

রুমে এসে আবারো ফোন দিলাম এখনো ধরছে না। আদ্র তো কখনো এমনটা করে না কোথায় আছে উনি? আদ্র ঠিক আছে তো? নাহ আমার আদ্রর কিছু হবে না উনি ঠিক আছেন। কান্না পাচ্ছে আমার উনার কি একটি বারও মনে হচ্ছে আমরা কতোটা টেনশনে আছি। পেটে হাত রেখে বললাম…..বাবু তোর বাবা এখনো বাড়ি আসে নি ফোন ও ধরছে না। তোর বাবা এলে আমি আর তুই খুব বকে দিবো কেমন।
.
.
আব্বু আমাকে একহাতে জড়িয়ে বসে আছে……আরিশা মা এতো টেনশন নিয়ো না আদ্র চলে আসবে।

কখন আসবে আব্বু রাত হয়ে গিয়েছে। উনি ফোন কেনো ধরছে না?

আদ্রর মায়ের মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো……আদ্রর বাবা তো খোজ করছে আদ্র চলে আসবে দেখিস। ও কি তোকে ছাড়া থাকতে পারবে বল।

আমার হঠাৎ করে সাদাফ ভাইয়ার কথা মনে পড়লো হ্যা সাদাফ ভাইয়াকে একবার ফোন দিয়ে দেখি উনি জানে নাকি আদ্র কোথায়। অথইকে বললাম রুম থেকে আমার ফোন এনে দিতে অথই ফোন এনে দিতেই সাদাফ ভাইয়াকে কল দিলাম। দুইবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো ওপাশ থেকে বললো……

আরে আরু কেমন আছো? হঠাৎ আমার কথা মনে পড়লো যে?

আসলে ভাইয়া আদ্র……

ওয়েট ওয়েট আরু তুমি কি কান্না করছো? কন্ঠস্বর কেমন যেনো। আদ্র কিছু বলেছে?

ভাইয়া আমি আদ্রর কথা জানতেই আপনাকে কল দিলাম। আদ্র আজ দুপুর থেকে কারো ফোন ধরছে না। ফোন রিসিভ করলে এতোটা চিন্তা হতো না। অফিস থেকে নাকি দুপুরের আগেই বেড়িয়েছে বাড়ি আসবে বলে। কিন্তু এখনো ফেরে নি। আমি ভাবলাম হয়তো আপনি জানতে পারেন উনি কোথায় তাই কল দিলাম।

কি বলছো আদ্র ফোন ধরছে না! ওর সাথে তো গতকাল কথা হয়েছিলো আমার আর তো কথা হয়নি। তুমি টেনশন করো না আমি দেখছি খোজ করে।

আচ্ছা রাখছি ভাইয়া।

চোখ ফেটে কান্না আসছে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। চোখ বন্ধ করে মায়ের কাধে মাথা রেখে বসে আছি। আদ্রর মা কিছু খাবার এনে আমার পাশে বসে বললো…….

আরিশা এভাবে না খেয়ে থাকলে তো বেবির ক্ষতি হবে একটু কিছু মুখে দে।

মা সত্যি আমার খেতে ইচ্ছে করছে না নিয়ে যাও এগুলো।

তোকে খেতে হবে এই সুপটুকু খেয়ে নে।

মা আমাকে জোর করে খেতে বাধ্য করলো। আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি উনি এতো ভালো কেনো! ছেলেকে নিয়ে টেনশন হচ্ছে তারপরেও নিজেকে শক্ত রেখে আমার খেয়াল রাখছে। সব মায়েরা তার সন্তান এর ভালে চায়। বিয়ের আগেও আমাকে নিজের মেয়ের থেকে আলাদা করে দেখেনি এখন যে উনার ছেলের বউ আমি সেটাও কখনো বুঝতে দেয় না। আমার মা আমাকে যতোটা কেয়ার করে আদ্রর মা ঠিক ততোটাই কেয়ার করে। আমি সত্যি খুব লাকি এমন একজন শাশুড়ি মাকে পেয়ে।
.
.
সকলে গম্ভীর ভাবে ড্রয়িংরুমে বসে আছি। রাত সাড়ে দশটা বাজে প্রায়। হঠাৎ আব্বুর ফোন বেজে উঠলো। আব্বু ফোন রিসিভ করে বললো……হ্যা ভাইজান বলো আদ্রর কোনো খোজ পেয়েছো।

………….

