তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ২৭+২৮

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২৭)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
আদ্র আরিশা আর অথইকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে এসেছে। ফুচকা পেয়ে আরু যেনো সব ভুলে গিয়েছি বাচ্চাদের মতো একের পর এক ফুচকা খেয়ে চলেছে। আদ্র তার মায়াপরীকে এতো খুশি দেখে নিজেও প্রশান্তির হাসি দিলো।
সন্ধার পর আরু আর অথইকে নিয়ে আদ্র বাড়িতে ফিরলো। আরুকে হাসিখুশি দেখে আরুর মা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

রুমে এসেই আদ্র বেডে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আরু বিরক্তি নিয়ে বললো……..

কি হলো এটা??

কি হয়েছে!!

তুমি বাইরে থেকে এসে ফ্রেস না হয়ে শুয়ে পরলে কেনো??

টায়ার্ড লাগছিলো খুব,তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি পরে যাচ্ছি।

উহু কোনো কথা শুনছি না উঠো জলদি ফ্রেস হও। আমি না হয় পরে ফ্রেস হবো।

আদ্র উঠে বসে বললো……..ঘরে বউ এনেছি নাকি সব সময় আমাকে তাড়া দেওয়ার মেশিন এনেছি সেটাই বুঝি না।

আরু কোমড়ে হাত দিয়ে বললো……..কি বললে তুমি,আমি তাড়া দেওয়ার মেশিন?? তোমাকে তো আমি….

কি আমাকে? ওও বুঝেছি কিস করতে ইচ্ছে করছে??

না তোমার গলাটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে।

আরুর রাগ দেখে আদ্র মুচকি হেসে বললো…….বউ আমার রেগে গেলে দেখছি আরো কিউট লাগে। ইস নাকটা কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। আমার রাগিনী বউ।

আদ্র আরুর নাক টেনে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ও জানে এখন আর একটা কথা বললে আরু রুম থেকেই বেড়িয়ে যাবে।
আদ্র ওয়াশরুমে ঢুকতে আরু ফিক করে হেসে উঠে বলতে লাগলো………এটাই কি সেই আদ্র যে কারনে অকারনে আমাকে বকা দিতো একটু বেশি কিছু বললে রেগে যেতো! আজ উনি এতো চেঞ্জ!! কি করে এতোটা পাল্টে গেলেন উনি? তবে যাই হোক সব শেষে উনি আমাকে এত্তো ভালোবাসে এতেই আমি হ্যাপি।
.
.
আদ্র অনেক রাত পর্যন্ত ল্যাপটপে অফিসের কাজ করেছে। আরু ঘুমিয়ে পড়েছে আদ্র কাজ শেষ করে লাইট অফ করে আরুর পাশে শুয়ে পড়লো আরুর দিকে ঘুরে আরুর মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলো। জানালা দিয়ে বাইরের আবছা আলো পড়েছে আরু মুখে। আদ্র আরুর ঘুমন্ত মুখে স্লাইড করতে করতে বললো……..

তুমি এতো মায়াবী কেনো জান তোমার মুখের দিকে তাকালে অনেক শান্তি অনুভব করি। তোমাকে ছাড়া আমি একমুহুর্ত ও ভাবতে পারিনা। কেনো ভাববো বলো, অনেক ভালোবাসি যে তোমাকে। তোমাকে আমি আর কাঁদতে দেবো না আরু সোনা তুমি কাঁদলে যে আমার বুকে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। জানো আরু তোমার হাসিটা খুব মিষ্টি দিন শেষে বাড়ি ফিরে তোমার মুখের একটুখানি হাসি দেখলেই আমার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আরু তুমি হয়তো জানো না আমার হৃদয়ে কতোটা জায়গা জুরে তুমি আছো। তুমি আমার জান আমার অক্সিজেন তুমি। আমাকে একা করে কখনো হারিয়ে যেয়ো না জান সামলাতে পারবো না নিজেকে।
আদ্র আরুকে নিজের বুকে এনে মাথায় কপালে চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

