তোমাতেই বিমোহিত পর্ব -০৩+৪

#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৩
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

শরবত বানানো শেষ।তবে সেটা কি নিজে ইহানকে দেবে নাকি লতা বেগমের হাত দিয়ে পাঠাবে সেটায় ভাবছে আরোহি।অনেক ভেবে চিন্তে আরোহি অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো লতা বেগমের হাত দিয়ে পাঠাবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। আরোহী শরবতটি লতা বেগমের হাত দিয়ে শরবতটি ইহানের ঘরে পাঠালো।
লতা বেগম শরবত নিয়ে গেল ইহানের ঘরে। ইহান ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসেছিল।লতা বেগমের হাতে শরবত দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল তার।

এর আগে কখনো লতা বেগম ইহানকে শরবত দেয় নি। তাহলে আজ কি হল? তখনই মনে পড়ে গেল আজ আরোহি এই বাড়িতে আছে তার মানে কি শরবতটি আরোহী বানিয়েছে?

ভাবতেই একটা ভালোলাগা ছেয়ে গেল ইহানের মনে।তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। মুহূর্তেই আবার ও অভিমান এসে জমল মনের কোনে। শরবতটি কি নিজের হাতে দেওয়া যেত না।কথা না হয় না ই বলত।ভাবতেই অভিমানের পাল্লাটা ভারী হয়ে গেল ইহানের।লতা বেগমকে বললেন,

” আমার এখন শরবত খেতে ভালো লাগছে না ফুফু।তুমি নিয়ে যাও শরবত।”

কথাগুলো স্বাভাবিক ভাবে বললো ইহান।কিন্তু ইহানের মনের মধ্যে যে ঝড় বয়ে গেল সেটা জানতে পারল না লতা বেগম।

ইহানের কথামতো শরবত নিয়ে ফিরে আসল লতা বেগম। লতা বেগম কে এভাবে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে গেল আরোহির। ভরা গ্লাস দেখে রাগটা যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।এটা যদি আগের আরোহি হতো তাহলে ইহানের গলায় ছুরি ধরে শরবত খাওয়াত সে।কিন্তু এখন সেই অধিকার টা নেয় আর আছে সে রকম কিছু করার ইচ্ছা।লতা বেগম রান্না ঘরে এসে গ্লাস টি রাখতে রাখতে বললেন,

“ইহান বাবার শরীর টা ভালো না বউমা।তাই শরবত খাবে না বলছে।”

বউমা শদটি যেন আরোহির কানে ঝংকার তুলল। সারা শরীর শিরশির করে উঠল তার।এ কেমন অনুভূতি? আরোহি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না।বেরিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। সোজা আরশি বেগম এর ঘরে চলে গেল সে।আরশি বেগম আয়ান এর সাথে সময় কাটাচ্ছিল।আরোহিকে তাড়াতাড়ি করে ঘরে ঢুকতে দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“আরোহি মা, কিছু হয়েছে? এভাবে ছুটে এলি কেনো?”

আরোহি নিজেই নিজের কাজে অবাক হলো! কেনো ছুটে এলো সে? বউমা শব্দের হাত থেকে বাচতে!কিন্তু কেন? সে তো নিজেকে ইহানের বউ মেনে নিয়েছে।নাহ! সে তো আয়ানের মা আর কিছু নয়।

আরশি বেগম এখন ও চেয়ে আছেন আরোহির দিকে।তখন আরোহি বলল,

“সে রকম কিছু নয় খালামনি।আসলে আমার মনে হলো আয়ান কাঁদছে তাই।”

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আরশি বেগম।বললেন,

না রে মা।আয়ান কাঁদেনি।ও তো চুপচাপই আছে।

“হুম।”

ছোট্ট করে উত্তর দিল আরোহি।

রাতে খাওয়ার জন্য সকলেই ডাংনিং টেবিলে উপস্থিত হলো।আয়ান ঘরে ঘুমাচ্ছে।তাই আরোহি ও সেখানে।সকলকে খাবার পরিবেশন করছে সে। আরশি বেগম এর ডায়াবেটিস এর সমস্যা আছে তাই তাকেও বসিয়ে দিয়েছে আরোহি। সকলকে একে একে খাবার দিল।ইহান কে ও স্বাভাবিক ভাবে খাবার দিল।ইহানের বাবা আরোহিকে খেতে বসতে বললেন।কিন্তু আরোহি বসল না।

” আমার ক্ষুধা নেয় খালু।আমি খাব না।”

থমথমে মুখে বলল আরোহি।আরোহির এমন কথায় ভ্রু কুচকে তাকালো ইহান। ইহানের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিল আরোহি।আরশি বেগম আর ইদ্রিস সাহেব চিন্তিত হয়ে উঠলেন।নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আরশি,

” কেন খাবি না মা? শরীর খারাপ লাগছে নাকি তোর?

