তোকে দিয়েছি মন পর্ব ১১+১২

তোকে_দিয়েছি_মন❤
১১.১২
পর্ব – ১১
Writer: Sidratul muntaz

ঠিক এই মুহুর্তে আমার ইচ্ছে করছে ডিসের মধ্যে যত খাবার আছে সব এক এক করে বুড়ির মাথায় ঢেলে দেই। বুড়িটা কি জীবনেও আমার পিছু ছাড়বে না?? ছোটবেলা থেকেই বুড়িটার জন্য জীবনটা তেনা তেনা হয়ে আছে….. আর এখন সেই তেনা তেনা জীবনটাকেই নরক বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আমি কটমট চোখে বুড়ির দাত কেলানো হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে ডিস টা বুড়ির হাতে ধরিয়ে দিলাম। রাগে কান্না আসছে আমার। বুড়ির দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বড় বড় পায়ে হাটা দিলাম আমার রুমের দিকে। এক্ষুনি গিয়ে শাড়ি খুলে ফেলব। স্লিভলেস কামিজ পড়ব। ওরনাটা মাথায় বেধে ভাইয়ার টেবিল থেকে খেলনা পিস্তল টা হাতিয়ে নিব। সেই পিস্তলে বুলেট ফিট করব। বুলেট হিসেবে ব্যবহার করব গাবের বিচি। যেগুলো মা রোদে শুকাতে দিয়েছিল। শুকিয়ে নিশ্চয়ই এতোক্ষনে কড়কড়া হয়ে গেছে। একটা মাথায় পরলে তিনদিন সেন্সলেস থাকবে। প্রথমে মারব বুড়ির মাথায়। আর তারপর ওই সিএ পাশওয়ালা বুইড়ার মাথায়। বিয়ে করার খুব শখ না?? বিয়ে কি জিনিস সেইটাই ভুলে যাবে এবার। শাড়ির আচল টা ধরে কোমরে বাধতে বাধতে রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। দরজার সামনে গিয়ে দাড়াতেই হঠাৎ ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম। জায়মার কথা মনে আছে আপনাদের?? আমার বেস্টফ্রেন্ড?? হ্যা!! সেই হারামিটাই বাংলার পাচের মতো মুখটা বানিয়ে রেখে আমার বিছানার উপর বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ওকে জোর করে কেউ তিতা করল্লার জুস খাইয়ে দিয়েছে। কোন ভুতে ধরেছে জানিনা….. কিন্তু এখন আমি ওর ভুত তাড়াবো এইটা নিশ্চিত। আশেপাশে কিছু একটা খুজতে লাগলাম। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো খাটের নিচে ঝাড়ু টা চোখে পরল আমার। জায়মা আমাকে দেখতে পেয়ে মলিন মুখে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠল–

কেমন আছিস তারু?

শয়তানিটার ফরমালিটি দেখে আমার রাগে রীতিমতো গা জ্বলে যাচ্ছে। তিনদিন ধরে কোনো খোজ খবর নেই……. হঠাৎ এসে এখন জিজ্ঞেস করছে কেমন আছি! তার উপর এমন জোড়পূর্বক হাসিটা দিল…….. যেন ওর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কেউ হাসতে বাধ্য করেছে। মাথাভর্তি সব রাগ এবার এই চুন্নিটার উপর ঝারবো আমি। সেই উদ্দেশ্যে তেড়ে গিয়ে খাটের নিচ থেকে ঝাড়ু টা তুলে নিয়েই উরাধুরা মাইর শুরু করলাম। আমার এমন আচরণে জায়মার চোখ গুলো রসগোল্লা শেপ ধারণ করেছে। মুখটা ব্ল্যাক হোলের মতো হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। শকের ঠেলায় ঝাড়ুর বাড়ি খেয়ে যে তার ব্যথা পাওয়ার কথা এইটাও হয়তো ভুল গেছে সে। ইচ্ছে করছে মুক্তিবেগের চেয়েও ওভার স্পিডের মতো একটা লাথি মেরে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে শাকচুন্নিটা কে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ঝাড়ু টাকে নামিয়ে এবার ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম আমি। কপালের ঘাম মুছে চুল ঠিক করে নিলাম। পুরো মুখে হাত বুলিয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। মাথাটা একটু বেশিই গরম হয়ে গিয়েছে আমার। জায়মার দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম বলদিটা এখনো স্ট্যাচু অফ লিবার্টি সেজে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই একই এক্সপ্রেশন। আমি কটমট চোখে তাকাতেই হঠাৎ ভুবন কাপানো চিৎকার দিয়ে বলে উঠল জায়মা—

আআআআ!!!!! আন্টি ভাইয়া কে কোথায় আছো জলদি আসো!! তারুকে জিনে ধরেছে!!