যাক আলহামদুলিল্লাহ। ঠিকআছে তোমারা সাবধানে এসো।

আব্বু ফোন রেখে হাসি মুখে বললো……..আদ্র ঠিকআছে ভাইজান ওর সাথেই আছে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।

আমার গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে আদ্র ঠিকআছে শুনে বুকের ভেতরটা শীতল হয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে বুক থেকে ভারী কিছু নেমেছে।
আমার ফোন বেজে উঠলো সাদাফ ভাইয়া কল দিয়েছে রিসিভ করলাম…….

হ্যালো…

আরু আদ্রর সাথে আমার মাত্র কথা হলো ও নাকি বিজি ছিলো তাই কারো ফোন ধরতে পারেনি। তুমি টেনশন করো না ও বাড়িতে যাচ্ছে।

হ্যা,ভাইয়া বাবা আছেন উনার সাথে বাবাও একটু আগে জানিয়েছে।

ওহ তাহলে তো জানোই। আরু এ সময় এতো টেনশন কান্নাকাটি করো না কেমন। আদ্রকে একবার সামনে পাই ওকে খুব করে বকে দেবো আমার মিষ্টি বোনটাকে এতো টেনশন দেওয়ার জন্য। নিজের খেয়াল রেখো,রাখছি।

সাদাফ ভাইয়া ফোন কেটে দিতে আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছি…..সাদাফ ভাইয়া,সত্যি খুব ভালো একটা ছেলে আমাকে ছোট বোনের মতো স্নেহ করে।

কলিংবেল বাজতে আরিশার আব্বু গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আদ্রর বাবা আর আদ্র এসেছে। আদ্রর মা দৌড়ে গিয়ে আদ্রকে জড়িয়ে কাঁদছে।

আদ্রর মুখটা কেমন শুকনো দেখাচ্ছে, গায়ে থাকা সাদা শার্টে জায়গায়,জায়গায় ময়লা লেগে আছে।আরিশা একদৃষ্টিতে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে বলছে…. কোথায় গিয়েছিলো উনি এই অবস্থা কেনো উনার?

আদ্র ওর মাকে বললো…….মা কাঁদছো কেনো দেখো আমি ঠিকআছি। একটা প্রবলেম হয়েছিলো তাই তোমাদের ফোন ধরতে পারি নি বিজি ছিলাম।

কি প্রবলেম হয়েছিলো??

আদ্রর বাবা এগিয়ে এসে আদ্রর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো……আমি পরে বলবো ওকে রুমে যেতে দাও।তোমরা গিয়ে খাবার রেডি করো সারাদিন তো কেউ খায়নি। আদ্র ফ্রেস হয়ে এসে আগে খেয়ে নে।

আদ্র এদিক ওদিকে তাকিয়ে আরিশাকে দেখছে না অথই বুঝতে পেরে আদ্রর পাশে এসে বললো…….ভাইয়া ভাবি রুমে গিয়েছে।

আরিশার আদ্রকে দেখার পরে আরো কাঁন্না পাচ্ছে তাই ওখানে না থেকে রুমে এসে জানালার ধারে দাড়িয়ে নীরবে কাদছে।
আদ্র রুমে এসে দেখলো আরিশা অন্য দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছে। আদ্র বেশ বুঝতে পারছে তার আরু কাঁদছে।
আদ্র আরুর কাধে হাত দিয়ে নরম স্বরে বললো…….আরু সোনা কাঁদছো কেনো আমি চলে এসেছি তো।

