তোমাতেই বিমোহিত পর্ব -০৫+৬

#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৫ (অতীত এর কিছু অংশ)
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)

আজ যে কত তৃপ্তি করে আরোহি খাবার খেল সেটা আরোহি ছাড়া কেউ জানে না। তবে কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়। ইহান অন্য নারীকে নিজের জীবনে জায়গা দিয়েছিল। অন্য নারী ইহানের সন্তানের মা হয়েছে যেটা কখনো আরোহি ভুলবে না। ইহান যে অন্য কারো সেটা আরোহি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।তাই এই বিষয় টা নিয়ে এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।এটাই নিজেকে বোঝালো আরোহি। তখনই ইহান ঘরে প্রবেশ করলো।

ইহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে শুয়ে পড়ল আরোহি। ইহান ও কোনো কথা না বলে সোফায় শুয়ে পড়ল।কেটে গেল বেশ কিছু সময়।ইহান ফোনটা অন করে দেখল রাত ৩ টা ৪৬।আরোহি এখন গভীর ঘুমে।তাই আস্তে করে উঠে গেল ইহান।আরোহির বিছানার পাশে হাটু গেড়ে বসল। গভীর দৃষ্টিতে দেখতে এই তো সেই মেয়ে যাকে ইহান নিজের থেকে ও ভালো বাসত কিন্তু একটা ছোট্ট জেদ আজ সব কিছু শেষ করে দিল।ইহান মনে মনে বলে উঠল,

আমি জানি আরোহি আমি তোমার কাছে অনেক বড় অপরাধী। কিন্তু কি করব বলো সেদিন রাগ টাকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।
তবে বিশ্বাস করো আমাকে তুমি যত বড় অপরাধী ভাবো আমি কিন্তু তত বড় অপরাধ করিনি। কিন্তু আফসোস তোমাকে সেটা বোঝাতে পারব না।”কথাগুলো ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইহান।আর বেশিক্ষণ বসে থাকলে আরোহি আগের দিনের মতো টের পেয়ে যাবে।আগের দিন একটু এর জন্য ধরা পড়েনি ইহান।তাই আজ আর রিস্ক নেবে না।

সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ইহান।আর মনে করতে তাকল সেই তিক্ত অতীতের কিছু কথা।

“খালামনি তোমার মেয়ে যদি আর এক মিনিট ও লেট করে আমি কিন্তু ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো না বলে দিলাম। কিছু দিন পর তোমার মেয়ে এইচ এস সি পরিক্ষা দেবে এখনো সে কলেজ এর টাইম মেইনটেইন করতে শিখল না।”

কথাটা বলেই পিছন ফিরে তাকাতে চোখ স্থীর হয়ে গেল ইহানের। আরোহি একটা সাদা থ্রী পিচ পরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো সাজ নেয় কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথীবির সব থেকে স্নিগ্ধ লাগছে আরোহিকে।

“কি ব্যাপার?এতক্ষণ তো খালামনি খালামনি করে চিৎকার করছিলেন এখন আমি রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি দেখতে পাচ্ছেন না?”

বেশ ভাব নিয়ে বলল আরোহি।আরোহির কথায় ধ্যান ভাঙল ইহানের। বলল,

“হ্যাঁ চল। অনেক দেরি হয়ে গেছে।আসছি খালামনি।”

গাড়িতে উঠে বসল ইহান আর আরোহি। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে ইহান বলে উঠল,

“আরোহি তুমি আর সাদা রঙের পোশাক পরবে না।অন্য যে কোনো কালার পরবে কিন্তু সাদা রং নয়।বুজেছো?”

“কিন্তু কেন ইহান ভাইয়া?আর একটা জিনিস আমি দেখেছি আপনি সবার সামনে আমাকে তুই করে বলেন কিন্তু যখন আমি একা থাকি তখন তুমি করে বলেন। কেন বলুন তো?”

