তোকে ভালো বাসতেই হবে পর্ব ১৩+১৪

পর্ব ১৩+১৪
#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-১৩

,, আমার ও মনে পড়ল এটাটো সেই মেয়েটা তার সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিল। যেদিন রাত ভাইয়ার বাইকে চড়ে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলাম,,,

❤️
প্রিতি আপুর মুখটা দেখার মতো হয়েছে।রাত ভাইয়াকে দেখে প্রিতি আপু হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হয়েছেন। এখানে কেউ না থাকলে হয়তো স্কার্ট ধরে লুঙ্গি ডান্স দিতো। তার ভাগ্য সহায় হলো না কারণ ড্রয়িং রুম ভর্তি লোক আর তাই লুঙ্গি ডান্স ও হয়তো দিতে পারলেন না। আমি আড় চোখে রাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,নাক মুখ কুঁচকে গভীর পর্যবেক্ষণে বেস্ত,,,রাত ভাইয়াও বেশ হ্যাপি।চোখ মুখ খুশিতে চকচক করছে।

,,”এই লোকটা আসলেই লুচু পাবলিক নাহলে মেয়ে দেখেই এমন খুশি হওয়ার কি আছে?? আমি তো কিছু বুঝিনা বাপু। ইচ্ছে হচ্ছে চোখগুলো খুচে তুলে দেই ,, তাহলেই আর দেখতে পাবে না।”(মনে মনে বলে একটা ভেংচি কাটলাম)।

অন্যদিকে প্রিতি আপুর আচরণ ও দেখার মতো। জেরিন আর আমাকে রেখে দৌড়ে রাত ভাইয়ার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লেন।রাত ভাইয়ার যে এতে তেমন কোন অসুবিধা হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। তবে এখানে যে জেরিনের বিয়ের কথা বলতে এসেছি না রাত ভাইয়ার সাথে প্রিতি আপুর সেটাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না।সে যাই হোক আমি আবার পাকা দেখায় মনোযোগ দিলাম। কারণ রাত ভাইয়াদের প্রমলীলা দেখে যেমন রাগ লাগছে তেমন অপূর্ব ভাইয়া আর জেরিনের অবস্থা দেখে আমার জোরে জোরে হাসি পাচ্ছে।এর কারণ,,, জেরিন প্রথমত শাড়ি পড়ে না ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না দাঁড়াতে না বসতে,,, তার উপর মাথায় একটা লম্বা ঘোমটা এঁটেছে। এবার সমস্যা হলো এক হাত দিয়ে শাড়ি সামলাচ্ছে আর অন্য হাতে ঘোমটা।তো চা পরিবেশন করবে কোন হাতে?? এই তো গেল সমস্যা,, আর অপূর্ব ভাইয়ার ব্যাপারে আর কি বলবো,,সে তো লজ্জায় উপরের দিকে তাকাতেই পারছে না। এর মাথায় যদি একটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো তাহলে আর হয়তো লজ্জা পেত না।তবে সব থেকে মজার ব্যাপার হলো এই দুজনকে এতো লজ্জা পেতে আমি এ জন্মে কোনো দিন দেখেছি বলে মনে হয় না। আমার মধ্যে এখন হাসির বোমা উৎপাদন হচ্ছে,, শুধু ফাটার বাকি!! ১০মিনিট ধরে কোনো রকম হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে চা পরিবেশন করল জেরিন। এদিকে আমি হাসিতে মুখ কাচুমাচু করে বসে আছি। বড়রা বিয়ের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আমি জেরিনের পাশে বসে আছি,, তার সামনাসামনি সোফায় বসে আছে অপূর্ব ভাইয়া আর রাত ভাইয়া,, আর রাত ভাইয়ার কলিজার উপর উঠে বসে আছে প্রিতি আপু।নেকামীর একটা সীমা থাকে তবে এখানে কোনো সীমা বা বাউন্ডারি কিছুই দেখছি না।দেখেই গা জ্বলে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠিকঠাক হয়ে বসলাম। ভালো আঙ্কেল সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

,,,”শোন,, যদিও ছেলেমেয়েরা নিজেরাই পছন্দ করেছে কিন্তু বিয়েটা তো পারিবারিক ভাবেই হচ্ছে ,,তাই আমার মতে ওদের আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দেয়া উচিত।সবাই কি বল??”