আরিশা কিছু না বলে ঘুরে আদ্রকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আদ্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…….কেঁদো না সোনা বেবির প্রবলেম হবে তো। শান্ত হও। বাবা বললো দুপুর থেকে নাকি কিছুই খাও নি তুমি বোঝোনা না খেয়ে থাকলে তোমার বেবির দুজনেই প্রবলেম হবে।

তোমার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো খাবার গলা দিয়ে নামতো নাকি। সন্ধার পর মা জোর করে একটু সুপ খাইয়ে দিয়েছিলো। কোথায় ছিলে তুমি ফোন ধরো নি কেনো? তোমার কি একবারো মনে হয় নি আমার কথা?

মনে হয়েছে সোনা কিন্তু আমি তখন কথা বলার পরিস্থিতিতে ছিলাম না। বিজি ছিলাম অনেক।

কি এমন কাজে বিজি ছিলে তুমি আর তোমার শার্টে এই ময়লার দাগ কেনো??

হসপিটালে ছিলাম একটা বৃদ্ধার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আমার গাড়িতে।

এক্সিডেন্ট! তোমার গাড়িতে! তুমি তো অসাবধান হয়ে কখনো ড্রাইভ করো না। বৃদ্ধার তেমন কোনো ক্ষতি হয়েছে কি??

হুম ক্ষতি তো হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে আর ওই হসপিটালে উনার ব্লাড গ্রুপের রক্ত ছিলো না আমার টাও ম্যাচ করে নি। চিন্তায় ছিলাম আমার কারনে বৃদ্ধাটির কিছু হয়ে না যায়। অনেক খুজে রক্ত যোগার করে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম।এখন উনি সুস্থ আছেন। আমার কারনে উনার আজ এমন হয়েছে তাই ওখানেই ছিলাম সেন্স আসার পর হসপিটাল থেকে বেড়িয়েছি।

কিন্তু এক্সিডেন্টটা হলো কি করে? আদ্র আমি প্রায়ই খেয়াল করি তুমি মাঝে মধ্যেই অন্যমনস্ক হয়ে কি যেনো ভাবো। কি ভাবো বলোতো,গাড়ি চালানোর সময়ও নিশ্চই তুমি কিছু ভাবছিলে তাইনা?

আরে কি ভাববো তেমন কিছু নয়,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।

আদ্র দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো,আরু সেদিকে তাকিয়ে বললো……আদ্রর মনে কিছু একটা আছে যা আমাকে বলতে চাচ্ছে না,যখন অন্যমনস্ক হয়ে থাকে তখন উনাকে বিষন্ন লাগে দেখতে। কিন্তু কি সেটা কি নিয়ে ভাবে??
·
·#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ৩০)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
আরিশা ব্যালকনিতে গিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। আদ্র ফ্রেস হয়ে এসে আরিশার পাশে গিয়ে দাড়ালো। আরিশা সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো…….

মা ডেকে গিয়েছে ডিনারের জন্য,চলো।

আরিশা ঘুরে যেতে নিলে আদ্র ওর হাত ধরে থামিয়ে বললো…….কি হয়েছে আমার আরু সোনার? গম্ভীর হয়ে আছো কেনো? আজ খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা সরি সোনা আর এমন হবে না।

আরিশা একটু হেসে বললো……তুমি অযথাই ভাবছো গম্ভীর হয়ে থাকবো কেনো। হ্যা তুমি ফোন ধরছিলে না বলে খুবই টেনশন হয়েছিলো কিন্তু তুমি তো ঠিক আছো তাই কোনো কষ্ট নেই আমার।

আমার মিষ্টি বউটা। চলো আমি তুমি আর আমাদের প্রিন্সটা এখন ডিনার করে আসি।

এই কি বললে তুমি?

খারাপ কি বলেছি!