আরোহি হালকা হেসে বলল,

“না না খালামনি। আমি ঠিক আছি।কিন্তু কেন জানি না খেতে ইচ্ছা করছে না।তোমরা চিন্তা করো না। রাতে না খেলে আমার কোনো অসুবিধা হবে না।”

আরশি বেগম আর কথা বাড়ালেন না।তিনি নিজে ও আগে রাতে ঠিকমতো খেতেন না।এই ডায়াবেটিস এর জন্য তাকে এখন নিয়ম করে রাতে খেতে হয়।

ইহান কিছু বলল না।চুপচাপ খেয়ে ঘরে চলে গেল।আরোহি শুধু আড় চোখে একবার তাকালো ইহানের যাওয়ার দিকে।

সব কিছু গুছিয়ে ঘরে এলো আরোহি।ইহান ঘরেই আছে। আজ আগে থেকেই সোফাতে শুয়ে পড়েছে সে।আরোহি চুপচাপ ওয়াশরুমে গেল।ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে ইহান উঠে বসল।আরোহিকে ঘরে ঢুকতে দেখে ইহান সোফায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়েছিল।না হলে হয়তো আবার সোফায় ঘুমাতো আরোহি।ইহান আস্তে করে উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। তারপর একটি প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকল সে। আরোহি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টি টেবিলে খাবার দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল।বুঝতে একটু ও সময় লাগল না যে খাবারটা ইহান এনেছে। কিছু না বলে খাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল আরোহি তখনই ইহান শব্দ করে টেবিলে কাচের গ্লাসটি রাখল।হঠাৎ এমন শব্দে কেঁপে উঠল আরোহি।ইহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল ইহান সেই শরবতটুকু খেয়ে খালি গ্লাসটি টেবিলে রাখছে।

গ্লাসটি রেখেই হনহন করে বেলকনিতে চলে গেল ইহান।কোনো কথা বলল না আর না আরোহির দিকে তাকালো।আরোহি ও চুপচাপ টি টবিলের কাছে গিয়ে খাওয়া শুরু করল।হঠাৎ না চায়তে ও চোখের কোনে জমা হলো অশ্রু।মানুষ টা আজ ও তার রাগের কারন সহজেই ধরতে পারে।যে বিষয়টা অন্য কেউ বুঝতে পারেনা সেটা এক নিমিষেই বুঝে ফেলে।

বারান্দা থেকে হালকা উকি দেয় ইহান।আরোহিকে খেতে দেখে হালকা হাসে।অনেক কিছু বদলে গেলে ও রাগটা আগের মতোই আছে।ভাবতেই হাসিটা আর একটু চওড়া হয় ইহানের।ইহান তখনই বুঝে গেছিল সে শরবত খায় নি বলে আরোহির রাগ হয়েছে।আর সেই রাগ ঝেড়েছে রাতের খাবারের উপর

কত বদল ঘটেছে মেয়েটার মধ্যে। যে মেয়েটা আগে সমান্য কিছু হলেই বাড়ি মাথায় তুলতো সেই মেয়েটায় আজ কত শান্ত।যে মেয়েটার বাচ্চামো দেখে
ইহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেত সেই মেয়েটা আজ নিজে একটা বাচ্চাকে সামলায়।আচ্ছা এমনটা কি হওয়ার খুব দরকার ছিল? হয়তো ছিল! না

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবার ও মনটা বিষাদে ভরে উঠল।আরোহি খাওয়া শেষ করে প্লেট বাইরে রেখে এসে চুপচাপ খাটে শুয়ে পড়ল।ইহান ও বেশ কিছুক্ষণ বেলকনিতে সময় কাটিয়ে ঘরে এসে সোফায় ঘুমিয়ে পড়ল।আজ ও দুজন একই ঘরে আছে। নিরবে একে ওপরকে বুঝতে পারছে কিন্তু মুখে কোনো শব্দ করছে না। মাঝ রাতে বড্ড অসস্তি হচ্ছে আরোহির। মনে হচ্ছে কেউ তাকে গভিরভাবে দেখছে।হঠাৎই জেগে গেল আরোহি কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না।ইহান সোফায় ঘুমাচ্ছে।সেদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল আরোহি।ঘুমালে ইহান এর সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।এটা আরোহির ধারণা। শুধু ধারনা না।এটা আরোহির বিশ্বাস। এভাবেই ইহানকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেল আরোহি।