আদ্র প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো হঠাৎ বুকে ভেজা ভেজা অনুভব করে ধপ করে চোখ খুললো। কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো আরু ঘুমের মাঝেই আস্তে আস্তে কিছু বলছে।

আদ্র আমার খুব ভয় করছে আমি একা থাকতে পারবো না। আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমার হাতটা ধরো না আদ্র। এখানে খুব অন্ধকার ভীষণ ভয় করছে আমার। আদ্র শুনতে পাচ্ছো বাচ্চাটা এখনো কাঁদছে ওকে কোলে তুলে নিয়ে একটু আদর করো ওকে। আর আমাকে নিয়ে চলো না এখান থেকে।

আরু আবারো কেঁদে উঠলো। আদ্র সবটা শুনে ওর বুকটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আরু কি বলছে এসব!! আদ্র ফোনের টর্চ অন করে আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে লো ভয়েজে বলতে লাগলো……….

আরু চোখ খোলো দেখো তুমি তোমার আদ্রর বুকে শুয়ে আছো। আমার আরু সোনাকে একা রেখে আমি কোথাও যাবো না। এই আরু শুনছো আমার কথা চোখ মেলে তাকাও সোনা।

আরু কেঁপে উঠে আদ্রকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ওর চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে।

আদ্র আরুকে ঝাকিয়ে বললো……..ভয় পেয়ো না আমি আছি তো। তুমি হয়তো সপ্ন দেখেছো। সপ্ন দেখে কেউ এভাবে কাঁদে হুম? আমি তো তোমার কাছেই আছি।

আরু মুখ তুলে টিপটিপ করে চোখ খুলে আদ্রর চিন্তিত মুখটি দেখতে পেলো। আরু হুট করেই আদ্রর কপালে গালে ঠোঁটে চোখে চুমু দিতে লাগলো। আদ্র অবাক হলো না আরু যে ভয় পেয়ে এমন পাগলামো করছে বেশ বুঝতে পারছে।
আদ্র আরুকে শান্ত করতে আরুর ঠোঁটে চুমু খেলো আরুর চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে বললো……..

আমার বউটা আমাকে এত্তো ভালোবাসে! এই পাগলি এইতো আমি আছি তোমার পাশে। কেঁদো না সোনা।
তুমি ঘুমের ঘোরে কি কি বলেছো আমি শুনেছি। নিশ্চই সারাদিন আমাকে নিয়ে চিন্তা করো তাই এসব ভুলভাল সপ্ন দেখো।

আরু কাপা কাপা গলায় বললো……..এই সপ্ন আমি কেনো দেখি আদ্র? আগেও দেখেছি। আমি কি সত্যি হারিয়ে ফেলবো তোমাকে??

ধুর পাগলি কি বলছো এসব আমি তোমার সাথেই থাকবো কোথাও যাবো না। সপ্ন কখনো সত্যি হয় না এ নিয়ে মনে ভয় পুষে রেখো না। আমাকে নিয়ে এতো ভাববে না বুঝেছো তাহলে আর এমনটা হবে না। এখন লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পড়ো তো।

আরু আর কিছু বললো না চুপটি করে আদ্রর বুকে মাথা রেখে দুহাতে আকড়ে ধরলো। আদ্র আরুকে একহাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে ওর আরুর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।

আদ্র আরুকে শান্তনা দিলো কিন্তু নিজে শান্ত হতে পারছে না। আরু আগেও এমন সপ্ন দেখেছে আবারো দেখলো। এ সপ্নকি আসলেই কোনো ইঙ্গিত দিতে চাইছে বড় কোনো ঝড় আসতে চলেছে কি আদ্র আরুর জীবনে!নাকি শুধুই সপ্ন এটা!
.
.
কফিহাউসে বসে আছে আদ্র আর সাদাফ। অনেকদিন ওদের দেখা হয়না তাই সাদাফ আদ্রকে বলেছে দেখা করতে। সাদাফ কফি খাচ্ছে আর এটা ওটা বলছে,আদ্র চুপচাপ বসে আছে সাদাফের কথায় শুধু হু হ্যা বলছে।
আদ্রকে সাদাফ আগে কখনো এমন চুপচাপ দেখি।

আদ্র কি হয়েছে বল তো কিছু বলছিস না কেনো? আরুর সাথে ঝগড়া হয়েছে??