শোনো আমি চাই আমাদের কিউট একটা প্রিন্সেস আসুক। তুমি জানো কতো কি ভেবে রেখেছি আমার প্রিন্সেসকে নিয়ে।

ও এই কথা। ঠিকআছে আমাদের প্রিন্সেস আসবে। ঠিক তোমার মতো হবে দেখতে।

নাহ ও তোমার মতো হবে। মেয়ে তার বাবার মতো হওয়া ভালো। আর ছেলে মায়ের মতো। আমি জানি আমাদের মেয়ে আসবে আর তোমার মতো হবে।

আরু তুমি না অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছো। আমার সেই অবুঝ আরুটা নেই অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছো। কেনো বড় হলে হুম আমার মাথামোটা আরুটাই তো ভালো ছিলো।

তুমি আমাকে মাথামোটা বললে কেনো??

আমি তো আগের কথা বলেছি সোনা। থাক আর আগের মতো হতে হবে না মানুষ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তুমিও হয়েছো। এই যেমন তোমাকে দেখতে এখন আরো বেশি ভালো লাগে। গাল কেমন ফুলে গিয়ে লাল আভা পড়েছে গালে, কিউট লাগে দেখতে। চেহারায় উজ্জ্বলতা আগের থেকে বেড়েছে আর…..

থাক হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না এখন খেতে না গেলে মা খুব বকা দেবে চলো।

হ্যা চলো আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।

খাওয়ার কথা মনে করাতে ক্ষিদে পেলো তাইনা??

তুমি সামনে থাকলে তো আমি সব ভুলে যাই খাওয়ার কথা কিভাবে মনে থাকবে বলো! আমার সব কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার মিষ্টি বউটা আছে তো তাইনা।
.
.
আরিশাকে আদ্র এই অবস্থাতে ভার্সিটিতে যেতে মানা করেছে। ভার্সিটির কয়েকটা ফ্রেন্ড আর স্যারের থেকে নোট কালেক্ট করে যতোটা পাড়ছে বাড়িতে থেকেই পড়ছে।
আদ্র দুপুরে খারাব পর রুমে এসে সাদাফের সাথে ফোনে কথা বলছে।

আদ্র আরু কেমন আছে? কোনো প্রবলেম হচ্ছে নাতো??

আরু সুস্থ আছে। সাদাফ আমার খুব টেনশন হচ্ছে,দিন যতো এগিয়ে আসছে আমার ভয়টা ততোই বেড়ে চলেছে। আমার আরুর কিছু হবে নাতো?

আদ্র আল্লাহ ভরসা কিছুই হবেনা আরু আর তোদের বেবি দূজনেই সুস্থ থাকবে। আচ্ছা আরু সে সপ্ন আর দেখেছে নাকি??

হয়তো না আমাকে তো বলতো তাহলে। তাছাড়া যে দুবার এমন হয়েছে আরু নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনি।

আরু তোকে অনেক ভালোবাসে তোকে নিয়ে ভাবে তাই ওসব বাজে সপ্ন দেখতো। তুই মাথা থেকে ওসব ঝেড়ে ফেল তো শুধু শুধুই ভাবছিস।

তারপরেও কেনো জানি ভয় হয় আরুকে নিয়ে।

আমাকে নিয়ে কিসের ভয় তোমার??

আরু হাসি মুখে কথাটি বলে আদ্রর পাশে এসে বসলো। আদ্র কিছুটা চমকে উঠলো,সাদাফকে বললো…….দোস্ত এখন রাখছি পরে কথা হবে।
আদ্র ফোন রেখে আরুর দিকে তাকালো।

আরু আবারো বললো…..আমাকে নিয়ে কিসের ভয় তোমার বললে না তো??

তোমাকে নিয়ে কিসের ভয় থাকবে আমার। কিছু না।

আরিশা আদ্রর হাত মুঠোয় নিয়ে বলল…….অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে তাকাও। আদ্র আমারো মনে হয় তুমি এমন কিছু নিয়ে চিন্তা করো যার কারন আমি। আমাকে বলোনা আদ্র কি সেই কারন??