পাখির কিচিরমিচির শব্দে শুরু হলো একটি নতুন সকাল
আরোহি ইহান এর জীবনে।আয়ানকে আরশি বেগম কাছ ছাড়া করছেন না।যতক্ষণ পারছেন নিজের কাছে রাখছেন।আজ সকালে ও তার ব্যতিক্রম হলো না।তাই আরোহি সিদ্ধান্ত নিলো আজ সকালের নাস্তা সে নিজের হাতে বানাবে।বাড়ির সবাই আলু পরোটা পছন্দ করে তাই এটাই বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো আরোহি। নিজের ভাবনা অনুযায়ি রান্নাঘরে আলু পরোটা বানাতে লাগলো আরোহি।

ডাইনিং এ বসে খবরের কাগজ পড়ছিল ইহান আর তার বাবা।তখনই রান্নাঘর থেকে মৃদু চিৎকার করে উঠল আরোহি।
আরোহির চিৎকার শুনে ইহান ছুটে রান্নাঘরে ঢুকল।ঢুকে দেখল,
#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৪
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

ডাইনিং এ বসে খবরের কাগজ পড়ছিল ইহান আর তার বাবা।তখনই রান্নাঘর থেকে মৃদু চিৎকার করে উঠল আরোহি।

আরোহির চিৎকার শুনে ছুটে রান্নাঘরে গেল ইহান।দেখল আরোহি হাত চেপে দাড়িয়ে আছে।গরম পাত্রে বেখেয়ালি হাত দেওয়ায় হাত পুড়িয়ে ফেলেছে আরোহি।ইহান তারাতাড়ি গিয়ে আরোহির হাত ধরে বেসিনের ট্যাপ ছেড়ে আরোহির হাতে পানি লাগাতে লাগল।

“দেখে কাজ করতে পারো না ইডিয়েট।আগের মতোই বেখেয়ালি সব কিছুতে।আর তোমাকে এসব কে করতে বলেছে বলো?”

ধমকে কথাগুলো বলল ইহান।কিন্তু আরোহির সেদিকে হুশ নেই। আরোহি তো মুগ্ধ হয়ে ইহানকে দেখছে।সেই রাগ,সেই কেয়ার।ততটাই অধিকারবোধ।কিন্তু এখন তো সব কিছু বদলে যাওয়ার কথা।তার জায়গায় তো এখন অন্য কারো স্থান। তাহলে!

আরোহি আর কিছু ভাবতে পারছে না। পুরানে অনুভুতিগুলো বারবার কড়া নাড়ছে মনে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আরোহি মনে মনে ভাবল,

“আমি তো সব ভুলে গেছি। তাহলে কেন বারবার সেই স্মৃতি গুলো মনে পড়ছে আমার।কেন?”

রান্নাঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন আরশি বেগম আর ইদ্রিস সাহেব। ইহান ব্যাপার টা দেখছে বলে তারা আর বিষয় টা তে নিজেরা হাত দিলেন না।

আরোহির হাত ভালো করে ধুয়ে আরোহিকে ঘরে নিয়ে গেল ইহান।আরোহি হাত ছাড়াতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি।ইহান ছাড়ে নি। আরোহিকে খাটে বসিয়ে একটা মলম নিয়ে সেটা যত্ন করে হাতে লাগিয়ে দিল ইহান। মলম লাগানে শেষে ইহান কড়া গলায় বলল,

” অনেকটা হাত পুড়ে গেছে তোমার।তাই খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবে না।আমি মা কে বলে দেব আয়ানকে মা সামলে নেবে। আর লতা ফুফু তো আছেই। এই পোড়া হাত নিয়ে যদি কোনো কাজ করতে গেছ বা আমার কথার অবাধ্য হয়েছ তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। বলে দিলাম।”

কথাগুলো বলেই গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ইহান। আর আরোহি ভেজা চোখে তাকিয়ে দেখল ইহান এর যাওয়ার দিকে। এই মানুষটা এমন কেন! কেন আবার ও আগের মতো হয়ে যাচ্ছে লোকটা। না আর চাইলে ও কোনো কিছু আগের মতো হওয়া সম্ভব নয়।তখন আর এখন এর মধ্যে বিস্তার ফারাক।

ইহান একটু আগে অফিসের জন্য বেরিয়ে গেছে।আরশি বেগম এসে আরোহিকে খায়িয়ে দিয়ে গেছে।আরোহির মা আতশি বেগম ফোন করেছিলেন তার আগে। বেশ বকাঝকা ও করেছেন বেখেয়ালি কাজ করার জন্য।আপাতত আরোহি ঘরে একা একা বসে আছে। এই ঘরে কত স্মৃতি আছে আরোহি আর ইহানের। এই বাড়িতে এসে আগে আরোহি ইহানের ঘরে ঢুকত।