আরে না আরুর সাথে ঝগড়া হবে কেনো,আমার কিছু হয়নি এইতো কথা বলছি।

আমার তো মনে হচ্ছে তুই কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস অবশ্য যদি তোর কোনো প্রবলেম না থাকে।

না প্রবলেম নেই আসলে চিন্তাটা আরুকে নিয়ে।

আমাকে বল কি হয়েছে?

আদ্র সাদাফকে আরু সপ্নের বিষয়ে সবটা বললো। সাদাফ সব শুনে একটু ভেবে বললো………আরু একই রকম সপ্ন দুবার দেখলো হয়তো তোকে নিয়ে বেশি ভাবে তারজন্য। তবে তারপরেও ভাবনার বিষয় আছে আমি যতদূর জানি সপ্ন কখনো সত্যি হয় না। কিন্তু সপ্নের মাঝে দিয়ে আমাদেরকে কিছু একটা ইঙ্গিত করা হয় যা আমাদের বাস্তব জীবনে ঘটে। তোরা সাবধানে থাকিস আর আরুকে একা রাখবি না কখনো। আর একটা কথা যেহেতু আরুর সপ্নে একটা বাচ্চা আসে এটাও একটা ভাবনার বিষয়। তোদের এখনি কোনো বেবি প্ল্যানিং না করাই ভালো। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ ইনশাআল্লাহ সব ঠিক থাকবে।

আদ্র সাদাফের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো…….আরুকে আমি আগলে রাখবো ওর কিছু হতে দেবো না আর বেবি নিয়েও ভাবছি না এখন। শোন এখন আমি উঠি রাত হয়ে গেছে দেরি করে ফিরলে বউ এর বকা শুনতে হবে।

হুম যা এখন তো বউ আছে বন্ধু লাগে নাকি। বউয়ের আঁচলের নিচে লুকিয়ে থাক গিয়ে।

হা হাহা প্রিথাকে বিয়ে করে ঘরে তোল তখন তুইও আমার মতোই করবি দেখে নিস।

আদ্রর সাদাফের সাথে সবটা শেয়ার করে নিজেকে হালকা লাগছে। দুজনে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাড়িতে চলে গেলো।
.
.
অথই সোফায় বসে টিভি দেখছে পাশেই আমি বসে ফোনে ছোট ছোট বেবিদের ছবি দেখছি। উফফ কত্তো কিউট বেবিগুলো। ইচ্ছে করছে ওদেরকে কোলে নিয়ে অনেক গুলো আদর করে দেই।
কলিংবেল বেজে উঠতে অথইকে বললাম দরজা খুলে দিতে আমি তো এই সুইট সুইট বেবিদের দেখতে ব্যস্ত।

একটা ছোট্ট কিউট গার্ল এর উপর চোখ আটকে গেলো। চোখ দুটো টানা টানা চোখের পাঁপড়ি গুলো খুব ঘন, গাল টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে। পিংক ঠোঁট নিচের ঠোঁটটা মুখে পুরে রেখেছে। কোকড়া চুলগুলো দুপাশে ঝুটি করা উফ পুরাই কিউটের ডিব্বা!! আমারো এমন একটা প্রিন্সেস আসবে ওকেও আমি এভাবে চুল বেধে দিবো ভেবেই আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে।

কি ব্যাপার আমার বউটা এতো খুশি কেনো হুম??

আদ্র এসে আমার পাশে ধপ করে গা ঘেষে বসে পড়লো। আমি ফোনটা পাশে রেখে বললাম……দিলে তো আমার ভালো মুডটা নষ্ট করে। এভাবে ভূতের মতো শব্দ করে পাশে বসলে কেনো হ্যা??

প্রথমত তোমার মুড খারাপ করার জন্য সরি। দ্বিতীয়ত আমি ভূত নই তোমার একমাত্র স্বামী। আর আমার বউয়ের পাশে আমি বসেছি তাতে তোমার কি?

