তোমাকে ঘিরে পর্ব -০৩(সমাপ্ত)

#তোমাকে_ঘিরে
#পর্ব_০৩ (অন্তিম পর্ব)
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

সকালে উঠে বারান্দায় গেলো তূর। ঠান্ডা পরিবেশে এখন আর তার কিছুটা সমস্যা হয় না মানিয়ে নিয়েছে। হুট করে তূরের অয়নের কথা মনে পড়ে যায়। ভাবতে থাকে,

অতীতের কিছু অংশ★

না আছে আলো আর না আছে পানি। দুই/তিন ঘন্টা যাবত বদ্ধ ঘরে আটক আছে তূর। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে তার। উঠার শক্তিটুকু পাচ্ছে না,দূর্বল অনুভব হচ্ছে তার। নিস্তেজ হয়ে পড়তেই দরজা খুলে অয়ন প্রকট হয়। তূরের সামনে চেয়ার টেনে বসে। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তূর নিজের চোখ ধীরে ধীরে খুলে। অয়নকে দেখতে পেয়ে ঘৃণায় ওর সারা শরীর জ্বলছে!অয়ন ওর দিকে ঝুকে বলে,”আর ইউ ওকে তূর?বেশি খারাপ লাগছে।”

তূর উত্তর দিলো না,উত্তর দিতেও রুচীতে বাঁধছে তার। অয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”ওকে এন্সার দেওয়া লাগবে না তোমার। খাবার এনেছি খেয়ে নাও ফাস্ট।”

অয়নের দেওয়া খাবার যেনো ওর গলা দিয়ে নামবে না। মুখ বেকিয়ে বুঝাতে চায় ও খাবে না এই খাবার।

অয়ন বিরক্তসহকারে বলল,”দেখো খেলে খাবে নাহলে নাটক করবে না আমার কাজ আছে।”

কথাটা বলেই প্লেটটা টেবিলে রেখে চলে যায়। তূর কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো একজন মেইড এসে তূরকে খাইয়ে দিলেন। তূর টু শব্দ অব্দি করে নি,খেয়ে নিলো। মেইড দরজা লাগিয়ে যেতেই ভাবতে লাগলো কিভাবে পালাতে হবে। আশ পাশ তাকিয়ে একটা সিসি টিভি ক্যামেরা খেয়াল করলো ওর বুঝতে বোধগম্য হলো না যে অয়ন এইখান থেকেই তার উপর নজর রাখছে।

তূরের ভাবনার মাঝেই জানলার বাহির থেকে ফিসফিস শব্দ শোনা যেতে লাগলো। তূর শব্দ অনুসরণ করে তাকিয়ে রিহা আর তোহাকে দেখতে পেলো।তূর যেনো আশা আলো দেখতে পেয়েছে। খুশিতে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠে কিন্তু ওদের এখন ভিতরে আসতে দেওয়া যাবে না তা নাহলে ঢুকলে ওরা ধরা পরে যাবে। তূর ইশারা করে সিসি টিভি ক্যামেরা দেখালো, তোহা আর রিহাও তা খেয়াল করলো খুব ভালো করে। তারা বেশ কিছুক্ষন ভাবলো আচমকাই তোহা বলল,”বাড়ির জেনারেটর অফ করলেই পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যাবে আপুকে নিয়ে যেতেও ইজি হবে।”

ওদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রিহা তূরকে নিবে আর তোহা বাড়ির জেনারেটর অফ করতে গিয়েছে। তূর ওদের পরিকল্পনা কিছুতেই বুঝতে পারছে না!কি করতে চাচ্ছে এরা?মনে মনে আল্লাহ ডাকছে যাতে করে কোনোভাবে ওরা ফেঁসে না যাক। তূরের ভাবনার মধ্যে ওর রুমের লাইট অফ হয়ে গেলো,সেই সুযোগে রিহা দৌড়ে রুমের ভিতরে ঢুকে তূরের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,”ভয় পেয়ো না আমি রিহা তোহার ফ্রেন্ড।”