ইহান বরাবরই খুব গোছালো স্বভাবের।তার জিনিসে কেউ হাত দিক সেটা পছন্দ ছিল না ইহানের কিন্তু এই নিয়মটা আরোহির জন্য প্রোযোজ্য ছিল না।একবার ইহানের খুব প্রিয় একটা ফুলদানি ভেঙে ফেলেছিল আরোহি।খুব ভয় ও পেয়েছিল কারন ফুলদানিটা ইহানের খুব প্রিয় এক শিক্ষক ইহানকে দিয়েছিল।আরোহি তো ভয়ে কেদে দিয়েছিল কিন্তু আশ্চর্য ভাবে ইহান আরোহিকে কিছুই বলেনি।উল্টে বলেছিল,

” একটা সামান্য ফুলদানিই তো ভেঙেছে। এতে কাঁদার কি আছে? ”

ব্যাস এই টুকু কথা শুনেই আরোহি কান্না থামিয়ে দিয়েছিল।সেদিন থেকে আরোহি বুঝেছিলো ইহানের মনে আরোহির জন্য একটা সফট কর্নার আছে।

আর এটাকে অস্ত্র বানিয়ে আরোহি অনেক বার নিজের কাজ হাসিল করেছে।অবশ্য ইহান আরোহির দুষ্টুমি ধরে ও ফেলত কিন্তু কিছু বলত না।

হঠাৎই আয়ানের কান্নার শব্দে আরোহির ধ্যান ভাঙে।আয়ান আরশি বেগমের ঘরে কিন্তু কান্নার আওয়াজ আরোহির ঘর অব্দি আসছে।আরোহি আয়ানের কান্না শুনে আরশি বেগম এর ঘরে গেল।গিয়ে দেখল আরশি বেগম আয়ানকে কোলে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।হঠাৎ খাটের ওপর নজর পড়তে আরোহি দেখল খাটে কিছু শাড়ি রাখা।শাড়িগুলো চিনতে একটু ও অসুবিধা হলো না আরোহির।আরোহি শাড়ি গুলোর দিক থেকে চোখ সরিয়ে আরশি বেগম এর দিকে তাকালো।আরশি বেগমের চোখে অপরাধবোধ স্পট। আরোহি কারনটা বুঝল। বলে উঠল,

“এই শাড়ি গুলো মায়া ভাবির তাই না খালামনি।”

আরশি বেগম মাথা নিচু করে সম্মতি জানালেন।হালকা হাসল আরোহি।

“আসলে শাড়ি গুলো আমি বের করতে চায় নি।আমার আলমারি তে ছিল তাই আজ গোছাতে গিয়ে হঠাৎ”

আরশি বেগমের কথা শেষ করতে দিল না আরোহি তার আগেই বলে উঠল,

“মায়া ভাবির সব থেকে চিহ্ন আমি নিজের কাছে রেখেছি খালামনি।তাতে যখন আমার খারাপ লাগে না তখন এই সামান্য শাড়ি দেখে আমার খারাপ লাগবে এটা তুমি কেন ভাবলে খালামনি?”

“আমি জানি আরোহি। কিন্তু এখন তুই ইহানের স্ত্রী আর যতই হোক কোনো মেয়ে নিজের স্বামীর প্রথম স্ত্রী কে মেনে নিতে পারে না।তাই আমি ভেবেছিলাম মায়ার শাড়ি আর ব্যাবহার করা অন্য জিনিস দেখে তোর হয়তো খারাপ লাগবে।”

আরোহি আবারও হালকা হাসল আর বলল,

“এমনটা আর কখোনো ভাববে না খালামনি। আমি আগে ও মায়া ভাবিকে যতটা ভালোবাসতাম শ্রদ্ধা করতাম এখন ও তাই করি।”

কথাগুলো শুনে প্রশান্তি ছেয়ে গেল আরশি বেগমের মনে। বলে উঠলেন,

“কি আর বলব বল মা।মেয়েটা যে এত তারাতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। ওদের বিয়ের এক মাসের মাথায় শুনলাম মায়া কানসিভ করেছে। খুব খুশি ছিলাম আমি।কিন্তু হঠাৎ কি যে হয়ে গেল। আয়ানকে ও তো আট মাসের মাথায় জন্ম নিয়েছে। যেখানে একটা বাচ্চা দশ মাস মায়ের গর্ভে থাকে সেখানে ও ছিল আট মাস।”

কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আরশি বেগম। আায়ান ঘুমিয়ে গেছে।তখনই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। ইহান এসেছে। এই সময় ইহান বাড়ি ফেরে প্রতিদিন।লতা বেগম দরজা খুলে দিলে ইহান নিজের ঘরে চলে যায়।ঘরে গিয়ে আরোহীকে না দেখে ভ্রু কুচকে যায় ইহানের।বিরবির করে বলে ওঠে,

“এই মেয়ে বদলাবার নয়।”

তারপর ফ্রেশ হতে চলে যায় ইহান।

ডাইনিং টেবিলে সবাই উপস্থিত শুধু আরোহি ছাড়া। বাড়ি ফিরে এখনো পর্যন্ত আরোহিকে দেখেনি ইহান।তারওপর হাত টা ও পুড়িয়ে ফেলেছে মেয়েটা।খুব অসস্তি হচ্ছে ইহানের। ভাবছে একবার জিজ্ঞেস করবে আরোহির কথা তখনই আরশি বেগম বলে উঠলেন,

“লতা আরোহি আয়ানকে নিয়ে আমার ঘরে আছে। ছেলেটা আরোহিকে ছাড়তে চায়ছে না।ওর খাবারটা আমার ঘরে দিয়ে এসো।”

আরশি বেগম এর কথা শুনে ইহান আর জিজ্ঞেস করল না আরোহির কথা।চুপচাপ খেয়ে নিলো।

সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে ইহান।আরোহি আয়ানকে নিয়ে ঘরে এলো।আয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে।ওকে ঠিক মতো শুয়িয়ে দিয়ে নিজে ও শুয়ে পড়ল আয়ান এর পাশে।কোনো কথা বলল না।ইহান আড়চোখে আরোহিকে দেখল তবে সে ও কিছু বলল না।

কাজ শেষ করতে বেশ রাত হয়ে গেল ইহানের।টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখল ঘরে পানি নেয়, তাই পানি আনতে ডাইনিং এ গেল ইহান।ডাইনিং এ যেয়ে ইহানের মাথা টা গরম হয়ে গেল। আরোহি খাবারটা খায় নি।তখনই মনে পড়ে গেল আরোহির হাত পুড়ে গেছে আর পোড়া হাতে রুটি খাওয়া ঝামেলা।পানি খেয়ে খাবারটা নিয়ে ঘরে গেল ইহান। দেখল আরোহি শুয়ে আছে তবে ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা বুঝতে পারল না।কয়েকবার হালকা কাশল ইহান যাতে আরোহির মনোযোগ পায় তবে আরোহি কোনো সারা দিল না।এবার আলতো করে ডাকল ইহান।

ইহানের ডাকে ইহানের দিকে তাকালো আরোহি।খালি পেটে ঘুম আসে না আরোহির কিন্তু খেতে ও পারল না হাতের জন্য। ইহান বলে উঠল,

“খেয়ে নাও।না খেয়ে থেকো না।”

আরোহি জবাব দিল না তবে উঠে বসে রইল।ইহান আরোহির দিকে তাকিয়ে আছে আরোহি কিছু বলবে সে আশায়।তবে আরোহি কিছু বলল না।ইহান এখোনো তাকিয়ে আছে কোনো জবাব না পেয়ে ধমকে উঠল।বলল,

“রাতে না খেয়ে থাকার মানে কি? এই বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে কি প্রমান করতে চাও? চুপচাপ খেয়ে নাও না হলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

ইহানের ধমকে কেপে ওঠে আরোহি।মিনমিন করে বলে ওঠে,

” আমার হাতে ব্যাথা।তাই তো খেতে পারিনি।”

কথাটি বলে ইহানের দিকে তাকালো আরোহি।ইহান রুটি নিয়ে আরোহির দিকে বাড়িয়ে দিল। নিজ হাতে খাওয়াতে লাগল।আরোহি ও কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে ইহান প্লেট নিয়ে বাইরে চলে গেল। ইহান বাইরে যাওয়ার সাথে সাথে আরোহির নিজের চোখে এতক্ষণ আটকে রাখা পানিটা গড়িয়ে পড়তে লাগল।

আজ যে কত তৃপ্তি করে আরোহি খাবার খেল সেটা আরোহি ছাড়া কেউ জানে না।তবে কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়।ইহান অন্য নারীকে নিজের জীবনে জায়গা দিয়েছিল।অন্য নারী ইহানের সন্তানের মা হয়েছে যেটা কখন ও আরোহি ভুলবে না।ইহান যে অন্য কারো সেটা আরোহি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।তাই এই বিষয়টা নিয়ে এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই। এটাই নিজেকে বোঝালো আরোহি।

তখনই

চলবে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here