আমার কি তাইনা দেখাচ্ছি।

আরু আদ্রকে মারতে লাগলো আদ্র ওকে থামাতে না পেরে দুহাত চেপে ধরে গালে টুপ করে একটা কিস করলো।
আরুর চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো। অথই মিটমিট করে হাসছে। আরু অথই এর দিকে তাকাতেই অথই বলে উঠলো……..

ভাবি আমি কিন্তু কিছু দেখিনি।

তাহলে হাসছিস কেনো??

আদ্র বলে উঠলো……..ওর ইচ্ছে করছে তাই হাসছে। তুমিও হাসো কেউ তোমাকে মানা করবে না।

আরু আর কিছু না বলে উঠে ওর মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো। আদ্র অথই দুজনেই হাসছে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।

রাতে আরুর কোলের উপর মাথা রেখে আদ্র শুয়ে আছে। আরু আদ্রর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো…….আদ্র একটা কথা বলবো? প্লিজ তুমি না করবে না।

আগে বলো কি কথা?

আদ্র আমার একটা বেবি চাই।

আদ্র চমকে উঠে বসলো বেবির কথা শুনে ওর বুকটা কেঁপে উঠলো। আরুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো……..আরু মাত্র তো কিছুদিন হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে তাছাড়া তুমি পড়াশুনা করছো এখনি বেবি নিতে হবে না। তুমি পারবে না সব সামলাতে আরো বড় হও তখন নাহয় ভেবে দেখবো।

আদ্র আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি আমি মটেও ছোট নই। আমি বেবি চাই তুমিও তো চাও তাহলে কেনো না করছো??

হ্যা চাই কিন্তু এখনি চাই এটা তো বলিনি। আচ্ছা এসব কে ঢুকিয়েছে তোমার মাথায় নিশ্চই মা বলেছে তাইনা।

মা কেনো বলবে,আমি নিজে থেকেই বলছি।

ভুলে যাও এসব পরে ভাবা যাবে অনেক রাত হয়েছে চলো ঘুমাবে।

আমিও আর কোনো কথা বাড়ালাম না কারন এখন উনাকে বুঝিয়ে কিছু হবে না। আমি মনে মনে আমার ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি। নিজে জেদ দেখাতে পারে আমি কেনো পারবো না হুহ।
·
·#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২৮)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
সময় তার নিজ গতিতে চলছে আমার আর আদ্রর দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছে। ভার্সিটি আসার পর থেকে শরীরটা খারাপ লাগছে তাই কোনো রকমে একটা ক্লাস করে বাড়িতে চলে এলাম।
রুমে শুয়ে আছি তখন মা এলো আমার পাশে বসে বললো………

আরিশা আজ এতো তাড়াতাড়ি ভার্সিটি থেকে চলে।এলি যে??

এমনিতেই।

শোন তোর আব্বু আর আমি গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি কাল চলে আসবো নিজের খেয়াল রাখিস কেমন।

আচ্ছা যাও সাবধানে যেও।

মা আমার পাশে এসে বসে বললো……..কি হয়েছে চোখ মুখ এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেনো তোর??

কিছুনা মা রোদের মধ্যে বাইরে থেকে এসেছি তাই একটু ক্লান্ত লাগছে।

কিন্তু তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে শরীর খারাপ তোর। কি হয়েছে বল আমায়?

ওহো মা কিছু হয়নি। তুমি যাও আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না কাকিমা আছে তো বাড়িতে।

এই তুই আবারো কাকিমা বলছিস? আপা তোকে কতো ভালোবাসে তুই এখনো মা ডাকতে সংকোচ বোধ করিস?

সরি মা ভুল হয়ে গেছে,আমি তো মা বলেই ডাকি আসলে আমার দুইটা মা তো তাই গুলিয়ে ফেলি।

পাগলি মেয়ে,আচ্ছা শোন আমি যাচ্ছি। সময় মতো খেয়ে নিবি কোনো প্রবলেম হলে আপাকে বলবি।

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো। আমার শরীর খারাপ লাগছে এটা শুনলে হয়তো মা যেতে চাইতো না তাই কিছু বললাম না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারি নি ফোনের রিংটন এর আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আদ্রর কল। উঠে বসে রিসিভ করলাম…….