বলল আরোহি।

“সেটা তোমার গভেট মাথায় ঢুকবে না।আগে বড় হও তারপর বুঝবে।” বলল ইহান।

“আমি তো অনেক কিছুই বুঝি।কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনা।আচ্ছা আমি যেটা বুঝি আপনি কি সেটায় বোঝাতে চান আমায়।”

“হয়তো”।মুচকি হেসে বলল ইহান।

আরোহি আর কথা বাড়ালো না।এভাবেই সরাসরি না বললে ও নিজেদের অনুভূতির সাথে পরিচয় ছিল আরোহি ইহানের। আরোহি ইহান যে একে অপরকে পছন্দ করে সেটা নিজেরা বুঝতো কিন্তু কখনো প্রকাশ করে নি।

এভাবেই কাটছিল দিন।অন্য প্রমিক প্রমিকাদের মতো প্রতিদিন দেখা করা।ফোনে গল্প করা এগুলো ঘটতো না আরোহি ইহানের মধ্যে। কিন্তু মনের অনুভূতি গুলো ছিল খুব গাড়ো।আর পাঁচটা কাজিন যেমনভাবে মিশত আরোহি ইহান ও সেই ভাবে মিশত।তবে এসব কিছুর মধ্যে একটু ভিন্নতা ছিল যেমন ইহান ছোট থেকে খুব রাগী। সাথে জেদি ও কিন্তু কখনো আরোহির সাথে রাগ দেখাতো না ইহান।আর আরোহি সকলের কাছে খুব চুপচাপ শান্ত ধরনের হলে ও ইহানের কাছে আলাদা।অনেক বেশি অধিকার ইহানের উপরে।অনেক বেশি বায়না ইহানের কাছে।

সব কিছু সঠিকভাবে চলছিল। আরোহির এইচ এস সি পরীক্ষার পরে সকলকে আরোহিকে পছন্দ করার বিষয় টা জানাবে বলে ভেবে রেখেছিল ইহান।কিন্তু তার আগেই সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল।

আরোহির পরীক্ষার মাস খানেক আগে একদিন টিউশন থেকে ফিরে নিজের ঘরে রেষ্ট নিচ্ছিলো আরোহি তখনই আরোহির মা জানায় তাদের বাড়িতে নাকি গেস্ট আসবে।

বিষয়টা অতটা ও গুরুত্ব দেয় না আরোহি কিন্তু বিপত্তি বাধে বিকালে তারা আসার পর।তারা নাকি আরোহিকে দেখতে এসেছেন।আর ছেলে আরোহির বাবার বন্ধুর ছেলে। তারা যখন আরোহিকে দেখতে চায় আরোহি রাজি হয় না।বলে দেয় তাদের সামনে যাবে না। আরোহি সমস্ত লজ্জা ভেঙে এটা ও বলে তার মাকে যে আরোহি একজনকে পছন্দ করে।তাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু আরোহির মা সেটাতে গুরুত্ব দেয় না কারন তিনি ভাবেন এটা তাদের সামনে না যওয়ার একটা প্লান। তাই তিনি আরোহিকে বলেন যেনো বাবার সম্মান রক্ষার জন্য আরোহি তাদের সামনে যায় আর আরোহির পছন্দের ব্যাপারটা তিনি পরে দেখবেন।

সেদিন মায়ের কথাতে ভরসা করাই আরোহির জীবনে সব থেকে বড় কাল হয়ে দাড়ায়।আরোহির মা আরোহিকে হালকা সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যায়। ড্রয়িং রুমে গিয়ে আরোহির মাথা ঘুরে ওঠার উপক্রম। কারন সেখানে ইহান আর তার মা ও উপস্থিত। একটু আগে আতশি বেগম ইহান আর তা মাকে জানায় আজ আরোহিকে দেখতে আসবে। তাই তারা যেন এই সময়ে উপস্থিত থাকেন।প্রথমে ইহান বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারে নি। তাই নিজের চোখে দেখার জন্য খালামনির এক কথায় চলে এসেছে সে।

আর আরোহিকে তাদের সামনে আসতে দেখে বিশ্বাস হয় ইহানের।ইহানকে দেখে চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে আরোহির।তবে নিজেকে সামলে নেয়।কারণ সে তা মাকে জানিয়েছে তার মা নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবে।তবে আরোহির ধারণা ভেঙে যায় যখন ওনারা ওই দিনই এনগেজমেন্ট করে রাখতে চায় আর আরোহির বাবা মা ও তাতে রাজি হয়।আরোহির কাছে সব টা অবাস্তব মনে হয়।কিন্তু কিছু করার থাকে না।ইহানের সামনেই আরোহির এনগেজমেন্ট হয়।

