তোমাকে ঘিরে পর্ব -০২

#তোমাকে_ঘিরে
#পর্ব_০২
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

চারদিকে সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ধরণী আলোকিত হতে শুরু করেছে। আর এদিকে তূর নির্ঘুম হয়ে একপাশে শুয়ে আছে। কিছু সময়ের ব্যবধানেই চোখ লাল হয়ে গিয়েছে না ঘুমানোর কারণে। নিজের পাশে একজন পুরুষকে থাকতে দেখে তূরের ঘুম উধাও হয়ে গিয়েছে কিন্তু এই পুরুষটা তো তার স্বামী!তাহলে কেনো এতো ভয় পাচ্ছে তাকে সে?

কিছু সময় নিরব থেকে তূরের চোখ লেগে আসতে শুরু করে,এক পর্যায়ে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে তূর নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

৩.
সকালে উঠতে নিজেকে কারো পাঁজকোলে আবিষ্কার করলো তূর। কিছু বলার আগেই ওকে কেউ ঠান্ডা পানিতে ফেলে দেয়। তূর ছটফট করতে থাকে পানি থেকে উঠার জন্য!ও তো সাতার পারে না। অসহায় চোখে তাকিয়ে অয়নকে দেখতেই যেনো মাথায় রাগ চড়ে বসলো। মনে মনে অয়নকে কঠিন ভাবে বকলো!ছটফট করতে করতে বলল,”আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে পানিতে ফালানোর?কি পেয়েছেন কি?আবার হেল্পও করছেন না।”

তূরের চেঁচানোতে রীতিমতো সকলে চলে এসেছে। তূর আজ অবাক হয়েছে অনেক কারণ কাল পর্যন্ত বাসায় কেউ ছিলো না কিন্তু আজকে এক রঙের জামা পড়া কিছুজন মেয়ে মাথা নিচু করে আছে। বুঝাই যাচ্ছে তারা হাসছে। তূরের শরীর জমে গিয়েছে,কখনো এতো ঠান্ডা পানিতে নামে নি ও।

তূরের অবস্থা দেখে বেশ মায়া হলো অয়নের। তূরের হাত ধরে ওকে পানি থেকে বের করে আনে। ওদের সুইমিং পুলের সামনের একটা টেবিলে সবসময়ই টাওয়াল রাখা থাকে ওইখান থেকে একটা টাওয়াল এনে তূরের গায়ে জড়িয়ে দেয়। তূরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,”তোমার টর্চার আজকে থেকে শুরু সুইটহার্ট!”

অয়নের বলা কথাটা তূরের কানে বাজতে থাকে। অয়নকে নিজের এতোটা কাছে দেখে ধাক্কা মেরে ওকে সরিয়ে দেয়। অয়ন কিছু বলতে যেয়েও কিছু বলল না। ঘৃণিত ভরা চোখে অয়নের দিকে তাকালো তূর। অয়ন তা উপেক্ষা করে বলে,”তোমার আর শাওয়ার করা লাগবে না আমিই করিয়ে দিয়েছি।হাহাহা।”

অয়নের কথায় বেশ রাগ সাথে বিরক্ত হলো তূর। অয়ন নিজের হাসি থামিয়ে একটা মেইডকে বলে,”ওর জন্য স্পেশাল ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসো।”

তূর ভ্রকুচকে তাকালো,স্পেশাল ব্রেকফাস্ট মানে কি?অয়ন তূরের দৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে শিশ বাজাতে বাজাতে সেই স্থান ত্যাগ করলো। তূর টাওয়াল নিজের শরীরের সাথে ভালো করে জড়িয়ে উঠে দাড়ালো অয়নের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

রুমে এসে তূরের সর্বপ্রথম চোখে পড়লো সুন্দর করে ভাজ করে রাখা একটা লং ফ্রক। ও কিছু না ভেবে ওইটা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

তৈরি হওয়ার সময় একজন মেইড এসে বলে,”ম্যাম,ব্রেকফাস্ট রেডি। আসুন।’

তূর তার সাথে পিছে পিছে যেতে লাগলো। টেবিলে এসে দেখলো অয়ন ব্রেকফাস্ট খাচ্ছে আর একহাতে ফোন টিপছে। বিষয়টা একটুও ভালো লাগলো না তূরের কিন্তু ও কিছু না বলে খেতে বসলো। খেতে যাবে এর মাঝেই অয়ন বলবো,”তুমি দেখতে চাও আমি কি করছি ফোনে?”

তূর অয়নের কথায় পাত্তা দিলো না কিন্তু খেয়াল করলো অয়ন ওকে কাল রাত পর্যন্ত আপনি বলছিলো আর আজ তুমি। তূরকে পাত্তা না দিতে দেখেও অয়ন বলল,”আমি আমার চার নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছি। ও অনেক জোর করছে বলছে আজকে দেখা করতে তুমি যদি বলো তাহলে আমি দেখা করতে যাবো।”

তূর ভ্রুকুচকে অয়নের দিকে তাকালো। কি অদ্ভুত ছেলে! তূর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো,অয়নও আর কিছু না বলে ফোন দেখতে থাকলো।

৪.
তোহা কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।তোহার মন হালকা খারাপ তূরের জন্য। সবসময় তূরের সাথেই কলেজ যেতো আর আজ তূর নেই।