রিহার কথায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল তূর। কিছুক্ষন চেষ্টা করার পর তূরকে মুক্ত করে দিলো। তূর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিহা তাড়া দিয়ে বলল,”দ্রুত যা করার করতে হবে অয়ন এসে পড়লে আমরা সবাই ফাঁসবো। হুট করে তখন পায়ের শব্দে ওরা দুইজন ধীরে ধীরে ব্যালকনিতে থাকা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। বাড়ির পিছনের রাস্তা দিয়ে দেয়াল টপকে বাড়ির বাহিরে এসে দেখে তোহাও দাঁড়িয়ে আছে। ওরা তোহার কাছে যেয়ে বলল,”চল!জলদি নাহলে বাহিরে এসে আপুকে খুজবে।”

ওরা দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করলো। তূরের একবার ফের সেইদিনের কথা মনে পড়ে যায় যেইদিন অয়ন তাকে ওর ১৬ বছর বয়সে নিজের ভালোবাসার কথা বলেছিলো,কিশোরী তূরের মনে ভালোলাগার জায়গা একরাশ ঘৃণা সৃষ্টি হয় কারণ এর পর ওকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

বর্তমান_
তূরের ভাবনার মাঝে ইংরেজীতে কেউ একজন বলে উঠে,”তূর সকাল সকাল তুমি ব্যালকনিতে কি করছো?ঠান্ডা লেগে যাবে না তোমার।”

তূর হেসে এগিয়ে এসে বলে,”তুমি কখন উঠলে বেলা?”

“একটু আগেই। আসো ব্রেকফাস্ট করে নেই পরে তো আবার তোমার ক্লাস আছে তাই না?”

তূর মাথা নাড়িয়ে ব্রেকফাস্ট করতে টেবিলে বসলো। আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়ে ছিলো। ওইদিনের পর তূরের খোজ তোহা ওর মা-বাবাকে দিয়েছিলো ওর মার কিছু একটা না যায় আসলেও তূরের বাবা নিজের ভুল বুঝতে পারলেন নিজের মেয়ের সাথে অন্যায় করেছেন তাও বুঝতে পারলেন উনি তূরকে নিজের কাছে রাখলেন না কারণ অয়ন পেলে তূরকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে তাই তিনি নিজের জমানো টাকা আর জমি বিক্রি করে তূরকে পাঠিয়ে দেন বিদেশে। তূরের সৎ মার এতে আপত্তি থাকলেও তিনি কিছু বলতে পারেন না।

ইংল্যান্ডে আসার পর না তোহা আর না ওর মা-বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে। এই দেশে এসে বেলার সাথে ওর পরিচয় হয় মেয়েটা সুখ দুঃখে বরাবরই ওর পাশে ছিলো এখন পর্যন্ত। ওর কাছে বেলাকে এক কথায় অসাধারণ লাগে,কেনোনা মেয়েটা হাসি খুশি থাকে সবসময় হাজারো কষ্ট থাকার পরও!অন্যকে মুহুর্তেই খুশি করার এক অদ্ভুত জাদু আছে ওর হাতে।

ব্রেকফাস্ট শেষ করে বেলা আর তূর নিজেদের ভার্সিটি আসার উদ্দেশ্যে বের হয়,শুনেছিলো তাদের ক্লাসে নতুন স্যার আসবেন সেই উদ্দেশ্যেই আজ দ্রুত ভার্সিটি আসা।

ক্লাসে এসে দুজন একসাথে বসে পড়লো। কিছুক্ষন পর স্যার আসলো ওদের ক্লাসে। স্যারকে দেখে কিছু মুহুর্তের জন্য তূর স্তব্ধ হয়ে যায়!যার জন্য নিজের দেশ ছেড়ে চলে এসেছিলো দিনশেষে কি তাকে তার কাছেই ধরা দিতে হলো?এক প্রকার দুনিয়া থেমে গিয়েছিলো তূরের। বেলা তূরের স্তব্ধতার কারণ বুঝতে পারলো না। বেলা তূরকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে বলে,”ঠিক আছো তুমি?অসুস্থ কি?”

তূরের ধ্যান ভাঙতেই বলে উঠে,”উহু?”

“বললাম অসুস্থ তুমি?”

“না। হঠাৎ এইরকম প্রশ্ন?”