উরাধুরা চিৎকার করে বিছানা থেকে নামতে নিতেই জায়মার মুখ চেপে ধরলাম আমি।

ওই কি সমস্যা তোর?? একদম চুপ করে থাক। বেশি কথা বললে গাবের বিচি মেরে মাথা ফুটো করে দিব। তারপর বুঝবি কেমন লাগে।

জায়মা আমার হাত সরিয়ে দিয়ে করুণ চোখে আমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার দেখে নিল। আমার কাধে হাত রেখে বলল–

দোস্ত কি হয়েছে তোর??

এখনো কিছু হয়নি। তবে হতে চলেছে।

কি হতে চলেছে??

বিয়ে

বিয়ে??( চমকে উঠে) কার বিয়ে??

আমি রাগান্বিত চোখে একবার জায়মার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। মাথা নিচু করে বলে উঠলাম–

আমার বিয়ে।

ওওও!!!

ও শব্দটা জায়মা এমন ভাবে উচ্চারণ করল যেন মনে হচ্ছে আমি ” আমার বিয়ে” না বলে যদি বলতাম ” তোর বিয়ে” তাহলেই বেশি খুশি হতো। আমাকে অবাক করে দিয়ে জায়মা এবার আমার কাধে হাত বুলাতে বুলাতে বলল–

করে ফেল বিয়ে দোস্ত!! জীবনটা প্যারাময়। বিয়েই তার একমাত্র সলিউশন।

জায়মার কথা শুনে মেজাজ আমার আকাশচুম্বী হয়ে উঠল। ইচ্ছে করছে পশ্চাৎদেশ বরাবর একটা লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দিতে। শাকচুন্নি একটা। সরু চোখে জায়মার দিকে তাকাতেই আমার দৃষ্টি আটকে গেল জায়মার গলায়। হুট করে যেন মেজাজটাও ঠান্ডা হয়ে গেল যখন দেখলাম জায়মার গলায় একটা লভ শেপের লকেট ঝুলানো। লকেট টা দেখেই চোখ বড় হয়ে গেল আমার। কেনো জানি মনে হচ্ছে ” ডাল মে কুছ কালা হ্যায়” যেই মেয়েকে জীবনে কখনো জুয়েলারি পড়তে দেখিনি আমি! সামান্য কানের দুল পড়েও যে পাচ মিনিট থাকতে পারেনা……কান চুলকে লাল করে ফেলে! সে কিনা বিশাল একটা লকেট গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে?? বিষয়টা যথেষ্ট সন্দেহজনক। আচ্ছা…… জায়মার আবার বিয়ে হয়ে গেল না তো?? এইজন্যই কি তিনদিনের জন্য ভ্যানিশ হয়েছিল?? গায়ে হলুদ,,,বিয়ে,,,রিসিপশন…… হ্যা একদম খাপে খাপ। তিনদিনই যথেষ্ট। আমি তুমুল গতিতে জায়মার দিকে ঘুরে বসে সন্দেহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আমার কান্ড দেখে জায়মা কিছুটা চমকে উঠে ভ্রু কুচকে তাকাল। আমি বলে উঠলাম–

সত্যি করে বলবি। বিয়ে করে ফেলেছিস তাইনা??

আমার কথায় জায়মা যেন থতমত খেয়ে উঠল। কিছুক্ষণ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। আমি চট করে বুঝে গেলাম যে এখন সে একটা মিথ্যে কথা বলবে। আর সেই কথা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করছিনা। জায়মা নরম স্বরে বলল–

জীবনে একটা প্রেম করতে পারলাম না আর তুই বলছিস বিয়ের কথা??