আদ্র আরিশাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো…….আরু তুমি হয়তো ভুলে গেছো তাই বলতে চাই নি,কিন্তু না বলেও তো পারছি না। আরু আমার একটাই চিন্তা তা হলো তোমার দেখা সেই সপ্ন।

আরিশা আদ্রর টি শার্ট খামচে ধরে বললো…….সপ্ন! ওটা নিয়ে কেনো ভাবছো। আমার তো মনে হয় তোমাকে নিয়ে ভাবি তাই ওইরকম খারাপ সপ্ন দেখেছিলাম। তুমি ওটা নিয়ে আর ভেবো না তো।

কিন্তু আরু আমার যে খুব ভয় হয়,যদি সে সপ্নটা আমাদের বাস্তব জীবনে ঘটে। আরু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার সপ্নে একটা বাচ্চার কান্না শুনতে পেতে। এখন আমদের ও বেবি আসতে চলেছে আমি ভাবছি তোমার ডেলিভারির সময় যদি তোমার বা বেবির কিছু…….

আমি বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছো। ভয় পেয়ো না আমাদের কিছু হবে না তোমার ভালোবাসা আমার আর আমাদের বেবির একমাত্র ভরসা। এতো ভালোবাসা রেখে আমরা হারিয়ে যাবো এতো সোজা নাকি হুম। একটা কথা বলোতো তুমি এই কারনে আমাকে বেবি নিতে মানা করেছিলে??

হ্যা এ কারনে আমি মানা করেছিলাম। আমার বেচে থাকার অক্সিজেন তুমি,আমার জীবনের প্রতিটি ধাপে মিশে গিয়েছো তুমি। আমি কখনো কল্পনাও করিনা তোমার ছাড়া বাঁচার কথা।

এতো ভালোবাসো কেনো আমাকে তুমি??

আমার আরু সোনাকে আমি ছাড়া আর কে ভালোবাসবে শুনি,আমার মিষ্টি বউ যে তুমি।

এই এটা কিন্তু ঠিক নয়। শুধু নিজের বউয়ের কথা ভাবলে চলবে হুম? আমাদের প্রিন্সেস তো রাগ করবে।

আদ্র আরুর গালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো…….আমার বউয়ের মধ্যেই তো আমার প্রিন্সেস বড় হয়ে উঠছে বউকে নিয়ে যতোটা ভাবছি ততোটাই আমার প্রিন্সেসকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে। বুঝেছো সোনা।

আদ্র এবং বাড়ির সকলের ভালোবাসা নিয়ে বেশ কেটে যাচ্ছে আরুর দিনগুলো। আরুর ৮ মাস চলছে এখন মাঝে মাঝেই অসুস্থ বোধ করে। সবার যত্নে বিশেষ করে আদ্রর কেয়ারিং এ আরু নিজের অসুস্থতাও ভুলে যায়। কতোটা ভাগ্যবতী হলে এমন পরিবার আর বর পাওয়া যায় আরু এটা ভেবেই শুকরিয়া জানায় আল্লাহর দরবারে।
.
.
কয়েকদিন ধরে আরিশার পেটে ব্যাথা করছে। তবে তা সহ্য করার মতো তাই কাউকে কিছু বলেনি। আজ বিকেল থেকে আরো বেড়েছে সন্ধা যতো ঘনিয়ে আসছে আরিশার ব্যাথাটা ক্রমশ বাড়ছে। আরিশা বেডশীট খামচে ধরে ঠোঁট চেপে ব্যাথাটা সয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আরিশার মা রুমে এসে মেয়েকে এভাবে দেখে আৎকে উঠলেন দ্রুত আরিশার কাছে গিয়ে বললো…….

আরিশা এমন করছিস কেনো মা? শরীর খারাপ লাগছে ব্যাথা করছে পেটে??