আর আরোহি পাথরের মতো সেই এনগেজমেন্ট করে নেয়।আরোহও আর ইহানের মনে জমানো ভালোবাসাগুলো যেন তিলে তিলে মারা যাচ্ছিল ওই সময়।দুজন মানব মানবি চাচ্ছিল কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ইহান চাচ্ছিল আরোহি একবার বলুক সে এই বিয়ে করতে চায় না।আর আরোহি চাচ্ছিল ইহান একবার বলুক যাতে এই বিয়ে আর আজ আরোহির এনগেজমেন্ট না হয়।কিন্তু কারো আকাঙ্খাই পুরো হয় না।বরং ভেঙে যায় দুটি সিক্ত হ্রদয়। নিজেরা অনুভব করলে ও জানাতে পারে না নিজেদের কমল হ্রদয় এর অনুভূতি।
সেদিন ই ঠিক হয় আরোহির এইচএসসি পরীক্ষার পরে আরোহি আর সেই ছেলের বিয়ে হবে। ছেলেটির নাম নাকি রিজু।সেদিন আরোহিকে আংটি পরিয়েই ছেলেটি কাজের বাহানা দিয়ে বেরিয়ে যায়।আর সে চলে যাওয়ার পর দুই পরিবার মিলে এই সিদ্ধান্ত নেয়।

সেদিনের পর থেকে কেটে যায় এক সপ্তাহ। আরোহি ইহান কেউ কারো সাথে যোগাযোগ করে না।এমন কি দেখা ও হয় নি দুজন এর।আতশি বেগম আরোহিকে জানায় আরশি বেগম নাকি তাকে ডেকেছেন সাথে আরোহি কে ও কোনো বিশেষ কাজে তবে আরোহির যেতে ইচ্ছা করে না।শরীর খারাপের অজুহাতে বাড়িতে থেকে যায় আরোহি।তবে রাতে যে এত ভয়াবহ একটা খবর পাবে সেটা আরোহিয় কল্পনার বাইরে ছিল।আরোহি কিছুতেই কথাটি বিশ্বাস করতে পারছিল না তাই ছুটে গিয়েছিল ইহানদের বাড়ি আর গিয়ে দেখল,
#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৬
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)

এক ভয়াবহ খবর পেয়ে আরোহি ছুটে গিয়েছিল ইহানদের বাড়ি আর গিয়ে দেখল ড্রয়িং রুমে লাল বেনারসি পরে বসে আছে এক রমনি।আর এই রমনি আর কেউ নয় ইহানের বউ।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না আরোহি। কিন্তু বিশ্বাস না করে ও তো উপায় নেই। কারণ সবটা তো সত্যি। তখনই আরশি বেগম এসে আরোহিকে বলে,

“ভাবি পছন্দ হয়েছে তো মা?আজকে বিয়ের কোনো প্লান ছিল না কিন্তু মেয়েটাকে দেখেই আমার পছন্দ হয়ে গেছে আর মায়া মানে তোর ভাবির ভাই বিদেশ চলে যাবে তাই আজকেই মায়ার বাবা বিয়ের প্রস্তাব দেয়।ইহান ও অমত করল না তাই হুট করেই বিয়ে টা দিয়ে দিলাম।আমি জানি তুই রাগ করেছিস ইহানের বিয়েতে থাকতে পারলি না বলে কিন্তু এভাবে যে বিয়েটা হয়ে যাবে সেটা আমরা নিজে ও জানতাম না রে মা।”

“কি যে বলো না খালামনি আমি একটু ও রাগ করিনি।এত সুন্দর ভাবি দেখলে কেউ কি রাগ করতে পারে বলো।”

নিজের কান্না টা নিজের মধ্যে চেপে হাসিমুখে বলে ওঠে আরোহি।

“আচ্ছা ঠিক আছে এখন কিন্তু তোকে খুব বড় একটা দায়িত্ব দেব হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল তাই বলছিলাম ইহানের ঘরটা যদি তুই একটু সাজিয়ে দিতিস।আমি ড্রাইভারকে পাঠিয়েছি ফুল আনতে।” (আরশি বেগম)

“তুমি চিন্তা করো না খালামনি। আমি ইহান ভাইয়ের বাসর সাজিয়ে দেব।ইহান ভাই কোথায় খালামনি?”