কথাটা শুনে হাসি পেল আমার। খুব ফালতু একটা লজিক দেখিয়ে আসল বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছে সে। আমি তো একশ ভাগ নিশ্চিত জামুর কিছু একটা হয়েছেই!! হাসতে হাসতে আমার কাধ দিয়ে জায়মার কাধে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলাম—

লজ্জা করেনা বান্ধুপি!! বলে ফেলো! আমি কিন্তু সব বুঝে গেছি। বাই দ্যা ওয়ে জিজু কোথায় রে?? সঙ্গে এনেছিস?? নাকি আবার পানির ব্রিজ ডিঙিয়ে তোদের বাসায় যেতে হবে জিজুকে দেখার জন্য?? হুম হুম!! বল বল!!! ( দাত কেলানো হাসি)

জায়মা কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। কোনো উত্তর দিল না। আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম জায়মার চোখের কোণায় পানি জমে উঠছে…… যেন এখনি টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবার। অজান্তেই কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠল আমার। মেয়েটাকে আমি কি এমন বললাম যে এইভাবে কাদছে?? আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা আমাকে জাপটে ধরে শব্দ করে কান্নায় ভেঙে পরল জায়মা। আমি তব্দা লেগে বসে পরলাম। ওর কান্নার আওয়াজ টা শুনে মনে হচ্ছে যেন বুকের মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে আমার। কখনো ওকে এইভাবে কাদতে দেখিনি আমি। তাও আবার এতোটা কাছ থেকে। ছোটবেলার কথা মনে পরতে লাগল। বাবা মারা যাওয়ার পর মা ঠিক এইভাবেই কেদেছিল। তারপর থেকে এই কান্নাটা সহ্য হয়না আমার। ভীষণ কষ্ট হয়। কান চেপে ধরে রাখতে ইচ্ছে করে। অসহ্য যন্ত্রণার মতো লাগে। খেয়াল করলাম আমার গাল বেয়েও অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। চট করে চোখের পানিটা মুছে নিয়ে জায়মার দুই বাহু স্পর্শ করে টেনে তুললাম আমি। এখনি ওর কান্না থামাতে হবে। একদম কাদতে পারবে না ও। জায়মা চোখের পানি মুছে আবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগল। আমার যেন আর সহ্য হচ্ছে না। গলা ধরে আসছে। গলার মাঝখানটা ব্যথা করছে। অনেক কষ্টে দুই একটা ঢোক গিলে কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করে বলে উঠলাম–

কি হয়েছে তোর?? কেনো কাদছিস এভাবে?? একদম কাদবিনা। চোখের পানি মোছ। এক্ষনি কান্না থামাবি তুই।

জায়মার কান্নার গতি যেন এবার আরো বেড়ে গেল। কাদতে কাদতে অস্পষ্টভাবে কথা বলতে লাগল। ওর কথা গলায় আটকে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না আমি। দু একটা শব্দ যা বুঝলাম সেগুলো এমন–

দোস্ত……. আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। সব শেষ দোস্ত…….

আমি বিচলিত কণ্ঠে বললাম– কি হয়েছে?? জামু বল কি হয়েছে?? কে কি করেছে শুধু একবার বল বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।

জায়মা আমার কথায় যেন কিছুটা ভরসা পেল। কান্নামাখা মুখেই সেই ভরসার ছাপ টা স্পষ্ট ফুটে উঠল। আমার হাত দুটো আরও শক্ত করে ধরে বলল—

দোস্ত ও আমায় ধোকা দিয়েছে।

কথাটা শুনে চোখমুখ কঠিন হয়ে উঠল আমার। কে ধোকা দিয়েছে জায়মাকে?? এতোবড় সাহস?? মেয়েটার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলল?? দয়া মায়া বলতে কি কিচ্ছু নেই এদের?? মানুষ নামে নিকৃষ্ট পশু এরা। আমি নিজের রাগ সামলে নিয়ে জায়মার গাল চেপে ধরলাম। চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠলাম—-

কে ধোকা দিয়েছে তোকে?? নাম বল। আমি কি তাকে চিনি??

জায়মা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। মানে আমি চিনি। এবার যেন আমি আরও একটু অবাক হলাম। আমার চেনাজানার মধ্যেও এতোটা নোংরা মানুষ আছে?? কে সে?? নামটা জানতে ইচ্ছে করছে খুব। আমি জায়মার দিকে তাকিয়ে বললাম–