আরিশা চোখ বন্ধ অবস্থায় ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে বললো……..মা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি এ ব্যাথাটা সহ্য করতে পারছি না।

একটু ধৈর্য ধর মা আমি আপাকে ডাকছি।

আরিশার মা আদ্রর মাকে ডেকে আনলো আর অথইকে বললো আদ্রকে ফোন দিতে।

অথই আদ্রর ফোনে কল দিয়ে জানতে পারলো আদ্র ফোন তার পিএর কাছে রেখে জরুরী মিটিং এ আছে একঘণ্টার আগে বেড় হতে পারবে না।

আরিশা আরো ছটফট করছে আদ্রর মা আদ্রর বাবাকে আর আরিশার বাবাকে ফোন দিয়ে জানালো। আরিশার বাবা ১০ মিনিটের মধ্যে বাড়িতে এসে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
আরিশা এতো কষ্ট সহ্য করেও বারবার আদ্রকে খুজছে। ও চাইছে আদ্রকে একটু জড়িয়ে ধরতে। আদ্রর হাতটা শক্ত করে ধরতে মন চাইছে। আরিশা কাপা কাপা গলায় আদ্রর মাকে জিজ্ঞেস করলো…….

মা আদ্র কোথায়, উনি আসছে না কেনো??

আদ্র অফিসে একটা মিটিং এ আছে ফোন ওর কাছে নেই,তোর বাবা আদ্রকে নিয়ে হসপিটালে পৌছে যাবে। একটু সহ্য কর আমরা তোকে এখনি হসপিটালে নিয়ে যাবো।

আরিশা কথা বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না। তাই আর কথা বাড়ালো না। ব্লিডিং হচ্ছে, আরিশাকে হসপিটালে নিয়ে আসা হলে ওর অবস্থা দেখে ডাক্তার জানালো ওকে যতো দ্রুত সম্ভব ওটিতে নিতে হবে আর সিজার করতে হবে।
আদ্র এখনো এসে পৌছোয় নি,আরিশা আদ্রকে না দেখা অবদি কোথাও যাবে না বলে জেদ ধরে আছে। তাই আদ্র না আসা পর্যন্ত আরিশাকে কেবিনে রেখে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে যেনো ব্যাথা একটু কমে।

অবশেষে আদ্র এসেছে। পাগলের মতো দৌড়ে এসে কেবিনে ঢুকলো। আদ্রকে দেখে আরিশার মা আদ্রর মা কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। আরিশার পাশে আদ্র গিয়ে বসলো ওর হাত শক্ত করে ধরে বললো……

আরু খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাইনা। সব ঠিক হয়ে যাবে সোনা। আমার আরুর এতো কষ্ট হবে জানলে আমি বাচ্চাটা রাখতে দিতাম না।

ছি আদ্র কি বাজে কথা বলছো! তুমি বাবা হয়ে এমন কথা বলো না প্লিজ। আমার কষ্ট হচ্ছে তাতে কি আমার বাচ্চার মুখ দেখার পর এসব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আদ্র আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে??

আদ্রর চোখটা লাল হয়ে আছে পানি জমে আছে চোখের কোনে আরিশাকে সোয়া থেকে তুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরিশার মুখে ঠোঁটে চোখে কপালে অজস্র চুমুতে ভড়িয়ে দিলে।

ডাক্তার এসে তাড়া দিতে লাগলো আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো……. মি: আদ্র আপনার ওয়াইফকে ইমিডিয়েটলি অপারেশন থিয়েটারে নিতে হবে এভাবে দেরি করতে থাকলে মা এবং বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। এমনিতেই পেসেন্ট অনেক দুর্বল ব্লিডিং ও হচ্ছে জানি না বাচ্চাটার কি অবস্থা। আপনাদের উচিত ছিলো আপনার ওয়াইফকে আরো আগে সিজার করানো। এনি ওয়ে সব রেডি ওনাকে নিয়ে যেতে হবে। আমি নার্স পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
.
সবার মুখে টেনশনের ছাপ। আদ্রর মুখের দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না ওর মনে আরুকে হারানোর ভয়টা আরো জেকে বসেছে। বারবার আরুর শেষের কথা গুলো মনে করে ওর চোখ ভরে আসছে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না।