সবাই মুচকি হাসি দিয়ে যে যার মতো হ্যা সূচক উত্তর দিল,,, তাদের মধ্যে থেকে আম্মু বলল,

,,”জেরিন ,,যাও মা তুমি অপুকে নিয়ে তোমার রুমে যাও ,, সেখানে গিয়ে কথা বল।”

জেরিন ও বাধ্য মেয়ের মতো ঘোমটা ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়ালো,,ভাইয়াও মাথা চুলকাতে চুলকাতে লজ্জা রাঙ্গা মুখ নিয়ে জেরিনের পিছু নিল। সবাই ওদের যাওয়ার দিকে একটু সময় তাকিয়ে থেকে আবার যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঠিক যেমন রাত ভাইয়া আর প্রিতি আপু। এতোক্ষণ যদিও আমি জেরিনদের কান্ড দেখতে ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু এখন চোখের সামনে চলছে এদের নেকামী।রাত ভাইয়া আর প্রিতি আপুর মাঝখানে একচুল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টায় আছি আমি। পারলে হয়তো রাত ভাইয়ার কোলে উঠে পড়তো।সবাই আছে বিদায় হয়তো পারছে না।রাত ভাইয়াকে দেখে মনে হয়েছিল বেশ ভালো কিন্তু না উনিৎ তো পুরো লুচুর গোডাউন।ক্রমে ক্রমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। ওদিকে প্রিতি আপু রাত ভাইয়ার হাত ধরে নেকা নেকা কন্ঠে বলল,

,,,”রাত,, তুমি ইদানীং কোথায় থাকো বলতো। আমি কল করে ও তোমাকে পাই না।আর দেখাও হয়না। তোমার কি আমার কথা মনে পড়ে না??”

রাত ভাইয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে বললেন,

,,,”তেমন কিছু না আসলে একটু বিজি থাকি তো তাই যোগাযোগ হয় না।”

প্রিতি আপু পায়ের উপর পা তুলে একটু স্টাইল করে বসে ,,রাত ভাইয়াকে বলল,

,,,”তাই বুঝি??এতো বিজি থাকো কেন শরীর খারাপ করবে তো? নিজের দিকে খেয়াল করো একটু।”

উনি মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,

,,,”হ্যা রাখিতো।(আমার দিকে আর চোখে চেয়ে) নিজের দিকে খেয়াল না করলে কি এতো ভালো থাকতাম??

প্রিতি আপু বলল,

,,”ভালো করে খেয়াল রাখবে নিজের ,, তবে রাত ইউ আর লুকিং সো হ্যান্ডসাম।”

উনি ও একটা মারাত্মক হাসি দিয়ে বললেন,

,,”আই নো ইট।এন্ড তোকে ও বেশ সুন্দর লাগছে।(বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ মারলেন)

ওনার এই আচরণে আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।একে তো ওদের কথা শুনে গা জ্বলছে তার উপর আবার রাত ভাইয়ার এমন অদ্ভুত আচরণ,, আমাকে বেশ অসহ্য করে তুলেছে। নিজের মনে মনে ভাবছি,

,,”না এখানে আর থাকা যাচ্ছে না। এদের কান্ড দেখে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি।যাই ,, এখানে বসে থাকলে দম আটকে অকালে প্রাণ হারাব।”(উঠে একটা সরবতের গ্লাস নিয়ে বেলকনির দিকে হাঁটা লাগালাম।)