নাম বল।

জায়মা মাথা নিচু করে চোখমুখ মুছতে মুছতে শীতল গলায় বলে উঠল–

ইশান ভাইয়া।

তোকে_দিয়েছি_মন❤
পর্ব – ১২
Writer: Sidratul muntaz

জায়মার কথাটা শুনে কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলাম আমি। শুধু আমি না….. আমার পুরো পৃথিবী,,,, আমি জুড়ে আমার সবকিছুই যেন এক নিমিষে স্তব্ধ হয়ে গেল। জায়মা কার নাম নিল এইটা?? ইশানের?? ভুল করে বলে ফেলেনি তো?? নাকি যেই ছেলেটা তাকে ধোকা দিয়েছে তার নামও ইশান?? কিন্তু ইশান বলে তো আমি একজনকেই চিনি। যে কখনো এমন কিছু করতে পারেনা। আর জায়মার সাথে তো প্রশ্নই আসে না। উফফ….. মাথাটা ঘুরে আসছে আমার। মনে হচ্ছে কিছু একটা না ধরলে পড়ে যাবো এখনি। জায়মার কাধটা শক্ত করে চেপে ধরে কপালে হাত রাখলাম। জায়মার কান্না এতোক্ষনে থেমে গেছে। কান্নার তীক্ষ্ণ শব্দটার অনুপস্থিতি টের পাচ্ছি আমি। পুরো ঘর জুড়ে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা বিরাজ করল। এই নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে হঠাৎ ঝাঝালো শব্দে জায়মা বলে উঠল–

একটা মানুষ কতটা নোংরা হতে পারে সেটা তাকে না দেখলে আমার জানা হতো না। খুব নোংরা উনি খুব!!!

বলতে বলতে আবার মুখে হাত দিয়ে কেদে দিল জায়মা। ওর কান্নাটা একদম শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার। রাগ হচ্ছে না…. আবার ভালোও লাগছে না…. আসলে আমার কেমন লাগছে নিজেই বুঝতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে,,, আমার কি যেন একটা নেই….. থাকলেও হারিয়ে যাচ্ছে…. যেতে যেতে আমার ভেতরটা জালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে। না আর পারছি না আমি। জায়মাকে স্বিকার করতেই হবে যে সে মিথ্যা বলছে। অন্যকারো জায়গায় ভুলে ইশানের নাম নিয়ে ফেলেছে। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার এই চোখ দুটো খুব লাল হয়ে আসছে। সেই লাল চোখ গুলো কঠিন করে কান্নারত জায়মাকে দেখলাম আমি। মেয়েটা এমনভাবে কাদছে যেন চোখ নির্গত অশ্রু গুলোর সাথে সাথে বুকের জমানো এক পাহাড় কষ্ট টাও বিসর্জন দিতে চাইছে সে। জায়মা কাদতে কাদতে কি মনে করে জানি হঠাৎ আমার দিকে তাকালো। হয়তো আমার কঠিন দৃষ্টির উপস্থিতি টের পেয়েছে সে। গাল জুড়ে বয়ে যাওয়া অশ্রু মুছতে মুছতে আবার কাদছে সে। যতবার গালটা ভিজে যাচ্ছে…..ততবার মুছে নিচ্ছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। এই কান্না যেন থামার নয়। এখন কি করবো আমি?? ওকে কাদতে দিয়ে এখান থেকে চলে যাব?? কাদুক সারাদিন বসে। আমি ওর কান্না দেখতে পারব না। আর না পারব ওর মুখে উচ্চারিত সেই ভয়ানক শব্দগুলো শুনতে। আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু সেটা হল না। উঠে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করার আগেই চট করে জায়মা আমার বিছানার চাদর মুষ্ঠিতে নিয়ে রাখা হাতটার উপর নিজের হাতের ভর বসিয়ে দিল। খুব শক্ত করে হাতটা ধরে রেখে আবার কান্না থামানোর অব্যর্থ চেষ্টা চালাতে চালাতে বলল–