আরিশাকে ওটিতে নিয়ে যাবার আগে আরিশা আদ্রর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিলো মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আদ্রর দিকে। আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো তোমরা আমার বেবির জন্য দোয়া করো। যদি আমার কিছু হয়ে যায় আমার আদ্র আর আমার ছোট্ট প্রিন্সেস টাকে সামলে রেখো তোমরা।

উপস্থিত সবার চোখে পানি জমে গিয়েছিলো আরিশার কথা শুনে আদ্র চোখের পানি ফেলে আরিশার গালে হাত রেখে ভয়ার্থ কন্ঠে বলে উঠলো……..আরু এসব কি বলছো তুমি হ্যা। তোমার কিছু হবে না। আমার আরু সোনা তো খুব স্ট্রং তাইনা? বাজে চিন্তা একদম করবে না আমি তোমাকে আর আমাদের ছোট্ট পরীটাকে চাই খুব করে চাই। নিজেকে শক্ত রাখো আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন ইনশাআল্লাহ। আমার ভালোবাসার জোর অনেক বেশি আমি জানি আল্লাহ আমাকে মিরাস করবেন না।

আরিশা ঠোঁট চেপে ব্যাথা সহ্য করে মুচকি হাসলো আদ্রর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো…….আমার চোখের পানি দেখে যেমন তোমার কষ্ট হয় তেমনটা আমারো হয়। কেদো না প্লিজ। কার ভাগ্যে কি লেখা আছে আমরা কেউ জানি না। অনেক শুনেছি বেবি জন্মের সময় মা মারা যায়,আল্লাহ না করুক আমার যেনো এমন কিছু না হয়। আমি তোমার ভালোবাসা নিয়ে আরো বাচতে চাই আদ্র আমাদের প্রিন্সেসকে নিজের হাতে বড় করতে চাই।

এভাবে বলে না জান তোমার কিছুই হবে না দেখো।

কেনো জানিনা সেই সপ্নের কথা মনে পড়ছে তুমি আমাকে অন্ধকারে রেখে চলে যাচ্ছিলে আর সেই অন্ধকার ঘরে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো। দেখো প্রায় মিলে যাচ্ছে ওটিতে তো তোমাকে ছাড়া একাই থাকবো সেখানে আলো থাকলেও আমার জন্য অন্ধকার মনে হবে কারন তুমি যে থাকবে না পাশে। আর আমাদের বেবিটাও তো আমার সাথেই থাকবে। সবটা কেমন মিলে যাচ্ছে তাইনা! আদ্র আমার যদি সত্যি কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু তুমি একদম ভেঙে পড়বে না আমাদের মেয়েকে দেখে রাখবে অনেক আদর করবে ওকে কেমন।

আরু প্লিজজ স্টপ,আমি আর নিতে পারছি না। এ ধরনের কথা কেনো বলছো তুমি? আমি থাকবো তোমার পাশে ডাক্তারের সাথে কথা বলবো যেনো ওটিতে আমাকে ঢুকতে দেয়। সব ঠিক হয়ে যাবে।

আদ্র আমাকে একটু আদর করবে??

আদ্র আরুর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর সাড়া মুখে আদর মেখে দিয়েছিলো। আরুকে ভেতরে নেওয়ার সময় দুজনেই হাত শক্ত করে ধরে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আরুর চাহনিটা ছিলো স্থির ও মনে মনে ভেবে নিয়েছে ওর যদি কিছু হয়েও যায় আদ্র খুব ভেঙে পড়বে ঠিকি কিন্তু ওদের মেয়েটা যদি সুস্থ থাকে তাহলে আদ্র ওকে আকড়ে বাঁচতে পারবে।
.
.
আদ্র ডাক্তারকে অনেক অনুরোধ করেও ভেতরে যেতে পারে নি। আদ্র ওটির সামনে থেকে এক পা ও নরছে না মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকছে যেনো মা এবং বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকে।
আরিশার মা ও খুব কাদছে মেয়ের বলা কথা গুলো বারবার বাজছে তার কানে। ওদের পরিবারের সবার মুখেই চিন্তার ছাপ কেননা আরুর বলা কথাগুলো সবার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সাদাফ আদ্রকে বুঝাচ্ছে।