হ্যা আদ্র বলো?

ভার্সিটি থেকে ফিরেছো??

হ্যা অনেকক্ষণ আগেই ফিরেছি একটা ক্লাস করে চলে এসেছি।

ওহ, আরু আমার আসতে লেট হবে দুপুরে আসতে পারবো না তুমি খেয়ে নিও কেমন।

আচ্ছা।

আরু তোমার কন্ঠটা এমন লাগছে কেনো ঘুমিয়েছিলে নাকি??

হ্যা শুয়ে ছিলাম চোখ লেগে এসেছিলো।

আদ্রর সাথে আরো কয়েকমিনিট কথা বলে রেখে দিলাম। প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছে শাওয়ার নিলাম। এখন অনেকটাই ভালো লাগছে। দুর্বলতা কেটেছে যাক ভালোই হলো শাওয়ার নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ এমন হলো কেনো বুঝতে পারছি না। আদ্র জানলে তো বলবে ঠিক করে খাই না তাই এমন হয়েছে। তখন জোর করে খাওয়াবে আর না খেলে তখন তো বকা খাওয়া ফ্রি। না বাবা উনাকে বলা যাবে না।
.
.
আদ্রর মা মানে আমার শাশুড়ি মা, অথই আর আমি বিকেলে গার্ডেনে বসে আছি আর চা খাচ্ছি। হঠাৎ শরীরটা আবারো দুর্বল লাগছে। মাথাটাও হালকা ঘুড়ছে। চায়ের কাপটা সেন্টার টেবিলে রেখে ওড়নাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।

আরিশা কি হয়েছে তোর ঘামছিস কেনো?

আদ্রর মা চিন্তুত হয়ে তাকিয়ে আছে আর আচঁল দিয়ে মুখের কপালের ঘাম মুছে দিচ্ছে। আমি চোখ খুলে আস্তে করে বললাম…….মা আমার মাথাটা ঘুরছে ঝাপসা লাগছে চারিদিকে।

ঢুলে পড়ে যেতে নিলে মা আমাকে ধরে ফেললো অথইকে বললো……..অথই আরিশাকে ধর ভেতরে নিতে হবে।

মা অথই মিলে আমাকে ভেতরে নিয়ে আসলো। রুমে যেতে নিলেই আরো ঝাপসা হয়ে এলো সব কিছু। মায়ের হাতের উপর ভর করেই ঢলে পড়লাম,তারপর কি হয়েছে জানি না।

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম আমি রুমে শুয়ে আছি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় রাত হয়ে গেছে। আমার পাশে অথই বসে আছে আর সামনে সোফায় আদ্র মাথা নিচু করে বসে আছে। আদ্র সেই অফিসের পোশাক পড়ে আছে এখনো চুলগুলো কেমন এলোমেলো। উনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? আর আমি রুমে এলাম কি ভাবে? আমি উঠতে নিলে অথই তাকালো আমার দিকে হেসে উঠে বললো……..

ভাইয়া দেখো ভাবির উঠেছে।

আদ্র দ্রুত উঠে এসে আমার সামনে দাড়ালো। উনার চোখজোড়া ছলছল করছে তবে চোখে রাগ স্পষ্ট। হঠাৎ রাগের কারনটা কি এটাই তো বুঝলাম না!অথই আমাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললো……..আমি যাই মাকে বলে আসি।

অথই দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। আদ্র এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখ যেনো এখন আগের ন্যায়ে বেশি লাল হয়ে গেছে। উনাকে দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে বললাম………

ততুমি কি রেগে আছো? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে??

আদ্রর চোখে রাগ তবে শান্ত কন্ঠেই বললো………আরিশা আমি মানা করার পরেও কেনো এটা করলে? এতোটা সাহস কোথায় পেলে তুমি? এমন একটা ডিসিশন নেওয়ার আগে আমার কথাটা কি একবারে মাথায় আসেনি তোমার।
তুমি তো এতোটাও অবুঝ নও মানা করার পরেও কেনো নিলে এ সিদ্ধান্ত। বলো আমায়??