শোন দোস্ত। আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে। ইশান ভাই যে তোর কাছে কি সেটা আমার থেকে ভালো আর কে জানে বল??( চোখের পানি মুছে আমার দিকে ঘুরে বসে) আমি তো বলবো তুইই পৃথিবীর একমাত্র মেয়ে যে কোনোদিন সামনে থেকে না দেখে শুধু গল্প শুনেই কাউকে মনের কল্পনার জগতে ঠায় দিয়েছিস। তাও আবার সেই কল্পনাকে মনের মধ্যে এমনভাবে গেড়ে ফেলেছিস যেটা বের করতে চাইলে হয়তো তোর জীবনটাই বের হয়ে আসবে। এই কথা তো আমি সেদিনই হারে হারে টের পেয়েছিলাম যেদিন হঠাৎ সন্ধ্যায় ইশান ভাইয়ার বাইক এক্সিডেন্ট এর খবর শুনে তুই সারারাত কেদে কেদে বালিশ ভিজিয়ে ছিলি। সত্যিই বোকা বনে গিয়েছিলাম তোর আচরণে। তোর আবেগের কাছে হার মেনেছিলাম। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে শোকে কাতর হয়ে দরজা দিয়ে বসে কাদতি কার জন্য দোস্ত?? জীবনে যাকে কোনোদিন চোখে দেখিস নি তার জন্য?? এতো বোকাও কেউ হয়?? বারো রাকাত নফল নামায পড়েছিলিস তুই আমার এখনো মনে আছে….. যেদিন তারিফ ভাইয়া ইশানের সুস্থতার খবর নিয়ে এসেছিল। তারিফ ভাইয়ার বলা প্রতিটা বাক্য যেন মুখস্ত করে এনে তুই আমায় শোনাতি। প্রতিদিন কমপক্ষে একশো বার হলেও তোর মুখে ইশানে নাম শোনা যেতো। কেন দোস্ত কেনো?? এতো কেনো ভালবেসেছিলি তুই ছেলেটা কে?? কল্পনা অনেক সুন্দর হয় দোস্ত। রুপকাথার গল্পের মতো। কিন্তু জীবনটা তো রুপকথা না! জীবন টা ঝরা পাতার মতো। যার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তোর কাল্পনিক ইশান যতটা সুন্দর ছিল….. বাস্তবের ইশান তার থেকেও অনেক বেশি অসুন্দর। এতোটাই অসুন্দর…. যে তু

জায়মাকে কথা শেষ করার সুযোগ দিলাম না। শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে বা হাতটা খুব শক্ত ভাবে বসিয়ে দিলাম ওর গালের উপর। তাল সামলাতে না পেরে জায়মা বিছানার উপর ঝুকে পরল। চাদর খামচে ধরে আবার কান্না শুরু। কিন্তু আমি এমন কিছু আশা করিনি। বরং চেয়েছিলাম সে উঠে বসে আমাকেও পাল্টা একটা চড় দিয়ে বলুক ” মারলি কেনো হ্যা?? মিথ্যা বলছিলাম আমি সব মিথ্যা! ”
কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে করুণ কান্নায় ভেঙে পড়েছে সে। যার উত্তর একটাই……সে সত্যি বলছে। সব টা সত্যি! গলাটা ধরে এলো আমার। যেন কেউ তার সমস্ত শক্তি দিয়ে গলা চেপে রেখেছে। বুকের ভিতরটা ভেঙে চুরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। তার উপর এই অত্যাচারিত শব্দ….. যা আমার কষ্ট গুলো আরও একশো গুণ বাড়িয়ে তুলছে। দাতে দাত চেপে এবার জায়মার গাল দুটো এক হাতে চেপে ধরলাম আমি। বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলাম–

কান্না থামা তুই। সবকিছু ঠিক করে বল৷ ইশান কি করেছে তোকে?? কেনো উনার নামে এসব কথা বলছিস তুই?? কি এমন করে ফেলেছে বল??

জায়মা ব্যথায় কোকাতে কোকাতে আমার হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। ওর অবস্থা খেয়াল করে এবার হাত টা সরিয়ে নিলাম আমি। যে হাতটা দিয়ে জায়মার গাল চেপে ধরেছি সেটাই এবার এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকলাম আমি। এইটা কি ধরনের আচরণ করছি আমি ওর সাথে?? উফফ আমি যেন নিজের মধ্যেই নেই। কি করছি কেন করছি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। জায়মা হাপাতে হাপাতে সোজা হয়ে বসল। এতোক্ষন কেদে কেদে ক্লান্ত হয়ে গেছে সে। আমি ভাজ করা দুই পা গুলো কে জরিয়ে ধরে বসে পড়লাম। খেয়াল করলাম আমার শরীর হালকা কাপছে। জানিনা কিসের অনুভুতি এটা। রাগের?? কষ্টের?? ক্ষোভের?? নাকি অন্যকিছু?? জায়মা হঠাৎ তার গা থেকে ওরনাটা সরিয়ে রাখল। আমি আড়চোখে ওর কান্ড দেখছি। ও এক কাধের কাপড় হালকা নামাতেই আমি এবার পূর্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম জায়মার উপর। শরীরে অসংখ্য কামড়ের দাগ। যেন ওকে এতোদিন জংগলে ফেলে রাখা হয়েছে। জংগলের হিংস্র পশুগুলো সারাদিন ধরে কামড়েছে তার এই শরীর। নিজের শরীর টাই এবার শিউরে উঠল আমার। চোখ গুলো কিছুক্ষণ ওর শরীরের দিকে আবদ্ধ রেখে এবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম আমি। চোখ গুলো খিচে বন্ধ করে নিয়ে বিপরীত দিকে তাকালাম। এইটা কি দেখলাম আমি?? কেনো দেখলাম?? জায়মার মুচকি হাসির আওয়াজ শুনে ওর দিকে ঘুরে তাকালাম আমি। কান্নাভেজা ফোলা ফাপা চোখ নিয়েই মুচকি হাসছে সে। দৃশ্যটা কতটা হ্রদয় নিংরানো সেটা ভাবতেও বুক মোচড় দিয়ে উঠছে আমার। জায়মা বলে উঠল–