মনটা ঠিক নেই ।রাত ভাইয়াকে অন্য একটা মেয়ের পাশে দেখে মোটেও ভালো লাগছে না।উনি ঠিক কেমন লোক কিছুই আমার মাথায় ঢোকে না।মাঝে মাঝে এমন আচরণ করে যেন মনে হয় উনি আমার চির চেনা,, আবার মাঝে মাঝে মনে হয় ওনাকে আমি ঠিক চিনতেই পারিনি।পর্বতের গ্লাসটা এনেছি সত্য কিন্তু এক ফোঁটা ও মুখে দেইনি। প্রায় সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো। আমার মতো মন খারাপ করে বসে আছে আবছা আকাশটা।রাত ভাইয়ার তো কাউকে ভালোবাসে তাহলে কি করে ওই মেয়েটার সাথে এঁটে আছে??একটু রিল্যাক্স লাগছে এখন,, উল্টো দিকে ঘুরতেই চোখ পড়ল সোজা জেরিনের রুমে। দরজাটা একটু ফাঁকা তবে ওদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওদের দেখে আমার মুখে গাল ভরা হাসি ফুটে উঠল। এতোক্ষণ যে ওদের মধ্যে এতো লজ্জা কাজ করছিল এখন তার ছিটে ফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। তবে ওদের মুখে লেপ্টে আছে সীমাহীন খুশি। একজন আরেকজনের হাত শক্ত করে ধরে আছে। কোনো দিন ছাড়বে না এমনি একটি পন নিয়ে ধরা এই হাত। ভালোবাসাকে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা। ওদের এই চেষ্টা আমাকে আপ্লুত করছে।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।ওরা কিছু বলছে কিন্তু এতো দূর থেকে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।তবে জেরিনের মুখে নিমিষেই লজ্জার আভা ছেয়ে গেছে। আর অপূর্ব ভাইয়া ধীরে ধীরে জেরিনকে জরিয়ে নিলেন নিজের সাথে আমি ও সাথে সাথে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নিলাম।

,,”ইশশশ,,,কি লজ্জার ব্যাপার। কিন্তু ভালোই লাগলো।”(হাসতে হাসতে ড্রয়িং রুমের দিকে রওনা দিলাম)

ড্রয়িং রুমে এসেই আমার ঠোঁটে হাসি হাওয়া হয়ে গেল।রাত ভাইয়াকে দেখে।এরা পারে ও বটে ,,এতো ন্যাকামি আর সহ্য হয় না কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি করব?”

ভাবতেই আমার হাতের সরবতের দিকে নজর পড়ল।দেখেই আমার চোখেমুখে খুশির চমক ফুটে উঠল।হাটা দিলাম রাত ভাইয়াদের দিকে। টেবিল থেকে আর একটা গ্লাস তুলে ভাইয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,

,,”ভাইয়া ,,সরবত খাবেন?”

উনি একটু অবাক চোখে তাকালেন আর আমার উদ্দেশ্যে বললেন,

,,”না ,, সোনালী । তুই খা,,”

এবার আমি প্রিতি আপুর উদ্দেশ্যে গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,

,,”আপু আপনি নিন??”

উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,

,,”না ,, এতে অনেক সুগার দেওয়া ,, প্রচুর ফেট। আমি খাব না বাবা।”

আমি ও একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে হাঁটা দিলাম।আর তখনই ধাক্কা খাওয়ার বাহানায় সব সরবত ঢেলে দিলাম প্রিতি আপুর গায়ে।উনিও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। বেশ চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। আমি ও একটা ইনোসেন্ট লুক নিয়ে ,

,”সরি আপু। আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি।”

উনি হুলুস্থুল কাণ্ড শুরু করে দিলেন। কিন্তু জেরিনের আব্বুর জন্য বেশি ইন্ধন জোগাতে পারেন নি।তোলে গেলেন ফ্রেশ হতে। আমি ও রিল্যাক্সে সোফায় বসে বিজয়ের হাসি হাসছি। কারণ ওনার মুখে যে পরিমাণ মেকআপ দেখলাম,, তা পরিষ্কার করে আবার সেই মেকআপ করতে করতে আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হবো।তাই মনে আনন্দের লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু রাত ভাইয়ার দিকে তাকাতেই একটা ডেভিল লুক নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। কেন এমন ভাবে তাকাচ্ছে??উনি কি কিছু বুঝতে পারলেন?

#পর্ব-১৪

,,”কেন এমন ভাবে তাকাচ্ছে??উনি কি কিছু বুঝতে পারলেন?”