বলে ওঠে আরোহি।

“ও মনে হয় নিজের ঘরে আছে।যা গিয়ে দেখা করে আয়।”(আরশি বেগম)

আরশি বেগম এর কথামতো ইহান এর ঘরে যায় আরোহি।ঘরে গিয়ে দেখে ইহান উল্টো ফিরে দাড়িয়ে আছে।আরোহি ইহান এর পিছনে গিয়ে দাড়ালো।বলে উঠল,

“কনগ্রাচুলেশন। উইশ ইউ এ ভেরি হ্যাপি ম্যারেড লাইফ।”

এমন সময় আরোহির কণ্ঠ আশা করেনি ইহান।চমকে পেছনে ফিরে দেখে আরোহি হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। আরোহি হাসিমুখে থাকলে ও চোখের কোনে পানি স্পষ্ট। ইহান বলে উঠল,

কেমন লাগলো আমার বউকে? এক দেখায় পছন্দ করে বিয়ে করে নিয়েছি।ভালো করিনি বল? আসলে ভাবলাম কিছু দিন পর তো তোর ও বিয়ে হয়ে যাবে তাহলে আমি ও বিয়ে করে নেই।আর তাছাড়া তুই ই তো কালকে বললি আমার ও বিয়ে করে নেওয়া উচিত। ”

ক্ষোভের সাথে বলে উঠল ইহান।

ইহানের কথা শুনে আরোহি মুচকি হাসল। বলল,

“যেটা করেছেন একদম ঠিক করেছেন।আর আপনার বউকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে তাইতো নিজের হাতে আপনাদের বাসর সাজাতে এসেছি। এখন যান তো এঘর থেকে আমি তারাতাড়ি আপনার বাসর ঘর টা সাজিয়ে ফেলি।”

খুব স্বাভাবিক ভাবে কথাগুলো বলল আরোহি সাথে হাসি হাসি মুখ।আরোহির মুখে এমন কথা আশা করেনি ইহান।

“এই মেয়ের এত ক্ষমতা। ও উপর জেদ করে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।এতোদিন যে দহনে আমি পুড়েছি সেই দহনে ওকে পোড়াতে নিজের মনের বিরুদ্ধে এতো বড় একটা কাজ করলাম। কোনো দিন ও ঐ মেয়েকে মেনে নিতে পারবে না জেনে ও বিয়ে করলাম সেই মেয়ে আমার বাসর সাজাতে এসেছে”

কথাগুলো ভাবতেই রাগটা যেন আসমান ছুলো ইহানের। তবে আরোহিকে কিছু বলল না।চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।কারণ ইহান কখোনোই আরোহির ওপর রাগ ঝাড়েনি। আজ ও ঝাড়ল না। তাকে তো তিলে তিলে পোড়ানোর ব্যাবস্থা করেই এসেছে।

ইহান চলে যাওয়ার পর ড্রাইভার ফুল দিয়ে গেল আরোহির কাছে। নিজ হাতে ইহানের বাসর সাজালো আরোহি।প্রত্যেকটা ফুল যেন কাটা মনে হচ্ছিল আরোহির কাছে।আরোহি জানে ইহান জেদি কিন্তু ইহান যে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা ভাবতে ও পারেনি আরোহি।

“শুধু আজকের দিনটা শুধু আজকের দিনটা যদি অপেক্ষা করতেন তাহলে হয়তো আমাকে এত বড় শাস্তি দিতে পারতেন না আপনি ইহান।তবে এরপরের সত্যি টা আপনাকে পোড়াবে।তখন আপনি চাইলে ও কিছু বদলাবে না”
অশ্রুসিক্ত নয়নে কথাগুলো বলল আরোহি।তবে সেটা বন্ধ ঘরে। কেউ শুনলো না সেই কথা।

কথাগুলো ভেবেই মনে পড়ে গেল কালকে সন্ধ্যার কথা।
এই এক সপ্তাহ ইহান আরোহির সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি কিন্তু নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল তাই গতকাল রাতে ইহান আরোহিকে আরোহিদের বাড়ির নিচে ডাকে।আরোহি গেলে ইহান সরাসরি আরোহিকে প্রশ্ন করে,

“তুমি এই বিয়েটা করতে চাও আরোহি।তুমি খুশি হবে এই বিয়ে করলে?”