আরো আছে দোস্ত! আরো অনেক আছে। পুরো শরীর জুড়েই আছে। দরজাটা বন্ধ থাকলে হয়তো দেখাতে পারতাম।

আমি দরজার দিকে তাকালাম। দরজাই তো নেই আমার ঘরে। বন্ধ কি করে হবে?? আর দরজা বন্ধের কথা ভাবছিই কেনো আমি?? এসব দৃশ্য দেখার সহ্যশক্তি আমার নেই। আমি পারবো না সহ্য করতে কিছুতেই না! তার উপর ও আবার বলে বসবে না তো যে এর জন্যেও ইশান দায়ী?? না!! এমন যেন কিছু না হয়। অজস্র নোনাজল প্রবাহিত হচ্ছে আমার চোখ দিয়ে। কিন্তু আমার যেন কোনো খেয়ালই নেই। নাহ এইভাবে আর কতক্ষন?? আমাকে সবটা ক্লিয়ারলি জানতে হবে। আর তার জন্য দরকার মানসিক প্রস্তুতি। শাড়ির আচল টা দিয়ে খুব জোরে পুরো মুখটা মুছে নিলাম আমি। হালকা জ্বলছে মুখটা…. জানিনা কেনো। নিজের চোখমুখ স্বাভাবিক করে কণ্ঠস্বর ঠিক করে জায়মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম–

বল এবার। সবকিছু প্রথম থেকে বল৷ এতোদিন কোথায় ছিলি তুই?? আর ইশানকে কোথায় পেলি?? উনি তো সারাদিন আমাদের বাসায়ই আছেন। দিনরাত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি উনাকে। তাহলে কিভাবে কি??

তুই সহ্য করতে পারবি তো তারু??

ওর কথায় আমি বোকার মতো তাকালাম। মনের মধ্যে যেন কেউ খুব শক্ত কিছু একটা গেড়ে দিতে চাইছে। জায়মার চাপা আর্তনাদ শুনে এমনটাই মনে হচ্ছে আমার। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম–

হুম বল।

প্রথমদিনের কথা মনে আছে তোর??যেদিন ইশান রা এসেছিল?/

আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।

জায়মা বলল– সেদিন কিন্তু আমি আর তারিফ ভাইয়া গিয়েছিলাম ওদের মেইন রাস্তা থেকে রিসিভ করতে!

হ্যা গিয়েছিলি। তো?

জায়মা একটু থেমে আবার বলল– আমি আর তারিফ ভাইয়া বাস স্ট্যান্ডে ওয়েট করছিলাম। হঠাৎই একটা বাস এসে থামল ঠিক আমাদের বরাবর। বাস থেকে নামল একটা সুন্দরী মেয়ে…. আর সাথে তিনজন ছেলে। তিনজন ছেলের মধ্যে এমন একজন ছিল….. যাকে দেখেই আমার চোখটা কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে গিয়েছিল। মনে মনে ভাবছিলাম এটাই ইশান ভাইয়া। মনটাও সায় দিচ্ছিল খুব। কিন্তু যখন খেয়াল করলাম ছেলেটা আমার দিকে কেমন একটা ধারালো দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছে…. বিশ্বাস কর খুব খারাপ লাগছিল চাহনি টা। একটা মেয়ে যতই পজিটিভ হোক না কেন….. কোনো ছেলে খারাপ দৃষ্টি নিয়ে তাকালে সেটা ঠিক বোঝা যায়। বোঝা যায় কিনা বল?