❤️
আমি তো থতমত খেয়ে বসে আছি। কাঁপা কাঁপা হাতে সরবতের গ্লাসটা পাশের টেবিলে রাখার চেষ্টা করছি।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হওয়ার পালা। বুকের ভেতরটা ধরফর করছে।রাত ভাইয়া যদি কোনো ভাবে জানতে পারে আমি কাজটা ইচ্ছে করে করেছি ,, তাহলে আমার কি হাল করবে কে জানে?? চোখেমুখ উল্টো করে বসে আছি ,,একে বলে “ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল”যদি উনি বুঝতে ও পারেন যে কাজটা আমি ইচ্ছা করে করেছি,, তার পর ও আমার ইনোসেন্ট মুখটা দেখে যেন রাত ভাইয়ার পাশান মনটা গলে যায়। এই আশায় বসে আছি।ভয়ে ওনার দিকে তাকাতে পারছি না। তারপরও আড় চোখে দেখার চেষ্টা করছি,,

,,” উনি কি এখনও আমার দিকে চেয়ে আছে?? হ্যাঁ।”

চোখ দুটো অগ্নি বর্ন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আর আমি ভয়ে আছি এই বুঝি ওনার চোখ থেকে আগুন ঝরে পড়ে আমাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে!! ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। হওয়ার তো কথাই,,,এতো পরিচিত একজন ফ্রেন্ড ,, শুধুই ফ্রেন্ড ?? যেহেতু মেয়ে তাহলে গার্লফ্রেন্ড তো বলাই যায়। সেই সো কল্ড গার্লফ্রেন্ড!!(একটু ব্যঙ্গ সুরে) তার উপর আবার আসার পর থেকে যেমন ফেভিকলের মতো সেটে ছিল রাত ভাইয়ার সাথে। সেই ফ্রেন্ডের দলে নিয়োজিত না হয়ে কি আমাকে ছেড়ে কথা বলবে?? মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মাথার চিন্তাগুলো ও মাথা ঝাড়া দিয়ে তাদের অস্তিত্ব প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।তা বুঝতে আর দেরি হলো না। আমি ক্রমশ নিজেকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।আর একবার চুপি চুপি ওনার দিকে আড়চোখে তাকালাম ওনার গতিবিধি দেখার জন্য,, লোকটা একদৃষ্টিতে আমার দিকে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে। হঠাৎ ই আমার দিকে উঠে আসতে দেখে ,, আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।ঢোকের পর ঢোক গিলতে চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু সমস্যা হলো আমার তো গলাই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে আমি আর ঢোক গিলবো কি করে?? হাতের কব্জিতে ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা করা ছোয়া?? আমার অতি পরিচিত এই স্পর্শ!!রাত ভাইয়া জোরে টান দিতেই আমি দাঁড়িয়ে পরলাম। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছি,, আর নিজেকে বাঁশ দিচ্ছি,

,,”কোন অসময় এই বুদ্ধি এসেছিল আমার মাথায় কে জানে!! এবারের মতো বেঁচে গেলে আর করব না। প্লিজ আল্লাহ এবারের মতো এই মাসুম বাচ্চাকে বাঁচিয়ে দাও।”

উনি আমাকে নিয়ে ভেতরের দিকে হাঁটা দিবেন ঠিক এমন সময় ভালো আঙ্কেল চড়া গলায় রাত ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,

,,”রাত,,??,, তুমি এইভাবে মিষ্টিমার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো??”

একটা করুন লুক নিয়ে ভাবছি,,

,,”এই যা,,ভালো আঙ্কেলের সামনে এবার কি উত্তর দিবে রাত ভাইয়া?? হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবে নাকি??হায়রে সোনালী,, কি করলি তুই?? এখন তো নিজেই নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে।”

চোখের পাতা ঝাপটাতে ঝাঁপটাতে রাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। এখন দেখে তাকে বেশ স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।একটু আগে যে তার অমন রুপ ছিল,,এখ‌ন তাকে দেখে বোঝা দায় ‌‌। আমাকে ছেড়ে পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে স্বাভাবিক গলায় ভালো আঙ্কেলকে উত্তর দিয়েছেন,

,,”আব্বু অনেক্ষণ ধরে সোনালীকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিতে বলছি ,, কিন্তু তোমাদের মিষ্টিমা তো নিয়েই যাচ্ছে না।তাই আমিই ওকে নিয়ে রওনা দিলাম ওয়াশরুমে।”