“কেনো হবো না ভাইয়া।আমি খুব খুশি।”

হাসিহাসি মুুখে বলে উঠল আরোহি।আর মনে মনে বলে উঠল,

“কালকেই ওই রিজু আপদটাকে বিয়ে করিয়ে দিচ্ছি।তখন আপনার রিয়াকশন টা দেখতে চায় তাই এখন আপনাকে কিছু বলব না আমি।সারপ্রাইজ এর জন্য রেডি থাকুন।”

“তুমি ভেবে চিন্তে বলছ তো আরোহি?”(ইহান)

“হ্যাঁ সব ভেবেই বলছি।আর আপনি ও এবার একটা বিয়ে করে ফেলুন ইহান ভাইয়া।”

রসিকতার স্বরে বলে উঠল আরোহি।
আরোহির এই কথায় ইহান এর জেদ উঠে যায়।
___________________

“কি বলছিস আতশি? এত কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাদের কিছু জানালি না বোন?”(আরশি বেগম)

“কি আর বলব আপা।ছেলেটা যে এমন করবে আমরা কিভাবে জানব।সেদিন কি ভদ্রলোক এর মতো আরোহিকে আংটি পরালো আর আজ শুনলাম সকালে নাকি নিজের প্রেমিকাকে বিয়ে করে বাড়িতে এনেছে ওই ছেলে।তার নাকি মতের বিরুদ্ধে এনগেজমেন্ট হয়েছিল। আর তার থেকে বড় কথা আমার মেয়ে নাকি জানত আজ ঐ ছেলে বিয়ে করবে।”

“আরোহি জানতো এসব?” (আরশি বেগম)

“হুম। আরোহি মনে হয় কাউকে ভালোবাসে আপা।ও সেদিন আমাকে বলেছিল কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।তবে আজ সব শুনে মনে হচ্ছে আরোহি সত্যি কাউকে পছন্দ করে না হলে ওই ছেলের সাথে প্লান করে ওই ছেলের বিয়ে দিয়ে দেয় বলো।আজ বিকেলে এই নিয়ে আমি ওর সাথে কথা বলব ভেবেছিলাম। কিন্তু ইহানের বিয়ের জন্য বলা হয়ে উঠল না।বাড়িতে গিয়ে ওর সাথে কথা বলব ভাবছি।”

ড্রয়িংরুমে এসে নিজের মা আর খালামনির কথা শুনে পা জোড়া থেমে গেল ইহানের। মস্তিষ্ক ফাকা ফাঁকা লাগছে ইহানের। কি বলছে এরা। আরোহির বিয়ে হচ্ছে না। আরোহি নিজে সেই ছেলের বিয়ে দিয়েছে। আর কিছু ভাবতে পারছে না ইহান। নিজের জেদের জন্য আজ এতো বড় একটা অন্যায় করে বসল।এখন আরোহির মুখোমুখি হবে কিভাবে ইহান সেটা ভেবেই অনুশচনায় পাগল পাগল লাগছিল ইহানের।

এদিকে এক আকাশ কষ্ট নিয়ে ইহানের বাসর সাজানো শেষ করল আরোহি।মনের মধ্যে বয়ে চলছে ঝড়।তবে তা প্রকাশ করার উপায় নেই। কার কাছেই বা প্রকাশ করবে। কালকে তার একটা কথায় যে ইহান এতে বড় সিদ্ধান্ত নেবে সেটা ভাবতে ও পারেনি আরোহি।

ঐ বাড়িতে আর এক মুহূর্তে দাড়াতে ইচ্ছে করছে না আরোহি।তাই কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সে।

অনেকক্ষণ ধরে আরোহিকে দেখছে না আরশি বেগম।তাই তাকে খুজতে ইহানের ঘরে গেলেন তিনি।তবে সেখানে সাজানে ঘর ছাড়া কিছুই পেলেন না। সারা বাড়িতে খুজে ও যখন আরোহিকে আরশি বেগম পেলেন না।তখন বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। আরোহিকে ফোন দিলেন তিনি।