“তেমন কিছুই না এমনি।”

তূর কিছু না বলে সামনে তাকালো দেখলো অয়নের দৃষ্টিপাত স্থির তার দিকে। এই দৃষ্টিতে কত শত কষ্ট,রাগ,ক্ষোভ স্পষ্ট। হুট করে তূরের বুক ধক করে উঠলো,এক ভয় হলো,অয়ন তাকে তার সাথে নিয়ে যাবে না তো বাংলাদেশ?ও সেইসব অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না দুইদিনের জন্যও হলেও অত্যাচারই ছিলো সেইসব কষ্ট আবার ফিরে পেতে চায় না।

৬.
ক্লাস শেষ করে অন্য মনস্ক হয়ে বাড়ি ফিরছিলো তূর। বেলা জবে গিয়েছে। কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় ফিরেবে সে। তূর হাঁটছিলো এর মাঝেই কেউ দৌড়ে এসে তূরের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,”তূর আই এম সরি।”

চির পরিচিত গলা!অবিকল কন্ঠস্বর এতোটুকুই তূরের ভয় বাড়াতে যথেষ্ট। অয়ন তূরের অবস্থা বুঝতে পেরে ওর কাছ থেকে সরে নিচু স্বরে বলে,”সরি তূর!বুঝতে পারি নি ভয় পাবে না আমাকে। আমি আর আগের সেই অয়ন নেই। তোমার যাওয়ার পর নিজেকে বদলে নিয়েছে।”

অশ্রুসিক্ত নয়নে তূর তাকালো বলল,”এখন নিজেকে বদলে নিয়ে কি হবে যখন সময় ছিলো তখন তো হননি।”

অয়নের কাছে এর কোনো উত্তর নেই। নিজের স্বভাবের জন্যই নিজের ভালোবাসাকে হারিয়েছে,কোন মুখে তূরকে ফিরতে বলবে ও?অয়নকে নিশ্চুপ দেখে তাচ্ছিল্য হাসলো তূর,বলল,”কোনো দরকার ছিলো স্যার?”

অয়ন মাথা উঁচু করে তূরের দিকে তাকালো। চোখে পানি টলমল করছে। তূর বলল,”আবার কোন অভিনয় করছেন এই সস্তা অশ্রু দেখিয়ে!”

অয়ন বলল,”তূর ভুল ভাবছো তুমি!”

তূর এক হাত দিয়ে অয়নকে থামিয়ে দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে চলে যায়। অয়নকে নিজের চোখের সামনে সহ্য হচ্ছে না। বুঝা যায় কতোটা ঘৃণা করে ও অয়নকে।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে ব্যালকনিতে থাকা দোলনায় বসে। বাহিরের দিকে তাকিয়ে তূর নিজের অতীত ভাবতে লাগলো। সঠিক সময়ে অয়ন নিজেকে পরিবর্তন করে নিলে হয়তোবা ওদের দুজনের জীবণই ঠিক থাকতো,সুখে থাকতো তারা। সব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তূর এইগুলা কল্পনা ছাড়া কিছুই না।

এদিকে_
অয়ন নিজের রুমের ব্যালকনিতে এসে রেলিং ধরে দাঁড়ায়,বিরবির করে উচ্চারণ করে,”তুমি গল্প হয়েও গল্প না, সত্যি হয়েও কল্পনা।’

অয়নের বুক ফেটে কান্না আসছে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। তূর আর অয়ন এক হয়েও এক না।

**
তোমাকে ঘিরে আমার সব পূর্ণতা,
তোমার স্বপ্নে বিভোর থাকে এই মন।
স্বপ্নে তোমারই বিচরণ, তোমারই আসা যাওয়া,
শূন্যতার মাঝে তুমিই পূর্ণতা।

তোমাকে ভেবেই স্বপ্নের সাগর পাড়ি দেওয়া
তোমার মাঝেই ভালোবাসার তৃপ্ততা,
তোমাকে ঘিরেই বাস্তবতার পথ চলা।

তোমার মাঝেই সুখের ঘর বাঁধা,
তোমার চোখেই হাজার স্বপ্ন গড়া।

তোমাকে ঘিরে আমার সকল অনুভূতি
**

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here