প্রায় ১ ঘন্টা পরে ওটির ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো। সকলেই তাকিয়ে আছে ওটির দরজার দিকে আদ্র সাদাফকে হাত চেপে ধরে বললো……

সাদাফ এ আওয়াজ ভেতর থেকে আসছে? আমাদের ছোট্ট পরী কাদছে তাইনা? আরু! আমার আরু ঠিক আছে তো??

সাদাফ আদ্রকে শান্তনা দিয়ে বললো……হ্যা তোর আর আরুর ছোট্ট পরীটা কাদছে আর আরু ঠিক আছে। শান্ত হ।

কয়েকমিনিট পর ওটির দরজা খুলতেই সবাই এগিয়ে গেলো একজন নার্স ছোট্ট ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে এনে আদ্রর সামনে দাড়িয়ে বললো……মি:আদ্র এই নিন আপনার ওয়াইফ কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

আদ্র বাচ্চাটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওদের ছোট্ট পরীটার চোখ নাক ঠোঁট অনেকটাই আদ্রর মতো হয়েছে। বাকী সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। আদ্র বাচ্চার দিকে তাকিয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করলো…….আমার ওয়াইফ ও কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো??

নার্স কিছু বললো না পেছন থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে এসে বললো…….আপনাদের পেসেন্টকে আরো তিন চার দিন আগে সিজার করানোর প্রয়োজন ছিলো। মেবি উনার কয়েকদিন যাবৎ পেইন হচ্ছিলো কাউকে বলেনি। আমরা তো ভেবেছিলাম বাচ্চাটার প্রবলেম হবে, কিন্তু তা হয়নি আল্লাহর রহমতে বাচ্চাটা পুরোপুরি সুস্থ আছে। কিন্তু….

আরিশার বাবা এগিয়ে এসে বললো…..কিন্তু কি ডাক্তার,আমার মেয়ে ঠিক আছে তো??

দেখুন উনার অনেক ব্লিডিং হয়েছিলো আমরা পর্যাপ্ত পরিমান ব্লাড দিয়েছি,তাছাড়া পেসেন্টের শরীর খুব দুর্বল ছিলো। সিজারের আগে প্রচুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো। ইনজেকশন দিয়ে শ্বাস নেওয়াটা স্বাভাবিক করে তারপর কাজ শুরু করেছি। পেসেন্ট ঠিকি ছিলো তবে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পরে উনার আবারো শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আমরা দ্রুত অক্সিজেন দেই তার কিছুক্ষণ পর উনি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। সেন্স না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশা করছি সুস্থ হয়ে উঠবে কারন পেসেন্টের ব্লাড প্রেসারটা স্বাভাবিক আছে।

সবটা শুনে আদ্র খানিকটা পিছিয়ে গেলো,ওর বুকের ভেতরটা ডুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে বারবার মনে হচ্ছে ওর আরু আর ফিরবে না।
আদ্রর মা বাচ্চাকে নিয়ে আদ্রর কাছে গিয়ে বললো……আদ্র কিছু হবে না বাবা দেখিস আমাদের আরিশা সুস্থ হয়ে উঠবে,সেন্স ফিরে আসবে ওর খুব তাড়াতাড়ি। তোর মেয়েকে কোলে নিবি না??

আদ্র বাচ্চার মুখে হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো…… মা আমার আরুর সেন্স না আসা পর্যন্ত আমি ওকে কোলে নেবো না।
·
·
·
চলবে………………………
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here