খালামনির ফোন পেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল আরোহি।কান্না আটকে ফোন ধরল। ফোনের ওপাশ থেকে শুনতে পেল খালামনির চিন্তিত কন্ঠ। আরশি বেগম জিজ্ঞেস করে উঠলেন,

“আরোহি কোথায় তুই? সারাবাড়ি খুঁজে ও তোকে পেলাম না।”

“আমি বাড়ি চলে এসেছি খালামনি।আসলে শরীর টা খুব খারাপ লাগছিল।তোমরা চিন্তা করবে তাই কিছু বলে আসিনি।একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবো তুমি চিন্তা করো না। ”

কথাগুল একদমে বলে উঠল আরোহি।

“আচ্ছা ঠিক আছে। তুই রেস্ট নে।আমি তোর আম্মুকে পাঠাচ্ছি। “(আরশি বেগম)

“না না খালামনি আম্মুকে পাঠাতে হবে না। রেস্ট নিলেই আমি ঠিক হয়ে যাবো। তোমরা চিন্তা করো না।”
বলে উঠল আরোহি।

“আচ্ছা মা তাহলে তুই রেস্ট নে।” ( আরশি বেগম)

“আরোহির শরীর টা ভালো লাগছে না তাই বাড়ি চলে গেছে।তুই চিন্তা করিস না আতশি।”

আতশি বেগম কে বললেন আরশি।

“আমি কি একবার বাড়ি থেকে দেখে আসব আপা।মেয়েটার আমার কি হলো।”চিন্তিত কন্ঠে বললেন আতশি।

“আমি বলেছিলাম আরোহিকে। ও বলল ও নাকি রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে আর তোকে ও যেতে বারন করেছে।”(আরশি বেগম)
ওদিকে আরোহির অসুস্থতার কথা শুনে ইহান কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।আর কেউ না বুঝতে পারলে ও ইহান খুব ভালো করেই বুঝতে পারল। তাই দেরি না করে আরোহির বাড়িতে চলে গেল ইহান।

আরোহির বাড়ির বেল বারবার টিপছে ইহান কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না।মনে মনে ভয় পেয়ে গেল ইহান। আরোহি উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলল না তো।বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খুলল আরোহি।আরোহিকে সুস্থ দেখে যেন নিজের প্রাণ ফিরে পেল ইহান।এমন সময় ইহান যে আসবে সেটা ভাবতে পারেনি আরোহি।ইহানকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল আরোহি।

“আপনি এখানে কি করছেন ইহান ভাইয়া?বাড়িতে সবাই আপনাকে খুজবে তো! তাছাড়া আজ আপনার জীবনে একটা বিশেষ দিন।আজ রাত টা আপনার জীবনে অনেক ইম্পরট্যান্ট।”

তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠল আরোহি।

করুন চোখে তাকিয়ে আছে ইহান।আজ তার একটা জেদ যে এতে ভয়াবহ হবে সেটা কল্পনা করতে পারেনি সে।আজ এক সপ্তাহ এর মধ্যে সেই দিনের কথা ভুলতে পারেনি ইহান। তার উপর কালকের ঘটনা যতবার মনে পড়ে নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল। তাই তো রাগের মাথায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এতো বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে।

“আম সরি আরোহি।বিশ্বাস করো আমি এমনটা চায় নি।” (ইহান)

“এসব কি বলছেন ইহান ভাইয়া।আজ আপনার বিয়ে হয়েছে আর আপনি বলছেন আপনি চান নি।বিয়ের খুশিতে কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি।”

হাসতে হাসতে বলে উঠল আরোহি।

“আরোহি।প্লিজ আমায় মাফ করে দাও।আমি সত্যিই এমনটা চায় নি।”(ইহান)

“আপনি কি চেয়েছিলেন কি চান না সেটা তো আমার জানার কথা নয় ইহান ভাইয়া। আমি এখন এটা চায় আপনি তারাতাড়ি আপনার বাড়িতে চলে যান এবং আপনার বাসর এটেন্ড করেন।আমি কিন্তু অনেক শখ করে সজিয়েছি।নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে সাজানো সুন্দর হয়।”

“আরোহি?”