উনি শেষের কথা গুলো জোড়ে বলায় কেপে উঠলাম আমি। কি এমন করেছি আমি যে এসব বলছেন উনি। আর আমাকে তো আদ্র আরু বলে ডাকে আজ আরিশা বললো! তাহলে কি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি,কিন্তু কি সেটা??

আদ্র আমার সামনে বসে আমার হাত ঝাকিয়ে ঝাঁজালো কন্ঠে বললো………এই মেয়ে আমার কথা তোর কানে যাচ্ছে না। কেনো করলি এমনটা? মেরে ফেলতে চাস আমায় তুই?

এসব কি বলছো তুমি! তোমাকে মারতে চাইবো কেনো আর কি করেছি আমি সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

আদ্রর মা তখনি রুমে এলো……..কি হয়েছো আদ্র এতো জোরে চেঁচাচ্ছিস কেনো? একি আরিশার চোখে পানি! আদ্র তুই নিশ্চই বকেছিস ওকে। এতো ভালো একটা খবর শুনার পরও তোর মুখে হাসি দেখলাম না।
আরিশা এখন কেনম লাগছে তোর? মাথা ব্যাথা করছে?

আমি ঠিক আছি মা। মা কি ভালো খবরের কথা বলছো??

আদ্রর মা হেসে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো……..আদ্র তোকে বলেনি এখনো! আমি তো দাদী হতে চলেছি রে। ভাবতেও পারি নি এতো বড় একটা সুখবর পাবো! তোর আব্বু আর তোর মাকেও জানিয়ে দিয়েছি সকালেই চলে আসবে। আমরা সবাই খুব খুশি রে মা।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না চোখ থেকে পানি পড়ছে ঠোঁটো হাসি ফুটিয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম কিন্তু উনি কোনো কথা বললো না। চুপচাপ উঠে চলে গেলো।
আদ্রর রাগের কারনটা এখন বুঝতে পারছি আমি। আমি অনেক খুশি হলেও আদ্রর এমন বিহেব দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
.
.
আদ্রর বাবা মা বোন সবাই খুব খুশি বাড়িতে নতুন মেহমান আসবে বলে। সে ছোট ছোট পায়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবে আর সবাইকে মাতিয়ে রাখবে। আরিশা সবার সাথে হাসি মুখে কথা বললেই তার মনের মধ্যে চলছে অন্য কিছু।

আরিশা মনে মনে ভাবছে…….আদ্র আর একটি বারো আমার কাছে এলো না এতো রাগ উনার? মানছি আমি উনাকে না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই বলে এমন একটা খুশির মুহুর্তে উনি আমার উপর রেগে থাকবে! কি সমস্যা উনার আমাদের একটা বেবি আসলে? আচ্ছা উনি তখন এ কথা কেনো বললো আমি উনাকে মারতে চাই? বেবির সাথে উনার বাচা মরার কি সম্পর্ক? উনি কি বোঝে না আমার কতোটা কষ্ট হয়েছে উনার ওই কথাটি শুনে।

ও ভাবি কি ভাবছো এতো??

কই কিছুনা।

কিছুনা বললেই হলো এমন খুশির সময়ে তুমি মুখ কালো করে বসে আছো। আচ্ছা ভাবি আমরা সবাই তো অনেক খুশি তাহলে ভাইয়া কেনো খুশি না,তোমার কাছেও এলো না আর। কি হয়েছে তোমাদের মাঝে??

তেমন কিছুনা অথই, এমনি একটু অভিমান করেছে। বাবা হবে সেই খুশিটা মনে মনে সেলিব্রেট করছে বুঝেছিস।

হুম বুঝলাম। জানো ভাবি তুমি সেন্সলেস হয়ে গেছো শুনে ভাইয়া পাগলের মতো আচরন করেছিলো।

কি করেছিলো??