ওনার দিকে আমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি,

,,”কি মিথ্যুকরে বাবা,,!! আমাকে আবার কখন ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে বলল??(মনে মনে)

ভালো আঙ্কেল এবার আমার দিকে নিপাত দৃষ্টিতে তাকালেন আর বললেন,

,,”মিষ্টি মা,,,,,!! দিস ইজ নট ফেয়ার,, যাও ভাইয়াকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাও,,।

মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলাম তার আপাত অর্থ হচ্ছে ,,”ঠিক আছে”।আর রওনা দিলাম খাটাশটাকে নিয়ে। আমার প্রাণ ভোমরা গলার কাছে এসে আটকে আছে। বেচারা না পাড়ছে বের হয়ে বাইরে উড়ে যেতে ,, আর না পারছে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে!! বড্ড মুশকিলে পড়ে গেছি। সামনে যে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে করে জানে??ডান হাত দিয়ে বাম হাতের আঙুল খামচে যাচ্ছি,,এর পুরোটাই টেনশনের প্রতিক্রিয়া। ভেতরে যেতে যেতে রাত ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকালাম,, সেই আগের রুপে ফিরেছেন রাত ভাইয়া। চোখেমুখে রাগ স্পষ্ট। সকলের চোখের আড়াল হতেই রাত ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে ওয়াশরুমে ঢুকে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।এতো জোরে ধরেছে মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার হাড় মাংস থেঁতলে যাবে। আমি ব্যাথায় কুকরে উঠলাম। কিন্তু রাত ভাইয়ার সে দিকে কোনো খেয়াল নেই ‌। চোখের পাতায় জল টলমল করছে। শুধু বাইরে পড়ার বাকি। বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে রাত ভাইয়া। আমার মনে হচ্ছে এই পরিস্থিতির সামাল দিতে ওনার কাছে সরি বলে দেওয়াই ঠিক হবে।উনি কোনো কথা বলছেন না শুধু চোখের আগুনে আমার ভয়ে কাবু হওয়া মনটাকে বিধ্বস্ত করে চলেছে অনবরত। নিজের ইগোকে পাশে রেখে কাপা কাঁপা গলায় সরি বলার প্রয়াস করছিলাম।এমন একটা সময় রাত ভাইয়া আমার একটা হাত ছেড়ে এক টানে আমার ওড়নাটা টেনে ফেলে দিলেন ফ্লোরে। আমি এবার অবাকের চড়ম সীমান্তে রয়েছি‌। এর নানা রকম কারন আছে,,প্রথমত ,, আমার ওড়না ফেলে দেওয়ার কারনটা কি ?? দ্বিতীয়ত প্রিতি আপুর উপরে সরবত ফেলার সাথে ওড়নার কি সম্পর্ক কি?? এমন আরও হাজারটা প্রশ্ন গোল গোল ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায় ‌‌।তবে এই মুহূর্তে আমার লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করা উচিত কিন্তু সে উপায় ও নেই ।রাত ভাইয়া যে আমার হাত চেপে ধরে হাতের ভর্তা বানানোতে ব্যস্ত। তবে ওনাকে থামানোর কি আর কোনো অস্ত্র নেই??মনে পড়ল মুখের কথা,, হ্যাঁ,, আমি মুখ দিয়ে তো জিজ্ঞেস করতেই পারি । তাড়াতাড়ি ঠোঁট কেটে বলা শুরু করলাম,,

,,”রাত ভাইয়া কি হচ্ছে কি?? প্লিজ ছাড়ুন আমাকে ।লাগছে তো আমার।আর এভাবে আমার ওড়নাটা ফেলে দিলেন কেন??

উনি চোখমুখে শক্ত করে দাতে দাঁত চেপে বললেন,

,,ছাড়বো?? কেন ছাড়বো??(চোখ পাকিয়ে)ও,, আর কি বলছিলি?? ওড়না ফেলে দিয়েছি কেন তাই??”