করুন কন্ঠে বলে উঠল ইহান।

“প্লিজ ইহান ভাইয়া আপনি চলে যান। আমার শরীর টা ভালো লাগছে না। আমি রেস্ট নেব।”

কথাগুলো বলেই ইহানের মুখের ওপর দরজাবন্ধ করে দিল আরোহি। এটাই আরোহি আর ইহানের শেষ কথা ছিল। সেদিনের পর থেকে আরোহি ইহানের সাথে কথা বলত না।ইহান বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেছিল কথা বলার তবে আরোহি তাকে এড়িয়ে যেত।

তবে এর মধ্যে ঘটে আর এক ঘটনা। ইহানের বিয়ের দুই দিন পর আতশি বেগম আরোহির সাথে কথা বলতে চায়।আরোহিকি সত্যি কাউকে পছন্দ করতো সেটা জানতে আরোহির কাছে যায়।আরোহি নিজের ঘরে বসে পড়ছিল। তখন আরোহির মা ঘরে আসে।আম্মুকে দেখে আরোহি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।চুপচাপ পড়তে থাকে।

“তোমার সাথে কিছু কথা ছিল আমার আরোহি।”

বললেন আতশি বেগম।

“হ্যাঁ আম্মু বলো।”(আরোহি)

“সেদিন তুমি যেটা বলেছিলে সেটা কি সত্যি ছিল। সত্যি কি তুমি কাউকে ভালোবাসো আরোহি?”

জিজ্ঞেস করে উঠলেন আতশি বেগম।

“হ্যাঁ আম্মু। আমি সত্যি বলেছিলাম। আমি একজনকে পছন্দ করতাম।”

স্বাভাবিক গলায় বলল আরোহি।

“কে সে?”(আতশি বেগম)

“সে কে সেটা এখন আর জেনে লাভ নেই আম্মু। সে আমার এনগেজমেন্ট এর খবর শুনে আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আমার জীবনে আর কখোনো ফিরে আসবে না। তাই এটা নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না আমি।”

দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠল আরোহি। আওয়াজে স্পষ্ট অভিমান।

মেয়ের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল আতশি বেগম। না জেনে হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে এতো বড় ভুল করে ফেলবেন সেটা ভাবতে পারেন নি তিনি।মেয়েকে বিশ্বাস না করে আজ মেয়ের জীবন থেকে তার খুশি কেড়ে নিয়েছে আতশি বেগম। এটা ভেবেই বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে আতশি বেগম এর।

“এমনটা কেন বলছো মামনি।আমি নিজে তার সাথে কথা বলব। তুমি তার নাম আর ঠিকানা আমায় দাও”

বলে উঠল আতশি বেগম।

“সেটার আর দরকার নেই আম্মু। যা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। সেদিন যদি একটা বার আমার কথা বিশ্বাস করতে, গুরত্ব দিতে তাহলে হয়তো আমি তাকে হারাতাম না আম্মু কিন্তু এখন আমি তাকে হারিয়ে ফেলছি। আর তাই আমি এসব নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”

মেয়ের কথার জবাবে কিছু বলতে পারলেন না আতশি বেগম। অপরাধ বোধ যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দরজার ওপাশ থেকে সবই শুনলেন আজমল সাহেব। তার এবং তার স্ত্রী এর এমন সিদ্ধান্ত যে তার মেয়ের জীবনে এমন ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি এনে দাঁড় করাবে তা কল্পনার বাইরে ছিল আজমল সাহেব এর। তবে এখন সবটা শেষ।চাইলে ও কিছু করতে পারবেন না তিনি।

এভাবে কাটতে থাকে দিন। তবে সেদিন এর পর থেকে আরোহির বাব মা আর আরোহির মধ্যে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হয়ে যায়। ওনারা সব সময় অপরাধ বোধে ভুগতে থাকেন কিন্তু চাইলে ও কিছু করতে পারেন না।তার মধ্যে ইহানের বিয়ের এক মাস পেরিয়ে যায় হঠাৎ একদিন জানা যায় মায়া নাকি প্রেগনেন্ট।আরোহি আর ইহানদের বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যায়।শুধু খুশি হতে পারে না আরোহি।আর ইহান সে তো বিয়ের দিন থেকেই যন্ত্র মানবে পরিনত হয়।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here