তুমি সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার পর মা আর আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়েও তোমার কোনো সাড়া পাইনি। কোনো উপায় না পেয়ে ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিলা। ভাইয়া ১০ মিনিটের মধ্যে হাজির। ভাইয়াকে দেখতে পাগল পাগল লাগছিলো মুখটা একদম শুকিয়ে গিয়েছিলো। এসে পাগলের মতো চিৎকার করে তোমার নাম ধরে ডাকছিলো। তোমাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যাওয়ার পর বাবা ডাক্তার নিয়ে এসেছিলো। ভাইয়া তোমার হাত ধরে বারবার ডাক্তারকে বলছিলো…….ডাক্তার আমার আরুর কি হয়েছে? ও সুস্থ হয়ে যাবে তো ও কথা বলবে তো আমার সাথে? আরো কতো কি।
তোমাকে চেকআপ করে ডাক্তার জানায় তুমি প্রেগন্যান্ট তাই শরীর দুর্বল। ঠিকমতো খাবার খেলে ঘুমালে সুস্থ হয়ে যাবে। জানো ভাবি মা বাবা খুব খুশি হয়েছিলো শুনে কিন্তু ভাইয়া তখন একটা কথাও বলেনি শুধু তাকিয়ে ছিলো তোমার দিকে।

অথই এর সব কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি! সামান্য অসুস্থতায় আদ্র এমন পাগলামো করেছে! কতোটা ভাগ্যবতী আমি আমার আদ্র আমাকে এতো ভালোবাসে! আদ্রর সাথে কথা বলতে হবে উনার মন খারাপের কারন আমাকে জানতে হবে।
.
.
ব্যালকনিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আদ্র দাড়িয়ে আছে। ওর মনে চলছে আরিশাকে হারানোর ভয়।
আরিশা সপ্নে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পায় ওটা নিয়েই আদ্রর ভয়। আরিশা ওকে না জানিয় এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলো এটা আদ্র মানতে পারছে না।

আরিশার ওপর অভিমান করে আদ্র পারছে না থাকতে। ভালোবাসা হয়তো এমনই হয় প্রিয় মানুষটার ওপর রাগ অভিমান করে থাকাটা খুবই কষ্টকর।
আদ্র বাবা হবে এটা শুনে মনে মনে খুশি হয়েছে কিন্তু আরিশার কথা ভেবে ওর বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে।

আরিশা এসে আদ্রর পাশে দাড়ালো। আদ্র আরিশার উপস্থিতি টের পেয়ে বললো……..এখানে কেনো এসেছো অনেক রাত হয়েছে যাও ঘুমিয়ে পড়ো।

আদ্র প্লিজ এমন করো না। তোমাকে না জানিয়ে ভুল করেছি মাফ করে দাও আমায়। তুমি তো রাজি হচ্ছিলে না তাই……

তাই তুমি এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেবে? আমি তোমাকে না করেছিলাম নিশ্চই এর পেছনো কোনো কারন আছে এটা কেনো বুঝলে না তুমি। আমি কি চাই না বাবা হতে অবশ্যই চাই কিন্তু তার জন্য তো আমি তোমাকে হারাতে পারবো না।

আমাকে কেনো হারাবে তুমি! আদ্র তুমি কি খুশি না আমাদের বেবির কথা শুনে??

আরু রুমে যাও।

যাবো না আগে বলো তুমি কি খুশি হওনি??

আরু যাও বলছি এখান থেকে।””ধমক দিয়ে বললো।

আরিশা চমকে উঠলো আদ্রর ধমক শুনে। ওখানে আর না দাড়িয়ে আরিশা রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে এলো। ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে একা একা বিড়বিড় করতে লাগলো………

কি ভেবেছে কি নিজেকে,সব সময় রাগ দেখাবে। আমিও পারি রাগ করতে হু যাবো না তোমার রুমে দেখবো কি করে একা থাকো। এই বাবু শোন তোর বাবা না খুব পচা দেখনা তোর মাকে বকেছে তুই আসবি জেনেও তোকে একটু আদর করেনি। আমরা আর ওই হনুমানটার কাছে যাবো না কেমন।

আদ্রর মা আরিশার পাশে বসে বললো…….
কিরে আরিশা কার সাথে কথা বলছিস,আর হনুমানটা কে??