তোহা রেডি হয়ে যেতে নিলে নিজের মা-বাবার ঘর যা শুনতে পায় তাতে স্তব্ধ হয়ে যায়।

“শুনো কত টাকা আছে এইখানে?অয়ন ঠিকঠাক দিয়ে গিয়েছে তো নাকি চালাকি করে নকল নোট দিয়েছে।”

তূরের বাবা আস্তে করে টাকার বান্ডিলটা আলমারিতে রেখে বলেন,”ঠিক আছে,চিন্তা করো না।”

তূরের বাবা আবার বললেন,
“কাউকে জানিও না যে তূরকে আমরা টাকার বিনিময়ে বিয়ে দিয়েছি।”

“আরে না, পাগল নাকি আমি জানাতে যাবো কেনো?”

ওর মা-বাবা টাকার বিনিময়ে তূরকে বিয়ে দিয়েছে!ছিহ!এতোটা জঘন্য মানুষ কিভাবে হতে পারে তোহা ভাবছে। ওর বোনের থেকে কি আজ টাকাটা এতো বড় হয়ে গেলো?ওর কিছু একটা করতে হবে নাহলে ওর বোনের জীবণ শেষ হয়ে যাবে। তোহা দ্রুত জায়গা ত্যাগ করে নিজের কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয় রিকশা। যা করতে হবে ভেবে চিনতে করতে নাহলে।

তোহা কলেজের সামনে এসে নেমে পড়ে। নিজের ক্লাসে যায়। ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে,

তোহা মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। স্যার তোহার দিকে তাকিয়ে বলে,”এটা আসার সময় মিস তোহা?অনেক লেট করে ফেলেছেন আপনি তাই না?”

“সরি স্যার আর এমন করবো না।”

স্যার তোহাকে কড়া গলায় কয়েকটা কথা শুনিয়ে বলে,”সিটে যাও।”

তোহা অনুমতি পেয়ে নিজের সিটে বসে পরে। আপাতত ওর পড়ায় কিছুতেই মন বসছে না। তোহাকে চিন্তিত দেখে তোহার ফ্রেন্ড রিহা বলে উঠে,”তোকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে তোহা। কিছু হয়েছে?”

তোহা বলল,”অনেক বড় কিছু হয়েছে,ক্লাস শেষ হোক তোকে সব খুলে বলবো।”

“ঠিকাছে। দেখি আমি তোর কোনো হেল্প করতে পারি কিনা।”

ক্লাস শেষ করে তোহা আর রিহা ক্যান্টিনে যায়। রিহা তোহাকে বলে,”এইবার বল।”

তোহা চিন্তিত মুখে গরগর করে সব কিছু বলে দেয় সাথে এটাও বলে দেয় যে ওর মা-বাবাকে তূরকে টাকার বিনিময়ে অয়নের কাছে দিয়েছে। সব শুনে রিহা কি বলবে ভেবে পায় না তবুও তোহাকে সান্ত্বনা দিতে বলে,”চিন্তা করিস না আমি দেখছি হেল্প করতে পারি কিনা।”

তোহা হালকা স্বস্তি পেলো। নিজের উপর’ই গিল্ট ফিল হতে থাকে ওর যে বোনকে কালকে সাহায্য করতে পারেনি ভেবে!আচ্ছা অয়ন রেদওয়ান কি একটু ভালোবাসবে তার বোনকে!যদি ভালোবেসে থাকে তাহলে কোনোদিনও টাকার বিনিময়ে তাকে নিতো না ও’ই বা এইসব ভাবছে কি করে।

তোহার ধ্যানের মাঝে রিহা বলে উঠে,”তোর বোন এখন কোথায়?মানে তোর দুলাভাইয়ের বাসার ঠিকানা জানিস?”

তোহা মুখ গোমড়া করে বলে,”নাহ।”

রিহা বলল,”ঠিকানা জানলে কিছু একটা করা যেতো?”

“কিভাবে?আপুকে পালাতে সাহায্য করে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলে আম্মু-আব্বু তাকে বাড়িতে থাকতে দিবে?উলটা আরো পাঠিয়ে দিবে ওই বাড়িতে।”

“চিন্তা করিস না আমি আছি তো। ড্যাডকে বলে কিছু ব্যবস্থা করবো নে।”

তোহা প্রতুত্তরে কিছু বলল না। ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে আসলো সোজা এখন তূরের ঠিকানা শুধু তার মা-বাবাই দিতে পারবে। তাদের দুইজনের থেকে চালাকি করে ঠিকানা নিতে হবে তোহার সেটা যেইভাবেই হোক না কেনো।

৫.
হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে এক মেয়ে। ছোটার জন্য ছটফট করছে,মুখ থেকে উম,উম ছাড়া কিছুই বের হচ্ছে না। কষ্টে তার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। এই কেমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে?কেনো ওকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে?আর ছটফট করতে না পেরে নিস্তেজ হয়ে পরে মেয়েটি। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার!এই জীবণ রেখে কি লাভ?এরচেয়ে ভালো মৃত্যুকেই নিজের সঙ্গী বানানো। মেয়েটির ধ্যানের মাঝে দরজা খট করে খুলে গেলো। রুমের চারদিক আলোকিত হয়ে গেলো বাহিরের আলোতে…..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here