ভেতরটা আমার শেষ হয়ে যাচ্ছে……যেন জলন্ত কোনো অগ্নিকুণ্ড খেয়ে নিয়েছি আমি। তবুও সেই যন্ত্রণা টা প্রকাশ না করে বলে উঠলাম–

হ্যা বোঝা যায়।

জায়মা আবার বলতে শুরু করল–

ওর ওই চাহনি দেখে আমি খুব করে চাইছিলাম যেন এইটা ইশান না হয়। কিন্তু যখন তারিফ ভাইয়া ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে ইশান নাম করে ডাকল….. আমি যেন বে আক্কেল হয়ে গেলাম। কোনো এক অজানা কারণে ছেলেটাকে আমার সব থেকে বাজে ছেলে বলে মনে হচ্ছিল তখন। আর এইটাও মনে হচ্ছিল…..তারিফ ভাইয়া অসম্ভব সরল মনের একজন মানুষ। উনি এই ছেলেটাকেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। আর ছেলেটারও মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার বেশ ভালোই দক্ষতা আছে। যাকে বলে একেবারে পাকাপোক্ত!

আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। জায়মাও কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেল। কথাগুলো হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আর সেইজন্য এই বিরতিটা দরকার। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আমি বললাম–

তারপর বল।

তারিফ ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দিলেন সবার সাথে। সবাই খুব ভালো করে কথা বললেও…… ইশান নামক কীট টা খুব গায়ে পড়ে কথা বলতে চাইছিল। তারিফ ভাইয়া আমার নাম বলার পরেও উনি আলাদা করে আরো দুইবার আমার নাম জিজ্ঞেস করেছেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উনি বলেছিলেন উনি নাকি আমার নামটা মনে রাখতে পারেন না। তাই বারবার জিজ্ঞেস করেন। এতোবড় নাম ধরে ডাকতে পারবে না বলে আমার অন্য একটা নাম ঠিক করে দিয়েছিলেন উনি। জারা।

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। জায়মার গলার লকেটের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম–

এই লকেট টাও কি উনিই তোকে দিয়েছে??

জায়মা লকেট টায় হাত দিয়ে বলল– হুম।

আমি চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে বললাম–

দেওয়ার সময় কি বলেছিল??

জায়মা একটু বিব্রত হয়ে বলল–

মানে? কি বলবে??

আমি কাপা কাপা কণ্ঠে বললাম– নিশ্চয়ই বলেছিল এটা ওর মায়ের লকেট?? ওর বাবা ওর মাকে দিয়েছিল?? তারপর আরো অনেক প্রেমময় কথা।

জায়মা অপ্রস্তুত হয়ে বলল–

হ্যা…… তুই কিভাবে জানলি??

ভেজা চোখ গুলো মুছতে মুছতে এবার আমিও মুচকি হেসে বললাম–

আমাকেও দিয়েছে।

বলেই বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে সবুজ পাথরের হারটা বের করলাম। জায়মার কাছে আসতে আসতে বললাম–

এইযে দেখ। এইটা আমাকে দিয়েছিলেন উনি। তাও আবার কি বলে জানিস??

কথাটা শেষ করার আগেই কান্না চলে আসলো আমার। আমি কেনো এতো কাদছি আমি নিজেও জানিনা। যেখানে আমার উচিৎ এখনি ওই ইশান নামক নরপশুর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া….. ভাইয়াকে সবকিছু জানানো…. পুলিশে খবর দেওয়া…..কিংবা অন্তত ওই শয়তানের সামনে গিয়ে তাকে একটা হলেও চড় দেওয়া। কিন্তু সেসব কিছুই করতে পারছি না আমি। এসব কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না। শুধু ইচ্ছে করছে কাদতে। সারাটা সময় ধরে কাদতে। কেদে কেদে নিজেকে শেষ করে দিতে। আমার অবস্থা দেখে জায়মা বিছানা ছেড়ে নামল। আমাকে টেনে ধরে বিছানায় বসিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পরল। আমার মুখটা ধরে উচু করে বলে উঠল–

আমার কথা শোন তারু। এতো কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। তোর তো কোনো ক্ষতি হয়নি! তুই ভালো আছিস। একদম ঠিক আছিস। এখন আমি শুধু তোকে একটাই কথা বলবো। নিজের আবেগ গুলো প্রশ্রয় দিস না প্লিজ। স্বার্থপর এই বাস্তবতাকে মেনে নে। মানতেই হবে তোকে। এছাড়া আর কোনো অপশন নেই।