আমি আমার বাবুর সাথে কথা বলছি। আর হনুমানটা হলো তোমার ছেলে। আমাকে আর আমার বাবুকে একটুও আদর করে না।

কি হয়েছে তোদের বলতো? তুই কি আদ্রর কথা অমান্য করে কিছু করেছিস??

হ্যা উনি আমাকে…….ধেত এ আমি কি করছি মাকে বলা যাবে না।

কি হলো বল??

না মা কিছুনা। আমার ঘুম পেয়েছে আমি ঘুমাতে গেলাম।

আচ্ছা যা তোদের মাঝের অভিমাম গুলো মিটিয়ে নিস।

অভিমান মেটাবো আমি নাহ কখনোই না। আমি খুব রাখ করেছি উনার উপর। উপরে এসে অথই এর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। এপাশ ওপাশ করছি ঘুম আসছে না। কি করে ঘুম আসবে আদ্র আমার মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে যে ঘুম আসে না।
.
.
ওদিকে আদ্র রুমে এসে আরিশাকে পেলো না ভেবেছে হয়তো কোনো দরকারে নিচে গিয়েছে। আদ্র শুয়ে আছে অনেকক্ষণ কিন্তু আরিশার আসছে না। আদ্র একবার উঠছে আবার শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। ওর বুকটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে তার আরুকে ছাড়া।

আদ্র উঠে বসে নিজে নিজে বলছে………আরু এখনো কেনো আসছে ও কি জানে না ওকে বুকে জড়িয়ে না ধরলে আমি ঘুমাতে পারি না। নিশ্চই আমার কথায় রাগ করে অথই এর রুমে গিয়ে বসে আছে।
নাহ এভাবে ওকে দূরে সরিয়ে রাখবো না যা হবার হয়েছে শুধু শুধু ওকে কেনো কষ্ট দেবো। যা হয় হবে আল্লাহ আছেন সেই দেখবেন।
আমি বাবা হবো ভেবেই কেমন আনন্দ লাগছে। নিশ্চই আমার আরু মা হবে শুনে এর থেকেও বেশি আনন্দিত। এতোদিন আমার আরুকে নিয়ে বাচতে চেয়েছি। এখন থেকে আমার আরু আর আমার অনাগত সন্তানকে নিয়ে বাচতে চাই।

আদ্র অথই এর রুমে এসে দেখলো আরিশা শুয়ে আছে চোখ বুজে। ও যে ঘুমায় নি আদ্র বুঝতে পারছে।
অথই ঘুমিয়ে পড়েছে আদ্র গিয়ে আরিশাকে কোলে তুলে নিলো। হঠাৎ করে এমনটা হওয়ার আরু চমকে উঠে চোখ খুলে আদ্রর হাসি মুখটা দেখলো।

চোরের মতো কোলে নিয়েছো কেনো নামাও আমাকে।

চোরের মতো কোলে নিয়েছি। চোরেরা বুঝি এভাবে কোলে নেয়? যদি তাই হয় তাহলে হলাম চোর নিজের বউকেই তো চুরি করেছি তাইনা। ওহ ভুল বললাম বউ আর বাচ্চা দুজনকে কোলে নিয়েছি।

আদ্র আরুকে কোলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে।
আরু চোখ ছোট করে বললো……..রাগ দেখিয়ে এখন এসেছে বউ আর বাচ্চাকে নিতে হুহ। আমি তোমার সাথে যাবো না নামাও বলছি।

আমর সাথে না গিয়ে কার সাথে যাবে হুম। চুপ থাকো না হলে ফেলে দেবো কোল থেকে।

আদ্র আরুকে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো আরুকে বুকে নিয়ে। আরু যতো সরতে চাইছে আদ্র আরো গভীর ভাবে আকড়ে ধরছে।
আদ্র আরুর কপালে চুমু খেয়ে বললো………এতক্ষণে মনে হচ্ছে দেহে প্রান ফিরে পেলাম।
·
·
·
চলবে…………………….
·
চলবে……………………….

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here