আমি ও তাড়াতাড়ি উৎসাহ দেখালাম উত্তরের অপেক্ষায়।আর বলল,

,,,”হ্যাঁ,, এসবের কারণ কি?”

আমার উত্তরে যেন খুশি হলেন না রাত ভাইয়া।এটা বুঝলাম ওনার প্রতিক্রিয়া দেখে।উনি আরও জোরে চেপে ধরলেন হাত । আমি আর সহ্য করতে না পেরে চোখের পাতা ঝাপটে জল ফেলে দিলাম।

রাত ভাইয়া আমার হাতটা একটু হালকা করে ধরলেও ছাড়লেন না। আমার আরো কাছে এসে বলতে লাগলেন,

,,”ওড়না যখন ঠিক মতো সামলাতে পারিস না তখন পড়িস কেন?? হিজাব পরতে পারিস । নাকি সবাইকে দেখানোর ইচ্ছে হচ্ছে সবকিছু ,,?তাহলে জামাকাপড় ছাড়াই বেরিয়ে পরতে পারিস।(আমার চোখে চোখ রেখে একদম মুখের সামনে এসে বলছেন কথাগুলো)

আমি শুধু শুনছি ওনার কথাগুলো,, যদিও আমি ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলাম কিন্তু ওনার উদ্দেশ্য শুনে হা করে তাকিয়ে রইলাম।সময় যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।সব কিছু শুনে আমি বললার কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ওড়নার পজিশন ঠিক নেই বলে এই ব্যবহার করলেন উনি আমার সাথে??আর উনি কে আমাকে এগুলো বলার?? অনেক কিছু বলার ইচ্ছে ডানা বাধছে । কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো কিছুই বলার সাহস জুগিয়েছে উঠতে পারছি না। চোখের অশ্রু আটকে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে।

উনি কি বুঝলেন বা কি ভেবে নিলেন তার কিছুই আমার বোধগম্য হলো না শুধু আমার বাহু ছেড়ে দিয়ে আঙ্গুল ঝুলিয়ে মৎস্য বললেন,

,,,”তোকে শেষবারের মতো বলছি এভাবে আমার চোখের সামনে তোকে যদি কখনো দেখেছি সেদিন বুঝবি আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। এবারের মতো তোকে ছেড়ে দিলাম ‌।”

এটা বলেই উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি ওনার যাওয়ার দিকে নির্বাক প্রাণীর মতো তাকিয়ে রইলাম ।মনে মনে ভাবছি ,

,,”উনি এতোটা খারাপ ভাবেন আমাকে?? তাই এতো খারাপ ব্যবহার করলেন??এই কথাটা কি ভালো করে বলা যেত না??(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে),,এতে এতো ভাবর কি আছে??আমি কে ?? আর আমার সাথে উনি ভালো ব্যবহার করবেনই বা কেন??

এতো কিছু ভাবতে ভাবতে বেশখানিকটা সময় পার করলাম ওয়াশরুমে,, চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্লোর থেকে আমার পরে থাকা ওড়নাটা তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলাম ‌‌। টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছে রাত ভাইয়ার প্রতি একগুচ্ছ অভিমান নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে দেখলাম জেরিন আর ভাইয়া বাইরে এসেছে। রাত ভাইয়া অপূর্ব ভাইয়ার ঠিক ডান পাশে বসে আছে। ওনার মুখে রাগ বা অভিমান কিছুই নেই । আমি ও গিয়ে পাশে বসলাম। বড়রা সবাই বেশ খুশি। বিয়ের দিন তারিখও ঠিক করে ফেলেছেন তারা। আর দুসপ্তাহ পড়েই ওদের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে।শুনে আমার ভয় ও বেশ খুশি লাগছে ‌। এবার নিশ্চয়ই ওদের সম্পর্কের একটা শুভ পরিণতি হতে চলেছে।এখানের আলোচনা শেষে আমরা সবাই বেরিয়ে পরলাম বাসার উদ্দেশ্যে। রাত ভাইয়া আর আমি আবার পাশাপাশি বসে বাড়ি ফিরব। সেটা ভাবতেই আমার হাত পা অসার হয়ে যাচ্ছে।রাগে মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,,

চলবে,,,,,,,!!❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here