আমি শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার মুখের দিকে। যেখানে আমার উচিৎ ওকে শান্তনা দেওয়ার……সেখানে ওইই আমাকে শান্তনা দিয়ে চলেছে। বাস্তবতা শেখাচ্ছে। যেই নির্মম বাস্তবতার স্বীকার হতে হয়েছে তাকে। আর আমি?? এতোদিন যেন চোখে পট্টি বেধে ছিলাম। সত্যিই কল্পনার জগতে বাস করতাম। যেখানে বাস্তবতার ভয়ানক এই রুপ আমার অদেখা ছিল। আর এখন যখন বাস্তবতা টা আমার চোখের সামনে……… আমি সব জানতে পেরেছি…….. তখন আমার উচিৎ আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাতের মতো লাভা ছড়ানো। কিন্তু তা না করে আমি কিনা ভেঙে পরছি?? আমি যে এতোটা দূর্বল….. আমার এই মন টা যে এতোটা নাজুক সেটা আগে জানা ছিল না আমার। নিজেকে খুব সাহসী ভাবতাম আমি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতট ভীতু আমি! কঠিন বাস্তব টাকে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই আমার। জায়মার দিকে তাকিয়ে করুণ দৃষ্টিতে বললাম আমি–

দোস্ত আমি না আর সহ্য করতে পারছি না। বল না তুই এইটা কি সত্যি?? নাকি আমি দুঃস্বপ্ন দেখছি?? বল না দোস্ত বল!! বল এইটা দুঃস্বপ্ন?? বল না প্লিজ….

বাচ্চাদের মতো আবদার করছি আমি। আমার অবুঝ মনের এইটাই বোধ হচ্ছে যে জায়মা চাইলেই সবকিছু ঠিক করে দিতে পারে। ও যদি শুধু একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে সব মিথ্যা……তাহলেই যেন সব মিথ্যা হয়ে যাবে। জায়মা আমার পাগলামি দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে সামলানোর চেষ্টা করল। আমার পাশে বসতে বসতে বলল–

শোন তারু! এই টুকুতেই এতো ভেঙে পড়ছিস তুই?? এখনো যে আরও অনেক কিছু জানার বাকি আছে তোর। ওই সুন্দর মুখের আড়ালে কতটা বিদঘুটে রুপ লুকিয়ে আছে সেটা জানতে হবে তোকে। অবশ্যই জানতে হবে।

আমি আসলে কিছুই জানতে চাই না। একদমই ইচ্ছে করছে না এসব কথা শুনতে। যেন পেটের মধ্যে যা আছে সব এখনি বমি হয়ে বেরিয়ে আসবে। জায়মা আমার মনের কথাগুলো বুঝতে পারল নাকি জানিনা। কিন্তু আবার বলতে শুরু করেছে ও সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতার গল্প—

সেদিন বাস থেকে নেমে সবাই গলির রাস্তা ধরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ইশান চলতে চলতে থেমে গেল। তারিফ ভাইয়াকে বলল সে নাকি পুরো এলাকা ঘুরে একবার চক্কর দিতে চায়। তারিফ ভাইয়া বলেছিলেন বাসায় গিয়ে রেস্ট নিয়ে সবাই একসাথে বের হবে……. কিন্তু ইশানের যেন তর সইছিল না। সে এখনি ঘুরবে আর একাই ঘুরবে। সবাইকে চলে যেতে বলে আমাকে নিয়ে ঘুরতে চাইলো সে। আশ্চর্যজনক ভাবে ব্যাপারটায় তারিফ ভাইয়াও রাজি হয়ে গিয়েছিল। আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করল না যে আমি উনার সাথে যেতে চাই কিনা। বরং উনার দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে নিশ্চিন্তে অয়ন্তী আপু সাফিন ভাইয়াদের নিয়ে চলে গেলেন তিনি। আমাকে বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল ইশানের সাথে।

তারপর??

আমরা ঘুরছিলাম……এক পর্যায় খুব নিরিবিলি একটা জায়গা বুঝে উনি আমায় কোলে তুলে নিলেন।

কথাটা শুনে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের হলো আমার। কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে?? বাকি ঘটনা কি হয়েছিল সেটা যেন আন্দাজ করতে পেরে যাচ্ছি আমি। কিন্তু একটা বিষয় আমার মাথায় আসছে না……. ইশান যখন বাসায় ফিরেছিল তখন জায়মা আমাকে বলেনি কেনো সবকিছু?? ইনফেক্ট ভাইয়ার গায়ে হলুদেও তো সে ছিল। কই তখনো তো কিচ্ছু বললো না। বরং ওকে দেখে বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না যে ওর সাথে এতোটা অস্বাভাবিক কিছু হয়েছে। উফফ…… মাথাটা আবার ধরে আসছে আমার। এই বুঝি জ্ঞান হারালাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here